প্রশ্নোত্তর
[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম ‘প্রশ্নোত্তর’। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন ৩৫ : হুজুর, আমি হেফজখানায় পড়াই, আমার একটা প্রশ্ন হল, সূরা ইউসুফের ১১ নম্বর আয়াতে আছে لا تَأْمَنَّا -এখানে ইদগামের প্রথম নূন উচ্চারণ করার সময় ঠোঁট গোল করা হয় কেন?
উত্তর : এভাবে ঠোঁট কিছুটা গোল করে পড়াকে কেরাতের পরিভাষায় ইশমাম বলা হয়। এখানে ইশমাম করার কারণ হল, لا تَأْمَنَّا শব্দটির ইদগাম ছাড়া মূল রূপ- لا تَأْمَنُنَا । তারপর দুই নূনে ইদগাম হয়েছে এবং প্রথম নূনের হরকত পড়ে গেছে। কিন্তু প্রথম নূনে যে যম্মাহ বা পেশ ছিল, এটা বোঝানোর জন্য ইদগাম করার সময় ঠোঁট কিছুটা গোল করা হয়।
উল্লেখ্য, ইশমামের সঠিক পদ্ধতি কোনো নির্ভরযোগ্য মুআল্লিমের কাছ থেকে শিখে নিতে হবে। (দ্র. আননাশ্র ফিল কিরাআতিল আশ্র ২/৯৬৯-৯৭০; আলইতকান ফী উলূমিল কুরআন ১/২৫৮)
প্রশ্ন ৩৬ : কুরআন শরীফের বিভিন্ন জায়গায় تَالله শব্দটি রয়েছে। এই শব্দের تاء -এর ব্যাখ্যা জানতে চাচ্ছি।
উত্তর : تَالله শব্দের অর্থ- আল্লাহর কসম। الله (আল্লাহ) এই মহান নামের সাথে تاء ব্যবহার হয়েছে কসম বোঝানোর জন্য। কসম বোঝানোর জন্য এছাড়াও واو - باء ইত্যাদি হরফ ব্যবহার করা হয়। তবে تاء ছাড়া অন্যান্য হরফগুলো যেকোনো শব্দের সাথেই যুক্ত হতে পারে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে واو - باء ইত্যাদি শব্দগুলোকে অনেক শব্দের সাথেই যুক্ত করে কসম করেছেন। কিন্তু تاء হরফটি এত ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয় না। এটা শুধু আল্লাহ (الله) এই মহান নামের সাথে যুক্ত হয়েই ব্যবহার হয়। আল্লাহ তাআলার অন্যান্য নামের সাথেও تاء যুক্ত হয় না। (দ্র. তাফসীরে তবারী ১৩/২৫৫-২৫৬; ফিকহুল লুগাহ ওয়া সিররুল আরাবিয়্যাহ, পৃ. ২৪৩)
প্রশ্ন ৩৭ : হযরত মারইয়ামের পিতা ইমরান কি নবী ছিলেন? তাঁর সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
উত্তর : হযরত ইমরান ছিলেন সেই যুগে বনী ইসরাঈলের একজন নেতৃস্থানীয় ও বুযুর্গ ব্যক্তি এবং বাইতুল মুকাদ্দাসের ইমাম। তিনি হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামের বংশধর ছিলেন। ইমরানের স্ত্রী অর্থাৎ মারইয়ামের মা হান্নাও ছিলেন পূতপবিত্রা নারী। (দ্র. তাফসীরে তবারী ৪/৩৫০, আলবিদায়া ওয়ান-নিহায়া ২/৪১৮; আলকামিল ফিত-তারীখ ১/২২৮; কাসাসুল কুরআন, সিওহারবী ২/৩০৩)
প্রশ্ন ৩৮ : মান্ন-সালওয়া খাবারের কথা অনেক শুনেছি, এটা কী খাবার?
উত্তর : আল্লাহ তাআলা যখন বনী ইসরাঈলকে তীহ প্রান্তরে আটকে রাখলেন, তখন খাদ্য হিসেবে তাদের প্রতি মান্ন ও সালওয়া এ দুটি বিশেষ খাবার নাযিল করলেন। ‘মান্ন’ হল এমন এক ধরনের সুমিষ্ট স্বাদের খাদ্য, যা শিশিরের মত পড়ে বিপুল পরিমাণে তাদের তৃণাদির উপর জমে থাকত। তারা সেখান থেকে নিজেদের চাহিদা মতো সংগ্রহ করত। আর ‘সালওয়া’ হল একজাতীয় ছোট ছোট পাখি। এগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে তাদের আশেপাশে এসে বসত এবং কেউ ধরতে চাইলে তারা মোটেই আত্মরক্ষার চেষ্টা করত না। তারা সেগুলো ধরে রান্না করে খেত। (দ্র. তাফসীরে কুরতুবী ১/৪০৭; তাফসীরে হক্কানী ১/২০৬) হ