আলকুরআনের দৃষ্টিতে অভিশপ্ত যারা
বিশ্ব মানবতার মুক্তির পয়গাম আলকুরআন। মানবজাতিকে সর্বাধিক সরল ও সঠিক পথের দিশা দিতে আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ নবী, খাতামুন্নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি নাযিল করেছেন এ মহাগ্রন্থ। হক-বাতিল, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, লাভ-ক্ষতি ও আলো-অন্ধকারের মাঝে পার্থক্যরেখা টেনে দেওয়ার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহ তাআলার এ শাশ্বত ও চিরন্তন বাণী।
যে কুরআনকে সবচে বেশি ভালোবাসবে, বুকে আগলে রাখবে এবং জীবনের প্রতিটি পর্বে মাইলফলক হিসেবে গ্রহণ করবে সে সঠিক পথের দিশা লাভ করবে। আলো ও অন্ধকারের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করতে সক্ষম হবে।
কুরআন মাজীদ যেসব মন্দ বিষয় সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছে তার মধ্যে অন্যতম হল, ‘আসবাবে লানত’ তথা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার নানা কারণ। যুগে যুগে যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়েছিল কুরআন মাজীদ বিভিন্ন জায়গায় তাদের কথা তুলে ধরেছে।
আমরা নীচে কুরআন মাজীদে উল্লেখকৃত কিছু বঞ্চিত ও অভিশপ্তদের কথা তুলে ধরার প্রয়াস পাব। ইনশাআল্লাহুল আযীয।
এক.
সর্বপ্রথম অভিশপ্ত হল ইবলিস
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
لَّعَنَهُ اللهُ وَ قَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِیْبًا مَّفْرُوْضًا.
যার প্রতি আল্লাহ লানত করেছেন। আর সে (আল্লাহকে) বলেছিল, আমি তোমার বান্দাদের মধ্য হতে নির্ধারিত এক অংশকে নিয়ে নেব। -সূরা নিসা (৪) : ১১৮
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَّ اِنَّ عَلَیْكَ اللَّعْنَةَ اِلٰی یَوْمِ الدِّیْنِ.
কিয়ামতকাল পর্যন্ত তোমার উপর অভিশাপ পড়তে থাকবে। -সূরা হিজর (১৫) : ৩৫
ইবলিস অভিশপ্ত হওয়ার কারণ হল, সে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক হযরত আদম আ.-কে সিজদা করার আদেশ লঙ্ঘন করেছিল। সে অহংকার বশত আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিল। সে হযরত আদম আ. থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেছিল। আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করে তওবা করেনি; বরং আল্লাহর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এসব কারণে সে অভিশপ্ত হয়েছিল। কুরআন মাজীদে বিভিন্ন সূরায় তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
সূরা বাকারার ৩৪ নং আয়াত, সূরা আ‘রাফের ১১ নং আয়াত, সূরা হিজরের ৩১নং আয়াত, সূরা ইসরার ৬১ নং আয়াত, সূরা কাহফের ৫০ নং আয়াত, সূরা ত্বহার ২০ নং আয়াত ও সূরা ছদের ৭৪ নং আয়াতসমূহে এ বিষয়ক বর্ণনা এসেছে। সব জায়গার সারকথা এই যে, আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আ.-কে সৃষ্টি করার পর জিনদের সরদার ইবলীস ও ফিরিশতা সকলকে আদেশ করলেন যে তোমরা আদমকে সিজদা কর। ফিরিশতারা সকলে তাঁকে সিজদা করল। কিন্তু ইবলিস সিজদা করল না; বরং উল্টো যুক্তি-তর্ক শুরু করল। অহংকার প্রদর্শন করল। আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল। সূরা ইসরাতে আল্লাহর সঙ্গে ইবলীসের যে কথোপকথন এসেছে সেটা নিচে তুলে ধরা হল-
وَ اِذْ قُلْنَا لِلْمَلٰٓىِٕكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْۤا اِلَّاۤ اِبْلِیْسَ قَالَ ءَاَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِیْنًا قَالَ اَرَءَیْتَكَ هٰذَا الَّذِیْ كَرَّمْتَ عَلَیَّ ؗ لَىِٕنْ اَخَّرْتَنِ اِلٰی یَوْمِ الْقِیٰمَةِ لَاَحْتَنِكَنَّ ذُرِّیَّتَهٗۤ اِلَّا قَلِیْلًا، قَالَ اذْهَبْ فَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ فَاِنَّ جَهَنَّمَ جَزَآؤُكُمْ جَزَآءً مَّوْفُوْرًا،وَ اسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَ اَجْلِبْ عَلَیْهِمْ بِخَیْلِكَ وَ رَجِلِكَ وَ شَارِكْهُمْ فِی الْاَمْوَالِ وَ الْاَوْلَادِ وَعِدْهُمْ وَ مَا یَعِدُهُمُ الشَّیْطٰنُ اِلَّا غُرُوْرًا، اِنَّ عِبَادِیْ لَیْسَ لَكَ عَلَیْهِمْ سُلْطٰنٌ وَ كَفٰی بِرَبِّكَ وَكِیْلًا.
এবং সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি ফিরিশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা কর। তখন তারা সিজদা করল, কিন্তু ইবলীস করল না। সে বলল, আমি কি তাকে সিজদা করব, যাকে আপনি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন? সে বলতে লাগল, বলুন তো, এই কি সেই সৃষ্টি, যাকে আপনি আমার উপর মর্যাদা দান করেছেন! আপনি যদি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দেন, তবে আমি তার বংশধরদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ছাড়া বাকি সকলের চোয়ালে লাগাম পরিয়ে দেব।
আল্লাহ বললেন, যাও, তাদের মধ্যে যে কেউ তোমার অনুগামী হবে, জাহান্নামই হবে তোমাদের সকলের শাস্তি- পরিপূর্ণ শাস্তি। তাদের মধ্যে যার উপর তোমার ক্ষমতা চলে নিজ আহ্বানের দ্বারা বিভ্রান্ত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদের উপর চড়াও হও, তাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অংশীদার হয়ে যাও এবং তাদেরকে যত পার প্রতিশ্রুতি দাও। বস্তুত শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়। নিশ্চয়ই আমার যারা বান্দা, তাদের উপর তোমার কোনো ক্ষমতা চলবে না। তোমার রক্ষকরূপে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। -সূরা ইসরা (১৭) : ৬৫
ঘটনা থেকে শিক্ষা
আমরা আল্লাহ তাআলার বান্দা। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আমাদের রব। আমাদের মালিক। তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি যেসব আদেশ রয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে মানতে হবে। তা অমান্য করা যাবে না।
তাঁর কোনো আদেশ না বুঝে আসলেও শুধু এ মনে করে আমাদেরকে তা মানতে হবে যে, তিনি সর্বজ্ঞ, আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ; তাই তাঁর আদেশ আমাদের জন্য নিশ্চয়ই কল্যাণকর।
তাঁর যে কোনো আদেশের সামনে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে। কোনো প্রকার অহংকার প্রদর্শন করা যাবে না।
কখনও কোনো আদেশ অমান্য হয়ে গেলে তা থেকে ফিরে আসতে হবে, তওবা করতে হবে। জেদবশত ভুলের উপর অবিচল থাকা যাবে না। তাহলেই আমরা তাঁর অভিসম্পাত থেকে বাঁচতে পারব এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব।
দুই.
ইহুদীরা বহুবিধ অপরাধের কারণে চির অভিশপ্ত
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা যাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় বারবার অভিশপ্ত ঘোষণা করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হল ইহুদীরা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
قُلْ هَلْ اُنَبِّئُكُمْ بِشَرٍّ مِّنْ ذٰلِكَ مَثُوْبَةً عِنْدَ اللهِ مَنْ لَّعَنَهُ اللهُ وَ غَضِبَ عَلَیْهِ وَ جَعَلَ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَ الْخَنَازِیْرَ وَ عَبَدَ الطَّاغُوْتَ اُولٰٓىِٕكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَّ اَضَلُّ عَنْ سَوَآءِ السَّبِیْلِ.
(হে নবী! তাদেরকে) বল, আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, (তোমরা যে বিষয়কে খারাপ মনে করছ) আল্লাহর কাছে তার চেয়ে মন্দ পরিণাম কার হবে? (তারা) ওইসকল লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, যাদের প্রতি ক্রোধ বর্ষণ করেছেন, যাদের মধ্যে কতককে বানর ও শুকর বানিয়ে দিয়েছেন এবং যারা শয়তানের পূজা করেছে তারাই নিকৃষ্ট ঠিকানার অধিকারী এবং তারা সরল পথ থেকে অত্যধিক বিচ্যুত। -সূরা মায়িদা (৫) : ৬০
এ আয়াতগুলো ইহুদীদের নানা দুষ্কর্মের মন্দ পরিণতির বর্ণনা দিচ্ছে। তাদের নানারকম অন্যায় অপরাধের কারণে তাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ এসেছে। তাদের প্রতি আল্লাহর লানতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ আয়াতে সংক্ষেপে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
যেসব কারণে তাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ এসেছিল কুরআন মাজীদে বিভিন্ন জায়গায় তার বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। নিচে সেগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
ক. জেনেবুঝে কুফরির উপর অবিচল থাকা
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَ قَالُوْا قُلُوْبُنَا غُلْفٌ بَلْ لَّعَنَهُمُ اللهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِیْلًا مَّا یُؤْمِنُوْنَ ، وَ لَمَّا جَآءَهُمْ كِتٰبٌ مِّنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ یَسْتَفْتِحُوْنَ عَلَی الَّذِیْنَ كَفَرُوْا فَلَمَّا جَآءَهُمْ مَّا عَرَفُوْا كَفَرُوْا بِهٖ ؗ فَلَعْنَةُ اللهِ عَلَی الْكٰفِرِیْنَ .
আর এসব লোক বলে, আমাদের অন্তর আচ্ছাদনের ভেতর। কখনও নয়; বরং তাদের কুফরির কারণে আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। এ কারণে তারা অল্পই ঈমান আনে।
যখন তাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে এমন কিতাব (অর্থাৎ কুরআন) আসল, যা তাদের কাছে (পূর্ব থেকে) যা আছে তার (অর্থাৎ তাওরাতের ) সমর্থন করে (তখন তাদের আচরণ লক্ষ্য করে দেখ), যদিও পূর্বে এরা কাফিরদের (অর্থাৎ পৌত্তলিকদের) বিরুদ্ধে (এ কিতাবের মাধ্যমে) আল্লাহর কাছে বিজয় প্রার্থনা করত, যখন সেই জিনিস আসল, যাকে তারা চিনতে পেরেছিল, তখন তাকে অস্বীকার করে বসল। সুতরাং এমন কাফেরদের প্রতি আল্লাহর লানত। -সূরা বাকারা (২) : ৮৯
খ. সত্য গোপনা করা
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
اِنَّ الَّذِیْنَ یَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلْنَا مِنَ الْبَیِّنٰتِ وَ الْهُدٰی مِنْۢ بَعْدِ مَا بَیَّنّٰهُ لِلنَّاسِ فِی الْكِتٰبِ اُولٰٓىِٕكَ یَلْعَنُهُمُ اللهُ وَ یَلْعَنُهُمُ اللّٰعِنُوْنَ.
নিশ্চয়ই যারা আমার নাযিলকৃত উজ্জ্বল নিদর্শনাবলি ও হেদায়াত গোপন করে, যদিও আমি কিতাবে তা মানুষের জন্য সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছি, তাদের প্রতি আল্লাহ লানত বর্ষণ করেন এবং অন্যান্য লানতকারীও লানত বর্ষণ করে। -সূরা বাকারা (২) : ১৫৯
গ. তাওরাতের বিকৃতি সাধন এবং আল্লাহর দ্বীন নিয়ে হাসিঠাট্টা ও উপহাস করা
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
مِنَ الَّذِیْنَ هَادُوْا یُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ عَنْ مَّوَاضِعِهٖ وَ یَقُوْلُوْنَ سَمِعْنَا وَ عَصَیْنَا وَ اسْمَعْ غَیْرَ مُسْمَعٍ وَّ رَاعِنَا لَیًّۢا بِاَلْسِنَتِهِمْ وَ طَعْنًا فِی الدِّیْنِ وَ لَوْ اَنَّهُمْ قَالُوْا سَمِعْنَا وَ اَطَعْنَا وَ اسْمَعْ وَ انْظُرْنَا لَكَانَ خَیْرًا لَّهُمْ وَ اَقْوَمَ وَ لٰكِنْ لَّعَنَهُمُ اللهُ بِكُفْرِهِمْ فَلَا یُؤْمِنُوْنَ اِلَّا قَلِیْلًا.
ইহুদীদের মধ্যে (কিছু লোক এমন আছে) যারা (তাওরাতের) শব্দাবলিকে তার প্রকৃত স্থান থেকে সরিয়ে দেয় এবং নিজেদের জিহ্বা বাঁকিয়ে ও দ্বীনকে নিন্দা করে বলে, ‘সামি‘না এবং ‘আসায়না’ এবং ‘ইসমা‘ গায়রা মুসমাইন’ এবং ‘রাইনা’ অথচ তারা যদি বলত ‘সামি‘না ওয়া আতা‘না এবং ওয়াসমা‘ ওয়ানযুরনা’ তবে সেটাই তাদের পক্ষে উত্তম ও সঠিক পন্থা হত। বস্তুত তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ তাদের প্রতি লানত করেছেন। সুতরাং অল্পসংখ্যক লোক ছাড়া তারা ঈমান আনবে না। -সূরা নিসা (৪) : ৪৬
ঘ. আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা
আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِّیْثَاقَهُمْ لَعَنّٰهُمْ وَ جَعَلْنَا قُلُوْبَهُمْ قٰسِیَةً ۚ یُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ عَنْ مَّوَاضِعِهٖ وَ نَسُوْا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوْا بِهٖ وَ لَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰی خَآىِٕنَةٍ مِّنْهُمْ اِلَّا قَلِیْلًا مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَ اصْفَحْ ؕ اِنَّ اللهَ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَ .
অতঃপর তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণেই তো আমি তাদেরকে আমার রহমত থেকে বিতাড়িত করি ও তাদের অন্তর কঠিন করে দেই। তারা কথাসমূহকে তার আপন স্থান থেকে সরিয়ে দেয় এবং তাদেরকে যে বিষয়ে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তার একটি বড় অংশ ভুলে যায়। (আগামীতে) তুমি তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলেরই কোনো না কোনো বিশ্বাসঘাতকতার শ্বাস কথা জানতে থাকবে। সুতরাং (এখন) তাদেরকে ক্ষমা কর ও তাদেরকে পাশ কাটিয়ে চল। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইহসানকারীদের ভালবাসেন। -সূরা মায়িদা (৫) : ১৩
ঙ. নবীদের হত্যা করা
আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِّیْثَاقَهُمْ وَ كُفْرِهِمْ بِاٰیٰتِ اللهِ وَ قَتْلِهِمُ الْاَنْۢبِیَآءَ بِغَیْرِ حَقٍّ وَّ قَوْلِهِمْ قُلُوْبُنَا غُلْفٌ بَلْ طَبَعَ اللهُ عَلَیْهَا بِكُفْرِهِمْ فَلَا یُؤْمِنُوْنَ اِلَّا قَلِیْلًا.
অতঃপর (তাদেরকে লানত করেছিলাম) তাদের কর্তৃক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার, নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা এবং ‘আমাদের অন্তরের উপর পর্দা লাগানো রয়েছে’- তাদের এই উক্তির কারণে। অথচ বাস্তবতা হল, তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর করে দিয়েছেন। এজন্যই তারা অল্প কিছু বিষয় ছাড়া (অধিকাংশ বিষয়েই) ঈমান আনে না। -সূরা নিসা (৪) : ১৫৫
চ. আল্লাহ তাআলার শানে বেআদবি
ইরশাদ হয়েছে-
وَ قَالَتِ الْیَهُوْدُ یَدُ اللهِ مَغْلُوْلَةٌ ؕ غُلَّتْ اَیْدِیْهِمْ وَ لُعِنُوْا بِمَا قَالُوْا ۘ بَلْ یَدٰهُ مَبْسُوْطَتٰنِ یُنْفِقُ كَیْفَ یَشَآءُ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الْمُفْسِدِیْنَ .
ইহুদীগণ বলে, আল্লাহর হাত বাঁধা। হাত বাঁধা তো তাদেরই। তারা যে কথা বলেছে সে কারণে তাদের উপর লানত বর্ষিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর উভয় হাত প্রসারিত। তিনি যেভাবে চান ব্যয় করেন। ...অথচ আল্লাহ অশান্তি বিস্তারকারীদেরকে পছন্দ করেন না। -সূরা মায়িদা (৫) : ৬৪
ছ. নবীদের কথা অমান্য করা
ইরশাদ হয়েছে-
لُعِنَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا مِنْۢ بَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَ عَلٰی لِسَانِ دَاوٗدَ وَ عِیْسَی ابْنِ مَرْیَمَ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّ كَانُوْا یَعْتَدُوْنَ .
বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল, তাদের প্রতি দাঊদ ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের যবানীতে লানত বর্ষিত হয়েছিল। তা এ কারণে যে, তারা অবাধ্যতা করেছিল এবং তারা সীমালংঘন করত। -সূরা মায়িদা (৫) : ৭৮
এছাড়া তাদের জুলুম, আল্লাহর পথে বাধা দেওয়া, সুদ ভক্ষণ এবং অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করাও তাদের প্রতি অভিসম্পাতের বড় কারণ।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِیْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَیْهِمْ طَیِّبٰتٍ اُحِلَّتْ لَهُمْ وَ بِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِیْلِ اللهِ كَثِیْرًا، وَّ اَخْذِهِمُ الرِّبٰوا وَ قَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَ اَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَ اَعْتَدْنَا لِلْكٰفِرِیْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِیْمًا.
মোটকথা, ইহুদীদের গুরুতর সীমালংঘনের কারণে আমি তাদের প্রতি এমন কিছু উৎকৃষ্ট বস্তু হারাম করে দেই, যা (পূর্বেও) তাদের পক্ষে হালাল করা হয়েছিল এবং আল্লাহর পথে তাদের অত্যধিক বাধাদানের কারণে। এবং তাদের সুদখোরির কারণে, অথচ তাদেরকে তা খেতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং তাদের কর্তৃক মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার কারণে। তাদের মধ্যে যারা কাফির, আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি। -সূরা নিসা (৪) : ১৬১
এসব কারণে আল্লাহ তাআলা ইহুদীদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের জন্য রেখেছেন লাঞ্ছনা আর লাঞ্ছনা।
(চলবে ইনশআল্লাহ)