কুরআনে নামাযের গুরুত্ব : কিছু দিক কিছু কথা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনার আদেশ
দুনিয়া হোক বা আখেরাত যে কোনো সুখ, শান্তি, সফলতা ও স্বস্তি লাভে সবরের প্রয়োজনীয়তা অনেক। বিপদাপদে যেমন সবরের প্রয়োজন, তেমনি সৎকাজ করা এবং অসৎকাজ থেকে বিরত থাকার জন্যও সবরের দরকার। তাই কুরআনে সবরের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিছু আয়াতে সবরের পাশাপাশি নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনার আদেশ করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِیْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلٰوةِ اِنَّ اللهَ مَعَ الصّٰبِرِیْنَ.
হে মুমিনগণ! সবর ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন। -সূরা বাকারা (২) : ১৫৩
এখানে আল্লাহ সবর ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনার আদেশ করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় এ দুই বস্তুর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য নসীব হয়।
পরিবারকে নামাযের নির্দেশদানের তাকিদ
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত দ্বীন। এর শিক্ষা ব্যক্তি থেকে নিয়ে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। সকলের কর্তব্য একে নিজ জীবনে ধারণ করা এবং অন্যকে এর প্রতি আহ্বান করা। এটা ইসলামের সাধারণ নির্দেশ। কুরআনে আমরা দেখি, পরিবার-পরিজনকে নামাযের নির্দেশদানের জন্য তাকিদ দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা নবীজীকে লক্ষ করে বলেন-
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلٰوةِ وَاصْطَبِرْ عَلَیْهَا لَا نَسْـَٔلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰی.
তুমি নিজ পরিবারকে নামাযের আদেশ কর এবং নিজেও তাতে অবিচল থাক। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না। আমিই তো তোমাকে রিযিক দেই। আর শুভ পরিণাম তাকওয়ার জন্য। -সূরা ত্বহা (২০) : ১৩২
ইসমাঈল আলাইহিস সালাম আল্লাহর প্রিয় নবী ছিলেন। কুরআনে একাধিক জায়গায় তাঁর আলোচনা রয়েছে। এক জায়গায় আল্লাহ তাঁর সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন-
وَكَانَ یَاْمُرُ اَهْلَهٗ بِالصَّلٰوةِ وَالزَّكٰوةِ .
সে নিজ পরিবারকে নামায ও যাকাতের আদেশ করত। -সূরা মারইয়াম (১৯) : ৫৫
লোকমান হাকীম খ্যাতনামা বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তাঁর ছেলেকে মূল্যবান নসীহত করেছিলেন। কুরআনে তাঁর নামে একটি সূরা রয়েছে। সেখানে তাঁর কিছু নসীহত উল্লেখ করা হয়েছে। ১৭ নং আয়াতে উল্লেখিত নসীহতগুলি হল-
یٰبُنَیَّ اَقِمِ الصَّلٰوةَ وَاْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰی مَاۤ اَصَابَكَ ؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ.
হে আমার বৎস! নামায কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ কর, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ কর এবং তোমার উপর যে মসিবত আসে তাতে সবর কর। নিশ্চয় এ বড় হিম্মতের কাজ। -সূরা লোকমান (৩১) : ১৭
উপরিউক্ত আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, নিজে যেমন নামায পড়তে হবে, তেমনি পরিবার-পরিজন যেন নামায পড়ে সে ব্যাপারেও সচেষ্ট হতে হবে। প্রথম আয়াতটি থেকে আরো বোঝা যায়, জীবিকার ব্যস্ততায় নামায থেকে গাফেল হওয়া যাবে না। আয়াতটিতে আল্লাহ তাআলা নামাযের আদেশ করার পাশাপাশি এ বিষয়টিও পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, আমিই রিযিক দেই। এর মাধ্যমে আল্লাহ বস্তুত এদিকে ইঙ্গিত করছেন যে, আমার হুকুম-আহকাম পালন করে আমার কাছে সাহায্য ও রিযিক প্রার্থনা কর। রোজগারের ফিকিরে আমার হুকুম থেকে উদাসীন হয়ো না।
প্রয়োজনে তায়াম্মুম করে নামায পড়ার আদেশ
নামাযের জন্য ওযু ফরয। আর ওযুর জন্য পানি আবশ্যক। কিন্তু কখনো এমন হয় যে, কাছে-ধারে পানি নেই বা থাকলেও অসুস্থতার কারণে ব্যবহার করা যায় না। এরকম পরিস্থিতিতে তায়াম্মুম করে নামায আদায়ের আদেশ করা হয়েছে।
আল্লাহ ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا قُمْتُمْ اِلَی الصَّلٰوةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ واَیْدِیَكُمْ اِلَی الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَی الْكَعْبَیْنِ وَاِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤی اَوْ عَلٰی سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآىِٕطِ اَوْ لٰمَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَیَمَّمُوْا صَعِیْدًا طَیِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَیْدِیْكُمْ مِّنْهُ.
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য ওঠ তখন তোমাদের মুখম-ল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধোও এবং তোমাদের মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধোও)। আর যদি তোমরা জানাবত অবস্থায় থাক তবে উত্তমরূপে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও বা সফরে থাক কিংবা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীসহবাস কর এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটির ইচ্ছা কর এবং তা দ্বারা তোমাদের মুখম-ল ও হাত মাসেহ কর। -সূরা মায়েদা (৫) : ৬
এখানে আল্লাহ তাআলা ওযুর বিকল্প ব্যবস্থা দান করেছেন। তা হল তায়াম্মুম। যদি ওযু করার জন্য পানি না পাওয়া যায় অথবা পানি আছে কিন্তু অসুস্থতার কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না, তাহলে মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নামায পড়তে হবে। আর মাটি (বা মাটি জাতীয় বস্তু) পাওয়া যায় না এমন স্থান বিরল। তার মানে নামাযে অবহেলার সুযোগ নেই; বরং সময়মত নামায আদায় করতে হবে। আয়াতটি থেকে আরো বোঝা যায়, সফরেও যথাসময়ে নামায আদায়ে সচেষ্ট হওয়া চাই।
আল্লাহ অন্যত্র বলেন-
عَلِمَ اَنْ سَیَكُوْنُ مِنْكُمْ مَّرْضٰی وَاٰخَرُوْنَ یَضْرِبُوْنَ فِی الْاَرْضِ یَبْتَغُوْنَ مِنْ فَضْلِ اللهِ وَاٰخَرُوْنَ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللهِ فَاقْرَءُوْا مَا تَیَسَّرَ مِنْهُ وَاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّكٰوةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا وَمَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللهِ هُوَ خَیْرًا وَّاَعْظَمَ اَجْرًا ؕ وَاسْتَغْفِرُوا اللهَ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.
তিনি (আল্লাহ) জানেন তোমাদের কতক অসুস্থ হবে, আর কিছু সংখ্যক (এমন থাকবে) যারা আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে যমিনে ভ্রমণ করবে এবং কিছু লোক থাকবে, যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধরত থাকবে। সুতরাং কুরআন থেকে যতটুকু সহজ হয় ততটুকুই পড় আর নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা যাই সৎকর্ম নিজেদের জন্য অগ্রিম পাঠাবে, আল্লাহর কাছে তা উত্তম অবস্থায় এবং অধিক সওয়াবে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা মুযযাম্মিল (৭৩) : ২০
এখানে অসুস্থ, মুসাফির ও জিহাদরত ব্যক্তিকে নামায আদায়ের হুকুম করা হয়েছে। তবে সফর, জিহাদ ও অসুস্থতার ওজরের কারণে নামাযে কেরাত যতটুকু সহজ হয় ততটুকু পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় নামায অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা যথাসময়ে আদায় করতে হবে। যত কঠিন অবস্থায়ই আসুক নামায ছাড়া যাবে না। এখানে যে অবস্থাগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সবগুলোই কঠিন। কঠিন হওয়ার কারণেই কেরাতের বিষয়টি সহজ করা হয়েছে।
অন্য আয়াতে পরিষ্কার বলা হয়েছে-
اِنَّ الصَّلٰوةَ كَانَتْ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ كِتٰبًا مَّوْقُوْتًا.
নিশ্চয় নামায মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময়ে ফরয। -সূরা নিসা (৪) : ১০৩
নামাযকে আল্লাহর জন্য নিবেদনের নির্দেশ
যে কোনো কাজ একমাত্র আল্লাহর জন্য করা চাই। আল্লাহর জন্য করলে আল্লাহ খুশি হন এবং বান্দাকে দুই হাত ভরে প্রতিদান দেন।
আল্লাহ তাআলা নবীজীকে লক্ষ করে বলেছেন-
قُلْ اِنَّ صَلَاتِیْ وَنُسُكِیْ وَمَحْیَایَ وَمَمَاتِیْ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ، لَا شَرِیْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ.
তুমি বল, নিশ্চয় আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। তাঁর কোনো শরীক নেই। আমাকে এরই আদেশ করা হয়েছে এবং আমিই প্রথম আনুগত্যকারী। -সূরা আনআম (৬) : ১৬২-১৬৩
এখানে নবীজীকে নিজের নামায, কুরবানী ও জীবন-মরণ আল্লাহর জন্য নিবেদন করার আদেশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ বস্তুত তাঁর বান্দাদের শিক্ষা দিচ্ছেন, তারা যেন তাদের সমস্ত কাজ একমাত্র আল্লাহর জন্য করে।
লক্ষণীয় হল এখানে সবার আগে নামাযের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় নামায বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ।
নামায মুত্তাকীদের গুণ
যে আল্লাহকে ভয় করে চলে তাকে মুত্তাকী বলে। আল্লাহর কাছে মুত্তাকীগণ সবচেয়ে সম্মানিত। কুরআন মুত্তাকীদের একটি গুণ এই উল্লেখ করেছে যে, তারা নামায কায়েম করে।
আল্লাহ ইরশাদ করেন-
الٓمّٓ، ذٰلِكَ الْكِتٰبُ لَا رَیْبَ فِیْهِ هُدًی لِّلْمُتَّقِیْنَ، الَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِالْغَیْبِ وَیُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَمِمَّا رَزَقْنٰهُمْ یُنْفِقُوْنَ، وَالَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْاٰخِرَةِ هُمْ یُوْقِنُوْنَ، اُولٰٓىِٕكَ عَلٰی هُدًی مِّنْ رَّبِّهِمْ وَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.
আলিফ-লাম-মীম। এ কিতাবে কোনো সন্দেহ নেই; এ মুত্তাকীদের জন্য হেদায়েত- যারা অদৃশ্য বিষয়ে ঈমান রাখে এবং নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। এবং যারা তার প্রতি ঈমান রাখে, যা তোমার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তার প্রতিও, যা তোমার পূর্বে অবতীর্ণ করা হয়েছে আর তারা আখেরাতে পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। এরাই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের উপর এবং এরাই সফলকাম। -সূরা বাকারা (২) : ১-৫
এখানে মুত্তাকীদের ৬টি গুণ আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম গুণ হল তারা অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি ঈমান রাখে। দ্বিতীয় গুণ হল তারা নামায কায়েম করে। এ থেকে প্রমাণিত হয় ঈমানের পরই নামাযের স্থান এবং মুত্তাকী হওয়ার জন্য নামায আবশ্যক।
নামায মুহসিনীনের বৈশিষ্ট্য
যে ব্যক্তি সৎ, সুন্দর ও অনুগ্রহের আমল করে তাকে মুহসিন বলা হয় (মুহসিন শব্দের বহুবচন মুহসিনূন)। আল্লাহ মুহসিনীনকে ভালবাসেন। কুরআনে তিনি তাঁর এই প্রিয় বান্দাদের একটি বৈশিষ্ট্য এই উল্লেখ করেছেন যে, তারা নামায আদায় করে।
আল্লাহ বলেন-
الٓمّٓ، تِلْكَ اٰیٰتُ الْكِتٰبِ الْحَكِیْمِ، هُدًی وَّرَحْمَةً لِّلْمُحْسِنِیْنَ،الَّذِیْنَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَیُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ یُوْقِنُوْنَ،اُولٰٓىِٕكَ عَلٰی هُدًی مِّنْ رَّبِّهِمْ وَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.
আলিফ-লাম-মীম। এ হেকমতপূর্ণ কিতাবের আয়াত; যা হেদায়েত ও রহমত মুহসিনীনের জন্য, যারা নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং আখেরাতে পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। এরাই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের উপর এবং এরাই সফলকাম। -সূরা লুকমান (৩১) : ১-৫
এখানে মুহসিনীনের পরিচয় দিতে গিয়ে প্রথমেই বলা হয়েছে তারা নামায আদায় করে। এটা নির্দেশ করে, নামায খুবই মর্যাদাপূর্ণ এবং মুহসিনীনের দলভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে এর বড় ভূমিকা রয়েছে।
নামায মুখবিতীনের গুণ
যে আল্লাহর সামনে বিনীত, আল্লাহর ভয়ে ভীত এবং আল্লাহর ব্যাপারে প্রশান্তচিত্ত তাকে মুখবিত বলে (মুখবিত শব্দের বহুবচন মুখবিতূন)। এরা আল্লাহর একান্ত আপন। কুরআনে তাদের একটি গুণ এই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা নামায কায়েম করে।
আল্লাহ ইরশাদ করেন-
وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِیْنَ، الَّذِیْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَالصّٰبِرِیْنَ عَلٰی مَاۤ اَصَابَهُمْ وَالْمُقِیْمِی الصَّلٰوةِ وَمِمَّا رَزَقْنٰهُمْ یُنْفِقُوْنَ.
আর সুসংবাদ দাও মুখবিতীনকে, যাদের অন্তর আল্লাহকে স্মরণ করা হলে ভীত হয়, যারা তাদের উপর আপতিত বিপদে সবর করে এবং যারা নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। -সূরা হজ¦ (২২) : ৩৪-৩৫
এ আয়াতে মুখবিতীনের ৪টি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হল তারা নামায কায়েম করে। এ থেকে বোঝা যায়, নামায মহিমান্বিত আমল এবং মুখবিতীনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য এর বিরাট অবদান রয়েছে।
কুরআন আঁকড়ে ধরার সঙ্গে নামাযের উল্লেখ
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বারবার কুরআনের প্রতি ঈমান আনা এবং একে দৃঢ়ভাবে ধরার কথা বলেছেন। এক আয়াতে কুরআনকে আঁকড়ে ধরার সঙ্গে নামাযের কথাও উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ বলেন-
وَالَّذِیْنَ یُمَسِّكُوْنَ بِالْكِتٰبِ وَاَقَامُوا الصَّلٰوةَ اِنَّا لَا نُضِیْعُ اَجْرَ الْمُصْلِحِیْنَ.
আর যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধরে ও নামায কায়েম করে, নিশ্চয় আমি সংশোধনকারীদের প্রতিদান বিনষ্ট করি না। -সূরা আরাফ (৭) : ১৭০
কুরআনকে মজবুতভাবে ধরার সাথেই নামাযের কথা এসেছে। কেননা নামায কুরআনের অন্যতম সুস্পষ্ট বিধান। তারপরও পৃথকভাবে নামাযের কথা বলা এর অধিক গুরুত্ব বুঝায়। এটা নির্দেশ করে, নামায আদায় করা কুরআনকে ধারণের অংশ। নামায ছাড়া কুরআন আঁকড়ে ধরা অপূর্ণ।
নেক আমলের সঙ্গে নামাযের উল্লেখ
কুরআনে বহু জায়গায় ঈমান ও নেক আমলের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে। এক স্থানে নেক আমলের সঙ্গে নামাযের কথাও বলা হয়েছে।
আল্লাহ ইরশাদ করেন-
اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَاَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ لَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَلَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ.
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে, নামায কায়েম করেছে ও যাকাত আদায় করেছে, তাদের জন্য রয়েছে আপন রবের কাছে তাদের প্রতিদান। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা কোনো দুঃখও পাবে না। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৭
নেক আমলের ভেতর নামায রয়েছে। তা সত্ত্বেও আলাদাভাবে নামাযের কথা বলা ইঙ্গিত করে, নামায সমস্ত নেক আমলের শীর্ষে।
তওবার সঙ্গে নামাযের উল্লেখ
আল্লাহ তাআলার অভিপ্রায় ছিল জাযিরাতুল আরব থেকে মূর্তিপূজার মূলোচ্ছেদ করা, যাতে সেখানে কোথাও মূর্তিপূজার চিহ্নমাত্র না থাকে। এজন্য আরবের যেসকল মূর্তিপূজক অবশিষ্ট ছিল তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে অবকাশ দেওয়া হয়, যাতে এর ভেতর তারা ইসলাম গ্রহণ করে নেয়। অন্যথায় তাদের জাযিরাতুল আরব ছাড়তে হবে, নয়তো তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা হবে।
আল্লাহ বলেন-
فَاِذَا انْسَلَخَ الْاَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِیْنَ حَیْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ وَخُذُوْهُمْ وَاحْصُرُوْهُمْ وَاقْعُدُوْا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ فَخَلُّوْا سَبِیْلَهُمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.
অতঃপর যখন সম্মানিত মাসসমূহ অতিবাহিত হয়ে যাবে তখন তোমরা মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা করবে। তাদের পাকড়াও করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ওঁৎ পাতার স্থানে তাদের জন্য বসে থাকবে। তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা তাওবা (৯) : ৫
সামনে গিয়ে বলেছেন-
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِی الدِّیْنِ .
তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। -সূরা তাওবা (৯) : ১১
আয়াতদুটিতে মুশরিকরা নিরাপদে থাকা এবং মুসলিমদের দ্বীনী ভাই গণ্য হওয়ার জন্য শিরিক থেকে তওবা করার সঙ্গে নামায ও যাকাত আদায়ের শর্তারোপ করা হয়েছে। এ থেকে অনুমেয় নামায ও যাকাত কত গুরুত্বপূর্ণ!
নামাযের প্রতিবন্ধককে নিষিদ্ধ করা
আল্লাহ তাআলা সূরা মায়েদায় মদ ও জুয়াকে পরিষ্কারভাবে হারাম করেছেন। পাশাপাশি এগুলোর কিছু ক্ষতিকর দিকও উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ বলেন-
اِنَّمَا یُرِیْدُ الشَّیْطٰنُ اَنْ یُّوْقِعَ بَیْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِی الْخَمْرِ وَالْمَیْسِرِ وَیَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلٰوةِ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ.
শয়তান তো চায় মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে বিরত রাখতে। সুতরাং তোমরা কি (ওসব জিনিস থেকে) নিবৃত্ত হবে? -সূরা মায়েদা (৫) : ৯১
এখানে মদ ও জুয়ার একটি ক্ষতিকর দিক এই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তা মানুষকে আল্লাহর যিকির ও নামায থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর যিকিরের মধ্যে নামায অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারপরও পৃথকভাবে নামাযের কথা বলা এর বিশেষ গুরুত্ব বুঝায়। এটা নির্দেশ করে, এমন কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না, যা নামাযের পথে অন্তরায় হয়।
বংশধরের নামাযী হওয়ার জন্য ইবরাহীম আ.-এর দুআ
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর খলীল ছিলেন। কুরআনে বহু স্থানে তাঁর আলোচনা এসেছে। তাঁর নামে কুরআনে একটি সূরাও রয়েছে। সেখানে আমরা দেখি, আল্লাহর কাছে তিনি এ দুআ করেছেন-
رَبِّ اجْعَلْنِیْ مُقِیْمَ الصَّلٰوةِ وَمِنْ ذُرِّیَّتِیْ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآءِ.
হে আমার রব! আমাকে নামায কায়েমকারী বানাও এবং আমার সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের রব! আর তুমি আমার দুআ কবুল কর। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৪০
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সপরিবারে শামে বসবাস করতেন। একসময় স্ত্রী হাজার (হাজেরা শব্দটি ভুল) ও শিশু পুত্র ইসমাঈলকে শাম থেকে মক্কায় নিয়ে আসলেন এবং কাবা ঘরের কাছে রেখে গেলেন। অথচ মক্কায় তখন না জনবসতি ছিল, না জীবন যাপনের উপায়-উপকরণ ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি তাদেরকে কেন সেখানে রেখে গেলেন- কুরআনের ভাষায় শুনুন-
رَبَّنَاۤ اِنِّیْۤ اَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّیَّتِیْ بِوَادٍ غَیْرِ ذِیْ زَرْعٍ عِنْدَ بَیْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِیُقِیْمُوا الصَّلٰوةَ فَاجْعَلْ اَفْىِٕدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِیْۤ اِلَیْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِّنَ الثَّمَرٰتِ لَعَلَّهُمْ یَشْكُرُوْنَ.
হে আমাদের রব! আমি আমার কতিপয় সন্তানকে তোমার সম্মানিত ঘরের কাছে শস্যহীন উপত্যকায় (এনে) বসবাস করিয়েছি। হে আমাদের রব! যাতে তারা নামায কায়েম করে। সুতরাং তুমি মানুষের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং তাদেরকে ফলমূল থেকে রিযিক দান কর, হয়তো তারা শোকর করবে। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৩৭
আল্লাহ কুরআনে তাঁর খলীলের এই দুআ উল্লেখ করে মূলত নিজ বান্দাদের উৎসাহিত করছেন তারা যেন নিজেদের সন্তান-সন্ততি ও বংশধরের নামাযের ব্যাপারে সচেষ্ট হয়, আল্লাহর কাছে দুআ করে। তাদের জন্য সুন্দর পরিবেশের ব্যবস্থা করে, যেখানে তারা নামায কায়েম করতে পারবে, দ্বীনের উপর সুন্দরভাবে চলতে পারবে।
যারা নামায থেকে গাফেল নয় আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন
আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন মূলত আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহের জন্য। সেইসঙ্গে দুনিয়াতে স্বাভাবিক চলার মত উপায়-উপকরণ সংগ্রহের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। তবে সতর্ক থাকতে হবে দুনিয়ার উপকরণ যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে দেয়।
কিছু সৌভাগ্যবান মানুষ এমন আছেন, যারা আল্লাহর এ নির্দেশনা অনুযায়ী চলেন। কুরআনে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন-
فِیْ بُیُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَ یُذْكَرَ فِیْهَا اسْمُهٗ یُسَبِّحُ لَهٗ فِیْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ،رِجَالٌ لَّا تُلْهِیْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَیْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلٰوةِ وَاِیْتَآءِ الزَّكٰوةِ.
সেই ঘরসমূহে, যেগুলোকে সমুন্নত করতে ও যেখানে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে- এমন লোকেরা, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা আল্লাহর স্মরণ, নামায কায়েম ও যাকাত আদায় করা থেকে গাফেল করে না। -সূরা নূর (২৪) : ৩৬-৩৭
এখানে আল্লাহ তাঁর ওই বান্দাদের কথা উল্লেখ করেছেন, যারা তাঁর হেদায়েতের নূর অর্জন করেছে। তারা মসজিদ ও ইবাদতখানায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে। তাঁর যিকির করে। তাঁর ইবাদত করে। তাঁর হুকুম অনুসারে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বেচাকেনাও করে। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যের শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও তারা আল্লাহর স্মরণ, নামায ও যাকাত আদায় করা থেকে গাফেল হয়ে যায় না।
আল্লাহর স্মরণের মধ্যে নামাযের কথা এসে গেছে। তারপরও ভিন্নভাবে নামাযের কথা উল্লেখ করা- এর বিশেষ গুরুত্ব বুঝায়। এটা আমাদেরকে এ শিক্ষা দেয় যে, নামায থেকে গাফেল হওয়া যাবে না।
নামায মুহাজিরদের অনন্য বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ তাআলা কুরআনে মুহাজির সাহাবীদের প্রশংসা করেছেন। এক আয়াতে তাঁদের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন-
اَلَّذِیْنَ اِنْ مَّكَّنّٰهُمْ فِی الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ.
(তারা এমন যে) আমি যদি তাদেরকে যমিনে ক্ষমতা দান করি, তবে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। -সূরা হজ¦ (২২) : ৪১
দুনিয়াদার লোকদের ক্ষেত্রে অনেকসময় দেখা যায়, তারা নির্যাতিত হওয়ার পর ক্ষমতাসীন হলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে। ভোগবিলাসে মগ্ন হয়ে পড়ে। ক্ষমতা দানকারী আল্লাহকে ভুলে যায়। কিন্তু মুহাজির সাহাবীগণ এমন নন; বরং তাঁদের বৈশিষ্ট্য হল, আল্লাহ যদি তাঁদেরকে পৃথিবীতে রাজত্ব দান করেন, তবে তাঁরা নামায কায়েম করবেন। যাকাত প্র্রদান করবেন। সৎকাজের আদেশ করবেন। অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবেন। অর্থাৎ রাজত্ব পেয়ে তাঁরা আল্লাহ থেকে গাফেল হয়ে যাবেন না। বরং আল্লাহর হুকুম মোতাবেক চলবেন, দ্বীন চর্চা করবেন।
লক্ষণীয় হল, এখানে আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম নামাযের কথা উল্লেখ করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় নামায অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
নামায সাহাবীদের বিশেষ গুণ
সাহাবায়ে কেরামের গুণাবলি অনেক। কুরআনে তাঁদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁদের প্রশংসা করে বলেছেন-
مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ وَالَّذِیْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیْنَهُمْ تَرٰىهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا یَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا ؗ سِیْمَاهُمْ فِیْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ .
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর যারা তার সঙ্গে আছে তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর, পরস্পরের প্রতি সদয়। তুমি তাদেরকে দেখবে রুকু ও সেজদারত অবস্থায়, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে। তাদের পরিচয় তাদের চেহারায় (পরিস্ফুট) সেজদার প্রভাবে। -সূরা ফাতহ (৪৮) : ২৯
এখানে সাহাবীদের তিনটি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে দ্বিতীয় গুণ হল তারা অধিক পরিমাণ রুকু-সেজদা করে তথা নামায পড়ে। তারা এত বেশি নামাযে মগ্ন থাকে যে, তুমি চাইলেই তাদেরকে সে অবস্থায় দেখতে পারবে।
সাহাবীদের সম্পর্কে এখানে আরো বলা হয়েছে, তাদের পরিচয় তাদের চেহারায় (পরিস্ফুট) সেজদার প্রভাবে। অর্থাৎ অধিক পরিমাণ রুকু-সেজদা ও নামাযের ফলে তাঁদের চেহারায় বিশেষ ধরনের নূর, জ্যোতি ও উজ্জ্বলতা বিরাজ করে। আল্লাহর ভয়, খুশূ-খুযূ ও ইখলাসের আভা যেন ভেতর থেকে পরিস্ফুট হয়ে তাঁদের বহিরঙ্গকে উদ্ভাসিত করে।
এই গুণাবলির জন্য সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসা করা থেকে বোঝা যায় আল্লাহ তাআলা এগুলো পছন্দ করেন এবং তিনি চান তাঁর বান্দারা তা অর্জন করুক।