Zilqad 1431   ||   November 2010

বো ধো দ য় : অভিজ্ঞতায় সুফল আসে!

Abu Tashrif

প্রায় বিশ বছর ধরে বিশ্ব রাজনীতিতে অনুচ্চারিত নাম হলেও এর আগে ছিলেন মহা দাপুটে একজন। তিনি হলেন তার আমলের দুই পরাশক্তির একটির প্রেসিডেন্ট, মিখাইল গর্বাচেভ। সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রেসিডেন্ট। তার শেষ আমলেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যায়।  বেশ কটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। সেই থেকে রাশিয়া স্বতন্ত্র একটি দেশ মাত্র। অবশ্যই সেটি এখনও শক্তিশালী। আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনারা যখন চরম পর্যুদস্ত তখন সে দেশটি থেকে নিজ দেশের সেনা প্রত্যাহারের আগে আগে তিনি একটি ঐতিহাসিক কথা বলেছিলেন। অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া, মার খাওয়া ও পরাজিত দেশনেতার সেই অভিব্যক্তি পৃথিবীকে চমকে দিয়েছিল। তিনি  বলেছিলেন্তআফগানিস্তানে ঢুকে আমরা পাপ করেছি।সেই তিনিই গত ২৭ অক্টোবর বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর ভবিষ্যত নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তার এই মন্তব্যেও মহা ক্ষমতাধর বিশ্বনেতাদের চমকে উঠার কথা। কিন্তু  অভিজ্ঞতা বলে কথা! তার অভিজ্ঞতার মূল্য যদি এখনকার যুদ্ধনেতারা শুনেন তাহলে হয়তো উপকৃতই হবেন। ঢাকার বাংলা দৈনিকগুলোতে ২৮ অক্টোবর ছাপা হয়েছে তার ওই মন্তব্য। একটি দৈনিক থেকে শিরোনামসহ সে মন্তব্যের প্রধান অংশ এখানে তুলে ধরা হল।

আফগানিস্তানে ন্যাটোর জয় অসম্ভব : গর্বাচেভ

আফগানিস্তানে জয় অসম্ভব বলে ন্যাটো বাহিনীকে সতর্ক করেছেন সাবেক সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ। ভিয়েতনাম যুদ্ধের মতো পরিণতি এড়াতে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই বলেও মন্তব্য করেছেন। মস্কোয় বিবিসির প্রতিনিধিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

শেষ সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট গর্বাচেভ বলেন, ‘আফগানিস্তানে জয় অসম্ভব। বিষয়টি যত কঠিনই হোক না কেন, সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ওবামা ঠিক কাজটি করেছেন।তবে তিনি এটাও বলেছেন, আফগান পরিসি'তি থেকে বের হয়ে আসতে যুক্তরাষ্ট্রকে খাবি খেতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১১ সালের জুলাই থেকে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন। গর্বাচেভের সাক্ষাৎকারটি গতকাল বুধবার প্রচারিত হয়। প্রায় ১০ বছর যুদ্ধর পর ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। মিখাইল গর্বাচেভ তখন প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন।

গর্বাচেভ আরো বলেন, পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ কঠিন হবে। তবে ভিয়েতনামের মতো পরিণতি এড়াতে তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা আছে? তারা কি সেখানে পাঁচ লাখ সেনা পাঠাবে? তাতেও কাজ হবে না।আফগানিস্তানে বর্তমান ন্যাটো বাহিনীর প্রায় দেড় লাখ সেনা মোতায়েন আছে।

আফগানিস্তানে ন্যাটো সবচেয়ে ভালো যে কাজটি করতে পারে বলে গর্বাচেভ মনে করেন তা হল, দেশটিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করা এবং যুদ্ধপরবর্তী পুনর্গঠনে সাহায্য করা। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

গর্বাচেভ সাহেবের এই বক্তব্য দেখে ঢাকার একজন ইমাম সাহেব বলেছেন, গর্বাচেভ তার এই সাক্ষাৎকারে যা বলেননি তা হল, এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় দেশটিও ভেঙ্গে যেতে পারে। সেখানকার নেতারাও বলতে বাধ্য হতে পারেন, আফগানিস্তানে ঢুকে আমরা পাপ করেছি।বাস্তবেই এক পাপীর অভিজ্ঞতা ও পরিণতি থেকে আরেক পাপী সবক নিলে বড়ই লাভবান হতে পারে। তবে আফসোসজনক বাস্তবতা হল, কোনো পাপীই আরেক পাপীর অভিজ্ঞতার গল্প শুনে পাপকাজ থামাতে চায় না। ধরা খেলেই কেবল থামে। তখন সে-ও অভিজ্ঞহয়ে যায় এবং অভিজ্ঞতার কথা বলে বলে পরবর্তীদের সামনে নিজের ইমেজ মেকাপ’-এর মহড়া দেয়।

আমরা জানি না, আফগানিস্তানে ঢুকে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ পরিণতি কী হবে? কিন্তু গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ দিনগুলোতে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট গর্বাচেভ সাহেবকে আফগানী মার খেয়ে খেয়ে গ্লাসনস্তপেরেস্ত্রয়কাধরনের সংস্কার কর্মসূচি নিতে দেখেছি। শেষ রক্ষা হয়নি। এবার কি আমরা নতুন শতাব্দীর দশের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও নতুন নতুন সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করতে দেখব? তারপর পিছু হঠা বিপর্যস্ত এক মোড়লের বিধ্বস্ত চেহারায় অশ্রুর ক্ষত দেখে থমকে দাঁড়াবে? আল্লাহ তাআলার ফয়সালা চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া দুনিয়ার মানুষের আর কী বা করার আছে! 

 

advertisement