হুঁশের সঙ্গে পড়ি ভালোভাবে পড়ি
الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد!
হুঁশের সঙ্গে পড়া এবং বুঝে বুঝে পড়া তালিবে ইলমের জন্য অত্যন্ত জরুরি। নতুবা তালিবে ইলমের মধ্যে মৌলিক ইসতিদাদ কখনো তৈরি হবে না। বরং বাস্তবতা হল, ইসতিদাদের সর্বনিম্ন স্তর আরবী কিতাব পড়তে পড়তে বুঝতে থাকা। আর সর্বোচ্চ স্তর তাফাক্কুহ ফিদ্দীন এবং রুসূখ ফিল ইলম।
বর্তমানে আমরা যারা তালিবে ইলম, আমাদের মাঝে কিতাব বোঝার যোগ্যতা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ বহু ছাত্রের হালত হল, তাদের মধ্যে কিতাব বোঝার যোগ্যতাই তৈরি হয়নি। প্রথম দুই-তিন জামাতে যে ইসতিদাদ হওয়ার কথা তা হয়নি। আর সেটারই জের টানতে হচ্ছে হেদায়া, জালালাইন ও মেশকাত পর্যন্ত। কারো সে প্রাথমিক ইসতিদাদ অবশ্য হয়েছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগের অভাবে এবং আকল ও ফাহমের যে সমৃদ্ধির দরকার ছিল তার অভাবে হেদায়া-জালালাইন এবং ইনায়া-মিরকাত জাতীয় ইলমী কিতাব বোঝার ইসতিদাদ পয়দা হয়নি। প্রথম দুই-তিন জামাতে যে ইসতিদাদ হয়েছে, হেদায়া-জালালাইন পড়ার পরও ইসতিদাদ ওই পর্যায়েই রয়ে গেছে। কোনো উন্নতি হয়নি।
উন্নতি না হওয়ার অনেক কারণ। একটি বড় কারণ খেয়াল করে হুঁশের সঙ্গে না পড়া এবং বুঝে বুঝে পড়ার চেষ্টা না করা। শুধু পড়ে যায়; বিশ্লেষণ করে পড়ে না। কী পড়ছে, পড়াটা হচ্ছে কি না এবং বুঝটা সঠিক কি না- এসবের কোনো খেয়াল নেই। যাকে বলে বেহুঁশির সঙ্গে পড়া। ফলে সারা বছর পড়ে ভালো নম্বর পেয়ে পাস করা সত্ত্বেও খোঁজ নিলে দেখা যায়, কিতাবের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ফনের সঙ্গে মুমারাসাত হয়নি। সহজ ইলমী তা‘বীরও বোঝে না। সূরতে মাসআলা বয়ান করতে পারে না। একই মাসআলা আরেক কিতাব থেকে পড়তে দিলে বোঝে না। তা‘বীর বা উসলুবে সামান্য পার্থক্য হলেই আর অগ্রসর হতে পারে না।
বেহুঁশির আশ্চর্য উদাহরণ উল্লেখ করেছেন হযরাতুল উস্তায দামাত বারাকাতুহুম তাঁর ‘মুহাযারাতে উলূমুল হাদীস’ কিতাবে। উস্তাযে মুহতারাম বলেন-
بعض لوگ بات سمجھتے نہيں ہيں پھر يہ بہانہ کرتے ہيں کہ استاذ نے نہيں بتايا۔ ايک صاحب دورہ حديث کے بعد کہيں تدريس کے ليے گئے۔ امتحان ميں پوچھا گیا کہ "جلالين" کے مصنف کا کيا نام ہے؟ تو وہ کہنے لگے استاذ نے نہيں بتايا!! ايک اور صاحب يہاں تخصص فی الحديث ميں داخلے کے ليے آيے، ميں نے پوچھا "شرح النخبۃ" کس فن کی کتاب ہے؟ کہنے لگے اصول فقہ کی کتاب ہے، ميں نے پوچھا: دليل کيا ہے؟ فرمانے لگے: استاذ نے بتايا ہے!!
(মুহাযারাতে উলূমুল হাদীস, পৃ. ১২২)
যাহোক বেখেয়ালি ও বেহুঁশির সঙ্গে বছরের পর বছর পড়তে থাকলেও ইসতিদাদ তৈরি হবে না। ইসতিদাদ হাসিলের অন্যতম মৌলিক শর্ত হল, হুঁশের সঙ্গে খেয়াল করে করে পড়া এবং বুঝে বুঝে পড়ার চেষ্টা করা। এভাবে মেহনত করলে এবং খেয়াল করে পড়লে একপর্যায়ে পড়তে পড়তে বুঝতে থাকবে এবং ইসতিদাদ তৈরি হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা হযরাতুল উস্তায দামাত বারাকাতুহুমকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। গত সংখ্যায় তিনি ‘হুঁশ’ ও ‘ফিকির’ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করলে আমাদের মধ্যে হুঁশ ও ফিকির পয়দা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এ সংখ্যার জন্য তিনি অধমকে আদেশ করলেন এ সম্পর্কে আরো কিছু লিখতে, যাতে তালিবে ইলম ভাইদের জন্য বিষয়টা অনুধাবন করা এবং হুঁশ কাজে লাগিয়ে বুঝে বুঝে পড়া সহজ হয়। বাস্তবতা হল, আল্লাহ মাফ করুন, আমার নিজেরই এখনো হুঁশ হয়নি! যেহেতু উস্তাযের হুকুম, তাই আমি পালন করেছি। এরপর উস্তাযে মুহতারাম দামাত বারাকাতুহুম অনেক কিছু তাসহীহ করেছেন। অনেক বিষয় ইযাফা করেছেন। এই লেখার প্রথম মুখাতাব আমি নিজে। আশা করি- এতে আমারও ফায়দা হবে, অন্য তালিবে ইলম ভাইদেরও ফায়দা হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রথম জামাত থেকেই মেহনত করা
ইসতিদাদ তৈরির জন্য প্রথম জামাত থেকেই মেহনত করা জরুরি। মিযান, নাহবেমীর ও হেদায়াতুন্নাহু এই জামাতগুলো ইসতিদাদ তৈরির মূল ভিত্তি। এ জামাতগুলোতে যা কিছু আমরা পড়ব সেগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো এখন কিন্তু অনেক সহজ হয়ে গেছে। তা হল, الطريق إلى العربية এবং التمرين الكتابي على الطريق إلى العربية। এ কিতাবদুটি যদি তামরীনের হক আদায় করে মুসান্নিফের নির্দেশিত পন্থায় পড়া হয় তাহলে সত্যি আরবী কিতাব পড়তে পড়তে বোঝার যোগ্যতা তৈরি হবে। আমার জানা মতে এই দুই কিতাব, কমপক্ষে প্রথম কিতাব প্রায় সব মাদরাসায় নেসাবের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া ‘কাসাসুন নাবিয়্যীন’-এর খণ্ডগুলো তো সব মাদরাসাতেই নেসাবভুক্ত। সহজ সরল ভাষায় উপস্থাপিত এই কিতাবটি মুবতাদীদের আরবী চর্চার জন্য অনেক উপকারী। নাহু-সরফের প্রাথমিক কিতাবগুলোতে আমরা যা পড়েছি, তার বাস্তব অনুশীলন এখানে করতে পারি। প্রথম জামাতগুলোর তালিবে ইলমরা এই কিতাবের মাধ্যমে আরবী-চর্চা কীভাবে করবে তার সুন্দর বিবরণ পাওয়া যাবে দারুল কলম থেকে প্রকাশিত ‘কাসাসুন নাবিয়্যীন’-এর শুরুতে হযরত আদীব হুযুর দামাত বারাকাতুহুমের ভূমিকায়। এই বিবরণে পেশকৃত পন্থা অবলম্বন করলে ইসতিদাদও তৈরি হবে এবং আরাবিয়াতের যওকও পয়দা হবে ইনশাআল্লাহ।
ইবারত হল্ করা
কোনো ইবারত সঠিকভাবে বোঝার জন্য যে বিষয়গুলো জরুরি তার মধ্যে অন্যতম হল- শব্দের অর্থ, ই‘রাব ও তারকীব, যমীরের মারজে, হরফে জরের তাআল্লুক, সিলা-মাওসূল ইত্যাদি বিষয় হল্ করা। সত্য কথা হল, প্রাথমিক তামরীনগুলো যথাযথভাবে হয়ে থাকলে এসব বিষয় হল্ করার জন্য আলাদা পরিশ্রমের দরকার হয় না। ইবারত পড়তে পড়তে এ বিষয়গুলো এমনিতে হল্ হতে থাকে। আমার অবস্থা ব্যতিক্রম হলে আমাকে সতর্ক হতে হবে এবং খুব একাগ্রতার সঙ্গে মন লাগিয়ে ইবারত হল্ করার এই মেহনতটি করতে হবে। যাতে একপর্যায়ে বিষয়গুলো ইবারত পড়তে পড়তে আমার হল্ হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, এই ধাপ অতিক্রম না করে কিতাবী ইসতিদাদ তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
থানভী রাহ.-এর বিশেষ নসীহত
হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ. নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে তালিবে ইলমদেরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি নসীহত করতেন। তিনি বলতেন, ‘ব্যস তোমরা তিনটি কাজ নিজেদের জন্য আবশ্যক করে নাও। আমি দায়িত্ব নিচ্ছি, তোমাদের ইলমী ইসতিদাদ হাসিল হয়ে যাবে (ইনশাআল্লাহ)।
১. দরসের আগে অবশ্যই সামনের সবক মুতালাআ করবে। এটা কোনো কঠিন কাজ নয়। কারণ এই মুতালাআর উদ্দেশ্য কেবল এটুকু যে,
معلومات اور مجہولات متميز ہو جائيں.
জানা আর অজানা বিষয় চিহ্নিত হয়ে যাওয়া। (অর্থাৎ কতটুকু বুঝেছি আর কতটুকু বুঝিনি এটা চিহ্নিত হয়ে যাওয়া।) ব্যস, এর বেশি (আপাতত) দরকার নেই।
২. এরপর দরসে উস্তাযের নিকট সবক ভালোভাবে বুঝে পড়বে। (বিশেষভাবে লক্ষ রাখবে, মুতালাআর সময় যা বুঝেছিলাম তা সঠিক ছিল কি না। আর যে অংশ বুঝিনি তা খুব ভালো করে শুনব, যাতে এখন বুঝে নিতে পারি।) তখন যদি উস্তাযের মন প্রস্তুত না থাকে এবং জিজ্ঞেস করলে বিরক্ত হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে অন্যসময় বুঝে নেবে।
৩. দরসের পর পুরো সবকের সারকথা তাকরার করে নেবে। কোনো সাথী না পেলে নিজের সঙ্গে নিজে তাকরার করবে।
এই তিন কাজ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত করতে পারলে নিশ্চিন্ত হয়ে যাও। পেছনের পড়া মনে আছে কি না- এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই ইসতিদাদ হয়ে যাবে।
এই তিন কাজ তো ওয়াজিব পর্যায়ের। আরেকটি কাজ আছে মুস্তাহাব পর্যায়ের। প্রতিদিন ‘আমুুখতা’ অর্থাৎ পেছনের কিছু পড়া দোহরাবে।’ -আশরাফুস সাওয়ানেহ, খ. ১, পৃ. ৫০-৫১; খুতুবাতে হাকীমুল উম্মত, খ. ২৫, পৃ. ৫২ (হুদূদ ওয়া কুয়ূদ)
উসলুবের ভিন্নতার বিষয়টি লক্ষ রাখা
একই বিষয়ের উপস্থাপন বিভিন্ন রকম হতে পারে। তাই দেখা যায়, একটি বিষয় এক কিতাবে একভাবে উপস্থাপিত হয়ে থাকলে আরেক কিতাবে আরেকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এক্ষেত্রে উভয় উসলুবের মাঝে যে পার্থক্য সেটা বুঝে নেয়া উচিত এবং উভয় উসলুব অনুযায়ীই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নেয়া জরুরি। যেমন নাহবেমীর কিতাবে মু‘রাবকে মূল শিরোনাম ধরে ১৬ প্রকার মু‘রাবের ই‘রাব বর্ণনা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে হেদায়াতুন্নাহু কিতাবে ই‘রাবকে শিরোনাম করে ৯ প্রকার ই‘রাবের অধীনে ১৬ প্রকার মু‘রাবের ই‘রাব বর্ণনা করা হয়েছে। উভয় কিতাবের আলোচনা যদি আমি হুঁশের সঙ্গে পড়ে থাকি তাহলে নাহবেমীরের আলোচনা হেদায়াতুন্নাহুর আলোকে উপস্থাপন করতে পারব। তেমনি হেদায়াতুন্নাহুর আলোচনা নাহবেমীরের আলোকে পেশ করতে পারব।
নাহবেমীরে عوامل-এর মৌলিক ৩ প্রকারকে শিরোনাম করে معمولات-এর আলোচনা করা হয়েছে। আর হেদায়াতুন্নাহুতে معمولات-এর মৌলিক ৩ প্রকারকে শিরেনাম করে عامل ও معمول-এর আলোচনা করা হয়েছে। নাহবেমীরের শিরোনাম হল-
حروف عاملہ، عمل افعال এবং عمل اسمائے عاملہ। আর হেদায়াতুন্নাহুর শিরোনাম হল- المرفوعات، المنصوبات এবং المجرورات।
উপস্থাপনের উসলুবে এই যে ভিন্নতা- এর দ্বারা বিষয়গুলো ভালোভাবে আত্মস্থ করা সহজ হয়ে যায়। খেয়াল করে না পড়লে কারো কাছে উপস্থাপনের এই ভিন্নতাটাই তাআরুয ও বৈপরীত্য মনে হবে।
সমন্বয় করে পড়া
অর্থাৎ বিভিন্ন কিতাব থেকে পঠিত একই বিষয়ের অংশগুলোকে একত্র করার চেষ্টা করা। পরিপূরক আলোচনা অনুধাবন করার চেষ্টা করা। এটা একটা জরুরি কাজ।
নতুন যে বিষয়টা পড়লাম সেটা কি একেবারে নতুন বিষয়, নাকি পূর্ব-পঠিত কোনো বিষয়ের ব্যাখ্যা? নাকি শুধু ভাষা বা উসলুবের ভিন্নতা?
একটা বিষয়ের বিভিন্ন দিক থাকে। অনেক সময় দেখা যায়- এক কিতাবে একটা দিক সম্পর্কে বলা হয়েছে, আরেক কিতাবে আরেকটা দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আলোচনাসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝা এবং পরিপূরক আলোচনাগুলোকে একত্র করে পূর্ণ বিষয়টা অনুধাবন করা জরুরি।
বিষয়টা প্রায় সব জামাতের তালিবে ইলমদের জন্য প্রযোজ্য। উদাহরণত নেসাবে একই বিষয়ে একাধিক কিতাব থাকে। যেমন ফিকহ বিষয়ে নাহবেমীর জামাতে ‘আলফিকহুল মুয়াসসার’ বা ‘মা লা বুদ্দা মিনহু। হেদায়াতুন্নাহু জামাতে ‘নূরুল ঈযাহ’ এবং কাফিয়া জামাতে ‘মুখতাসারুল কুদুরী’। এরপরে যথাক্রমে ‘কানয’, ‘শরহে বেকায়া’ এবং ‘হেদায়া’। মানে একটা বিষয়ই একাধিক কিতাবে পড়া হয়। তবে পরবর্তী জামাতের কিতাবগুলো কিছুটা বিস্তৃত এবং দালীলিক বিশ্লেষণসহ।
সমস্যা হল, এই বছর পড়ার সময় আগের বছরের পড়া আর খেয়াল রাখি না। যেমন হেদায়া পড়ার সময় শরহে বেকায়ার পড়া মাথায় থাকে না। সেজন্য হেদায়াতে নতুন কী শেখা হল, অর্থাৎ নতুন মাসআলা, নতুন তা‘বীর, নতুন ইসতিদলাল এগুলো ধরতে পারি না। শুধু পড়ে যাই। অথচ হুঁশের সঙ্গে বিশ্লেষণ করে না পড়লে এ বিষয়গুলো অনুধাবন করা সম্ভব নয়।
উস্তাদজীর হুকুমে একবার এক তালিবে ইলম ভাইয়ের সঙ্গে হেদায়া সালেস থেকে খিয়ারুল মাজলিসের মাসআলা মুযাকারার সুযোগ হল। খিয়ারুল মাজলিসের পক্ষে যে প্রসিদ্ধ হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া হয় তার ব্যাখ্যায় ছাহেবে হেদায়া বলেন-
والحديث محمول على خيار القبول. وفيه إشارة إليه فإنهما متبايعان حالة المباشرة لا بعدها أو يحتمله فيحمل عليه...
এখানে হাদীসটির দুইটি ব্যাখ্যা বলা হয়। একটি أو-এর আগে, আরেকটি তার পরে। প্রশ্ন হল, এই দুই ব্যাখ্যার মধ্যে কী পার্থক্য?
মুযাকারার একপর্যায়ে ইনায়া ও ফাতহুল কাদীর খোলা হল। ইনায়াতে আছে-
أويحتمل أن يكون مرادا فيحمل عليه. والفرق بينهما أن أحدهما مراد والآخر محتمل للإرادة.
ফাতহুল কাদীরে আছে-
قال المصنف - رحمه الله تعالى - : (أو) هو (يحتمله فيحمل عليه) جمعا بين ما ذكرناه من الآيات حيث كان المتبادرُ إلى الفهم فيها تمامَ البيع والعقد والتجارة عن تراض بمجرد الإيجاب والقبول وعدمَ توقف الأسماء على أمر آخر.
জিজ্ঞেস করা হল, বুঝেছেন কি না? বললেন, আলোচনা দুটিতে তাআরুয মনে হচ্ছে। অথচ স্পষ্ট যে, এখানে তাআরুয তথা বৈপরীত্যের কিছু নেই।
ছাহেবে ইনায়া কিতাবের ইবারত হল্ করেছেন আর ছাহেবে ফাতহুল কাদীর فيحمل عليه-এর দলীল বয়ান করেছেন। ছাহেবে হেদায়া দ্বিতীয় জবাব على سبيل التنزل পেশ করেছেন। এবং যে মাফহুমটাকে প্রথম জবাবে জযমের সাথে মুরাদ বলেছেন, দ্বিতীয় জবাবে সেটাকে মুহতামাল ধরেছেন। কিন্তু নতীজা (فيحمل عليه) জযমের সাথেই বলেছেন। এর দলীল উল্লেখ করার দরকার ছিল; সেই কাজটিই ছাহেবে ফাতহুল কাদীর করেছেন।
মোটকথা ইনায়া ও ফাতহুল কাদীরের ইবারতে কোনো তাআরুয নেই। কেবল না বোঝার কারণে তাআরুয মনে হয়েছে।
অবশ্য কখনো বাস্তবেই তাআরুয দেখা দিতে পারে। আমার আগের পড়া, জানা বা শোনা কোনো বিষয়ের সঙ্গে নতুন পড়া কোনো বিষয়ের তাআরুয হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এর সমাধান বের করতে হবে। নতুবা দেখা যাবে, বিপরীত দুই বিষয় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেজন্য কোথাও কোনো ইশকাল হলে অবশ্যই উস্তাযের শরণাপন্ন হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কিতাবাদি মুরাজাআত করতে হবে। তবে এটা উপরের জামাতের তালিবে ইলমদের জন্য প্রযোজ্য। মুবতাদী তালিবে ইলমরা বিষয়টা উস্তাদজী থেকে হল করে নেবেন।
খোলাসা প্রস্তুত করা
মুতালাআর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ খোলাসা প্রস্তুত করা। খোলাসা হল মুতালাআর সার-নির্যাস।
মুতালাআ যথাযথ হলে পঠিত বিষয়ের খোলাসা এমনিতেই যেহেনে হাজির হয়ে যায় এবং তা নিজের ভাষায় ব্যক্ত করা, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে প্রকাশ করা সহজ হয়ে যায়।
এটা তো যে কোনো জামাতের তালিবে ইলমেরই দায়িত্ব। হযরত থানভী রাহ.-এর নসীহতের উপর আমল করলে খোলাসা প্রস্তুত করার কাজটি একেবারে সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
খোলাসা প্রস্তুত করার আরেকটি স্তর আছে, যা উপরের জামাতের ছাত্রদের জন্য প্রযোজ্য। তা হল, একটি বিষয় মতন, হাশিয়া এবং শরাহ থেকে পড়ার পর তার مَا حَصَلَ কীভাবে আত্মস্থ করবে?
ধরুন, শরহে বেকায়া কিতাবে একটা মাসআলা পড়লেন। এরপর তার হাশিয়া উমদাতুর রিআয়াহ দেখলেন। প্রয়োজনে তার শরাহ আসসিআয়াহ বা ফিকহের অন্য কোনো কিতাব মুরাজাআত করলেন। সেগুলোর কোনোটাতে হয়ত মুসান্নিফের কথার ব্যাখ্যা আছে, কোনোটাতে কোনো ইশকাল উল্লেখ করে তার জবাব দেয়া হয়েছে, আবার কোনোটাতে হয়ত পরিপূরক কথা আছে। এই সব কিছুর আলোকে মূল মাসআলাটা কী দাঁড়াল সেটা বের করার নামই হল খোলাসা প্রস্তুত করা।
খোলাসা মুতালাআরই অংশ। তবে এজন্য পুরো আলোচনা মনোযোগ দিয়ে পড়তে হয়, মাথা খাটাতে হয়, প্রয়োজনে বারবার পড়তে হয়; তাই অনেকে এ ব্যাপারে অলসতা করে। শুধু পড়ে চলে যায়। কিন্তু বাস্তবতা হল, এভাবে পড়ে চলে গেলে মুতালাআ থাকে না; হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে স্পষ্টভাবে কিছুই মনে পড়ে না। ‘দুখ’-এর মত আবছা মনে পড়ে। সেজন্য মুতালাআ করে খোলাসা বা সারাংশ প্রস্তুত করার মেযাজ পয়দা করতে হবে এবং ধীরে ধীরে এর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
তবে মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে তাড়াহুড়ো বা খামখেয়ালি করলে অনেক সময় কঠিন বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। এক ব্যক্তি হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ.-এর দুই বক্তব্যের মধ্যে বৈপরীত্য দেখিয়ে হযরতের নিকট পত্র লিখল। হযরত জবাবে বললেন-
معلوم ہوتا ہے آپ نے بہشتی زيور کے ضمیمہ کو بالکل نہيں سمجھا، اور افسوس ہے کہ عبارت بھی اس کی بعینہ نقل نہيں کی۔اپنی طرف سے غلط سمجھ کر خلاصہ نکال کر نقل کر ديا۔ ايسا تصرف نقل ميں گناہ بھی ہے...
(ইমদাদুল ফাতাওয়া, খ. ১, পৃ. ৪০৩)
সেজন্য প্রথমে তো পুরো আলোচনা যথাযথভাবে বুঝতে হবে, এরপর ধীরেসুস্থে ভেবেচিন্তে খোলাসা বের করতে হবে এবং নোট করতে হবে।
তাকরার
তাকরার বলতে আমরা সাধারণত বুঝি, দরসের পর জামাতবদ্ধ হয়ে মুযাকারা করা। এখানে উদ্দেশ্য পুনঃপাঠ। অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ কোনো মাসআলা বা কিতাব একবার পড়ে রেখে না দিয়ে বরং বারবার পড়া। বিরতি দিয়ে দিয়ে পড়া। অর্থাৎ এখন পড়লাম; কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার পড়লাম।
এভাবে পড়লে ইনশাআল্লাহ বিষয়টা অন্তরে গেঁথে যাবে এবং মাসআলার নতুন নতুন দিক এবং নতুন নতুন ফায়দা সামনে আসবে, যেগুলো আগের মুতালাআয় আসেনি।
সব কিতাব বা কিতাবের সব আলোচনা হয়ত এভাবে পড়া সম্ভব নয়; তবে গুরুত্বপূর্ণ কিতাব ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাগুলো এভাবে বারবার পড়া উচিত।
মুযাকারা
মুযাকারা নিজের সঙ্গেও হতে পারে, সাথীদের সঙ্গেও হতে পারে এবং উস্তাযের সঙ্গেও হতে পারে। মুযাকারার অনেক ফায়দা। এর দ্বারা পঠিত বিষয়টি আত্মস্থ হয়, মাসআলার নতুন নতুন দিক সামনে আসে, ফাহম ও বুঝশক্তি মজবুত হয় এবং নিজের ভুল ধরা পড়ে।
মুযাকারার কিছু উসূল ও আদব রয়েছে। এর জন্য শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামা হাফিযাহুল্লাহর কিতাব ‘মাআলিমু ইরশাদিয়্যা’ (পৃ. ২৬৩-২৬৯) দেখা যেতে পারে।
ইলমকে আমলী ময়দানে প্রয়োগের চেষ্টা করা
এটা অত্যন্ত জরুরি। যতক্ষণ না ইলমকে আমলীভাবে প্রয়োগ না করা হবে, সেটা মজবুত হবে না। তামরীন ও ইজরা-এর গুরুত্ব তো এজন্যই যে, এর দ্বারা ইলমকে আমলীভাবে প্রয়োগের অনুশীলন হয়।
উদাহরণস্বরূপ একজন তালিবে ইলম الطريق إلى البلاغة কিংবা دروس البلاغة কিতাবটি পড়ল। এরপর যখন সে কুরআন মাজীদ বা হাদীস শরীফ অধ্যয়ন করবে তখন সে নিজের পঠিত বিষয়গুলো যাচাই করবে। খেয়াল করবে, এর দ্বারা সে কুরআন-হাদীসের বালাগাত কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারছে কি না। বিষয়টি আরো পরিষ্কার হওয়ার জন্য কুরআনুল কারীম সংখ্যায় উস্তাযে মুহতারাম মাওলানা আব্দুল মতিন ছাহেব দামাত বারাকাতুহুমের প্রবন্ধ ‘কুরআন অনুধাবন : কিছু করণীয়’ দেখা যেতে পারে।
এভাবে আমরা যে কয়টি শাস্ত্রই পড়ব, আমলী ময়দানে তার তাতবীক ও প্রয়োগ খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এখন আমরা তামরীনের মারহালায় আছি। তাই কোনো বিষয়েই নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেব না। বরং আহলে ফনের কিতাব মুরাজাআত করব এবং উস্তাযের শরণাপন্ন হব।
ইলমকে আমলী ময়দানে প্রয়োগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল, কিতাবে পঠিত মাসআলাকে বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা। অর্থাৎ মাসআলাটা বর্তমান সমাজে ঘটে কি না, সমাজে এটা কী শিরোনামে আছে, এর সমজাতীয় মাসআলাগুলো কী কী ইত্যাদি। বিষয়টা ভালোভাবে বোঝার জন্য ‘তালিবানে ইলম : পথ ও পাথেয়’ কিতাবে ‘হেদায়াকে যুগের সাথে মিলিয়ে পড়া’ (পৃ. ৩৩৯-৩৪০) এবং ‘হেদায়া : শুফআ‘ অধ্যায় ও প্রচলিত জমি-জমা আইনের তুলনামূলক অধ্যয়ন’ (পৃ. ৩৪৯-৩৫০) শিরোনামের অধীনে উস্তাযে মুহতারাম দামাত বারাকাতুহুমের আলোচনাদুটি দেখা যেতে পারে।
উস্তাযকে শুনিয়ে নিজের ফাহম যাচাই করে নেয়া
এটা অত্যন্ত জরুরি একটি কাজ। আামার বুঝ সঠিক কি না, তা যাচাইয়ের জন্য কর্তব্য হল, কোনো ইলমী কিতাবের গুরুত্বপূর্ণ বহসসমূহ নিজে মুতালাআ করে উস্তাযকে শোনানো। এর দ্বারা ইনশাআল্লাহ নিজের দুর্বলতাগুলো ধরা পড়বে, ফাহম মজবুত হবে এবং হিম্মতও বাড়বে। এ ব্যাপারে আমাদের মাঝে ব্যাপক অবহেলা ও উদাসীনতা আছে, যা একদম অনুচিত। নিজের মতো পড়ি, নিজের মতো বুঝি, আর ভাবি, আমি যেটা বুঝেছি সেটাই সঠিক। কিন্তু আমার মুতালাআ হচ্ছে কি না, আমার বুঝটা সঠিক কি না- উস্তাযের কাছে গিয়ে এসব যাচাইয়ের কোনো প্রয়োজন আমরা অনুভব করি না। ফলে আমাদের দুর্বলতাগুলো আর দূর হয় না এবং ইসতিদাদ কাঁচাই রয়ে যায়।
আপাতত এ কয়টি বিষয় আলোচনা করা হল। এর আলোকে যদি আমরা মেহনত করতে থাকি, ইনশাআল্লাহ আমাদের উদাসীনতাও দূর হবে, বুঝশক্তিও মজবুত হবে এবং বুঝে বুঝে পড়া সহজ হবে।
তবে এসবের জন্য সময় ও মেধা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। সময় নষ্ট করলে এবং মস্তিষ্কের অলসতা দূর না করলে এগুলো কখনো সম্ভব নয়। সেজন্য এখন থেকে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। মস্তিষ্ককে বিশ্লেষণ করে পড়তে ও বুঝতে অভ্যস্ত করতে হবে। গুনাহ ও অনর্থক কাজকর্ম ও কথাবার্তা থেকে বাঁচতে হবে আর আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আমি আমাকে এবং তালিবে ইলম ভাইদেরকে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি-
احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ، وَاسْتَعِنْ بِاللهِ وَلَا تَعْجَزْ.
যা তোমার উপকার করবে তার প্রতি আগ্রহী হও (তার জন্য পরিশ্রম কর), আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং হীনবল হয়ো না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৬৪
সবশেষে নওয়াব সদর ইয়ার জঙ্গ মাওলানা হাবীবুর রহমান শেরওয়ানী (১২৮৩ হি.-১৩৬৯ হি.) রাহ.-এর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করছি। ‘মাশাহীরে আহলে ইলম কি মুহসিন কিতাবে’ সংকলনের শুরুতে তাঁর যে প্রবন্ধটি, তাতে তিনি লিখেন-
ايک ہی کتاب کو بہت سے لوگ پڑھتےہيں، اثر مختلف ليتے ہيں۔ ايک ہی کتاب، ايک دل ميں خشيت الہی، پاکيزگی اخلاق واخلاص پيدا کرتی ہے۔ دوسرے دل ميں الحاد، تمرّد اور اخلاق رذيلہ، اُسی کتاب کے مطالعے سے پيدا ہوتے ہيں۔ يہ فرق کيوں ہے؟ کتاب ايک، مطالب وہی۔۔۔ فرق ہے تربيت، استعداد، قابليت اور دل ودماغ پر صحبت کے اثر کا۔
(মাশাহীরে আহলে ইলম কি মুহসিন কিতাবে, পৃ. ৫)
বর্তমানে আমাদের মাঝে যে ব্যাপক ইলমী, আমলী ও ফিকরী ইনহিতাত, তার মৌলিক কারণ এগুলোই- উস্তাযদের তরবিয়ত গ্রহণ না করা, ইসতিদাদে দুর্বলতা এবং মন-মস্তিষ্কে মন্দ সংশ্রবের প্রভাব।
আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন। আমাদেরকে ইলম ও হিকমত এবং ফাহম ও বসীরত দান করুন- আমীন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.