প্রশ্নোত্তর
[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম ‘প্রশ্নোত্তর’। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন ২৬ :
তাফসীরে বয়ানুল কুরআন এবং আশরাফুত তাফাসীর কি থানভী রাহ.-এর নিজের রচিত দুটি ভিন্ন তাফসীরগ্রন্থ, নাকি একটি কিতাব?
উত্তর : বয়ানুল কুরআন থানভী রাহ.-এর নিজের রচিত তাফসীরগ্রন্থ। তবে আশরাফুত তাফাসীর তাঁর রচিত নয়; বরং থানভী রাহ. তাঁর মালফূযাত ও মাওয়ায়েযে যেসকল আয়াত সম্পর্কে বিভিন্ন মূল্যবান হেদায়েত পেশ করেছেন, সেগুলো তাঁর কিতাবাদি থেকে নিয়ে এ কিতাব সংকলন করা হয়েছে। এ সংকলন প্রস্তুত করেছেন মুহাম্মাদ ইসহাক ও ইকবাল কুরায়শী।
এ কিতাবে ধারাবাহিকভাবে সকল আয়াত নেই; বরং যেসকল আয়াত ও তদসংশ্লিষ্ট হেদায়েত থানভী রাহ.-এর মালফ‚যাত ও মাওয়ায়েযে এসেছে, সেগুলোই সূরার ধারাবাহিকতায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ কিতাবে আয়াতের উর্দূ তরজমা নেওয়া হয়েছে তাঁরই রচিত বয়ানুল কুরআন থেকে আর তাফসীর ও হেদায়েত তাঁর অন্যান্য কিতাব থেকে উদ্ধৃত। এটি ১৪২৫ হিজরীতে প্রথম প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন ২৭ :
হুজুর, আমাদের দেশের কুরআন শরীফের কিছু সূরার নাম বিদেশি ছাপা কুরআনের কিছু সূরার নামের সাথে মেলে না। যেমন সূরা লাহাব। এরকম আরও দু-তিনটি সূরা আছে; এটা কেন?
উত্তর : কুরআনের কয়েকটি সূরার একাধিক নাম আছে। উলূমুল কুরআন বিষয়ক অনেক কিতাবে এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। একারণে ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশনীর ছাপা কুরআনে কিছু সূরার নামের পার্থক্য দেখা যায়।
প্রশ্ন ২৮ : তাফসীরের কিতাবাদিতে কা‘ব আহবার নামে একজনের তাফসীর উল্লেখ করা হয়? তিনি কে? তার থেকে বর্ণিত তাফসীর সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
উত্তর : তার নাম কা‘ব ইবনে মাতে‘ আলহিমইয়ারী। তবে কা‘ব আলআহবার নামেই পরিচিত। তিনি মুখাদরাম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ জাহেলী এবং ইসলামী উভয় যুগই পেয়েছেন। জাহেলী যুগে জন্ম নিলেও তিনি হযরত উমর রা.-এর যুগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তার দেখা হয়নি। কিন্তু তিনি মুরসাল বা সুত্রবিচ্ছিন্নভাবে নবীজীর হাদীস বর্ণনা করেন।
ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি ইহুদী ছিলেন এবং তাদের সেসময়কার ধর্মগ্রন্থের পন্ডিত ছিলেন। তাই তার সূত্রে প্রচুর ইসরাঈলী রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং তার সূত্রে বর্ণিত এসব রেওয়ায়েত ইসরাঈলী রেওয়ায়েত বর্ণনার নীতিমালা অনুযায়ী বিবেচ্য হবে। ইসরাঈলী রেওয়ায়েত বর্ণনার নীতিমালা মাওলানা তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের উলূমুল কুরআন (পৃ. ৩৪৯-৩৫১) কিতাবে দেখে নিতে পারেন। (আলইসাবা ৫/৬৪৭; আলইসরাঈলিয়্যাত ওয়াল মাওযূআত ফী কুতুবিত তাফসীর, পৃ. ১০০)
প্রশ্ন ২৯ :
সূরা হিজরের ৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, নবীজীকে سبعا من المثاني দেওয়া হয়েছে, এর দ্বারা কী বোঝানো উদ্দেশ্য?
উত্তর : سبعا من المثاني দ্বারা সূরা ফাতেহা উদ্দেশ্য। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত-
قال رسولُ الله صلّى الله عليه وسلم: أُمّ القُرْآنِ هِيَ السّبْعُ المَثَانِي وَالقُرْآنُ العَظِيمُ.
অর্থাৎ উম্মুল কুরআনই (সূরা ফাতেহা) হল আসসাবউল মাছানী। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৭০৪)
مَثَانِي শব্দটি مَثْني শব্দের বহুবচন, এর অর্থ পুনরুক্ত বা বারংবার পঠিত। সূরা ফাতেহাকে السّبْعُ المَثَانِي বলার কারণ হল, এ সূরায় সাতটি আয়াত এবং তা বারবার পাঠ করা হয়। (দ্র. তাফসীরে তবারী ১০/১২১; তাফসীরে কুরতুবী ১০/৫৫)
প্রশ্ন ৩০ :
আমি একজনকে বলতে শুনেছি, সূরা তাহরীমের ৮ নং আয়াত অর্থাৎ-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْۤا اِلَی اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًا.
এ আয়াতে نصوحا নামের এক ব্যক্তির মতো তওবা করতে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি।
উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত অংশটি সূরা তাহরীমের ৮ নম্বর আয়াতের শুরুর অংশ। এর অর্থ, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো। অর্থাৎ এ আয়াতাংশে توبة نصوحا দ্বারা উদ্দেশ্য খালেস মনে তওবা করা। এমন তওবা, যার পরে গুনাহ করা দূরের কথা, গুনাহের কোনো ইচ্ছাই না করা হয়।
উমর রা.-কে توبة نصوحا -এর অর্থ কী- তা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন-
التوبة النصوح: أن يتوب الرجل من العمل السيئ، ثم لا يعود إليه أبدًا.
অর্থাৎ গুনাহ থেকে এমনভাবে তওবা করা, যার পরে তওবাকারী আর কখনোই গুনাহ করবে না।
ইবনে মাসঊদ রা. এবং ইবনে আব্বাস রা.-ও এ ধরনের কথাই বলেছেন। (তাফসীরে তবারী ১৩/১০৬-১০৮; তাফসীরে কাবীর ১০/৫৭৩)