আলকুরআনের দৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত যারা
সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ আলকুরআন। মানবজাতিকে হেদায়েতের দিশা দিতে আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ নবী, খাতামুন্নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি নাযিল করেছেন এ মহাগ্রন্থ। হক-বাতিল, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, লাভ-ক্ষতি ও আলো-অন্ধকারের মাঝে পার্থক্যরেখা টেনে দেওয়ার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহ তাআলার এ শাশ্বত ও চিরন্তন বাণী।
যে কুরআনকে সবচে বেশি ভালবাসবে, তাকে বুকে আগলে রাখবে এবং জীবনের প্রতিটি পর্বে একে মাইলফলক হিসেবে গ্রহণ করবে সে সঠিক পথের দিশা লাভ করবে। হক-বাতিল ও আলো-অন্ধকারের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবে।
কুরআন কারীম উপরোক্ত বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে। আজ আমরা দেখব, কুরআন কারীম কত স্পষ্ট ও গুরুত্বের সঙ্গে মানুষের জন্য ক্ষতির বিষয়গুলোকে তুলে ধরেছে। যেসব আয়াত আমাদেরকে ক্ষতিকর নানা বিষয়ে সতর্ক করেছে বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে তার মধ্য থেকে কিছু আয়াত সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরার প্রয়াস পাব। ইনশাআল্লাহুল আযীয।
ইসলামকে যারা দ্বীন হিসেবে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেনি তারা ক্ষতিগ্রস্ত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَ مَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْهُ ۚ وَ هُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ.
যে ব্যক্তিই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। এবং আখেরাতে সে মহা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।-সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮৫
আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে (গ্রহণযোগ্য) দ্বীন ইসলামই।’ ইসলাম বলতে বুঝায়, আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত ওহীর আলোকে মানুষকে পথনির্দেশ করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ পথনির্দেশকে মনেপ্রাণে মেনে নেওয়া ও তার সামনে নিজেকে সঁপে দেওয়ার নামই ইসলাম। প্রত্যেক যুগে নবীদের সফল ও সৌভাগ্যবান অনুসারীগণ তাদের নিজের জীবনকে নবীদের হাতে সঁপে দিয়েছেন। আল্লাহর নাযিলকৃত হেদায়েতের সামনে সমর্পিত হয়েছেন। সে হিসেবে সকল আসমানী দ্বীনই ইসলাম। কিন্তু একটা সময় গত হওয়ার পর সেসব নবীর উম্মত তাদের এ দ্বীন যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারেনি; বরং তাদের হাতে নানা বিকৃতির শিকার হয়েছে। ফলে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী দ্বীনকে রহিত করে আমাদের নবী খাতামুন্নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব কুরআনে কারীম দান করেছেন। এতে পূর্ববতী দ্বীনের অনেক কিছুই আর অনুসরণীয় থাকেনি; বরং কুরআন কারীম যা অনুসরণযোগ্য বলেছে শুধু তাই অনুসরণ করার সুযোগ রয়েছে। তাই এখন ইসলাম বলতে এ সর্বশেষ বার্তা দ্বীনে মুহাম্মদীকেই বুঝানো হয়। হেদায়েতের এ বার্তাকেই এখন অনুসরণ করা গোটা মানবজাতির দায়িত্ব ও কর্তব্য।
হাদীস শরীফেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَكَانَ النّبِيّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النّاسِ عَامّةً.
আগের যুগে নবী তাঁর আপন গোত্রেই প্রেরিত হতেন আর আমি সমস্ত মানুষের কাছে প্রেরিত হয়েছি।-সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৩৫
আরও ইরশাদ করেন-
لَوْ كَانَ مُوسَى حَيًّا بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ، مَا حَلّ لَهُ إِلّا أَنْ يَتّبِعَنِي.
মূসা আ. তোমাদের মাঝে জীবিত থাকলে তাঁর জন্যও আমার অনুসরণ ছাড়া কোনো উপায় থাকত না। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪৬৩১
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো আরও স্পষ্ট বলেছেন-
وَالّذِي نَفْسُ مُحَمّدٍ بِيَدِهِ، لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمّةِ يَهُودِيّ، وَلَا نَصْرَانِيّ، ثُمّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ، إِلّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النّارِ.
সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, এ উম্মতের যে কেউ ইহুদী হোক বা খ্রিস্টান, যে আমার কথা শুনবে অতঃপর আমি যে রিসালাত নিয়ে এসেছি তার প্রতি ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে নিশ্চয়ই সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৩
তাই দ্বীনে মুহাম্মাদী ছেড়ে ভিন্ন কোনো ধর্ম বা মতাদর্শের অনুসরণের সুযোগ নেই। কেউ মনেপ্রাণে এ দ্বীনকে গ্রহণ না করলে সে ক্ষতিগ্রস্ত। আখেরাতে জাহান্নামের ভয়ানক শাস্তি থেকে বাঁচার কোনো উপায় তার থাকবে না।
আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি যারা ভঙ্গ করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
الَّذِیْنَ یَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْۢ بَعْدِ مِیْثَاقِهٖ وَ یَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ یُّوْصَلَ وَ یُفْسِدُوْنَ فِی الْاَرْضِ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْخٰسِرُوْنَ.
সেই সকল লোক, যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি পরিপক্ক করার পরও ভেঙ্গে ফেলে এবং যেই সম্পর্ক রক্ষা করতে তিনি আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তার করে; বস্তুত এমন সব লোকই অতি ক্ষতিগ্রস্ত। -সূরা বাকারা (২) : ২৭
এখানে আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গিকার বলতে অনেক মুফাস্সিরগণের মতে মানুষ সৃষ্টির বহু আগে সমস্ত রূহকে একত্র করে যে অঙ্গিকার নেওয়া হয়েছিল তা বুঝানো হয়েছে। সূরা আরাফের ১৭২ নং আয়াতে তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
وَ اِذْ اَخَذَ رَبُّكَ مِنْۢ بَنِیْۤ اٰدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِّیَّتَهُمْ وَ اَشْهَدَهُمْ عَلٰۤی اَنْفُسِهِمْ اَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلٰی شَهِدْنَا اَنْ تَقُوْلُوْا یَوْمَ الْقِیٰمَةِ اِنَّا كُنَّا عَنْ هٰذَا غٰفِلِیْنَ.
এবং (হে রাসূল! মানুষকে সেই সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দাও) যখন তোমার রব আদম সন্তানদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তানদেরকে বের করেছিলেন এবং তাদেরকে নিজেদের সম্পর্কে সাক্ষী বানিয়েছিলেন। (আর জিজ্ঞেস করেছিলেন যে,) আমি কি তোমাদের রব নই? সকলে উত্তর দিয়েছিল, কেন নয়? আমরা সকলে সাক্ষ্য দিচ্ছি। (এবং এ স্বীকারোক্তি আমি এজন্য নিয়েছিলাম,) যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার যে, আমরা তো এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম। -সূরা আরাফ (৭) : ১৭২
এভাবে আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুনিয়ায় পাঠানোর আগেই তাদের থেকে তাঁর আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন।
এ অঙ্গিকারের দাবি হল, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যে আদেশ এসেছে তা পালন করা এবং যে বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে তা থেকে বিরত থাকা।
আলোচ্য আয়াতে সে অঙ্গিকার ভঙ্গ করার ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, যারা এ অঙ্গিকার ভঙ্গ করবে তারা হবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত।
আখেরাতে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎকে যারা অস্বীকার করবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
قَدْ خَسِرَ الَّذِیْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَآءِ اللهِ حَتّٰۤی اِذَا جَآءَتْهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً قَالُوْا یٰحَسْرَتَنَا عَلٰی مَا فَرَّطْنَا فِیْهَا وَ هُمْ یَحْمِلُوْنَ اَوْزَارَهُمْ عَلٰی ظُهُوْرِهِمْ اَلَا سَآءَ مَا یَزِرُوْنَ.
যারা আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়াকে অস্বীকার করেছে, নিশ্চয়ই তারা অতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশেষে কিয়ামত যখন অকস্মাৎ তাদের সামনে এসে পড়বে তখন তারা বলবে, হায় আফসোস! আমরা এ (কিয়ামত) সম্পর্কে বড় অবহেলা করেছি এবং তারা (তখন) তাদের পিঠে নিজেদের পাপের বোঝা বহন করবে। সাবধান! তারা যা বহন করবে তা অতি নিকৃষ্ট। -সূরা আনআম (৬) : ৩১
আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে তাদের আখেরাতের প্রতি অবিশ^াস প্রকাশ করার নানা ভাষ্য তুলে ধরেছেন। কখনও তারা বলেছে-
اِنْ هِیَ اِلَّا حَیَاتُنَا الدُّنْیَا وَ مَا نَحْنُ بِمَبْعُوْثِیْنَ.
যা কিছু আছে তা আমাদের এ পার্থিব জীবনই। (মৃত্যুর পর ) আমরা পুনর্জীবিত হওয়ারই নই। -সূরা আনআম (৬) : ২৯
অন্যত্র তাদের ভাষ্য এভাবে তুলে ধরা হয়েছে-
ءَاِذَا مِتْنَا وَ كُنَّا تُرَابًا وَّ عِظَامًا ءَاِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ.
তবে কি আমরা মরে মাটি ও অস্থিতে পরিণত হয়ে যাওয়ার পরও আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে? -সূরা সাফ্ফাত (৩৭) : ১৬
আরেক জায়গায় এভাবে এসেছে-
وَ ضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّ نَسِیَ خَلْقَهٗ ؕ قَالَ مَنْ یُّحْیِ الْعِظَامَ وَ هِیَ رَمِیْمٌ.
আমার সম্পর্কে সে উপমা রচনা করে, অথচ সে নিজ সৃজনের কথা ভুলে বসে আসে। সে বলে, কে এই অস্তিগুলোকে জীবিত করবে এগুলো পচে গলে যাওয়া সত্ত্বেও? -সূরা ইয়াসীন (৩৬) : ৭৮
অপরদিকে আল্লাহ তাআলা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে সেসব সংশয়ের সমুচিত জবাব দিয়েছেন। এক স্থানে বলেছেন-
قُلْ یُحْیِیْهَا الَّذِیْۤ اَنْشَاَهَاۤ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَ هُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِیْمٌ.
বলে দাও, সেগুলোকে জীবিত করবেন সেই সত্তা, যিনি তাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি সৃজনের প্রতিটি কাজই জানেন। -সূরা ইয়াসীন (৩৬) : ৭৯
এরকম মজবুত ও স্পষ্ট বোধগম্য উত্তর প্রদানের পরও যারা হঠকারিতাবশত আখেরাতের প্রতি ঈমান আনবে না এবং আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নেবে না তারা স্পষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত।
শয়তানকে যারা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত
বনী আদমকে পথভ্রষ্ট করতে শয়তানের যে প্রতিজ্ঞা আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে শয়তানের ভাষ্যে তা তুলে ধরেছেন। সাথে শয়তানকে যারা বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে তাদের পরিণতিও বলে দিয়েছেন-
وَ قَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِیْبًا مَّفْرُوْضًا وَّ لَاُضِلَّنَّهُمْ وَ لَاُمَنِّیَنَّهُمْ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الْاَنْعَامِ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُغَیِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ وَ مَنْ یَّتَّخِذِ الشَّیْطٰنَ وَلِیًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِیْنًا.
আর সে (আল্লাহকে) বলেছিল, আমি তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্ধারিত এক অংশকে নিয়ে নেব। এবং আমি তাদেরকে সরল পথ থেকে নিশ্চিতভাবে বিচ্যুত করব, তাদেরকে (অনেক) আশা-ভরসা দেব এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কান চিরে ফেলবে এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধু বানায়, সে সুস্পষ্ট ক্ষতির মধ্যে পড়ে যায়। -সূরা নিসা (৪) : ১১৮-১১৯
মানুষের প্রকৃত বন্ধু হলেন আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ মানুষকে ভালবেসে তার জন্য কল্যাণের কথা বলেছেন। তাকে কল্যাণের পথে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণকর নানা বিষয়ের আলোচনা করেছেন। সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্যরেখা এঁকে দিয়েছেন। আর শয়তান তো প্রকাশ্য শত্রু কিন্তু শয়তান অনেক-সময় বন্ধু সেজে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সে মানুষকে নানা রকম প্রলোভন দেয়। নানা রকম মিথ্যা আশা দেয়। এতে অনেক মানুষ তার এ বাহ্যিক বন্ধুত্ব দেখে ধোঁকায় পড়ে যায়। আল্লাহ বলেন-
یَعِدُهُمْ وَ یُمَنِّیْهِمْ وَ مَا یَعِدُهُمُ الشَّیْطٰنُ اِلَّا غُرُوْرًا.
সে তো তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে আশা-আকাঙ্ক্ষায় লিপ্ত করে। (প্রকৃতপক্ষে) শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতিই দেয় তা ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়। -সূরা নিসা (৪) : ১২০
এ দুনিয়াতে শয়তান মানুষের বন্ধুর রূপ ধারণ করেছে। অথচ আখেরাতে সে তার প্রতারণার কথা স্বীকার করবে এবং যা কিছু করেছে সব থেকে নিজের দায়মুক্তি ঘোষণা দেবে-
وَ قَالَ الشَّیْطٰنُ لَمَّا قُضِیَ الْاَمْرُ اِنَّ اللهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَ وَعَدْتُّكُمْ فَاَخْلَفْتُكُمْ وَ مَا كَانَ لِیَ عَلَیْكُمْ مِّنْ سُلْطٰنٍ اِلَّاۤ اَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِیْ فَلَا تَلُوْمُوْنِیْ وَ لُوْمُوْۤا اَنْفُسَكُمْ مَاۤ اَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَ مَاۤ اَنْتُمْ بِمُصْرِخِیَّ اِنِّیْ كَفَرْتُ بِمَاۤ اَشْرَكْتُمُوْنِ مِنْ قَبْلُ اِنَّ الظّٰلِمِیْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌ.
যখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে, তখন শয়তান (তার অনুসারীদেরকে) বলবে, বস্তুত আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে সত্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আর আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদের সাথে তা রক্ষা করিনি। তোমাদের উপর আমার এর বেশি ক্ষমতা ছিল না যে, আমি তোমাদেরকে (আল্লাহর অবাধ্যতা করার) দাওয়াত দিয়েছিলাম আর তোমরা আমার কথা শুনেছিলে। সুতরাং এখন আমাকে দোষারোপ করো না, বরং নিজেদেরকেই দোষারোপ কর। না তোমাদের বিপদ মুক্তিতে আমি তোমাদের কোনো সাহায্য করতে পারি। না আমার বিপদ মুক্তিতে তোমরা কোনো সাহায্য করতে পার। এর আগে তোমরা যে আমাকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করেছিলে (আজ) আমি তা প্রত্যাখ্যান করলাম। যারা এ সীমালঙ্ঘন করেছিল আজ তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ২২
সঠিক পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করে যে কাজ করে না সে ক্ষতিগ্রস্ত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِیْنَ اَعْمَالًا اَلَّذِیْنَ ضَلَّ سَعْیُهُمْ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ هُمْ یَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ یُحْسِنُوْنَ صُنْعًا.
বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব, কর্মে কারা সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত? তারা সেই সব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সমস্ত দৌড়-ঝাপ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, অথচ তারা মনে করে তারা খুবই ভালো কাজ করছে। -সূরা কাহ্ফ (১৮) : ১০৩-১০৪
আমল গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য দুটি শর্ত :
এক. ইখলাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে হওয়া।
দুই. সঠিক পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করে করা। উপরোক্ত কোনো একটি শর্ত লঙ্ঘিত হলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
وَ مَنْ اَحْسَنُ دِیْنًا مِّمَّنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلهِ وَ هُوَ مُحْسِنٌ وَّ اتَّبَعَ مِلَّةَ اِبْرٰهِیْمَ حَنِیْفًا وَ اتَّخَذَ اللهُ اِبْرٰهِیْمَ خَلِیْلًا.
তার চেয়ে উত্তম দ্বীন আর কার হতে পারে, যে (তার গোটা অস্তিত্বসহ) নিজ চেহারাকে আল্লাহর সম্মুখে অবনত করেছে, সেইসঙ্গে সে সৎকর্মে অভ্যস্ত এবং একনিষ্ঠ ইবরাহীমের দ্বীন অনুসরণ করেছে। আর (এটা তো জানা কথা যে,) আল্লাহ ইবরাহীমকে নিজের বিশিষ্ট বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিলেন। -সূরা নিসা (৪) : ১২৫
তাই কাফের যে আমল করে তা যত আন্তরিকতা নিয়েই করুক তা যেহেতু হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত দ্বীন অনুযায়ী হচ্ছে না, তাই তা গ্রহণযোগ্য নয়। আর মুনাফিক যে আমল করে যাচ্ছে, সে যত ভালো করেই আমল করুক না কেন, যেহেতু তার নিয়ত শুদ্ধ না, বরং তা লোক দেখানোর জন্য করছে, তাই তা গ্রহণযোগ্য নয়।
অনুরূপ যে বেদআত তথা নবআবিষ্কৃত কাজে লিপ্ত, মনগড়া বিভিন্ন আমল করে যাচ্ছে; সে যত আন্তরিকতা নিয়েই আমল করুক বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যত ভালবাসা নিয়েই আমল করুক সে যেহেতু দ্বীন ও শরীয়তের নির্দেশিত পথে আমল করছে না; বরং নিজের মনগড়া পদ্ধতিতে করছে তাই তা গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যাবতীয় কল্যাণের পথ অনুসরণ করে এবং সবরকম অকল্যাণের পথ পরিহার করে তাঁর সন্তুষ্টি মোতাবেক চলার তাওফীক দান করুন।
اللّهُمّ إِنّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا اسْتَعَاذَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ صلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَنْتَ الْمُسْتَعَانُ، وَعَلَيْكَ الْبَلَاغُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلّا بِاللهِ.