বন্যা পরিস্থিতি
বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসুন
দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ভয়াবহ বন্যা কবলিত। উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বহু এলাকা প্লাবিত হয়ে আছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খাবার নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, চোখে না দেখলে মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা বোঝা মুশকিল। অনেক জায়গায় পানিবাহিত রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মুসলিম হিসেবে আমাদের উপর অনেক দায়িত্ব বর্তায়। কোনো পরিবারে কেউ অসুস্থ বা উপার্জনহীন হয়ে পড়লে যেমন অন্যদের উপর সেবা-শুশ্রূষা ও দুস্থের প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব বর্তায় তেমনি গোটা মানবজাতি, বিশেষত গোটা মুসলিমসমাজ এক পরিবারের মতো। এখানেও একের বিপদে অন্যের পাশে দাঁড়ানো অপরিহার্য। এই দায়িত্ব পালন আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের অতি বড় উপায়। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, বান্দা যখন তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে, আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন।
দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী এই জীবন মানুষের জন্য পরীক্ষার জীবন, বিপদগ্রস্তের জন্য সবরের পরীক্ষা আর অন্যদের জন্য বিপদগ্রস্তের প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসার পরীক্ষা। তাই মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য, আন্তরিকভাবে বন্যাদুর্গত এলাকার বিপর্যস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো।
অত্যন্ত লজ্জার বিষয় এই যে, এই ধরনের ব্যাপক বিপর্যয়ের সময়ও বহু মানুষকে দুর্নীতি করতে দেখা যায়। এটা যে কত বড় নীচতা ও হীনতা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিপদগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত মানুষের ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যেন কেউ দুর্নীতি করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা কর্তব্য। এখন দল-মত নির্বিশেষে সকল বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণ দ্বীনদার শ্রেণি ও আলেম-উলামা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। বন্যা-পরিস্থিতির শুরু থেকেই লক্ষ্য করা গেছে, কীভাবে তাঁরা তাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে গেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। তবে একথা বলাই বাহুল্য যে, প্রয়োজনের তুলনায় তাঁদের সক্ষমতা কম। দেশের সর্বস্তরের বিত্তবান মানুষের কর্তব্য, এ দুর্যোগে বিপদগ্রস্ত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা। দেশের মসজিদগুলোতে জুমার খুতবাপূর্ব বয়ানে বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। এ ধারা আরো ব্যাপক হওয়া উচিত এবং তা চলমান থাকা উচিত। কেননা বন্যা-পরবর্তী সময়ে অসংখ্য দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। জরুরি ভিত্তিতে তাদের পুনর্বাসনের প্রয়োজন দেখা দেয়। তাই এ বিষয়ে মিম্বরে-মিহরাবে আলোচনা অব্যাহত থাকলে বহু মানুষের উপকার হতে পারে।
একইসাথে বছর বছর এই বন্যা-পরিস্থিতির দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই সমাধান নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। ভাটির দেশ হওয়ায় এটি এদেশের একরকম স্থায়ী সমস্যা। কিন্তু এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যায় কিংবা অন্তত এর ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস কার যায় এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং পরিপূর্ণ পূর্বপ্রস্তুতি রাখা শুধু দেশপ্রেমেরই অংশ নয়, আমানতদারিরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা এক বাস্তবতা যে, দ্বীন-ঈমান না থাকলে সত্যিকারের দেশপ্রেমও থাকে না। দেশপ্রেমের শ্লোগান দেওয়া এককথা আর বাস্তবে দেশ ও জনগণের সমস্যা সমাধান ভিন্ন কথা। সর্বস্তরে দ্বীনদারী ও ঈমানদারীর বিস্তার অতি প্রয়োজন। দেশের উন্নতি-অগ্রগতির জন্য যে মানসম্মত পড়াশোনা, উন্নত চরিত্র, নির্লোভ মানসিকতা, মানবসেবার প্রেরণা ও গঠনমূলক চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন তা গভীর ঈমান ও মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার চেতনা ছাড়া কিছুতেই অর্জিত হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য আখেরাতের নাজাত ও মুক্তি তো বটেই, পার্থিব শান্তি, সফলতা, উন্নতি-অগ্রগতির জন্য ঈমানদারী এক বিকল্পহীন বিষয়। দেশ ও জাতিকে গড়তে হলে, জনগণের দুর্দশা লাঘব করতে হলে গোড়া থেকে ঈমানদারীর শিক্ষাই আমাদের গ্রহণ করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধ্যানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের আল্লাহর দিকে রুজু করাও জরুরি। গুনাহ ও পাপাচার থেকে তওবা করে আল্লাহ তাআলার কাছে বিনীত সমর্পিত হওয়া ঈমানের দাবি। অন্যের দুঃখ-কষ্ট থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, নিজের ও পরিবার-পরিজনের জন্য আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ প্রার্থনা করাও আমাদের আশু কর্তব্য।
কতভাবেই তো মানুষের জীবনে বিপদ আসতে থাকে। যে কোনো বিপদই কষ্টের। কাজেই আসুন আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, নিরাপত্তা প্রার্থনা করি আর সাধ্যানুযায়ী আমাদের বিপদগ্রস্ত ভাই-বোনের পাশে দাঁড়াই। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দিন- আমীন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা’র সামাজিক সহযোগিতামূলক প্রতিষ্ঠান দাওয়াহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের উদ্যোগে এবারের বন্যার শুরু থেকেই কিছু ইমদাদী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখন একটু বড় আকারে পুনর্বাসনমূলক কাজের প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছে। আগ্রহী দরদী ভাই-বোনেরা এতেও অংশ নিতে পারবেন।