আমাদের পরিচয়
প্রায় দেড় হাজার বছর আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথনির্দেশে যাত্রা করেছিল ইলমের এক কাফেলা। তাদের সংখ্যা ছিল সত্তর-আশি। সকলেই অভাবী ও অসচ্ছল। মসজিদুন নববীর ছুফফা নামক স্থানে তারা অবস্থান করে ইলম শিখতেন বলে তাদেরকে আহলে ছুফফা বলা হয়। এই ছুফফা প্রাঙ্গণ থেকে যে পবিত্র সফরের সূচনা হয় তা যুগের পর যুগ অব্যাহত থাকে। সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও আকাবিরে দ্বীন সকলেই এই কাফেলার সহযাত্রী হন। এভাবে বহু শতাব্দীর সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমা শেষে আজ আমরাও এই নববী কাফেলার সহযাত্রী ও সফরসঙ্গী। আল্লাহ তাআলা যাদের দ্বারা পৃথিবীতে দ্বীন টিকিয়ে রেখেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত টিকিয়ে রাখবেন এটাই সেই সৌভাগ্যবানদের কাফেলা। আমাদের খুবই আপন, আমাদের আত্মার আত্মীয় ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ. এই কাফেলার অগ্রযাত্রী। মুজাদ্দিদে আলফে সানী, কাসেম নানুতবী, শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান, রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী, হুসাইন আহমাদ মাদানী, আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী ও আশরাফ আলী থানভী রহ.-প্রমুখ মনীষীরাও এই সফরে আমাদের অগ্রপথিক। আরো শত শত জ্ঞানরাজ্যের মহাবীর, যাদের পাথেয় ছিল কলম, কালি আর নির্জন রাতের আহাজারি। দিল্লীর জামে মসজিদে মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. বলেছেন, শেষ রাতের ইবাদতে কী যে মজা! যদি তা মোঘল সম্রাটরা জানত আর তা ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব হত তাহলে তারা নিজেদের সর্বস্ব ব্যয় করে তা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করত।
এই কাফেলা সদাসর্বদা সত্যকে সমুন্নত করার জন্য এবং মিথ্যাকে অপসৃত করার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করেছে। দুযোর্গে-দুর্ভোগে তারাই ছিলেন উম্মাহর স্বজন। এই আমরা তাদেরই উত্তরসূরী।
কিন্তু আমরা আমাদের আত্মপরিচয় ভুলে গেছি। পূর্বসূরীদের পথ থেকে সরে পড়েছি। এ কাফেলা আল্লাহর, কিন্তু আমরা এ কাফেলায় নাম লেখিয়ে শয়তানের পথে পা বাড়িয়েছি। নিজেদের শিকড় উপড়ে ফেলেছি। ফলে যে জাতি একদিন গড়েছিল কর্ডোভা, খোরাসান ও বোখারা, শত শত জাতিকে উজ্জ্বল করেছিল ঈমানের দীপ্তিতে তারাই আজ লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত পৃথিবীর চারদিকে। তাই বন্ধুরা এসো! আমরা নতুন করে আমাদের পরিচয় খুঁজি; অলসতা, ভীরুতা ও ফাঁকিবাজির সব কৌশল ছেড়ে নতুন করে পৃথিবীর কাছে আমাদের পরিচয় তুলে ধরি। কবির ভাষায় -
সিংহশাবক ভুলে গেছে তার পুরাতন পরিচয়/ শৃগালের ব্যুহে মিশে শিখিয়াছে পলায়নি কৌশল।