ইমাম ইবনে জারীর তাবারী
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে জারীর আততাবারী। হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, ইতিহাস ও জ্ঞানের অন্যান্য শাখায় অবাধ বিচরণকারী এক কিংবদন্তি। রচনা ও সংকলনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম। ৪০ বছর যাবৎ প্রতিদিন গড়ে ৪০ পৃষ্ঠা করে লিখেছেন। তার ‘জামিউল বায়ান ফী তাবীলিল কুরআন’ নামক সুবিশাল গ্রন্থটি তাফসীর শাস্ত্রের এক অনন্য গ্রন্থ। তিনি বলেছেন, আমি এরই সংকলন আরম্ভ করার আগে তিন বছর পর্যন্ত ইস্তেখারা করেছি এবং আল্লাহ তাআলার সাহয্য প্রার্থনা করেছি। ফলে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন।
তার একটি বিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ রয়েছে। তিনি যখন গ্রন্থটি রচনার ইচ্ছা করেন, তখন একদিন শীষ্যদের লক্ষ করে বললেন, কী বল, আমি হযরত আদম আ. থেকে আমাদের সময় পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাস লিখতে চাই। শীষ্যগণ জিজ্ঞেস করল, গ্রন্থটি কত বড় হতে পারে? তিনি উত্তরে বললেন, ত্রিশ হাজার পৃষ্ঠা হতে পারে। ছাত্ররা বলল এত বিশাল গ্রন্থটি সমাপ্ত হওয়ার আগেই তো মানুষের আয়ু ফুরিয়ে যাবে। ইবনে জারীর ইন্নালিল্লাহ পড়ে বললেন, ماتت الهمم ‘মাতাতিল হিমাম’ অর্থাৎ হিম্মতের অপমৃত্যু ঘটেছে। এপর তিনি তিন হাজার পৃষ্ঠায় গ্রন্থটি সমাপ্ত করেন।
ইমাম তাবারী রহ. জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়েছেন এবং জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার সংকলন করে রেখে গেছেন।
তার মুত্যুর সময় চার পাশে তার ভক্ত অনুরক্তদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তাদের একজন ইমামকে জিজ্ঞেস করলেন, দ্বীনের ব্যাপারে আমরা আপনার অনুসরণ করি। আপনি কি আমাদের কোন অসিয়াত করবেন, যার মাধ্যমে আমরা আখেরাতে মুক্তির আশা করতে পারি? ইমাম জবাব দিলেন, আমার অছিয়ত আমার গ্রন্থসমূহে রয়েছে। আমি সেসব গ্রন্থে যা লিপিবদ্ধ করেছি, তোমরা তার অনুসরণ করবে। এরপর ইমাম কালিমা শাহাদাত পাঠ করতে লাগলেন। জীবন সায়ােহ্ন এসেও তার জ্ঞান পিপাসা নিবারিত হয়নি। তিনি উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে একজনকে একটি দুআ জিজ্ঞেস করলেন। তিনি দুআটি জানালে ইমাম আশ্বস্ত হলেন এবং কালিমা শাহাদাত পাঠ করতে করতে এই নশ্বর জগত থেকে বিদায় নিলেন।
এই আত্মমর্যাদাশালী ইমাম রাজা-বাদশাহগণের প্রচুর সমাদর পেয়েছেন। কিন্তু তিনি তাদের উপঢৌকন ইত্যাদি গ্রহণ করতেন না। তার পিতা তাবারিস্তানে যে সামান্য জমি রেখে গিয়েছিলেন তার আয় থেকেই তার জীবিকা নির্বাহ হত। ২২৪ হিজরীতে তাবারিস্তানের আমুল শহরে এই মনীষী জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইলম অর্জনের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন এবং সর্বশেষ বাগদাদে অবস্থান করেছেন। ৩১০ হিজরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন এবং বাগাদাদেই সমাহিত হন।