প্রিয় তালিবানে ইলম!
হুঁশ প্রথম দিন থেকে
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، خاتم النبيين لا نبي بعده، صلى الله تعالى عليه وعلى آله الطيبين وبارك وسلم، ورضي الله تعالى عن أصحابه الكرام أجمعين. أما بعد!
প্রিয় তালিবানে ইলম! শিক্ষাবর্ষের শুরুতে এখন আমি আপনাদের খেদমতে একটি দরখাস্তই করছি। সেটি হল, আপনারা হুঁশের সঙ্গে পড়–ন। বেহুঁশী ও বেখেয়ালী ছাড়–ন। এটা প্রথম দিন থেকেই করুন। প্রথম দিন থেকেই বা-হুঁশ হওয়ার চেষ্টা করুন, হুঁশের সঙ্গে ইলমী সফর জারি রাখুন; দেখবেন, সফর সহজ থেকে সহজতর হয়ে যাচ্ছে। হুঁশ আনতে যত দেরি হবে, ইলমী সফর তত কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকবে।
যদি আপনি হুঁশমান্দ হন তাহলে আপনার প্রথম কাজ হল, আপনি ইলমকে আপনার মাহবুব মনে করুন। ইলমের জন্য মেহনত করাকে বোঝা ভাববেন না। মহব্বতের দ্বারা তেতো জিনিসও মিষ্টি হয়ে যায়। কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায়। ইলম আখেরাতে আপনার সফরসঙ্গী হবে। আপনি ইলম শিখছেন আল্লাহর জন্য এবং জান্নাতের জন্য। সেজন্য আপনি আপনার অন্তরের তাগিদেই ইনহিমাকের সঙ্গে ইলম হাসিলে লেগে থাকুন।
যদি আপনি হুঁশমান্দ হন, আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, আপনি আজকের সবক কালকের জন্য রেখে দেবেন না। কারণ আগামীকালেরও তো সবক আছে; সেটাকে কোন্ দিনের জন্য রেখে দেবেন?
তাছাড়া ইলম হাসিলের নিয়মই হল, আর এটা একেবারে স্বাভাবিক নিয়ম যে, প্রত্যেক পরবর্তী দিনের সবক তার আগের দিনের সবকের উপর মওকুফ। এটা সম্ভব নয় যে, আপনি আজকের সবক বুঝবেন না, আত্মস্থ করবেন না; এর পরও আপনি আগামীকালের সবক বুঝে ফেলবেন। এটা অসম্ভব। বিশেষত প্রথম তিন-চার জামাতে এর কল্পনাও করা যায় না।
সেজন্য এটা জায়েয নয় যে, শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে যাওয়ার পর আপনি এক দিনও বেহুঁশীতে কিংবা অলসতায় নষ্ট করবেন। যদি এমন করেন তাহলে আপনার সবক না বোঝা ও ইয়াদ না হওয়ার অভিযোগ হতেই থাকবে এবং ইলমকে আপনার বোঝা মনে হতে থাকবে। মেহনত করে মজা পাবেন না এবং পড়ার প্রতি আপনার আগ্রহ-একাগ্রতা কমতে থাকবে। আর এটা সব অনিষ্টের মূল।
আমার প্রিয় তালিবানে ইলম! হুঁশমান্দ তালিবে ইলম ফিকিরমান্দ হয়। সে তার জানা বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ফিকির করে; এভাবে তার ইলম বাড়তে থাকে এবং মজবুত হতে থাকে। হিফযের সঙ্গে ফিকিরকে কাজে লাগিয়ে পড়তে থাকা আর বেফিকরীর সঙ্গে পড়া- এ দুয়ের মধ্যে আসমান-যমীনের পার্থক্য।
যেদিন আপনি ‘মীযান’ কিতাবে মাযীর আলোচনা পড়েছেন সেদিন থেকে কোথাও যদি আপনি মাযীর কোনো শব্দ শোনেন বা পড়েন তাহলে আপনি যদি ফিকিরমান্দ হন, তৎক্ষণাৎ আপনার যেহেনে আসবে, এটা মাযীর সীগা। আর যদি বেফিকরীর সঙ্গে পড়েন তাহলে আপনার চোখের সামনে দিয়ে বেখায়ালিতে চলে যাবে। এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বের হয়ে যাবে।
আপনি ‘মুনশাইব’ কিতাবে বাবে ইফআল-এর সবক পড়েছেন। সেদিনই মাগরিবের নামাযে ইমাম সাহেব সূরা কাউসার তিলাওয়াত করলেন। কিন্তু আপনার খবর হল না যে,
اِنَّاۤ اَعْطَیْنٰكَ الْكَوْثَرَ.
-এ أعطينا শব্দটি أعطى-يعطي-إعطاء থেকে জমা মুতাকাল্লিমের সীগা। সুতরাং বুঝতে হবে আপনি এখনো হুঁশমান্দ হননি। আপনি আপনার ফিকিরকে কাজে লাগাচ্ছেন না।
আপনি ‘নাহবেমীর’ কিতাবে যমীরের আলোচনা পড়ে ফেলেছেন। কিন্তু إنَّا ও كَ কোন্ প্রকারের যমীর এবং কোন্ সীগার- তার জবাব আপনার যেহেনে আসল না।
কোনো শিশু সূরা কাউসার শোনাল। সে তিন আয়াতেই ওয়াকফ করে পড়ল। সেজন্য সকল আয়াতের শেষ হরফে সাকিন পড়ল। আপনি ‘হিদায়াতুন নাহু’-এর তালিবে ইলম। কিন্তু আপনার যেহেনে এল না যে, الْكَوْثَرَ মানসূব এবং রা-এ যবর।
وَ انْحَرْ-এ রা সাকিন; কারণ তা আমরের সীগা। الْاَبْتَرُ মারফু এবং রা-এ পেশ।
এর অর্থ হল, আপনি আপনার ফিকিরকে কাজে লাগাচ্ছেন না।
আপনি আপনার স্তরের কোনো আরবী কিতাবের ইবারত পড়ছেন। উচিত তো ছিল আপনি যেমনিভাবে আপনার স্তরের কোনো বাংলা বই পড়ার সময় পড়তে থাকেন আর বুঝতে থাকেন, তেমনিভাবে আপনার পর্যায়ের কোনো আরবী কিতাব পড়ার সময়ও এমন হবে যে, আপনি পড়তে থাকবেন এবং বুঝতে থাকবেন। যদি এমন না হয় তাহলে অন্তত এটুকু চেষ্টা তো অবশ্যই করতে হবে যে, আপনি বুঝে বুঝে পড়বেন এবং চিন্তা-ভাবনা করে পড়ে বুঝবেন।
আপনি নাহবেমীর পড়ে ফেলেছেন। আপনার সামনে আপনার স্তরের কোনো আরবী কিতাব রাখা হল। আপনি তা পড়া শুরু করলেন। ইবারতে إِنَّ শব্দটি এল। আপনাকে إن-এর ইসম খুঁজতে হবে এবং তাতে নসব দিতে হবে। তেমনিভাবে إن-এর খবর তালাশ করতে হবে এবং তাতে রফা দিতে হবে। কিন্তু বিষয়টি আপনার মাথায়ই আসছে না!
আপনার সামনে কোনো হরফুল জর এল। কিন্তু আপনি ভাবলেনই না যে, এর মুতাআল্লাক কোন্টি? মওসূল এল, কিন্তু আপনার খবর হল না যে, তার সিলা কোন্টা। যমীর দেখার পর তার মারজে-এর ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই হল না।
আর যদি হন আপনি এসো আরবী শিখি ও আততামরীনুল কিতাবী-এর তালিবে ইলম, অথচ আপনি হুঁশ ব্যবহার করছেন না তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ এ কিতাবগুলো সাজানোই হয়েছে এমনভাবে যে, হুঁশ ছাড়া কোনো তালিবে ইলম তা পড়তেই পারবে না। এগুলো তো বেহুঁশকেও বা-হুঁশ বানিয়ে দেওয়ার কিতাব। তাই এখানে বেহুঁশীর ব্যাপারে আপনার কোনো ওযর থাকতে পারে না।
মোটকথা, প্রত্যেক জামাতের তালিবে ইলমের ফিকিরের স্তর সাধারণত সেই জামাত অনুযায়ী হয়। নিজ নিজ স্তর অনুযায়ী ফিকিরকে কাজে লাগানো জরুরি। বে-ফিকরীর সঙ্গে পড়লে ইসতি‘দাদ কখনো তৈরি হবে না।
‘হুঁশ’ এবং ‘ফিকির’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সংক্রান্ত একেবারে প্রাথমিক দু-একটি কথা আরয করলাম। আশা করি, তলাবায়ে কেরাম তাদের আসাতিযায়ে কেরামের রাহনুমায়ীতে হুঁশকে কাজে লাগাবেন এবং হুঁশমান্দ হবেন।
হাঁ, হুঁশমান্দ তালিবে ইলমের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত হল, সে আন্দাজে কোনো কথা বলবে না। কেবল ধারণার উপর ভিত্তি করে সে ইরাব লাগাবে না। তারকীবে লফযের محل বা نوع বলবে না। তেমনিভাবে কোনো শব্দ বা বাক্যের অর্থও আন্দাযে বলবে না।
হুঁশওয়ালা তালিবে ইলম এটা বলতে পারে যে, আমার এটা জানা নেই, আমি এর তারকীব বুঝিনি। সে চুপ থাকবে, কিন্তু কেবল ধারণা করে আন্দাজে বলবে না। সে কিছু না বুঝলেও বলবে না, আমি বুঝে ফেলেছি। পঠিত ইবারতের কতটুকু সে বুঝেছে আর কতটুকু বোঝেনি- এই পার্থক্য হুঁশমান্দ তালিবে ইলম অবশ্যই করতে পারবে।
‘পড়তে পড়তে বোঝা’-এর কী অর্থ, সেটা যদি কোনো সাথী বুঝতে চান, তিনি হযরত আদীব হুযুর দামাত বারাকাতুহুমের লেখা ‘দুটি কথা’ অবশ্যই পড়বেন। লেখাটি মূলত তিনি ‘কাসাসুন নাবিয়্যীন’ ১ম খ-ের শুরুতে ভূমিকা হিসেবে লিখেছেন। দারুল কলম আশরাফাবাদ থেকে হযরতের তাহকীককৃত নুসখার শুরুতে ভূমিকাটি আছে। বান্দা কয়েক বছর আগে হযরতের অনুমতিক্রমে পুরো ভূমিকাটি আলকাউসারের এই বিভাগে (যিলকদ ১৪৩৬ হি. মোতাবেক সেপ্টেম্বর ২০১৫ ঈ.) ছেপেছিলাম।
আল্লাহ তাআলা আমাদের তালিবে ইলমদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করে দিন এবং তাদেরকে তাদের মা-বাবা ও উস্তাযদের চোখের শীতলতা বানিয়ে দিন- আমীন।
-বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক গুফিরা লাহু
২৩-১০-১৪৪৩ হি.