প্রশ্নোত্তর
[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম ‘প্রশ্নোত্তর’। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন ২৩ : হুযুর, আমি নতুন করে কুরআন তিলাওয়াত শিখছি। আমার প্রশ্ন হল, কুরআন শরীফে আনা (أنا) শব্দে টান হয় না কেন? স্বাভাবিকভাবে নূনের পরে আলিফ থাকলে টান হয়, এখানে কেন হয় না?
উত্তর : আনা (أنا) হল আরবীতে প্রথম পুরুষবাচক শব্দ। এর মূল রূপ হল (أَنَ) অর্থাৎ শুধু হামযা এবং নূন। কিন্তু এর সঙ্গে আলিফকে যুক্ত করা হয়েছে নূনের হরকত বা যবরকে স্পষ্ট করে ওয়াকফ করার সুবিধার্থে। এজন্য লেখার সময় নূনের পরে আলিফ যুক্ত করা হয় (أنا); কিন্তু পড়ার সময় শব্দটির মূল রূপ অনুযায়ী আলিফকে না টেনে আনা (أَنَ) পড়া হয়। (লিসানুল আরব ১৩/৩৭-৩৮; মুখতারুস সিহাহ, পৃষ্ঠা ৩১; আততিবইয়ান ফী ইরাবিল কুরআন ১/২০৭)
প্রশ্ন ২৪ : আসহাবুল উখদূদ বলে কাদেরকে বোঝানো উদ্দেশ্য?
উত্তর : ‘উখদূদ’ শব্দের অর্থ গর্ত। আসহাবুল উখদূদ মানে গর্তওয়ালারা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের প্রায় সত্তর বছর আগে নাজরানের অনেক মানুষ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ধর্মের ওপরে ঈমান এনেছিল। এতে ইয়ামানের ইহুদী বাদশাহ ইউসুফ যূ-নুওয়াস ক্ষিপ্ত হয় এবং তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নাজরানে হামলা করে। সে সড়কের পাশে পাশে গর্ত খুঁড়ে তাতে আগুন জ্বালানোর নির্দেশ দেয় এবং ঘোষণা করে, যারা ঈমান পরিত্যাগ করবে না তাদেরকে আগুনের গর্তসমূহে নিক্ষেপ করা হবে। কিন্তু তখনকার একত্ববাদী মুুমিনগণ তাতে একটুও পিছপা হল না। ফলে হাজার হাজার মুমিন নারী-পুরুষকে সেই অগ্নিকু-ে নিক্ষেপ করে জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়।
ইতিহাসগ্রন্থাদিতে উক্ত ঘটনার মতো প্রাচীনকালে এক আল্লাহর ওপরে ঈমান আনার কারণে কাফের রাজা-বাদশাহ কর্তৃক অসহায় মুমিনদেরকে অগ্নিকুণ্ডে পুড়িয়ে হত্যা করার বেশ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।
তেমন আরেকটি ঘটনা সহীহ মুসলিমেও (হাদীস ৩০০৫) বর্ণিত হয়েছে। সবগুলো ঘটনার প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও মূল বিষয় এক। ঐতিহাসিকদের মতে কুরআন কারীমে আসহাবুল উখদূদ বলে ইউসুফ যূ-নাওয়াস ও তার বাহিনীকে বোঝানো উদ্দেশ্য। কুরআনে এ ঘটনা বিস্তারিত না বলে প্রয়োজন অনুপাতে কেবল মূল বিষয়টি বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইউসুফ যু-নুওয়াসকে কোনো কোনো ঐতিহাসিক মুশরিক বলেছেন, তবে আল্লামা হিফযুর রহমান সিওহারবী রাহ. তার ইহুদী হওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
(দ্রষ্টব্য : তাফসীরে কুরতুবী ১৯/২৯১-২৯২; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৮/৩৬৬-৩৭১; কাসাসুল কুরআন, সিওহারবী ২/২৩৮-২৪৮)
প্রশ্ন ২৫ : হুযুর, আমি হেদায়া জামাতের ছাত্র। আমাদের তরজমাতুল কুরআনের দরস রয়েছে। আমি জানতে চাচ্ছি, কুরআন কারীমের শাব্দিক অর্থ ও ব্যাখ্যা জানার জন্য প্রাথমিকভাবে কী কী কিতাব দেখা যেতে পারে?
উত্তর : এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিম্নোক্ত কিতাবগুলো দেখতে পারেন :
১. المفردات في غريب القرآن – راغب الأصفهاني (৫০২هـ)
উল্লেখ্য, এ কিতাবটি এই নামে একাধিক মাকতাবা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে দারুল কলম, দিমাশক ১৪১২ হিজরীতে এটি مفردات ألفاظ القرآن নামে ছেপেছে।
২. تحفة الأريب بما في القرآن من الغريب – أثير الدين أبو حيان (৭৪৫هـ)
তুহফাতুল আরীব কিতাবটি আলমাকতাবুল ইসলামী, বাইরুত থেকে এক খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এ কিতাব এবং রাগেব আসফাহানী রাহ.-এর কিতাব উভয়টিতে হরফে হিজার ভিত্তিতে শব্দগুলোর তারতীব দেওয়া হয়েছে।
৩. التبيان في تفسير غريب القرآن – ابن الهائم (৮১৫هـ)
ইবনুল হায়িম রাহ.-এর আসল নাম শিহাবুদ্দীন আহমদ ইবনে মুহাম্মাদ। তবে তিনি ইবনুল হায়িম নামে প্রসিদ্ধ। তার এই কিতাবটি দারুল গারবিল ইসলামী, বাইরুত থেকে এক খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। সূরার তারতীব অনুযায়ী এখানে শব্দের ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৪. غريب القرآن – قاسم بن قطلوبغا (৮৭৯هـ)
আল্লামা কাসেম ইবনে কুতলুবুগা রাহ.-এর গরীবুল কুরআন এক খণ্ডে ‘দারুন নাওয়াদির’ থেকে ১৪৩৩ হিজরীতে প্রথম প্রকাশিত হয়েছে। এ কিতাবে প্রথমে সূরার তারতীবে তারপর হরফে হিজার তারতীবে খুবই সংক্ষেপে শব্দগুলোর ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৫. لغات القرآن – عبد الرشيد نعمانى (১৪২০هـ)
মাওলানা আবদুর রশীদ নুমানী রাহ.-এর লুগাতুল কুরআন উপরিউক্ত কিতাবগুলোর তুলনায় একটু বিস্তারিত। ছয় খণ্ডের এ কিতাবটি তিন ভলিউমে দারুল ইশাআত, করাচি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে হরফে হিজার তারতীবে শব্দগুলোর বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নুমানী রাহ. এ কিতাবে শব্দের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পাশাপাশি হাদীস-আছারের উদ্ধৃতিতে প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয় আলোচনাও করেছেন।