একটি ভিত্তিহীন ধারণা
রমযান মাসে কি কবরের আযাব মাফ থাকে?
অনেক মানুষকেই বলতে শোনা যায়, ‘রমযান মাসে কবরের আযাব মাফ থাকে’। তাদের এ ধারণা ঠিক নয়; কুরআন-হাদীসে এ বিষয়ে কিছু বর্ণিত হয়নি।
তেমনিভাবে কিছু মানুষকে একথাও বলতে শোনা যায় যে, ‘দাফনের পর জুমা বা রমযান এলে কিয়ামত পর্যন্ত কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়!’ এ কথারও কোনো ভিত্তি নেই। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে (এপ্রিল ২০১২ ঈ.) আমরা এ বিভাগেই লিখেছি।
আল্লাহ সকলকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন! আসলে কবরের আযাব হওয়া না-হওয়ার সাথে রমযানের কোনো সম্পর্ক নেই; ব্যক্তির ঈমান ও নেক আমলের সাথে এর সম্পর্ক। ব্যক্তির উচিত ঐসকল আমল থেকে বিরত থাকা, যার কারণে কবরের আযাব হয় এবং সাথে সাথে ঐসকল আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া, যার মাধ্যমে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
তবে হাঁ, রোযাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে তার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
... وَمَنْ صَامَ يَوْمًا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنّةَ.
قال الهيثمي : رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصّحِيحِ غَيْرَ عُثْمَانَ بْنِ مُسْلِمٍ الْبَتِّيِّ وَهُوَ ثِقَةٌ.
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন রোযা রাখে এবং এ রোযা হয় তার জীবনের শেষ আমল (অর্থাৎ রোযাদার অবস্থায় তার ইন্তেকাল হয়) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৩২৪; আলআসমা ওয়াস সিফাত, বায়হাকী, হাদীস ৬৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১১৯৩৫
অর্থাৎ রোযাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে, আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু রমযান মাসে কবরের আযাব মাফ- এমন কোনো কথা পাওয়া যায় না।
সম্ভবত একটি বিষয় থেকে মানুষের মাঝে এ ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। হাদীস শরীফে এসেছে-
إِذَا كَانَتْ أَوّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ، صُفِّدَتِ الشّيَاطِينُ، وَمَرَدَةُ الْجِنِّ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النّارِ، فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ، وَفُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنّةِ، فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ، وَنَادَى مُنَادٍ: يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلهِ عُتَقَاءُ مِنَ النّارِ، وَذَلِكَ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ.
যখন রমযানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- হে কল্যাণের প্রত্যাশী! আরো অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের যাত্রী! ক্ষান্ত হও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১৮৮৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৫৩২
এ বর্ণনার ‘জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়’- এখান থেকে হয়ত কারো মাঝে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, তাহলে রমযানে কবরের আযাবও বন্ধ থাকে।
যাইহোক, রমযানে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ থাকে, প্রতি রাতে আল্লাহ বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং রোযাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন এবং জান্নাতে দাখেল করবেন- এগুলো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু রমযানে কবরের আযাব মাফ থাকে- এমন কোনো কথা পাওয়া যায় না।