সুবহে সাদিক কখন শুরু?
প্রসঙ্গ : আহসানুল ফাতাওয়ার উদ্ধৃতিগুলোর পর্যালোচনা-৪
আহসানুল ফাতাওয়ার تحقیقات قدیمہ শিরোনামের অধিকাংশ উদ্ধৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা বিগত কিস্তিগুলোতে আলহামদু লিল্লাহ পেশ করা হয়েছে। চলমান কিস্তিতে এই শিরোনামের বাকি উদ্ধৃতিগুলোর পর্যালোচনা তুলে ধরা হল।
আততাসরীহ কিতাবের টীকার উদ্ধৃতি
تحقیقات قدیمہ শিরোনামের অধীনে আহসানুল ফাতাওয়ার একটি উদ্ধৃতি ছিল আততাসরীহ কিতাবের। যার পর্যালোচনা গত সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আহসানুল ফাতাওয়ার আরেকটি উদ্ধৃতি হচ্ছে আততাসরীহ কিতাবের টীকার। টীকাটি খুবই কাছাকাছি সময়ের মাওলানা আবুল ফযল মুহাম্মাদ হাফীযুল্লাহ (১৩৬২ হি.) কতৃর্ক সংকলিত। যার ইন্তেকালের পর এখনো একশ বছর হয়নি। এই টীকাতে তিনি বলেছেন-
واعلم أن المراد من الانحطاط في الجانبين انحطاط مركز الشمس عن الأفق الشرقي أو الغربي، وهو قدر ثمانية عشر درجة، ويقطعه الفلك الأعظم في ساعة وخمس ساعة، وهذا مجموع الصبحين الصادق والكاذب، ومن ذلك المجموع خمس ساعة حصة الصبح الكاذب، والساعة الواحدة حصة الصبح الصادق. وأما بيان تفريقها إليهما ففي ذكره إطناب لا يسعه الرسالة.
এখানে বলা হয়েছে, ১৮° থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মোট সময়ের পরিমাণ এক ঘণ্টা বারো মিনিট হয়ে থাকে। এই এক ঘণ্টা বারো মিনিট পুরো সুবহে কাযিব ও সুবহে সাদিকের সময়। এর মধ্যে ১২ মিনিট সুবহে কাযিবের, আর এক ঘণ্টা সুবহে সাদিকের সময়।
লক্ষণীয় যে, সুবহে সাদিকের ১৮°—এর মোট সময়ের হিসাব এই পদ্ধতিতে পেশ করা শাস্ত্রীয় দিক থেকে মস্ত বড় ভুল। বিরজান্দী রাহ.—ও ১৮°—এর মোট সময়ের হিসাব এই পদ্ধতিতে পেশ করেননি। এমনকি আহসানুল ফাতাওয়ার বক্তব্য (২/১৬৩) দ্বারাও উক্ত কথাটি ভুল প্রমাণিত হয়।
মূলত এক্ষেত্রে ডিগ্রি—এর সময় বের করার শাস্ত্রীয় ভিন্ন ফরমুলা রয়েছে। যার ভিত্তিতে এর প্রতি ডিগ্রির সময় এলাকার অক্ষাংশ ও মৌসুম ভেদে বিভিন্ন পরিমাণের হয়ে থাকে। কিন্তু আহসানুল ফাতাওয়ার এই উদ্ধৃতিটিতে এর লেখক ১৮° পর্যন্ত মোট সময়ের সঠিক বিবরণটুকুও দিতে পারেননি। এমন কোনো লেখকের কথা ইলমী বিষয়ে ‘সনদ’ হিসেবে উল্লেখ করা যে সমীচীন নয়- তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
শুধু এই উদ্ধৃতিটিই নয়; আহসানুল ফাতাওয়ার আরো কয়েকটি উদ্ধৃতিও এমন রয়েছে, যাতে প্রতি ডিগ্রি চার মিনিটের পদ্ধতি প্রয়োগ করে ফজরের মোট সময়ের ভুল হিসাব প্রদান করা হয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা সামনে কিছুটা বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরছি ইনশাআল্লাহ।
প্রতি ডিগ্রি চার মিনিটের ফরমুলা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়
প্রতি ডিগ্রি চার মিনিট- এই হিসাবের বিশেষ একটি ক্ষেত্র রয়েছে। প্রথমে আমরা এর বিশ্লেষণ পেশ করছি।
প্রতি ডিগ্রি চার মিনিট ব্যবধানের হিসাবটি ২৪ ঘণ্টা সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট, এবং এই ডিগ্রি দ্বারা উদ্দেশ্য দ্রাঘিমাংশ। আর এই হিসাব পৃথিবীর সব অঞ্চলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যার ভিত্তিতে সর্বত্র দিন—তারিখের পরিবর্তন ঘটে। এর গোড়ার কারণ হচ্ছে পৃথিবীর আহ্নিক গতি।
পৃথিবী নিজ অক্ষের (Axis) উপর সর্বদা ঘূর্ণায়মান। নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর এই ঘূর্ণনকে বলা হয় পৃথিবীর আহ্নিক গতি। এই গতি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত অভিমুখে হয়ে থাকে। আহ্নিক গতিতে পৃথিবীর একটি পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা। আর পুরো পৃথিবী পূর্ব—পশ্চিমে মোট ৩৬০° দ্রাঘিমাংশে বিভক্ত। অতএব পৃথিবী তার অক্ষে ২৪ ঘণ্টায় একবার ঘোরার অর্থ, ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবী ৩৬০° ঘূর্ণন করে থাকে। এর থেকেই প্রতি ডিগ্রি চার মিনিটের হিসাব এসেছে। ২৪ ঘণ্টায় ৩৬০° হলে ১৫° সমান এক ঘণ্টা এবং ১° সমান চার মিনিট। এ বিষয়ে অ্যাস্ট্রোনমির বই থেকে সামনে একটি বক্তব্য উল্লেখ করা হল-
The earth completes one rotation in a day, that is, it rotates 360° in 24 hours. Therefore, in one hour the earth rotates 15° (360°/24 = 15°). Thus, we can further calculate that the earth will rotate 1° in 4 minutes. So, for every degree of longitude, there will be a time difference of 4 minutes.
দেখুন-
Exploring the Earth, by Ratan Khar; R.S. Chandel. © 2009 Allied Publishers Pvt. Ltd. P.12
মোটকথা, প্রতি ডিগ্রি চার মিনিটের হিসাব ২৪ ঘণ্টা সময়ের সাথে সম্পৃক্ত। এবং এই ডিগ্রি দ্বারা উদ্দেশ্য পৃথিবীর দ্রাঘিমাংশ। আর এই হিসাব পৃথিবীর সব অঞ্চলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। চাই তা বিষুবীয় অঞ্চল হোক বা মেরু অঞ্চল। পৃথিবীর দৈনিক এই ঘূর্ণনের দ্বারা সবখানেই ২৪ ঘণ্টা সময়ের পরিবর্তন হয় এবং দিন—তারিখের পরিবর্তন ঘটে। এবং অক্ষাংশে তারতম্য হলেও একই দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত সব অঞ্চলেরই স্থানীয় সময় একই হয়ে থাকে।
এটি হল এক হিসাব। কিন্তু এই হিসাবের সাথে ফজর ও টোয়াইলাইটের ক্ষেত্রে যে ডিগ্রির কথা আসে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, ফজর ও টোয়াইলাইটের এই ডিগ্রি পৃথিবীর দ্রাঘিমাংশেরও নয়; অক্ষাংশেরও নয়। এই ডিগ্রি কীসের, আমাদের এই লেখার প্রথম কিস্তির শুরুতেই তা সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। আরো বিস্তারিতভাবে এর হিসাব বুঝতে চাইলে শাস্ত্রীয় কয়েকটি বিষয় ভালোভাবে জানা থাকা জরুরি। যেগুলোর বিস্তারিত আলোচনা অ্যাস্ট্রোনমির বইয়ে রয়েছে; এখানে তুলে ধরা কঠিন। তারপরও এখানে আমরা এর মূল সূত্রগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করছি। সাথে উদ্ধৃতিও দিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টির সাথে আগে থেকেই যাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, আশা করা যায় তারা এর থেকে বিষয়টি বুঝে নিতে পারবেন। অন্যরা বিষয়টি পুরোপুরি ধরতে না পারলেও, এতে যে হিসাবের ভিন্নতা রয়েছে, অন্তত এতটুকু বুঝতে পারবেন।
প্রথম বিষয় হল, এই ডিগ্রি পৃথিবীর দ্রাঘিমাংশেরও নয়; অক্ষাংশেরও নয়। তাহলে প্রশ্ন, এই ডিগ্রি কীসের? আসলে ফালাকীগণের বক্তব্য ভালোভাবে খেয়াল করলেই এর উত্তর মিলে যায়। এখানে মূল বিষয়টি হচ্ছে, দিগন্তের সাথে সূর্যের কৌণিক দূরত্ব কত ডিগ্রি থাকে। ফালাকীগণের বক্তব্যে বিষয়টি আবার লক্ষ্য করুন। আলবেরুনী বলেছেন-
أن انحطاط الشمس تحت الأفق متى كان ثمانية عشر جزءا كان ذلك وقت طلوع الفجر في المشرق ووقت مغيب الشفق في المغرب.
দেখুন-
القانون المسعودي 2/949، دائرة المعارف العثمانية بحيدرآباد الدكن، سنة 1374هـ، 1955م.
ইবনে শাতির রাহ. বলেছেন-
وقد رصدت ارتفاع النظير وانحطاط الشمس تحت الأفق في سنين متوالية، فوجدته لا يزيد أبدًا عن 20 درجة ولا ينقص عن 18 درجة.
দেখুন-
النفع العام في العمل بالربع التام، ص 247، مطبعة دار الكتب والوثائق القومية، تحقيق ودراسة: أسامة فتحي إمام.
অর্থাৎ পৃথিবীর কোনো স্থান থেকে আমি সুবহে সাদিক মুশাহাদা করলাম। তখন সূর্য দিগন্তের নিচে যে বরাবর ছিল, আমার অবস্থানস্থলের দিগন্ত রেখা থেকে সেই পর্যন্ত ডিগ্রি অনুযায়ী দূরত্ব কতটুকু ছিল। আমার অবস্থান বরাবর দিগন্তকে শূন্য ডিগ্রি ধরে এর বরাবর নিচ দিকে যদি এক ডিগ্রি, দুই ডিগ্রি, তিন ডিগ্রি করে মাপতে থাকা হয় তাহলে সূর্যের অবস্থান রেখা পর্যন্ত কত ডিগ্রি হয়- সেটিই এখানে উদ্দেশ্য।
এখানে কারো ধারণা হতে পারে, এটি সূর্যপথের ডিগ্রি। সূর্য যে পথে দিগন্তের নিচ থেকে উপরে উঠছে সেই পথের ডিগ্রি এটি। কিন্তু এই ধারণাও সঠিক নয়। এই ডিগ্রি ইক্লিপ্টিক কিংবা সূর্যের দৈনিক আপাত পথ কোনোটিরই নয়; বরং জ্যামিতিকভাবে তখন সূর্য দিগন্তের কত ডিগ্রি নিচে ছিল তাই এখানে উদ্দেশ্য। উপরের প্যারাতে সহজ ও সাধারণ ভাষায় বিষয়টি যেমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অ্যাস্ট্রোনমির পরিভাষায় এটি হচ্ছে- solar zenith distance (সুবিন্দু দূরত্ব) ও solar altitude angle —এর ডিগ্রি। solar zenith distance হিসেবে সুবহে সাদিক (অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টোয়াইলাইট) —এর সময় ১০৮°—এ এবং solar altitude angle হিসেবে —১৮°—এ। যারা অ্যাস্ট্রোনমির পরিভাষা এবং এর হিসাব—নিকাশ বোঝেন তাদের জন্য সামনে কয়েকটি উদ্ধৃতি তুলে ধরা হল। এর থেকে তারা বিষয়টি সহজেই বুঝে নিতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
১.
It begins at sunset (ends at sunrise) and is conventionally taken to end (or begin) when the Sun reaches a zenith distance of 108°.
দেখুন-
Explanatory supplement to the astronomical ephemeris and the American ephemeris and nautical almanac, Issued by H.M. Nautical Almanac Office. 1961. p.399.
২.
It begins at sunset (ends at sunrise) and is conventionally taken to end (or begin) when the center of the Sun reaches an altitude of -18°.
দেখুন-
Explanatory Supplement to the Astronomical Almanac pp. 492-493.
৩.
Astronomical twilight is defined to begin or end when the geometric zenith distance of the central point of the Sun, referred to the center of the Earth, is 108°.
দেখুন-
The Astronomical Almanac for the Year 2014, p. m18. Issued by the Nautical Almanac Office: United States Naval Observatory & Her Majesty's Nautical Almanac Office.
৪.
Astronomical twilight begins and ends when the Sun is geometrically 18 degrees below the horizon.
দেখুন-
United States Naval Observatory Circular, Issues 171-174. By United States Naval Observatory, Washington, D. C. February 19, 1987. p.7.
৫.
Twilight is the period of the day when the Sun is between 0° and 18° below the Celestial Horizon.
দেখুন-
Admiralty Manual of Navigation, Para 0108. © MOD 2000
৬.
Twilight ceases at any place when the sun is 18° vertically below the horizon.
দেখুন-
Advanced Physiography, By Alexander Morgan, M.A., D. Sc., F.R.S.E. New York and Bombay 1901. p. 82
এ পর্যন্ত আলোচনা থেকে মোটামুটি বোঝা গেছে, এই ডিগ্রি দ্বারা কী উদ্দেশ্য। এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন, এর প্রতি ডিগ্রির সময়ের পরিমাণ কত মিনিট। এর উত্তর একটু জটিল বিষয়। ঋতু ও অক্ষাংশের ব্যবধানে এর ডিগ্রি প্রতি সময়ের পরিমাণে ব্যবধান ঘটে থাকে। এর পুরো হিসাব—নিকাশ গোড়া থেকে বুঝতে চাইলে সূর্য ও পৃথিবী কেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি হিসাব ভালোভাবে বুঝতে হবে। Ecliptic, sun's diurnal path, equinox I solstices ইত্যাদি বিষয়গুলো শাস্ত্রীয়ভাবে বাস্তব হিসাবসহ জানা থাকা জরুরি। সামনে আমরা অ্যাস্ট্রোনমির বই থেকে কয়েকটি বক্তব্য তুলে ধরছি। যাতে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে যে, ১৮° পর্যন্ত সময়ের পরিমাণ কেন কম—বেশি হয় এবং কীভাবে হয়।
১.
The duration of twilight depends upon the angle the sun's diurnal path makes with the horizon. When it goes straight down, the twilight lasts an hour and twelve minutes, for the earth turns 15° hourly. If the sun's diurnal path meets the horizon obliquely, the twilight is longer, extending to three or four months near the pole. In our latitude it is about two hours long in the summer and an hour and a half in the winter.
দেখুন-
An Introduction to Astronomy, By Forest Ray Moulton, ©1906 The Macmillan company London, p.138
২.
Twilight ceases at any place when the sun is 18° vertically below the horizon, and the time taken by the sun to reach this limit is different in different latitudes, and it varies also for the same latitude with the time of the year. It varies with latitude, because the angle at which the sun rises and sets to the horizon is the complement of the latitude. Hence at the equator latitude o°, the sun sets perpendicularly to the horizon, and therefore soon descends 18° below it. Indeed, since the earth rotates 15° per hour, twilight and dawn each last about 1.25 hour at the equator. As latitude increases the sun sets in a more and more slanting direction to the horizon, and therefore takes a longer time to get 18° vertically below it. In our latitude twilight and dawn each last on an average about 2.5 hours, while at the pole they are each about two months long, for it takes the sun this time to descend or ascend the 18°.
Again, the duration of twilight at any place depends upon the seasons, being shortest at the equinoxes and longest at the solstices. In Fig 39, the width of the twilight zone ABC is about 18°, and at the equinox the sun is over the equator and by the rotation of the earth crosses the zone perpendicularly, whereas at the solstices the sun crosses this zone in a slanting direction and of course requires longer to do so.
দেখুন-
Advanced Physiography, By Alexander Morgan, M.A., D. Sc., F.R.S.E. New York and Bombay 1901. p. 82
৩.
As a consequence of the changing inclination of the sun's apparent path through the sky and the horizon, the duration of twilight depends on both the latitude and the date. Near the equator, the sun's path is nearly perpendicular to the horizon. As a consequence, the sun's position changes rapidly with respect to the horizon and twilight is of relatively short duration. At 10 degrees north latitude (southern Philippines, Costa Rica, central Ethiopia), the duration of civil twilight is between 21 and 23 min. At 40 degrees north latitude (New York, Rome, northern Japan), the range is from 27 to 32 min. At 60 degrees north latitude (Stockholm; Leningrad; Juneau, Alaska), the duration ranges from 40 to 106 min.
দেখুন-
Night Vision: Current Research and Future Directions, Symposium Proceedings, By Working Group on Night Vision, National Academies Press, Washington, D.C. 1987, p.21
৪.
The length of twilight depends on the observer's latitude because the angle of the diurnal path of the Sun through the twilight altitudes (the twilight zone?) varies with latitude. At the Earth's equator (λ = 0°), twilight is the minimum length of time because the path of the Sun through the twilight altitudes is as short as possible. At latitude λ = 30°, the angle of the Sun's diurnal path with the horizon causes an increase in the amount of time the Sun spends in the twilight altitudes. It is even greater at latitude 60°.
দেখুন-
The Amateur Astronomer's Introduction to the Celestial Sphere, By William Millar, p.101
আরো দেখুন-
Physical Geography, by Arthur Newell Strahler (professor of Geomorphology at Columbia University), John Wiley & Sons; 2nd edition, 1951©1969, New York, london.
এই বক্তব্যগুলোতে যা বলা হয়েছে তা সহজভাবে বোঝার জন্য একটি ছক উল্লেখ করে আমরা বিষয়টির বিশ্লেষণ তুলে ধরছি।
চিত্র : ...
এখানে উপরের সমতল রেখাটি দিগন্ত রেখা। এর নিচের সমতল রেখাটি দিগন্তের নিচে ১৮°—এর রেখা। সূর্য নিচ থেকে এই রেখা বরাবর এলেই সুবহে সাদিক (অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টোয়াইলাইট)—এর সময় হয় এবং উপরের রেখা অতিক্রম করলেই সূর্যোদয় হয়ে যায়।
এখন দিগন্ত রেখা ও ১৮°—এর রেখার মাঝে বিদ্যমান তিনটি রেখার প্রতি লক্ষ্য করুন। ডানের প্রথম রেখাটি ঠিক সোজা উপরের দিকে উঠে গেছে। মাঝের রেখাটি একটু তির্যকভাবে উপরের দিকে উঠেছে। তারপরের বাম দিকের সর্বশেষ রেখাটি আরো বেশি তির্যক ও ত্যারচাভাবে উপরের দিকে উঠেছে। ভেবে দেখার বিষয়, তিনটি রেখাই ১৮°—এর রেখা থেকে দিগন্ত রেখা পর্যন্ত উঠেছে। কিন্তু তিনটি রেখার দৈর্ঘ্য সমান নয়। ডানের রেখাটি থেকে মাঝের রেখাটির দৈর্ঘ্য একটু বেশি। বামের সর্বশেষ রেখাটির দৈর্ঘ্য আরো বেশি। ১৮°—এর রেখা থেকে দিগন্ত রেখার দিকে যত তির্যকভাবে উঠেছে রেখাটির দৈর্ঘ্য ততই বেশি হয়েছে। তার মানে তিনটি রেখাই ১৮° পরিমাণ উপরে উঠেছে। কিন্তু দুইটি রেখা তির্যক ও ত্যারচাভাবে উপরের দিকে ওঠার কারণে এর দৈর্ঘ্য বেশি হয়ে গেছে এবং যে রেখাটি তুলনামূলক বেশি ত্যারচা এর দৈর্ঘ্য আরো বেশি।
এখন মূল বিষয়ে আসা যাক। আমার মুশাহাদার স্থান যদি হয় বিষুব রেখায় অবস্থিত কোনো অঞ্চল এবং মুশাহাদার তারিখ হয় ২১ মার্চ কিংবা ২৩ সেপ্টেম্বর (যে দুই সময় দিন—রাতের পরিমাণ সমান থাকে) তাহলে উপরের ছকে বিদ্যমান ডানের প্রথম রেখার মত ঠিক খাড়াভাবে সূর্য দিগন্তের দিকে উপরে উঠবে। সূর্য ১৮°—এর রেখা থেকে দিগন্তরেখা পর্যন্ত উপরের দিকে সরল পথে অতিক্রম করবে। ফলে তখন সূর্য—পথ এবং বিষুব রেখা সমান সমান থাকবে এবং ১৮°—এর প্রতি ডিগ্রি চার মিনিট হিসেবে ১৮*৪=৭২ (১:১২) মিনিটেই অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু বিষুব রেখায় অবস্থিত অঞ্চলেও ২১ মার্চ এবং ২৩ সেপ্টেম্বর এই দুই সময় ছাড়া বছরের বাকি দিনগুলোতে সূর্য—পথ বিষুব রেখা বরাবর থাকে না। তাই অন্যান্য তারিখে সূর্য ১৮°—এর রেখা থেকে দিগন্তের দিকের সরল পথে অতিক্রম না করে কিছুটা তির্যকভাবে উঠে থাকে। তাই ১৮°—এর পথ অতিক্রম করতে ৭২ (১:১২) মিনিটের বেশি সময় লেগে থাকে।
এ তো গেল বিষুবীয় অঞ্চলের বিষয়। তাতে পুরো বছরে মাত্র দুটি সময়ই এমন সূর্য যখন ৭২ (১:১২) মিনিটেই ১৮°—এর পথ অতিক্রম করতে পারে। আর বিষুব রেখার বাইরের অঞ্চলগুলোর হিসাব এর থেকেও ভিন্ন। সেই অঞ্চলগুলোতে সূর্য সবসময়ই তির্যকভাবে ১৮°—এর পথ অতিক্রম করে থাকে। যত উত্তর দিকে যাবে এবং অক্ষাংশের পরিমাণ বেশি হবে এবং দিন থেকে রাতের সময়ের পরিমাণ বেশি হবে সূর্য সেখানে ১৮°—এর পথ ততই তির্যকভাবে অতিক্রম করে থাকে। যেমনটি আমাদের উপরের ছক থেকে স্পষ্ট। সেই স্থানগুলোতে ১৮° পর্যন্ত মোট সময়ের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণ এটিই। সূর্য উপরের দিকে ১৮°—ই উঠেছে। কিন্তু তির্যকভাবে ওঠার কারণে সময় বেশি লেগেছে। এবং ১৮° পরিমাণ উপরে যত তির্যকভাবে উঠবে ততই সময় বেশি লেগে থাকে।
তাহলে দেখা গেল, ১৮°—এর প্রতি ডিগ্রি সমান চার মিনিট হওয়ার ক্ষেত্র খুবই সীমিত। বিষুব রেখায় অবস্থিত অঞ্চলে এবং সেখানেও কেবল বছরের দুই সময় কয়েকটি দিনের হিসাব এমন হয়ে থাকে। সেখানেও বছরের বাকি সময়ের এবং অন্যান্য অঞ্চলের হিসাব এর থেকে ভিন্ন।
এখন প্রশ্ন থাকে, তাহলে ১৮°—এর সময় বের করার পদ্ধতি কী? ১৮° পর্যন্ত মোট সময়ের পরিমাণ কোন্ জায়গায় কতটুকু হয়, কিংবা কোথায় কতটার সময় ১৮°—এর সময় শুরু হয়- তা জানার কী পদ্ধতি? এবং শুধু ১৮°—এর সময়ই নয়, ১৭°, ১৬°, ১৫° এভাবে যত ডিগ্রির সময়ই আমি বের করতে চাই তা কীভাবে বের করব? কিংবা বিষয়টি এমনও হতে পারে যে, নির্ধারিত একটি সময়কে আমি ডিগ্রি দ্বারা নির্ধারণ করতে চাই। অর্থাৎ নিধার্রিত একটি সময় সম্পর্কে আমি জানতে চাই, সূর্য তখন দিগন্তের কত ডিগ্রি নিচে ছিল। তাহলে আমি তা কীভাবে জানতে পারি? আমরা পূর্বেই বলে এসেছি, এই হিসাবগুলো বের করার শাস্ত্রীয় ফরমুলা ও সূত্র রয়েছে। পর্যবেক্ষণ—স্থানের অক্ষাংশ, পর্যবেক্ষণের তারিখ ও সময়ের উপর ভিত্তি করে অ্যাস্ট্রোনমির নির্ধারিত সূত্র অনুযায়ী এর হিসাব বের করতে হয়। যার বিবরণ অ্যাস্ট্রোনমির বইসমূহে রয়েছে। কোথায় কত ডিগ্রির সময় কতটাতে হয়, কিংবা কতটার সময় কত ডিগ্রি হয়- সবকিছুর হিসাব শাস্ত্রীয় এই ফরমুলার উপর নির্ভরশীল। অক্ষাংশ ও তারিখ ভেদে যার সময় একেক পরিমাণের হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতি ডিগ্রি চার মিনিটের হিসাব যে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা পৃথিবীর সব জায়গাতেই একই রকম। দ্রাঘিমাংশের প্রতি ডিগ্রিতে চার মিনিট ব্যবধানের হিসাব সব অঞ্চলের ক্ষেত্রেই সমান। যার ভিত্তিতে প্রতি দিন ঘড়ির সময় ও দিন—তারিখের পরিবর্তন ঘটে।
সুতরাং বিষয়টি পরিষ্কার যে, আমাদের আলোচ্য বিষয়ে প্রতি ডিগ্রি চার মিনিটের ফরমুলা উল্লেখ করা নিতান্তই ভুল। এই বিষয়ে যাদের কিতাবভিত্তিক ইলমও আছে তাদের থেকেও এমন ভুল হতে পারে না।
সামনে আমরা মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক সংস্থা مركز الفلك الدولي (International Astronomical Center)—এর চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মাদ শওকত ওদাহর একটি বক্তব্য তুলে ধরছি। তিনিও বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। প্রতি ডিগ্রি চার মিনিট ব্যবধানের হিসাব প্রদান যে এখানে ঠিক নয় এবং তা ঠিক না হওয়ার কারণ বর্ণনা করে তিনি বলেন-
ومن أولى المسائل التي ساد فيها الخطأ أن الفارق الزمني لكل درجة هو4 دقائق زمنية، وهذا غير صحيح، واستدل أصحاب هذا الاعتقاد على هذه الحجة بأن الزمن اللازم لكي تدور الأرض حول نفسها درجة واحدة يبلغ4 دقائق وذلك بقسمة 360 درجة على 24 ساعة، ولكن هذه الدرجة تختلف عن درجة انخفاض الشمس عن الأفق وقت الفجر، فمسار الشمس الظاهري على الأفق ليس عاموديا (فهذا صحيح على خط الإستواء فقط)، بل هو مائل، وبالتالي فإن الشمس يجب أن تسير أكثر من درجة واحدة حتى تقترب من الأفق درجة واحدة، ومقدار الزمن اللازم حتى تقترب الشمس من الأفق درجة واحدة يختلف باختلاف الفصول ويختلف بشكل ملحوظ باختلاف خط عرض البلد.
وفيما يلي جدول يبين الزمن اللازم لكي تقترب الشمس من الأفق درجة واحدة (من 18 إلى 17) بالنسبة لخط العرض 0 و 30 و 45 و 60 لمختلف فصول السنة.
خط العرض |
الربيع |
الصيف |
الخريف |
الشتاء |
0 |
4:00 |
4:24 |
4:00 |
4:24 |
30 |
4:42 |
6:10 |
4:43 |
4:51 |
45 |
5:57 |
13:19 |
6:00 |
5:53 |
60 |
9:33 |
لا تصل الشمس للزاوية 18 |
9:48 |
8:21 |
এখানে তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, এক্ষেত্রে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হল, এর প্রতি ডিগ্রি সময়ের পরিমাণ চার মিনিট। এটি ভুল কথা। কারণ, এই ডিগ্রি সেই ডিগ্রি নয়, যার ব্যবধানে চার মিনিট সময়ের পার্থক্য হয়ে থাকে। চার মিনিট সময়ের পার্থক্য হয় দ্রাঘিমাংশের প্রতি ডিগ্রিতে। আর এই ডিগ্রি হল, ফজরের সময় সূর্য দিগন্তের যে পরিমাণ নিচে ছিল তার হিসাব। সূর্য দিগন্তের দিকে এক ডিগ্রি উপরে ওঠার সময়ের পরিমাণ মৌসুম ও অক্ষাংশ অনুসারে পরিবর্তনশীল। কারণ, সূর্যের দৈনিক আপাত পথ দিগন্তের উপর (বিষুবীয় অঞ্চল ছাড়া অন্যত্র) ঠিক খাড়াভাবে থাকে না। ফলে সূর্য ঠিক দিগন্তের দিকে এক ডিগ্রি পরিমাণ উপরে উঠতে তার নিজ পথের এক ডিগ্রিরও বেশি পরিমাণ পথ পাড়ি দিতে হয়। তাই ১৮°—এর প্রতি ডিগ্রির সময়ের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। যেমন ০° অক্ষাংশে (অর্থাৎ বিষুব রেখার উপর অবস্থিত অঞ্চলে) বসন্ত ও শরতে প্রতি ডিগ্রিতে ৪ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু গ্রীষ্ম ও শীত কালে ০° অক্ষাংশেই প্রতি ডিগ্রিতে সময় লাগে ৪:২৪ (৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ড)। আর ৩০° অক্ষাংশে বসন্ত ও শরতে প্রতি ডিগ্রিতে সর্বনিম্ন সময়ই ৪:৪২/৪:৪৩ হয়ে থাকে। গ্রীষ্ম ও শীতকালে এর পরিমাণ হয়ে থাকে যথাক্রমে ৬:১০ ও ৪:৫১। ৪৫° অক্ষাংশে এর পরিমাণ আরো বেশি। সর্বনিম্ন বসন্ত ও শরতে প্রতি ডিগ্রি সমান ৫:৫৭ ও ৬:০০ হয়ে থাকে। এবং প্রতি ডিগ্রিতে সর্বোচ্চ গ্রীষ্মকালে ১৩:১৯ সময় হয়ে থাকে। আর শীতকালে সেখানে যখন সবচেয়ে ছোট রাত তখনো ডিগ্রি প্রতি ৫:৫৩ সময় হয়ে থাকে। ৬০° অক্ষাংশে গ্রীষ্মকালে সূর্য দিগন্তের ১৮° নিচে যায়ই না। সেখানে বসন্ত ও শরতে প্রতি ডিগ্রি সমান সর্বোচ্চ ৯:৩৩ ও ৮:২১ সময় হয়ে থাকে। হিসাবটি এক নজরে নিম্নের ছকে দ্রষ্টব্য-
Aÿvsk |
emšÍ |
MÖx®§ |
kiZ |
kxZ |
0 |
4:00 |
4:24 |
4:00 |
4:24 |
30 |
4:42 |
6:10 |
4:43 |
4:51 |
45 |
5:57 |
13:19 |
6:00 |
5:53 |
60 |
9:33 |
= |
9:48 |
8:21 |
দেখুন-
إشكالات فلكية وفقهية حول تحديد مواقيت الصلاة، الدكتور محمد شوكت عودة، ص 17
মোটকথা, সুবহে সাদিকের ১৮°—এর ক্ষেত্রে প্রতি ডিগ্রি চার মিনিটের সূত্র উল্লেখ করা মানে এ প্রমাণ প্রদান যে, এই বিষয়ে তার কিতাবনির্ভর পর্যাপ্ত ইলমও নেই। আহসানুল ফাতাওয়াতেও এই বিষয়টি সঠিকভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। এককথায় প্রতি ডিগ্রি চার মিনিটের সূত্র শুনিয়ে দেওয়া হয়নি। আহসানুল ফাতাওয়াতে বলা হয়েছে-
خط استوا کے مقام پر معتدل ایام میں صبح صادق صبح کاذب سے بارہ منٹ بعد میں ہوگی۔ دوسرے مقامات میں اور دوسرے ایام میں اس سے بھی زیادہ فرق ہوتا ہے، چنانچہ کراچی میں صبح صادق نقشوں میں دئیے ہوئے اوقات سے مختلف موسموں میں 14 تا 19 منٹ بعد میں ہوتی ہے، دوسرے مقامات میں جن کا عرض کراچی سے زیادہ ہے اس سے بھی زیادہ فرق ہوگا۔
এখানে বলা হয়েছে, বিষুব রেখায় অবস্থিত অঞ্চলে যখন দিন—রাত সমান থাকে (অর্থাৎ ২১ মার্চ কিংবা ২৩ সেপ্টেম্বর) শুধু তখন ১৮° ও ১৫°—এর মাঝে ১২ মিনিট সময়ের ব্যবধান হয়ে থাকে। কিন্তু এর বাইরের অঞ্চলগুলোতে এবং যখন দিন—রাত ছোট—বড় থাকে সে দিনগুলোতে (বিষুবীয় অঞ্চলেও) ১৮° ও ১৫° —এর মাঝে সময়ের ব্যবধান আরো বেশি হয়। যেমন করাচিতে ১৮° —এর ১৪ থেকে ১৯ মিনিট পর ১৫°—এর সময় হয়। অন্যান্য এলাকা, যার অক্ষাংশ করাচি থেকে বেশি সেখানে ১৮° ও ১৫° —এর মাঝে সময়ের ব্যবধান আরো বেশি হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৬৩) 19
তাহলে দেখুন, এই উদ্ধৃতির কথাটি যে ভুল তা আহসানুল ফাতাওয়া দ্বারাই প্রমাণিত। কিন্তু তারপরও আহসানুল ফাতাওয়াতে একে নিজ দাবির পক্ষে উদ্ধৃতি হিসেবে পেশ করা হয়েছে! আফসোস্! আহসানুল ফাতাওয়ার বক্তব্য অনুযায়ীই যাতে এরকম স্থূল ভুল বিদ্যমান সেটিই আবার আহসানুল ফাতাওয়ার একটি উদ্ধৃতি!!
‘তুহফাতু উলিল আলবাব’—এর উদ্ধৃতি
আহসানুল ফাতাওয়াতে এই শিরোনামের অধীনে ৭ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে ‘তুহফাতু উলিল আলবাব’ নামক একটি কিতাবের ইবারত। যা তূসীর বিসতবাব কিতাবের আরবী শরাহ। এর লেখকের নাম আবদুল বাকী الكتوازي। তাতে বলা হয়েছে-
إذا صارت الشمس قريبة من الأفق بقدر ثمانية عشر جزءا (إلى) يرى البياض الطويل في جانب المشرق هو يسمى بالصبح الكاذب، كأن كون الأفق بعد مظلما يكذب كونه نور الشمس، والمنتشر في الأفق بعده بزمان يسمى بالصبح الصادق، لكونه أصدق ظهورا من الأول. قيل: ابتدائه حين انحطاط الشمس خمسة عشر جزءا.
এখানে মোল্লা আবদুল বাকী তার এই বক্তব্যে বিষয়টি এভাবেই উপস্থাপন করেছেন যেমনটি বিরজান্দী বলেছেন। এতেও বিরজান্দীর মত সুবহে সাদিকের সময় তিনি উল্লেখ করেছেন قيل (বলা হয়েছে) বলেই। সুতরাং এই বক্তব্য সম্পর্কে নতুন করে আর বলার কিছু নেই।
তাছাড়া এই কিতাবের লেখকও খুব বেশি আগের লোক নন। আমরা তার সম্পর্কে সুনির্ধারিত তথ্য পাইনি। তবে কিতাবটির ভূমিকা থেকেই অনুমান করা যায় তিনি কোন্ এলাকার এবং কোন্ সময়ের। এর ভূমিকায় তিনি সুলতান মুহাম্মাদ যাহির শাহ খানের নাম নিয়ে বলেছেন-
وسميته تحفة أولي الألباب في شرح بيست باب، وخدمت بها حضرت من شرفه بنشر الأمن والأمان،... وهو السلطان ابن السلطان محمد ظاهر شاه خان...
আর সুলতান যাহির শাহ খান হলেন আফগানিস্তানের সর্বশেষ রাজা। যার রাজত্বকাল ছিল ১৩১২ হি. থেকে ১৩৫২ হি. পর্যন্ত। ভূমিকার এই কথা থেকে সহজেই বোঝা যায়, তিনি আফগানিস্তানের এবং খুবই নিকট সময়ের মানুষ। অর্থাৎ গত (চতুর্দশ) শতাব্দীর।
তাছাড়া তিনি এই কথা বলেছেন বিসতবাব কিতাবের শরহে। আর বিসতবাবের প্রাচীন ও নির্ভরযোগ্য শরহ গ্রন্থে রয়েছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। অর্থাৎ সুবহে সাদিকের সময় হয় ১৮°—এ। আর এটিই বিসতবাবের গ্রন্থকার তূসীর বক্তব্য। তিনি তার অন্য কিতাবে নিজেই পরিষ্কার ভাষায় ১৮°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলেছেন। তার এক কিতাব যুবদাতুল ইদরাকে তিনি বলেছেন-
والفجر هو ظهور أثر الشمس من المشرق بالأبخار، وهو يظهر أولا مستدقا، ويسمى الصبح الكاذب، وذنب السرحان، ثم يتلاشى النور ويحم الأفق، إذ يخرج النور من المخروط بالتدريج، ويسمى الصبح الصادق، ويكون حينئذ بين الأفق والشمس يح (18) درجة، والشفق نظيره في الغرب.
এখানে তূসী নিজেই পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছে, সুবহে সাদিকের সময় সূর্য দিগন্তের ১৮° নিচে থাকে।
দেখুন-
زبدة الإدراك في هيئة الأفلاك، مخطوط (1) مكتبة فيض الله آفندي، الرقم (1339) ، الورق 24؛ ومخطوط (2) مكتبة حسن حسني باشا، الرقم 1135، الورق 101.
তূসীর আরেক কিতাবের নাম ‘ছদ বাব দার মা‘রিফাতে আসতারলাব’ (صد باب در معرفت اسطرلاب)। এতেও তিনি পরিষ্কার ভাষায় এ কথাই বলেছেন। এই কিতাবের ৬১ থেকে ৬৪ নম্বর অধ্যায়ে যথাক্রমে যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার নামাযের ওয়াক্তের বিবরণ তুলে ধরার পর ৬৫ নম্বর অধ্যায়ে ফজরের নামাযের ওয়াক্তের বিবরণ পেশ করেন। এই অধ্যায়ে তিনি বলেন-
باب شص وپنجم در معرفت وقت نماز صبح
بباید دانست کہ وقت نماز صبح آنگاہ بود کہ روشنائی وسفیدی پہن بر افق مشرق پیدا شود، چہ در اول صبح روشنائی بغایت ضعیف وطولانی میباشد، وآنرا صبح کاذب میگویند۔وبعد ازاں روشنائی بر افق مشرق پہن میشود، وآنرا صبح صادق میگویند، پس از ان بسرخی میگراید تا آں کہ افتاب طلوع میکند،وشفق بعکس اینست، چہ بعد از غروب افتاب در افق سرخی ظاہر می شود، وبعد ازاں بیاض عریض، وبعد ازاں بیاض باریک طولانی تا آنگاہ کہ بکلی منتفی شود، وبتجربہ ورصد معلوم شدہ کہ ہر گاہ کہ انحطاط آفتاب ہجدہ درجہ باشد ابتداء صبح وانتہاء غروب شفق است یعنی غروب بیاض است۔
এখানে তিনি অধ্যায় শুরুই করেছেন একথা বলে-
‘৬৫ নম্বর অধ্যায় : ফজরের নামাযের ওয়াক্তের পরিচয় সম্পর্কে।’
এভাবে পরিষ্কার ভাষায় ‘ফজরের নামাযের ওয়াক্তের শিরোনাম দেওয়ার পর তাতে প্রথমে তিনি বলেছেন, ফজরের নামাযের ওয়াক্ত তখনই শুরু হয়, পূর্ব দিগন্তে যখন উভয় দিকে প্রশস্ত আকারে সাদা—শুভ্র আলো প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি সুবহে কাযিব ও সুবহে সাদিকের পরিচয় তুলে ধরেন। অতঃপর ‘শাফাক’ —এর প্রকারগুলোও বর্ণনা করেন। এই বিবরণগুলো প্রদানের পর এতে তিনি বলেছেন, মুশাহাদা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা গেছে, ‘সুবহ’—এর শুরুতে এবং শাফাকের শেষে সূর্য দিগন্তের ১৮° নিচে থাকে।
লক্ষণীয় যে, তার বক্তব্যটির এতটুকু অংশ দ্বারাই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তিনি এতে ১৮°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলেছেন এবং আগের অধ্যায়গুলোর মত এখানেও তিনি নামাযের ওয়াক্তেরই বর্ণনা দিয়েছেন। কথাগুলো এভাবে পরিষ্কার ভাষায় বলে দেওয়ার পর তিনি নিজেই এখানে আরো দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন যে, ১৮°—এর এই ‘শাফাক’ দ্বারা উদ্দেশ্য শাফাকে আবয়ায। এই অধ্যায়ে ১৮°—এ ‘শাফাক’ শেষ হওয়ার কথা বলার পর এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন-
یعنی غروب بیاض است۔
এর থেকে এটিই পরিষ্কার বুঝে আসে যে, তিনি এই শাফাককে শাফাকে আবইয়ায দ্বারা ব্যখ্যা দিচ্ছেন। এটি যে শাফাকে আহমারের সময় নয়; বরং শাফাকে আবয়ায- এ কথা দ্বারা তা বোঝানোই উদ্দেশ্য। এর আগের অধ্যায়ে এশার নামাযের ওয়াক্তের বর্ণনাতে তিনি বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যার পর আর কোনো কথাই থাকে না। সেখানে তিনি বলেছেন-
باب شص وچہارم در معرفت وقت نماز خفتن، ... اما بمذھب دیگر نظیر آفتاب را بر مقنطرہ ہجدہ درجہ شرقی نہند ... غروب بیاض است ووقت نماز خفتن بود۔
এখানে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, ১৮°—এ শাফাকে আবইয়ায শেষ হয় এবং তখন এশার নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়।
দেখুন-
صد باب در معرفت اسطرلاب، مخطوط (1)کتابخانہ آستنقدس ایران، رقم 12042 ورق 24ـ23، ومخطوط (2)کتابخانہ حقوق ایران، رقم 75، ورق 29۔
অতএব তূসীর কোনো কোনো কিতাবে বিদ্যমান ১৮°—এর ‘সুবহ’ ও ‘ফজর’কে সুবহে কাযিব আখ্যা দেওয়া নিতান্তই ভুল। যা তার বক্তব্যের সুস্পষ্ট বিকৃতি বৈ কিছু নয়। স্বয়ং তূসীর বক্তব্যই যার প্রমাণ। তাই আহসানুল ফাতাওয়াসহ যেখানেই তূসীর বক্তব্যের এই ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে তা যে খুবই অন্যায় কাজ হয়েছে- বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরো লক্ষণীয় যে, আহসানুল ফাতাওয়ার দাবির পক্ষে তূসীর উদ্ধৃতি টানা যে ভুল, তূসীরই এই দুই কিতাব দ্বারা যেমন বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে যায়, সাথে সাথে তার এই দুই কিতাবের বক্তব্য দ্বারা আহসানুল ফাতাওয়ার আরেকটি দাবিও বাস্তবতা—বিরোধী প্রমাণিত হয়। আহসানুল ফাতাওয়ার বড় একটি দাবি ছিল, শুধু ‘সুবহ’ বলে সুবহে কাযিব উদ্দেশ্য নেওয়া শাস্ত্রজ্ঞ ফালাকীগণের রীতি। এটি আহসানুল ফাতাওয়ার মস্ত বড় বাস্তবতা—বিরোধী একটি দাবি। যার পক্ষে তাতে একটিও উদ্ধৃতি নেই। পেছনে আমরা বিভিন্ন দিক থেকে অকাট্য দলীল—প্রমাণ পেশ করে এর খণ্ডন করে এসেছি। এখন আমরা বলতে চাচ্ছি, তূসীর এই দুই কিতাবের বক্তব্যও আহসানুল ফাতাওয়ার এই দাবিটি বাস্তবতা—বিরোধী হওয়ার সপক্ষে বড় দলীল। তূসী তার কোনো কোনো কিতাবে ১৮ক্ক—এর সময়কে শুধু ‘সুবহ’ বা ‘ফজর’ শব্দ দ্বারা উপস্থাপন করলেও তার এই দুই কিতাবে নিজেই পরিষ্কার ভাষায় একে সুবহে সাদিক বলে দিয়েছেন। অতএব শাস্ত্রজ্ঞ ফালাকীগণের রীতি আহসানুল ফাতাওয়ার দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত। শুধু ‘সুবহ’ ও ‘ফজর’ শব্দ বলে তাঁরা সুবহে সাদিকই উদ্দেশ্য নিয়ে থাকেন।
‘شرح لم’ —এর উদ্ধৃতি
এক্ষেত্রে আহসানুল ফাতাওয়ার আরেকটি উদ্ধৃতি ‘شرح لم’ —এর। এর উদ্ধৃতিতে তাতে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে-
اعلم أنه قد علم بالتجربة أن أول الصبح الكاذب إنما يكون إذا كان انحطاط الشمس من الأفق الشرقي ثمانية عشر جزءا.
আহসানুল ফাতাওয়াতে এই বক্তব্যটি উল্লেখ করার পর এর উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে এভাবে شرح لم بر حاشیہ بست باب।
এখন প্রথমে দেখার বিষয় এটি কী কিতাব? কে এর লেখক? কী এর পরিচয়? তো আমরা খেঁাজ নিয়ে দেখেছি, বিসতবাব কিতাবের পাকিস্তানী একটি সংস্করণের টীকায় উক্ত বক্তব্যটি লেখার পর এর শেষে লেখা হয়েছে, شرح لم। এর থেকে বাহ্যত বোঝা যায় যে, شرح لم কোনো কিতাব, যার থেকে এ কথাটি টীকাতে লেখা হয়েছে। এই সংস্করণটি পরিপূর্ণ এখনো সংগ্রহ করা না গেলেও প্রথম পৃষ্ঠা থেকে বারোতম অধ্যায় পর্যন্ত পৃষ্ঠাগুলো সংগ্রহ করে পড়ে দেখা হয়েছে। কিন্তু এই পৃষ্ঠাগুলো থেকে شرح لم কী কিতাব- এর কোনো পরিচয় খঁুজে পাওয়া যায়নি। এখানে شرح لم থেকে আরবী বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। যা বিসতবাব কিতাবের এই সংস্করণের ১৬ নং পৃষ্ঠায় বিদ্যমান। কিন্তু কিতাবটিতে এর দুই পৃষ্ঠা আগে ১৪ নং পৃষ্ঠাতে একটি টীকাতে ফারসী একটি বক্তব্য উল্লেখ করে শেষে লেখা হয়েছে شرح لم । ন১২ নং পৃষ্ঠাতে আবার شرح لم—এর উদ্ধৃতিতে আরবী একটি এবারত উল্লেখ করা হয়েছে। ১১ নং পৃষ্ঠাতে এর উদ্ধৃতিতে ফারসী এবারত আনা হয়েছে। এই পৃষ্ঠাতেই আবার আরবী একটি এবারতের শেষে লেখা হয়েছে شرح لم برجندي। এটি কোনো একক কিতাব হলে এর উদ্ধৃতিতে একবার ফারসী আরেকবার আরবী বক্তব্য কীভাবে উল্লেখ করা হয় তা বুঝে আসে না।
মোটকথা, شرح لم —এর কী পরিচয়- তা আমাদের কাছে এখনো পরিষ্কার হয়নি। তবে অন্তত এতটুকু পরিষ্কার যে, তা বিরজান্দীর অনেক পরের এবং এর উক্ত কথাটির উৎস বিরজান্দী ছাড়া আর কিছু নয়। উক্ত টীকাতে شرح لم ছাড়াও সরাসরি বিরজান্দী থেকে অনেক বক্তব্যই উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং যে কথার সূত্র বিরজান্দী, এর সম্পর্কে নতুন করে আর কিছু বলার নেই।
তারপর দেখুন, বিসতবাব কিতাবের পাকিস্তানী সংস্করণের একটি টীকা তো এই, যাতে উক্ত বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তানের কোয়েটা শহরে অবস্থিত দারুল ইহসান লাইব্রেরীর মুদ্রিত বিসতবাবের সংস্করণে উক্ত টীকার পাশাপাশি এই কিতাবের উপর আরেকটি টীকাও ছাপা হয়েছে। যা আফগানের এক আলেম মুহাম্মাদ উবাইদুল্লাহ কান্দাহারী কতৃর্ক রচিত। شرح لم —এর নাম নিয়ে এর যে পৃষ্ঠাতে ১৮°—এ সুবহে কাযিব হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই পৃষ্ঠাতেই উবাইদুল্লাহ কান্দাহারী কৃত টীকাতে এর বিপরীত কথা রয়েছে। তাতে ১৮°—এ সুবহে সাদিক ও শাফাকে আবইয়ায হওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং তূসীর ‘সুবহ’ ও ‘শাফাক’ শব্দকে সুবহে সাদিক ও শাফাকে আবইয়ায দ্বারা ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে।
বিসতবাবের নবম অধ্যায় হচ্ছে সুবহ ও শাফাক সম্পর্কে। অধ্যায়টি এভাবে শুরু করা হয়েছে-
باب نہم در معرفت صبح وشفق۔
বিসতবাবের এই অধ্যায়টি বোঝার জন্য এই টীকাগ্রন্থে ভূমিকাস্বরূপ দুটি টীকা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি ফারসি ভাষায়। অপরটি আরবীতে। ফারসি টীকাটিতে বলা হয়েছে-
قولہ باب نہم آہ مخفی نباشد کہ توضیح ایں باب موقوف است بر معرفت جسم مخروطی ...وچوں آفتاب بافق شرقی نزدیک شود وسفیدی کہ از طرف مشرق بر افق منبسط باشد آنرا صبح خواند، وبتجربہ وامتحان بآلاتیکہ لائق ایں .. مثل اسطرلاب معلوم كردہ اند كہ چوں آفتاب 18درجہ ازافق غربی منحنط نشود شفق منتفی میگردد، وچوں آفتاب بجانب شرقی نزدیک شود کہ تا افق 18 درجہ ماندہ باشد صبح پیدا میگردد، ایں بود تمہید براۓ فہم مقاصد ایں باب۔ وباقي التفصيل سيأتي في الكتاب، والله ولي الحق وملهم الصواب، وإليه المرجع والمآب. محمد عبيد الله الأيوبي القندهاري غفر له الباري.
এখানে বিসতবাবের এই অধ্যায় সম্পর্কিত কয়েকটি কথা উল্লেখ করার পর পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে যে, পূর্ব দিগন্তে উভয় দিকে প্রশস্ত আকারে প্রকাশিত আলোকে ‘সুবহ’ বলা হয়। আর ‘সুবহ’—এর শুরু হয় ১৮°—এ। তূসির বিসতবাব কিতাবের এই অধ্যায় বোঝার জন্য এই ভূমিকা প্রদান করা হল।
এই টীকা থেকে পুরোপুরি স্পষ্ট যে, টীকাকার বলতে চাচ্ছেন, এই অধ্যায়ে তূসির বক্তব্যে ‘সুবহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক এবং তা শুরু হয় ১৮°—এ।
আর আরবী টীকাটিতে বলা হয়েছে-
اعلم أن هذا الباب من أبواب هذا الكتاب مما يحتاج إليه في الشريعة المطهرة لمعرفة وقت صلاة الصبح : ابتدائها وانتهائها، ولمعرفة ابتداء وقت الصوم ولانتهاء وقت صلاة المغرب ولابتداء وقت صلاة العشاء، فينبغي أن يهتم بهذا الباب جدا. عبيد.
এতে বলা হয়েছে, এই কিতাবের (তূসির বিসতবাব) অন্য সব অধ্যায় থেকে এই অধ্যায়টি শরীয়তে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়; ফজরের নামাযের ওয়াক্ত জানার জন্য- তা কখন শুরু হয় এবং কখন শেষ হয় এবং রোযার ওয়াক্ত কখন শুরু ও শেষ হয়। তেমনি মাগরিবের ওয়াক্ত কখন শেষ হয় এবং এশার ওয়াক্ত কখন শুরু তা জানার জন্য। সুতরাং এই অধ্যায়ের প্রতি খুব গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
এই টীকাটিও প্রমাণ করে যে, টীকাকার বলছেন, বিসতবাবের এই অধ্যায়ে তূসী সুবহে সাদিক ও শাফাকে আবইয়াযের সময় উল্লেখ করেছেন। যার সাথেই কেবল বিধানগুলোর সম্পর্ক।
তারপর বিসতবাবে, যেখানে ১৮°—এ সুবহ ও শাফাক হওয়ার কথা বলা হয়েছে, এর প্রতি লাইনের নিচে ‘বাইনাস সতর’—এ আরো স্পষ্ট ভাষায় লেখা হয়েছে যে, ১৮°—এ মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয় এবং এশার ওয়াক্ত শুরু হয়। পক্ষান্তরে ভোরে ১৮°—এর আগে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় না; বরং এর ওয়াক্ত হয় ১৮° থেকে।
যাই হোক, شرح لم —এর এই উদ্ধৃতির ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হল, এটি অনির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতি। যার ভিত্তি বিরজান্দীর বক্তব্য। তাছাড়া এটি কার লেখা, কবের লেখা তা আহসানুল ফাতাওয়াতেও উল্লেখ করা হয়নি; আমরাও খুঁজে পাইনি।
মালাবুদ্দা মিনহুর টীকার উদ্ধৃতি
আহসানুল ফাতাওয়ার এই শিরোনামের সর্বশেষ উদ্ধৃতি মালাবুদ্দা মিনহুর একটি টীকার। কিন্তু এই টীকাকার কে, তা আহসানুল ফাতাওয়াতে উল্লেখ করা হয়নি। এই টীকাসম্বলিত মালাবুদ্দা মিনহুর হিন্দুস্তানী কয়েকটি এডিশন আমরা সংগ্রহ করে দেখেছি। সেগুলোতেও টীকাকারের নাম উল্লেখ নেই।
এর ২৯ পৃষ্ঠার ১ নম্বর টীকাতে ফারসী ভাষায় ১৮°—এ সুবহে কাযিব ও ১৫°—এ সুবহে সাদিকের কথা বলার পর লেখা হয়েছে-
قالہ البرجندی۔
অর্থাৎ এ কথা বিরজান্দী বলেছেন।
অতএব এ থেকেই পরিষ্কার যে, টীকার কথাটি বিরজান্দী থেকে নেওয়া। সুতরাং এই কথা সম্পর্কে পুনরায় আর কিছু বলার নেই।
তবে লক্ষণীয় যে, ১ নম্বর টীকাতে তারপর এ স্পর্কে আরো এমন এমন কথা বলা হয়েছে, যা টীকাকারের এ বিষয়ে ইলম না থাকার প্রমাণ বহন করে। বিরজান্দীর উদ্ধৃতিতে সুবহে সাদিক ১৫°—এ হওয়ার কথা উল্লেখ করার পরই তাতে বলা হয়েছে-
وآں قدر زمانہ ایک ساعت نجومی باشد، زیراکہ سیر آفتاب در بست وچہارساعتست شباروزی سی صد وشصت درجہ بود، وچوں عدد درجات را بر عدد ساعت قسمت کنندخارج القسمۃ پانزدہ باشد، پس معلوم شد کہ سیر آفتاب در ایک ساعت پانزدہ درجہ است۔
অর্থাৎ ১৫° পর্যন্ত সময়ের পরিমাণ এক ঘণ্টা। কেননা সূর্য ২৪ ঘণ্টায় এক বার ঘুরে থাকে। যা ডিগ্রি হিসেবে তিন শত ষাট ডিগ্রি। আর তিন শত ষাটকে ২৪ দ্বারা ভাগ করলে ফলাফল দাঁড়ায় ১৫। সুতরাং সূর্য এক ঘণ্টায় ১৫ ডিগ্রি ঘুরে থাকে।
ডিগ্রির সময়ের এই হিসাব প্রদান এক্ষেত্রে যে নিতান্তই ভুল তা তো পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছেই। কিন্তু কথা এখানেই শেষ নয়। ১ নম্বর টীকার পরবতীর্ কথাগুলো আরো সবিশেষ লক্ষণীয়। এই ১ নম্বর টীকাতেই তারপর লেখা হয়েছে-
وصاحب خزانۃ الروایات از جواہر الفتاوی نقلا از امام بزدوی می آرد از ابتداء طلوع صبح صادق تا طلوع آقتاب ہفتم حصہ ازشب باشد،واین حکم بہمہ شبہابرابر باشد، ... وبہر تقدیر این قول فقہاء براء فہم عوام بطریق احطیاط وتخمین... ویحتمل کہ مراد صاحب خزانہ بیان حال زمان ومکان خاص باشد، وایں قول با قول حکما نیز مطابق میتوندشد، چہ در بعض بلاد در بعضی احیان قدر صبح تا دو ساعت می رسد،کما حقق المحقق فی المعینیۃ والزبدۃ۔
এখানে বলা হয়েছে, খিযানাতুর রেওয়ায়াত কিতাবে জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া থেকে ইমাম (জামালুদ্দীন) বাযদাবির উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মোট সময়ের পরিমাণ রাতের এক সপ্তমাংশ সমান হয়ে থাকে। আর এই কথাটি ফালাকীদের কথার সাথেও মেলে। কেননা কোনো কোনো অঞ্চলে কখনো সুবহের মোট সময় দুই ঘণ্টাও হয়ে যায়। যেমনটি মুহাক্কিক তূসী তার আলমুআইনিয়্যাহ ও যুবদাহ কিতাবে লিখেছেন।
এখন লক্ষ্য করার বিষয়, এই টীকাতে বিরজান্দীর উদ্ধৃতিতে প্রথমে বলা হল, সুবহে সাদিক হয় ১৫°—এ। তারপর বলা হল, ১৫° পর্যন্ত সময় মোট এক ঘণ্টা। এই ১ নম্বর টীকাতেই এরপর উল্লেখ করা হল, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মোট সময়ের পরিমাণ রাতের এক সপ্তমাংশ সমান। অথচ রাতের এক সপ্তমাংশের পরিমাণ এক ঘণ্টা থেকে অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া রাত ছোট—বড় হওয়ার সাথে এক সপ্তমাংশের পরিমাণেও তারতম্য ঘটে। তারপর এই টীকাটি শেষ করা হল তূসির উদ্ধৃতিতে এ কথা বলে যে, সুবহের মোট সময় কোনো কোনো অঞ্চলে দুই ঘণ্টাও হয়ে যায়।
একই টীকাতে আগে, পরে ও মাঝে এরকম এলোমেলো ও স্ববিরোধী কথা বিদ্যমান থাকাটা কীসের প্রমাণ বহন করে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না!
স্ববিরোধীতার বড় আরেকটি দিকও তাতে লক্ষ্য করুন। টীকাটির শুরুতে বিরজান্দীর উদ্ধৃতিতে ১৮°—এর সময়কে সুবহে কাযিব বানিয়ে দেওয়া হল, আর সুবহ ১৫°—এ হওয়ার কথা বলা হল; কিন্তু টীকাটির শেষে নাসীরুদ্দীন তূসীর বক্তব্যটি যে প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, টীকাকারের দৃষ্টিতে তূসীর ১৮—এর ‘সুবহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক; সুবহে কাযিব নয়। কারণ, তূসীর উক্ত কথাটি তাতে উল্লেখ করা হয়েছে সুবহে সাদিকের সময় হিসেবে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মোট সময় রাতের এক সপ্তমাংশ- টীকার এই কথার সমর্থনে তূসীর এই বক্তব্যটি উল্লেখ করা হয়েছে। আর তূসী সময়ের এই পরিমাণটি উল্লেখ করেছেন ১৮° পর্যন্ত মোট সময় কতটুকু হয়- এর বিবরণে।
দেখুন-
আলমুআইনিয়্যাহ, তূসী, মাখতুত : মাকতাবা ফয়যুল্লাহ আফেন্দী ইস্তাম্বুল, মাখতুত নং ১৩৩৭; পাতা ৫২
এখন দেখুন, টীকার শুরুতে ১৫°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলা হলেও টীকার শেষ কথা দ্বারাই তা ভুল সাব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে।
***
আলহামদু লিল্লাহ, এ পর্যন্ত আহসানুল ফাতাওয়ার تحقیقات قدیمہ শিরোনামের সকল উদ্ধৃতি বিস্তারিত পর্যালোচনাসহ তুলে ধরা হল। এই উদ্ধৃতিগুলোর হাকীকত ও স্বরূপ এবং আসল চিত্র পেশ করা হল। আলবেরুনী ও তূসীর বক্তব্যকে আহসানুল ফাতাওয়ার দাবির পক্ষে পেশ করা কেন সহীহ নয় এবং এ দুটি ছাড়া এর বাকি উদ্ধৃতিগুলো কেন অগ্রহণযোগ্য, আমরা আশা করি মুহতারাম পাঠক এর প্রমাণ ভালোভাবেই পেয়ে গেছেন।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় যে, আলবেরুনী ও তূসীসহ শাস্ত্রজ্ঞ ফালাকীগণের বক্তব্য এবং তাদের বক্তব্যের উপর যাদের সঠিক দৃষ্টি আছে তাঁদের সবার কথা এক ধরনের। তাদের কারো বক্তব্যের কোনো অংশে বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক কিছু নেই। মুসলিম উম্মাহ্র তাআমুল ও বাস্তব মুশাহাদা সব কিছুর সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু তাদের বাইরে অন্যান্য যারা নিজে শাস্ত্রজ্ঞ ফালাকীও নন, আবার শাস্ত্রজ্ঞ ফালাকীদের বক্তব্যের উপর পর্যাপ্ত ও সঠিক দৃষ্টিও নেই তাঁদের বক্তব্য পুরোই ভিন্নরকমের, অনেক ধরনের ভুল ও অসঙ্গতিতে পরিপূর্ণ। কিছু ভুল তো যৌথ। সবার বক্তব্যেই বিদ্যমান। অনেকের আবার এর থেকে অতিরিক্ত নিজস্ব কিছু ভুলও রয়েছে আরো মারাত্মক ও অদ্ভুত ধরনের। এই উদ্ধৃতিগুলো এতই অসঙ্গতিপূর্ণ, যা বিরজান্দী ও আহসানুল ফাতাওয়ার বক্তব্য দ্বারাই ভুল প্রমাণিত। কেউ সুবহে কাযিব ও শাফাকে আবইয়াযকে এক করে দিয়েছেন। উভয়টি শুরু হওয়ার সময় এক বানিয়ে দিয়েছেন। কেউ ১৮° পর্যন্ত মোট সময়ের সঠিক হিসাবও বলতে পারেননি। কেউ আবার দিন—রাত একাকার করে ফেলেছেন। একবার বলেছেন, ১৮°—এ সুবহে কাযিবের কথা। কিন্তু নিজেই আবার ১৮°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলে দিয়েছেন এর খবর নেই। বিষয়টিই যেহেতু সম্পূর্ণ বাস্তবতা নির্ভরশীল, তাই এক্ষেত্রে বাস্তবতার খেলাফ কথা বললে জায়গায় জায়গায় বাস্তবতা—বিরোধী ভুলের শিকার হওয়া ছাড়া তো উপায় নেই। যার চাক্ষুষ ও জ্বলন্ত প্রমাণ এসব উদ্ধৃতি।
অতএব এককথায়, শাস্ত্রজ্ঞ ফালাকীগণের ইজমা পরিপন্থী বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক ভুল সর্বস্ব কয়েকটি উদ্ধৃতি ছাড়া আহসানুল ফাতাওয়ার দাবির পক্ষে কোনো উদ্ধৃতি নেই।
আহসানুল ফাতাওয়ার আরেকটি অমূলক দাবি
১৮°—এ সুবহে কাযিব ও ১৫°—এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার দাবিটির পক্ষে মুশাহাদার কোনো প্রমাণ নেই। বর্তমান কালেরও নয়, আগের যুগেরও নয়। আমাদের আগের আলোচনাগুলো থেকে বিষয়টি সম্পূর্ণই পরিষ্কার। কিন্তু আহসানুল ফাতাওয়াতে উভয় ক্ষেত্রেই বাস্তবতা—বিরোধী দাবি করা হয়েছে। এর পক্ষে সমকালীন মুশাহাদার দাবিটি যে সম্পূর্ণ অমূলক; বাস্তবতা—বিরোধী বরং এর সম্পূর্ণ খেলাফ- পূর্বে তা প্রমাণ করে দেখানো হয়েছে। আগের যুগের মুশাহাদা সম্পর্কে তাতে দাবি করা হয়েছে-
اس تحقیق میں مختلف حوالوں سے یہ بات ثابت کیا گیا ہے کہ پرانے نقشوں میں دئے ہوئے صبح صادق کے وقت آفتاب افق سے ১৮ درجہ نیچے ہوتا ہے۔ پھر کئی حوالوں سے ثابت کیا گیا ہے کہ 18درجہ زیر افق پر صبح کاذب ہوتی ہے، اور صبح صادق 15 درجہ زیر افق پر ہوتی ہے، ان مصنفین نے اسکی بھی تصریح کی ہے کہ انھوں نے یہ اصول بارہا مشاہدات کے بعد متعین کئے ہیں۔
এখানে দাবি করা হয়েছে, যে ক’টি কিতাবে ১৮°—এ সুবহে কাযিব এবং ১৫°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথা আছে সেই কিতাবের লেখকগণ বারবার মুশাহাদা করে তা নির্ণয় করেছেন। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৫৯)
এটি আহসানুল ফাতাওয়ার আরেক ভিত্তিহীন দাবি। যার কোনো বাস্তবতা নেই। এই লেখকগণ নিজেরা মুশাহাদা করে ১৮°—এ সুবহে কাযিব ও ১৫°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলেছেন- এর কোনো প্রমাণ নেই। তাদের কারো বক্তব্যে নিজেরা মুশাহাদা করেছেন এমন কোনো কথা নেই।
১৫°—এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার দাবিটির পক্ষে মুশাহাদার তো ভুল কোনো উদ্ধৃতিও নেই। আহসানুল ফাতাওয়ার দশটি উদ্ধৃতির যে দু—চারটি উদ্ধৃতিতে ১৫°—এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে, এর কোনোটিতেই ১৫°—এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে মুশাহাদা বা التجربة এমন কোনো শব্দই নেই। বরং একে উল্লেখই করা হয়েছে قيل (বলা হয়েছে) বলে। আরো স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, بتحقيق معلوم نشود তাহকীকের সাথে এর সময় জানাই নেই। এই قيل (বলা হয়েছে)—ই ১৫°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার দাবিটির সূত্র! এর পক্ষে কোনো মুশাহাদার প্রমাণ বাস্তবেও নেই; এমনকি আহসানুল ফাতাওয়াতেও নেই। সুতরাং এটি সব দিক থেকে সম্পূর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন কথা।
আর যে ক’টি উদ্ধৃতিতে ১৮°—এ সুবহে কাযিবের কথা আছে তাদের কেউও নিজেরা মুশাহাদা করেছেন এমন কোনো কথা তাদের বক্তব্যে নেই। বিরজান্দী রাহ.—এর বক্তব্য থেকে তো পরিষ্কার, তিনি নিজে মুশাহাদা করে এ কথা বলেছেন- বিষয়টি এমন নয়। বরং নাসীরুদ্দীন তূসীর বক্তব্যে আছে, ...قد علم بالتجربة অর্থাৎ মুশাহাদার মাধ্যমে জানা গেছে ১৮°—এ ‘ফজর’ শুরু হয়। বিরজান্দী এই ‘ফজর’কে সুবহে কাযিব দ্বারা ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। এছাড়া বিরজান্দীর নিজের ইবারতে মুশাহাদার কোনো কথা নেই।
আর বিরজান্দীর পরের বক্তব্যগুলোর বিষয় তো আরো অদ্ভুত। তাঁরা ফালাকীগণের বক্তব্য ও বিরজান্দীর ব্যাখ্যাকে পৃথকভাবে উল্লেখ না করে দুটিকে জোড়া দিয়ে সরাসরি বলে দিয়েছেন। ভালোভাবে লক্ষণীয় যে, নাসীরুদ্দীন তূসীসহ কোনো কোনো ফালাকী সুবহে সাদিক মুশাহাদা করে এটিকে এভাবে ব্যক্ত করেছেন-
وقد عرف بالتجربة أن انحطاط الشمس من الأرض عند أول طلوع الصبح وآخر غروب الشفق يكون ثمانية عشر جزءا.
তাদের বক্তব্যে أول طلوع الصبح দ্বারা উদ্দেশ্য أول طلوع الصبح الصادق। অর্থাৎ তাজরেবা ও মুশাহাদার মাধ্যমে তারা ১৮°—এ সুবহে সাদিক হওয়া নির্ণয় করেছেন। কিন্তু বিরজান্দী রাহ. তাদের এই সুবহকে সুবহে কাযিব বানিয়ে দিয়েছেন। এখন বিরজান্দীর পরবতীর্ কেউ কেউ এসে ১৮°—এ ‘সুবহ’—এর মুশাহাদা সংক্রান্ত তূসির বক্তব্য এবং বিরজান্দীর ভুল ব্যাখ্যা এ দুটি জোড়া লাগিয়ে সরাসরি এবারত দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন-
إذ قد علم بالتجربة أن انحطاط الشمس أول الصبح الكاذب وآخر الشفق ثمانية عشر درجة.
এই হল তাদের ১৮°—এ সুবহে কাযিব মুশাহাদার হাকীকত! ফালাকীগণ যেই মুশাহাদার কথা বলে গেছেন সুবহে সাদিকের ক্ষেত্রে এটিকে বিরজান্দী ও তার পরবতীর্ কয়েকজন সুবহে সাদিক থেকে সরিয়ে সুবহে কাযিবের সাথে লাগিয়ে দিয়েছেন! যে ক’টি কিতাবে সরাসরি সুবহে কাযিবের ক্ষেত্রে তাজরেবা ও মুশাহাদার কথা এসেছে এর হাকীকত এ ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু খুবই আফসোস! আহসানুল ফাতাওয়াতে এর ভিত্তিতে কত বড় অবাস্তব দাবি করে দেওয়া হয়েছে যে-
ان مصنفین نے اسکی بھی تصریح کی ہے کہ انھوں نے یہ اصول بارہا مشاہدات کے بعد متعین کئے ہیں۔
‘এই লেখকগণ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, বারবার মুশাহাদা করে তা নির্ণয় করেছেন।’ (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৫৯)
সারকথা, আহসানুল ফাতাওয়ার এই উদ্ধৃতিগুলোতে ১৫°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। তাদের বক্তব্য অনুযায়ীই এর সূত্র অজ্ঞাত। আর ১৮°—এ সুবহে কাযিব হওয়ার যে উদ্ধৃতি আছে এর হাকীকত ও স্বরূপ হল, ১৮°—এ সুবহে সাদিক সংশ্লিষ্ট পূর্ববতীর্ ফালাকীগণের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা। অজ্ঞাত ও ভুল ব্যাখ্যানির্ভর কথাই আহসানুল ফাতাওয়ার এ দুই দাবির উৎস!
মুসলিম উম্মাহর আমল কখনো ১৫° অনুযায়ী ছিল না
সুবহে সাদিক নিছক দর্শন ও তত্ত্বগত কোনো বিষয় নয়; বরং এর সম্পর্ক আগাগোড়াই বাস্তব আমলের সাথে। মুসলিম উম্মাহ এর সময় অনুযায়ীই নামায—রোযা আদায় করে থাকে। তাই এক্ষেত্রে মূখ্যভাবে দেখার বিষয় হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহ্র আমল ও তাআমুল কী অনুযায়ী ছিল। যুগে যুগে মুসলিম দেশগুলোতে কোন্ সময় অনুসারে আমল হত। এককথায়, যত ডিগ্রিতেই সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার কথা বলা হবে- মুসলিম উম্মাহ্র আমল থেকেও এর সমর্থন বিদ্যমান থাকবে।
আমাদের এ পর্যন্ত আলোচনা থেকে তো পরিষ্কার হয়ে গেছে, ১৫°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথাটি ফালাকীগণের ইজমা পরিপন্থী। এই দাবিটি ভুল ও বাস্তবতা—বিরোধী হওয়ার বিষয়টি এর দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে যায়। এখন আমরা আরেকটি বিষয়ের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি যে, সুবহে সাদিক যদি ১৫° থেকে শুরু হয়; ১৫°—এর আগের সময়টি সুবহে কাযিবের সময় হয় তাহলে দেখার বিষয় হল, এই অনুযায়ী কি কোনো যুগে মুসলিম বিশে^র কোনো দেশে আমল ছিল? দাবিটি সঠিক হলে মুসলিম উম্মাহ্র তাআমুল থেকেও এর সমর্থন থাকা জরুরি। কিন্তু এর কি কোনো প্রমাণ আছে?
পূর্বে আমরা হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কয়েকজন ফকীহের বক্তব্য তুলে ধরেছি, যারা মিশর ও শামের ফজরের ওয়াক্তের মোট পরিমাণের বিবরণ পেশ করেছেন। যে অনুযায়ী নামায—রোযার ক্ষেত্রে তখন মুসলিম উম্মাহ্র আমল ছিল।
প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ ইবরাহীম আলহালাবী আলমাদারী (১১৯০ হি.); দামেস্কের আমীনুল ফাতাওয়া আল্লামা ইবরাহীম ইবনে খলীল ইবনে ইবরাহীম আসসাইহানী (১১৩৩—১১৯৭ হি.); আল্লামা আহমাদ আততাহতাবী (১২৩১ হি.) ও আল্লামা ইবনে উমর আবেদীন শামী রাহ. (১১৯৮—১২৫২ হি.) কর্তৃক বর্ণিত মুসলিম উম্মাহ্র তাআমুলভিত্তিক সময়ের হিসাব ১৮° অনুযায়ী হয়ে থাকে।
আকাবির উলামায়ে হিন্দের বক্তব্য থেকেও পাক—ভারত উপমহাদেশের মুসলিমগণের তাআমুলের বিবরণ পেশ করা হয়েছে। মুসলমানগণ এদেশগুলোতে যুগ পরম্পরায় ফজরের নামাযের ওয়াক্ত যতটুকু হিসাব করে আসছে, তাঁদের বক্তব্যে এর বিবরণ এসেছে। যা ১৮° অনুযায়ীই হয়ে থাকে।
বর্তমান যুগেও মুসলিম বিশে^র আমল এই অনুযায়ীই চলমান। এটি যুগ পরম্পরায় চলে আসা তাআমুলের বিষয়। নামায—রোযার অন্যান্য বিধানের সাথে এর সময়ও যুগ পরম্পরায় তাআমুলের ধারায় চলে এসেছে। তাই বর্তমানেও কোনো মুসলিম দেশে সুবহে সাদিকের সময় ১৮°—এর কম হিসাব করা হয় না।
এ হচ্ছে সুবহে সাদিক সম্পর্কে সরাসরি মুসলিম উম্মাহ্র তাআমুলের বিবরণ। অপরদিকে মুসলিম ফালাকীগণের বক্তব্যগুলোও দেখার বিষয়। তারা কেবল ১৮°—এর ভেতর সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলেই চলে যাননি; বরং তাদের অনেকেই মুসলিম উম্মাহ্র আমলের কথাও উল্লেখ করেছেন। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, মুসলিম উম্মাহ্র আমল এই সময় অনুসারেই চলমান, যার কথা তারা বলেছেন। আরো লক্ষণীয় যে, তাঁদের অনেকেই শুধু ফালাকীই ছিলেন না; মুসলিম বিশে^র বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী মসজিদের মুওয়াক্কিতও ছিলেন। তাঁদের প্রদত্ত সময় অনুযায়ীই মসজিদগুলোতে নামায—রোযার সময় নির্ধারণ করা হত এবং মুসলিমগণ নামায—রোযা আদায় করতেন। লেখা আরো দীর্ঘ হয়ে যাবে বলে আমরা সেই বক্তব্যগুলো এখানে পুনরায় উল্লেখ করছি না। কেউ চাইলে এই দিক লক্ষ্য করে এপ্রিল—মে ’১৯ —এর সংখ্যায় উল্লেখকৃত তাদের বক্তব্যগুলো আবার দেখে নিতে পারেন।
এ তো গেল সুবহে সাদিক সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহ্র তাআমুলের বিষয়। এ থেকে সাথে সাথে এটিও প্রমাণিত হয়ে যায় যে, মুসলিম উম্মাহ্র নিকট সুবহে কাযিবের সময় হয়ে থাকে ১৮°—এর আগেই। সামনে সুবহে কাযিবের সময়ের বিষয়েই ফকীহগণের কয়েকটি বক্তব্য পেশ করা হল। যার দ্বারা বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়।
শাফেয়ী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকীহ শামসুদ্দীন আলখাতীব আশশিরবীনী রাহ. (৯৭৭ হি.) বলেছেন-
ويدخل سبع الليل الأخير بطلوع الفجر الأول.
অর্থাৎ রাতের শেষ সপ্তমাংশ যখন শুরু হয় তখন সুবহে কাযিবের সময় হয়। (মুগনিল মুহতাজ ১/৩২৭)
শাফেয়ী মাযহাবের আরেক ফকীহ ইবনুল ইমাদ রাহ. (৭৫২—৮০৮ হি.) বলেছেন-
أحدهما الكاذب، وهو الفجر الأول ويسمى المستطيل، لأنه يبدو مستطيلاً ثم يذهب وشبهوه بذنب السرحان وهو الذئب، وهو يطلع إذا بقي من الليل السبع.
এখানে তিনিও বলেছেন, রাতে এক সপ্তমাংশ বাকি থাকতেই সুবহে কাযিব শুরু হয়। (আলইরশাদ ইলা মা ওয়াকাআ ফিল ফিকহি ওয়া গাইরিহী মিনাল আ‘দাদ ১/৩৫৩)
আরো দেখুন-
আলফুতূহাতুর রাব্বানিয়্যা, ইবনে আল্লান (১০৫৭ হি.); হাশিয়াতুল বুজাইরামী, সুলাইমান বুজাইরামী (১১৩১—১২২১ হি.) ১/৩৯৪; হাশিয়াতুশ শারকাভী, আবদুল্লাহ হিজাযী (১২২৬ হি.); হাশিয়াতুশ শিরওয়ানী, আবদুল হামীদ শিরওয়ানী ১৩০১)
তাঁরা সবাই বলেছেন, রাতের শেষ সপ্তমাংশের শুরুতে সুবহে কাযিব শুরু হয়। এখন বিষয়টি আমরা হিসাব করে দেখতে পারি। যেমন, আমাদের এখানে আজ ৯ ফেব্রুয়ারি সূযার্স্ত হয় ৫:৫০ মিনিটে, আর সূর্যোদয় হয় ৬:৩৫ মিনিটে। আর সন্ধ্যা ৫:৫০ থেকে সকাল ৬:৩৫ মিনিট পর্যন্ত মোট সময় হয় ১২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। আজ পুরো রাতের মোট সময় এটি। এর এক সপ্তমাংশ, এক শ নয় মিনিট (এক ঘণ্টা ৪৯ মিনিট) হয়ে থাকে। তাহলে এ অনুযায়ী হিসাব এই দাঁড়ায় যে, আজ আমাদের এখানে সূর্যোদয়ের ১ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট আগে সুবহে কাযিব হয়। অথচ আজকে ১৮°—এর সময় হয় সূর্যোদয়ের ১ ঘণ্টা ১৬ মিনিট আগে। তার মানে তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী সুবহে কাযিবের সময় হচ্ছে ১৮°—এর ৩৩ মিনিট আগে।
লক্ষণীয় যে, এই ফকীহগণ সুবহে কাযিবের এই হিসাব কোনো ফালাকিয়াতের কিতাবের ভিত্তিতে দেননি। নিজেদের পর্যবেক্ষণ ও আমল অনুযায়ীই তাঁরা এই হিসাব পেশ করেছেন। ফালাকীগণ তো সুবহে কাযিবকে কোনো ডিগ্রি দ্বারা নির্ধারণই করে দেননি। সুবহে কাযিবের বিষয়টি বাস্তবে এমন যে, ১৮°—এর কিছুক্ষণ আগ থেকে ঘণ্টাখানেক সময়ের ভেতর আগে—পরে যে কোনো সময় দেখা যেতে পারে।
যাক, কথা হল, ১৮°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার বিষয়টি এমন, যে অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহ্র আমল আগেও ছিল, বর্তমানেও আছে। যার প্রমাণ ফিকহ ও ফালাকিয়াত উভয় শাস্ত্রের কিতাবেই রয়েছে। এর বিপরীতে ১৮°—এ সুবহে কাযিব ও ১৫°—এ সুবহে সাদিকের দাবিটির প্রতি খেয়াল করে দেখার বিষয়। এ অনুসারে মুসলিম উম্মাহ্র আমল ও তাআমুলের কি কোনো প্রমাণ আছে? পূর্ববতীর্ কোনো যুগে কোনো মুসলিম দেশে ১৫° থেকে সুবহে সাদিক হিসাব করার কোনো তথ্য কি পাওয়া যায়? এ পর্যন্ত আহসানুল ফাতাওয়ার সকল উদ্ধৃতিই তুলে ধরা হল। কিন্তু এর কোনোটিতেই মুসলিম উম্মাহ্র আমল ও তাআমুলের কোনো কথা নেই। যারা ১৫° থেকে সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলেছেন তাদের কারো বক্তব্যে মুসলিম উম্মাহ্র কোনো তাআমুলের কথা পাওয়া যায় না। অথচ কোনো দেশে মুসলমানগণ কখনো এ অনুসারে আমল করে থাকলে অবশ্যই তা বর্ণিত হত এবং একেও দলীল হিসেবে পেশ করা হত।
মুসলিম ফালাকী হন কিংবা ফকীহ, সবার বক্তব্যেই এক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহ্র যে তাআমুল বর্ণিত হয়েছে, তা দ্বারা ১৮°—এর ভেতর সুবহে সাদিক হওয়ার বিষয়েরই সত্যায়ন হয়ে থাকে। এবং সুবহে কাযিব যে ১৮°—এর বেশ আগেই শুরু হয় এটিও তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু কোনো অঞ্চলে কোনো যুগে যদি ১৮ ডিগ্রিকে সুবহে কাযিব গণ্য করা হত এবং ফজরের ওয়াক্ত ১৫° থেকে হিসাব করা হত তবে তো এটি তাদের নিকট বড় একটি আলোচিত বিষয় হিসেবে দাঁড়াত। কথাটি শুধু কিতাবের পাতায় সীমাবদ্ধ না থেকে কার্যক্ষেত্রে বিশাল মতানৈক্য সৃষ্টি করত। কিন্তু আমরা দেখছি, ফুকাহায়ে উম্মত ও ফালাকীগণ, যারাই ১৮°—এর ভেতর সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলেছেন এবং সাথে সাথে মুসলিম উম্মাহ্র তাআমুলও বর্ণনা করেছেন, তাদের কারো বক্তব্যে ১৫°—এর কোনো কথাই নেই। ভুল কথা বা আমলের খণ্ডনের জন্যও তারা এমন কোনো কথা উল্লেখ করেন না। এর মানে, তাদের যুগে কোথাও এমন কোনো আমলের অস্তিত্ব ছিলই না। তাই তাঁদের বক্তব্যে ১৫°—এর কোনো প্রসঙ্গই আসেনি। পক্ষান্তরে বিরজান্দীসহ যারা ১৫°—এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার কথা বলেছেন তাদের কারো বক্তব্যেও ১৮° অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহ্র আমল সম্পর্কে কোনো কথা পাওয়া যায় না। মিশর—শামসহ সর্বত্রই ১৮° অনুযায়ী আমল ছিল। যার কথা বিভিন্ন যুগের ফালাকী ও ফকীহগণ বলে গেছেন। কিন্তু বিরজান্দী ও অন্য যারা এর বিপরীতে ১৫°—এর কথা বলেছেন তাদের বক্তব্যে মুসলিম উম্মাহ্র এই ব্যাপক তাআমুলের কোনো প্রসঙ্গই নেই। তার মানে, তারা নিজেদের এই কথাকে নিছক একটি তত্ত্বগত বিষয় হিসেবে কিতাবের পাতায়ই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। নিজেদের এলাকা ও অন্যান্য মুসলিম ভূখণ্ডের মুসলিম উম্মাহ্র আমলের সাথে একে মিলিয়ে দেখেননি। বিরজান্দীর قيل ও بتحقيق معلوم نشود শব্দই যার বড় প্রমাণ।
মোটকথা, ১৫°—এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার পক্ষে কোনো ফালাকীর বক্তব্যও নেই; সমকালীন বা আগের যুগের কারো মুশাহাদা দ্বারাও তা প্রমাণিত নয়; কোনো যুগে এ অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহ্র আমল থাকারও কোনো প্রমাণ নেই। বরং সব দিক থেকেই এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি।
***
আলহামদু লিল্লাহ, এ পর্যন্ত আহসানুল ফাতাওয়ার حوالجات : تحقیقات قدیمہ —এর উপর বিস্তারিত পর্যালোচনা পেশ করা হল। সামনে আহসানুল ফাতাওয়ার تحقیقات جدیدہ —এর উপর পর্যালোচনা তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ।
এ পর্যায়ে আমরা বিরজান্দী রাহ.—এর কথাটি আবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই আলোচনা শেষ করছি। ভালোভাবে মনে রাখা দরকার, আলোচ্য বিষয়ে আহসানুল ফাতাওয়ার মূল দাবি হল, সুবহে সাদিক শুরু হয় ১৫°—এ। এর আগে সুবহে সাদিকের সময় হয় না। এই দাবির পক্ষে আহসানুল ফাতাওয়ার সর্বোচ্চ উদ্ধৃতি হচ্ছে বিরজান্দী রাহ.—এর বক্তব্য। আর বিরজান্দী রাহ. তার এক কিতাবে নিজেই একে قيل বলে উল্লেখ করেছেন। আরেক কিতাবে তিনি এর থেকে আরো স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন-
واما درجات انحطاط در ابتداء طلوع صبح صادق بتحقيق معلوم نشود۔
‘সুবহে সাদিক কত ডিগ্রিতে উদিত হয়, তাহকীকের সাথে তা জানা যায় না’।
অজ্ঞাত ও অজানা এই ভুল কথাটিই ১৫°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার দাবিটির উৎস। এর বিপরীতে ১৮°—এ সুবহে সাদিক হওয়ার সপক্ষে রয়েছে যুগ পরম্পরায় চলে আসা মুসলিম উম্মাহ্র তাআমুল, ফকীহগণের বক্তব্য এবং প্রাচীন ও আধুনিক সকল জ্যোতির্বিজ্ঞানীর ঐকমত্যপূর্ণ সুস্পষ্ট অসংখ্য বক্তব্য। আলোচ্য বিষয়ে এটিই সারকথা। হ
(চলবে ইনশাআল্লাহ)