মেনন সাহেবের দুঃখ
আগে ছেলে-মেয়েদের আর বর্তমানে নাতি-নাতনিদের রাগ থামাতে, অভিমান কমাতে আমার মোক্ষম হাতিয়ার হল, কবিতা আবৃত্তি করা। হালে শিশুদের কান্না থামাতে যে কবিতাগুলো বেশি আবৃত্তি করা হয় তার একটি হল সেক্যুলার ও লিবারেলদের নিয়ে প্রাচ্যের কবি ইকবালের নিম্নোক্ত কবিতা-
ترے آزاد بندوں کی نہ یہ دنیا نہ وہ دنیا + یہاں مرنے کی پابندی وہاں جینے کی پابندی
তোমার সেক্যুলার বান্দাদের না এই দুনিয়া না ওই দুনিয়া/এখানে মৃত্যুর বাধ্যবাধকতা, ওখানে বেঁচে থাকার।
শিশুরা এখন বড় হয়ে উঠছে। আগের মতো এখন আর কবিতা শোনাতে হয় না। কিন্তু কিছুদিন ধরে আবার কবিতাটি মনের মাঝে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। এর কারণ মেনন সাহেব। বাংলাদেশের বর্ষীয়ান বামপন্থি নেতা রাশেদ খান মেনন। আওয়ামীলীগের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে মন্ত্রিত্বের স্বাদও নিয়েছেন অনেক বছর। এমপিও হয়েছেন বারবার। সম্প্রতি তিনি তাঁর এলাকার বোরকা পরা মেয়েদের দেখে বিস্মিত হয়েছেন। দুঃখ পেয়েছেন অনেক। সে বিষয়ে পত্রিকার একটি রিপোর্ট-
নিজের গড়া কলেজে পড়া মুখঢাকা ছাত্রীদের দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ওই ছাত্রীদের দেখে তিনি জানতে চেয়েছেন, পাশে কি মাদরাসা আছে?
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাতে বরিশাল নগরের কাউনিয়ায় নীলু-মনু ট্রাস্ট ও পাবলিক লাইব্রেরিতে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
মেনন বলেন, ‘আমি যখন রাস্তা দিয়ে আসছিলাম, তখন দেখি, সারি সারি মেয়েরা যাচ্ছে। কিন্তু তাদের চেহারা জামা-কাপড় দেখতে পাচ্ছি না, সব আবৃত, হাতে মোজা। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, পাশে মাদরাসা আছে নাকি। কিন্তু আমাকে উত্তর দেওয়া হল, এরা আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজের মেয়ে’।
তিনি বলেন, ‘এই আবুল কালাম কলেজ আমার হাত দিয়ে তৈরি করেছি, সেই আবুল কালাম কলেজের মেয়েদের এই চেহারা। আমি তো কোনো বাঙালি মেয়ে দেখলাম না। আমি আগরপুর কলেজে গিয়ে একটা মেয়েরও চোখের ঠুলি ছাড়া কিছু দেখি নাই। বাঙালি শাড়ি পরা মেয়ে দেখলাম না। আমি এখানে (বরিশাল) রাস্তায় তাকিয়ে দেখি কতজন নারী শাড়ি পরে বের হয়। শুধু দেখলাম, যারা কর্মজীবী নারী আর আমাদের মা-বোনেরা যারা পুরোনো দিনের তারা শাড়ি পরছেন। তাহলে বাংলাদেশ কোথায় এখন।’
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ‘আজ আমি বাংলাদেশকে চিনি না। আমি আমার ধর্ম পালন করি, তারপরও তো নাস্তিক বলে পরিচিত আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে আমাদের মেয়েরা যারা সালোয়ার-কামিজ না পরে শাড়ি পরে যেত, সেই মেয়েরা আজ এই জায়গাতে চলে গেছে। আজ জনসংখ্যার অর্ধেক দেখে বুঝতে পারছি, দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। আজকাল ইউটিউব খুললেও এসব প্রচার ছাড়া আর কিছু দেখি না।’
(বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর.কম, মার্চ ২৫, ২০২২)
রিপোর্টটি চোখে পড়ার পরই মনে হয়েছে, মেনন সাহেবকে সমবেদনা জানানোর জন্য হলেও এ নিয়ে কিছু লেখা দরকার। এরই মধ্যে দেশে এসে গেছে টিপকাণ্ড ও টিপ বিতর্ক। এ নিয়ে আমার বেশি পড়া হয়নি। শুধু শিরোনামগুলো দেখা হয়েছে। কিন্তু টিপের বিষয়টি সামনে আসার পর মেনন সাহেবের বোরকা বিষয়ে লেখার প্রাসঙ্গিকতা আরও জোরদার হয়েছে। পুরো প্রতিবেদন দেখে পাঠকবৃন্দ নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, মেনন সাহেবের দুঃখের গোড়ার কথা। তিনি নিজ এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তাঁর মনের আশা ছিল, ছেলেমেয়েরা শুধু শিক্ষিত হবে না, তারা নিজ ধর্ম, তাহযীব, তামাদ্দুন সবকিছু বিসর্জন দিয়ে মেনন সাহেবদের যে রাজনৈতিক ও আদর্শিক ভিনদেশী প্রভুরা আছে, তাদের মতো হয়ে উঠবে। এজন্যই দেখা যায়, ঢাকায় বসে যুগ যুগ ধরে তাঁরা যে আদর্শের রাজনীতি করে আসছেন তার মূল কথাই হল, ইসলামবিদ্বেষ, ধর্মবিদ্বেষ, ভিনদেশী সংস্কৃতি লালন, আলেম-উলামাদের প্রতি অশ্রদ্ধা জাগানো। এসব তো প্রকাশ্য ব্যাপারই ছিল। কিন্তু নিজের এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়েও যে তিনি সেখানে তাদের এই আদর্শ ও এই চিন্তা বাস্তবায়ন করতে চান, সে কথা প্রকাশ পেল তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যে।
পত্রিকার ভাষ্যমতে, মেনন তার বক্তব্যে তিনি ধর্ম পালন করার পরও মানুষ তাকে নাস্তিক বলে- এমন আক্ষেপও ব্যক্ত করেছেন। আমরা কিন্তু তেমন কিছু বলছি না। মেনন-ইনুরা মন্ত্রী থাকাকালে হজ্ব করে আসার পর মাসিক আলকাউসারে আমরা বরং তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে কলাম লিখেছি। কিন্তু তিনি যে ধর্ম পালন করার দাবি করছেন সেটি কতটুকু সঠিক- তা কি তিনি ভেবে দেখেছেন? ইসলাম কি কোনো খণ্ডিত বিশ^াসের নাম? আমি মাঝেমধ্যে নামায-রোযা করলাম, হজ্বও করে আসলাম, কিন্তু অন্যদিকে শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি-অর্থনীতি, আইন ও বিচার ব্যবস্থা এবং সমাজ বিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসলামের অনুপম আদর্শগুলোকে অস্বীকার করে অথবা খাটো করে খোদাদ্রোহী লোকদের মত ও আদর্শ গ্রহণ করলাম এতে কি আমার ধর্ম-বিশ্বাস সঠিক হল? আল্লাহ তাআলা তো বলেছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً وَّ لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِیْنٌ.
হে মুমিনগণ! ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সূরা বাকারা (২) : ২০৮
আর ইসলাম মানেই তো হল শর্তহীনভাবে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ। সুতরাং যারা তাদেরকে ধার্মিক মানতে চান না তাঁদের দোষই বা কতটুকু?!
রাশেদ খান মেনন ও তাঁর মতো লোকদের জন্য সত্যিই আমাদের করুণা হয়। কী বলে তাঁদের সমবেদনা জানাব সেটাও খুঁজে পাই না। তাঁদের জীবনটাই তাঁরা বিসর্জন দিয়েছেন। বার্ধক্যে উপনীত হয়েও যে দেনা-পাওনার হিসাব মেলাতে পারছেন না, তারা যা করেছেন, যে জন্য করেছেন সবই তার উল্টো চলছে। এজন্য দুঃখ তাঁর একার নয়, দুঃখ আমাদেরও বটে। মেনন-ইনু ও তাদের মতো রাজনীতিকরা এ দেশে সেক্যুলার ও লিবারেল রাজনীতি এবং ধর্মবিদ্বেষের জন্য তো জীবনই ব্যয় করে দিয়েছেন। তাঁদের আলোচনা ও কথাবার্তায় কখনোই মনে হয় না তারা খুশি হতে পেরেছেন।
এর কারণ কী? কারণ খুবই স্পষ্ট। সেটা হল, ফিতরত। সেটা হল, আল্লাহর দ্বীনের মহত্ত্ব। আল্লাহর বান্দা ও বান্দীদের তাঁদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি পরম ভালবাসা। এ ভালবাসা, এ ফিতরত কোনো বাধ মানে না, অপসংস্কৃতি মানে না। শত শত চ্যানেল বেহায়াপনা ছড়াতে ব্যস্ত, শত শত মেনন-ইনু, অমুক সংস্কৃতিক জোট, তমুক জোট, অমুক দল, তমুক সরকার রাত দিন ব্যস্ত থাকে তাদেরকে বদদ্বীন করার পেছনে। কিন্তু আল্লাহর বান্দিরা শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজেদের স্বকীয়তা ধরে রাখে। নিজেদের তাহযীব-তামাদ্দুন ধরে রাখে। এটাই ফিতরত। এটাই প্রকৃত মানবস্বভাব। মেনন ও তাঁর মতো লোকেরা এ কথাগুলো ভুলে যান বলেই নিজের গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে বোরকাওয়ালী দেখে অবাক হন।
বাংলাদেশ তো মুসলমানদের দেশ। প্রায় ৯০ ভাগ লোক এদেশে আল্লাহ, রাসূল ও আখেরাতে বিশ্বাসী। যদিও দিন দিন প্রতিকূলতা তৈরি করা হচ্ছে। পর্দা-পুশিদা নিয়ে নারীদের শিক্ষাগ্রহণ ও জীবন চলা কঠিন বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। এমনকি উল্টো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের হাতে নিপীড়িতও হতে হচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ভিনধর্মী বয়স্ক শিক্ষকনামী ... লোকের হাতেও মুসলিম মেয়েদের ইজ্জত নষ্ট হচ্ছে, তবুও আল্লাহর ফযলে এখনও এ দেশের নারীগণ পর্দা করে চলছেন। কিন্তু যে সকল ইউরোপীয় দেশে পর্দা নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিংবা পর্দা করলে জরিমানার বিধান করা হয়েছে সেসব দেশেও তো আল্লাহর বান্দীগণ জরিমানা প্রদান করেও পর্দা রক্ষা করে তাদের ঈমানের জোর কুফরি শক্তির সামনে প্রকাশ করে যাচ্ছেন। এটিই ঐ শক্তি, যার কথা আল্লাহ তাআলা সূরা মায়েদায় ইরশাদ করেছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مَنْ یَّرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِیْنِهٖ فَسَوْفَ یَاْتِی اللهُ بِقَوْمٍ یُّحِبُّهُمْ وَ یُحِبُّوْنَهٗۤ اَذِلَّةٍ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اَعِزَّةٍ عَلَی الْكٰفِرِیْنَ ؗ یُجَاهِدُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللهِ وَ لَا یَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآىِٕمٍ ذٰلِكَ فَضْلُ اللهِ یُؤْتِیْهِ مَنْ یَّشَآءُ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ.
হে মুমিনগণ! তোমাদের কেউ যদি নিজ দ্বীন থেকে ফিরে যায়, তবে আল্লাহ এমন লোক সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি কোমল এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে ইচ্ছা করেন দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। -সূরা মায়েদা (৫) : ৫৪
এই শক্তিকে নিঃশেষ করে দেওয়া সম্ভব নয়। যারা নিঃশেষ করে দিতে চাইবে ধীরে ধীরে হলেও তারাই একদিন নিঃশেষ ও অপদস্থ হবে।
فَاِذَا جَآءَ اَمْرُ اللهِ قُضِیَ بِالْحَقِّ وَ خَسِرَ هُنَالِكَ الْمُبْطِلُوْنَ.
অতঃপর যখন আল্লাহর আদেশ আসবে, তখন ন্যায়সঙ্গতভাবে ফায়সালা হয়ে যাবে। আর মিথ্যার অনুসারীরা তখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। -সূরা মু’মিন (৪০) : ৭৮
বুড়ো মেনন সাহেবের কেন এত দুঃখ? মেয়েদের চেহারা না দেখতে পারার এত কষ্ট! কেন সেখানে তাঁকে পর্দাহীন নারী দেখতে হবে? তিনি তো রাজধানীতেই থাকেন। সেখানে কি কম বেপদার্ নারী দেখেন! আমরা মানুষের রুচি ও লজ্জাবোধের অবস্থা দেখেও অবাক হই।
আরেকটি কথা, পুরো দেশে তো কিছুদিন ধরে বিশাল তোলপাড় চলল। কার কপালের টিপ নিয়ে নাকি কে মন্তব্য করেছিল। সে নিয়ে যে শুরু হয়েছে পুরো দেশের সরকার, গণমাধ্যম, একশ্রেণির শিক্ষাবিদ এবং তাদের সমগোত্রীয়রা একসাথ হয়ে যেভাবে চ্যাঁচামেচি শুরু করেছিল, মনে হয়েছে, বাংলাদেশ তো ডুবে গেল। দেশ যেন কোনো দুর্ভিক্ষের চেয়েও মারত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ের দুর্ভিক্ষ, জলোচ্ছ্বাস, সুনামির চেয়েও জঘন্য কিছু ঘটে গেছে টিপ নিয়ে কথা বলার কারণে। ধর-পাকড়, তদন্ত কমিটি অনেক কিছুর কথাই শোনা গেছে। এ নিয়ে অনেক কিছু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। মনে হয়েছে দেশে আর কোনো সমস্যা-ই নেই। এদেশে দ্রব্যমূল্যের সমস্যা নেই। মানুষের আর্থিক সমস্যা নেই। গুম-খুনের সমস্যা নেই। গণতন্ত্রের সমস্যা নেই। করোনার সমস্যা নেই। যত সমস্যা টিপ নিয়েই। যেন টিপ নিয়ে মন্তব্য করে কারও অধিকার হরণ করা হচ্ছে!
জাতির বিবেকের কাছে কেউ কি প্রশ্ন রাখতে পারে, সামান্য টিপ নিয়ে যে জাতির হর্তা-কর্তারা এত উৎপাত করতে পারেন তাঁরা কি এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতির ধর্মীয় শিআর (প্রতীক) হিজাব-নিকাব নিয়ে মেননের ওই বক্তব্যের সামান্য নোটিশও দিয়েছেন? মেননরা এত বড় দুঃসাহস ও স্পর্ধা দেখায় কী করে? যে দেশের সাধারণ লোকজন ধর্মপ্রাণ, আজকের যে মেয়েরা আগামীর মা দাদি নানি, যাদের অনেকে আগামীতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক দায়িত্ব আঞ্জাম দেবে তাদের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানোর দুঃসাহস তিনি কোথায় পান? তাদের হিজাবের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানোর অর্থ তো গোটা মুসলিম নারীদের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানো! মেননের এ বক্তব্য নিয়ে তো পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। কোথায়, এ নিয়ে তো কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি! কোনো শিক্ষাবিদের তো মন্তব্য শোনা যায়নি। ভিন দেশের হিজাব-নিকাবের খবর তো এদেশের গণমাধ্যমে কিছু হলেও প্রচারিত হয়। বিভিন্ন দেশে হিজাব নিষিদ্ধের আইন হলে অনেকে এর বিপক্ষে প্রতিবেদন ও কলাম লেখেন। এই তো আমরা ক’দিন আগে মুসকানকে নিয়ে রিপোর্ট করেছি। এক-আধবার হলেও বলেছি, লিখেছি। কিন্তু নিজ দেশে মুসলিম মেয়েদের প্রতীক হিজাব-নিকাব-পর্দা নিয়ে মেননরা যে জনসম্মুখে কটূক্তি করল, টিপকাণ্ডে যতজন লাফিয়ে উঠেছে সেটা নিয়ে তারা কি কেউ টু শব্দ করেছে? এ বৈপরীত্য আর কত দিন? কত দিন আর একপেশে নীতি চলবে?
যত একপেশে নীতিই চলুক, যত বৈপরীত্যই চলুক, মনে রাখতে হবে, মেননদের যেমন দুঃখ নিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হতে হচ্ছে, তারা বীজ বপন করেছে এক গাছের, কিন্তু উৎপন্ন হচ্ছে অন্য কিছু। অন্যদেরকেও এমনই ব্যর্থ হতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-
وَقُلْ جَآءَ الْحَقُّ وَ زَهَقَ الْبَاطِلُ اِنَّ الْبَاطِلَ کَانَ زَهُوْقًا.
বল, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই। -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৮১
সবশেষে প্রাচ্যের কবি ইকবালের কয়েকটি পঙ্ক্তি বলে শেষ করছি-
مجھے تہذیب حاضر نے عطا کی ہے وہ آزادی + کہ ظاہر میں تو آزادی ہے ، باطن میں گرفتاری
এ সভ্যতা আমাকে যে স্বাধীনতা দিয়েছে/দেখতে মুক্ত হলেও বাস্তবে আমি বন্দী!
تو اے مولائے یثرب! آپ میری چارہ سازی کر + مری دانش ہے افرنگی ، مرا ایماں ہے زناری
হে ইয়াসরিবের মাওলা, আপনি আমার উপায় করুন/আমার জ্ঞান ইউরোপিয়ান, ঈমান পৈতাধারির।
ترے آزاد بندوں کی نہ یہ دنیا نہ وہ دنیا + یہاں مرنے کی پابندی وہاں جینے کی پابندی
তোমার সেক্যুলার বান্দাদের না এই দুনিয়া না ওই দুনিয়া/এখানে মৃত্যুর বাধ্যবাধকতা, ওখানে বেঁচে থাকার।