প্রশ্নোত্তর
[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম ‘প্রশ্নোত্তর’। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন ১৮ : আল কাউসারের গত সংখ্যায় আনওয়ারুল কুরআন প্রশ্নোত্তর বিভাগে প্রসঙ্গক্রমে সদর ছাহেব রাহ.-এর হক্কানী তাফসীরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি এ তাফসীর সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম।
উত্তর : সদর ছাহেব (মাওলানা শামসুল হক ফরীদপুরী) রাহ.-এর হক্কানী তাফসীর পরিপূর্ণ প্রকাশিত হয়নি। বিশ্বকল্যাণ পাবলিকেশন্স থেকে কেবল প্রথম ও শেষ পারার তাফসীর দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীতে খাদেমুল ইসলাম পাবলিকেশন্স ২০১১ সালে আল্লামা শামসুল হক রাহ. ট্রাস্টের সহযোগিতায় আমপারাসহ এর দশটি খণ্ড প্রকাশ করে, তবে সেটিও প্রথম পারা থেকে ধারাবাহিকভাবে নয়।
আল্লামা শামসুল হক রাহ. ট্রাস্টের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, তারা বাকি অংশও ছাপার জন্য প্রস্তুত করছেন।
প্রশ্ন ১৯ : আমার প্রশ্ন হল, ঘুষের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কুরআনে কি কিছু বলা হয়েছে?
উত্তর : ঘুষ অবৈধভাবে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করার একটি নিকৃষ্টতম প্রকার। কুরআন কারীমে দাতার সন্তুষ্টি ছাড়া অবৈধ পন্থায় অন্যের সম্পদ ভক্ষণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। বলাই বাহুল্য, ঘুষদাতা অসন্তুষ্ট মনে এবং বাধ্য হয়েই ঘুষ দেয়। কুরআনে সব ধরনের অন্যায় উপার্জন নিষেধ করে বলা হয়েছে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَكُمْ بَیْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ .
হে মুমিনগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে পারস্পরিক সন্তুষ্টিক্রমে কোনো ব্যবসায় করা হলে (তা জায়েয)। -সূরা নিসা (৪) : ২৯
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَ لَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَكُمْ بَیْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَ تُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَی الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِیْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَ اَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.
তোমরা পরস্পরে সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে এই উদ্দেশ্যে মামলা রুজু করো না যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে পাপের পথে গ্রাস করবে। -সূরা বাকারা (২) : ১৮৮
কোনো কোনো মুফাসসির এর ব্যাখ্যা এভাবেও করেছেন, জেনেশুনে মানুষের সম্পদ গ্রাস করার জন্য বিচারককে উৎকোচ দিয়ো না। দ্রষ্টব্য. তাফসীরে কুরতুবী ২/৩৩৯-৩৪০
তাছাড়া কুরআন কারীমে ইহুদী পণ্ডিতদের একারণে নিন্দা করা হয়েছে যে, তারা মানুষজন থেকে ঘুষ নিয়ে তাওরাতের বিধান পাল্টে দিত। আল্লাহ তাআলা তাদের এ অন্যায় আত্মসাৎ সম্পর্কে বলেন-
سَمّٰعُوْنَ لِلْكَذِبِ اَكّٰلُوْنَ لِلسُّحْتِ.
তারা অতি আগ্রহের সাথে মিথ্যা শোনে এবং প্রাণভরে ঘুষ খায়। -সূরা মায়েদা (৫) : ৪২।
আরও ইরশাদ হয়েছে-
وَ تَرٰی كَثِیْرًا مِّنْهُمْ یُسَارِعُوْنَ فِی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ وَ اَكْلِهِمُ السُّحْتَ لَبِئْسَ مَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ ، لَوْ لَا یَنْهٰىهُمُ الرَّبّٰنِیُّوْنَ وَ الْاَحْبَارُ عَنْ قَوْلِهِمُ الْاِثْمَ وَ اَكْلِهِمُ السُّحْتَ لَبِئْسَ مَا كَانُوْا یَصْنَعُوْنَ.
তাদের অনেককেই তুমি দেখবে, তারা পাপ, জুলুম ও ঘুষ খাওয়ার দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করছে তা অতি মন্দ। তাদের আলেমরা তাদেরকে গুনাহের কথা বলতে ও ঘুষ খেতে নিষেধ করছে না কেন? বস্তুত তাদের এ কর্মপন্থা অতি মন্দ! -সূরা মায়েদা (৫) : ৬২-৬৩।
এখানে السُّحْتُ দ্বারা তাদের ঘুষ ও উৎকোচ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তাদের এ অবৈধ ভক্ষণের কথা সূরা বাকারার (২) ৭৯, সূরা আলে ইমরানের (৩) ১৮৭ এবং সূরা নিসার (৪) ১৬১ নম্বর আয়াতেও বলা হয়েছে।
উল্লিখিত আয়াতগুলোর অধীনে ঘুষ এবং সকল অবৈধ উপার্জনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপরই লানত। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৫৮০; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৩৭)
প্রশ্ন ২০ : কুরআনের ত্রিশ নম্বর পারাকে আমপারা বলা হয় কেন?
উত্তর : কুরআনের ত্রিশ নম্বর পারাকে আমপারা বা আম্মাপারা বলা হয়। বাংলা এই শব্দদুটির মূল উৎস ফারসী عَمَّ پارہ (আম্মা পারা)। ত্রিশ নম্বর পারার প্রথম আয়াত عَمَّ یَتَسَآءَلُوْنَ , এখান থেকে عَمَّ আর ফারসী پارہ (পারা-অংশ) শব্দ নিয়েই عَمَّ پارہ। আরবীতে এটাকে বলে جُزْءُ عَمّ ।
প্রশ্ন ২১ : সর্বপ্রথম কোন্ নবীর ওপরে আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছিল?
উত্তর : কুরআন-হাদীসে যে নবী-রাসূলগণের ওপরে আসমানী কিতাব নাযিল হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সবার আগে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওপরে কিছু সহীফা বা পুস্তিকা নাযিল হওয়ার কথা উল্লেখিত হয়েছে। কুরআন শরীফে সূরা আ‘লার (৮৭) ১৯ নম্বর আয়াতে এবং সূরা নাজমের (৫৩) ৩৬-৩৭ আয়াতে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওপরে অবতীর্ণ সহীফার কথা বলা হয়েছে। প্রসিদ্ধ চার আসমানী কিতাব যে নবী রাসূলগণের ওপরে অবতীর্ণ হয়েছে, তিনি তাঁদের পূর্বের।
প্রশ্ন ২২ : আবরাহা কেন কা‘বা শরীফ ধ্বংস করতে চেয়েছিল? সে কোন্ ধর্মের ছিল?
উত্তর : তখনও দলে দলে মানুষ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ধর্মমতে কা‘বা শরীফের তওয়াফ করত। আবরাহা চেয়েছিল, মানুষ যেন কা‘বার তওয়াফ না করে সানআতে তার বানানো প্রাসাদের প্রদক্ষিণ করে। তার এ কুমতলব জানতে পেরে এক লোক তার প্রাসাদকে নোংড়া করে দিয়েছিল। আবরাহা এটা জানতে পেরে রাগে এবং হিংসায় কা‘বা শরীফের উপর আক্রমণ করার ইচ্ছা করে।
সে খ্রিস্টধর্মাবলম্বী ছিল। তার আগে ইয়ামানের ইহুদী শাসক ইউসুফ যূ-নুওয়াস সেখানকার খ্রিস্টানদের উপর ব্যাপক অত্যাচার চালাচ্ছিল। তাকে দমন করার জন্য রোমের কায়সারের নির্দেশে হাবাশার গভর্নর নাজাশী এক বিশাল বাহিনী পাঠায়, সেই বাহিনীর একজন অফিসার ছিল আবরাহা। তাদের হাতে যূ-নুওয়াস পরাজিত হয় এবং ইয়ামান ইহুদীদের দখলমুক্ত হয়। পরবর্তীতে আবরাহা নাজাশীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ইয়ামানের স্বাধীন খ্রিস্টান শাসক হয়। (সীরাতে ইবনে হিশাম ১/৬১; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/১৩৭, ১৪০-১৪১)