সুবহে সাদিক কখন শুরু?
প্রসঙ্গ : আহসানুল ফাতাওয়ার উদ্ধৃতিগুলোর পর্যালোচনা-৩
আহসানুল ফাতাওয়ার تحقیقات قدیمہ শিরোনামের তিনটি উদ্ধৃতির পর্যালোচনা এ পর্যন্ত উল্লেখ করা হল। এখন বাকি থাকল এই শিরোনামের অবশিষ্ট উদ্ধৃতিগুলোর প্রসঙ্গ। যে তিনটি উদ্ধৃতির পর্যালোচনা পেছনে তুলে ধরা হয়েছে- সেগুলোর কোনোটি যে আহসানুল ফাতাওয়ার দাবির কোনো অংশের দলীল নয়- তা আমাদের সামনে দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে গেছে। এগুলোর কোনোটিতে ১৮°-এ সুবহে কাযিবের কথাও নেই এবং ১৫°-এ সুবহে সাদিকের কথাও নেই।
এখন দেখার বিষয় অবশিষ্ট উদ্ধৃতিগুলোর অবস্থা। অবশিষ্ট উদ্ধৃতিগুলোর মধ্যে মূল হচ্ছে দুইটি। কাযীযাদাহ ও বিরজান্দী রাহ.-এর উদ্ধৃতি। বাকি সব উদ্ধৃতি এ দুটি নির্ভর। এই দুই উদ্ধৃতি থেকেই বাকিগুলোর উৎপত্তি। তাই প্রথমে এই দুটি উদ্ধৃতির আলোচনাই তুলে ধরা হচ্ছে। এ দুটি উদ্ধৃতি কতটুকু গ্রহণযোগ্য? শাস্ত্রীয় বিচারে এগুলোতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না? সামনে এর বিবরণ পেশ করা হল।
কাযীযাদাহ রাহ.-এর উদ্ধৃতি
আহসানুল ফাতাওয়ার এই শিরোনামের বাকি উদ্ধৃতিগুলোর মাঝে সবচেয়ে পুরাতন হল কাযীযাদাহ রাহ.-এর বক্তব্য। তিনি হলেন নবম শতাব্দীর। তারাজিমের কিতাব থেকে এটুকু বোঝা যায় যে, তাঁর ইন্তেকাল নবম শতাব্দীর কোনো এক সনে হয়েছে। কিন্তু সেই বছর কোন্টি নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। আলআ‘লাম, যিরিকলীতে তার মৃত্যুসন লেখা হয়েছে ৮৪০ হি. প্রশ্নবোধক চিহ্নের সাথে। টীকাতে আরো বিস্তারিতভাবে মৃত্যুসনের অস্পষ্টতার কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
তার জীবনীতে একটি বড় দিক হল, তিনি যে মাহের ফালাকী ছিলেন- এর কোনো প্রমাণ তারাজিমের কিতাবে পাওয়া যায় না। তিনি গণিতবিদ হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন এ কথা পাওয়া যায়। এমনকি আল্লামা সায়্যিদ শরীফ জুরজানী রাহ. (৮১৬ হি.) তার সম্পর্কে বলেছেন-
غلب على طبعه الرياضيات.
অর্থাৎ তার তবীয়তে গণিত বিদ্যার প্রাবল্য হয়ে গেছে। (আশশাকায়িকুন নুমানিয়্যা, পৃ. ১৪)
কিন্ত মহাকাশ অবজার্ভেশন ভিত্তিক ইলমুল ফালাকের (জ্যোতির্বিজ্ঞানের) মাহের ও বিশেষজ্ঞ ছিলেন- এমন কোনো তথ্য তার জীবনীতে পাওয়া যায় না। তাই এই শাস্ত্রে তার কেবল কিতাব নির্ভর ইলম ছিল এটিই স্বাভাবিক।
আহসানুল ফাতাওয়াতে তার ‘শরহুল মুলাখ্খাস ফিল হাইআহ’ (‘শরহে চিগমীনী’ নামে প্রসিদ্ধ) কিতাব থেকে একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেটি হল-
وقد عرف بالتجربة أن أول الصبح وآخر الشفق إنما يكون إذا كان انحطاط الشمس ثمانية عشر جزءا، ففي بلد يكون عرضه أقل من تمام الميل بثمانية عشر جزءا يتصل الشفق بالصبح الكاذب إذا كانت الشمس في المنقلب الصيفي.
এখানে প্রথমে তিনি বলেছেন, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা গেছে, ‘সুবহ’-এর শুরু এবং ‘শাফাক’-এর শেষ হয় সূর্য যখন দিগন্তের ১৮° নিচে থাকে।
লক্ষণীয় যে, এই কথাটুকু এখানে তিনি এই ভাষায়ই উপস্থাপন করেছেন, যেভাবে নাসীরুদ্দীন তূসীসহ পূর্ববতীর্ কোনো কোনো ফালাকী বলে গেছেন। অর্থাৎ শুধু ‘সুবহ’ শব্দ দ্বারা কথাটি উপস্থাপন করেছেন। যার থেকে বোঝা যায়, তিনি আগের ফালাকীগণের কিতাব থেকেই এ কথা গ্রহণ করেছেন। আর পূর্ববতীর্ ফালাকীগণের বক্তব্যে বিদ্যমান এই ‘সুবহ’ দ্বারা যে সুবহে সাদিক উদ্দেশ্য- এর অনেক দলীল-প্রমাণ আমরা পূর্বে পেশ করে এসেছি।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, কাযীযাদাহ এরপর যা বলেছেন, পূর্ববতীর্ ফালাকীগণের কথার সাথে এর মিল নেই। মাহের ফালাকীগণের বক্তব্য অনুযায়ী কাযীযাদাহ-এর পরবর্তী কথা কোনোভাবেই ঠিক নয়।
কাযীযাদাহ এরপর বলেছেন, যে এলাকাতে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ১৮° নিচে যাওয়ার আগেই আবার উপরে উঠে আসে সেখানে শাফাকের সাথে সুবহে কাযিব মিলে যায়।
এখানে তার আরবী এবারতটি হল-
يتصل الشفق بالصبح الكاذب.
অথচ তূসী ১৮°-এর সময়টি যেমন শুধু ‘সুবহ’ শব্দ দ্বারা উল্লেখ করেছেন এখানেও তিনি কথাটি এভাবেই বলেছেন-
يتصل الشفق بالصبح.
অর্থাৎ শাফাক ‘সুবহ’-এর সাথে মিলে যায়।
দেখুন-
التذكرة في الهيئة، مخطوط المكتبة البريطانية، الرقم : 23394، ق 49.
আর তূসির বক্তব্যে এই ‘সুবহ’ দ্বারা যে সুবহে সাদিক উদ্দেশ্য এবং তার বক্তব্যের এটিই স্বাভাবিক অর্থ- এর দলীল-প্রমাণ তো পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছেই।
সুতরাং কাযীযাদাহ-এর এখানে শাফাকের সাথে সুবহে কাযিব মিলে যাওয়ার কথটি ঠিক নয়। তা মাহের ফালাকীগণের ইজমা পরিপন্থী কথা। এক্ষেত্রে বরং সঠিক কথা হল, সুবহে সাদিকের সাথে শাফাক মিলে যায়।
কাযীযাদাহ-এর বক্তব্যটির এই অংশ দ্বারা বাহ্যত এটিই প্রতীয়মান হয় যে, এর প্রথম অংশে তিনি কোনো কোনো মাহের ফালাকীর মতো সুবহে সাদিকের সময়কে শুধু ‘সুবহ’ শব্দ দ্বারা উল্লেখ করে থাকলেও এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য মূলত সুবহে কাযিব। কিন্তু তা যে সকল ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী)-এর ইজমা পরিপন্থী এবং যুগ পরম্পরায় চলে আসা মুসলিম উম্মাহর আমলের খেলাফ শায তথা বিচ্ছিন্ন কথা, এমনকি সমকালীন বহু মুশাহাদা দ্বারাও ভুল ও বাস্তবতা বিরোধী প্রমাণিত- তা তো আমাদের পূর্বের আলোচনাগুলো থেকে সুস্পষ্ট।
ভালোভাবে বুঝে রাখা দরকার, ১৮°-এ সুবহে কাযিব হওয়ার কথাটি যে সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন তা তো অকাট্য দলীলাদি দ্বারাই প্রমাণিত। কিন্তু এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় আরেকটি দিক হল, যদি ধরেও নেয়া হয় যে কাযীযাদাহ এখানে সুবহে কাযিবের সময় বয়ান করেছেন তাহলে কথা হল, কোনো কিতাবে সুবহে সাদিকের সময় না লিখে শুধু সুবহে কাযিবের সময় বিদ্যমান থাকাটাই একটি প্রমাণ যে, এই কিতাবের উক্ত কথাটি ঠিক নয়। একজন আলেমেদ্বীন তার কিতাবে শুধু সুবহে কাযিবের সময় লিখেই চলে যাচ্ছেন; শরীয়তের আলোকে সুবহে সাদিকের পরিচয় তুলে ধরার পরও এর সময় লিখছেন না- এমনটি করার পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। কাযীযাদাহ ১৮°-এর সময়টি বলার ঠিক আগে নিজেই এভাবে হাদীস উল্লেখ করেছেন-
قال عليه الصلاة والسلام : لا يغرنكم الفجر المستطيل، فكلوا واشربوا حتى يطلع الفجر المستطير.
অর্থাৎ সুবহে কাযিব যেন তোমাদের ধোকায় না ফেলে। বরং তোমরা পানাহার কর সুবহে সাদিক পর্যন্ত।
এভাবে হাদীস উল্লেখ করার পরপরই তিনি এ কথা বলেছেন-
وقد عرف بالتجربة أن أول الصبح وآخر الشفق إنما يكون إذا كان انحطاط الشمس ثمانية عشر جزءا.
অর্থাৎ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা গেছে, ‘সুবহ’-এর শুরু এবং ‘শাফাক’-এর শেষ হয় সূর্য যখন দিগন্তের ১৮° নিচে থাকে।
এখন এটি যদি সুবহে কাযিবের সময়ের বিবরণ হয়ে থাকে, যেমন তার সামনের কথা থেকে মনে হয়, তাহলে প্রশ্ন হল, সুবহে সাদিকের সময় কোন্টি, যার উপর নামায-রোযার বিধান নির্ভরশীল?
মোটকথা, সুবহে সাদিকের সময় অজ্ঞাত রেখে শুধু সুবহে কাযিবের সময় লেখাটাই এর প্রমাণ বহন করে যে, এই কথায় বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে। কোনো বিভ্রান্তির ভিত্তিতেই এ কথা লিখে দেওয়া হয়েছে। আর কোথা থেকে এই বিভ্রান্তি হয়েছে, কী এর উৎস- আমরা আশা করি, তা বুঝতে আর কোনো অস্পষ্টতা বাকি থাকেনি। এ কথা যে পূর্ববতীর্ ফালাকীগণের বক্তব্য ভুল বোঝার ওপর নির্ভর, তা আমাদের পূর্বের আলোচনাগুলো থেকে একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেছে বিইযনিল্লাহি তাআলা।
আরো লক্ষণীয় যে, এখানে তিনি বলেছেন, قد عرف بالتجربة পর্যবেক্ষণ ও মুশাহাদার মাধ্যমে জানা গেছে যে, ...। অর্থাৎ ১৮°-এর সময় নিধার্রণ করা হয়েছে মুশাহাদার মাধ্যমে। যারা বলেছেন এটি সুবহে কাযিবের সময় তাদের কাছে এখন প্রশ্ন হল, এটি যদি সুবহে কাযিবের সময় হয় তাহলে যেই মুশাহাদায় এটি নির্ধারণ করা হয়েছে সেই মুশাহাদায় সুবহে সাদিক কত ডিগ্রিতে হয় তা জানা যায়নি কেন? এ কেমন অদ্ভুত বিষয়! প্রয়োজন সুবহে সাদিকের সময় জানার। কিন্তু এই মুশাহাদাকারীগণ কেমন মানুষ যে, তাঁরা মুশাহাদা করা সত্ত্বেও সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেননি; কেবল সুবহে কাযিব মুশাহাদা করেই শেষ করে দিয়েছেন! আরো ভেবে দেখার বিষয়, কাযীযাদাহ ... قد عرف بالتجربة অর্থাৎ পর্যবেক্ষণ ও মুশাহাদার মাধ্যমে জানা গেছে যে... বলে ‘সুবহ’-এর সাথে শাফাকের কথাও বলেছেন। আর কাযীযাদাহর এই সুবহ দ্বারা উদ্দেশ্য যদি সুবহে কাযিব ধরা হয় তাহলে এতে বিদ্যমান শাফাককেও শাফাকে কাযিব গণ্য করতে হবে। আর তখনো এক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন দাঁঁড়ায়- শাফাকে আবইয়ায মুশাহাদা না করে শাফাকে কাযিব মুশাহাদা করা কীভাবে সম্ভব? কে-ই বা এমন অহেতুক কাজ করতে পারেন?! ১৮°-এর সময়কে যারা সুবহে কাযিব বানিয়ে দিয়েছেন তাদের কারো কাছে এই প্রশ্নগুলোর কোনো যৌক্তিক জবাব পাওয়া সম্ভব নয়।
অতএব এটিও একটি প্রমাণ যে, ১৮°-কে সুবহে কাযিবের সময় দাবি করার মাঝে বড় ধরনের ত্রুটি বিদ্যমান। কোনো বিভ্রান্তির শিকার হয়েই এ কথা বলা হয়েছে। নতুবা কোনো মুসলিম ফালাকী থেকে এমনটি ঘটতে পারে না। আর সেই বিভ্রান্তিই হচ্ছে, সুবহে সাদিকের সময়কে সুবহে কাযিব বানিয়ে দেওয়া। ফালাকীগণ ১৮°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁদের কেউ কেউ সুস্পষ্ট ভাষায় সুবহে সাদিক শব্দ না বলে শুধু ‘সুবহ’ বা ‘ফজর’ শব্দ দ্বারা এটি উল্লেখ করেছেন। আর ফালাকিয়াতের উপর যাদের ব্যাপক পড়াশোনা নেই তাদের কেউ কেউ ফালাকীগণের উক্ত কথার সঠিক মর্ম বুঝতে ভুল করেছেন এবং একে সুবহে কাযিব মনে করেছেন।
অতএব এক্ষেত্রে বাস্তবতা হল, পূর্ববতীর্ ফালাকীগণের যারা قد عرف بالتجربة (অথার্ৎ পর্যবেক্ষণ ও মুশাহাদার মাধ্যমে জানা গেছে) বলে ১৮°-এর সময় উল্লেখ করেছেন, স্বাভাবিক হিসেবেই তাঁরা এই মুশাহাদার মাধ্যমে সুবহে সাদিকের সময়ই নির্ধারণ করে গেছেন; সুবহে কাযিবের নয়।
আর এসব কিছু দ্বারা বারবার এটিই প্রমাণিত হয় যে, কাযীযাদাহ-এর এ কথাটির বাস্তব মুশাহাদার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। পূর্ববতীর্ ফালাকীগণের বক্তব্য ভুল বোঝা ছাড়া এর কোনো উৎস নেই। সাথে সাথে এটিও প্রমাণ করে যে, ফালাকিয়াত বিষয়ে কাযীযাদাহ-এর বাস্তবভিত্তিক ইলম ছিল না।
সবোর্পরি কথা হল, আহসানুল ফাতাওয়ার দাবির মৌলিক অংশই এতে বিদ্যমান নেই। আলোচ্য প্রসঙ্গে মৌলিক বিষয়ই হল, সুবহে সাদিক শুরু হয় কখন। কিন্তু এ বিষয়ের কোনো কথাই নেই কাযীযাদাহ-এর বক্তব্যে। ১৫°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার ভুল কথাটিও নেই তার বক্তব্যে। আমাদের প্রশ্ন, তাহলে কাযিযাদাহ-এর বক্তব্য দ্বারা আহসানুল ফাতাওয়ার ১৫°-এর দাবি প্রমাণিত হওয়ার কী উপায়?!
বিরজান্দী রাহ.-এর উদ্ধৃতি
তিনি হলেন দশম শতাব্দীর আব্দুল আলী বিরজান্দী রাহ.। ৯৩০ হিজরীর পর তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে এতটুকু নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়। কিন্তু নির্ধারিত কোন্ সনে তার ইন্তেকাল হয়েছে তারাজিমের কিতাবে তা পাওয়া যায় না।
দ্বিতীয়ত আমরা আগেও বলে এসেছি, এই উদ্ধৃতিগুলোর লেখক কেউই বাস্তবিক অর্থের ফালাকী ছিলেন না। তাদের এ বিষয়ে কেবল কিছু কিতাব-নির্ভর ইলম ছিল। বিরজান্দী রাহ.-এর অবস্থাও এমনই। তার জীবনীতে তারাজিমের কিতাবে এ কথা আছে-
له يد طولى في العلوم الرياضية.
গণিত শাস্ত্রে তাঁর অনেক পারদর্শিতা ছিল। (আলফাওয়াইদুল বাহিয়্যাহ, পৃ. ১৫) কিন্তু মহাকাশ ও মহাজগতের বাস্তব পর্যবেক্ষণভিত্তিক গবেষণার সাথে তাঁর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় না।
কাযীযাদাহ-এর শরহুল মুলাখ্খাস ফিল হাইআহ (শরহে চিগমীনির)-এর উদ্ধৃতি মাত্রই উল্লেখ করা হল। কাযীযাদাহ-এর এই কিতাবের উপর বিরজান্দী টীকা লিখেছেন। আলোচ্য বিষয়ে আহসানুল ফাতাওয়ার মৌলিক উদ্ধৃতিই হল বিরজান্দী রাহ.-এর এই টীকার বক্তব্য। তা হল-
قوله (إذا كان انحطاط الشمس ثمانية عشر جزءا) هذا هو المشهور، ووقع في بعض كتب أبي ريحان أنه سبعة عشر جزءا وقيل أنه تسعة عشر جزءا، وهذا في ابتداء الصبح الكاذب، وأما في ابتداء الصبح الصادق فقد قيل أن انحطاط الشمس حينئذ خمسة عشر جزءا.
অর্থাৎ কাযীযাদাহ তার কিতাবে বলেছেন, ‘সুবহ শুরু হয় ১৮°-এ।’
কাযীযাদাহ-এর এ কথার টীকায় বিরজান্দী লিখেছেন-
‘এটিই প্রসিদ্ধ। আর আলবেরুনীর কোনো কিতাবে এক্ষেত্রে ১৭°-এর কথা রয়েছে। আবার এক্ষেত্রে ১৯°-এর কথাও বলা হয়েছে। এগুলো সুবহে কাযিবের শুরু সময়ের হিসাব। আর সুবহে সাদিক কখন শুরু হয়, এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সূর্য তখন দিগন্তের ১৫° নিচে থাকে।’
লক্ষ্য করার বিষয়, বিরজান্দীর এ কথাটিই প্রমাণ করে যে, ফালাকিয়াত বিষয়ে তাঁর ও কাযীযাদাহ-এর কেবল কিছু কিতাবনির্ভর ইলমই ছিল। এ বিষয়ে উভয়ে আগের কিছু কিতাব পড়েই এর জ্ঞান অর্জন করেছেন। কিন্তু সেই কিতাবগুলোর ‘সুবহ’ ও ‘শাফাক’-এর বক্তব্য সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারেননি।
দেখুন, এখানে বিরজান্দী রাহ. বলেছেন, আলবেরুনী থেকে এক্ষেত্রে ১৭°-এর কথা পাওয়া যায়। অথচ আলবেরুনীর কিতাব থেকে তাঁর পূর্ণ বক্তব্য আমরা পেছনে তুলে ধরেছি। তাঁর বক্তব্যের পূর্বাপর থেকেই চূড়ান্ত, তিনি তাতে সুবহে সাদিকের সময় উল্লেখ করেছেন; সুবহে কাযিবের নয়। তাঁর পূর্ণ বক্তব্যটির সঠিক অর্থ বুঝে থাকলে একে সুবহে কাযিবের সময় আখ্যা দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। যার বিবরণ আমরা পেছনে উল্লেখ করেছি। কিন্তু বিরজান্দী রাহ. এখানে বলেছেন, আলবেরুনী সুবহে কাযিবের সময় লিখেছেন। তার মানে, তিনি আলবেরুনীর বক্তব্য সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম হননি; বরং কোনোভাবে বিভ্রান্তির শিকার হয়ে একে সুবহে কাযিব বুঝে নিয়েছেন। যা আলবেরুনীর বক্তব্যের পূর্বাপর থেকেই ভুল প্রমাণিত হয়।
বিরজান্দী রাহ. তারপর বলেছেন, ‘আবার এক্ষেত্রে ১৯°-এর কথাও বলা হয়েছে’। তাঁর এ কথাও এর আরেক প্রমাণ যে, তিনি তাঁর আগের কোনো কিতাব দেখে এ কথা লিখেছেন। আর সেখান থেকেই এই ভুল হয়েছে। কারণ, ১৯°-এর কথা যারা বলেছেন, স্পষ্ট ভাষায়ই তাঁরা একে সুবহে সাদিকের সময় বলেছেন। তাদের কেউ একে সুবহে কাযিবের সময় বলেননি। অসংখ্য মাহের ও বিশেষজ্ঞ ফালাকী, এমনকি এই শাস্ত্রের ইমাম পর্যায়ের ব্যক্তিত্বগণ থেকে প্রমাণিত যে, তাঁরা ১৯°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলেছেন। ১৯°-এ সুবহে কাযিব হওয়ার কথা তো না-ই; তাদের কেউ সুবহে কাযিবের কোনো সময় বলেছেন- এমন কোনো প্রমাণই নেই।
তাই এতে কোনো সন্দেহ বাকি থাকে না যে, সুবহে সাদিকের বক্তব্যগুলোকেই তিনি এখানে সুবহে কাযিবের উপর লাগিয়ে দিয়েছেন। কারো এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে আমরা তার কাছে ফালাকীগণের শুধু একটি বক্তব্য কামনা করি, যাতে ১৯°-এ সুবহে কাযিবের কথা আছে।
১৫°-এ সুবহে সাদিকের দাবির কোনো প্রমাণ নেই; এর উৎস অজ্ঞাত
এ তো গেল ১৮°-এর সময়টি সম্পর্কে কাযীযাদাহ ও বিরজান্দী কী বলেছেন এর আলোচনা। এখন দেখার বিষয়, সুবহে সাদিক সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য কী? কাযীযাদাহ-এর বিষয় তো স্পষ্ট। ১৮°-এর সময়কে সুবহে কাযিব বানিয়ে সুবহে সাদিকের সময় আর তিনি খুঁজে পাননি। তাই তিনি তাঁর কিতাবে সুবহে সাদিকের কোনো সময় লিখে যেতে পারেননি। কিন্তু তাঁর কিতাবের টীকায় বিরজান্দী ১৫°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথা লিখেছেন। এখন দেখার বিষয়, তিনি যে ১৫°-এর কথা বলেছেন এর কী ভিত্তি?
এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, ১৫°-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার কথাটি কেবল ইজমা পরিপন্থী বিচ্ছিন্ন কথাই নয়; বরং কথাটি এতই অমূলক ও ভিত্তিহীন যে, এর প্রবক্তাই অজ্ঞাত। যারা এই বক্তব্যটি উদ্ধৃত করছেন তারাই জানেন না- এ কথাটি কে বলেছেন? কী এর সূত্র?
আমাদের জানামতে বিরজান্দীই প্রথম, যিনি এই কথা বলেছেন। ১৮°-এর সময়কে সুবহে কাযিব আখ্যা দেওয়ার মানুষ তার আগে থাকলেও তাদের কেউ দ্বিতীয় কোনো সময় উল্লেখ করেননি সুবহে সাদিকের জন্য। ১৫°-এর কথা বিরজান্দীর আগের কারো কিতাবে পাওয়া যায় না। আর ১৫°-এর সময়টি বিরজান্দী রাহ. নিজেই এ ভাষায় উপস্থাপন করেছেন যে-
وأما في ابتداء الصبح الصادق فقد قيل أن انحطاط الشمس حينئذ خمسة عشر جزءا.
অর্থাৎ ‘বলা হয়েছে’, সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার সময় সূর্য দিগন্তের ১৫° নিচে থাকে।
ভালোভাবে লক্ষ্য করার বিষয়, এখানে তিনি নিজেই قيل অর্থাৎ বলা হয়েছে বলে ১৫°-এর সময় উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ কে এই কথা বলেছেন তা জানা নেই। এর প্রবক্তা অজ্ঞাত। বিরজান্দী রাহ. নিজেও জানেন না- এর প্রবক্তা কে। বর্তমানে যারা ১৫°-এর দাবি করছেন তাদের আলোচনাতেও এর প্রবক্তার সন্ধান পাওয়া যায় না।
নাসীরুদ্দীন তূসির ‘বিস্ত বাব’ কিতাবের ব্যাখ্যাগ্রন্থে বিরজান্দী রাহ. তো আরো স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন-
واما درجات انحطاط در ابتداء طلوع صبح صادق بتحقيق معلوم نشود، در بعضے از مصنفات قديمہ واقع است كہ پانزده درجہ است۔
অর্থাৎ সুবহে সাদিক কত ডিগ্রিতে উদিত হয়, তাহকীকের সাথে তা জানা যায়নি। তবে পুরাতন কোনো রচনায় ১৫°-এর কথা পাওয়া যায়।
দেখুন-
শরহে বিস্ত বাব, বিরজান্দী, (মাখতূতাহ, আয়াসুফিয়া, ইস্তাম্বুল, নম্বর ২৬৪৮, ওয়ারাক ৫৬)
১৫°-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার কথাটির সূত্র যে অজ্ঞাত ও নিতান্তই ভিত্তিহীন, বিরজান্দী রাহ.-এর এই বক্তব্যটি থেকে তা আরো পরিষ্কার। বিরজান্দী রাহ.-এর এই বক্তব্য অনুযায়ী সুবহে সাদিক কখন শুরু হয়- এ বিষয়ে সুনিশ্চিত ও প্রামাণিক কোনো তথ্যই নেই তাঁর নিজের কাছে। অথচ এই আলোচনায় মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ই হচ্ছে, সুবহে সাদিক কত ডিগ্রিতে শুরু হয় সেটি। সুবহে কাযিব কত ডিগ্রিতে শুরু হয় তা জানার কোনো দরকার নেই। যার কারণে এ নিয়ে বাস্তবে কোনো ফালাকী আলোচনাও করেননি।
এখন মূল বিষয়টি লক্ষ্য করুন, সুবহে সাদিক, যার সাথেই কেবল শরীয়তের যাবতীয় বিধানের সম্পর্ক, তা কখন শুরু হয় এর কোনো তাহকীকই নেই বিরজান্দী রাহ.-এর কাছে। তিনি তাহকীকের সাথে বিষয়টি জানেনই না। ফলে তিনি বলেছেন, বলা হয়েছে, সুবহে সাদিক শুরু হয় ১৫°-এ। সুবহে সাদিকের মতো মূল বিষয়টিতে এই ‘বলা হয়েছে’-ই আহসানুল ফাতাওয়ার মৌলিক দলীল!
আহসানুল ফাতাওয়ার মূল দাবিই হল, সুবহে সাদিক হয় ১৫°-এ। কিন্তু তাতে এদিক-সেদিক যত কথাই বলা হোক না কেন, ১৫°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ এই অজ্ঞাত ও ভিত্তিহীন কথাটি ছাড়া আর কোনো উদ্ধৃতি নেই। এখন কথা হল, নামায-রোযার মত ফরয বিধানের সাথে সম্পৃক্ত মাসআলায় এমন অজ্ঞাত ও ভিত্তিহীন কথার অনুসরণ জায়েয হয় কীভাবে?!
আচ্ছা, বিরজান্দী রাহ.-এর কথা অনুযায়ী আমরা যদি ধরেও নিই যে, সুবহে সাদিক কত ডিগ্রিতে উদিত হয়, তাহকীকের সাথে তা আগের কোনো ফালাকী থেকে জানা যায় না। (যদিও বিষয়টি কখনো এমন নয়)। আমাদের প্রশ্ন হল, তিনি নিজেই কেন তাহলে মুশাহাদা করে বিষয়টির তাহকীক করলেন না যে, সুবহে সাদিক কত ডিগ্রিতে শুরু হয়? সুবহে সাদিক তো প্রকাশ্য আলামত। এর মুশাহাদার জন্য ফালাকী হওয়াও আবশ্যক নয়। উপরন্তু ফালাকী হলে তো এর তাহকীক আরো সহজ। এতএব নিজে মুশাহাদা করলেই তো বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যেত। ‘তাহকীকের সাথে তা জানা যায় না’- এ কথা বলে বসে থাকার তো প্রয়োজন নেই। মূলত আমরা যে পূর্বে বলে এসেছি, বিরজান্দী রাহ.-সহ পরবতীর্ আরো যারা ১৫°-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার কথা বলেছেন তাদের কেউ বাস্তবিক অর্থে (মহাকাশ, মহাজগৎ ইত্যাদির বাস্তব পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাভিত্তিক) ফালাকী ছিলেন না; এ বিষয়ে তারা যা কিছু বলেছেন তা শুধুই কিছু কিতাব নির্ভর- এটিও এর প্রমাণ। বরং তাদের এরকম বক্তব্য দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, ফালাকিয়াতের কিতাবভিত্তিক ইলমেও তাদের প্রচণ্ড রকমের ঘাটতি ছিল। কেননা সুবহে সাদিকের সময়ের ব্যাপারে ফালাকিয়াতের কিতাবে অসংখ্য সুস্পষ্ট উদ্ধৃতি থাকার পরও তারা এ সম্পর্কে অবগতই নন।
আরো লক্ষ্য করার বিষয়, সুবহে সাদিক এমন বিষয়, যার সাথে অনেক ফরয বিধানের সম্পর্ক। এশার ওয়াক্ত কখন শেষ হয় এর জন্য সুবহে সাদিকের সময় জানা প্রয়োজন। কেউ যদি কোনো কারণে এশার নামায শেষ রাতে পড়তে চান তবে কোন্ সময়ের ভেতর পড়লে তার এশার নামায কাযা হবে না আর কোন্ সময়ের পর পড়লে কাযা হয়ে যাবে- তা বোঝার জন্য সুবহে সাদিকের সময় জানা থাকা জরুরি। বিতিরের নামায তো সম্ভব হলে শেষ রাতে পড়াই উত্তম। অতএব কোন্ সময়ের আগে বিতির নামায সম্পন্ন করবে, এর জন্যও সুবহে সাদিকের সময় জানা দরকার। যারা তাহাজ্জুদের নামায পড়েন তাদেরও সুবহে সাদিকের সময় জানার প্রয়োজন পড়ে। কোন্ দিন কতক্ষণ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামায পড়া যাবে, এজন্য তাদের সুবহে সাদিকের সময় জানা থাকা জরুরি। রমযানে কতক্ষণ পর্যন্ত তারাবীর নামায পড়া যায়, এর জন্য সুবহে সাদিকের সময় জানার দরকার পড়ে। রমযানে কতক্ষণ পর্যন্ত সেহরি খাওয়া জায়েয, এর জন্যও সুবহে সাদিকের সময় জানা থাকা জরুরি। ফজরের নামাযের ওয়াক্ত কখন শুরু হয়, তা বোঝাও সুবহে সাদিকের সময় জানার উপর নির্ভরশীল। মুআযযিন কখন ফজরের আযান দেবে এবং কখন থেকে ফজরের নামায পড়া যায় আর কোন্ সময়ের আগে ফজর পড়া যায় না, তা জানতে হলেও সুবহে সাদিকের সময় জানতে হবে।
সুবহে সাদিকের সময় জানার উপর একজন মুসলমানের প্রতিদিন এতগুলো ফরয বিধানের সময় নির্ভরশীল; কিন্তু বিরজান্দী বলছেন, তা কখন শুরু এটি তাহকীকের সাথে জানা যায় না! কিন্তু সুবহে কাযিবের সময় তাদের নিকট মুশাহাদার মাধ্যমে নির্ধারিত!! যার সাথে শরীয়তের মাসআলা-মাসায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই তা মুশাহাদার মাধ্যমে নির্ধারিত আর যেটির সাথে শরীয়তের অনেক বিধি-বিধান জড়িত সেটি নাকি তাহকীকের সাথে জানা যায় না! এ কী পরিমাণ অদ্ভুত কথা ভাবা যায়! প্রশ্ন হল, তাহলে নামায-রোযার এই বিধানগুলোর ক্ষেত্রে তিনি নিজেই কীভাবে আমল করতেন? এবং তার এলাকার মুসলমানগণও আমল করতেন কীসের ভিত্তিতে? সুবহে সাদিকের সময় তাদের তাহকীকের সাথে জানা না থাকলে আমল করতেন কীভাবে?!
ফালাকিয়াতের প্রচীন কিতাবে কী আছে?
বিরজান্দী রাহ. বলেছেন, পুরাতন কোনো রচনায় পাওয়া যায় যে, সুবহে সাদিকের উদয় হয় ১৫°-এ। এই পুরাতন রচনা বলতে কী উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। ফালাকিয়াতের প্রাচীন কোনো কিতাবে তো নয়ই; বিরজান্দীর আগের কোনো কিতাবেও ১৫°-এর কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না; বরং ফালাকিয়াতের প্রাচীন কিতাবসমূহে আমরা ১৮°-এর ভেতর সুবহে সাদিক হওয়ার কথাই পেয়ে থাকি।
তার এ কথার বিপরীতে সামনে আমরা মুসলিম ফালাকীগণের কয়েকটি বক্তব্য তুলে ধরছি। এ পর্যায়ে জগদ্বিখ্যাত ইমাম ইবনে শাতির রাহ.-এর বক্তব্যটি আবার পড়ুন-
الباب السابع والسبعون من المائة الثانية في معرفة وقت الصبح: ويدخل وقتها بطلوع الفجر الصادق المعترض ضوؤه دون الفجر الكاذب الذي ضوؤه مستطيلًا ثم ينمحي أثره، وقد رصدت ارتفاع النظير وانحطاط الشمس تحت الأفق في سنين متوالية فوجدته لا يزيد أبدًا عن 20 درجة ولا ينقص عن 18 درجة، وأعتمد على 19 درجة، وذكروا في الرسائل القديمة على أنه 18 درجة.
এখানে তিনি বলেছেন, الرسائل القديمة বা ফালাকিয়াতের পুরাতন গ্রন্থগুলোতে আছে, সুবহে সাদিক হয় ১৮°-এ।
দেখুন-
النفع العام في العمل بالربع التام ص 247، مطبعة دار الكتب والوثائق القومية، تحقيق ودراسة: أسامة فتحي إمام.
ইবনে শাতির রাহ.-এর আরেক কিতাব الزيج الكبير। এতে তিনি বলেছেন-
وعند غالب الأقدمين 18 درجة.
অথার্ৎ অধিকাংশ প্রাচীন বিজ্ঞানীর নিকট সুবহে সাদিক হয় ১৮°-এ।
দেখুন-
الزيج الكبير، مخطوط مكتبة الأبحاث الاقتصادية للشرق الأقصى بشركة سكك الحديد منشوريا الجنوبية، الورق 115.
উল্লেখ্য, এখানে তিনি সকল বিজ্ঞানীর কথা না বলে অধিকাংশের কথা এজন্য বলেছেন যে, অন্যান্যদের মতে সুবহে সাদিক হয় ১৮°-এরও আগে ১৯°-এ।
আরেক মুসলিম বিজ্ঞানী জামালুদ্দীন মারদানী রাহ. বলেন-
والفجر هو البياض المعترض في أفق المشرق آخر الليل... وقد اختلف فيهما كلام الرصاد، فطائفة من المتقدمين على أنهما متساويان يؤخذان من انحطاط ثمانية عشر.
এখানে তিনিও বলেছেন, পূর্ব যুগের এক জামাত বিজ্ঞানীর নিকট সুবহে সাদিক হয় ১৮°-এ।
দেখুন-
الدر المنثور في العمل بربع الدستور، مخطوط المكتبة الأزهرية، الرقم : 7660، ق51.
সিবত আলমারিদীনী রাহ. বিভিন্ন ফালাকীগণের উদ্ধৃতিতে ১৮°-এর ভেতর সুবহে সাদিক হওয়ার বক্তব্য উল্লেখ করার পর বলেছেন-
قلت : وهذا عليه عامة فضلاء المؤقتين وعامة مشايخنا وغيرهم من الطبقة التي أدركناها، والطبقة التي قبلها من مشايخ أشياخنا وغيرهم، ولا عبرة بما يفعله بعض من لا دراية له بالصناعة، ولا إلمام له بالعلم وأهله.
দেখুন-
حاوي المختصرات في العمل بربع المقنطرات، مخطوط المكتبة البريطانية، الورق21 نسخة أخرى: الورق 29.
উমর আততাওযারী রাহ. বলেছেন-
وعمل المتقدمين من أهل هذه الصناعة على تباين بلادهم في المشرق والمغرب على أن ارتفاع النظير مشرقا عند مغيب الشفق ثمانية عشر درجة، ومثل ذلك ارتفاعه مغربا عند طلوع الفجر عملا منهم أن الشفق هو البياض.
অর্থাৎ বিশে^র সকল অঞ্চলের প্রাচীন শাস্ত্রজ্ঞ ফালাফীগণের নিকট সুবহে সাদিকের সময় হয় ১৮°-এ।
দেখুন-
محصلة المطلوب في العمل بربع الجيوب، الباب الثامن عشر، مخطوط جامعة مشيغان، ق 111ـ112.
মোটকথা, এই শাস্ত্রের ইমাম পর্যায়ের ব্যক্তিত্বগণ বলেছেন, ফালাকিয়াতের পুরাতন কিতাবে বা প্রাচীন বিজ্ঞানীগণের মতে সুবহে সাদিক হয় ১৮°-এ। কিন্তু বিরজান্দী রাহ. এ সম্পর্কে অবগত নন। ফালাকিয়াতের এসব পুরাতন কিতাব বা প্রাচীন বিজ্ঞানীগণের এই বক্তব্যগুলো তিনি খুঁজে পাননি। এমনকি পরবতীর্ যেসব বিজ্ঞানী উক্ত পুরাতন কিতাব বা প্রাচীন বিজ্ঞানীগণের এই বক্তব্যগুলো তুলে ধরেছেন এ পর্যন্তও তিনি পৌঁছতে পারেননি।
অনেক ফালাকীর বক্তব্যেই সুস্পষ্ট ভাষায় ১৮°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথা রয়েছে। আবার কোনো কোনো ফালাকীর বক্তব্যে এক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে সুবহে সাদিক শব্দ উল্লেখ নেই; শুধু সুবহ (الصبح) বা ফাজর (الفجر) শব্দ দ্বারা বিষয়টি ব্যক্ত করা হয়েছে। এই ‘সুবহ’ ও ‘ফজর’ দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক ও ফজরের নামাযের ওয়াক্ত ছাড়া অন্য কিছু নয়। এটিকে সুবহে কাযিব মনে করা সম্পূর্ণ ভুল। যার অনেক দলীল-প্রমাণ আমরা পূর্বে পেশ করেছি।
কিন্তু বিরজান্দী রাহ. একদিকে যেমন ফালাকীগণের ১৮°-এ সুবহে সাদিক সংক্রান্ত স্পষ্ট বক্তব্যগুলোর সন্ধান পাননি। অপরদিকে ‘সুবহ’ ও ‘ফজর’ দ্বারা উপস্থাপিত দু-একজন ফালাকীর বক্তব্য পেলেও কোনো কারণে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে তাদের এ বক্তব্যকে সুবহে কাযিব বানিয়ে দিয়েছেন। ফালাকীগণের এই ‘সুবহ’ ও ‘ফজর’ শব্দকে সুবহে সাদিক না বুঝে সুবহে কাযিব কেন বুঝলেন- এর কারণ আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। উক্ত ফালাকীগণের ইবারতে একে সুবহে কাযিব বোঝার মত কোনো কিছু তো নেই-ই; বরং তাদের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে সুবহে সাদিক শব্দ না থাকলেও এর উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক ছাড়া অন্য কিছু যে হতে পারে না- এটি তাদের বক্তব্য থেকেই সুস্পষ্ট। যার অনেক দলীল-প্রমাণ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু বিরজান্দী রাহ.-সহ ফালাকিয়াতের পরবর্তী এসকল মুসান্নিফ পূর্ববর্তী ফালাকীগণের উক্ত বক্তব্যের ফিতরী ও স্বাভাবিক অর্থটুকু যেমন বুঝতে পারেননি, তেমনিভাবে পরবতীর্ ফালাকীগণের এসব সুস্পষ্ট বক্তব্য পর্যন্ত পৌঁছাও তাদের সম্ভব হয়নি। উল্টো বিভ্রান্তির শিকার হয়ে কোনো যুক্তি ছাড়াই এ বক্তব্যগুলোকে সুবহে কাযিব বানিয়ে দিয়েছেন। আর ফালাকীগণের সুবহে সাদিকের বক্তব্যকে যখন তিনি সুবহে কাযিব বানিয়ে দিয়েছেন, এরপর এই ফালাকীগণের বক্তব্যে সুবহে সাদিকের কথা পাবেন কোত্থেকে?! অতএব এ কথা বলা ছাড়া তাদের আর উপায় থাকেনি যে, ‘সুবহে সাদিক কত ডিগ্রিতে শুরু হয় তাহকীকের সাথে তা জানা যায় না’! ‘সুবহে সাদিক সম্পর্কে বলা হয়েছে, সূর্য তখন দিগন্তের ১৫° নিচে থাকে।’!!
এই হল ১৫°-এ সুবহে সাদিকের উদ্ধৃতির হালত। অজ্ঞাত, অজানা ও قيل ওয়ালা বক্তব্য ছাড়া যার কোনো ভিত্তি নেই। সুনির্ধারিতভাবে কোনো ফালাকী বা ফালাকিয়াতের কোনো আলেম সুবহে সাদিক ও সুবহে কাযিব মুশাহাদা করে এ মত ব্যক্ত করেছেন- এর কোনো প্রমাণ নেই। পক্ষান্তরে যেসব মুসান্নিফ এই অজ্ঞাত বক্তব্যটি উল্লেখ করেছেন তারা নিজেও সুবহে সাদিক ও সুবহে কাযিব মুশাহাদা করে এর তাহকীক করেননি। পূর্ববর্তী ফালাকীগণের সুবহে সাদিক সংক্রান্ত বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতেই কেবল তারা এমনটি বলে দিয়েছেন। বাস্তব মুশাহাদার সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং তাদের এ কথা ফালাকীগণের সুস্পষ্ট বক্তব্য ও অসংখ্য চাক্ষুষ মুশাহাদার সম্পূর্ণ খেলাফ।
***
এ পর্যন্ত কাযীযাদাহ ও বিরজান্দীর বক্তব্য সম্পর্কে আলোচনা-পর্যালোচনা তুলে ধরা হল। এখন থাকল আহসানুল ফাতাওয়ার বাকি উদ্ধৃতিগুলোর প্রসঙ্গ। এই উদ্ধৃতিগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক কথা হল, এসব উদ্ধৃতির মূলই হচ্ছে কাযীযাদাহ ও বিরজান্দীর বক্তব্য। এ দুটির মাঝেও মূল হল বিরজান্দীর বক্তব্য। কেননা ১৫°-এর কথা কাযীযাদাহ-এর বক্তব্যে নেই। তাই এক্ষেত্রে বিরজান্দীর বক্তব্যই পরবতীর্ সবার মূল সূত্র। কোনোটিতে বিরজান্দির নাম নিয়েই এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কোনোটিতে বিরজান্দীর কথাকেই নাম নেওয়া ছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব এই উদ্ধৃতিগুলো সংখ্যায় একাধিক হলেও মূল ও সূত্রের দিক থেকে বলা যায় একই। অর্থাৎ কথাটির প্রবক্তা মূলত একজনই। একজনের কথাকেই পরবতীর্ কয়েকজন বর্ণনা করছেন। আর জানা কথা যে, শুধু বর্ণনাকারী একাধিক হওয়ায় বক্তব্যটির প্রবক্তাও একাধিক হয়ে যায় না।
আর পরবতীর্ উদ্ধৃতিগুলোর ভিত্তি যেহেতু বিরজান্দীই তাই সহজেই অনুমেয় যে, ১৫°-এর ক্ষেত্রে বিরজান্দীর সেই অজ্ঞাত কথাটিই তাদের ভিত্তি। এ ছাড়া এর আর কোনো উৎস নেই তাদের কাছে। সুতরাং এই উদ্ধৃতিগুলো অগ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য ভিন্ন প্রমাণ পেশ করার প্রয়োজন থাকে না।
তাছাড়া এই উদ্ধৃতিগুলো যেসব কিতাবের, এর লেখকগণ কেউই বাস্তবিক অর্থের ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) তো ছিলেনই না, এমনকি ফালাকিয়াত বিষয়ে তাদের কিতাব নির্ভর ইলমও ছিল অনেক কম। যার প্রমাণ তাদের বক্তব্যেই বিদ্যমান। তাদের বক্তব্য এমন অনেক ত্রুটি ও অসঙ্গতিপূর্ণ, যা শাস্ত্রীয় দিক থেকে বড় ধরনের স্থূল ভুল। সামনে সেগুলো তুলে ধরে বিস্তারিত পর্যালোচনা পেশ করা হল।
‘আত্তাসরীহ’ কিতাবের উদ্ধৃতি
تحقیقات قدیمہ শিরোনামের অধীনে আহসানুল ফাতাওয়াতে প্রথমেই এই কিতাবের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। এটি ইমামুদ্দীন ইবনে লুতফুল্লাহ লাহোরী রাহ. (মৃত্যু ১১৪৫ হি.)-এর কিতাব। বক্তব্যটি হল-
إذ قد علم بالتجربة أن انحطاط الشمس أول الصبح الكاذب وآخر الشفق ثمانية عشر درجة.
অর্থাৎ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা গেছে, সুবহে কাযিবের শুরু এবং শাফাকের শেষ হয় সূর্য যখন দিগন্তের ১৮° নিচে থাকে।
আমাদের এ পর্যন্ত আলোচনা বুঝে থাকলে তা অস্পষ্ট থাকার কথা নয় যে, এই কথাটির সঠিক কোনো ভিত্তি নেই। বিরজান্দীসহ কেউ কেউ পূর্ববর্তী কোনো ফালাকীর ‘সুবহ’ শব্দকে সুবহে কাযিব বানিয়ে দিয়েছেন। এটিকেই এখানে সরাসরি সুবহে কাযিব দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে। আর সুবহে সাদিক কখন হয় এ কথাও নেই তাতে।
এখন সামনে আমরা একটি কিতাবের বক্তব্য তুলে ধরছি। যাতে সরাসরি উপরোক্ত বক্তব্যটিকেই খণ্ডন করা হয়েছে।
আততাসরীহ কিতাবটি মূলত তাশরীহুল আফলাক কিতাবের শরাহ। তাশরীহুল আফলাক বাহাউদ্দীন আমেলী (১০৩০ হি.) নামে এক প্রসিদ্ধ শিয়া আলেমের রচিত। এই কিতাবের একটি টীকার নাম ‘তাফরীহুল ইদরাক’ (تفريح الإدراك)। এই কিতাবে আরেক প্রসিদ্ধ শিয়া আলেম রাযিউদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে হুসাইন কাজভিনী (১০৯৬ হি.)-এর উদ্ধৃতিতে জায়গায় জায়গায় বাহাউদ্দীন আমেলী ও বিরজান্দীর বক্তব্যের উপর প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে এবং তাদের উভয়ের বিভিন্ন বক্তব্য খণ্ডন করা হয়েছে। এর মধ্যে উপরোক্ত বক্তব্যটিও তাতে খণ্ডন করা হয়েছে এবং বাহাউদ্দীন আমেলী ও বিরজান্দীকে ভুল আখ্যায়িত করা হয়েছে।
১৮°-এ সুবহে কাযিবের কথাটির খণ্ডনে তাতে বলা হয়েছে-
قوله (وقد علم بالتجربة ... ثمانية عشر درجة). قال قدس سره في الحاشية: وأما عند أول الصبح الصادق فانحطاطها خمسة عشر درجة كما ذكره بعض المحققين. انتهى. وللأستاذ دام ظله في كلا القولين نظر، قال في رسالته الموسومة بالتهجدية : در وقت رکعتین نافلہ فجر سید مرتضیٰ وشیخ طوسی در مبسوط متفقند کہ بعد از طلوع فجر اولست وابن جنید رحمہ اللہ بر آنست کہ وقت آں بعد از نصف شب وفراغ از یازدہ رکعت نماز شب است ہر چند کہ فجر اول طالع نشدہ باشد، لیکن مکروہ دانستہ کہ قبل ازسدس آخر شب گزاردہ شود ... خصوصا کہ ابن جنید قایل بجواز تقدیم آں بر طلوع فجر اول نیز بکراہت تقدیم آں بر سدس آخر شب تصریح نمودہ، ومبدأ سدس آخر وظہور فجر اول نزدیک بہم است، بلکہ در اکثر اوقات بقدر معتد بہ ظہور فجر اول بر آن مقدمست۔ چہ مکرربتتبع وعیاں وآلات صحیحہ مجربہ بثبوت پیوستہ وبتصدیق ارباب تامل وتدقیق رسیدہ کہ در افق محروسہ قزوین دراوقات اعتدال حسی لیل ونھار کہ ساعات مستویہ ومعوجہ ہر ایک را باہم تفاوتی چنداں نمی باشد ومقدار سدس ہر ایک قریب بدوساعت مستویہ است تقدم ظہورفجر اول بر فجر ثانی زیادہ بر ایک ساعت وتقدم فجر ثانی بر طلوع شمس قریب بر ایک ساعت ونیم می شود۔ ومجموع کہ ما بین ظہور فجر اول وطلوع شمس باشد بی شبہہ زیادہ از دو ساعت ونیم است،پس فجر اول در اوقات مذکورہ اقلا بہ نیم ساعت بر مبدأ سدس آخر شب مقدم ست، ومبدأ سدس آخر بہ نیم ساعت تخمینا بر فجر ثانی مقدم۔
وازیں تقدیرات بر ہوشمندانی کہ از اہل خبرت باشند ظاہرگردد کہ تقدیری کہ در کتب ہیئہ مذکور ودرمیان اہل آں فن مشہور است کہ انحطاط شمس در اول طلوع فجر کاذب بہ ھیجدہ درجہ است وہر آینہ مستلزم اینست کہ در اوقات مذکورہ از صبح کاذب تا طلوع آفتاب بقدری معتد بہ زیادہ بر یکساعت ونیم نباشد مقام حیرتست، ونیز آنچہ ملا عبد العلی برجندی کہ از جملہ اذکیا ومشاہیر فن مذکورست در شرح رسالۃ بیست باب اسطرلاب از بعض مصنفات قدیمہ نقل کردہ کہ قدر انحطاط شمس در طلوع فجر صادق پانزدہ درجہ است وہر آینہ مستلزم اینست کہ قدر ما بین الفجرین البتہ بہ ثلث ساعت نرسد محل تعجبست۔
... وعلى هذا يكون انحطاط الشمس في أول الصبح الكاذب وآخر الشفق تسعا وعشرين درجة تقريبا، كما يظهر من الأسطرلاب، ولكنه يرد على هذا أنه يلزم أن يتصل الشفق بالصبح في عرض لو، بيانه : أنه إذا كان انحطاط الشمس في أول الصبح الكاذب وآخر الشفق ثلاثين درجة يلزم ظهور الصبح كلما كان الانحطاط بهذا المقدار، وفي أول السرطان لا يصير انحطاطها أكثر من ثلاثين درجة في ذلك العرض، كما لا يخفى على المتأمل، فيلزم اتصالهما كما ادعينا، فتأمل.
এখানে ১৮°-এ সুবহে কাযিব ও ১৫°-এ সুবহে সাদিকের কথাটি উল্লেখ করার পর বলা হয়েছে, এই উভয় কথাতেই রাযিউদ্দীন কাজভিনীর আপত্তি রয়েছে। তারপর রাযিউদ্দীন কাজভিনীর ‘আত তাহাজ্জুদিয়া’ নামক পুস্তিকা থেকে দীর্ঘ একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
এতে প্রথমে এই হিসাব দেওয়া হয়েছে যে, সুবহে কাযিব হয় রাতের শেষ ষষ্ঠমাংশের শুরুর দিকে। আর এই সময় সুবহে সাদিকের প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে হয়ে থাকে। আর সুবহে সাদিক সূর্যোদয়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে হয়ে থাকে।
তাতে এই হিসাব উল্লেখ করার পর তিনি বলেছেন-
‘এই হিসাব থেকে অভিজ্ঞ সচেতন ব্যক্তিবর্গের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ইলমুল হাইআর কোনো কোনো কিতাবে এবং এই শাস্ত্রের কারো কারো কাছে যে প্রসিদ্ধ আছে, সুবহে কাযিব হয় ১৮°-এ, যার অনুযায়ী সুবহে কাযিব থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মোট সময় দেড় ঘণ্টার বেশি হয় না- তা খুবই বিস্ময়কর কথা। পক্ষান্তরে আবদুল আলী বিরজান্দী রাহ.-ও যে বলেছেন, পুরাতন কোনো রচনায় সুবহে সাদিক ১৫°-এ হওয়ার কথা আছে, যার দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, সুবহে কাযিব ও সুবহে সাদিকের মাঝের ব্যবধান ২০ মিনিটও হয় না- তাও বড় অবাক হওয়ার মত কথা।’
তাফরীহুল ইদরাকে উক্ত ওয়াযাহাতের পর বলা হয়েছে-
‘সুতরাং সুবহে কাযিব শুরু হয় এবং শাফাকে কাযিব শেষ হয় প্রায় ২৯°-এ। এস্ট্রোল্যাবের মাধ্যমে যেমনটি বোঝা যায়।’
দেখুন-
তাফরীহুল ইদরাক, মাখতূত (১) : মাজলিসে শূরা মিল্লী ইরান, মাখতূত নং ২৭৯৮৮, পাতা ২৮০-২৮২; মাখতূত (২) : মাজলিসে শূরা ইসলামী ইরান, মাখতূত নং ২০৭৩৩, পাতা ৯৩-৯৪
আরো দেখুন-
আত তাহাজ্জুদিয়া, মাখতূত : মাজলিসে শূরা মিল্লী ইরান, মাখতূত নং ১২৬৬৯, পৃ. ৪৩-৪৪
এই বক্তব্যটি যথার্থ। তিনি শুধু কিতাবের ইবারতের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকেননি। নিজেদের বাস্তব আমলের সাথে কিতাবে বর্ণিত সময়কে মিলিয়ে দেখেছেন। নিজেরা যে সময় অনুসারে রাতে নামায আদায় করে থাকেন, যে সময়কে তারা সুবহে কাযিবের সময় এবং যেটিকে সুবহে সাদিকের সময় গণ্য করে নামায-রোযা আদায় করেন, ১৮° ও ১৫°-এর সময়কে এর সাথে মিলিয়ে দেখেছেন। তাই তিনি ধরতে পেরেছেন, বিরজান্দীসহ যারা ১৮°-এ সুবহে কাযিব ও ১৫°-এ সুবহে সাদিকের কথা বলেছেন তা সঠিক নয়; তাদের কথা মুসলিম উম্মাহর তাআমুলের খেলাফ। মূলত তাদের কথা যেহেতু বাস্তবতা পরিপন্থী; ফালাকীগণের কথা ভুল বোঝা থেকেই এর উৎপত্তি; তাই যে কেউ একে বাস্তবতার সাথে মেলাবে, তার কাছেই এটি ভুল ও বাস্তবতা বিরোধী প্রমাণিত হওয়াটা স্বাভাবিক।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয়, এতে যেমনটি বলা হয়েছে, সুবহে কাযিব প্রায় ২৯°-এ হয়ে থাকে, সমকালীন বাস্তব মুশাহাদা দ্বারাও বিষয়টি এমনই প্রমাণিত। পূর্বে আমরা এর কয়েকটি প্রমাণ উল্লেখ করে এসেছি। মোটকথা, সুবহে কাযিব ১৮°-এর প্রায় ১০° (ঘড়ির সময় হিসেব ৪০ মিনিট থেকে ঘণ্টা খানেক) আগেও দেখা যাওয়ার সপক্ষে কিতাবের বক্তব্য ও সমকালীন মুশাহাদা উভয়টির প্রমাণ রয়েছে। ফুকাহায়ে উম্মত ও মুসলিম উম্মাহর তাআমুল দ্বারাও এটিই প্রমাণিত হয়। যার আরো কিছু প্রমাণ সামনে আমরা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)