মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক ওবায়দী রাহ.
কিছু স্মৃতি কিছু কথা
বিগত কয়েক বছরে আরব-আজমের অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বকে আমরা হারিয়েছি। কাছাকাছি সময়ে এদেশের অনেক বুযুর্গ আখেরাতের মুসাফির হয়ে গেছেন। গত ২২ সফর ১৪৪৩ হিজরী, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ রোজ বৃহস্পতিবার আসরের নামায পড়ে কামরায় এসে টেলিগ্রামের قناة أخبار الوفيات (ইন্তেকালের সংবাদ বিষয়ক একটি গ্রুপ)-এ সংবাদ পেলাম-
توفي قبل قليل العالم الرباني الشيخ إسحاق العبيدي رحمه الله تعالى. إنا لله وإنا إليه راجعون. اللهم أكرم نزله وأدخله الفردوس. وألهم من بعده الصبر الجميل.
কিছুক্ষণ আগে ইন্তেকাল করেছেন আলেমে রব্বানী হযরত মাওলানা ইসহাক ওবায়দী রাহ.। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। হে আল্লাহ তাকে সম্মানজনক আতিথ্য দান করুন। হে আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। তাঁর রেখে যাওয়া সবাইকে সবরে জামীলের তাওফীক দান করুন।
ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
হায়! চলে গেলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় মুরব্বী মাওলানা ওবায়দী রাহ.। তার স্মৃতিগুলো জীবন্ত হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠল।
হে আল্লাহ আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন। তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। আমাদেরকেও পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন।
মরহুমের জানাযার সময় নির্ধারণ করা হয় জুমাবার সকাল নয়টায়। জানাযায় অংশগ্রহণের জন্য আমীনুত তালীম ছাহেব হুযুর (মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব) হযরতপুর থেকে জুমাবার ভোর পাঁচটার কিছু আগে রওয়ানা হন। সাথে আমরা আরো কয়েকজন। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই। সকাল সোয়া নয়টার দিকে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। হযরত ওবায়দী মরহুমের পরিবারের আবদারে মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম নামাযে জানাযার ইমামতি করেন। জানাযা শেষে হুযুর মাদরাসার দফতরে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। মরহুমের আত্নীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের তাযিয়ত করেন। কবর যিয়ারত করেন।
যাওয়ার পথে গাড়িতে হুযুর ওবায়দী রাহ.-এর কিছু স্মৃতিচারণা করেন। হুযুর বলেন,
‘৮১ -এর নির্বাচনের কিছু আগে তিনি হাফেজ্জী হুযুরের সান্নিধ্যে আসেন। তখন মাওলানা মুফতী দিলাওয়ার হুসাইন ছাহেব ও মুদীর ছাহেব (মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ দা. বা.) লালবাগের ছাত্র। তখন থেকে তিনি তাঁদেরকে চিনতেন। সে সময় থেকেই তাঁদের পরিচয়।
মারকাযুদ দাওয়াহতে তাঁর আসা-যাওয়া শুরু হয় মারকাযের ২য় ঠিকানা থেকে। মারকায তখন মুহাম্মাদপুর মুহাম্মাদী হাউজিং-এ। ১৯৯৬ ঈ.-এর শেয়ারবাজার হাঙ্গামা চলছিল তখন। শেয়ারবাজার বিষয়ে মাসআলা আলোচনার জন্য তখন তিনি দুইবার এসেছিলেন। তখন থেকে তার সাথে আমার (মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব) পরিচয়।’
তিনি মারকাযুদ দাওয়াহকে অনেক মহব্বত করতেন। ঢাকা এলে মারকাযেও তাশরীফ আনতেন। কয়েকদিন অবস্থান করতেন। আমীনুত তালীম ছাহেবও তার সাথে বে-তাকাল্লুফ মহব্বতের সম্পর্ক রাখতেন।
হযরত রাহ. তালেবে ইলমদের অনেক মহব্বত করতেন। ফোন করে তাদের খেঁাজ-খবর নিতেন। তালেবে ইলমদের মহব্বতকে তিনি খুব মূল্যায়ন করতেন। কোনো তালেবে ইলম হযরতের কাছে ফোন করলে তিনি খুব খুশি হতেন। মারকাযে একবার হযরতকে তার পরিচিত কয়েকজন তালেবে ইলমের উদ্দেশে বলতে শুনেছি, আমার মনে চায় আমার মাদরাসার জন্য তোমরা দশ টাকা করে দাও। তোমরা তালেবে ইলম, তোমাদের এই দশ দশ টাকার ওসিলায় আল্লাহ তাআলা মাদরাসাখানা কবুল করে নেবেন।
তার সন্তানের বয়সী এক বুযুর্গ আলেমের ব্যাপারে একবার বলেন, মন চায় তাঁর কাছে গিয়ে কিছুদিন পড়ে থাকি। কিন্তু এখন তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি। এখন তাঁর কাছে থাকলে তাঁর কষ্ট হবে।
হযরত তার ব্যক্তিগত মামুলাত-এর খুব পাবন্দী করতেন। মারকাযে যখন বেড়াতে আসতেন, দেখতাম, বাদ ফজর খুব গুরুত্বের সাথে মামুলাত আদায় করছেন। মুনাজাতে মকবুলের অযিফা নিয়মিত আদায় করতেন। শেষরাতে লম্বা সময় তাহাজ্জুদ দুআ যিকির আযকারে থাকতেন। রোনাযারী করতেন। তিনি বলতেন, আমরা কাঁদতে ভুলে গেছি।
গত ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ঈ. অনলাইন পোর্টাল ইসলাম টাইমস-এ হযরত ওবায়দী রাহ.-এর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ ছাহেব। সেই সাক্ষাৎকারে হযরতের জীবনের বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় এসেছে। আলোচনার কিছু অংশ পাঠকের খেদমতে পেশ করছি-
হযরত রাহ.-এর পড়াশোনা শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের মাযাহেরুল উলুম মাদরাসায়, তারপর পটিয়া মাদরাসায়। তাঁর আব্বাজানের শায়েখ ছিলেন পটিয়ার মুফতী আযীযুল হক রাহ.। তাঁর আব্বাজান তাকে মুফতী ছাহেব রাহ.-এর হাতে তুলে দেন। পরবতীর্ সময়ে হযরতের লেখাপড়ার সিংহভাগ সময় কেটেছে ফেনীর ওলামাবাজার মাদরাসায়। ১৯৭০ সনে তিনি ফেনী ওলামাবাজার মাদরাসায় দাওরায়ে হাদীস পড়েন।
তিনি অনেক বড় বড় আলেম, বুযুর্গ মনীষীর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জীবনের শুরুতেই পটিয়ার মুফতী আযীযুল হক রাহ.-এর সান্নিধ্যের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে, ওই বয়সে তাঁর বয়ান শুনলে কাঁদতাম। জিরি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আহমদ হাসান রাহ., জিরি মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুল ওয়াদুদ রাহ. ও মেখলের মুফতী ফয়জুল্লাহ রাহ.-এর কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।...
ওলামাবাজারের মাওলানা আবদুল হালীম রাহ. ছিলেন আমার প্রথম শায়েখ। এছাড়া মাওলানা সায়্যেদ আহমদ রাহ. ও শায়খুল হাদীস মাওলানা আহমদ করীম রাহ.-এর সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ হয়েছে।...
হযরত হাফেজ্জী হুযুরের সান্নিধ্যে যখন ছিলাম তখন হুযুরের সান্নিধ্য তো লাভ করেছিই, সাথে সাথে আরও অনেক উলামায়ে কেরামের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে। বিশেষভাবে মাওলানা হাবীবুল্লাহ মেসবাহ রাহ.-এর সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। আমরা খুব কাছাকাছি ছিলাম।’
ইহসান ও তাযকিয়ার বিষয়ে তিনি খুব মনোযোগী ছিলেন। ইলমী ও দ্বীনী মুরব্বীগণের সাথে নিজেকে জুড়ে রাখেন। সাক্ষাৎকারে ওবায়দী রাহ. বলেন, ‘আমার প্রথম শায়েখ ও মুরব্বী ছিলেন ওলামাবাজারের হযরত মাওলানা আবদুল হালীম রাহ.। পরে আমি হযরত মাওলানা ইহসানুল হক সন্দীপী রাহ.-এর কাছে বাইআত হই। প্রায় বিশ বছর যাবৎ সন্দ্বীপী রাহ.-এর কাছে আসা-যাওয়া করি। হযরতের ইন্তেকালের পর ফেনী লালপোলের মুফতী সাঈদ আহমদ রাহ.-এর কাছে বাইআত হই। মুফতী ছাহেবের ইন্তেকালের পর আমি সম্পর্ক রেখে চলেছি হযরত হাফেজ্জী হুযুরের বিশিষ্ট খলীফা মাওলানা মুমিনুল্লাহ ছাহেবের সাথে।’
কোনো শায়েখ খেলাফত দিয়েছেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘জি। হযরত মাওলানা ইহসানুল হক সন্দ্বীপী রাহ. এবং ফেনীর লালপোলের মুফতী সাঈদ আহমদ রাহ. আমাকে এজাযত দিয়েছেন।’
-ইসলাম টাইমস (শিরোনাম : আমরা কাঁদতে ভুলে গেছি)
হযরত মাওলানা ওবায়দী রাহ.-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল, আসাতেযায়ে কেরাম ও নিজের আকাবিরের প্রতি মহব্বতপূর্ণ গভীর শ্রদ্ধা। তার কথা-বার্তা, আচার-আচরণ ও লিখনী সবকিছুতেই এর যথার্থ প্রকাশ লক্ষ্য করা যেত। তিনি তার বিদ্যাপীঠ ওলামাবাজার মাদরাসার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ‘(মাদরাসা থেকে বাড়িতে যাওয়ার সময়) দাগনভুঁইয়া থেকে পায়ে হেঁটে নদী পার হলেই আমার অঝোর ধারায় কান্না এসে যেত। আমি ভাবতাম, আমি এখন কোথায় যাচ্ছি? এখানে সব আল্লাহর ওলিরা থাকেন; ছাত্ররাও আল্লাহর ওলি। আমাকেও ঠিক হয়ে যেতে হবে, আমাকেও আল্লাহর ওলি হতে হবে ইত্যাদি। আমার বিশ্বাস, আমার অবস্থার পরিবর্তনের পেছনে আমার আসাতেযায়ে কেরামের প্রভাবই বেশি কাজ করেছিল। আমার সবক’জন উস্তাযই আল্লাহওয়ালা মহান আখলাকের অধিকারী ছিলেন। সকল উসতাযের প্রতিই আমার যথাযথ শ্রদ্ধা-ভক্তি ছিল।’ (ওলিদের আলোচনায় দিল তাজা হয়, মাসিক আলকাউসার, রবিউস সানী ১৪৩৮ হি., জানুয়ারি ২০১৭ ঈ.)
আসলে আসাতেযা ও আকাবিরে দ্বীনের সাথে মহব্বতপূর্ণ সশ্রদ্ধ সম্পর্ক সকল যুগের আলেমদেরই মুতাওয়ারাস ও মুশতারাক বৈশিষ্ট্য। ইলমের সিলসিলায় এর ব্যতিক্রম পাওয়া যাবে না।
ওবায়দী রাহ.-এর জানাযা শেষে আমীনুত তালীম হুযুর মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক দামাত বারাকাতুহুম নোয়াখালীর নাযিরপুর মাদরাসায় যান। সেখানে দাওরায়ে হাদীসের তালেবে ইলমদের মজলিসে তিনি আসাতেযায়ে কেরাম ও আকাবীরে দ্বীনের প্রতি আদব ও তাওয়াযুপূর্ণ আযমতের সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, “এখন বড় মুসীবতের মধ্যে আমরা আছি। একে তো আমাদের কওমী মাদরাসার যে ইযযত ও ওয়াকার ছিল, আমাদের গুনাহের কারণে আস্তে আস্তে তা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করা দরকার, হে আল্লাহ! আমরা খালেস দিলে তাওবা করি। আপনি মেহেরবানী করে আমাদেরকে কবুল করে নিন। আমাদের গুনাহের কারণে আমাদের এবং আমাদের কওমী মাদরাসার সিলসিলার বদনাম করবেন না। হে আল্লাহ! কওমী মাদরাসার ইযযত-আব্রু-ওয়াকার আপনি আবার বহাল করে দেন।
দ্বিতীয় কথা হল, কিতাবী ইসতেদাদ ও ফন্নী ইস্তিদাদ আগে কওমী মাদরাসায় যে পরিমাণ ছিল, এখন তার অনেক অভাব। এর জন্য অনেক চেষ্টা দরকার। এজন্য দরকার একাগ্রতা। দরকার আদব ও তাওয়াযু। এখন কওমী মাদরাসায় নতুন ফেতনা শুরু হয়েছে; ছাত্ররা তাদের উসতাযদের চেয়ে বেশি বোঝে। তারা হেদায়েতের উপর আছে, উসতাযরা গোমরাহ। তাদের ইলম বেশি, উসতাযদের ইলম কম। তাদের ফাহম বেশি, উসতাযদের ফাহম কম বা উসতাযরা বে-ফাহম। তারা বা-খবর আর উসতাযরা গাফেল। তারা গায়রতমান্দ আর উসতাযরা বে-গায়রত। এজন্য এখন কওমী মাদরাসার ছাত্ররা উসতাযদের উপর আস্থা রাখে না। ইলমের ইতিহাসে এ জিনিস ছিল না। আপনি আল্লামাতুদ দাহর হোন বা ফাহহামাতুল আসর হোন, যা-ই হোন না কেন, জেনে রাখবেন, ইলমের সিলসিলায়, ইলমের তাওয়ারুসে এটা নেই যে উযব নিয়ে, গুরুর নিয়ে, উসতাযদের থেকে নিজেদেরকে আল্লামা ভেবে কেউ ইলম হাসিল করেছে, হেদায়েতের মুফীদ ও মকবুল কাজ করেছে, দাওয়াতের মুফীদ ও মকবুল কাজ করেছে, তাবলীগের মুফীদ ও মকবুল কাজ করেছে বা তার দ্বারা বাস্তবেই কোনো তাজদীদী কাজ হয়েছে- এটার কোনো ইতিহাস নেই। বাস্তবেই যদি আপনার তাজদীদ করার মত কিছু থাকে, আপনি দেখছেন যে অনেক গোমরাহী দেখা যাচ্ছে, এগুলোর ইসলাহ করা দরকার, তাহলে তাওয়াযু ও আদব ইখতিয়ার করে আগে নিজেকে গড়েন এরপর করতে পারবেন ইসলাহ। আর যদি সহীহটাকেই গলদ মনে করে আপনি ইসলাহ করতে যান তাহলে নিজেই গোমরাহ; ইসলাহ আর করবেন কী!
বাস্তবেই যদি ইসলাহযোগ্য কিছু থাকে আর আপনি তার ইসলাহ করতে চান তো এটার তরীকা তাকাব্বুর নয়, উজব নয়; এটার তরীকা নিজেদেরকে উস্তাযদের থেকে আল্লামা মনে করা, ফাহহামাহ মনে করা নয়। ইতিহাসে এর কোনো নযীর নেই। উজবের কারণে ভালো দাওয়াত নিয়ে উঠেও কিচ্ছু করতে পারেনি। এটাই ইতিহাস। আর যেখানে দাওয়াতই গলদ সেখানের অবস্থা কী হবে!?
এজন্য কমপক্ষে আদব আর তাওয়াযু তো শিখুন। এটা ছাড়া কিছু হবে না। বাস্তবেই যদি আপনাদের কাছে ভালো চিন্তা থাকে, যেটার বিষয়ে আপনার মনে হয় যে, সে সম্পর্কে উসতাযরা গাফেল। সে ভালো চিন্তা বাস্তবায়নের জন্যও আপনাকে আদব ও তাওয়াযু শিখতে হবে।
من تواضع لله رفعه الله.
তাওয়াযুর মাধ্যমে যে রাফআত হাসিল হয়, তার মাধ্যমে মানুষ কাজ করতে পারে। নিজে নিজে যে রাফআত তা দিয়ে মানুষ কাজ করতে পারে না। এটাই ইতিহাস।’
গত ৯ রবিউল আখির ১৪৪২ হিজরী বাদ মাগরিব ওবায়দী রাহ. মারকাযুদ দাওয়াহ্য় তালেবে ইলমদের উদ্দেশে নসীহত পেশ করেন। সেখানে তিনি ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় বয়ান করেন। পুরো বয়ানে তিনি তার আসাতেযায়ে কেরাম ও আকাবীরের বিভিন্ন হেকায়েত ও নসীহত উল্লেখ করে বর্তমানের তালেবে ইলমদেরকে বড়দের পথে গড়ে ওঠার দরদভরা নসীহত করেন।
তার আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল, ফিকরে আখেরাত ও মৃত্যুর প্রস্তুতি। হযরতের কাছে যখনই কাউকে দুআ চাইতে দেখেছি সাথে সাথে দেখেছি তিনিও তার কাছে দুআ চেয়েছেন- আল্লাহ তাআলা যেন ঈমানের সাথে নিয়ে যান। আমীনুত তালীম ছাহেব হুযুর বলেন, ‘তিনি খাতেমা নিয়ে খুব পেরেশান ছিলেন। ঈমানের সাথে যেন যেতে পারেন সেজন্য খুব দুআ করতেন। সুন্দর খাতেমার জন্য অন্যান্য দুআ ও আমলের সাথে সাথে নিয়মিত মুনাজাতে মাকবুলের ওযিফা আদায় করতেন।’
হযরতের পরিবারের সূত্রে জেনেছি, ইন্তেকালের মাসখানেক আগ থেকেই তিনি তার ঘনিষ্ঠজনদের ফোন করে করে দুআ চেয়েছেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি অসিয়তনামা লিখেছেন, যেখানে তিনি তার পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বিষয়াদি স্পষ্ট করেছেন। মাদরাসার যে কামরায় তিনি থাকতেন সেখানের যাবতীয় সামানার স্পষ্ট বিবরণ দিয়েছেন- কোন্টা মাদরাসার আর কোন্টা তার নিজের। তার মৃত্যুর পর তার কামরার টিস্যুর মধ্যেও লেখা পাওয়া গেছে- এটা মাদরাসার, এটা ব্যক্তিগত।
ইন্তেকালের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে অযু করে কামরায় এসেছেন। শরীর বেশ খারাপ থাকায় হাসপাতালে নেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এরই মাঝে কালেমা পড়তে পড়তে তিনি আখেরাতের সফরে রওয়ানা হয়ে যান।
اللهم اغفر له وارحمه، وعافه واعف عنه، وأكرم نزله ووسع مدخله، واغسله بالماء والثلج والبرد، ونقه من الخطايا كما نقيت الثوب الأبيض من الدنس، وأبدله دارا خيرا من داره، وأهلا خيرا من أهله، وزوجا خيرا من زوجه، وأدخله الجنة، وأعذه من عذاب القبر ومن عذاب النار.
إنا إن شاء الله بكم لاحقون، أسأل الله لنا ولكم العافية.
ইন্তেকালের পর তার চেহারায় ছিল শান্ত সমাহিত ভাব। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে নূরানী চেহারাখানা এক নযর দেখার সুযোগ পেয়েছি। মনে হচ্ছিল, এই বুঝি কথা বলবেন বা হাত বাড়াবেন। জানাযার খাটিয়ায় শোয়া হযরতকে দেখে অনেককেই এ ধরনের অনুভূতি ব্যক্ত করতে দেখেছি। আমীনুত তালীম হুযুর বলেন, তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি বলছেন, আমি আমার মনযিলে পৌঁছে গেছি।
আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিন। জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। আমাদেরকেও সুন্দর মৃত্যু নসীব করুন। আমাদের সবাইকে জান্নাতে একত্রিত করুন।
আমীনুত তালীম ছাহেব হুযুর তাঁর ব্যাপারে বলেন, ‘ওবায়দী ছাহেব রাহ.-এর ফিতরতটা ভালো ছিল। আদীব হুযুর মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ ছাহেবের সাথে তার মহব্বতপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ওবায়দী রাহ. বলতেন, মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ সাহিত্যকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তিনি প্রতি বছর হজ্বের সময়ে আদীব হুযুরের হজ্ব সফরনামা পড়তেন। এবারও পড়েছেন। তিনি খাতেমা নিয়ে বেশ পেরেশান ছিলেন। এবং শেষ সময় পর্যন্ত যেন নিজের জরুরি কাজকর্ম নিজেই আঞ্জাম দিতে পারেন- তা নিয়েও খুব দুআ করতেন। মানুষ হিসেবে তার মাঝে একটা তবয়ী দুর্বলতা ছিল- মাঝেমধ্যে ‘হাল’ গালেব হয়ে পড়ত।’
বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা সত্ত্বেও বিগত চার-পাঁচ বছরে তিনি কয়েকবার মারকাযে তাশরীফ এনেছেন। প্রায় প্রত্যেকবারই কিছুদিন করে এখানে অবস্থান করেছেন। সর্বশেষ ১৪৪২ হিজরীর রবিউল আখিরে তাশরীফ আনেন। তখন সপ্তাহখানেক ছিলেন। তিনি এলে প্রতিদিন এক-দুবার আমীনুত তালীম ছাহেব হুযুরের সাথে তার মোযাকারা মজলিস হতো। দ্বীনী বা সমকালীন বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি আলোচনা তুলতেন। আমরা তালেবে ইলমরাও মাঝেমধ্যে সে মজলিসে শরীক হতাম। হযরত ওবায়দী রাহ. তার ইশকাল বা মতামত খুব বড় করে জোরালো ভাষায় সামনে রাখতেন। আমীনুত তালীম ছাহেব হুযুরের কাছ থেকে সে বিষয়ে শুনতে চাইতেন। হুযুর কখনো সংক্ষেপে কখনো বিস্তারিত, কখনো নরম আওয়াজে কখনো ইশকালের সম আওয়াজে উত্তর দিতেন।
সবশেষে আমার দেখা তার একটি ঘটনা উল্লেখ করছি, বিশিষ্ট গবেষক ও কবি অধ্যাপক আনিসুল হক চৌধুরী এম এ-এর সাথে ওবায়দী রাহ.-এর সুসম্পর্ক ছিল। কিছুদিন তারা উভয়ে প্রতিবেশীও ছিলেন। একবার এক সাক্ষাতে অধ্যাপক চৌধুরী ওবায়দী রাহ.-এর সাথে তার ‘বাংলার মূল আরবী’ বইটির কথা আলোচনা করেন। যে পরিবেশে বঙ্গ ও বাংলা শব্দের মূল যে আরবী হতে পারে তা ধারণা করা তো দূরের কথা, কেউ তা কল্পনাও করতে পারে না, সেখানে তিনি বিস্তারিত দলীল-দস্তাবেজ দিয়ে প্রমাণ করলেন, বাংলার মূল হল আরবী।
অধ্যাপক সাহেবের এ বইয়ের কথা শুনে ওবায়দী রাহ. বইটি পড়ার ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ছাপানোর জন্য একটি কপি চাইলেন। অধ্যাপক সাহেবের কাছে বইটির কোনো কপি ছিল না এবং তা সহজলভ্যও ছিল না। তিনি জানালেন যে, ঢাকা ইউনিভার্সিটির গ্রন্থাগারে বইটির দুটি কপি আছে। ওবায়দী রাহ. তার আগ্রহটি মনের কোণে পুষে রাখলেন। একবার কোনো এক অনুষ্ঠানে ঢাকা ভার্সিটির একজন গ্রন্থাগারিকের সাথে তার সাক্ষাৎ হলে তিনি তাকে বিষয়টি জানান। জনাব গ্রন্থাগারিক সাহেব তাকে একটি চিরকুট লিখে দেন,
‘বইয়ের নাম : বাংলার মূল আরবী, লেখক : অধ্যাপক আনিসুল হক চৌধুরী। পত্রবাহককে এই বইটি পড়ার অনুমতি দেয়া গেল। তিনি পাঠকক্ষে বসিয়া বইটি পড়িবেন। স্বাক্ষর--- ২০-০৯-১৯৮৭/৯’
শেষ অক্ষরটি ৭ নাকি ৯, তা স্পষ্টভাবে পড়া যাচ্ছে না।
ব্যস্ত জীবনে এই চিরকুট নিয়ে ঢাকা ভার্সিটির গ্রন্থাগারে যাওয়ার তার আর সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে তিনি আশায় আশায় সবসময় চিরকুটটি সাথে রাখতেন। মারকাযুদ দাওয়াহ্য় তার সর্বশেষ সফরে রবিউস সানী ১৪৪২ হিজরীতে তিনি একদিন আমীনুত তালীম হুযুরকে চিরকুটটি দেখালেন। খুব আফসোস করলেন, বইটি তার দেখা হল না। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে সৌভাগ্যক্রমে বইটি মারকাযুদ দাওয়াহর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ছিল। মজলিসে নাযেমে মাকতাবা মাওলানা জহীরুল ইসলাম সাহেবও ছিলেন। তিনি গিয়ে মাকতাবা থেকে বইটি নিয়ে এলেন। ওবায়দী রাহ. বইটি হাতে পেয়ে যারপরনাই খুশি হলেন। একনাগাড়ে বইটি পড়ে শেষ করলেন। ত্রিশ বছর পর্যন্ত তিনি চিরকুটটি সযত্নে হেফাযত করেছিলেন। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে অবশেষে তার আগ্রহটি পূরণ হল।
আনিসুল হক চৌধুরীর এ বই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ড. কাজী দীন মুহাম্মাদ রাহ. বলেন- ‘কবি ও গীতিকার অধ্যাপক আনিসুল হক চৌধুরী, এমএ সাহেব বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আজীবন চিন্তা-ভাবনা করেছেন। এ সম্বন্ধে তার মতামত ‘বাংলার মূল আরবী’ শীর্ষক পুস্তকে দৃঢ়তার সঙ্গে পেশ করেছেন। তা পণ্ডিত মহলে আলোড়নের ঢেউ তুলেছে।’ [বাংলার মূল, পৃষ্ঠা : ১৬ (ভূমিকা)]
এ বইয়ে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি তার মত দিয়েছেন যে, বঙ্গ ও বাংলা শব্দের মূল আরবী। প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবীদ মরহুম আবুল মনসুর আহমদ এ বইয়ের ২য় সংস্করণের শুরুতে একটি ভূমিকা লেখেন। তিনি বলেন, “অধ্যাপক আনিসুল হক সাহেবের ‘বাংলার মূল আরবী’ পুস্তকখানি পড়িয়া আমি অতিশয় আনন্দিত হইয়াছি। এ আনন্দ অনেকখানি প্রশংসাসূচক বিস্ময় মিশ্রিত। সে প্রশংসা অধ্যাপক সাহেবের প্রাপ্য। তিনি আমার কল্পনাতীত একটা নতুন কথা বলিয়াছেন। অধ্যাপক সাহেব ধ্বনি-বিজ্ঞানী ভাষাবিদ। ধ্বনিবিজ্ঞানের সাহায্যে তিনি এই বই-এ প্রমাণ করিয়াছেন, আমাদের দেশের নাম যে বাংলা, এই ‘বাংলা’ শব্দটাই আরবী মূল হইতে উদ্ভুত।”
প্রথম সংস্করণে বইটির নাম ছিল ‘বাংলার মূল আরবী’। ২য় সংস্করণে তার নাম রাখা হয় ‘বাংলার মূল’। ভূমিকায় লেখক বইয়ের নাম পরিবর্তনের কারণ উল্লেখ করেছেন।
বইটি রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে অধ্যাপক আনিসুল হক চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের বস্তুনিষ্ঠ একটি ইতিহাস সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করিয়া গবেষণা চালাইতে গিয়া বাংলাদেশের ভূ-তাত্ত্বিক অতীতের যোগসূত্রে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের বাস্তবভিত্তিক কোনো খাঁটি ইতিহাসের সন্ধান খুঁজিয়া পাই নাই। বরং বাংলাদেশের ইতিহাসের নামে যাহা খুঁজিয়া পাওয়া গিয়াছে তাহাতে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস অনুসন্ধানের পথে পদে পদেই বাধাপ্রাপ্ত হইয়া বিপথগামী হইয়া বিভ্রান্তিতেই পড়িতে হইয়াছে। ইহারও কারণ, বাঙালী আর্যজাতির পূর্ববতীর্ প্রাগার্য সভ্য জাতি সম্ভূত একটি জাতি হইয়া থাকিলেও বাঙালীকে প্রাগার্য বলিয়া বিবেচনা না করিয়া দুরভিসন্ধিমূলকভাবে আর্যদের অধীনস্থ আর্যেতর জাতিরূপে আখ্যা দিয়া আর্যজাতির সহিত বাঙালীর ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের যে চেষ্টা এ যাবৎ কাল করা হইয়াছে তাহাতেই উক্ত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হইয়াছে। বাঙালীর সহিত আর্যদের এইরূপ ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা অনেক করা হইয়া থাকিলেও বাঙালীর সহিত ‘অনার্য’ অর্থাৎ প্রাগার্য জাতির ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের চেষ্টা এ যাবৎ কাল মোটেই করা হয়নি। বাঙালীর সহিত অনার্য আখ্যায়িত প্রাগার্য জাতির ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের চেষ্টা করা হইলে বাঙালীর মুখোজ্জল ও গৌরব বৃদ্ধি হইত।” (বাংলার মূল, পৃষ্ঠা ১৯-২০)
বইটিতে আলোচিত কিছু শিরোনাম উল্লেখ করছি :
বাংলার মূল আরবী
বাংলাদেশ ও আরবের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক
বাংলাভাষা মুসলমানদেরই উজ্জীবিত ভাষা
বাংলাভাষার মূল আরবী
আর্য নামের ভাঁওতা : ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে আর্যদের কিছুই পাওয়া যায়নি।
লেখক এ বইয়ে যে গবেষণা পেশ করেছেন তার সাথে অন্যান্য পণ্ডিতদের দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু বাংলা অঞ্চল ও বাংলাভাষার প্রচলিত ইতিহাসে যে অনেক বিকৃতি আছে তাতে কারো সন্দেহ থাকার কথা না।
প্রসঙ্গের টানে এখানে জাতীয় অধ্যাপক জনাব আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করা মুনাসিব মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, “বাংলাভাষার মধ্যে যে পরিমাণ এলিট (elite =অভিজাত) মাস (mass =জনসাধারণ) গ্যাপ, এইরকম দুনিয়ার অন্য কোনো ভাষার মধ্যে খুঁইজা পাইবেন কি না সন্দেহ। আধুনিক বাংলা ভাষাটা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতেরা সংস্কৃত ভাষার অভিধান দেইখ্যা দেইখ্যা বানাইছে। আসল বাংলা ভাষা এই রকম আছিল না। আরবী ফারসী ভাষার শব্দ বাংলা ভাষার লগে মিশ্যা ভাষার একটা স্ট্রাকচার খাড়া অইছিল। পলাশির যুদ্ধের সময়ের কবি ভারতচন্দ্রের রচনায় তার অনেক নমুনা পাওয়া যাইব। ব্রিটিশ শাসন চালু অইবার পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতেরা আরবি ফারসি শব্দ ঝাঁটাইয়া বিদায় কইর্যা হেই জায়গায় সংস্কৃত শব্দ ভইরা থুইছে। বাংলা ভাষার চেহারা কেমন আছিল, পুরাণা দলিলপত্র খুঁইজ্যা দেখলে কিছু প্রমাণ পাইবেন।...
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতেরা ভাষার স্ট্রাকচারটা খাড়া করেছিলেন, তার লগে ভাগীরথী পাড়ের ভাষার মিশ্রণে আধুনিক বাংলা ভাষাটা জন্মাইছে। আধুনিক বাংলা বঙ্গসন্তানের ঠিক মুখের ভাষা না, লেখাপড়া শিইখ্যা লায়েক অইলে তখনই ওই ভাষাটা তার মুখে আসে।” (যদ্যপি আমার গুরু, পৃ. ৯৪, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক আহমদ ছফা রচিত একটি স্মৃতিচারণামূলক বই ‘যদ্যপি আমার গুরু’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবদন্তী জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তার বিভিন্ন বিষয়ের কথোপকথনসমূহের বিবরণ রয়েছে এই বইয়ে।)
প্রসঙ্গ ধরে অনেক দূরে চলে গেলাম।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আমাদের পূর্বসূরীদের পথে আমাদেরকে কবুল করুন। মরহুম ইসহাক ওবায়দী রাহ.-এর একটি বিখ্যাত গজলের কয়েকটি পংক্তি দিয়েই আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করছি-
এই অলি আল্লাহর বাংলাদেশ
এই শহীদ গাজীর বাংলাদেশ
রহম করুন আল্লাহ।
আল্লাহ আপনার প্রেমে শহীদ যারা
আমরা তাদের বংশধর
তাদের পথে তাদের পথে
কবুল করুন আল্লাহ। হ