বহুজাতিক সাংস্কৃতিক খাহেশ!
প্রথমে মনে হতে পারে চালু ‘বিনোদন’ ও অনৈতিক সম্পর্কের বাতাসে আরেকটু হাওয়া দিয়ে পণ্য বাজারজাত করার মোক্ষম একটি কৌশল; এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। কিন্তু কোম্পানিটির উৎস, গত দেড় যুগে তাদের বিনোদনধর্মী কিংবা সাংস্কৃতিক বিজ্ঞাপনী অভিযান এবং বিজ্ঞাপনের মোড়কে সমাজে ভিন্ন বাতাস জারি করার কসরত দেখলে ব্যাপারটাকে এতটা সরল রেখার মনে হয় না। এবারের ‘দ্বিধাহীন কাছে আসার গল্পে’র নমুনা দেখলে আরো চমক যেতে হয়।
প্রশ্ন শুধু জাগেই না; বরং বদ্ধমূল হয়ে ওঠে যে, পণ্যের প্রমো বা বিজ্ঞাপনী প্রোগ্রামের মোড়কে এরা কি এদেশের মুসলিম শালীন জীবনাচারটাই বদলে দিতে চায়? এরা কি এদেশের লালিত ধর্মীয় সৌন্দর্য্য, বিবাহ ও দাম্পত্যের বিধি ও রীতি দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে সব একাকার করে ফেলতে চায়?
দুই
লিভার ব্রাদার্স থেকে ইউনিলিভার; এদেশে একটি প্রভাবশালী বহুজাতিক কোম্পানি। যারা কনজুমার প্রোডাক্ট বা নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে। তেল, সাবান, টুথপেস্টসহ অনেক কিছুই তারা বিক্রি করে। ইউনিলিভার নামক প্রতিষ্ঠানটির উৎস-সম্পৃক্ততা, মালিকানা, পরিচালনা, মূলধন, প্রফিট ও প্রফিটের বণ্টন ইত্যাদির ক্ষতিকারকতা নিয়ে চর্চা-বিতর্কটা বেশ আগে থেকে হয়ে আসছে। এখনো সে বিতর্ক চলমান। অপরাপর মুসলিম দেশের মতো এদেশেও বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ ইউনিলিভারের পণ্য শুধু এজন্য কিনতে চান না যে, তাদের পকেটে মুনাফার টাকাটা তিনি জমা করতে চান না। ইউনিলিভার নিয়ে এর পরের তর্ক বা বিতর্কটা চলে হালাল-হারামের দৃষ্টিকোণ থেকে। ইউনিলিভারের পণ্যের কাঁচামালের সঠিকতা ও ত্রুটি নিয়ে। ক্যামিকেল, চর্বি, অ্যালকোহল কোন্ পণ্যে কতটুকু ব্যবহার করা হচ্ছে এ নিয়ে তথ্য-সংশয় ও তর্কের চক্রটা মোটামুটি সচলই থাকে। এর মধ্যেই যুক্ত হয়েছে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন কেন্দ্রিক নানামাত্রিক অপতৎপরতা ও পরিকল্পিত অবিমৃশ্যকারিতা নিয়ে চর্চা, ক্ষোভ-প্রতিবাদ ও মামলা। ইউনিলিভার নিয়ে বিতর্কের এটি মূলত তৃতীয় ও চলমান ধাপ। তবে অনেকেই মনে করেন, তৃতীয় এই বিতর্কটি অনেক বেশি ভয়ংকর হলেও ইউনিলিভারের জন্য ইস্যু হিসেবে নতুন নয়।
ইউনিলিভার তার একটি দাঁত মাজার পেস্ট (ক্লোজআপ)-এর বিজ্ঞাপনের নামে ২০০৪/৫-এর দিকে ‘ক্লোজআপ ওয়ান’ নাম দিয়ে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে গায়ক-গায়িকা খুঁজে বের করার দেশব্যাপী উন্মুক্ত গান-বাদ্যের প্রথম প্রতিযোগিতার ‘হাট’ বসিয়েছিল। বাহ্য চোখের ‘বিনোদনসন্ধানী’ ‘বোদ্ধাদের’ কাছে ক্লোজআপের সেই আয়োজন ছিল কণ্ঠশিল্পে মুক্ত প্রতিভা বিকাশের বড় সুযোগ। এতে কত অচেনা গায়কী কণ্ঠ সামনে আসতে পারছে! তারা এই ‘বিনোদনী’ মহড়ার মধ্যে সংস্কৃতির পতন এবং জীবনের ক্ষয় দেখতে পাননি। হৃদয়-জগৎ ও নৈতিকতার পরাজয় দেখতে পাননি। সেই ক্লোজআপই ‘কাছে আসার গল্প’ এবং সবশেষে ‘দ্বিধাহীন কাছে আসার গল্প’ নিয়ে এখন মুসলিম জীবনাচার ধ্বসিয়ে দেওয়ার আয়োজন পোক্ত করে বসেছে।
তিন
বহুজাতিক এই পেস্ট কোম্পানি গান-বাদ্যের আয়োজনে ভূমিকা রাখার পর ‘কাছে আসার গল্প’ নামের যেই চিন্তা ও শ্লোগান নিয়ে বিজ্ঞাপনী চ°র চালাচ্ছিল, অনেকেই মনে করেছিল- এটা নিছকই নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ের অনৈতিক সম্পর্ক ও বিনোদনের চলতি বাতাস কেন্দ্রিক একটি বিজ্ঞাপনী অভিযান; এর মধ্যে দুরভিসন্ধির কিছু নেই। কিন্তু এদের সর্বশেষ আয়োজনটির থিম হল, উপজাতীয় খ্রিস্টান তরুণ ও হিজাব পরা মুসলিম তরুণীর (প্রেম-পরবতীর্ সম্পর্ক) ‘কাছে’ আসার ক্ষেত্রে সবরকম ধমীর্য় বিধি এবং ধর্মোৎসারিত সামাজিক লাজ-লজ্জা ছুঁড়ে ফেলার প্রণোদনা ও উৎসাহদান।
প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে এখানেই। পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারী-পুরুষের অনৈতিক ও অসমর্থনযোগ্য উপস্থাপন দেশি-বিদেশী বহু কোম্পানি করে থাকলেও দেখা যায়, এসব বাঁধভাঙ্গা অনৈতিকতার সূচনাটা করে দেয় বিদেশী বা বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এবং তাদের বিভিন্ন প্রোডাক্টের স্টিল অথবা ভিডিও বিজ্ঞাপন। শুধু পেস্ট মাত্র নয়, স্নো-পাউডার, ক্রিম, পোশাক, জুতো, টাই, ব্লেড, রেজার ইত্যাদি যেকোনো বহুজাতিক পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারীর দেহ ও অবয়বের সবচেয়ে বিশ্রী ও বেহায়া ব্যবহার শুরু হয় তাদের হাতে। এরপর ওইটা দেখে দেখে অন্য দেশি কোম্পানিগুলো আধুনিক সাজা এবং বাজার ধরার যৌথ মানসিকতায় ওই পথে হাঁটতে শুরু করে। বিজ্ঞাপনের মোড়কে অশ্লীলতা ও অনৈতিকতা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে একটি মুসলিম সমাজের জীবনধারাকে ধাক্কা দেওয়ার ক্ষেত্রে এটিকে বলা যায় প্রথম মাত্রার সাংস্কৃতিক আক্রমণ।
চার
কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের প্রোডাক্ট, প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন, গণমাধ্যমে তাদের স্পন্সরশিপের মাধ্যমে সরলরৈখিক অশ্লীলতা বা অনৈতিকতার চেয়েও যে কাজটি ভয়ংকরভাবে করে, সেটি হল দ্বিতীয় মাত্রার সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। এটা অনেক বেশি ভয়ংকর। বিজ্ঞাপনে নারী দেহের বাজে ব্যবহার তো খারাপই, কিন্তু সেই বাজে ব্যবহারের সঙ্গে যদি ইসলাম ধমীর্য় কোনো অনুশাসন, সামাজিক-বৈবাহিক ও পারিবারিক নীতি-চিন্তাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মতো ধৃষ্টতার আলামত দেখা যায় তাহলে সেটি আরো অনেক ভয়ংকর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হতে বাধ্য।
আগে বলা হতো, ‘কাছে আসার গল্প’। সেখানে ধর্ম-সংশ্লিষ্ট কোনো মেসেজ থাকতো না। শুধু ছেলে-মেয়ের অবৈধ সম্পর্কটার ‘মাহাত্ম্য’ তুলে ধরা হতো। অনৈতিক প্রেম-সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে সাহিত্য-বিনোদন জগতের চর্চিত ভুল রীতির মতো এটিকেও ভুল একটি কাজ হিসেবেই অনেকেই দেখতো। কিন্তু ‘দ্বিধাহীন কাছে আসার গল্প’ ধর্ম-সংশ্লিষ্ট বিধি-নিষেধের সীমানা পেরিয়ে গিয়ে মুসলিম তরুণী (এবং হিজাব পরা) যেন উপজাতীয় খ্রিস্টান তরুণের সঙ্গে (এবং গলায় ক্রুশ ঝুলানো) ‘দৃঢ় সম্পর্কে’ জড়িয়ে যেতে উৎসাহিত হওয়ার দৃশ্য/ছবি ও বার্তা দেখে এই প্রশ্নটা পরিষ্কার হয়ে যায়- ঘটনা শুধু ‘তরুণ-তরুণীর প্রেম-বিনোদন’ নয়, বরং এর সঙ্গে ধর্ম বর্জন এবং বিয়ের ক্ষেত্রে ধমীর্য় বিধি ও রীতি লংঘনের শ্লোগান উঁচু করার একটা বিদ্রোহ-সুর সক্রিয়। এটা অত্যন্ত আপত্তিকর ও গভীর ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ। এই ভয়ংকর ঘটনাটিকে আমরা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের দ্বিতীয় মাত্রা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। সংস্কৃতির দ্বিতীয় মাত্রার এই ভয়ংকর বিপর্যয় ও বিনাশ সম্পর্কে প্রতিরোধ গড়ে তোলা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব। আর সচেতনতা লালন ও উপলব্ধি সৃষ্টি করার দায়িত্ব বর্তায় সচেতন সব শ্রেণির নাগরিকের ওপর। কারণ এটি ধমীর্য় বিষয়ে আগ্রাসনের শামিল একটি বিজ্ঞাপন-প্রয়াস।
পাঁচ
বিজ্ঞাপনে এবং গণমাধ্যমের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ধমীর্য় মূল্যবোধের অবমাননা এবং নারী-পুরুষ সম্পর্কের অনৈতিকতা সবসময়ই আলোচনার বিষয় হয়ে থাকে। বহুজাতিক প্রোডাক্ট ক্লোজআপ এই অপ্রীতিকর আলোচনাটি আবার সামনে নিয়ে এল। আমরা মনে করি, এই ভুল পথচলার প্রতিটি ধাপেই শুদ্ধি ও সতর্কতা দরকার। অনৈতিকতা ও অশ্লীলতা পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য কিছুতেই গ্রহণীয় বিষয় হতে পারে না। এবং এটা কোনো হালকা ব্যাপার নয়। অশ্লীলতা ও ‘লাহওয়াল হাদীস’ জাতীয় শিল্পকে পবিত্র কুরআনে ‘আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করার’ উপলক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর কঠোর সতর্কবাণী-
اِنَّ الَّذِیْنَ یُحِبُّوْنَ اَنْ تَشِیْعَ الْفَاحِشَةُ فِی الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌ، فِی الدُّنْیَا وَ الْاٰخِرَةِ، وَ اللهُ یَعْلَمُ وَ اَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ.
নিশ্চয়ই যারা চায় মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না। -সূরা নূর (২৪) : ১৯
এছাড়াও আল্লাহ তাআলা মুমিনদের প্রতি ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ وَ مَنْ یَّتَّبِعْ خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ فَاِنَّهٗ یَاْمُرُ بِالْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ وَ لَوْ لَا فَضْلُ اللهِ عَلَیْكُمْ وَ رَحْمَتُهٗ مَا زَكٰی مِنْكُمْ مِّنْ اَحَدٍ اَبَدًا وَّ لٰكِنَّ اللهَ یُزَكِّیْ مَنْ یَّشَآءُ ؕ وَ اللهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ.
হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের অনুগামী হয়ো না। কেউ শয়তানের অনুগামী হলে শয়তান তো সর্বদা অশ্লীল ও অন্যায় কাজেরই নির্দেশ দেবে। তোমাদের প্রতি আল্লাহর ফযল ও রহমত না হলে তোমাদের মধ্যে কেউ কখনও পাক-পবিত্র হতে পারত না। কিন্তু আল্লাহ যাকে চান পবিত্র করে দেন এবং আল্লাহ সকল কথা শোনেন ও সকল বিষয় জানেন। -সূরা নূর (২৪) : ২১
দ্বিতীয়ত সাংস্কৃতিক ফূর্তি বা বিনোদনের নামে যখন ধমীর্য় বন্ধন ও বিধি-নীতির বিরুদ্ধে উস্কানির দরজা খুলে দেওয়ার কসরত লক্ষ করা যায় তখন সেটিকে নিছক অশ্লীলতা ঘটিত ‘দুষ্টামি’ হিসেবে না দেখে অনেক গুরুতর আগ্রাসনের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। ক্লোজআপ আজ খ্রিস্টান ছেলের সাথে মুসলিম মেয়েকে ‘সম্পর্ক’ করে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য ‘দ্বিধাহীন’ হতে বলছে। কিছুদিন আগে এদেশের টেলিভিশনে সমকামিতার পক্ষে নাটক প্রচার করা হয়েছে। ওই নাটকেও স্পন্সর হয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি। এইসব মূলত মুসলিম সমাজের স্বাভাবিক শালীনতা, কোমলতা ও নৈতিক সম্পর্কের সৌন্দর্য উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সাংস্কৃতিক মহড়া। এসব কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন নয়। শুধু ব্যবসা, বিক্রি বাড়ানো, পণ্য চেনানোর জন্য ধর্ম ও ‘সম্পর্কের’ এত জটিল নকশায় ঢুকে পড়ার কথা ছিল না।
ছয়
ক্লোজআপের ‘দ্বীধাহীন কাছে আসা’র এই ইবলিশী আহ্বানের বিরুদ্ধে অনেকেই আওয়াজ তুলেছেন। কেউ কেউ আদালতেও গিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের কেউ এখনও কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানা যায়নি। সাধারণ পর্যায়ের নাগরিকদের দায়িত্ব হল, ব্যবসা ও প্রমোর নামে সাংস্কৃতিক এই বেয়াদবি ও ধমীর্য় বিধানের অবমাননার বিরুদ্ধে আওয়াজ এবং কাজের কার্যকর প্রতিবাদী প্রাচীর নির্মাণ করা।
ব্যবসা-বিজ্ঞাপন, স্পন্সর, প্রমো ইত্যাদিতে বহুজাতিক কোম্পানি কিংবা দেশীয় কেউ কোনোভাবে ধর্ম-সংশ্লিষ্ট ইসলামবিরোধী কোনো অন্ধকার মিশন নিয়ে নামতে চাইলে নাগরিকদেরই তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, ব্যবসায় এর খেসারত দিতে হবে। ব্যবসা করতে এসে এজাতীয় মিশনবাজি ক্লোজআপ-ইউনিলিভার কেন করছে এই প্রশ্নের মুখোমুখি তাদের করতে হবে। প্রশাসনিকভাবে না হলেও, অন্তত নাগরিক ও ভোক্তা-আচরণে বহুজাতিক কোম্পানিকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে; ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ‘দ্বিধাহীন কাছে আসা’র কথা বলে যারা সম্পর্ক ও দাম্পত্যের পবিত্র সৌধ গুড়িয়ে দিতে চায় তাদেরকেই ‘দ্বিধাহীন বর্জন’ করার কাজটি নাগরিকদের করতে হবে। মুসলিম দেশে বহুজাতিক সাংস্কৃতিক খাহেশ পূরণের জিহ্বাকে বিস্বাদ করে দিতে হবে।
বহুজাতিক কোম্পানির বিজ্ঞাপন, প্রমো, স্পন্সরশিপ ইত্যাদির মাধ্যমে যেসব সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানো হয় তা রুখে দেওয়ার বড় একটি দায়িত্ব বর্তায় দেশের প্রভাবশালী ও সচেতন মুসলিম ব্যবসায়ীদের ওপরও। তারা নিজেদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে ইতিবাচক গণমাধ্যমগুলোকে পথ চলতে কিছু সহযোগিতা করতে পারেন। এবং একইসঙ্গে অনৈতিকতা ও অশ্লীলতা মুক্ত রেখে বিজ্ঞাপনের একটি সুস্থ ধারা নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারেন। মুসলিম ব্যবসায়ীরা বিজ্ঞাপন-সংস্কৃতিকে সচেতনভাবে কাজে লাগালে বহুজাতিক কোম্পানির নানামাত্রিক সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পথ বন্ধ হতে পারে।
সাত
আরেকটি বিষয় অনেকে খেয়ালই করেন না। তা হচ্ছে, এই যে বিজ্ঞাপনবাজী, বেহায়াপনার প্রচার-প্রদর্শনী এ সবের খরচ আসে কোথা থেকে? মূলত এসব তো এদেশের জনগণেরই টাকা। প্রকারান্তরে ভোক্তা সাধারণের টাকা থেকেই তো তারা এসব তৈরি ও প্রদর্শনী করে যাচ্ছে। তাহলে টাকা নিচ্ছে আমাদের থেকে। আবার তা দিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি, লাজ-লজ্জা, ঈমান ও আমল!
কথায় বলে, কৈয়ের তেলে কৈ ভাজা! কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনী অশ্লীলতা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন দেখলে বুঝা যায় যে, তারা শুধু কৈয়ের তেল দিয়ে কৈ ভাজে না, বরং কৈ মাছ যারা খাবে তাদেরকেও ভেজে ফেলতে চেষ্টা করে। এত বড় সর্বগ্রাসী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যেসব বহুজাতিক কোম্পানি তাদের পণ্যের প্রচারের নামে চালানোর চেষ্টা করে, তাদের ব্যাপারে গ্রাহক-ভোক্তা, অপরাপর ব্যবসায়ী এবং দেশের সচেতন সব নাগরিকের সতর্ক হওয়া উচিত। এবং এ সতর্কতা দরকার ব্যবসায়িক, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক স্বাতন্ত্রে্যর প্রয়োজনেই। হ