আগুন নিয়ে খেলার এ নৈরাজ্য কি বন্ধ হবে না?
আতশবাজি ও ফানুসের ব্যবহার বহু পুরোনো হলেও সম্প্রতি অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এই বছরের শুরুতে গণমানুষের কাছে আতশবাজি ও ফানুস উড়ানোর বিষয়টি আলোচনা হয়েছে বেশি। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আতশবাজির আওয়াজে একটি নিষ্পাপ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু। অসুস্থ অবস্থায় আতশবাজির এই জঘন্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে যার মৃত্যু হয়েছে। সে তো চলে গেল, কিন্তু শোনা গেল, একটি প্রভাবশালী পদের কোনো ব্যক্তিত্ব বলেছেন, ‘শিশুটির কানে তুলো দিয়ে রাখলেই তো সে বেঁচে যেত।’
এই নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু দেখার বিষয় হল, কোথায় গিয়ে ঠেকেছে আমাদের মানবিকতা? দায়িত্বশীল মহলের বিবেক কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, সেটা ভাবনার সময় আরো আগেই হয়েছে। শুধু এইদিকে ইঙ্গিত করতে চাই। শুধু কি তাই? সাথে বেশ কিছু ঘর-বাড়ি পূর্ণ বা আংশিক পুড়ে গেছে। টাকা-পয়সা যাদের আছে, এসব যারা করে, তাদের জন্য এগুলো কোনো বিষয়ই নয়। তাদের বাড়ি-ঘর ইত্যাদি নষ্ট হয় খুবই কম। কারণ তাদের বিশাল বিশাল প্রাসাদগুলো বানানোই থাকে ওভাবে। তাদের কিছু যায় আসে না। তারা হয়তো মনে করে, এগুলো পড়লে সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়ি পুড়ে যাবে, ছাই হবে, কিছু মারা যাবে, এতে অসুবিধার কী আছে? বেশির চেয়ে বেশি এটা তাদের কাছে হয়তো ফূর্তি আর হাততালি দেয়ার বিষয়।
প্রিয় পাঠক মহলের হয়ত মনে আছে, আগেও আমরা (মাসিক আলকাউসারের ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সংখ্যায়) আতশবাজি-ফানুস নিয়ে কথা বলেছিলাম। সেখানে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।১ এই ধরনের উৎসবের কারণে বহু ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি হয়। গণমানুষের ক্ষতি হচ্ছে। শরীয়তের নিষেধাজ্ঞা আর আল্লাহর আযাব তো আছেই।
মানুষকে আল্লাহ বিবেক দিয়েছেন। এই বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করে সে কাজ করবে। উদ্দেশ্যহীনভাবে আল্লাহ মানুষকে দুনিয়াতে পাঠাননি। কাজ ও উদ্দেশ্য দিয়েই পাঠিয়েছেন। দায়িত্বশীল করেছেন। এজন্যই মানুষ সৃষ্টির সেরা।
মানুষের প্রথম চিন্তাই হবে, এমনভাবে সে জীবন-যাপন করবে, যাতে অন্যের ক্ষতি না হয়। আনন্দ-বিনোদন ইসলাম নিষেধ করেনি। কিন্তু সেটা তো শরীয়তের গণ্ডির ভেতরে থেকেই করতে হবে। দ্বিতীয়ত তার মাধ্যমে যেন অন্য কারো কোনো ক্ষতি না হয়। আমোদ-ফূর্তি কেন, কল্যাণমূলক কাজের ক্ষেত্রেও দায়িত্ব হল, কাজটা করতে গিয়ে যেন অন্যের ক্ষতি না হয়। আমাদের দেশীয় আইন-কানুনেও এমন অনেক কিছু আছে। যেমন শহরে বিল্ডিংকোড মেনে চলতে হয়। এমনভাবে বিল্ডিং বানাতে হবে, যাতে পাশের ভবনের বাসিন্দাদের কোনো অসুবিধা না হয়। পাশের বাড়িতে গিয়ে কোনো কিছু না পড়ে। রাস্তার মধ্যে কোনো কিছু রাখা নিষেধ কেন? যেখানে সেখানে পার্কিং নিষেধ কেন? ট্রাফিক আইন মেনে চলা জরুরি কেন? সবগুলো এজন্যই যে, আমার কাজ করতে গিয়ে বা আমার স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে যাতে অন্যের ক্ষতি না হয়।
এটা শুধু ইসলামের নির্দেশনা নয়; এটা বরং সাধারণ স্বীকৃত একটা বিষয়। কিন্তু উৎসবের বেলায় আমরা এই সাধারণ কথাগুলো বেমালুম ভুলে যাই। মনে হয় দায়িত্বশীল মহলও ভুলে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। তারা তখন বলে, এসব নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের সাধ্যের ভেতরে নেই। আমরা এটা পারি না। কেন পারেন না তারা?
আমরা এবার দেখতে পেলাম, ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা, যারা আগুন নেভানোর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে, সারা বছর তাদের কাজই হল, কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে আগুন নেভানো। এজন্যই তো পুরো ফায়ার সার্ভিস সিস্টেম এবং তাদের অসংখ্য ইউনিট। তারা অগ্রিম বলে দিয়েছে, ফানুস উড়ানো যেন নিষিদ্ধ করা হয়। কেন তাদের অগ্রিম বলতে হল? কারণ ফানুসের মাধ্যমে এত বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে, যা তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা আদৌ সম্ভব নয়। যেখানে ফায়ার সার্ভিস অগ্রিম নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে, সেখানে কেন আমরা বিরত থাকতে পারছি না এবং রাখতে পারছি না?
অন্যদিকে আমরা দেখছি, কোনো কোনো অনুষ্ঠান যেমন ইংরেজি নববর্ষ ও সাকরাইনের ক্ষেত্রেও পুলিশ পক্ষ থেকে আগে থেকেই বলা হয়েছে, আতশবাজি ও ফানুস নিষিদ্ধ করা হোক! কেন পুলিশকে এটা বলতে হল? কারণ পুলিশ মনে করেছে, তাদের দ্বারা এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পুলিশের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ কেন সম্ভব নয়, পুলিশ কিন্তু সেই ব্যাখ্যা দেয়নি। অথচ আমরা জানি, পুলিশ অনেক বেশি শক্তিশালী। যখন-তখন যেখান-সেখান থেকে যে কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম। পুলিশের তো শক্তি অনেক। যাকে দরকার মনে করে, ধরে নিয়ে যেতে পারে। সেই পুলিশ বাহিনী কেন আগে থেকেই আত্মসমর্পণ করছে?
এর মানে হল, এই কাজগুলোর সাথে প্রভাবশালী লোকেরা জড়িত। প্রভাবশালী মহলের সন্তানেরা জড়িত। যারা নিজেদেরকে আইন-শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে মনে করে। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়ত ভয় করে। আমরা এগুলোর বিস্তারিত বলতে চাই না। অতিরিক্ত বলতে চাই না। কাউকে দোষারোপও করতে চাই না। আমরা শুধু বলতে চাই, সমাজটা ধীরে ধীরে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে? সমাজটা কেন ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে? কেনইবা আমাদের বিদেশী সংস্কৃতির প্রতি, অন্যদের সংস্কৃতির প্রতি এত টান? হাঁ, আমাদের টাকা অনেক হয়েছে, সেই টাকা সৎ পথে কামানো হয়েছে, নাকি অন্যায় পথে, নীতি মেনে কামানো হয়েছে, নাকি দুর্নীতি করে কামানো হয়েছে, সেই প্রশ্ন আজকে না-ই ওঠালাম। সেই প্রশ্ন আজকে থাকুক। কিন্তু যার অনেক বেশি টাকা আছে, সে টাকা উড়াবে। তাই বলে কি একেবারে আগুনে উড়িয়ে দেবে? আমরা দেখছি, এটা স্বীকৃত মহলেও করা হয়। আমরা আগেও বলেছিলাম, দেখা যায়, সরকার স্বীকৃত এবং সরকারিভাবে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, যেমন ক্রীড়া বা অন্য কোনো বড় উৎসবের আয়োজন করা হলে সেখানেও এই ধরনের আগুন নিয়ে ফূর্তি করার একটা বিষয় থাকে। কেন? আমরা এগুলো পরিহার করতে পারি না? শুধু আতশবাজি করে কয়েক মিনিটে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকা যে খরচ করে ফেলি সেগুলোকে আমরা কোনো ভালো কাজে লাগাতে পারি না?
এ তো গেল আমাদের সামাজিক অবক্ষয়। আমাদের চিন্তা-চেতনার নিম্নমুখিতা। আমরা কীভাবে ফূর্তি করব? কোন্ ফূর্তিটা করা উচিত, কোন্টা উচিত না! আমাদের তো উচিত, এমনভাবে কাজ করা, যাতে আমাদের আনন্দ-ফূর্তি এবং খুশিরও একটা মূল্য থাকে। আমরা কেমন হয়ে গেলাম, খুশির তারিখটাও অন্যদের থেকে ধার করছি! নিজেদের দ্বীন-ধর্মেরটা নিচ্ছি না। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসার পর দেখলেন, সেখানে কিছু উৎসব চালু আছে, যেগুলো ভিন জাতির উৎসব। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদেরকে আল্লাহ তাআলা এর বিকল্প দান করেছেন। তা হল দুই ঈদ।
সেদিন থেকেই মুসলমানদের উৎসবের দিন নির্ধারণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন যেন আমরা অন্যদের উৎসব ধার করছি। থার্টি ফাস্ট, ভ্যালেন্টাইন, সাকরাইনসহ আরো কত কি আমরা আমদানী করেছি। তাদের উৎসব পালন করছি এবং তাদের মত করেই পালন করছি! আমরা দ্বীন-ধর্মের কথা তো ভুলেই গিয়েছি। আমাদের অর্থনীতি, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, গণমানুষের অবস্থার কথাও আমরা ভুলে গিয়েছি। সামাজিক এই অবক্ষয় আর কত দিন চলবে?
নতুন প্রজন্ম, আমাদের যুবক-যুবতি, তরুণ-তরুণীরা যে এসব পথই অবলম্বন করছে, নিজেদের স্বকীয়তা হারিয়ে তারা যে অন্যদের অনুসরণের পাগল হচ্ছে, এসব থেকে কি তাদের ফেরাতে হবে না? কাজেই সমাজকে জাগ্রত হতে হবে। আমাদেরকে সত্যিকারার্থে মুসলিম হতে হবে। তবেই ফিরে আসবে আমাদের মানবিকতা, আত্মত্যাগ এবং সহমর্মিতা। তখন এভাবে আর কোনো মায়ের কান্না শুনতে হবে না। অসংখ্য গরিব খেটেখাওয়া মানুষের কান্না শুনতে হবে না, যারা নিজের সামান্য ভিটেবাড়ি, সামান্য টিনসেড ঘর পুড়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এগুলো দুর্ঘটনা নয়। এগুলো বরং ঘটানো হয়েছে। কিছুতেই দুর্ঘটনা বলা চলে না। এটা হল সরাসরি আগুন লাগিয়ে দেওয়া। ইচ্ছা করেই আমি আকাশের দিকে আগুন ছুড়ে দিলাম। সেটা গিয়ে আরেকজনের ঘরে পড়ল আর ঘরটা পুড়ে গেল। একজনের গাড়িতে পড়ল আর গাড়িটা পুড়ে গেল। তাছাড়া আগুনের সাথে তেল-কেরোসিন ইত্যাদি জ্বালানি দিয়ে দেয়া হল। কাজেই এগুলোকে কিছুতেই দুর্ঘটনা বলা চলে না; বরং এগুলো ইচ্ছা করেই অগ্নিকাণ্ড ঘটানো। অথচ এগুলোর জন্য কোনো আইন-বিচার নেই। শুনেছি, এগুলো নিষিদ্ধ করার জন্য হাইকোর্টে রিট হয়েছিল। কিন্তু সেই রিটও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে কি সরকারের আইনজীবীরা সম্ভবত সেখানে ভালো তদারকি করেননি। ভালো জওয়াব দেননি। বরং তারা রিট খারিজের পক্ষে কথা বলেছেন। না হয় কেন এমনটা হল?
আদালত নিষেধাজ্ঞা দিলে তাদের কী সমস্যা হত? এ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের কী অসুবিধা হত? কেন তারা এখানে বিরোধিতা করলেন? রিটকারী তো একটা ভালো কাজই করেছিলেন! সরকারি উকিলরা যদি রিটের পক্ষেই কথা বলতেন তাহলে রিটটি হয়ত খারিজ হত না। কেউ যেহেতু বাধা দিচ্ছে না, রিটকারীও চাচ্ছে, তাহলে এটা নিষিদ্ধ হোক! এমন সিদ্ধান্তও তো আসতে পারত। নিষিদ্ধ হলে সবার জন্যেই সুবিধা হত। সবাই এটার কল্যাণ ভোগ করত। কিন্তু কেন তারা বাধা দিলেন? একদিকে তারা বলছেন, আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নই। দেখা যাচ্ছে মানুষের ঘর-বাড়ি পুড়ে ছাই হচ্ছে, মানুষ মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে, অন্যদিকে তারা বলছে, সরকার ব্যবস্থা নেবে। আদালতের এই বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়ার দরকার নেই। এগুলো স্ববিরোধিতা নয় কি? এগুলো বাস্তবতার বিরোধিতা নয় কি?
আমরা চাই, জাতির বিবেক জাগ্রত হোক! মুসলমানদের বিবেক জাগ্রত হোক! আমাদের মত সাধারণ মুসলিম, যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করি, আখেরাতকে বিশ্বাস করি, যারা মানবতায় বিশ্বাস করি, যারা বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে বসবাস করতে হলে একে-অপরের রেআত করতে হবে, অন্যের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে হবে, এমন কিছু করা যাবে না, যার দ্বারা অন্যের ক্ষতি হয়, তাদেরকে এগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। সাথে সমাজকেও জাগ্রত করতে হবে, যাতে এসবের বিপক্ষে আওয়াজ তোলে। এটি শুধু আলেম-উলামা, ইমাম-খতীবের দায়িত্ব নয়; সমাজপতি, সমাজচিন্তক, সাংবাদিক-কলামিস্ট, লেখক-বুদ্ধিজীবী সকলেরই দায়িত্ব, এসব নেতিবাচক বিষয়গুলোকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা। যাতে আমাদের তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতিরা এসব থেকে ফিরে গঠনমূলক কাজে মনযোগী হতে পারে।
সহীহ বুখারীতে (হাদীস ৬০১৬) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، قِيلَ: وَمَنْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: الّذِي لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ.
আল্লাহর শপথ সে ঈমানদার নয়! আল্লাহর শপথ সে ঈমানদার নয়! আল্লাহর শপথ সে ঈমানদার নয়!
জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল কে সে?
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার অনিষ্ট থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।
আসুন, পাড়া-পড়শি ও আশপাশের লোকদের অনিষ্ট করার মতো ফূর্তি-বিনোদন পরিহার করি। যার যার সাধ্য অনুযায়ী অন্যদের ফেরানোর চেষ্টা করি। হ
টীকা :
১. সে সংখ্যায় যে সব কথা বলার সুযোগ হয়েছিল তার কিছু অংশ তুলে ধরা হল, ‘এ বিষয়টিকে তাহযীব-তামাদ্দুন ও সংস্কৃতির দিক থেকে বিবেচনা করা হয় তাহলেও এজাতীয় আগুনের উৎসব মুসলমানদের জন্য চেতনাগত ও সাংস্কৃতিকভাবেও বর্জনীয়। কারণ, আগুন নিয়ে উৎসব করার সংস্কৃতিটি এসেছে অগ্নিপূজারিদের থেকে। ধীরে ধীরে অন্য অনেক শিরক-নিমজ্জিত জাতি এটা গ্রহণ করেছে। এ কারণে সেসব জাতির লোকেরা মোমবাতি প্রজ্বালন, মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানোসহ আগুন-কেন্দ্রিক বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এসবের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসের দিকটি বিবেচনায় না নিয়েই আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশে মোমবাতি ও মঙ্গলপ্রদীপের মতো আগুন-কেন্দ্রিক বিভিন্ন রসম-রেওয়াজ ও অনুষ্ঠান পালন করা হয়। অথচ মুসলমানদের জন্য সব অনুষ্ঠান ও আচরণে ইসলামের সভ্যতা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে স্বকীয়তা বজায় রাখার গুরুত্ব অনেক বেশি। বিজাতি-বিধর্মীদের সভ্যতা-সংস্কৃতি পালন করলে তাদের গোত্রভুক্ত হয়ে যাওয়ার সতর্কবার্তাও হাদীস শরীফে দেওয়া হয়েছে-
من تشبه بقوم فهو منهم.
এছাড়া আযানের ইতিহাসটি দেখলেও এ বিষয়ে কিছু নির্দেশনা পাওয়া যায়। নামাযের জন্য ঘোষণার কাজটি কীভাবে করা হবে, মুসল্লিদেরকে নামাযের দিকে কীভাবে আহ্বান জানানো হবে- সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি পরামর্শ সভা বসেছিল। তখন কেউ ঘণ্টা বাজানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কেউ বলেছিলেন আগুন জ্বালিয়ে নামাযীদের দৃষ্টি আকর্ষণের কথা। কিন্তু বিজাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যের কারণ উল্লেখ করেই আগুন প্রজ্বালন করে নামাযীদের আহ্বানের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হয়। এ থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে যায়, আগুনের এজাতীয় ব্যবহার বিজাতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার পরিচায়ক। এবং সেটি পরিহার ও বর্জনযোগ্য। সহীহ বুখারীসহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে এ বিষয়ক ঘটনাটির বিবরণ রয়েছে।’