প্রশ্নোত্তর
[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম ‘প্রশ্নোত্তর’। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন ১৩ : আমি জালালাইন জামাতের একজন ছাত্র। বিভিন্ন সময় তাফসীরে ইবনে কাসীর ও রূহুল মাআনী মুতালাআ করা হয়। আমার জানার বিষয় হল, সমষ্টিগতভাবে এই দুই কিতাবের বর্ণনাগুলোর অবস্থা কেমন? এতে কোনো বর্ণনা পেলেই কি আমরা তা নির্ভরযোগ্য বলে মনে করতে পারি?
উত্তর : তাফসীরে ইবনে কাসীর সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তাঁর ‘উলূমুল কুরআন’ কিতাবে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন, ইবনে কাসীর রাহ. তাঁর তাফসীরগ্রন্থে যয়ীফ বা দুর্বল হাদীস খুব কম এনেছেন। আর যেগুলো এনেছেন, সেগুলোরও সনদ নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। অবশ্য কোথাও কোথাও দু-একটি দুর্বল হাদীসের ব্যপারে কোনো তামবীহ করেননি। সুতরাং একথা তো বলা যায় না, তাফসীরে ইবনে কাসীরের সকল হাদীসই সহীহ, তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই- এর অধিকাংশ বর্ণনাই নির্ভরযোগ্য।
ইবনে কাসীর রাহ. যেখানে ইসরাঈলী বর্ণনা এনেছেন, সেখানে সাধারণত বলে দিয়েছেন, এটা ইসরাঈলী রেওয়ায়েত। আর যেখানে অন্যান্য মুফাসসিরগণের বক্তব্য নকল করেছেন, সেগুলোকে তাদের বক্তব্য হিসেবেই বিবেচনা করা হবে।
দেখুন, উলূমুল কুরআন ৫০১-৫০২ পৃষ্ঠা। আরও দ্রষ্টব্য, আল্লামা ইউসুফ বানূরী রাহ.-এর ইয়াতীমাতুল বায়ান ফী শাইয়িম মিন উলূমিল কুরআন, পৃষ্ঠা ৫৭। শায়েখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দা রাহ.-এর আততালীকাতুল হাফিলাহ আলাল আজউইবাতুল ফাদিলাহ, পৃষ্ঠা ১০৪-১০৬।
শিহাবুদ্দীন আলূসী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির তাফসীরগ্রন্থ রূহুল মাআনী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবইল মাছানী সম্পর্কে সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায়, তিনি সাধারণত যাচাই বাছাই করে রেওয়ায়েত এনে থাকেন। তবে এ কিতাবে যেসব বর্ণনা হাওয়ালা ছাড়া আছে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাহকীক করে তার অবস্থা জানতে হবে। এমনিভাবে যেখানে তিনি এমন কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যাতে সবধরনের বর্ণনা আছে, সেটারও সনদ যাচাই করে নিতে হবে। ইসরাঈলী বর্ণনা পর্যালোচনার ব্যাপারে তাঁর কিতাবটি অনেক ক্ষেত্রে বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছে।
দেখুন, উলূমুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৫০৬। আরও দ্রষ্টব্য, আল্লামা ইউসুফ বানূরী রাহ.-এর ইয়াতীমাতুল বায়ান ফী শাইয়িম মিন উলূমিল কুরআন, পৃষ্ঠা ৫৭-৫৮। মুহাম্মাদ আবু শুহবাহ রাহ.-এর আলইসরাঈলীয়্যাত ওয়াল মাওযূআত ফী কুতুবিত তাফসীর, পৃষ্ঠা ১৪৬।
প্রশ্ন ১৪ : কুরআন কারীমে বর্ণিত ‘আরাফ’-এর ব্যাখ্যা কী?
উত্তর : ‘আরাফ’ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি প্রাচীরের উঁচু স্থানের নাম। কুরআন কারীমে এই নামে একটি সূরা আছে। সেখানে ওই স্থান ও তাতে যারা থাকবে তাদের কথা উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে-
وَ بَیْنَهُمَا حِجَابٌ وَ عَلَی الْاَعْرَافِ رِجَالٌ یَّعْرِفُوْنَ كُلّا بِسِیْمٰىهُمْ وَ نَادَوْا اَصْحٰبَ الْجَنَّةِ اَنْ سَلٰمٌ عَلَیْكُمْ لَمْ یَدْخُلُوْهَا وَ هُمْ یَطْمَعُوْنَ.
(জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসী-এই) উভয় দলের মধ্যে একটি আড়াল থাকবে। আর আরাফ-এ (অর্থাৎ সেই আড়ালের উচ্চতায়) কিছু লোক থাকবে, যারা প্রত্যেক দলের লোককে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে। তারা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। তারা (অর্থাৎ আরাফবাসী) তখনও পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু তারা সাগ্রহে (তার) আশাবাদী হবে। -সূরা আরাফ (৭) : ৪৬
উল্লেখিত আয়াতে حِجَابٌ শব্দ দ্বারা জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী প্রাচীরটিকেই বোঝানো হয়েছে। এ প্রাচীরের কথা সূরা শূরার ১৩ নম্বর আয়াতেও এসেছে। সেখানে এ ব্যাপারে سُوْرٌ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রাচীরের উঁচু স্থানটিই (أعراف) আরাফ। (তাফসীরে কুরতুবী ৭/২১১; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪১৭) হ