সূরা ইখলাছ
অর্জন করুন জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদা
কুরআনে কারীমের প্রতিটি সূরা, প্রতিটি আয়াত, এমনকি প্রতিটি হরফই নেকী ও সওয়াবের খাযানা, ঐশী আলোর ফোয়ারা। আল্লাহ তাআলার কালাম হিসাবে সবই অতুলনীয় মর্যাদার অধিকারী। তবে আল্লাহ তাআলা কোনো কোনো সূরা ও আয়াতের বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদা ঘোষণা করেছেন। যাতে বান্দা বেশি থেকে বেশি ফযীলত ও সওয়াব লাভ করতে পারে।
এই বিশেষ ফযীলতের অধিকারী সূরাসমূহের অন্যতম হল সূরা ইখলাছ। হাদীস শরীফে এই সূরার অনেক ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।
সূরা ইখলাছ কুরআন মাজীদের এক তৃতীয়াংশের সমান
হাদীস শরীফে এসেছে, সূরা ইখলাছ কুরআন মাজীদের তিন ভাগের এক ভাগের সমান মর্যাদা রাখে। যে ব্যক্তি একবার সূরা ইখলাছ তিলাওয়াত করবে সে কুরআন মাজীদের এক তৃতীয়াংশের সওয়াব লাভ করবে। বিষয়টি বহু হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি হাদীস পেশ করা হল।
আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত-
أَنّ رَجُلًا سَمِعَ رَجُلًا يَقْرَأُ: قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ يُرَدِّدُهَا، فَلَمّا أَصْبَحَ جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، وَكَأَنّ الرّجُلَ يَتَقَالّهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: >وَالّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنّهَا لَتَعْدِلُ ثُلُثَ القُرْآنِ.
এক ব্যক্তি জনৈক সাহাবীকে দেখলেন, বারবার قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ সূরাটি পড়ছেন। সকাল হলে ঐ ব্যক্তি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বিষয়টি পেশ করলেন। -লোকটি হয়তো ভেবেছে, এ ছোট একটি সূরা বারংবার পড়তে থাকা তেমন সওয়াবের কাজ নয়- তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! সূরা ইখলাছ কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০১৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬১; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৯৯৫
আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তোমরা সবাই জমা হও এবং অন্যদেরও জমা করো। আমি এখন তোমাদের সামনে কুরআন মাজীদের তিন ভাগের এক ভাগ তিলাওয়াত করে শোনাবো।
(নবীজীর এ ঘোষণা শুনে) অনেক সাহাবী জমায়েত হলেন। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং সূরা قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ তিলাওয়াত করলেন। এরপর হুজরার ভেতর চলে গেলেন।
(আবু হুরায়রা রা. বলেন,) তখন লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, হয়তো নবীজীর নিকট আসমান থেকে কোনো খবর এসেছে। এজন্য (শুধু এই একটা সূরা পড়ে) তিনি ভেতরে চলে গেছেন। (আবার এসে এক তৃতীয়াংশ পড়বেন।)
এরই মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং বললেন-
إِنِّي قُلْتُ لَكُمْ سَأَقْرَأُ عَلَيْكُمْ ثُلُثَ الْقُرْآنِ، أَلَا إِنّهَا تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ.
আমি তোমাদের বলেছিলাম, কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়ে শোনাবো। তো শোনো, নিশ্চয় এই সূরা ইখলাছই হল কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮১২; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯০০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৫৩৫
প্রতি রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করা কি কঠিন?
সূরা ইখলাছ ছোট একটি সূরা। সবার জন্য পড়া সহজ। কিন্তু সওয়াবের দিক থেকে তুলনাহীন। আমলনামায় অনেক আজর ও সওয়াব বৃদ্ধি করে। একবার পড়লে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতের সওয়াব লাভ হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাইতেন, উম্মত যেন এই সূরাটি বেশি বেশি পড়ে। তাই বিভিন্নভাবে তিনি এর প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে রাতের বেলা যেন এ সূরা তিলাওয়াত করা হয়- এ ব্যাপারে তিনি খুব তাকিদ করেছেন।
আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, নবীজী বলেছেন-
أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ ثُلُثَ القُرْآنِ فِي لَيْلَةٍ؟ فَشَقّ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ وَقَالُوا: أَيُّنَا يُطِيقُ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ فَقَالَ: اللهُ الوَاحِدُ الصَّمَدُ ثُلُثُ القُرْآنِ.
তোমাদের প্রত্যেকেই কি প্রতি রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে পারে না?
বিষয়টি সাহাবীদের কাছে কঠিন মনে হয়েছে। তাই তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে কে আছে, যে তা পারবে?
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (আমলটি সহজ। কেননা,) সূরা ইখলাছই কুরআন মাজীদের এক তৃতীয়াংশ। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০১৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১০৫৩
আবুদ দারদা রা. বর্ণনা করেন, নবীজী একদিন বললেন-
أَمَا يَسْتَطِيعُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ ثُلُثَ الْقُرْآنِ فِي لَيْلَةٍ؟ قَالُوا: نَحْنُ أَضْعَفُ مِنْ ذَلِكَ وَأَعْجَزُ. قَالَ: إِنّ اللهَ عَزّ وَجَلَّ جَزّأَ الْقُرْآنَ ثَلَاثَةَ أَجْزَاءٍ، فَجَعَلَ قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ جُزْءًا مِنْ أَجْزَاءِ الْقُرْآنِ.
তোমাদের প্রত্যেকেই কি প্রতি রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে পারে না?
সাহাবীগণ বললেন, আমরা দুর্বল, প্রতি রাতে এত বেশি পরিমাণ তিলাওয়াত করা আমাদের সাধ্যের বাইরে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা পুরো কুরআনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন এবং সূরা ইখলাছকে তিন ভাগের এক ভাগ গণ্য করেছেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৪৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮১১; মুসনাদে তয়ালিসী, হাদীস ১০৬৭; সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ১০৪৬৯
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
তোমরা কি প্রতি রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে পারো না?
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, কার পক্ষে সম্ভব এত পরিমাণ তিলাওয়াত করা?
তিনি বললেন, হাঁ, (সকলেই) পারবে। قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ সূরাটি (কুরআনের এক তৃতীয়াংশ)। -মুসনাদে শাশী, হাদীস ৪৪৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৫৭৬; সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ১০৪৪৩; মুসনাদে বায্যার, হাদীস ১৮৫৬; মুজামে আওসাত, তবারানী, হাদীস ৮৪৮০
এসব হাদীসের প্রতি লক্ষ করে উলামায়ে কেরাম বলেছেন, রাতের বেলা সূরা ইখলাছ তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। ইমাম নাসাঈ রাহ. শিরোনাম দিয়েছেন-
مَا يُسْتَحَبّ لِلْإِنْسَانِ أَنْ يُقْرَأَ كُلّ لَيْلَةٍ.
(প্রতি রাতে যে সূরা পড়া মুস্তাহাব)
এ শিরোনামের অধীনে ইবনে মাসউদ রা.-এর এই হাদীসসহ আরো কিছু হাদীস উল্লেখ করেছেন। যার দ্বারা তিনি প্রমাণ পেশ করেছেন যে, প্রত্যেক রাতে সূরা ইখলাছ পড়া মুস্তাহাব।
সূরা ইখলাস তিলাওয়াকারীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়
আবুল হাসান মুহাজির রাহ. বলেন, জনৈক সাহাবী বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলেন। (একদিন তাঁর কাছে এমনভাবে বসা ছিলেন যে,) তার হাঁটুদু’টি নবীজীর হাঁটুদ্বয়ের সঙ্গে লেগে ছিল।
فَسَمِعَ رَجُلًا يَقْرَأُ قُلْ یٰۤاَیُّهَا الْكٰفِرُوْنَ قَالَ: بَرِئَ مِنَ الشِّرْكِ، وَسَمِعَ رَجُلًا يَقْرَأُ قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ، قَالَ: غُفِرَ لَهُ.
এ অবস্থায় এক লোককে শুনলেন, সূরা কাফিরূন তিলাওয়াত করছে। তা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে শিরক থেকে পবিত্র হয়ে গেছে।
আরেক লোককে শুনলেন, সূরা ইখলাছ তিলাওয়াত করছে। তখন তিনি বললেন, তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে। -সুনানে দারেমী, হাদীস ৪৩৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩২০৬; সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ৭৯৭৪; ফাযায়েলে কুরআন, মুস্তাগফিরী, হাদীস ১০৫৩
সূরা ইখলাছের মহব্বত তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে
সূরা ইখলাছের সাথে মহব্বত ও আমলের সম্পর্ক এমনই ফযীলতের বিষয় যে, তা বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে জান্নাতে পৌঁছে দেয়। আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, জনৈক আনসারী সাহাবী মসজিদে কোবায় ইমামতি করতেন। তার অভ্যাস ছিল, সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মেলানোর আগে অবশ্যই সূরা ইখলাছ পড়তেন, এরপর অন্য সূরা পড়তেন। প্রতি রাকাতেই তিনি এমন করতেন। তার সাথী-সঙ্গিরা আপত্তি জানালেন। তারা বললেন, আপনি প্রত্যেক রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়েন, কিন্তু এই সূরাকে যথেষ্ট মনে করেন না; বরং এর সাথে আরেক সূরা তিলাওয়াত করেন। আপনি হয় শুধু সূরা ইখলাছ পড়ুন, না হয় শুধু অন্য সূরা পড়ুন। (সূরা ফাতেহার পর প্রতি রাকাতে দুই সূরা পড়বেন না।)
তিনি বললেন, এই সূরা আমি ছাড়তে পারব না এবং আমি নামায পড়ালে এভাবেই পড়াব। তোমাদের পছন্দ হলে ইমামতি করব, না হয় ছেড়ে দেব।
সেই সাহাবী ছিলেন তাদের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাই অন্য কেউ ইমামতি করবে- এটা তারা পছন্দ করেননি। (তাই এভাবেই চলতে থাকল।)
একদিন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কোবায় এলেন। তাঁর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সাহাবীকে ডেকে বললেন-
يَا فُلاَنُ، مَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَفْعَلَ مَا يَأْمُرُكَ بِهِ أَصْحَابُكَ؟ وَمَا يَحْمِلُكَ عَلَى لُزُومِ هَذِهِ السّورَةِ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ؟
তোমার সাথীদের কথা মানতে বাধা কী? প্রতি রাকাতে আবশ্যিকভাবে সূরা ইখলাছ পড়ার কারণ কী?
সাহাবী উত্তর দিলেন- إِنِّي أُحِبّهَا
আমি সূরা ইখলাছকে মহব্বত করি।
তার জবাব শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
حُبّكَ إِيّاهَا أَدْخَلَكَ الجَنّةَ.
সূরা ইখলাছের প্রতি তোমার এই মহব্বত তোমাকে জান্নাতে দাখেল করবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯০১; আলআহাদীসুল মুখতারাহ ৫/১২৯, হাদীস ১৭৫০, সহীহ বুখারী, (.تعليقا، واللفط له)
আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন-
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَالَ: إِنِّي أُحِبّ هَذِهِ السّورَةَ: قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: حُبّكَ إِيّاهَا أَدْخَلَكَ الْجَنّةَ.
জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে আরয করল, (ইয়া রাসূলাল্লাহ!) قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ সূরাটিকে আমি ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই সূরার ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৪৩২; সুনানে দারেমী, হাদীস ৩৪৭৮; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৩৩৩৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৭৯২; আলআহাদীসুল মুখতারাহ ৫/১২৯, হাদীস ১৭৫১
তার জন্য জান্নাত অবধারিত
আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। এক ব্যক্তি তিলাওয়াত করছিল-
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ، اَللهُ الصَّمَدُ، لَمْ یَلِدْ وَ لَمْ یُوْلَدْ، وَ لَمْ یَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ.
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বললেন- .وَجَبَتْ
ওয়াজিব হয়ে গেছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম-
مَاذَا يَا رَسُولَ اللهِ؟
কী ওয়াজিব হয়েছে, আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন- .الْجَنّةُ
জান্নাত। -মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ২৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮০১১; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৮৯৭; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৯৯৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ২০৭৯
তাকে জান্নাতের খোশখবরি দান করো
আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন-
كنتُ جَالِسًا عِنْدَ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيهِ وَسلّمَ فَجَاءَهُ رَجُلٌ، فَقَالَ، يَا رَسُولَ اللهِ إِنّ أَخًا لِي يُحِبّ أَنْ يَقْرَأَ هَذِهِ السّورَةَ قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ قَالَ: بَشِّرْ أخاك بالجنة.
قال البزار: وَهَذَا الْحَدِيثُ لَا نَعْلَمُ رَوَاهُ عَنْ هِشَامٍ عَنْ مُحَمّدٍ، عَن أَنَس إلاّ جَعْفَرُ بْنُ حَسَنٍ [كذا في المطبوع، والصواب: جعفر بن جسر]، وهُو صَالِحُ الْحَدِيثِ.
وللحديث طريق آخر عند ابن الضريس، وإسناده ضعيف. ويشهد له حديث أبي هريرة المتقدم، فإسناده محتمل للتحسين.
আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। এক লোক এসে বলল, আমার এক ভাই এই সূরা (সূরা ইখলাছ) পড়তে ভালবাসে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ভাইকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। -আলকামেল, ইবনে আদী ২/৩৯০; মুসনাদে বায্যার, হাদীস ৬৭৩১; ফাযায়েলে কুরআন, মুসতাগফিরী, হাদীস ১০৫০
স্বয়ং আল্লাহ যাকে মহব্বত করেন
মুমিনের জীবনের সবচেয়ে বড় আরাধনা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মহব্বত ও ভালবাসার নিআমত। যারা সূরা ইখলাছ বেশি বেশি পাঠ করে তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা রহমতের দৃষ্টি দেন এবং তারা আল্লাহ তাআলার প্রিয়পাত্র হয়ে যান। এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে! এর থেকে বড় অর্জন আর কী থাকতে পারে! আয়েশা রা. বলেন-
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক সাহাবীকে এক বাহিনীর আমীর নিযুক্ত করে যুদ্ধে প্রেরণ করেন। তিনি তাদের ইমামতি করতেন। যখনই কেরাত পড়া শেষ করতেন, সূরা قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ পড়তেন।
ফিরে আসার পর তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বিষয়টি আলোচনা করলেন।
তিনি বললেন-
سَلُوهُ لِأَيِّ شَيْءٍ يَصْنَعُ ذَلِكَ؟
তাকে জিজ্ঞেস করো, কেন সে এমন করে?
সাহাবায়ে কেরাম তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দিয়েছেন-
لِأَنّهَا صِفَةُ الرّحْمَنِ، وَأَنَا أُحِبّ أَنْ أَقْرَأَ بِهَا.
এই পূর্ণ সূরাটাই রহমানের ছিফাত ও গুণাবলির বিবরণ। তাই তা পড়তে আমি ভালবাসি।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জবাব শুনে সাহাবীদের বললেন- أَخْبِرُوهُ أَنّ الله يُحِبّهُ
তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহও তাকে ভালবাসেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৩৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮১৩
জান্নাতে যার জন্য অট্টালিকা নির্মিত হবে
ইট-পাথরের একটা ঘর নিমাণের জন্য কত কষ্ট করতে হয়! কী পরিমাণ শ্রম ও চিন্তা করতে হয়! অথচ আমরা আরো কত সহজে আখেরাতে বিশাল বিশাল মহল ও প্রাসাদ তৈরি করতে পারি। যে মহলের একটা ইট রূপার, আরেকটা ইট স্বর্ণের। যার আস্তর অতি সুগন্ধময় মেশকের এবং যমিন সুরভিত হলুদ যাফরানের। আর কারুকার্য, সাজ-সরঞ্জাম এবং ভোগ-উপভোগের বিলাসপূর্ণ নিআমতরাজি কেমন, কী মানের ও কী পরিমাণে হবে তা তো একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। আসুন কীভাবে জান্নাতে অধিকহারে সেই বালাখানা তৈরি করা যায় এর আমল জেনে নিই।
মুআয ইবনে আনাস জুহানী রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَرَأَ: قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ حَتّى يَخْتِمَهَا عَشْرَ مَرّاتٍ، بَنَى اللهُ لَهُ قَصْرًا فِي الْجَنّةِ. فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطّابِ: إِذًا نَسْتَكْثِر يَا رَسُولَ اللهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: اللهُ أَكْثَرُ وَأَطْيَبُ.
যে ব্যক্তি সূরা قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ দশবার পড়বে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।
এ কথা শুনে উমর ইবনে খাত্তাব রা. বললেন, তাহলে তো আমরা অনেক প্রাসাদের অধিকারী হয়ে যাব।
(অর্থাৎ অধিক হারে এই সূরা পাঠ করব। ফলে আল্লাহ আমাদের অনেক প্রাসাদ দান করবেন।)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলার দান আরো প্রশস্ত, আরো উৎকৃষ্ঠ। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৬১০
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব রাহ. বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَرَأَ قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌعَشْرَ مَرَّاتٍ، بُنِيَ لَهُ بِهَا قَصْرٌ فِي الْجَنّةِ، وَمَنْ قَرَأهاَ عِشْرِينَ مَرّةً، بُنِيَ لَهُ بِهَا قَصْرَانِ فِي الْجَنّةِ، وَمَنْ قَرَأَهَا ثَلَاثِينَ مَرّةً، بُنِيَ لَهُ بِهَا ثَلَاثَةُ قُصُورٍ فِي الْجَنّةِ. فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطّابِ: وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ إِذَنْ لَنُكْثِرَنّ قُصُورَنَا. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: اَللهُ أَوْسَعُ مِنْ ذَلِكَ.
(قال ابن كثير في تفسيره: هذا مرسل جيد.)
যে ব্যক্তি সূরা قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ দশবার পড়বে তার জন্য জান্নাতে অট্টালিকা নির্মাণ করা হবে। যে বিশবার পড়বে তার জন্য দুটি অট্টালিকা তৈরি করা হবে। আর যে ত্রিশবার পড়বে তার জন্য তিনটি অট্টালিকা প্রস্তুত করা হবে।
নবীজীর এই কথা শুনে উমর ইবনে খাত্তাব রা. বললেন, তাহলে তো আমরা অনেক অট্টালিকার মালিক হয়ে যাব।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলার দান এর চেয়ে আরো প্রশস্ত। -সুনানে দারেমী, হাদীস ৩৪৭২; ফাযায়েলে কুরআন, মুস্তাগফিরী, হাদীস ১০৫৯
যার জানাযায় সত্তর হাজার ফেরেশতা শরীক হয়েছেন
হাদীস শরীফে এসেছে, মুআবিয়া ইবনে মুআবিয়া আলমুযানী আললাইছী রা. ইন্তেকাল করলে সত্তর হাজার ফেরেশতাসহ জিবরীল আলাইহিস সালাম নবীজীর কাছে আগমন করেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আলাইহিস সালাম ও এইসব ফেরেশতাদের নিয়ে তার জানাযায় শরীক হন।
নামায শেষ হলে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন-
يَا جِبْرِيلُ، بِمَا بَلَغَ مُعَاوِيَةُ بْنُ مُعَاوِيَةَ الْمُزَنِيّ هَذِهِ الْمَنْزِلَةَ؟
হে জিবরীল! কোন্ আমলের মাধ্যমে মুআবিয়া ইবনে মুআবিয়া মুযানী এই উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে?
জিবরীল আলাইহিস সালাম জবাবে বলেছেন-
بِقِرَاءَةِ قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ قَائِمًا وَقَاعِدًا وَمَاشِيًا وَرَاكِبًا.
এই মর্যাদা লাভের কারণ হল, সে দাঁড়িয়ে, বসে, হেঁটেহেঁটে, সওয়ারীতে তথা সর্বাবস্থায় সূরা ইখলাছ তিলাওয়াত করত। -মুজামে কাবীর ৮/১১৬, হাদীস ৭৫৩৭; মুজামে আওসাত, তবারানী, হাদীস ৩৮৭৪; মুসনাদুশ শামিয়্যীন, ২/১২-১৩ ৮৩১; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ, ইবনে সুন্নী, হাদীস ১৮০
قال الحافظ ابن حجر في لسان الميزان في ترجمة محبوب بن هلال: له طرق يَقوى بعضُها ببعض. وكذا أشار إلى قوته في الإصابة.
আরেক বর্ণনায় এসেছে, নবীজী জিজ্ঞেস করলেন-
يَا جِبْرِيلُ، بِمَ نَالَ هَذِهِ الْمَنْزِلَةَ مِنَ اللهِ؟
হে জিবরীল! কোন্ আমল দ্বারা মুআবিয়া ইবনে মুআবিয়া আল্লাহর নিকট এই মর্যাদা লাভ করেছে?
জিবরীল আ. উত্তর দিয়েছেন-
بِحُبِّهِ قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ، وَقِرَاءَتِهِ إِيّاهَا ذَاهِبًا وَجَائِيًا، وَقَائِمًا وَقَاعِدًا، وَعَلَى كُلِّ حَالٍ.
এর কারণ হল, সে সূরা ইখলাছকে মহব্বত করত এবং চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে সর্বাবস্থায় এই সূরা তিলাওয়াত করত। -মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৪২৬৮
[আগামীতে পড়ুন : সূরা ইখলাসের তাৎপর্য ও শিক্ষা]