দুআয়ে মাগফিরাতের আবেদন
বিগত ২৩ রবিউল আখির ১৪৪৩ হি. মোতাবেক ২৯ নভেম্বর ২০২১ সোমবার দেশের আরো একজন বুযুর্গ আলেমেদ্বীন, হযরত মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী ছাহেব ইন্তেকাল করে গেছেন।
দারস-তাদরীস, ইহতিমাম ও পরিচালনা, ওয়ায-নসীহত, তাহাফ্ফুযে আকীদায়ে খাতমে নবুওত, জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদসহ দ্বীনী খেদমতের বিভিন্ন অঙ্গনে কীর্তি রেখে যাওয়া এই বুযুর্গ আমাদের অনেক আকাবিরের সুদৃষ্টির পাত্র ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে পূর্ণ মাগফিরাত করুন এবং জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন।
তাঁর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় যখন আমার মামা (এবং উস্তায) হযরত মাওলানা সাইফুল্লাহ ছাহেব তাঁর মাদরাসা মাখযানুল উলূম খিলগাঁও ঢাকা’র উস্তায হন। সম্ভবত ১৪০৯ হিজরীর ঘটনা। এর দু’তিন বছর পর তিনি করাচি সফর করেছিলেন। তখন আমি দারুল উলূম করাচির তামরীনে ইফতা বিভাগের তালেবে ইলম। সে সময় করাচিতে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তখন ছিল রমযান মাস। তিনি দারুল উলূম করাচির মেহমানখানায় এক রাত থাকেন। মনে আছে, তাঁর দস্তরখানের ইনতেযাম হযরত শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের বাসা থেকে হয়েছিল। পরবর্তীতে আরো নানা মাধ্যমে তাঁর সাথে সম্পর্ক হয়। কিন্তু তাঁর জামাতা মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ যীদা মাজদুহুম মারকাযুদ দাওয়াহ আগমন করার পর থেকে অন্যান্য সম্পর্ক ছাপিয়ে এই সম্পর্কই মুখ্য হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা হযরত মরহুমকে আমাদের পক্ষ থেকে জাযায়ে খায়ের দান করুন এবং তাঁর সকল দ্বীনী খেদমতকে তাঁর জন্য সদকায়ে জারিয়া বানিয়ে দিন।
আমাদের মত তালেবে ইলমদের জন্য খুশির বিষয় হল, তিনি দুই খণ্ডে নিজের আত্মজীবনীও লিখে গেছেন। ‘নুকূশে যিন্দেগী’ নামে এই কিতাবের প্রথম খ- ১৪৩৪ হি. (২০১৩ ঈ.) আর দ্বিতীয় খ- ১৪৩৮ হি. (২০১৭ ঈ.) সালে ছেপে প্রকাশিত হয়। উভয় খণ্ডেরই কপি অধমের কাছে হযরতের পক্ষ থেকে হাদিয়া হিসেবে পৌঁছে। এই কিতাব আমার এজন্য পছন্দ হয়েছে যে, এতে তিনি নিজের জীবনের শিক্ষণীয় ঘটনাবলির পাশাপাশি নিজের আসাতিযা ও আকাবিরের বিভিন্ন অবস্থা ও ঘটনা উল্লেখ করেছেন। নিঃসন্দেহে এসব ঘটনা তালেবে ইলমদের জন্য পাথেয়। এর মাধ্যমে তারা ইলমের আদাব এবং আকাবিরের মাকাম ও মর্যাদা বুঝতে পারবে।
তাঁর খাতেমা বিল খায়েরের একটি বাহ্যিক আলামত এই মনে হয় যে, ইন্তেকালের এক বা আধা দিন আগেও কারাবন্দি আলেমেদ্বীন ও ওয়ায়েযীনদের কারামুক্তির জন্য তিনি ফিকিরে ছিলেন এবং এর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে উলামা-তলাবা সবার পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তাঁর ওয়ারিসগণকে সবরে জামীলের তাওফীক দান করুন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদারিস-মাকাতিব এবং তাঁর অন্যান্য দ্বীনী খেদমতগুলোকে কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর জন্য সদকায়ে জারিয়া বানিয়ে দিন।
সম্প্রতি বান্দার তৃতীয় মাদরে ইলমী জামেয়া দারুল উলূম করাচির দু’জন প্রবীণ উস্তায ইন্তেকাল করে গেছেন। উস্তাযে মুহতারাম হযরত শাইখুল ইসলাম দামাত বারাকাতুহুম ২৩ ডিসেম্বর ’২১ ঈ.-এ তাঁর এক বক্তব্যে লিখেছেন-
‘দারুল উলূম করাচিকে একসাথে প্রবীণ দুইজন উস্তাযের মৃত্যুসংবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। গত পরশু মাওলানা নিআমাতুল্লাহ চাতরালী হঠাৎ ইন্তেকাল করে গেছেন। আর আজ উস্তাযে হাদীস হযরত মাওলানা ইফতেখার আহমাদ আযমী দীর্ঘ অসুস্থতার পর পরপারে চলে গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। উভয়ের জন্য দুআয়ে মাগফিরাত ও ঈসালে সওয়াবের দরখাস্ত।’
আল্লাহ তাআলা পুরো দুনিয়ার সকল মরহুমগণের পরিপূর্ণ মাগফিরাত করুন। সবার কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিন এবং বর্তমান প্রজন্মের মাঝে তাদের সাচ্চা ওয়ারিস তৈরি করে দিন- আমীন।
-বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
১৯-০৫-১৪৪৩ হি.
জুমাবার