আ ম রা হ ব তাঁ দে র ম তো : অটল ঈমান, অপূর্ব নুসরাত
মিথ্যুক আসওয়াদ ‘আনাসী আর তার নবুওয়তের মিথ্যা দাবির কথা কে না জানে? সে ছিল ইয়ামানের অধিবাসী। আর সেখানে বাস করতেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন সাহাবী হযরত আবু মুসলিম খাওলানী রা.। যাঁর প্রকৃত নাম আবদুল্লাহ ইবনে সুয়াইব। একদিন নবীজীর এই সাহাবীকে মিথ্যুক নবীর কাছে আনা হল। মিথ্যুক আসওয়াদ তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল?’
আবু মুসলিম খাওলানী রা. বললেন, ‘আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।’
আসওয়াদ বলল, ‘তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল?’
আবু মুসলিম রা. বললেন, ‘হ্যাঁ।’
আবারও আসওয়াদ প্রশ্ন করল, ‘আমি কি আল্লাহর রাসূল?’
তিনি বললেন, ‘আমি কিছুই শুনছি না।’
সে বলল, ‘মুহাম্মাদ কি আল্লাহর রাসূল?’
তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’
এভাবে যতবারই সে নিজের মিথ্যা দাবির পক্ষে সাক্ষ্য দিতে বলে তিনি বলে উঠেন, ‘আমি কিছুই শুনতে পাইনি।’ আর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা বললে তিনি হ্যাঁ জবাব দিতে থাকেন।
একই প্রশ্ন, একই জবাব।
নিরুপায় হয়ে মিথ্যুক আসওয়াদ তখন বিশাল অগ্নিকুণ্ড প্রস্তুত করার হুকুম দিল। প্রস্তুত হল বিশাল অগ্নিকুণ্ড। তাতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এরপর কী হল? এই মহান সাহাবীকে সেই জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হল। কিন্তু কী আশ্চর্য! জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েও তার কিছুই হল না। আল্লাহর হুকুমে আগুন হয়ে গেল ‘বারদান ওয়া সালামান।’ শীতল ও নিরাপদ। লেলিহান অগ্নি কুণ্ড থেকে তিনি সহীহ-সালেম বেরিয়ে এলেন।
কে যেন মিথ্যুক আসওয়াদের কানে কানে বলল, ‘এই ব্যক্তিকে দূরে সরিয়ে দাও। অন্যথায় সে তোমার অনুসারীদেরও বিগড়ে দেবে।’
অবশেষে আসওয়াদ তাঁকে দেশান্তরের নির্দেশ দিল। আর তাঁকে ইয়ামান থেকে দূরে এনে ছেড়ে দেওয়া হল।
ছাড়া পেয়ে আবু মুসলিম খাওলানী রা. মদীনার পথ ধরলেন। ততদিনে নবীজী এই নশ্বর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন এবং হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. খলীফাতুল মুসলিমীন হয়েছেন।
মদীনায় ঢুকে আবু মুসলিম খাওলানী রা. মসজিদে নববীতে এলেন এবং একটি স্তম্ভের কাছে নামাযে দাঁড়ালেন। তাঁকে দেখতে পেয়ে হযরত ওমর রা. বললেন, ‘কোত্থেকে এলে?’
তিনি বললেন, ‘ইয়ামান থেকে।’
হযরত ওমর রা. বললেন, ‘সম্ভবত তুমিই সে ব্যক্তি, যাকে মিথ্যুক আসওয়াদ অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল?’
আবু মুসলিম রা. বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। তাই বললেন, ‘তিনি তো আবদুল্লাহ ইবনে সুয়াইব।’
হযরত ওমর রা. বললেন, ‘আল্লাহর দোহাই। তুমিই কি আবদুল্লাহ ইবনে সুয়াইব?’
নিরুপায় হয়ে তিনি স্বীকার করলেন এবং বললেন, ‘হ্যাঁ, এ তো একমাত্র আল্লাহরই মেহেরবানী।’
হযরত ওমর রা. তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। আনন্দে তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। এরপর হাত ধরে তাঁকে নিয়ে এলেন খলীফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর দরবারে এবং বললেন, আল্লাহর শোকর, মৃত্যুর আগে আমি উম্মতে মুহাম্মাদীর এমন একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তির দেখা পেলাম, যাঁর সাথে সেই মুআমালাই করা হয়েছে যা করা হয়েছিল মহান নবী ও রাসূল হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে।’
সূত্র : বুস্তানুল আরিফীন, ইমাম নববী, পৃষ্ঠা : ৬৩
অনুবাদ : ইবনে দানিশ