Muharram 1443   ||   August 2021

মহামারির এই দুর্যোগে যেভাবে দাঁড়াতে পারি অসহায়ের পাশে

Mawlana Mummadullah Masum

যখন সর্বপ্রথম ওহী নাযিল হল। জিবরীল আমীন তিন তিন বার নবীজীকে বুকে জড়িয়ে চাপ দিলেন। শোনালেন ওহীর বাণী-

اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِیْ خَلَقَ.

(পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।)

কাঁপতে কাঁপতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে এলেন। পুরো ঘটনা খুলে বললেন উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা রা.-কে। তখন উম্মুল মুমিনীন যে কথাগুলো বলে নবীজীকে সান্ত¦না দিয়েছিলেন তা ছিল-

كَلّا وَاللهِ مَا يُخْزِيكَ اللهُ أَبَدًا، إِنّكَ لَتَصِلُ الرّحِمَ، وَتَحْمِلُ الكَلّ، وَتَكْسِبُ المَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الحَقِّ.

কক্ষনো নয়! খোদার কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনো বিব্রত করবেন না। আপনি আত্মীয়তা রক্ষা করেন, দুস্থের ভার বহন করেন, নিঃস্বের জন্য উপার্জন করেন, মেহমানের সমাদর করেন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে (মানুষের) সহযোগিতা করেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬০

এমনই ছিলেন আমাদের প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এমনই ছিল তাঁর আদর্শ। দুস্থের ভার গ্রহণ, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো আর দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা নবীজীর মহান সুন্নত।

আমাদের চারপাশে বহু মানুষ প্রায়ই অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটায়। এমন লোকও কম নয়, যারা অভাবের কথাটা প্রকাশও করতে পারেন না। বিশেষভাবে বর্তমানে করোনা মহামারির এই পরিস্থিতিতে। এমন মুহূর্তে আমাদের কর্তব্য নবীজীর এই মহান আদর্শের ব্যাপক চর্চা করা।

বিভিন্নভাবেই আমরা তা করতে পারি :

এক. যাকাত

যাকাত ইসলামের একটি ফরয বিধান। সামর্থ্যবান মুসলিমদের তা আদায় করতে হয়। অভাবী মানুষের প্রয়োজন পূরণে এর কল্যাণ সুদূরপ্রসারী। ইসলামের এই বিধানটি যদি আমরা যথাযথভাবে আদায় করতে পারি, তাহলে এরকম দুর্যোগে মানুষের কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হবে এবং সমাজ মুক্ত হবে দারিদ্র্য থেকে। সুতরাং যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিদের মাঝে যাকাতের অর্থ পৌঁছিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।

যাকাত তো আমাদের দিতেই হবে। এখন শুধু যথাসময়ে যথাপাত্রে যদি তা ব্যয় করতে পারি তাহলে মানুষের অভাব দূর হবে এবং আমি লাভ করব আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এটা তো মুমিনের সফলতার পথ, সফল মুমিনের বৈশিষ্ট্য। সফল মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে ইরশাদ হয়েছে-

وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِلزَّكٰوةِ فٰعِلُوْنَ.

যারা যাকাত আদায় করে। -সূরা মুমিনূন (২৩) : ১

যাকাতকে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম সাব্যস্ত করা হয়েছে। কোনো তাবুর একটি খুঁটি সরে গেলে যেমন মজবুতভাবে দাঁড়াতে পারে না, তেমনি যাকাত আদায় না করলেও ইসলাম ও ঈমান অপূর্ণ থেকে যায়। যে এ বিধান লঙ্ঘন করে তার ব্যাপারে এসেছে কঠিন শাস্তির ধমকি । আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ الَّذِیْنَ یَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَ الْفِضَّةَ وَ لَا یُنْفِقُوْنَهَا فِیْ سَبِیْلِ اللهِ  فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِیْمٍ، یَّوْمَ یُحْمٰی عَلَیْهَا فِیْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوٰی بِهَا جِبَاهُهُمْ وَ جُنُوْبُهُمْ وَ ظُهُوْرُهُمْ  هٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ.

আর যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ‘সুসংবাদ’ দিন। যেদিন ধন-সম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর তা দ্বারা তাদের কপাল, তাদের পাঁজর ও পিঠে দাগ দেয়া হবে, (এবং বলা হবে, এই হচ্ছে সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যে সম্পদ পুঞ্জীভূত করতে তার মজা ভোগ কর। -সূরা তাওবা (৯) : ৩৪

দুই. সাধারণ দানের হাত বাড়িয়ে দিই

জানা কথা, যাকাত দ্বারা সব সমাধান হয়ে যাবে না। কারণ, এমন অনেক মানুষ আছে, যারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয়, কিন্তু সাময়িক অর্থকষ্ট বা অন্য কোনো বিপদের শিকার হয়ে পড়েছে। তদ্রƒপ দ্বীনী এমন অনেক খাত রয়েছে, যেখানে যাকাতের অর্থ খরচ করা যায় না। তাই যাকাত আদায়ের পাশাপাশি সাধারণ দানের হাতও প্রসারিত করা প্রয়োজন। পবিত্র কুরআনে একে ‘আল্লাহ্কে ঋণ প্রদান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর আল্লাহ তাআলা সেটিকে পত্রপল্লবে শত গুণ বৃদ্ধি করে তাকে আখেরাতে ফিরিয়ে দেবেন। ইরশাদ হয়েছে-

مَنْ ذَا الَّذِیْ یُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَیُضٰعِفَهٗ لَهٗ وَ لَهٗۤ اَجْرٌ كَرِیْمٌ.

কে আছে, যে আল্লাহকে ঋণ দেবে, উত্তম ঋণ? তাহলে তিনি দাতার জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেবেন এবং এরূপ ব্যক্তি লাভ করবে মহাপ্রতিদান। -সূরা হাদীদ (৫৭) : ১১

اِنْ تُقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا یُّضٰعِفْهُ لَكُمْ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ .

তোমরা আল্লাহকে ঋণ দিলে আল্লাহ তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। -সূরা তাগাবুন (৬৪) : ১৭

ইখলাসের সাথে করা আমাদের সামান্য দানকে আল্লাহ কত গুণ বাড়িয়ে দেবেন তা একটি হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে সুন্দর উপমার মাধ্যমে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلَّا الطَّيِّبَ، وَإِنَّ اللهَ يَتَقَبّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوّهُ، حَتّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ.

যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে -আর আল্লাহ ‘হালাল’ ছাড়া গ্রহণ করেন না- আল্লাহ তা ডান হস্তে গ্রহণ করেন। (অর্থাৎ কবুল করে নেন।) অতঃপর তা দানকারীর জন্য লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন, যেমন তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন কর। একপর্যায়ে এ ‘সামান্য দান’ পাহাড়সম হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৪

বান্দার দান গোনাহমুক্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভেরও মাধ্যম হয়। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ الصّدَقَةَ لَتُطْفِئُ غَضَبَ الرّبِّ وَتَدْفَعُ مِيتَةَ السّوءِ، قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الوَجْهِ.

নিশ্চয় সদকা রবের ক্রোধ নির্বাপিত করে এবং অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। -জামে তিরমিযি, হাদীস ৬৬৪

তিন. বন্ধু-বান্ধব থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমেও এগিয়ে আসতে পারি

বিভিন্ন দুর্যোগে আমরা নিজেরা যতটুকু অংশগ্রহণ করতে পারি ভালো। সাথে সাথে আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিত বন্ধুমহল থেকে অর্থ উত্তোলনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমেও এগিয়ে আসতে পারি। অনেকেই এমন থাকেন, যারা এসব সময় দান করতে চান কিন্তু কীভাবে দান করবেন, কার মাধ্যমে পৌঁছাবেন ইত্যাদি ভাবনায় আর হয়ে ওঠে না। এমন সময় আশপাশের কেউ উদ্যোগী হলে তাদের দান সহজেই প্রয়োজনগ্রস্ত পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং উদ্যোগ গ্রহণের কারণে আমিও বিশাল সওয়াবের অধিকারী হতে পারি। সুতরাং যার পক্ষে সম্ভব এসব সময় অন্যদের থেকে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগের মাধ্যমেও এগিয়ে আসতে পারি।

নবীযুগের একটি ঘটনা উল্লেখ করি-

একদিন কিছু নগ্নপদ, খালি মাথা, চামড়ার বস্ত্র পরিহিত গলায় তরবারি ঝুলানো একদল মানুষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এল। তাদের চেহারায় ছিল অনাহারের ছাপ। এ অবস্থা দেখে নবীজীর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। নবীজী হযরত বেলাল রা.-কে নির্দেশ দিলেন আযান ও ইকামত দিত। সালাত আদায়ের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিলেন। খুতবায় সূরা নিসার প্রথম আয়াত ও সূরা হাশরের আঠারো নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করলেন- (যার তরজমা) ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক, আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে?’ (নবীজী বললেন,) ‘প্রত্যেকেই দিনার, দিরহাম, বস্ত্র, গম, খেজুর দান করুক। এমনকি প্রয়োজনে এক টুকরো খেজুর দিয়ে হলেও।’

তখন এক আনসারী সাহাবী বড় একটি থলে নিয়ে এলেন। ভারী হওয়ায় কারণে যেন তা বহন করতে পারছিলেন না। এরপর লোকজন একের পর এক সদকা নিয়ে আসতে লাগল। হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন, অবশেষে আমি খাদ্য ও বস্ত্রের দুটো স্তূপ দেখতে পেলাম। এ দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মোবারক ঝলমল করে উঠল। যেন এক টুকরো সোনা। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন-

مَنْ سَنَّ فِي الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً، فَلَهُ أَجْرُهَا، وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ، وَمَنْ سَنَّ فِي الإِسْلاَمِ سُنَّةً سَيِّئَةً، كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ.

ইসলামে (মুসলমানদের মাঝে) যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের সূচনা করবে, তার সওয়াব সে পাবে। সাথে সাথে তাদের সওয়াবও পাবে, যারা এরপর সে অনুযায়ী আমল করবে। তবে সেক্ষেত্রে আমলকারীর সওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি ইসলামে (মুসলমানদের মাঝে) কোনো মন্দ কাজের সূচনা করবে তার গুনাহও তার উপর বর্তাবে। সাথে সাথে যারা এরপর সে অনুযায়ী চলবে তাদের গুনাহও। এতে আমলকারীর গুনাহ মোটেও কমবে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৭

এ হল নববী আদর্শের অনুপম শিক্ষা। কাজেই আমরাও পারি এমন ধারা চালু করতে। ব্যক্তিগতভাবে যেমন দান করি, সামাজিক কিংবা সম্মিলিত উদ্যোগেও আমরা দান করতে পারি। এর মাধ্যমে অনেক বড় বড় কাজও খুব সহজে সম্পন্ন করে ফেলা যায়। ইরশাদ হয়েছে পবিত্র কুরআনে-

وَ تَعَاوَنُوْا عَلَی الْبِرِّ وَ التَّقْوٰی.

তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে-অন্যকে সহযোগিতা কর। -সূরা মায়িদা (৫) : ২

এতসব ফযীলতের পরও যদি আমরা এগিয়ে না আসি তাহলে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদমসন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রƒষা করনি।

সে বলবে, হে আমার প্রভু! আমি কীভাবে আপনার শুশ্রূষা করব, আপনি তো বিশ্বজগতের প্রভু!

আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল? কিন্তু তুমি তার শুশ্রূষা করনি। তুমি যদি তার শুশ্রূষা করতে তাহলে আমাকে তার কাছে পেতে।

হে আদমসন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি।

সে বলবে, হে প্রভু! আমি কী করে আপনাকে খাওয়াব, আপনি তো রাব্বুল আলামীন!

আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, তখন তুমি তাকে খেতে দাওনি? তুমি কি জানো না, তুমি যদি তাকে খাওয়াতে তাহলে আমার কাছে পেতে?

হে আদমসন্তান! আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে পানি দাওনি। সে বলবে, হে প্রভু! কীভাবে আমি আপনাকে পানি পান করাব, আপনি তো সারা জাহানের প্রভু!

তিনি বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি দাওনি। তুমি যদি তাকে পান করাতে, তা আমার কাছে পেতে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৬৯

দানের পথে বড় বাধা হল কার্পণ্য এবং লোভ। সেজন্য হৃদয়ে জাগ্রত রাখতে পারি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেকটি হাদীস। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ العِبَادُ فِيهِ، إِلَّا مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ، فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا: اللّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ: اللّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا.

প্রতিদিন সকালে দু’জন ফিরিশতা নেমে আসে। তাদের একজন দুআ করে- হে আল্লাহ! যে সম্পদ ব্যয় করে তাকে আপনি এর বদলা দান করুন। অপরজন বলে- হে আল্লাহ! যে সম্পদ জমিয়ে রাখে তার সম্পদ ধ্বংস করে দিন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৪২

চার. আত্মীয়দের প্রতি সহায়তার হাত বাড়াই

পবিত্র কুরআনে আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি যেসব সৎকর্মের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আত্মীয়তার হক সেগুলোর অন্যতম প্রধান। ইরশাদ হয়েছে-

وَ اعْبُدُوا اللهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْـًٔا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰی...

তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে, কোনো কিছুকে তার শরীক করবে না। পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। -সূরা নিসা (৪) : ৩৬

আত্মীয়তার হক আদায়কে হাদীস শরীফে ঈমানের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ.

যে আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন আত্মীয়তার হক আদায় করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৮

ঈমানী দায়িত্ববোধ থেকে কৃত এ আমলটির জাগতিক উপকারিতাও রয়েছে। এর মাধ্যমে রিযিকে বরকত হবে, আল্লাহ আমার রিযিক প্রশস্ত করে দেবেন। এমনকি হায়াতেও বরকত দান করবেন এবং অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করবেন। হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُمَدَّ لَهُ فِي عُمْرِهِ، وَيُوَسَّعَ لَهُ فِي رِزْقِهِ، وَيُدْفَعَ عَنْهُ مِيتَةُ السُّوءِ، فَلْيَتَّقِ اللهَ وَلْيَصِلْ رَحِمَهُ.

যে চায়- আল্লাহ তার আয়ু বৃদ্ধি করুন, রিযিকে প্রশস্ততা দান করুন এবং অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করুন সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং আত্মীয়তার হক আদায় করে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২১৩

আত্মীয়তার হক কীভাবে রক্ষা হবে, সে শিক্ষাও আমরা পেয়ে যাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী ও জীবন থেকে। তার মধ্যে অন্যতম হল আত্মীয়ের জন্য খরচ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্মীয়ের জন্য খরচ করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং এর ফযীলত বর্ণনা করেছেন; একে দ্বিগুণ সওয়াব লাভের মাধ্যম বলেছেন। তিনি বলেছেন-

الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ، وَهِيَ عَلَى ذِي الرَّحِمِ ثِنْتَانِ: صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ.

মিসকীনকে দান করার দ্বারা কেবল দান করার সওয়াব লাভ হয়। আর আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে দুটি সওয়াব- দান করার সওয়াব এবং আত্মীয়তার হক আদায়ের সওয়াব। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬২৩৩; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ২০৬৭

সুতরাং সংকটকালে নিকটবর্তী আত্মীয়, দূরবর্তী আত্মীয়, সবারই খোঁজ-খবর রাখার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাকে যে সচ্ছলতা দান করেছেন তার শুকরিয়া আদায় করি।

পাঁচ. প্রতিবেশীর হক আদায়ের মাধ্যমে

ইসলামে প্রতিবেশীর আওতা অনেক বিস্তৃত। পাশের ঘর থেকে শুরু করে সমাজের সবাই পর্যায়ক্রমে একে-অপরের প্রতিবেশী। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰی وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ .

(আর সদ্ব্যবহার কর) নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গে বসা (বা দাঁড়ানো) ব্যক্তির সাথে...। -সূরা নিসা (৪) : ৩৬

সুতরাং প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করা, তাদের খোঁজ-খবর রাখা, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানো কুরআনের নির্দেশ।

অভাবের সময় প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে তো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত জোরালোভাবে পেশ করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি বাণী উচ্চারণ করেছেন-

لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَشْبَعُ وجارهُ جَائِع.

সে মুমিন নয়, যে পেটপুরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। -আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদীস ১১২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৩১১৭

এমনকি নিজের কাছে পর্যাপ্ত খাবার না থাকলেও কীভাবে আমরা প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়াতে পারি সে নির্দেশনাও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  দিয়েছেন। আবু যর রা.-কে উদ্দেশ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আবু যর! যখন তুমি ঝোল-তরকারি রান্না কর তখন কিছুটা পানি বাড়িয়ে দাও! তারপর সেখান থেকে কিছু অংশ তোমার প্রতিবেশীদের ঘরে পাঠিয়ে দাও! -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬২৫

অর্থাৎ বড়-সড় কোনো আয়োজন ও ব্যবস্থা করতে না পারলেও অন্তত নিজের ভাগ থেকে একটু প্রতিবেশীর জন্য পাঠিয়ে দিলাম, এতেও প্রতিবেশীর এক ধরনের হক আদায় হয়ে গেল।

আরেকটি কথা। ইসলাম কিন্তু মুসলিম-অমুসলিম সকলকেই প্রতিবেশী সাব্যস্ত করেছে। তাই তো নবুওতি শিক্ষায় উদ্ভাসিত হয়ে সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. নিজের ইহুদী প্রতিবেশীরও রীতিমত খোঁজ-খবর  রাখতেন। একদিন বকরি জবাই করার পর খাদেমকে নির্দেশ দিলেন, যেন বণ্টন করার সময় তাঁর ইহুদী প্রতিবেশীর ঘরে আগে পৌঁছানো হয়। (দ্র. আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ১২৮)

কাজেই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দুর্যোগকালে যদি দরিদ্র প্রতিবেশীর প্রতি যে কোনোভাবেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই, তাহলে নিজে যেমন সওয়াবের অধিকারী হব, প্রবিবেশীরও কিছুটা উপকার হবে- ইনশাআল্লাহ।

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, অনেক প্রতিবেশীই এমন আছে, যাদের দেখে বোঝার উপায় নেই, তারা অভাবে দিন কাটাচ্ছে। তারা মুখ ফুটে কখনো চাইবেও না।  কুরআন মাজীদে এদেরকে ‘মাহরূম’ বলা হয়েছে। সূরা যারিয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ فِیْۤ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّآىِٕلِ وَ الْمَحْرُوْمِ.

এবং তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও মাহরূমের (বঞ্চিতের) হক। -সূরা যারিয়াত (৫১) : ১৯

এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হল, নিজে থেকে তাদের খোঁজ-খবর রাখা এবং দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন পন্থা অবলম্বন করা, যাতে সে লজ্জা না পায়। এজন্যই তো যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা বলে দেয়া জরুরি নয় যে, আমি তোমাকে যাকাত দিচ্ছি; বরং ব্যক্তি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কি না- এটুকু জেনে নেয়াই যথেষ্ট।

ছয়. ঋণ প্রদানের মাধ্যমেও এগিয়ে আসতে পারি

যাকাত, সাধারণ দান ইত্যাদির পর অভাবী মানুষের প্রয়োজন পূরণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে ‘করযে হাসান বা ঋণ দান’। সুতরাং দান তো করবই পাশাপাশি ঋণ প্রদানের মাধ্যমেও এগিয়ে আসব। মানুষ বিপদে পড়েই তো ঋণের পথে হাঁটে। সুতরাং কাউকে ঋণ দেওয়ার অর্থ হল তাকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করা। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কাউকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে আল্লাহ কাল কিয়ামতের কঠিন দিনে তাকে বিপদ থেকে  উদ্ধার করবেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا، نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ، يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا، سَتَرَهُ اللهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَاللهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ.

যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের (ভয়াবহ দিনে) তার একটি বিপদ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো ঋণগ্রস্ত অসচ্ছল ব্যক্তির প্রতি (মেয়াদ বাড়িয়ে, আংশিক বা পূর্ণ ঋণ মাফ করার মাধ্যমে) সহজ হবে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার প্রতি সহজ হবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার  দোষ গোপন রাখবেন। আল্লাহ তাআলা বান্দার সহায়তায় থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহায়তায় থাকে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯

সুন্দর ও উত্তম পন্থায় অন্যকে ঋণ প্রদান করা। ঋণগ্রহীতা যদি সময়মতো আদায় করতে না পারে তাকে সুযোগ দেয়া এবং সময় বাড়িয়ে দেয়া। এর জন্য রয়েছে বিশেষ সওয়াব ও প্রতিদান। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

وَ اِنْ كَانَ ذُوْ عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ اِلٰی مَیْسَرَةٍ ؕ وَ اَنْ تَصَدَّقُوْا خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.

আর ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি অসচ্ছল হয়, তবে সচ্ছল হওয়া পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিতে হয়। আর যদি সদকাই করে দাও, তবে তোমাদের পক্ষে সেটা অধিকতর শ্রেয়। -সূরা বাকারা (২) : ২৮০

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ عَنْهُ، أَظَلّهُ اللهُ فِي ظِلِّهِ .

যে অসচ্ছল ঋণগ্রস্তকে সুযোগ দেয়, অথবা (ঋণের পরিমাণ) কমিয়ে দেয় (বা মাফ করে দেয়), আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩০০৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৫২১

আফসোসের কথা হল, আমাদের সমাজে ইসলাম প্রদর্শিত করযে হাসানের এ সুন্দর আদর্শটি উপেক্ষিত হয়ে জায়গা করে নিয়েছে সুদভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থা, যা সম্পূর্ণ হারাম। দিন দিন এতে দারিদ্র্য আরো বাড়ছে। উপরন্তু সুদী মহাজনেরা এমন কারবারি করে জাতীয়ভাবে সমাদৃতও হচ্ছেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুদের এই অভিশাপ থেকে মুক্ত রাখুন।

খুঁজে খুঁজে প্রকৃত অভাবীদের দান করি

দান করা চাই নিজ দায়িত্বে, অভাবীদের খুঁজে খুঁজে। কারণ কিছু মানুষ থাকে, যারা চরম অর্থসংকটের শিকার, কিন্তু ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য ও সামাজিক অবস্থানের কারণে চক্ষুলজ্জায় কারো কাছে চায় না। মুখ খুলে কিছু বলতেও পারে না। বর্তমান করোনার এই সময়ে এমন লোকের সংখ্যা অনেক। এমন অসহায়দের খুঁজে খুঁজে সাহায্য করা। লক্ষ্য করুন, কুরআনে কারীমে কী সুন্দরভাবে তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন-

یَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ اَغْنِیَآءَ مِنَ التَّعَفُّفِ ۚ تَعْرِفُهُمْ بِسِیْمٰىهُمْ ۚ لَا یَسْـَٔلُوْنَ النَّاسَ اِلْحَافًا .

তারা যেহেতু অতি সংযমী হওয়ার কারণে কারো কাছে সওয়াল করে না, তাই অনবগত লোকে তাদেরকে বিত্তবান মনে করে। তোমরা তাদের চেহারার আলামত দ্বারা তাদেরকে (অর্থাৎ তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা) চিনতে পারবে। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৩

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

لَيْسَ المِسْكِينُ الَّذِي يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ، وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ، وَلَكِنِ المِسْكِينُ الَّذِي لاَ يَجِدُ غِنًى يُغْنِيهِ، وَلاَ يُفْطَنُ بِهِ، فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ وَلاَ يَقُومُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ.

এক-দুই লুকমা খাবার বা এক-দুইটি খেজুরের জন্য যে মানুষের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেয়- অভাবী তো সে নয়; প্রকৃত অভাবী হল, যার অভাব আছে, কিন্তু তাকে দেখে তার অভাব আঁচ করা যায় না; যার ভিত্তিতে মানুষ তাকে দান করবে। আবার চক্ষুলজ্জায় সে মানুষের দুয়ারে হাতও পাততে পারে না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৩৯

সুতরাং আসুন, যাকাত-সদাকা, দান-অনুদান, করযে হাসান, আত্মীয়তা ও প্রতিবেশীর হক আদায় ইত্যাদির মাধ্যমে একে-অপরের পাশে দাঁড়াই। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিই অসহায়ের প্রতি। সফলতা লাভ করি ইহকাল ও পরকালে। হ

 

advertisement