Muharram 1443   ||   August 2021

একটি হত্যাকাণ্ড এবং অনিঃশেষ নীরবতা

ওয়ালিউল্লাহ আব্দুল জলীল

১৮ জুন বাংলার আকাশ কেমন ছিল? সেদিন রক্তিম সূর্যোদয়কে আড়াল করতে আকাশে কি মেঘ ছিল? মনে নেই। হাতড়ে দেখি ডায়েরির পাতা শূন্য। জাতি ও ধর্মের বেদনার কথা লিখতে লিখতে থমকে গেছে হাত। একই সমস্যা। একই সমাধান। ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি। এর পরও সব সমাধানহীন। জনশক্তি আছে, কাজে লাগানোর মতো অর্থ আছে, আছে বুদ্ধিও। নেই শুধু সদিচ্ছা। বেদনার সব কথা বলতে গেলে বলা যাবে অনেক কিছুই। আজ শুধু একটি বেদনার কথা বলব।

১৮ জুন শুক্রবার বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার তুলাছড়ি পাড়ার নওমুসলিম ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে গুলি করে শহীদ করে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা। তার পূর্বনাম ছিল পুর্নেন্দু ত্রিপুরা। ২০১৪ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত সপরিবারে ইসলামের অনুশীলন ও প্রসারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তার হাত ধরে ত্রিপুরা গোষ্ঠীর আরও ত্রিশটি পরিবার ইসলাম গ্রহণ করে। এসবই কী তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো? হিজরতের ১৪৪২ বছর পরের ওমর ফারুক অনেক অর্থেই দুর্গম অঞ্চলে একালের এ অঞ্চলের ফারুক তথা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরুপণকারী হয়ে উঠেছিলেন। নানান হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন দ্বীনের পথে। এ বিপদসঙ্কুল যাত্রায় তিনি রক্ত দিয়েই মশাল জ্বালিয়ে গেছেন।

শান্তিবাহিনী নামধারী অশান্তির হোতারা ধর্ম পরিবর্তনের কারণে হুমকি দিয়ে আসছিল ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে। এর আগেও তিনি ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন; কিন্তু তখন হুমকি ছিল না। কারণ, তখন তো পিতৃপুরুষের বৌদ্ধ ধর্ম ছেড়ে খ্রিস্টান হয়েছিলেন। কিন্তু যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন তখন সন্ত্রাসীরা আর সহ্য করতে পারল না। একদিন সন্ত্রাসীরা ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে প্রাণনাশের হুমকি দিল। জবাবে তিনি বললেন, ‘ধর্ম পরিবর্তন আমার অধিকার। ধর্ম বদল করে কোনো অন্যায় করিনি।’

এরপরও তারা হুমকি দিয়েই যেতে লাগল। তিনি জবাবে বললেন, ‘তোমরা কী করবে আমার। প্রাণ নিবে? নাও। আমি বুক পেতে দিলাম। গুলি করো। আমি শহীদ হয়ে যাব।’ ঈমানী এ চেতনার সামনে সন্ত্রাসীরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। ফিরে যায় সন্ত্রাসীরা।

ইসলাম গ্রহণের পর তিনি তাবলীগে সময় লাগান। সেখান থেকে ফিরে জোরেশোরে দাওয়াতের কাজ করতে থাকেন। নিজের এক একর জমি মসজিদের জন্য দান করেন। মসজিদ নির্মিত হল। তার সখ হল সুন্দর তিলাওয়াতের অধিকারী ভালো একজন ইমাম রাখার। কিন্তু এই দুর্গম এলাকায় এমন কাউকে পাওয়া গেল না।  তাই  নিজেই হলেন নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের ইমাম। তার ইচ্ছা হল, আহ! আল্লাহর নাম যদি পাহাড়ে গুঞ্জরিত হতো! দুর্গম পাহাড়ের প্রতিটি মানুষই যদি আল্লাহর নামে সিক্ত হতো! তাই তিনি ২০১৮ সালে স্বপ্রতিষ্ঠিত এই মসজিদে মাইক যুক্ত করেন। এই মাইক সন্ত্রাসীদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। নতুন করে আবার শুরু হয় প্রাণনাশের হুমকি। তিনি প্রায়ই কাছের মানুষদের বলতেন, ‘ওরা আমাকে খুন করবে।’ কয়েক বছরের ব্যবধানে ঘটলও তাই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

হে আল্লাহ! এ মসিবতে আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফীক দান করুন। আমাদেরকে উত্তম বদলা দিন। ওমর ফারুকের মতো আমাদেরও সাহস দিন।

ওমর ফারুক ত্রিপুরা রাহ.-এর বড় মেয়ে আমেনার বক্তব্য অনুযায়ী ১৮ জুন শুক্রবার রাতে অন্যান্য দিনের মতোই তিনি মসজিদে এশার নামায পড়েন। বাড়ি ফিরে চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। অন্যরা খাবার প্রস্তুত করছিল। এমন সময় বাইরে থেকে তার পূর্বের নাম ধরে কে যেন ডাক দিল।

তিনি এ ডাকের অর্থ বুঝে ফেলেছিলেন। কোনো উত্তর দিলেন না। জানালার ফাঁক গলিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে। অস্ত্র তাক করে ওমর ফরুকের দিকে। স্ত্রী ছুটে আসেন স্বামীকে বাঁচাতে। সন্ত্রাসীরা বুকে লাথি মেরে তাঁকে সরিয়ে দেয়। এরপর খুব কাছ থেকে মাথায় দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পান করেন শাহাদাতের অমিয় সুধা।

ওমর ফারুক ও তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করা পরিবারগুলো ছাড়া প্রতিবেশী সবাই খ্রিস্টান। উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে অকুস্থল। সেখানে বিদ্যুৎ নেই। তবে সোলার বাতি প্রতিটি ঘরে আছে। অন্যান্য দিন পাহাড়ের প্রতিটি বাড়ির বাইরে সোলারের বাল্ব জ্বলে। রহস্যজনক কারণে সেদিন কোনো বাড়ির বাইরে আলো জ্বলেনি। গুলির আওয়াজে প্রতিবেশী খ্রিস্টানরা কেউ এগিয়ে আসেনি। মুসলিম পরিবারগুলোর ঘর ছিল কিছুটা দূরে। হুমকি-ধমকির বিষয়টি তারা জানত। গুলির আওয়াজ শুনে তারা ধরে নিল, এবার আমাদের পালা। তাই তারা সপরিবারে জঙ্গলে পালিয়ে গেল। পেছনে পড়ে রইল ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে বসবাস করা এক নওমুসলিম অসহায় পরিবার। রাতভর নিঃসঙ্গ ও বিপদাপন্ন নারী ও শিশু লাশের পাশে বসে রইল। পরদিন পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এবং এ পর্যন্তই।

এরপর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিছু করেনি। নাকি কিছু করতে পারেনি। দ্বিতীয়টাই হয়েছে মনে হয়। কারণ, আজকাল সন্ত্রাসীদের হাতে সেনাসদস্য নিহত হলেও দেখা যায়, সরকার নীরবে সয়ে যায়। সেখানে একজন সাধারণ নাগরিক তো নস্যি।

ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে হত্যার পর কী ঘটল? সে উত্তর আরও হৃদয়বিদারক। সে উত্তর প্রতিটি মুমিনের অন্তরেই আরও রক্তক্ষরণ ঘটাবে। হত্যাকাণ্ডের পর তো মুসলিম পরিবারগুলো বন-বাদাড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। সেই যে গেল তারা আর ফিরে আসতে পারেনি। এখন তাদের ব্রাশ ফায়ার করে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে তাদের অমুসলিম আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমেই।

এ তো গেল বেদনাদায়ক সংবাদের সবচেয়ে সহজ সংবাদটি। বেদনায় নীল করে রাখা সংবাদটি হল, বেশ কয়েকটি নওমুসলিম পরিবার ইসলাম ত্যাগ করে পূর্বের ধর্মে ফিরে গেছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এত এত মুসলমানের ভিড়ে, এত এত... এমন সংবাদ শুনতে হয়। আহ! বেদনা কি মুসলিম জীবনে আজ এমনই রঙিন হয়ে আসে। কার কাছে অভিযোগ করব? কার কাছে প্রতিকার চাইব? রোয়াংছড়ি থানার ওসি সাহেবা তো এ হত্যাকাণ্ড খতিয়ে দেখছেন আজ ২২ দিন। কী জানি খতিয়ে দেখতে দেখতে কিয়ামত এসে যায় কি না। এদিকে কথার সুরে মনে হয় এ ঘটনাটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখতে পারলে আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট সবাই খুশি হয়! এই যদি হয় অবস্থা, তখন মানবতা, দেশ ও স্বাধীনতাবিরোধী এই বেপরোয়া অপশক্তিকে রুখবে কে?

নানা কারণে স্বদেশী মিডিয়াগুলো খুব কমই স্বজাতির কথা বলে। তাদের কাজ-কর্ম দেখলে বোঝা যায়, দূর থেকে কোনো শক্তি তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। অধিকাংশ মিডিয়াই এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারটি এড়িয়ে গেছে। যারা দিয়েছে তারাও দায়সারা গোছের সংবাদ দিয়েই ক্ষান্তি দিয়েছে এবং একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে। আর সুশীল পাড়ার কথা, সে তো পুরোনো কথাই। প্রভু এবং অন্নদাতাদের বিরাগভাজন হবে- এ দুঃসাহস তো তাদের কোনো কালেই ছিল না। এখানে তো বিষয়টি ইসলাম ও মুসলিম সংশ্লিষ্ট; সুতরাং এখানে মুখে কুলুপ এঁটে রাখারই প্রতিযোগিতা! করেছেও তাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল (২৫ জুন ২০২১) তাঁর ফেসবুক ভ্যারিফাইড পেইজে তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠন ও বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে লেখেন, ‘বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে গত শুক্রবার মোহাম্মদ ওমর ফারুক নামে একজন মসজিদের ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কয়েক বছর আগে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ওই এলাকায় একটি অস্থায়ী মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে এখন পর্যন্ত মানবাধিকার সংগঠন বা দেশের বহু বুদ্ধিজীবীকে কোনো রা করতে দেখিনি। এটা যদি অন্যভাবে হতো, যেমন, কেউ যদি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ পরার পর খুন হতেন তাহলে প্রতিক্রিয়াটি হতো ভিন্ন। যারা চুপ আছেন তারা তখন ঝাঁপিয়ে পড়তেন প্রতিবাদে। অপরাধীদের গ্রেফতার করার চেষ্টাও অনেক জোরদার হতো। মনে হচ্ছে, ওমর ফারুক মুসলমান হয়ে খুন হয়েছেন বলে সেটা হচ্ছে না। ইমাম হত্যাকাণ্ডের চেয়েও বড় সংকট এটিই। অন্য ধর্মের মানুষের মতো প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে মুসলমানরাও যে কোনো ধরনের বৈষম্য থেকে মুক্ত থাকার অধিকারী। এটা বুঝতে চান না অনেকে। মোহাম্মদ ওমর ফারুক হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

ওমর ফারুক রাহ.-এর হত্যাকাণ্ডের সংবাদ আমরা হয়তো সেভাবেই জানতাম যেভাবে এসব সংবাদ জানিয়ে থাকে মূলধারার গণমাধ্যম। কিন্তু ভাগ্যিস আমাদের একজন ডাক্তার ইউসুফ আলী ছিলেন। ওমর ফারুক রাহ.-এর মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে আজ অবধি এই লোকটিই তার সবটুকু সাধ্য নিয়ে সরব রয়েছেন। সামান্য কিছু মানুষ তার সঙ্গ দিচ্ছেন। এই সরবরতার মাশুলও তাকে দিতে হচ্ছে। সেই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা তার বিরুদ্ধে জঘন্য ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এত কিছুর পরও তিনি দাঁতে দাঁত চেপে সয়ে যাচ্ছেন। মন্দের জবাব ভালোর মাধ্যমে দিয়ে যাচ্ছেন। দাওয়াতের ময়দানে যে গুণের প্রয়োজন সেই গুণ ধারণ করেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। ডাক্তার সাহেবের বেদনাটা একটু বেশিই। কারণ, ওমর ফারুক ত্রিপুরা রাহ.-কে তিনি সপরিবারে বুকে টেনে নিয়েছিলেন। ইসলামের পথে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন। মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে সমাহিত করা পর্যন্ত যাবতীয় কাজের তদারকি করেছেন। আমাদের মধ্যে যখন এমন একজন ইউসুফ আলী আছেন তখন আমাদের করণীয় হল, তার হাতকে  শক্তিশালী করা। কারণ, এমন একজন ইউসুফ আলী পাওয়া কঠিনই বটে। মূসা আ.-এর হত্যা ষড়যন্ত্রের খবর জেনে ফেরআউনের দরবারে একজন বলে উঠেছিল-

اَتَقْتُلُوْنَ رَجُلًا اَنْ یَّقُوْلَ رَبِّیَ اللهُ .

তোমরা কি এমন একজনকে খুন করবে যে বলে, আমার প্রতিপালক হলেন আল্লাহ। -সূরা মুমিন (৪০) : ২৮

প্রতিকূল প্রতিবেশে ডাক্তার ইউসুফ আলীর কর্মতৎপরতা আমাকে কুরআনের এই আয়াতের কথাই মনে করিয়ে দেয়। হে আল্লাহ! তুমি তাকে আপন নিরাপত্তার চাদরে আবৃত রাখ। দ্বীনের এ নুসরতের পথে তাকে কামিয়াব কর।

বেদনার এই উপাখ্যান শেষ করব পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের জেলাসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজি মুজিবুর রহমানের বক্তব্য দিয়ে। যে বক্তব্যটি তিনি জানাযার পূর্বে দিয়েছিলেন, ‘ইহুদী-নাসারারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি ইহুদী-নাসারা রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। অনেকদিন আগ থেকেই এই মহাপরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থাগুলো ওভাবে এখানে কাজ করছে।...

ওমর ফারুকের একটি অপরাধ, সে খ্রিস্টান ধর্ম ছেড়ে কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ পড়ে মুসলমান হয়েছে। এটাই তার অপরাধ। আর কোনো অপরাধ নেই। এখানে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে বৌদ্ধ ধর্ম থেকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অভিযোগ আমাদের জানা আছে। তারা এর প্রতিকার চেয়ে সরকারসহ বিভিন্ন মহলে ধরনা দিচ্ছে। বৌদ্ধ থেকে খ্রিস্টান হলে সমস্যা নেই। মুসলমান হলেই সমস্যা। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই অংশ। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা আমাদের দেশ। এর সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের জন্য ফরয। পার্বত্য চট্টগ্রামের মুসলমানরা সংখ্যালঘু, তাই এখানকার মুসলমানদের এক জায়গায় থাকতে হবে। এটা পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের জিহাদ। এই জিহাদে আমরা শাহাদাতের তামান্না নিয়ে তাওহীদী কাফেলা নিয়ে নেমেছি। এখানকার মুসলমানদের নিয়ে বেঁচে থাকা, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করা, মসজিদ, মাদরাসা, এতীমখানা, হাফেজিয়া মাদরাসা, কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করা, কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া ঘরে ঘরে- এটাকে আমরা ফরয হিসাবে নিয়েছি। আমরা আপনাদের আহ্বান করব- আর কত আমাদের লাশ পড়বে? মুসলমানরা সংখ্যায় কম হলেও ঈমান নিয়েই প্রতিটা যুদ্ধেই জয়লাভ করেছিল, আমরা আমাদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে পারি না। আমরা আমাদের কালেমা থেকে সরে যেতে পারি না। তাওহীদ থেকে সরে যেতে পারি না।’

কাজী মুজিবুর রহমান সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন প্রতিটি মুসলমানেরই সে বক্তব্য। অস্ত্র যেখানে কথা বলে সেখানে এ কর্মপন্থা ও চেতনা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কথা হলো, এর বাস্তব রূপ কে দেবে? এর বাস্তব রূপ দেওয়ার দ্বায়িত্ত্ব তো সবার আগে শাসকবৃন্দের। শাসকশ্রেণিকে মহানবীর সে অমর বাণী মনে রাখতে হবে, ‘নেতৃস্থানীয়রা তার অধীস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’

প্রজা যত দূরের জনপদেরই হোক, যত সাধারণ নাগরিকই হোক সে যদি ন্যায়বিচার না পায় তাহলে সে সম্পর্কে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি কত কঠিন হবে সে কথা ভাবলে আমাদের জন্য মজলুমকে সহায়তা করা অনেক সহজ হবে। আল্লাহ আমাদেরকে শুভ-বুদ্ধি দান করুন- আমীন। হ

 

advertisement