একটি গরুতে একই ব্যক্তির কুরবানীর সাথে আকীকা বা ঈসালে সাওয়াবের অংশ রাখা
একটি দালীলিক পর্যালোচনা
বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
প্রশ্ন : আমরা জানি, এক ব্যক্তি একটি গরুতে নিজের ওয়াজিব কুরবানীর শরীক হওয়ার পাশাপাশি নিজের বা সন্তানের আকীকার অংশ বা পিতা-মাতার ঈসালে সওয়াবের জন্য ভিন্ন অংশ নিতে পারে। অথবা কেউ যদি পুরো একটি গরুই জবাই করে, তবে এর এক অংশে নিজের ওয়াজিব কুরবানীর নিয়ত করে, আর বাকি অংশে আকীকা এবং নিজের পিতা-মাতা, দাদা-দাদি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ঈসালে সওয়াবের নিয়ত করেÑ তবে তা সহীহ আছে। এর দ্বারা নিজের ওয়াজিব কুরবানী, আকীকা ও ঈসালে সওয়াবের নিয়তে নফল কুরবানী সবই আদায় হবে। সাধারণত মুফতী সাহেবগণ থেকে আমরা এরকম মাসআলাই শুনেছি এবং এটিকেই সঠিক জানি। কিন্তু আমাদের এদিকে কোনো কোনো আলেমকে বলতে শুনি, তারা বলেন যে, এভাবে একই পশুতে একজনের একাধিক নিয়তে অংশ নেওয়া সহীহ নয়। একজন যদি একটি পশুতে ওয়াজিব কুরবানী, আকীকা ও নফল কুরবানীর নিয়ত করে তবে সবগুলোই তার ওয়াজিব কুরবানী হিসেবে আদায় হবে। এর দ্বারা তার আকীকা ও নফল কুরবানী আদায় হবে না। তাদের কথা মতেÑ একটি গরুতে একাধিক ব্যক্তির জন্যই কেবল ভিন্ন ভিন্ন নিয়তে শরীক হওয়ার সুযোগ আছে। যারা এমনটি বলেন, তারা একটি উর্দু ফতোয়া গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। সেখানে নাকি এর দলীল-প্রমাণ রয়েছে।
এখন আমাদের জানার বিষয় হল, কোনো উর্দু ফাতাওয়াতে কি বাস্তবেই এমন কথা আছে? থেকে থাকলে তা কি সঠিক? এবং তাতে কি ফিকহের কোনো কিতাবের উদ্ধৃতি আছে? এই মাসআলায় আপনাদের কাছ থেকে দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা কামনা করছি। এ মাসআলা নিয়ে কোনো কোনো এলাকায় অনেক ঝামেলা হতে দেখা যায়। কিছু কিছু লোক এ নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি করে থাকেন। তাই বিস্তারিত দলীল-প্রমাণসহ এ মাসআলার সমাধান জানতে চাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা আপনাদের জাযায়ে খায়ের দান করুনÑ আমীন।
নিবেদক
আবুল ফযল
ফেনী
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على سيد الأنبياء والمرسلين، وعلى آله وأصحابه أجمعين، وعلى من تبعهم بإحسان إلى يوم الدين. أما بعد...
কুরবানীর বড় পশু অর্থাৎ উট, গরু বা মহিষে যেমনিভাবে সাত শরীকের অংশগ্রহণে সাতটি ওয়াজিব কুরবানী বা নফল কুরবানী বা আকীকা আদায় করা যায়, তেমনি এক ব্যক্তির জন্য একটি উট বা গরুতে কাউকে শরীক না করে নিজের ওয়াজিব কুরবানীর সাথে নফল কুরবানী, সন্তানের আকীকা, পিতা-মাতা বা অন্য কারো জন্য ঈসালে সওয়াবের নিয়তে পৃথক পৃথক অংশ রাখাও জায়েয। এর দ্বারা কুরবানী ও আকীকা সবই আদায় হয়ে যাবে। এটি মুজতাহিদ ইমাম ও ফকীহগণের নিকট একটি স্বীকৃত মাসআলা। প্রাচীন ফিকহ-ফতোয়ার কিতাবে সুস্পষ্টভাবেই মাসআলাটি লিপিবদ্ধ আছে। উপমহাদেশের ফকীহগণও স্পষ্টভাবেই তাদের ফাতাওয়ায় তা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু একটি উর্দু ফতোয়ার কিতাবে (যেমনটি প্রশ্নে ইঙ্গিত করা হয়েছে) সম্পূর্ণ বিপরীত ফতোয়া প্রদান করা হয়েছে। সেখানে খুব জোরালোভাবে দাবি করা হয়েছে যে, একটি উট গরুতে এক ব্যক্তি একটির বেশি কুরবানী বা একটির বেশি আকীকা, তদ্রƒপ কুরবানীর সাথে আকীকা বা ঈসালে সওয়াবের নিয়ত করতে পারবে না। যদি একাধিক কুরবানী বা আকীকার নিয়ত করা হয় তবুও একটি কুরবানীই বা একটি আকীকাই আদায় হবে। একাধিক কুরবানী বা কুরবানীর সাথে আকীকা আদায় হবে না। এ মর্মে উক্ত কিতাব থেকে দুটি প্রশ্নোত্তর উল্লেখ করা হল।
প্রশ্ন : ১. দুই ভাই মিলে একটি পশু কুরবানী করেছে। তিন অংশ এক ভাইয়ের আর তিন অংশ আরেক ভাইয়ের। আর এক অংশ নিজ পিতার জন্য রেখেছে। অর্ধেক মূল্য একজন পরিশোধ করেছে, অর্ধেক মূল্য অপরজন। পিতা-মাতার পক্ষ থেকে কি কুরবানী সহীহ হবে?
উত্তর : গরুর মালিক যতজন হয় এতে অংশও কেবল ততটাই হতে পারে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গরুর মালিক যেহেতু দু’জন তাই পুরো গরুতে অংশও কেবল দুটিই হবে। দুইয়ের অধিক অংশ হতেই পারে না। তাই পিতা-মাতার পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় হয়নি।
প্রশ্ন : ২. একটি গরুতে এক অংশ কুরবানীর আর বাকি ছয় অংশ আকীকার জন্য রাখা যাবে কি?
উত্তর : যে ব্যক্তির কুরবানীর অংশ আছে সে ঐ পশুতে আকীকার অংশ রাখতে পারবে না। যদি আকীকার অংশ রাখে তবে তার সকল অংশ মিলে একটি কুরবানীই আদায় হবে। আকীকা আদায় হবে না। হাঁ, অন্য ব্যক্তি আকীকার অংশ রাখতে পারবে। তাও এভাবে যে, একটি গরুতে এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কেবলমাত্র একটিই আকীকা হতে পারবে।
উক্ত উর্দু কিতাবে ‘এক গরুতে এক ব্যক্তির জন্য কুরবানীর সাথে ঈসালে সাওয়াব অথবা আকীকার অংশ রাখা’ শিরোনামে প্রশ্নোত্তরের আলোকে একটি পুস্তিকাও রয়েছে। তাতে যে দাবিগুলো করা হয়েছে তার সারসংক্ষেপ হলÑ
এক. একটি গরুতে এক ব্যক্তির জন্য একাধিক কুরবানী বা বিভিন্ন নুসুকের নিয়ত গ্রহণযোগ্য নয়। যদি নিয়ত করা হয় তবে একটি কুরবানীই আদায় হবে। কারণ এ সম্পর্কে হাদীস ও ফিকহে স্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।
দুই. ফিকহের অনেক কিতাবেই একটি পশুতে কুরবানী, দমে তামাত্তু, দমে কিরান, আকীকা ইত্যাদি জায়েয হওয়ার কথা একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু একটি পশুতে এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে একাধিক কুরবানী বা কুরবানীর সাথে আকীকা আদায় হওয়ার কথা উল্লেখ নেই। এ থেকে বুঝা যায় যে, এক ব্যক্তির একটি পশুতে একাধিক নিয়ত গ্রহণযোগ্য নয়।
তিন. ওয়াজিবের সাথে ওয়াজিব যুক্ত হতে পারে কিন্তু ওয়াজিবের সাথে নফল যুক্ত হতে পারে না।
নিজ যামানার সকল ফকীহ ও মুফতী ছাহেবানের বিপরীতে উক্ত ফতোয়া গ্রন্থটির সংকলক বুযুর্গ আলেম কর্তৃক এ মাসআলায় অদ্ভুত ও ভিন্ন মত প্রতিষ্ঠার পেছনে আমাদের জানামতে যেসকল মৌলিক কারণ ও ওজর স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হল১Ñ
১. তৎকালীন সময়ে (১৪০১ হি.) তাঁর কুতুবখানার ফিকহ-ফতোয়া ও হাদীস ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহের প্রাচীন কিতাবের স্বল্পতা। অন্যদিকে ফিক্হ-ফতোয়ার অমুদ্রিত প্রাচীন মাখতূত কিতাব (পাণ্ডুলিপি) বলতে গেলে ছিলই না।
২. মাবসূত সারাখসীর মত এ ধরনের মৌলিক কিতাবসমূহ, যা দীর্ঘদিন থেকেই মুদ্রিত হয়ে আছে, ফতোয়া লেখার সময় সেসব উৎস গ্রন্থাবলিকে নিয়মিত সামনে না রাখা এবং সেগুলোর শরণাপন্ন হওয়ার প্রতি গুরুত্ব না দেয়া।
৩. যেসকল কিতাবের উদ্ধৃতিতে ফতোয়াটি লেখা হয়েছে ঐসকল কিতাবের উৎস গ্রন্থ এবং সেগুলোরও যেসব উৎসমূল আছে, তাতে মাসআলা খুঁজে দেখার সুযোগ না পাওয়া। অথবা কোনো ওজরের কারণে এদিকটিতে মনোযোগ না দেয়া।
৪. কোনো মাসআলার আলোচনা না পাওয়াকে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি ঢালাওভাবে না জায়েয হওয়ার দলীল মনে করা। (যা আপত্তিজনক)
৫. কোনো বিষয় নিজে খুঁজে না পাওয়াকে ঐ বিষয়ের অস্তিত্বহীনতার দলীল বানিয়ে নেয়া। (এটিও আপত্তিকর)
৬. ভ্রমের শিকার হয়ে কখনওবা নিজের ধারণাকেই দলীল হিসেবে পেশ করে দেওয়া। (এটি আরো বেশি আপত্তিকর)
এই ওজরগুলোর কারণে এই বুযুর্গ আলেমকে অন্যান্য ফকীহগণের বিপরীতে ভিন্নমত পোষণের জন্য আমরা মাজুর মনে করি। কিন্তু বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম তাঁর অনুসরণকে সহীহ মনে করেন না।
উপরোক্ত কারণ ও ওজরগুলোরই ফলাফল হল, ‘এক ব্যক্তির জন্য একটি গরুতে একাধিক ওয়াজিব বা ওয়াজিবের সাথে নফলের নিয়তে অংশ রাখা জায়েয’ হওয়ার স্বপক্ষে ফিক্হ-ফতোয়ার পুরাতন উৎস গ্রন্থসমূহে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকা সত্ত্বেও এই বুযুর্গ আলেম দৃঢ়তার সাথেই বলছেন, হাদীস ও ফিকহের কিতাবের কোথাও এর উল্লেখ নেই! এবং এই কারণ ও ওজরগুলোরই ফলাফল হল, তিনি উক্ত কিতাবে এমন বক্তব্যগুলোকে নিজের দলীল আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যেগুলো বাস্তবে তার বিপক্ষের দলীল। কেননা এই বক্তব্যগুলোকে মূল উৎসগ্রন্থের সাথে মিলিয়ে সেখান থেকে পূর্বাপরসহ পুরো বক্তব্যটি তাঁর পড়ার সুযোগ হয়নি। উপরোক্ত কারণ ও ওজরগুলোর ফলাফল এ-ও যে, যথাযথভাবে প্রাচীন ফিক্হ-ফতোয়ার কিতাবে তথ্য তালাশ না করায় তাঁর এই ধারণা তৈরি হয়েছে যে, দুই ওয়াজিব কুরবানী একসাথে জমা হতে পারে; কিন্তু একই পশুতে এক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব কুরাবানীর সাথে নফল কুরবানী একত্রিত হতে পারে না। পরে তিনি নিজের এই ধারণাকেই স্বীকৃত মূলনীতি ও দলীল হিসেবে পেশ করে গেছেন। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ফতোয়ার কাজের সাথে সম্পৃক্ত নবীন আলেমগণ, যাদের কাছে কিতাবের বড় সংগ্রহও নেই, আবার রাসেখ ইলমসম্পন্ন মুফতীগণের দীর্ঘ সোহবত ওঠানোর সুযোগ হয়নি, তাদের অনেকে যেহেতু এক-দুটি সংক্ষিপ্ত উর্দু ফতোয়ার কিতাব দেখেই মাসআলা বলে দেন (অথচ কখনো এমন করা উচিত নয়), তাদের ইলমী সহযোগিতার খাতিরে এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর কিছুটা বিস্তারিত আকারে এই মাসআলা সম্পর্কিত শরয়ী উসূল ও দালায়েল এবং ফিক্হ-ফতোয়া ও হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহের কিছু উদ্ধৃতি উল্লেখ করে দেওয়াটা মুনাসিব ও সমীচীন মনে হচ্ছে।
ومن الله تعالى نرجو التوفيق والنفع والقبول.
কিতাবটিতে দাবি করা হয়েছে যে, এক ব্যক্তির জন্য একটি গরুতে একটির বেশি কুরবানীর নিয়ত করা যাবে না। যদি নিয়ত করা হয়, তবে একটি কুরবানীই আদায় হবে। কারণ এ ব্যাপারে হাদীস ও ফিকহের কিতাবে কোনো দলীল-প্রমাণ নেই।
বাস্তব কথা হল, এই দাবি আদৌ ঠিক নয়; বরং তা ভিত্তিহীন একটি দাবি। একটি গরুতে এক ব্যক্তির জন্য একাধিক কুরবানীর নিয়ত করা যায়Ñ তা হাদীস ও আসারের আলোকে প্রমাণিত একটি মাসআলা। হাদীস ও ফিকহের ইমামগণ থেকে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রমাণিত আছে। নিম্নে প্রথমে ঐসকল হাদীস উপস্থাপন করা হল, যার উপর ভিত্তি করে ইমামগণ এক ব্যক্তির জন্য একটি পশুতে একাধিক কুরবানী বা নুসুক আদায়ের কথা বলেছেন।
হাদীস : ১
সহীহ মুসলিমে এসেছে, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ
حَجَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَنَحَرْنَا الْبَعِيرَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ.
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজ্ব করেছি। তখন আমরা সাতজনের পক্ষ থেকে একটি উট কুরবানী করেছি এবং সাতজনের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছি। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩১৮
হাদীস : ২
عن ابن عباس أن النبي صلى الله عليه وسلم أتاه رجل فقال: إن علي بدنة وأنا موسر ولا أجدها فأشتريها، فأمره صلى الله عليه وسلم أن يبتاع سبع شياه فيذبحهن.
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, আমার ওপর একটি উট আবশ্যক হয়েছে। আমি স্বচ্ছল। কিন্তু ক্রয়ের জন্য উট খঁুজে পাচ্ছি না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সাতটি ছাগল ক্রয় করে জবাই করতে বললেন। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৮৩৯; শরহু মাআনিল আসার, তহাবী, বর্ণনা ৬২২১
হাদীস : ৩
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বায় আমর ইবনে আব্দিল্লাহ রাহ. হতে বর্ণিতÑ
أَنّ رَجُلاً نَذَرَ أَنْ يَنْحَرَ بَدَنَةً ، فَأَتَى عَبْدَ اللهِ بْنَ مُحَمّدِ بْنِ عَلِيٍّ، فَقَالَ : الْبُدْنُ مِنَ الإِبِلِ ، وَلاَ تُنْحَرُ إلاّ بِمَكَّةَ ، إلاّ إِنْ نَوَى مَنْحَرًا فَحَيْثُ نَوَى، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَسَبْعٌ مِنَ الْغَنَمِ، قَالَ : وَسَأَلْت سَالِمًا فَقَالَ مِثْلَ ذَلِكَ .قَالَ : وَسَأَلْت سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيّبِ، فَقَالَ : مِثْلَ ذَلِكَ، إلاّ إِنّهُ قَالَ : فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَعَشَرَةٌ مِنَ الْغَنَمِ، قَالَ : وَسَأَلْت خَارِجَةَ بْنَ زَيْدٍ وَأَخْبَرتهُ بِمَا قَالَ الْقَوْمُ، فَقَالَ : مَا أَدْرَكْت أَصْحَابَنَا يَعُدّونَهَا إلاّ سَبْعًا مِنَ الْغَنَمِ.
এক ব্যক্তি একটি বাদানা কুরবানী করার মান্নত করল। এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, বাদানা উটের প্রকার থেকে। আর তা মক্কায় জবাই করা হবে। তবে যদি নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় কুরবানী করার নিয়ত করে থাকে, সেখানেই করবে। আর যদি বাদানা না পাওয়া যায় তবে সাতটি ছাগল কুরবানী করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি সালেম রাহ.-কে মাসআলাটি জিজ্ঞাসা করলে তিনি এমনটিই বললেন। তিনি আরও বলেন, আমি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম; তিনি একই উত্তর দিলেন। তবে তিনি বললেন, যদি উট না পাওয়া যায় তবে দশটি ছাগল কুরবানী করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি খারিজা ইবনে যায়েদ রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম এবং এ সম্পর্কে অন্যরা কী বলেছেÑ তাও তাকে জানালাম। তিনি বললেন, আমি মাশায়েখদের দেখেছি, তারা একটি উটকে সাতটি ছাগলের সমমানের গণ্য করতেন। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, বর্ণনা ১২৭৭৯
হাদীস : ৪
শা‘বী রাহ. বলেনÑ
سَأَلْتُ ابْنَ عُمَرَ، قُلْتُ: الْجَزُورُ وَالْبَقَرَةُ تُجْزِئُ عَنْ سَبْعَةٍ؟ قَالَ: يَا شَعْبِيّ وَلَهَا سَبْعَةُ أَنْفُسٍ؟ قَالَ: قُلْتُ: إِنّ أَصْحَابَ مُحَمّدٍ يَزْعُمُونَ، أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ سَنّ الْجَزُورَ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، قَالَ: فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ لِرَجُلٍ: أَكَذَاكَ يَا فُلَانُ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: مَا شَعَرْتُ بِهَذَا.
আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, উট আর গরু কি সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা যায়? তিনি বললেন, হে শা‘বী এগুলোতে কি সাতটি প্রাণ আছে? তিনি বলেন, আমি বললাম, সাহাবীগণ তো বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি উট বা একটি গরু কুরবানী করতে বলেছেন। একথা শুনে তিনি এক ব্যক্তিকে বললেন, বিষয়টি কি তাই? লোকটি বলল, জী হাঁ! তখন তিনি বললেন, আমি এ সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৪৭৮
আরো দেখুন, ফাতহুল বারী ৩/৫৩৫
এবার দেখা যাক এ বিষয়ে হাদীস ব্যাখ্যাকার ইমামগণ কী বলেছেন :
এক. ইমাম বাগাবী রাহ. (৫১৬ হি.)
‘শরহুস সুন্নাহ’ কিতাবে সহীহ মুসলিমের উপরোক্ত হাদীস উল্লেখ করার পর তিনি বলেনÑ
ولو وجب على رجل سبع شياه هدايا في الحج، بأن تمتع، وحلق، ولبس، وتطيب، فذبح عن الكل بدنة، أو بقرة جاز.
কোনো ব্যক্তির ওপর যদি হজ্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সাতটি ছাগল ওয়াজিব হয় যেমন, তামাত্তুর দম, মাথা মুণ্ডনের কারণে জরিমানা দম, সেলাইকৃত পোশাক পরিধানের কারণে জরিমানা দম, সুগন্ধি ব্যবহারের কারণে জরিমানা দম। অতঃপর এ সবের জন্য একটি উট বা গরু জবাই করে তবে তা জায়েয আছে। Ñশরহুস সুন্নাহ, বাগাবী ৪/৩৫৬
দুই. ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.)
তিনি ‘শরহু মুসলিম’-এ জাবের রা.-এর হাদীস (উপরের হাদীস : ১) এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেনÑ
وفي هذه الأحاديث أن البدنة تجزئ عن سبعة، والبقرة عن سبعةـ وتقوم كل واحدة مقام سبع شياه، حتى لو كان على المحرم سبعة دماء بغير جزاء الصيد، وذبح عنها بدنة أو بقرة أجزأه عن الجميع.
এসকল হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, একটি উট এবং একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। আর প্রত্যেকটি উট, গরু সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত। তাই মুহরিম ব্যক্তির ওপর যদি শিকারের কারণে আরোপিত দম ব্যতীত সাতটি দম ওয়াজিব হয় এবং সে ঐ সাতটি দমের জন্য একটি উট বা গরু জবাই করে তাহলে সবগুলোর পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। Ñশরহু মুসলিম, নববী ৯/৬৭
ইমাম বাগাবী রাহ. ও ইমাম নববী রাহ. স্পষ্টই বলেছেন যে, এক ব্যক্তি একটি উট বা গরু দ্বারা সাতটি দম আদায় করতে পারবে, শিকারের জরিমানা দম ব্যতীত। শিকারের জরিমানা দমের ক্ষেত্রে শাফেয়ী রাহ. ভিন্নমত পোষণ করেন। এছাড়া একটি উট বা গরুতে এক ব্যক্তি এক থেকে নিয়ে (সর্বোচ্চ) সাতটি পর্যন্ত কুরবানী বা সাতটি দম আদায় করতে পারবে। তাঁরা জাবের রা.-এর হাদীস থেকেই এ মাসআলা প্রমাণ করেছেন। অথচ উক্ত হাদীস সাত শরীক সম্পর্কিত। তারা কারণ ব্যক্ত করেছেন এই বলে যে, উট ও গরু প্রত্যেকটি সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত। সুতরাং সাতটি ছাগল দ্বারা যেমনি করে সাত ব্যক্তি সাতটি কুরবানী আদায় করতে পারে তদ্রƒপ এক ব্যক্তিও একটি উট বা গরু দ্বারা সাত নিয়তে সাতটি কুরবানী আদায় করতে পারবে। জাবের রা.-এর হাদীসকেই তাঁরা এ মাসআলার মূল ভিত্তি সাব্যস্ত করেছেন। এখানে কুরবানীদাতা একজন, না সাতজনÑ তা লক্ষণীয় কোনো বিষয়ই নয়। ইমাম নববী রাহ. যে বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেছেন তার সুস্পষ্ট বর্ণনা তো মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, মুসনাদে আহমাদ ও শরহু মাআনিল আসারের উদ্ধৃতিতে উপরে উল্লেখ হয়েছে।
এ মাসআলায় হানাফী মাযহাবের ইমামদেরও কোনো দ্বিমত নেই। বরং শাফেয়ী মাযহাবের যে বক্তব্য, একই বক্তব্য আমাদের মাযহাবের ইমামদেরও। উপরন্তু ইমাম বাগাবী রাহ. ও ইমাম নববী রাহ.-এরও আগে ইমাম সারাখসী রাহ. তাঁর কিতাব ‘মাবসূত’-এ সুস্পষ্ট ভাষায় তা ব্যক্ত করেছেন। যা সামনে ‘ফিক্হ-ফতোয়ার উদ্ধৃতি’ শিরোনামের অধীনে উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ। শাফেয়ী মাযহাবের হলেও ইমাম বাগাবী ও ইমাম নববী রাহ. যেহেতু হাদীসের মুতাকাদ্দিমীন ব্যাখ্যাকারদের অন্তর্ভুক্ত তাই তাদের বক্তব্য আগে আনা হয়েছে।
তিন. ইমাম মাজদুদ্দীন ইবনে তাইমিয়া রাহ. (৬৫২ হি.)
তিনি মুনতাকাল আখবার-এ এসংক্রান্ত একটি অধ্যায় রচনা করেছেন। অধ্যায়ের শিরোনাম হলÑ
باب أن البدنة من الإبل والبقر عن سبع شياه وبالعكس
অধ্যায় : বাদানা উট-গরুর প্রকার থেকে। আর উট-গরু প্রত্যেকটি সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত। অনুরূপ বিপরীত দিক থেকেও (অর্থাৎ সাতটি ছাগলও একটি উট বা গরুর স্থলাভিষিক্ত)। [মুনতাকাল আখবার ৫/১১৯ (নাইলুল আওতার)]
শিরোনামটির অর্থ পরিষ্কার। সাতটি ছাগল দ্বারা যেমনি সাতটি কুরবানী আদায় করা যায় তেমনি সাতটি ছাগল কুরবানী না করে এর পরিবর্তে একটি উট বা গরু দ্বারাও সাতটি কুরবানী আদায় করা যায়। অনুরূপ একটি উট বা গরু দ্বারা সাতটি কুরবানী বা নুসুক আদায়ের নিয়ত করার পর উট বা গরু কুরবানী করার পরিবর্তে সাতটি ছাগলও কুরবানী করতে পারবে।
শিরোনামটিতে তিনি এক বা একাধিক ব্যক্তির উল্লেখই করেননি। বরং তিনি উট বা গরু কয়টি ছাগলের স্থলাভিষিক্তÑ তা ব্যক্ত করেছেন। যখন একটি উট বা গরু সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত প্রমাণিত হয়ে গেল তো এটা স্বাভাবিক বিষয় যে, সাতটি ছাগল দ্বারা যেমনি এক ব্যক্তি সাতটি কুরবানী আদায় করতে পারে, তেমনি একটি উট বা গরু দ্বারাও সাতটি কুরবানী আদায় করতে পারবে। শিরোনামটির অধীনে তিনি যে রেওয়ায়েতগুলো এনেছেন তার দিকে লক্ষ করলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে আসে।
শিরোনামটির দলীল হিসাবে তিনি সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমাদসহ একাধিক হাদীস গ্রন্থ থেকে পাঁচটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন। এখানে কেবল তিনটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হল :
ক.
عن ابن عباس أن النبي صلى الله عليه وسلم أتاه رجل فقال: إن علي بدنة وأنا موسر ولا أجدها فأشتريها، فأمره صلى الله عليه وسلم أن يبتاع سبع شياه فيذبحهن.
খ.
وعن جابر قال: أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نشترك في الإبل والبقر كل سبعة منا في بدنة. متفق عليه.
গ.
وعن حذيفة قال: شرك رسول الله صلى الله عليه وسلم في حجته بين المسلمين في البقرة عن سبعة. رواه أحمد.
উল্লিখিত তিনটি বর্ণনার মধ্যে প্রথম বর্ণনাটিতে এক ব্যক্তির ওপর একটি উট জবাই করা আবশ্যক হওয়ার পর তার পক্ষে উট ব্যবস্থা করা সম্ভব না হওয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এর পরিবর্তে সাতটি ছাগল জবাই করতে নির্দেশ করেছেন।
আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ণনা হল, সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি উট বা গরু কুরবানী করা সংক্রান্ত। উল্লিখিত তিনটি রেওয়ায়েত থেকে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, একটি উটের পরিবর্তে যেমনি সাতটি ছাগল কুরবানী করা যায় তদ্রƒপ সাতটি ছাগলের পরিবর্তেও একটি উট কুরবানী করা যাবে।
ফিক্হ-ফতোয়ার উদ্ধৃতি
মাবসূত, সারাখসী
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ‘ইমাম শামসুল আইম্মাহ সারাখসী রাহ.’ (মৃত্যু ৪৮৩ হি.) শরীকানা দম বা কুরবানী সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন যে, এক ব্যক্তি একটি উট দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন নিয়তে বিভিন্ন দম বা কুরবানী আদায় করতে পারবে। এতে আমাদের ইমামদের কারো কোনো দ্বিমত নেই।
এ মাসআলাটি ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রথমে তিনি শরীকানা কুরবানী বিষয়ক এমন একটি মাসআলা উল্লেখ করেন, যাতে ইমাম যুফার রাহ.-এর সাথে ইমাম আবু হানীফা রাহ., ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.-এর ইখতিলাফ রয়েছে। মাসআলাটি উল্লেখ করার পর তিনি ইমাম যুফার রাহ.-এর মত খণ্ডন করতে গিয়ে বলেনÑ
(قال): فأما إذا نووا القربة، ولكن اختلف جهات قصدهم فعلى قول زفر رحمه الله تعالى لا يجوز أيضا؛ لأن إراقة الدم لا يتبعض فلا تسع فيها الجهات المختلفة، ولكنا نقول قصد الكل التقرب فكانت الإراقة لله خالصا فلا يعتبر فيه اختلاف الجهات بعد ذلك، ألا ترى أن الواحد إذا وجبت عليه دماء من جهات مختلفة فنحر بدنة ينوي عن ذلك كله أجزأه فكذلك الشركاء.
‘সকল শরীক যদি আল্লাহ্র সন্তুষ্টির নিয়তে কুরবানী করে, কিন্তু তাদের নিয়ত থাকে বিভিন্ন প্রকারের (যেমন, ঈদুল আযহার কুরবানী, হজ্বের কুরবানী, জরিমানা দম ইত্যাদি) তাহলে ইমাম যুফার রাহ.-এর নিকট তা জায়েয হবে না। কারণ হল, জবাই যেহেতু একটিই হয় (ভিন্ন ভিন্ন হয় না), তাই এখানে বিভিন্ন প্রকারের নিয়ত হতে পারে না।
কিন্তু এর উত্তরে আমরা বলব, শরীকদের সকলেরই নিয়ত যেহেতু আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন, তাই জবাইটা একমাত্র আল্লাহ্র জন্যই নির্ধারিত। সুতরাং উক্ত উদ্দেশ্যের পর শরীকদের বিভিন্ন প্রকারের নিয়ত এক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না। আপনি কি লক্ষ করেননি ‘কোনো ব্যক্তি, যার ওপর বিভিন্ন ধরনের দম (পশু জবাই) আবশ্যক হয়েছে। সে যদি এ সবগুলোর জন্য একটি উট জবাই করে তাহলে একটি উট দ্বারা সবগুলো দম আদায় হয়ে যায়। অনুরূপভাবে শরীকরাও একটি উট বা গরুতে বিভিন্ন প্রকার কুরবানীর নিয়ত করলেও তা আদায় হবে।’ Ñমাবসূত সারাখসী, ৪/১৪৪
উপরোক্ত মাসআলাটি তিনি হজ্বের অধ্যায়েÑ
ساق بدنة لا ينوي بها الهدي.
Ñশিরোনামের অধীনে উল্লেখ করেছেন।
ইমাম সারাখসী রাহ.-এর উক্ত বক্তব্য আলোচিত মাসআলার ক্ষেত্রে এতটাই স্পষ্ট যে, তা আর ব্যাখ্যা করে বুঝানোর প্রয়োজন নেই। এতে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, এক ব্যক্তির জন্য একটি উট দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন নিয়তে একাধিক দম আদায় বা কুরবানী করা জায়েয এবং এর দ্বারা তার নিয়ত অনুযায়ী সবগুলো কুরবানীই আদায় হয়ে যাবে। এটি মাযহাবের ইমামদের সর্বসম্মত মত। এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। খোদ ইমাম যুফার রাহ.-এরও নয়।
ইমাম সারাখসী রাহ.-এর উপস্থাপন ভঙ্গি থেকে আরও যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে আসে তা হল, এ মাসআলাটি মাযহাবের স্বতঃসিদ্ধ ও স্বীকৃত এবং ‘মুত্তাফাক আলাইহি’ মাসআলা। মাযহাবের ইমামদের কারও এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই। ইমাম সারাখসী রাহ. এ মাসআলার মাধ্যমে ইমাম যুফার রাহ.-এর বক্তব্য খণ্ডন করে বলেছেন যে, আপনি তো এ মাসআলায় Ñঅর্থাৎ ‘এক ব্যক্তি একটি বড় পশুতে ভিন্ন ভিন্ন নিয়তে কুরবানী করা’Ñ সহমত পোষণ করেন; কিন্তু শরীকের মাসআলায় ভিন্নমত পোষণ করেন; এর কারণ কী? অথচ এ দুয়ের মাঝে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।
ইমাম সারাখসী রাহ.-এর ينوي عن ذلك كله বক্তব্য থেকে আরো যে বিষয়টি পরিষ্কার হয় তা হল, একটি বড় পশু অর্থাৎ উট বা গরুতে কুরবানীদাতা এক থেকে নিয়ে সাত পর্যন্ত قربة-এর (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনমূলক) যা নিয়ত করবে সে অনুযায়ী তার কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। পশুর মালিকের নিয়তটাই এখানে মূল বিষয়। এর বিপরীতে ফকীহগণ থেকে এমন কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না, যাতে বলা হয়েছে যে, এক ব্যক্তি একাধিক নিয়ত করলেও নিয়ত ধর্তব্য হবে না। সুতরাং উক্ত উর্দু ফাতাওয়ায় যে দাবি করা হয়েছেÑ ‘হাদীস ও ফিকহে এর কোনোই দলীল-প্রমাণ নেই’Ñ তা যে সম্পূর্ণ খণ্ডিত মুতালাআ ও অনুমাননির্ভর কথাÑ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইমাম সারাখসী রাহ. (৪৮৩ হি.) মাজদুদ্দীন ইবনে তাইমিয়া রাহ., ইমাম বাগাবী রাহ. ও নববী রাহ.-এরও আগের মানুষ এবং হানাফী মাযহাবের গোড়ার দিকের ইমাম। যার আলমাবসূত কিতাবটি পরবর্তী ফিকহী কিতাবগুলোর مرجع তথা ভিত্তিও বটে। এ মাসআলা অন্যদের আগেই তিনি আলোচনা করেছেন। মূলত এ মাসআলার ইশারা তো জাহিরুর রিওয়ায়েত থেকেই পাওয়া যায়। যেমন ইমাম হাকেম শহীদ রাহ.-এর ‘কাফী’, যা মূলত ‘কিতাবুল আছল’-এর মুখাতাসার। তাতে উল্লেখ হয়েছেÑ
وإذا بلغ الصيد جزورا فهو أحب إلي من أن يشتري بقيمته أغناما و إن اشترى أغناما و ذبحها و تصدق بها أجزأه.
যখন ইহরাম অবস্থায় শিকার করা প্রাণীর মূল্য উট পর্যন্ত পেঁৗছে যায় তখন আমার নিকট (সাতটি) ছাগল ক্রয় করার পরিবর্তে একটি উট ক্রয় করা উত্তম। আর যদি (সাতটি) ছাগল ক্রয় করে এবং তা জবাই করে সদকা করে দেয় তবে তাতেও হয়ে যাবে। [আলকাফী, হাকেম শহীদ রাহ., পৃ ৪৯ (মাখতুত)]
একটি উটের পরিবর্তে যখন সাতটি ছাগল দেয়া যায় তাহলে এটা সহজেই অনুমেয় যে সাতটি ছাগল ওয়াজিব হলে একটি উট বা গরুও কুরবানী করা যাবে। এ দুয়ের মাঝে কোনোই পার্থক্য নেই।
ومن ادعى الفرق فعليه البرهان.
উদ্দাতুল মুফতী (عدة المفتي), ইমাম সদরুশ শহীদ রাহ. (৫৩৬ হি.)
ইমাম সদরুশ শহীদ রাহ. হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ও ইমাম। ফিকহে হানাফীর ওপর তার সুপ্রসিদ্ধ বহু রচনা আছে। যেমন শরহুল জামিইস সগীর, শরহু আদাবিল কাযী লিল খাসসাফ, উমদাতুল ফাতাওয়া প্রভৃতি। তাঁর আরেকটি কিতাব হল ‘উদ্দাতুল মুফতী’। যার আলোচনা বিনায়া শরহুল হিদায়াতে, হাশিয়াতুশ শিলবীতে এবং আলবাহরুর রায়েক প্রভৃতি কিতাবে রয়েছে। কিতাবটি প্রকাশিত নয়; বরং তা পাণ্ডুলিপি আকারে বিভিন্ন মাকতাবায় সংরক্ষিত আছে। আমরা এখানে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ‘ফয়যুল্লাহ আফেন্দীর’ নুসখা থেকে আলোচ্য বিষয়ের সুস্পষ্ট একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করছি। ইমাম সদরুশ শহীদ রাহ. ‘উদ্দাতুল মুফতী’-এর কিতাবুল উযহিয়্যাহ্য় বলেনÑ
رجل وجب عليه جزاء الصيد ودم الكفارة و دم الإحصار ودم المتعة ودم القران والأضحية فنحر جزورا أو ذبح بقرة بنية الكل جاز والله أعلم.
এক ব্যক্তির উপর (ইহরাম অবস্থায় শিকারের কারণে) শিকারের দম, কাফফারার দম, ইহসারের দম, তামাত্তুর দম, কিরানের দম এবং কুরবানী আবশ্যক হয়েছে। এ সবগুলোর জন্য নিয়ত করে সে একটি উট বা গরু জবাই করেছে, তা জায়েয আছে। আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত। [উদ্দাতুল মুফতী, পৃষ্ঠা ২৮ (মাখতুত)]
ইমাম সদরুশ শহীদ রাহ.-এর বক্তব্য মাবসূতের বক্তব্য থেকেও পরিষ্কার। এখানে তিনি প্রত্যেকটা দম ও নুসুকের পৃথক পৃথক নামও স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন এবং উযহিয়্যাহ অর্থাৎ দশ যিলহজ্বের কুরবানীর কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। সদরুশ শহীদ রাহ. পরিষ্কার ভাষায়ই বলেছেন যে, এক ব্যক্তির একটি উটে কুরবানীসহ বিভিন্ন ধরনের দমের নিয়ত করা যায় এবং এর দ্বারা সবগুলো কুরবানী ও দম আদায় হয়ে যায়। পশুর মালিকের নিয়তই মূল বিষয়। সদরুশ শহীদ রাহ.-এর উপরোক্ত বক্তব্য থেকেও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, ‘একটি পশুতে এক ব্যক্তির জন্য একের অধিক নিয়ত গ্রহণযোগ্য হবে না’Ñ এ ধরনের কথা ঠিক নয়।
খিযানাতুল মুফতীন
হিজরী অষ্টম শতাব্দীর বিখ্যাত ফকীহ হুসাইন ইবনে মুহাম্মাদ সামানকানী রাহ.। তার রচিত কিতাব ‘খিযানাতুল মুফতীন’। ফিকহে হানাফীর নির্ভরযোগ্য কিতাব। পরবতীর্ প্রায় সকল কিতাবেই খিযানাতুল মুফতীনের হাওয়ালা পাওয়া যায়। আল্লামা শামী রাহ. তো ব্যাপকভাবে কিতাবটি থেকে মাসআলা উল্লেখ করতে থাকেন। এ কিতাবটিও মুদ্রিত নয়। তবে এর পাণ্ডুলিপি বিভিন্ন মাকতাবায় সংরক্ষিত আছে। কিতাবটিতে কুরবানীর অধ্যায়ে লেখা হয়েছেÑ
ولو نذر بشاة يجزئه البقر والشاة أفضل من سبع البقرة إن استويا في اللحم والقيمة والبقرة أفضل من ست شياه إذا استويا وإذا وجب سبع شياه فهي أفضل من البقرة و إن ضحى البقرة عنها جاز،والشاة السمينة جدا أفضل من شاتين وإن ساوتا في القيمة
যদি কোনো ব্যক্তি একটি ছাগল কুরবানীর মান্নত করে তবে একটি গরু কুরবানী করাও যথেষ্ট হবে। আর একটি ছাগল একটি গরুর সপ্তমাংশ হতে উত্তম, যদি উভয়টি গোশত ও মূল্যের দিক থেকে সমান হয়। আর একটি গরু ছয়টি ছাগল হতে উত্তম, যদি উভয়টি গোশত ও মূল্যের দিক থেকে সমান হয়। আর যখন সাতটি ছাগল ওয়াজিব হবে তখন একটি গরু কুরবানী করার চেয়ে সাতটি ছাগল কুরবানী করা উত্তম; অবশ্য যদি এর পরিবর্তে কেউ একটি গরু কুরবানী করে তবে তাও জায়েয হবে। আর একটি হৃষ্টপুষ্ট ছাগল দুটি ছাগল হতে উত্তম হবে, যদি উভয়টির মূল্য বরাবর হয়’। Ñখিযানাতুল মুফতীন, পৃষ্ঠা ৫৯০ (মাখতূত)
খিযানাতুল মুফতীনের আলোচনা থেকেও প্রমাণিত যে, একজন ব্যক্তি একটি উট বা গরুতে সাত নিয়তে সাতটি কুরবানী বা অন্য যে কোনো দম আদায় করতে পারবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
এক ব্যক্তি একটি উট বা গরুতে যে একাধিক অংশ রাখতে পারে এবং এর দ্বারা প্রতিটি অংশের ভিন্ন ভিন্ন কুরবানী আদায় হতে পারে তার আরেকটি নযীর হল, কুরবানীর পশু কেনার পর তাতে শরীক নেয়ার বিশেষ একটি মাসআলা।
মাসআলাটি হল, কোনো ব্যক্তি একটি গরু ক্রয় করেছেÑ তা দ্বারা সে নিজের ওয়াজিব কুরবানী আদায় করবে। কিন্তু পরবর্তীতে সে তাতে ছয়জন শরীক নেয়। এক্ষেত্রে মাসআলা হল, নিজে কুরবানী করার নিয়তে গরু কেনার পর ঐ গরুতে শরীক নেয়া ঠিক নয়। তথাপি শরীক নিলেও তার ঐ এক অংশ দ্বারা ওয়াজিব কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু সে কেনার সময় পুরো গরু দ্বারা নিজে কুরবানী করার নিয়ত করেছিল তাই তাকে কি বাকি ছয় অংশের কুরবানী করতে হবে? কারণ একটি গরু তো সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত।
এ ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম খাহার যাদাহ রাহ. বলখের মাশায়েখের বরাতে উল্লেখ করেছেন যে, এক্ষেত্রে এ ব্যক্তি অন্য কারো সাথে মিলে প্রথমটির মূল্যমান অনুযায়ী একটি গরু ক্রয় করবে এবং এতে সে ছয় ভাগ নেবে এবং ঐ গরু কুরবানী করবে। অথবা ছয়টি ছাগল ক্রয় করবে এবং কুরবানী করবে।
এ সম্পর্কিত আলমুহীতুল বুরহানীর বক্তব্য লক্ষ করুনÑ
وإذا اشترى الرجل بقرة أو بعيراً يريد أن يضحي بها عن نفسه، ثم أشرك فيها ستة بعد ذلك، القياس: أن لا يجزئهم، ويصير الكل لحماً، وفي الاستحسان: يجزئهم؛ لأن البقرة قائمة مقام سبع شياه، وكذلك البدنة فصار شراؤها بنية الأضحية كشراء سبع شياه، ومن اشترى سبع شياه بنية الأضحية، ثم باع ستاً منها، وضحى بالسابعة، وضحى المشترون بالست جاز عن الكل؛ كذا ههنا، فإذا جاز عنه، وعن شركائه هل يلزمه الذبح بستة الأسباع التي باعها ما بقي الوقت، والتصدق بقيمتها بعد فوات الوقت؟ لم يذكر هذا الفصل في الكتاب .
قال شيخ الإسلام المعروف بخواهر زاده: حكي عن مشايخ بلخ أنهم قالوا: عليه الذبح بستة أسباع بقرة مثل الأولى في القيمة يشتري مع غيره، فيذبح أو يشتري ست شياه، ويذبح إن كانت قيمته ست أسباع البقرة غنياً كان أو فقيراً، وهذا لما ذكر بأن شراء البقرة بمنزلة شراء سبع شياه.
Ñআল মুহীতুল বুুরহানী ৮/৪৭৭
মুহীতের বক্তব্যÑ
عليه الذبح بستة أسباع بقرة مثل الأولى في القيمة يشتري مع غيره، فيذبح أو يشتري ست شياه ويذبح.
‘এ ব্যক্তির উপর কর্তব্য হল, প্রথম গরুর মূল্যমান অনুযায়ী একটি গরু অন্যের সাথে মিলে ক্রয় করা অতঃপর তাতে ছয় ভাগ নিয়ে জবাই করা। অথবা ছয়টি ছাগল ক্রয় করে জবাই করা।’
এবং শেষোক্ত কথা أن شراء البقرة بمنزلة شراء سبع شياه. (একটি গরু ক্রয় করা মানে সাতটি ছাগল ক্রয় করা) এক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে। এতে তিনি ঐ ব্যক্তির জন্য একটি গরুতে ছয়টি অংশ রাখার কথা বলেছেন। আবার তার এ সুযোগও রয়েছে যে, সে গরুর ছয় অংশের মূল্যমানের ছয়টি ছাগল ক্রয় করে জবাই করবে। শাইখুল ইসলাম খাহার যাদাহ রাহ.-এর মতে এত বড় ফকীহ তিনি একটি গরুতে এক ব্যক্তির জন্য ছয়টি অংশ রাখার কথা মাশায়েখে বলখ থেকে উদ্ধৃত করছেন। অতঃপর ছাহেবে মুহীত বুরহানুদ্দীন ইবনে মাযাহ রাহ. এ মাসআলার ইল্লত তথা কারণ ব্যক্ত করছেন এই বলে যে, একটি গরু ক্রয় করা সাতটি ছাগল ক্রয়তুল্য। এত স্পষ্ট ও যুক্তিযুক্ত বক্তব্য থাকার পরও একথা বলা যে, ‘এক ব্যক্তির জন্য একটি পশুতে একাধিক নিয়ত গ্রহণযোগ্য নয়’ এবং ‘ফিক্হ-ফতোয়ার কিতাবে এর কোনোই প্রমাণ নেই’Ñ সম্পূর্ণ বাতিল কথা। (আরও দ্রষ্টব্য: আল বিনায়া, আইনী ১৪/৩৫৯)
এ মাসআলা অর্থাৎ সাতটি ছাগলের পরিবর্তে একটি গরু বা উট কুরবানী করা জায়েয শুধু হানাফী মাযহাবেই আলোচিত হয়েছে তা নয়; বরং অন্যান্য মাযহাবেও সুস্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে। যেমনÑ
হাম্বলী মাযহাব
হাম্বলী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ইমাম ইবনে কুদামা রাহ. ‘আলকাফী ফী ফিকহিল ইমাম আহমাদ’ গ্রন্থে লেখেনÑ
ومن وجب عليه بدنة بنذر، أو قتل نعامة، أو وطء أجزأه بسبع من الغنم؛ لأنها معدولة بسبع... فأما من وجب عليه سبع من الغنم، فإنه يجزئه بدنة، أو بقرة؛ لأنها تجزئ عن سبع في حق سبعة، ففي حق واحد أولى
فصل: ومن وجبت عليه بقرة، أجزأته بدنة: لأنها أكثر لحما وأوفر. ويجزئه سبع من الغنم؛ لأنها تجزئ عن البدنة، فعن البقرة أولى.
যে ব্যক্তির ওপর মান্নতের কারণে বা পাখি হত্যার কারণে অথবা স্ত্রী সহবাসের কারণে একটি উট কুরবানী করা আবশ্যক হয় তার জন্য এর পরিবর্তে সাতটি ছাগল কুরবানী করাও যথেষ্ট হবে। কেননা একটি উট সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত।... পক্ষান্তরে যার ওপর সাতটি ছাগল আবশ্যক হয় তার জন্য একটি উট বা গরু কুরবানী করাও যথেষ্ট হবে। কারণ উট বা গরু যখন সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সাতটি দম আদায়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট হয় তাহলে এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে যথেষ্ট হওয়াটা অধিক যুক্তিযুক্তÑ তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। (আলকাফী ফী ফিকহিল ইমাম আহমাদ, ইবনে কুদামা ১/৫৪২-৫৪৩)
হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ বহু কিতাবেই এ মাসআলা আলোচিত হয়েছে।
শাফেয়ী মাযহাব
শাফেয়ী মাযহাবে এ মাসআলাটি একাধিক কিতাবে সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ হয়েছে। ইমাম নববী রাহ. আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাবে লেখেনÑ
ويجوز أن ينحر الواحد بدنة أو بقرة عن سبع شياه لزمته بأسباب مختلفة كتمتع وقران وفوات ومباشرة ومحظورات في الإحرام ونذر التصدق بشاة مذبوحة والتضحية بشاة.
যে ব্যক্তির উপর বিভিন্ন কারণে সাতটি ছাগল ওয়াজিব হয়েছিল, তার জন্য সাতটি ছাগলের পরিবর্তে একটি উট বা গরু কুরবানী করা জায়েয আছে। যেমন তামাত্তুর দম, কিরানের দম, হজ¦ ছুটে যাওয়ার কারণে দম, স্ত্রী সহবাসের কারণে, ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ করার কারণে, ছাগল জবাই করে তা সদকা করে দেয়ার মান্নতরে কারণে, ছাগল দ্বারা কুরবানী করার মান্নতের কারণে। Ñআলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৮/৩৭০
খতীব শিরবীনী রাহ. এ কথাটি আরো স্পষ্টভাবে ‘মুগনিল মুহতাজ’-এ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনÑ
تنبيه: لا يختص إجزاء البعير والبقرة عن سبعة بالتضحية، بل لو لزمت شخصا سبع شياه بأسباب مختلفة كالتمتع والقران والفوات ومباشرة محظورات الإحرام جاز عن ذلك بعير أو بقرة.
‘বিশেষভাবে লক্ষণীয় : একটি উট এবং একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হওয়াÑ এটা কেবল কুরবানীর সাথে সীমাবদ্ধ নয়; বরং কোনো ব্যক্তির ওপর যদি বিভিন্ন কারণে সাতটি ছাগল আবশ্যক হয়, যেমন তামাত্তু, কিরান, হজ্বের ইহরাম করার পর হজ্ব ছুটে যাওয়া, ইহরাম-পরিপন্থী কাজ করাÑ এসবের পরিবর্তে একটি উট বা গরু জবাই করাও জায়েয। Ñমুগনিল মুহতাজ ৪/৩৫৯
উপরোক্ত হাদীস ও ফিক্হবিদগণের বক্তব্যের আলোকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল, যেমনিভাবে একটি উট বা গরু দ্বারা সাত শরীকের সাতটি কুরবানী আদায় করা যায় তেমনি এক ব্যক্তিরও একটি উট বা গরু দ্বারা এক থেকে নিয়ে সাতটি পর্যন্ত কুরবানী আদায় করা জায়েয। এতে মাযহাবের ইমামদের কোনোও দ্বিমত নেই। মূল বিষয় হল, কুরবানীদাতার নিয়ত। সে যে নিয়ত করবে, সে অনুযায়ী আদায় হবে।
একটি উট বা গরুতে ওয়াজিব কুরবানীর সাথে নফল কুরবানী, আকীকা, ঈসালে সওয়াবের অংশ রাখা
আলআজনাস, নাতিফী
পঞ্চম শতাব্দীর বিখ্যাত ফকীহ ইমাম আবুল আব্বাস নাতিফী রাহ. (৪৪৬ হি.) একটি গরুতে নিজের ওয়াজিব কুরবানীর সাথে নফল অংশ রাখা যায়Ñ তা সুস্পষ্টভাবেই ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেনÑ
فإذا اشترى رجل أضحيته ثم أشرك فيها ستة أجزأت عنهم وصار كأنه أوجب سبعها و ستة أسباعها يتطوع به.
যখন এক ব্যক্তি তার কুরবানীর পশু ক্রয় করে অতঃপর এতে ছয় ব্যক্তিকে শরীক করে সেক্ষেত্রে সকলের কুরবানী আদায় হয়ে যায়। এটি যেন এমন যে, কোনও ব্যক্তি একটি গরু ক্রয় করে তার এক সপ্তমাংশ দ্বারা ওয়াজিব কুরবানী আদায়ের নিয়ত করেছে আর বাকি ছয় ভাগ দ্বারা নফল আদায়ের নিয়ত করেছে। Ñআল আজনাস, নাতিফী ১/৫২০
নাতিফী রাহ.-এর বক্তব্যÑ
وصار كأنه أوجب سبعها و ستة أسباعها يتطوع به.
(এটি যেন এমন যে, কোনও ব্যক্তি একটি গরুতে এক সপ্তমাংশ দ্বারা ওয়াজিব কুরবানী আদায়ের নিয়ত করেছে আর বাকি ছয় ভাগ দ্বারা নফল আদায়ের নিয়ত করেছে।) একদমই পরিষ্কার। এতে স্পষ্ট ভাষায়ই বলা হয়েছে যে, এক ব্যক্তির জন্য (একটি উট বা গরুতে) ওয়াজিব কুরবানীর সাথে নফল কুরবানীর নিয়ত করা যায় এবং এর দ্বারা ওয়াজিব নফল সবই আদায় হয়ে যায়।
নাতিফী রাহ.-এর উপস্থাপনভঙ্গি থেকেও সহজে বুুঝে আসে, এ মাসআলাও ফিক্হবিদগণের নিকট এতটাই স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত যে, তাঁরা তা পৃথক কোনো শিরোনামে বা পৃথকভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজনই বোধ করেননি। যেমনটি এখানেই দেখা গেল। নাতিফী রাহ. ওয়াজিবের সাথে নফল অংশ রাখার মাসআলাটি প্রসঙ্গক্রমে অন্য মাসআলার নযীর হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
আর যখন ওয়াজিবের সাথে নফল অংশ রাখা প্রমাণিত হয়ে গেল তাহলে ওয়াজিব কুরবানীর সাথে আকীকার অংশ রাখা জায়েযÑ তাও আবশ্যিকভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল। কেননা আকীকাও এক প্রকার কুরবানী। হাদীস শরীফে আকীকার উপর ‘নুসুক’ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। যেমন নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত মুসনাদে আহমাদের একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছেÑ একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনÑ
مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَنْسُكَ عَنْ وَلَدِهِ، فَلْيَنْسُكْ عَنْهُ عَنِ الْغُلَامِ شَاتَانِ مُكَافَأَتَانِ، وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ.
যে ব্যক্তি তার সন্তানের পক্ষ থেকে নুসুক আদায় করতে চায় সে যেন তা করে। ছেলের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৭১৩
আর এখানে নুসুক অর্থ কুরবানী। সুতরাং আকীকা যখন এক প্রকারের কুরবানী, তাই যেমনিভাবে একাধিক কুরবানী পৃথক পৃথক পশু দ্বারা আদায় করা যায় আবার তা একটি উট বা গরু দ্বারাও আদায় করা যায়, তেমনি আকীকাও পৃথক পৃথক পশু দ্বারা আদায় করা যাবে আবার একটি উট বা গরু দ্বারাও আদায় করা যাবে।
সুতরাং একথা বলার কোনোই সুযোগ নেই যে, এক পশুতে একই ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব কুরবানীর সাথে আকীকা বা ঈসালে সওয়াবের অংশ রাখা যাবে না।
(এ সম্পর্কে জানার জন্য আরও দেখুন : মাসিক আলকাউসার, জানুয়ারি ২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘দুটি প্রশ্ন ও তার উত্তর : ইয়াওমে আরাফার রোযা ও কুরবানীর সাথে আকীকা’ শিরোনামে মাওলানা যাকারিয়া আব্দুল্লাহ ছাহেবের প্রবন্ধটি)
আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর
আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ. (৯৭০ হি.) সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর-এ আলোচনা করেছেন। তিনি তাতে প্রমাণ করেছেন যে, এক ব্যক্তির জন্য একটি গরুতে ওয়াজিব অংশের সাথে নফলের নিয়ত করা যাবে এবং তার নিয়ত অনুযায়ী তা আদায় হবে। আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর-এ الفن الثالث: الجمع و الفرق -এর অধীনে الفروق অধ্যায়ে তিনি বলেনÑ
قاعدة: إذا أتى بالواجب وزاد عليه هل يقع الكل واجبا أم لا؟
قال أصحابنا رحمهم الله تعالى: لو قرأ القرآن كله في الصلاة وقع فرضا ولو أطال الركوع والسجود فيها وقع فرضا. واختلفوا فيما إذا مسح جميع رأسه. فقيل: يقع الكل فرضا، والمعتمد وقوع الربع فرضا والباقي سنة، واختلفوا في تكرار الغسل. فقيل: يقع الكل فرضا، والمعتمد أن الأولى فرض والثانية مع الثالثة سنة مؤكدة. ولم أر الآن ما إذا أخرج بعيرا عن خمسة من الإبل. هل يقع فرضا أو خُمُسَه
وأما إذا نذر ذبح شاة فذبح بدنة، ولعل فائدته في النية: هل ينوي في الكل الوجوب أو لا؟ وفي الثواب هل يثاب على الكل ثواب الواجب أو ثواب النفل فيما زاد؟
...ثم رأيتهم قالوا في الأضحية كما ذكره ابن وهبان معزيا إلى الخلاصة: الغني إذا ضحى بشاتين وقعت واحدة منهما فرضا والأخرى تطوع؛ وقيل الأخرى لحما (انتهى)
যখন কোনো ব্যক্তি ওয়াজিব (পরিমাণ) আদায় করল এবং সাথে আরও অতিরিক্ত আদায় করল সেক্ষেত্রে পুরোটাই কি ওয়াজিব হিসাবে আদায় হবে, নাকি আদায় হবে না?
আমাদের ফকীহগণ বলেন, যদি কেউ নামাযে পুরো কুরআন মাজীদ পাঠ করে তাহলে পুরোটাই ফরয হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি রুকু-সিজদা (ফরয পরিমাণের চেয়ে) দীর্ঘ করে তবে রুকু-সিজদা পুরোটাই ফরয হিসাবে আদায় হবে। আর ফুকাহায়ে কেরাম দ্বিমত পোষণ করেন, যখন কোনো ব্যক্তি পুরো মাথা মাসেহ করে নেয়। কেউ বলেছেন পুরোটাই ফরয হবে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য মত হল, মাথার চার ভাগের এক ভাগ ফরয হিসাবে আদায় হবে আর বাকিটা সুন্নত হবে। অনুরূপ তারা দ্বিমত পোষণ করেন অযুর অঙ্গ তিনবার ধোয়ার ক্ষেত্রেও। কেউ বলেন, পুরোটাই ফরয হবে; কিন্তু নির্ভরযোগ্য কথা হল, প্রথম বারের ধোয়া ফরয হিসাবে আদায় হবে আর দ্বিতীয়-তৃতীয় বার ধোয়া সুন্নাতে মুআক্কাদা হবে।
(ইবনে নুজাইম রাহ. বলেন,) আমি এখনও পর্যন্ত কিতাবে পাইনি যে, কোনো ব্যক্তি যখন পাঁচটি উটের যাকাত হিসাবে একটি উট আদায় করবে তখন কি পুরোটাই ফরয গণ্য হবে, নাকি তার এক পঞ্চমাংশ ফরয হিসাবে গণ্য হবে।
আর (এটিও পাইনি), যে ব্যক্তি একটি ছাগল জবাই করার মান্নত করল অতঃপর সে একটি উট জবাই করল (পুরোটা কি ওয়াজিব হিসাবে আদায় হবে, নাকি এক সপ্তমাংশ)। (তিনি বলেন,) সম্ভবত ওয়াজিবের অতিরিক্ত জবাই করার ফায়েদা প্রকাশ পাবে নিয়তের ক্ষেত্রে। সে কি পুরোটার মধ্যে ওয়াজিবের নিয়ত করবে, নাকি করবে না। অনুরূপ সাওয়াবের ক্ষেত্রেও উক্ত বিশ্লেষণ কার্যকর হবে। (অর্থাৎ পুরোটার মধ্যে কি ওয়াজিবের সাওয়াব প্রাপ্ত হবে, নাকি ওয়াজিবের অতিরিক্ত অংশে নফলের সাওয়াব প্রাপ্ত হবে)?... অতঃপর ফকীহগণকে দেখতে পেলাম, তারা কুরবানীর ক্ষেত্রে বলেছেন, ধনী ব্যক্তি যখন দুটি ছাগল কুরবানী করবে সেক্ষেত্রে একটি ওয়াজিব হিসাবে আদায় হবে অপরটি নফল হিসাবে আদায় হবে। আর কেউ বলেছেন দ্বিতীয়টি কুরবানী হবে না; বরং গোশতের জন্য সাধারণ জবাই হবে। Ñআলআশবাহ ওয়ান নাযাইর, পৃষ্ঠা ৪৪৯-৪৫০
ইবনে নুজাইম রাহ.-এর উপরোক্ত বক্তব্যের সারকথা হল, একটি বড় পশুতে কুরবানীদাতা ওয়াজিব অংশের অতিরিক্ত অংশের ক্ষেত্রে যে নিয়ত করবে সে অনুযায়ীই আদায় হবে। সুতরাং তিনি যদি নফলের নিয়ত করেন তাহলে অতিরিক্ত অংশ দ্বারা নফল আদায় হবে।
লক্ষ করার বিষয় হল, তিনি তার উক্ত বক্তব্যের সমর্থনে এক ব্যক্তির দুটি ছাগল কুরবানী করা সংক্রান্ত ইবারত পেশ করেছেন; যে ইবারতে একটি ছাগল ওয়াজিব কুরবানী হিসাবে এবং অপরটি নফল হিসাবে আদায় হওয়ার কথা ব্যক্ত হয়েছে। তিনি একটি বড় পশুতে একই ব্যক্তির দুটি অংশের এক অংশ ওয়াজিব আর অপর অংশ নফল গণ্য হওয়ার দলীল পেশ করেছেন এক ব্যক্তির দুটি ছাগল কুরবানী করা সংক্রান্ত বক্তব্য দ্বারা। অথচ তাঁর নিকট যদি আজনাসের উক্ত বক্তব্য সামনে থাকত তবে তো আর এ কসরত করার দরকারই হতো না। তিনি সরাসরিই বলে দিতেন যে, এক অংশ ওয়াজিব হবে আর বাকি অংশ নফল হবে।
এখানে প্রশ্ন হল, উটের এক সপ্তমাংশের অতিরিক্ত অংশ নফল হবে কি নাÑ তিনি এখানে এ আলোচনার অবতারণা কেন করলেন?
এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে যদি একটি বড় পশু জবাই করার দ্বারা একটি মাত্রই কুরবানী হওয়া চূড়ান্ত কথা হয় যেমনটি উক্ত উর্দু ফতোয়া গ্রন্থে বলা হয়েছে, তাহলে এ আলোচনা তো এখানে ওঠারই কথা নয়।
মূলত এর কারণ হল, সে তো মান্নত করেছে একটি ছাগলের আর আদায় করছে এমন একটি পশু দিয়ে, যা সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত। সুতরাং বাকি ছয় অংশের কী হবে? পুরোটা কি ওয়াজিব গণ্য হবে, নাকি এক অংশ ওয়াজিব হবে আর বাকিটা নফল।
তিনি উক্ত বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন এবং বলেছেন বাকি অংশে সে যে নিয়ত করবে সে অনুযায়ী আদায় হবে।
লক্ষ করার বিষয় হল, ইবনে নুুজাইম রাহ. একই ব্যক্তির একটি বড় পশু কুরবানীর করার ক্ষেত্রে এ হিসাব ধর্তব্য করেছেন এবং এর ওপর ভিত্তি করে শাখা মাসআলাও বের করেছেন। অন্যদিকে উর্দু ফতোয়া গ্রন্থটিতে দলীল খুঁজে না পাওয়ার অজুহাতে গ্রন্থকার বিপরীত মাসআলা আবিষ্কার করে বসে আছেন।
ফকীহগণ একটি পশুতে এক ব্যক্তির একাধিক অংশ রাখার মাসআলাকে সাধারণ একটি মাসআলা হিসাবেই আলোচনা করেছেন এমন নয়; বরং তারা একে বিভিন্ন শাখা মাসআলায়ও প্রয়োগ করেছেন। এর প্রমাণ ফিকহের কিতাবাদিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যেমন :
এক. একটি বড় পশুতে নিজের ওয়াজিব কুরবানীর সাথে নাবালেগ সন্তানের অংশ রাখার মাসআলা
নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে পিতার জন্য কুরবানী আদায় করা মুস্তাহাব।
কিতাবুল আছল-এ উদ্ধৃত হয়েছেÑ
قلت: فهل على الرجل إذا كان موسرا أن يضحي عن نفسه وعن ولده وهم صغار؟ قال: هو أحب إلي وأفضل من تركه.
আমি প্রশ্ন করলাম, ব্যক্তি যদি ধনী হয় সে কি নিজের পক্ষ থেকে এবং তার শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করবে? তিনি বললেন, আমার নিকট তার পক্ষ থেকে কুরবানী না করার চেয়ে বরং করাটাই ভালো। Ñকিতাবুল আছল, ৫/৪০৭
ইমাম কাযী খান রাহ. বলেনÑ
وفي الولد الصغير عن أبي حنيفة رحمه الله تعالى روايتان، في ظاهر الرواية يستحب.
শিশু সন্তানের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা রাহ. থেকে দুটি বর্ণনা রয়েছে। জাহিরুর রিওয়ায়াত-এ শিশু সন্তানের পক্ষ হতে পিতার কুরবানী করা মুস্তাহাব। Ñফাতাওয়া কাযী খান ৩/৩৪৫
সন্তানের পক্ষ থেকে পিতা যে নফল কুরবানীদাতা ইমাম কাযী খান রাহ. তা কিতাবুল বুয়ূ-এ بيع الوصي وشراءه পরিচ্ছদে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনÑ
ولا يضحي عن الصبي في ظاهر الرواية وكذا الأب لا يضحي عن الصغير من مال الصغير فإن ضحى من مال نفسه يكون متبرعا.
জাহিরুর রিওয়ায়াতের ভাষ্যমতে শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে পিতার কুরবানী করা লাগবে না। অনুরূপ পিতা শিশুর সম্পদ থেকে শিশুর পক্ষ থেকেও কুরবানী করবে না। যদি সে নিজের সম্পদ থেকে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে, তবে সে নফল আদায়কারী হিসাবে গণ্য হবে। Ñফাতাওয়া কাযী খান ২/২৮৯
পিতার নিজ সম্পদ থেকে শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করা নফল দায়িত্ব। জাহিরুর রিওয়ায়াতের ভাষ্য অনুযায়ী ওয়াজিব নয়। এর ওপরই ফতোয়া। এ কুরবানীর মালিক পিতা নিজেই এবং তা নফল হিসাবেই আদায় হবে। এর গোশত পিতার মালিকানাধীন। হাঁ, সন্তান এর সওয়াব পাবে। যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে তার ওসিয়ত ব্যতীত যদি কুরবানী করে, ঐ অংশের মালিক কুরবানীদাতাই হয় আর সওয়াব মৃতের নিকট পেঁৗছে।
ইবনুশ শিহনাহ রাহ. বলেনÑ
سئل نصير عن رجل ضحى عن الميت ماذا يصنع به قال يأكل منه ويصنع به ما يصنع بأضحيته. فقيل له: أيصير عن الميت؟ فقال: الأجر له والملك لهذا، فقيل له: فإن ضحى عن الصبي؟ فقال: الأجر له والملك لهذا الرجل.
وقال محمد بن سلمة مثل هذا، وقال محمد بن مقاتل مثل ذلك، وأبو مطيع مثله. وقال عصام بن يوسف: يتصدق بالكل.
ফকীহ নুসাইর ইবনে ইয়াহইয়া রাহ. (২৬৮ হি.)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, এক ব্যক্তি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছে। এ পশু কী করা হবে? তিনি বললেন, তা হতে খাওয়া হবে এবং নিজের কুরবানীর পশুর ক্ষেত্রে যা যা করা হতো এতেও তা-ই করা হবে। তাকে তখন প্রশ্ন করা হল, কুরবানী কি মৃতের পক্ষ হতে ধরা হবে? তিনি বললেন, মৃত ব্যক্তি সওয়াবপ্রাপ্ত হবে আর মালিকানা কুরবানীদাতার থাকবে।
তাঁকে আবার প্রশ্ন করা হল, যদি এ ব্যক্তি শিশুর পক্ষ হতে কুরবানী করে? তিনি বললেন, শিশু তার সওয়াব পাবে আর মালিকানা কুরবানীদাতার। মুহাম্মাদ ইবনে সালামাহ রাহ. এমনটিই বলেছেন। মুহাম্মাদ ইবনে মুকাতিল রাহ.-ও এমনটিই বলেছেন। আবু মুতী‘ রাহ.-ও এমনটিই বলেছেন। আর ইসাম ইবনে ইউসুফ রাহ. বলেছেন, পুরোটা সদকা করে দিতে হবে। Ñলিসানুল হুককাম, ৩৮৯
উল্লিখিত ফকীহগণের মধ্যে আবু মুতী‘ রাহ. হলেন ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর শাগরিদ, মুহাম্মাদ ইবনে মুকাতিল রাহ. হলেন ইমাম মুহাম্মাদ রাহ-এর শাগরিদ আর নুসাইর ইবনে ইয়াহইয়া রাহ. ও মুহাম্মাদ ইবনে সালামাহ রাহ. হলেন ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.-এর বিশিষ্ট ছাত্র আবু সুলাইমান জুযাজানীর শাগরিদ। তাঁরা দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলেছেন, নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে পিতার কুরবানী করা মুস্তাহাব। এ কুরবানীর মালিক পিতা নিজেই।
এখন আমরা প্রত্যক্ষ করবÑ একটি পশুতে পিতা নিজ ওয়াজিব কুরবানীর সাথে শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানীর অংশ রাখা সম্পর্কিত ফিকহী বক্তব্য।
একটি উট দ্বারা পিতার ওয়াজিব কুরবানী এবং শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে নফল কুরবানী
ইমাম কাযী খান রাহ. বলেনÑ
و لو ضحى غني بدنة عن نفسه و عن ستة من أولاده ليس هذا في ظاهر الرواية، و قال الحسن بن زياد رحمه الله تعالى في كتاب الأضحية له: إن كان أولاده صغارا، جاز عنه وعنهم جميعا في قول أبي حنيفة و أبي يوسف رحمهما الله تعالى.
ধনী ব্যক্তি যদি একটি উট নিজের ও তার ছয় সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করে তার বিধান জাহিরুর রিওয়ায়াতে উল্লেখ হয়নি। হাসান বিন যিয়াদ রাহ. কিতাবুল উযহিয়্যাহ-এ বলেন, যদি তার সন্তান ছোট হয় তাহলে পিতা ও সন্তান সকলের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। Ñফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫০
জামেউর রুমূয-এ কাযী খানের উপরোক্ত বক্তব্য এভাবে এসেছেÑ
وفي الكلام إشعار بأنه لو ضحى عنه و عن ستة من أولاده وجعل لكل سبعا جاز، إلا أنه غير ظاهر الرواية.
আর উপরোক্ত কথা (অর্থাৎ একটি উট বা গরু এক ব্যক্তি থেকে নিয়ে সাত পর্যন্ত হতে পারে) এ কথার ইঙ্গিত বহন করে যে, কোনো ব্যক্তি যদি (একটি উট বা গরু) নিজের পক্ষ থেকে এবং তার ছয় সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করে এবং প্রত্যেকের জন্য এক সপ্তমাংশ নির্ধারণ করেÑ তা জায়েয হবে। অবশ্য এটি জাহিরুর রিওয়ায়াতে উল্লেখ নেই। Ñজামেউর রুমূয ৩/৩৫৪
কুহেস্তানী রাহ. আরও বলেনÑ
وإن ضحى من مال نفسه فهو كأضحيته.
আর পিতা যদি নিজ সম্পদ থেকে কুরবানী করে তবে তা নিজ কুরবানীর মতই। Ñজামেউর রুমূয ৩/৩৫৬
ফখরুদ্দীন আফেন্দী রাহ. কুহেস্তানী রাহ.-এর উল্লিখিত বক্তব্যের ব্যাখ্যায় লেখেনÑ
وإن ضحى أي الأب من مال نفسه للطفل فهو كأضحيته أي الأب مثلا.
আর যদি পিতা নিজ সম্পদ হতে শিশু সন্তানের জন্য কুরবানী করে তবে তা নিজের অর্থাৎ পিতার কুরবানীর মতই। Ñগাওয়াসুল বাহরাইন ৩/৩৫৬
এ মাসআলাটি ফিকহে হানাফীর অনেক কিতাবেই উল্লেখ হয়েছে। তাতে ফিক্হবিদগণ স্পষ্টতই বলেছেন যে, পিতা নিজ কুরবানীর পশুতে শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে অংশ রাখতে পারবে। আর পূর্বে ফকীহদের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, শিশু সন্তানের কুরবানীর অংশের মালিক পিতাই। সন্তান কেবল এ কুরবানীর সওয়াব পায়। যেহেতু এ কুরবানীর মালিক পিতা এবং এ অংশের কুরবানী শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে পিতারই নফল কুরবানী, তাই এ থেকে প্রমাণিত হয়ে যায় যে, এক ব্যক্তির জন্য একটি বড় পশুতে নিজের ওয়াজিব কুরবানীর পাশাপাশি নফলের অংশ রাখা যায় এবং এর দ্বারা ওয়াজিব নফল সবটাই আদায় হয়ে যাবে।
শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে পিতার কুরবানী করা সংক্রান্ত কাযীখানের উল্লেখিত বক্তব্য যে ওয়াজিবের সাথে নফল কুরবানী সংক্রান্তÑ তা ইমদাদুল ফাতাওয়াতে সুস্পষ্টভাবেই বিবৃত হয়েছে। ইমদাদুল ফাতাওয়ার নিম্নের প্রশ্নোত্তর লক্ষ করুন।
ইমদাদুল ফাতাওয়া
سوال۔ احقر نے گذشتہ عیدالاضحیٰ کے موقع پر قربانی کے گائے میں ایک حصہ حضرت کی طرف سے لیا تھا اس وقت اس کی اطلاع حضور کو نہیں کی تھی اس کی بابت اس وقت مسئلہ بھی معلوم نہیں تھا کہ اطلاع کرنی چاہئے تھا یا نہیں اب بہشتی زیور سے یہ مسئلہ معلوم ہوا کہ اگر کوئی شخص یہاں موجود نہیں اور دوسرے شخص نے اس کی طرف سے بغیر اس کے امر کے قربانی کر دی تو یہ قربانی نہیں ہوئی اور اگر کسی غائب کا حصہ کسی جانورمیں بدون اس کے امر کے تجویز کر لیا تو اور حصہ داروں کی قربانی بھی صحیح نہ ہوگی۔
الجواب۔ بہشتی زیور میں جو مسئلہ مذکور ہے وہ اضحیہ واجبہ کے متعلق ہے، اضحیہ تطوع کے متعلق نہیں، اور اسکی دلیل عالمگیری کا یہ جزئیہ ہے۔
প্রশ্ন : (৬৭৪) অধম গত কুরবানীর গরুতে হযরতের পক্ষ থেকে একটি অংশ রেখেছিলাম। কিন্তু হযরতকে তা জানাতে পারিনি। সে সময় এ মাসআলা জানা ছিল না যে, এক্ষেত্রে জানানো দরকার ছিল। কিন্তু এখন বেহেশতী যেওর থেকে মাসআলা জানতে পারলাম যে, কোনো ব্যক্তি যদি অপরের পক্ষ থেকে তার সম্মতি গ্রহণ ব্যতীত কুরবানী করে, তবে কুরবানী সহীহ হয় না। আর অনুপস্থিত কোনো ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার সম্মতি ব্যতীত যদি কোনো পশুতে অংশ রাখা হয় তাহলে শরীকদের কুরবানীও সহীহ হয় না।
উত্তর : বেহেশতী যেওর-এ যে মাসআলাটি উল্লেখ হয়েছে সেটা ওয়াজিব কুরবানীর প্রসঙ্গে, নফল কুরবানী প্রসঙ্গে নয়। তার প্রমাণ হল ফাতাওয়া আলমগীরীর এ ইবারতÑ
ولو ضحى ببدنة عن نفسه وعرسه وأولاده ليس هذا في ظاهر الرواية. وقال الحسن بن زياد في كتاب الأضحية: إن كان أولاده صغارا جاز عنه وعنهم جميعا في قول أبي حنيفة وأبي يوسف رحمهما الله تعالى.
Ñইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৬০৯
দুই. একটি বড় পশুতে নিজের কুরবানীর সাথে নফল অংশ রাখতে পারে তার আরেকটি ক্ষেত্র হল, ক্রীতদাসের পক্ষ থেকে মনিবের কুরবানী করা। ফিকহের কিতাবে দাস-দাসীর পক্ষ থেকে কুরবানী করা মনিবের জন্য মুস্তাহাব বলা হয়েছে। যেমন আত্তাবী রাহ. বলেনÑ
ويستحب عن أولاده الصغار وعن مماليكه، و يكون قربة ولا يجب عنهم.
শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে এবং ক্রীতদাসের পক্ষ থেকে কুরবানী করা মুস্তাহাব। তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। Ñজাওয়ামিউল ফিকহ লিল আত্তাবী, পৃ. ২০৫ (মাখতূত)
আরো দেখুন, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫
ফাতাওয়া হিন্দিয়া-এ এসেছেÑ
ويستحب أن يضحي عن مماليكه هكذا في التتارخانية.
আর ক্রীতদাসের পক্ষ থেকে কুরবানী করা মুস্তাহাব। Ñফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩
উট বা গরুতে ক্রীতদাসের পক্ষ থেকে অংশ রাখা
ইমাম সারাখসী রাহ. বলেনÑ
ولا خلاف أنه ليس على المولى أن يضحي عن أحد من مماليكه، فإن تبرع بذلك جاز. وإذا جعله شريكا في البدنة ففيه قياس واستحسان لما بينا.
এতে কোনো দ্বিমত নেই যে, মনিবের ওপর ক্রীতদাসের পক্ষ থেকে কুরবানী করা আবশ্যক নয়। অবশ্য সে যদি নিজ থেকে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তবে তা জায়েয আছে। আর যখন তাকে উটের কুরবানীতে শরীক করে নেবে সেক্ষেত্রে এ মাসআলায় কিয়াস ও ইস্তিহসান দুটি দিকই রয়েছে, যেমনটি আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। (অর্থাৎ কিয়াসের দাবি হল তা জায়েয হবে না। আর ইস্তিহসানের ভিত্তিতে তা জায়েয হবে। এবং এর উপরই ফতোয়া।) Ñমাবসূত, সারাখসী ১২/১২
একথা অজানা নয় যে, ক্রীতদাসের পক্ষ থেকে কুরবানী করা মনিবের ওপর ওয়াজিব নয় এবং মনিব যদি ক্রীতদাসের পক্ষ থেকে কুরবানী করে, তবে তা নফল গণ্য হবে এবং এ কুরবানীর মালিক মূলত মনিবই। কেননা গোলাম কোনো সম্পদ অর্জন করলে তাতেই তার মালিকানা সাব্যস্ত হয় না; বরং ঐ সম্পদের মালিকানাও মনিবের থাকে। আর মনিব যখন নিজ সম্পদ হতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করবে তাতে যে তার মালিকানা থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য। হাঁ, গোলামের পক্ষ থেকে আদায়ের নিয়তের কারণে গোলাম কুরবানীর সওয়াব পাবে। যেমনটি শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে পিতা নিজ সম্পদ থেকে কুরবানী করলে সন্তানের কুরবানীর সওয়াব অর্জন হয় এবং মূল কুরবানী পিতারই থাকে। আর এ অংশ নফল হিসাবে আদায় হয়।
উপরোক্ত দুটি সূরত অর্থাৎ শিশু সন্তান এবং গোলামের পক্ষ থেকে একই পশুতে কুরবানী জায়েয হওয়ার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এক ব্যক্তির জন্য একটি বড় পশুতে নিজের কুরবানীর সাথে ঈসালে সওয়াবের অংশ রাখা জায়েয।
এক ব্যক্তির জন্য একটি বড় পশুতে ওয়াজিবের সাথে নফল অংশ রাখা জায়েযÑ এটি শুধু হানাফী মাযহাবে আলোচিত হয়েছে এমন নয়; বরং অন্য মাযহাবেও তা সুস্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে। যেমন,
আল্লামা মুনাভী রাহ. জাবের রা.-এর হাদীসÑ
البقرة عن سبعة والجزور عن سبعة.
(গরু সাত জনের পক্ষ থেকে আর উট সাতজনের পক্ষ থেকে)-এর ব্যাখ্যায় লেখেনÑ
أي تجزئ كل واحدة منهما عن سبعة، فلو ضحى ببقرة أو جزور كان الزائد على السبع تطوعا، يصرفه إلى أنواع التطوع إن شاء.
অর্থাৎ গরু ও উটের প্রতিটি সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। অতএব, যদি কোনো ব্যক্তি একটি গরু বা উট কুরবানী করে তবে এক সপ্তমাংশের অতিরিক্তটা নফল হবে। সে যে কোনো প্রকার নফলের নিয়ত করতে পারে। Ñফায়যুল কাদীর, মুনাভী ৩/২২২
ইবনে হাজার হাইতামী রাহ. উক্ত মাসআলাকে অধিক সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনÑ
أما لو ذبح بدنة أو بقرة عن سبعة أسباب، منها ضحية وعقيقة والباقي كفارات في نحو الحلق في النسك فيجزئ ذلك، وليس هو من باب التداخل في شيء، لأن كل سبع يقع مجزيا عما نوى به.
কোনো ব্যক্তি যদি একটি উট বা গরু জবাই করে সাতটি নুসুক আদায়ের উদ্দেশ্যে, আর তন্মধ্যে একটি অংশ হল কুরবানী এবং আকীকা আর বাকিগুলো হল বিভিন্ন কাফফারার উদ্দেশ্যেÑ যেমন, হজ্বে (সময়ের পূর্বে) মাথা মুণ্ডন করে নেয়ার কারণেÑ তবে তা যথেষ্ট হবে। আর এ মাসআলাটি কোনোভাবেই ‘তাদাখুল’-এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ প্রতিটি সপ্তমাংশ তার এক একটি নিয়তের জন্য যথেষ্ট। Ñআলফাতাওয়াল কুবরা, হাইতামী ৪/২৫৬
ইবনে হাজার হাইতামী রাহ.-এর উপরোক্ত বক্তব্যে কুরবানীর সাথে আকীকার কথা স্পষ্টই উল্লেখ হয়েছে। তিনি উক্ত বক্তব্যে আরও একটি বিষয় ব্যক্ত করেছেন। তা হল, একটি উট বা গরুতে সাতটি অংশ রাখা এ অর্থে নয় যে, এতে মূল কুরবানী একটিই আদায় হল আর বাকিগুলো একটির অধীন হয়ে আদায় হয়েছে ধরে নেয়া হবে; বরং প্রত্যেকটি কুরবানী পৃথক পৃথক অংশেই আদায় হবে। কেননা উট-গরুর প্রতিটি এক সপ্তমাংশ দ্বারা কুরবানীদাতার নিয়ত অনুযায়ী স্বতন্ত্র কুরবানী আদায় হয়।
উট-গরুতে এক ব্যক্তির যদি এক সপ্তমাংশের বেশি অংশ থাকে আর অতিরিক্ত অংশটি দ্বারা যদি কোনো ওয়াজিব আদায়ের নিয়ত না করে সেক্ষেত্রেও ঐ অংশটি যে নফল গণ্য হয়Ñ তা মুজতাহিদ ইমামদের নিকট একটি স্বীকৃত মাসআলা।
ইমাম শাফেয়ী রাহ. কিতাবুল উম্ম-এ বলেনÑ
وإذا كانوا أقل من سبعة أجزأت عنهم وهم متطوعون بالفضل، كما تجزئ الجزور عمن لزمته شاة، ويكون متطوعا بفضلها عن الشاة، وإذا لم توجد البدنة كان عدلها سبعة من الغنم قياسا على هذا الحديث، وكذلك البقرة.
যদি একটি বড় পশুতে সাতজনের কম শরীক থাকে তবে তাও ঠিক আছে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত অংশটি তাদের জন্য নফল গণ্য হবে। যেমন এক ব্যক্তির ওপর একটি ছাগল আবশ্যক হওয়ার পর সে যদি একটি উট জবাই করে তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে এবং ছাগলের অতিরিক্ত অংশ নফল সাব্যস্ত হবে। আর যখন উট পাওয়া না যাবে, এ হাদীসের উপর কিয়াস করে তার পরিবর্তে সাতটি ছাগল যথেষ্ট হবে। গরুর ক্ষেত্রেও একই কথা। Ñকিতাবুল উম্ম ২/২৪৪
ইমাম শাফেয়ী রাহ. যে হাদীসের উপর কিয়াস করেছেন সে হাদীস হল জাবের রা.-এর হাদীস, যা আমরা ইতিপূর্বে একাধিক বার উল্লেখ করেছি। আর এটি কোনো মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা নয়; বরং আমাদের ফকীহদের থেকেও একই কথা বর্ণিত হয়েছে।
যেমন ইমাম সারাখসী রাহ. বলেনÑ
وإن قال: لله علي أن أهدي شاة فأهدى جزورا يجزئه وهو محسن في ذلك؛ لأنه أدى الواجب عليه وزيادة، فإن الجزور قائم مقام سبع من الغنم، حتى يجزئ عن سبعة نفر، ففيه وفاء بالواجب وزيادة.
কেউ যদি বলে, আল্লাহ্র জন্য আমি একটি ছাগল হাদী হিসাবে পাঠাবো। এরপর সে একটি উট প্রেরণ করল, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। সে এক্ষেত্রে উত্তম কাজ করেছে। কেননা সে তার ওয়াজিব আদায় করেছে এবং অতিরিক্ত আদায় করেছে। কেননা উট সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত। একারণেই একটি উট সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং লোকটি এক্ষেত্রে ওয়াজিব তো আদায় করেছেই সাথে বেশি আদায় করেছে। Ñমাবসূত, সারাখসী ৪/১৪৭
উক্ত উর্দু ফাতাওয়ার বক্তব্য সঠিক ধরে নেয়া হলে এ বিশ্লেষণের কোনোই সুযোগ নেই। কেননা এটির ভাষ্য মতে এক ব্যক্তি যখন একটি উট বা গরু দ্বারা মান্নত বা কুরবানী আদায় করবে তখন তো পুরো উট বা গরু দ্বারা একটি ওয়াজিবই আদায় হবে। সেখানে অতিরিক্ত অংশের আলোচনা আসার প্রশ্নই তো থাকে না। অথচ ইমাম সারাখসী রাহ. ওয়াজিব অংশের পাশাপাশি অতিরিক্ত অংশের কথা বলেছেন। সাথে এর কারণও ব্যক্ত করেছেন এই বলে যে, একটি উট সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত। যে কারণে একটি উট সাত ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হয়।
ইমাম সারাখসী রাহ.-এর বক্তব্য দ্বারা দুটি বিষয় প্রমাণিত হয় :
এক. এক ব্যক্তির জন্য একটি উট বা গরুতে ওয়াজিব অংশের সাথে নফলের অংশ রাখা জায়েয।
দুই. ওয়াজিবের অতিরিক্ত অংশ নফল হওয়ার কারণ হল, একটি উট বা গরু এক ব্যক্তির জন্যও সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত।
সুতরাং লোকটি যখন একটি ছাগলের মান্নত করে এর পরিবর্তে উট আদায় করল সে এক্ষেত্রে ছয় অংশ অতিরিক্ত আদায় করল।
তিনি এ মাসআলাকে একটি উট-গরুতে ভিন্ন ভিন্ন সাত ব্যক্তির শরীক হওয়ার মাসআলার সাথে মিলিয়েছেন। এ থেকে একদমই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, একটি উট বা গরুতে সাত ব্যক্তির জন্য যেমনিভাবে সাতটি ওয়াজিব কুরবানী বা সাতটি নফল কুরবানী অথবা ওয়াজিবের সাথে নফল কুরবানী আদায় করা যায় ঠিক তেমনি এক ব্যক্তির জন্য একটি বড় পশুতে একাধিক ওয়াজিব কুরবানী বা ওয়াজিবের সাথে নফল কুরবানী আদায় হবে সন্দেহাতীতভাবে।
কিন্তু এর বিপরীতে ফিক্হবিদগণ থেকে এমন একটি বক্তব্যও পাওয়া যায় না, যাতে তারা ওয়াজিব অংশের সাথে নফল অংশ রাখা যাবে নাÑ বলে মত ব্যক্ত করেছেন।
একটি বড় পশুতে একাধিক আকীকার অংশ রাখা
একটি বড় পশুতে একাধিক আকীকার যে অংশ রাখা জায়েয তা তো উপরের আলোচনা থেকেই সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষত নাতিফী রাহ.-এর বক্তব্যে আমরা দেখে এসেছি যে, একটি গরুতে এক ব্যক্তির জন্য ছয়টি নফল অংশ রাখা যায়।
এখানে আমরা আকীকা সম্পর্কিত স্পষ্ট ফিকহী বক্তব্য উদ্ধৃত করছি।
মূল আলোচনার পূর্বে একটি বিষয় জানা দরকার যে, আকীকার মাসআলা-মাসায়েল ফিকহে হানাফীতে তেমন আলোচিত হয়নি। তার কারণও ফিকহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিকট অজানা নয়। এজন্য ফিকহে হানাফীর কিতাবাদিতে আকীকার আলোচনা সাধারণত ফিকহে শাফেয়ী থেকে উদ্ধৃত করা হয়ে থাকে। কারণ মৌলিকভাবে ফিকহে শাফেয়ীর আকীকা সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল বিস্তৃত এবং আমাদের মাযহাবের উসূলের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ।
তাই প্রথমে ফিকহে শাফেয়ী থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের হাওয়ালা উল্লেখ করা গেল। এরপর এ আলোকে হানাফী ফকীহ ও আলেমগণের বক্তব্য উল্লেখ করা হবে।
ইমাম নববী রাহ. বলেনÑ
ولو ولد له ولدان، فذبح عنهما شاة لم تحصل العقيقة، ولو ذبح بقرة أو بدنة عن سبعة أولاد أو اشترك فيها جماعة جاز.
যদি কারো দুটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় আর তাদের পক্ষ থেকে একটি ছাগল জবাই করা হয় তাহলে আকীকা আদায় হবে না। আর যদি কোনো ব্যক্তি তার সাতটি সন্তানের আকীকার উদ্দেশ্যে একটি গরু বা উট জবাই করে অথবা উট বা গরুতে একাধিক ব্যক্তি শরীক হয় তবে তা জায়েয হবে। Ñআল মাজমূ ৮/৪০৯
ইমাম নববী রাহ.-এর উপরোক্ত বক্তব্য ফিকহে শাফেয়ীর একাধিক কিতাবে উদ্ধৃত হয়েছে। এতে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে যে, একটি বড় পশুতে এক ব্যক্তির জন্য সাত সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা করা জায়েয এবং এতে সাতজনের আকীকাই আদায় হয়ে যাবে।
ইলাউস সুনান
আল্লামা যফর আহমাদ উসমানী রাহ. ইমাম নববী রাহ.-এর উপরোক্ত বক্তব্য হুবহু ইলাউস সুনান গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তিনি আকীকার অধ্যায়ে একাধিক ফায়েদা ইমাম নববী রাহ.-এর ‘আলমাজমূ’ গ্রন্থ থেকে উল্লেখ করেছেন। একটি ফায়েদার অধীনে তিনি উক্ত মাসআলাÑ অর্থাৎ এক ব্যক্তির জন্য একটি উট বা গরুতে একাধিক আকীকার অংশ রাখা জায়েযÑ তা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনÑ
ولو ولد له ولدان، فذبح عنهما شاة لم تحصل العقيقة، ولو ذبح بقرة أو بدنة عن سبعة أولاد، أو اشترك فيها جماعة جاز.
যদি কারো দুটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় আর তাদের পক্ষ থেকে একটি ছাগল জবাই করা হয় তাহলে আকীকা আদায় হবে না। আর যদি কোনো ব্যক্তি তার সাতটি সন্তানের আকীকার উদ্দেশ্যে একটি গরু বা উট জবাই করে অথবা উট বা গরুতে একাধিক ব্যক্তি শরীক হয় তবে তা জায়েয হবে। Ñইলাউস সুনান ১৭/১১৯
ইলাউস সুনানে শরহুল মুহাযযাব-এর উল্লিখিত বক্তব্য উদ্ধৃত করা একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, ফিকহে হানাফীতেও একটি বড় পশু দ্বারা এক ব্যক্তি তার সাত সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা আদায় করতে পারবে। তিনি এ মাসআলায় শাফেয়ী মাযহাবের সাথে কোনো ইখতিলাফ উল্লেখ করেননি।
হাঁ, বড় পশুতে যদি একাধিক ব্যক্তি শরীক হয় আর কোনো শরীক আকীকার নিয়ত করে, আবার কেউ গোশত সংগ্রহের জন্য অংশ রাখে, সেক্ষেত্রে এ মাসআলায় তিনি শাফেয়ী মাযহাবের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। কারণ আমাদের মাযহাবের মত হল, শরীকদের সাথে কুরবানী দেয়ার ক্ষেত্রে সকল শরীকের ‘কুরবত’-এর নিয়ত থাকা শর্ত। কোনো এক শরীক যদি পার্থিব উদ্দেশ্য রাখে তবে কারও কুরবানী সহীহ হবে না। যেমন তিনি বলেনÑ
قلت: مذهبنا في الأضحية بطلانها بإرادة بعض اللحم، فليكن كذلك في العقيقة.
আমি বলব, আমাদের মাযহাব হল, কুরবানীর ক্ষেত্রে কোনো শরীক যদি গোশত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে শরীক হয় তাহলে সকল শরীকদের কুরবানী বাতিল হয়ে যাবে। আকীকার ক্ষেত্রেও তা-ই হওয়া উচিত। Ñইলাউস সুনান ১৭/১২০
ইমদাদুল ফাতাওয়া
একটি উট বা গরুতে যে এক ব্যক্তির জন্য সাতটি আকীকার অংশ রাখা জায়েয তা হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী রাহ.-এর আকীকা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তর থেকেও বুঝে আসে।
প্রশ্ন :
گزارش یہ ہے کہ جناب شاہ صاحب ہمارے یہاں ایک مولوی صاحب فرماتے ہیں کہ عقیقہ گائے کا بھی درست ہے یہ بات اور کبھی کسی عالم نے نہیں کہی اب عرض کرتا ہوں اگر لڑکا پیدا ہوئے تو دو بکری ذبح نہ کرے ایک گائے ذبح کرے تو عقیقہ درست ہوگا یا نہیں تحریر فرما کر تسلی فرماویں .
জনাব আমাদের এখানে এক মৌলবী সাহেব বলেন যে, গরু দ্বারাও আকীকা করা জায়েয। এ ধরনের কথা কোনো আলেম থেকে শুনিনি। আমার প্রশ্ন হল, যদি পুত্র সন্তান জন্ম নেয় আর তার আকীকার জন্য দুটি বকরি জবাই না করে যদি একটি গরু জবাই করা হয় তবে কি আকীকা আদায় হবে?
উত্তর :
گائے کا عقيقہ کہ آثار میں تو منقول دیکھا نہیں گیا ۔ البتہ فقہاء نے گائے میں عقیقہ کا حصہ لینے کو لکھا ہے تو اس کے جواز کا قائل ہونا بھی ضروری ہے کہ گائے کا حصہ بدل ہے شاة کا لیکن پوری گائے سے عقیقہ کرنا اس سے فقہاء نے بھی تعرض نہیں کیا ۔ مگر قواعد سے یہ ایسا ہے جیسی سات بکریوں سے عقیقہ کرنا جو ظاہرا سنت سے تجاوز ہے جیسے ظہر کی پانچ رکعت پڑھنا بہتر یہ ہے کہ اور کسی عالم سے بھی تحقیق کر لیا جاوے.
গরু দ্বারা আকীকা করা হাদীস আসারে বর্ণিত পাইনি। তবে ফকীহগণ গরুতে আকীকার অংশ রাখার কথা লিখেছেন। তাই গরু দ্বারা আকীকা করা জায়েয এ কথা বলতে কোনো বাধা নেই। কেননা গরুর (সাতটি অংশের) প্রত্যেকটি অংশ একটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত। তবে গোটা একটি গরু আকীকা করা সম্পর্কে ফকীহগণ কিছু বলেননি। তবে মৌলনীতির আলোকে একটি গরু দ্বারা একজনের পক্ষ থেকে আকীকা করা সাতটি ছাগল দ্বারা আকীকা করার নামান্তর, যা বাহ্যত সুন্নাহ থেকে সীমালঙ্ঘন১। এটি কেমন যেন যোহরের নামায পাঁচ রাকাত পড়া সদৃশ। বিষয়টি অন্য আলেম থেকেও তাহকীক করে নেয়া সমীচীন হবে। Ñইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৬২০
হযরত থানবী রাহ. একটি গরু দ্বারা আকীকা করাকে সাতটি ছাগল দ্বারা আকীকা করা গণ্য করেছেন। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, একটি গরু দ্বারা একাধিক আকীকা করা জায়েয হবে।
ইমদাদুল আহকাম
السؤال :عقیقہ میں بیل بکری وغیرہ ما یکفی للواحد چند بچوں کے لیے بھی کافی ہو سکتا ہے؟
الف۔ خواہ ایک ہی دن میں سب پیدا ہوئے ہوں یا آگے پیچھے۔ ..
ب۔ یہ بچے ایک ہی شخص کے ہو یا دو تین اشخاص کے۔
الجواب۔ بکری میں تو ایک بچہ سے زائد کا عقیقہ نہیں ہو سکتا اور گائے بیل میں سات بچوں تک کا ہو سکتا ہے خواہ سب ایک ہی شخص کے ہوں یا مختلف لوگوں کے اور ساتھ پیدا ہوئے ہوں یا آگے پیچھے کیونکہ تاریخ کا لحاظ مستحب ہے ضروری نہیں۔
প্রশ্ন : আকীকার মধ্যে গরু-ছাগল ইত্যাদি, যা একজনের জন্য যথেষ্ট, তা কি কয়েকজন বাচ্চার আকীকার জন্য হতে পারে? চাই সকলে একই দিনে জন্ম লাভ করুক অথবা আগে-পরে?.. তারা এক ব্যক্তির সন্তান হোক বা দুই তিন ব্যক্তির?
উত্তর : ছাগল দ্বারা তো একাধিক শিশুর আকীকা হতে পারে না। আর গরু-মহিষে সাত সাত বাচ্চার আকীকা হতে পারে। চাই সকল শিশু এক ব্যক্তির হোক বা ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির। চাই একসঙ্গে জন্মগ্রহণ করুক বা আগে-পরে। কেননা দিন-তারিখের প্রতি লক্ষ রাখা মুস্তাহাব, জরুরি নয়। Ñইমদাদুল আহকাম ৪/২২৮
একটি গরু বা উট দ্বারা একই ব্যক্তির জন্য একাধিক সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা করা যে জায়েযÑ তা প্রায় সকল উর্দু ফতোয়ার কিতাবে উদ্ধৃত হয়েছে। প্রয়োজনে তা দেখে নেয়া যেতে পারে।
উপরের পুরো আলোচনায় হাদীস ও ফিক্হের মুজতাহিদ ইমাম ও ফকীহগণের বক্তব্যের আলোকে আমরা দেখলাম যে, একটি উট বা গরু দ্বারা এক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব বা নফল কুরবানী, আকীকা বা মান্নত সবগুলোই আদায় করা যাবে। এটি একটি স্বীকৃত ও সুপ্রমাণিত বিষয়। পক্ষান্তরে আমাদের তালাশ ও অনুসন্ধান অনুযায়ী এমন কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি, যাতে বলা হয়েছে যে, এক ব্যক্তির জন্য একটি পশুতে কেবল একটিই অংশ রাখা যাবে, একাধিক অংশ রাখা যাবে না। আর একাধিক অংশ রাখার নিয়ত করলেও তার এ নিয়ত বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। যেমনটি দাবি করা হয়েছে উর্দু ফতোয়ার কিতাবটিতে।
এ পর্যায়ে আমরা প্রশ্নে ইঙ্গিতকৃত উক্ত উর্দু ফাতাওয়ার কিতাবের দাবি ও দলীলের উপর সংক্ষিপ্ত একটি পর্যালোচনা পেশ করব, যাতে এর দাবি ও দলীলের অসারতা স্পষ্ট হয়ে যায়।
ফতোয়া গ্রন্থটির দাবি, দলীল এবং পর্যালোচনা
বক্তব্য-১ : একটি পশুতে এক ব্যক্তির জন্য বিভিন্ন ‘কুরবত’ বা দমের নিয়ত গ্রহণযোগ্য নয়। যদি নিয়ত করা হয় তবে একটি কুরবানীই আদায় হবে। কারণ এ সম্পর্কে হাদীস ও ফিকহে স্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।
বক্তব্য-২ : একটি পশুতে একাধিক ‘কুরবত’ বা ‘নুসুক’ আদায় হওয়ার মতটি দুর্বল বা মারজূহ। এখন পর্যন্ত এক ব্যক্তির জন্য একাধিক কুরবানী আদায় করা সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বক্তব্য-৩ : ওয়াজিবের সাথে ওয়াজিব ‘তাযাহুম’ হতে পারে; কিন্তু ওয়াজিবের সাথে নফল ‘তাযাহুম’ হতে পারে না।
পর্যালোচনা
ফতোয়া গ্রন্থটির দাবি ও দলীলের পর্যালোচনার পূর্বে বলে রাখা দরকার যে, ইতিপূর্বে হাদীস ও ফিক্হ-ফতোয়ার কিতাবের একাধিক বক্তব্য দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই আমরা দেখে এসেছি যে, এক ব্যক্তির জন্য একটি উট বা গরুতে একাধিক ওয়াজিব, একাধিক নফল এবং একাধিক ওয়াজিব ও নফল সর্বপ্রকারেরই অংশ রাখা জায়েয এবং এর দ্বারা তার নিয়ত অনুযায়ী সবগুলো কুরবানীই আদায় হয়ে যাবে। আর ফিক্হবিদগণের নিকট এটি একটি স্বীকৃত মাসআলা। এত স্পষ্ট বক্তব্য থাকার পর বিচ্ছিন্ন ও শায কথার পর্যালোচনার আর দরকার মনে হয় না। তথাপি প্রশ্নে যেহেতু ফতোয়া গ্রন্থটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তাই এখানে সংক্ষেপে তা পর্যালোচনা করা হল।
পর্যালোচনা (১, ২) : তিনি বলেছেন, একটি পশুতে এক ব্যক্তির জন্য একাধিক কুরবানী বা দমের নিয়ত গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ হাদীস ও ফিকহের কিতাবে এর কোনো প্রমাণ নেই।
এর উত্তরে আমরা বলব, উক্ত দাবি যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অনুমাননির্ভর তা তো হাদীস ও ফিকহের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদির উদ্ধৃতিতে বিস্তারিত পেশ করা হয়েছে।
হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থে ও ফিকহের কিতাবে এত সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকার পর একথা বলা যে, হাদীস ও ফিকহের কিতাবে কোনো প্রমাণ নেই বা সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেইÑ খুবই দুঃখজনক বিষয়। হাদীসের একাধিক ব্যাখ্যাগ্রন্থে এবং মাবসূতসহ ফিক্হ-ফতোয়ার প্রাচীন এত কিতাবে এ ধরনের স্পষ্ট বক্তব্য থাকার পর নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্য ঐ উর্দু ফতোয়া গ্রন্থটিতে যেসব ইবারত উল্লেখ করা হয়েছে তার উত্তর প্রদানের কোনো দরকার মনে হয় না। কেননা সেখানে যেগুলোকে দলীল হিসাবে পেশ করা হয়েছে, তা ঐ মাসআলার দলীলই নয়।
উদাহরণস্বরূপ ফতোয়া গ্রন্থটিতে মূল দলীল বানানো হয়েছে যাহিদী রাহ.-এর কিতাব ‘মুজতাবা’-এর একটি বক্তব্যকে; যা আল্লামা হাছকাফী রাহ. আদ্দুররুল মুখতার-এ উদ্ধৃত করেছেন। ইবারতটি হলÑ
ولو ضحى بالكل فالكل فرض كأركان الصلاة، فإن الفرض منها ما ينطلق الاسم عليه، فإذا طولها يقع الكل فرضا مجتبى.
‘কোনো ব্যক্তি যদি একটি উট বা গরুর পুরোটা দ্বারা কুরবানী করে তবে পুরোটা ওয়াজিব হিসাবে আদায় হবে।’
প্রথম কথা হল, উক্ত বক্তব্যে কোথায় বলা আছে যে, একটি উট বা গরুতে কুরবানীর সাথে অন্য নিয়ত গ্রহণযোগ্য নয়! এই ইবারত থেকে কিছুতেই এ দাবি প্রমাণিত হয় না। একটু লক্ষ করা হলে বরং বিপরীত দিকটাই সহজে প্রমাণিত হয়। কেননা উক্ত বক্তব্যে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি যদি একটি গরু দ্বারা কুরবানী করে তবে পুরোটাই ওয়াজিব কুরবানী হিসাবে আদায় হবে। এক্ষেত্রে এক অংশ ওয়াজিব আর ছয় অংশ নফল হবে না। কারণ কুরবানীদাতা পুরোটাকেই ওয়াজিব করে নিয়েছে, তাই তার নিয়ত অনুযায়ী পুরোটাই ওয়াজিব গণ্য হবে। কিন্তু যদি গরুর পুরো সাত অংশ দ্বারা ওয়াজিব কুরবানী আদায়ের নিয়ত না করে, তবে পুরো অংশ ওয়াজিব গণ্য হবে নাÑ তা যাহিদী রাহ.-এর উক্ত বক্তব্য থেকেই তো বুঝে আসে। এর সাথে মুজতাবার ইবারতের পূর্বাপর মিলিয়ে দেখা হলে তো আর কোনোই অস্পষ্টতা থাকে না। নিম্নে লক্ষ করুনÑ
قال الخوميني ...والبقرة أفضل من ست شياه إذا استويا قيمة ولحما، لأنها أكثر دما، لكنه ذكر بعد هذا ما ينافي هذا، فقال: الشاة أفضل من البقرة إذا استويا قيمة، لأن بعض أجزاء البقرة يقع تطوعا، فلو ضحى أحدهم بشاة بسبعين، والثاني بقرة بسبعين، والثالث تصدق بالسبعين، فالأول أفضل منهما، والثاني من الثالث، والأول أصح لأن التضحية يقع بسبع البقرة إذا اقتصر عليه، وإن ضحى الكل يقع الكل فرضا، كأركان الصلاة، فإن الفرض منها ما ينطلق الاسم عليه، فإذا طولها يقع الكل فرضا كذا هذا.
যাহিদী রাহ.-এর বক্তব্যÑ
لأن التضحية يقع بسبع البقرة إذا اقتصر عليه
(কারণ গরু দ্বারা কুরবানী করার ক্ষেত্রে তখনই এক সপ্তমাংশ শুধু কুরবানী গণ্য হবে, যখন কোনো ব্যক্তি একটি গরুর এক সপ্তমাংশ শুধু কুরবানীর জন্য সীমাবদ্ধ করে নেবে।)Ñ লক্ষ করা হলে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, একটি গরুর পুরোটা দ্বারা যদি কেউ ওয়াজিব কুরবানী আদায়ের নিয়ত না করে; বরং এক সপ্তমাংশ দ্বারা ওয়াজিব আর বাকি ছয় অংশ দ্বারা নফল আদায়ের নিয়ত করে, তাহলে তার নিয়ত অনুযায়ী এক অংশ দ্বারা ওয়াজিব কুরবানী আদায় হবে এবং বাকি ছয় অংশ দ্বারা নফল কুরবানী আদায় হবে।
যাহিদী রাহ.-এর যে ইবারত দ্বারা তিনি নিজের মত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন পুরো ইবারত সামনে এসে যাওয়ার পর তার স্বপক্ষে তা দলীল হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না; বরং তার বিপরীত দিকটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
মূলত এখানে মাসআলা হল দুটো। এক হল, একটি উট বা গরুতে এক ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন নিয়তে একাধিক দম বা কুরবানীর নিয়ত করা। আর দ্বিতীয় হল, একটি গরুর পুরোটা দ্বারা একটি কুরবানীর নিয়ত করা। ঐ গ্রন্থকার একটির সাথে আরেকটিকে মিলিয়ে একাকার করে ফেলেছেন।
উক্ত ফতোয়াগ্রন্থে যে বিষয়কে খুব বড় করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে তা হল, ওয়াজিব কুরবানীর সাথে নফল কুরবানী বা আকীকার অংশ রাখার কোনো একটি দলীলও নেই।
এ দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি এমন সব ফিকহী ইবারতকে দলীল বানানোর চেষ্টা করেছেন, যা আদৌ দলীল হওয়ার যোগ্য নয়। পক্ষান্তরে যেসব ইবারত থেকে ওয়াজিব কুরবানীর সাথে নফল অংশ রাখা জায়েয হওয়া স্পষ্ট বুঝা যায়, সেগুলোকে তিনি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। অথচ আমরা পূর্বে সুস্পষ্ট ফিকহী বক্তব্য দ্বারা প্রমাণ করে এসেছি যে, একটি বড় পশুতে এক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব কুরবানীর সাথে নফল অংশ রাখা জায়েয। পাঠকের সুবিধার্থে ঐসকল হাওয়ালাগুলো এক নজরে এখানে উল্লেখ করে দেয়া হল :
আলআজনাস লিননাতিফী
فإذا اشترى رجل أضحيته، ثم أشرك فيها ستة، أجزأت عنهم، وصار كأنه أوجب سبعها، وستة أسباعها يتطوع به.
আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর, ইবনে নুজাইম
ولم أر الآن ما إذا أخرج بعيرا عن خمسة من الإبل. هل يقع فرضا أو خُمُسَهُ؟
وأما إذا نذر ذبح شاة فذبح بدنة، ولعل فائدته في النية: هل ينوي في الكل الوجوب أو لا؟ وفي الثواب: هل يثاب على الكل ثواب الواجب أو ثواب النفل فيما زاد؟
...ثم رأيتهم قالوا في الأضحية كما ذكره ابن وهبان معزيا إلى الخلاصة: الغني إذا ضحى بشاتين وقعت واحدة منهما فرضا والأخرى تطوع؛ وقيل الأخرى لحما، انتهى
একটি উট দ্বারা পিতা ও শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে নফল কুরবানী
ইমাম কাযী খান রাহ. বলেনÑ
و لو ضحى غني بدنة عن نفسه و عن ستة من أولاده ليس هذا في ظاهر الرواية. و قال الحسن بن زياد رحمه الله تعالى في كتاب الأضحية له: إن كان أولاده صغارا جاز عنه وعنهم جميعا في قول أبي حنيفة و أبي يوسف رحمهما الله تعالى.
জামেউর রুমূযÑ
وفي الكلام إشعار بأنه لو ضحى عنه و عن ستة من أولاده وجعل لكل سبعا جاز إلا أنه غير ظاهر الرواية .....وإن ضحى من مال نفسه فهو كأضحيته.
ফখরুদ্দীন আফেন্দী রাহ.Ñ
وإن ضحى أي الأب من مال نفسه للطفل فهو كأضحيته أي الأب مثلا.
ইমদাদুল ফাতাওয়াÑ
سوال۔ ..احقر نے گذشتہ عیدالاضحیٰ کے موقع پر قربانی کے گائے میں ایک حصہ حضرت کی طرف سے لیا تھا اس وقت اس کی اطلاع حضور کو نہیں کی تھی اس کی بابت اس وقت مسئلہ بھی معلوم نہیں تھا کہ اطلاع کرنی چاہئے تھا یا نہیں اب بہشتی زیور سے یہ مسئلہ معلوم ہوا کہ اگر کوئی شخص یہاں موجود نہیں اور دوسرے شخص نے اس کی طرف سے بغیر اس کے امر کے قربانی کر دی تو یہ قربانی نہیں ہوئی اور اگر کسی غائب کا حصہ کسی جانورمیں بدون اس کے امر کے تجویز کر لیا تو اور حصہ داروں کی قربانی بھی صحیح نہ ہوگی
الجواب۔ بہشتی زیور میں جو مسئلہ مذکور ہے وہ اضحیہ واجبہ کے متعلق ہے، اضحیہ تطوع کے متعلق نہیں، اور اسکی دلیل عالمگیری کا یہ جزئیہ ہے
ولو ضحى ببدنة عن نفسه وعرسه وأولاده ليس هذا في ظاهر الرواية وقال الحسن بن زياد في كتاب الأضحية: إن كان أولاده صغارا جاز عنه وعنهم جميعا في قول أبي حنيفة وأبي يوسف - رحمهما الله تعالى .
জাওয়ামিউল ফিকহ লিলআত্তাবীÑ
ويستحب عن أولاده الصغار وعن مماليكه و يكون قربة ولا يجب عنهم.
মাবসুত, সারাখসী-
ولا خلاف أنه ليس على المولى أن يضحي عن أحد من مماليكه فإن تبرع بذلك جاز. وإذا جعله شريكا في البدنة ففيه قياس واستحسان لما بينا.
ফয়যুল কাদীর, মুনাভী রাহ.Ñ
تجزئ كل واحدة منهما عن سبعة، فلو ضحى ببقرة أو جزور كان الزائد على السبع تطوعا، يصرفه إلى أنواع التطوع إن شاء.
আলফাতাওয়াল কুবরা, হাইতামীÑ
أما لو ذبح بدنة أو بقرة عن سبعة أسباب، منها ضحية وعقيقة والباقي كفارات في نحو الحلق في النسك فيجزئ ذلك، وليس هو من باب التداخل في شيء، لأن كل سبع يقع مجزيا عما نوي به.
وإذا كانوا أقل من سبعة أجزأت عنهم وهم متطوعون بالفضل كما تجزي الجزور عمن لزمته شاة ويكون متطوعا بفضلها عن الشاة وإذا لم توجد البدنة كان عدلها سبعة من الغنم قياسا على هذا الحديث، وكذلك البقرة.
শরহুল মুহাযযাব, নববীÑ
ولو ولد له ولدان فذبح عنهما شاة لم تحصل العقيقة، ولو ذبح بقرة أو بدنة عن سبعة أولاد أو اشترك فيها جماعة جاز.
ইলাউস সুনান
ولو ولد له ولدان فذبح عنهما شاة لم تحصل العقيقة، ولو ذبح بقرة أو بدنة عن سبعة أولاد، أو اشترك فيها جماعة جاز.
ইমদাদুল ফাতাওয়া
گائے کا عقيقہ کہ آثار میں تو منقول دیکھا نہیں گیا ۔ البتہ فقہاء نے گائے میں عقیقہ کا حصہ لینے کو لکھا ہے تو اس کے جواز کا قائل ہونا بھی ضروری ہے کہ گائے کا حصہ بدل ہے شاة کا لیکن پوری گائے سے عقیقہ کرنا اس سے فقہاء نے بھی تعرض نہیں کیا ۔ مگر قواعد سے یہ ایسا ہے جیسی سات بکریوں سے عقیقہ کرنا جو ظاہرا سنت سے تجاوز ہے جیسے ظہر کی پانچ رکعت پڑھنا بہتر یہ ہے کہ اور کسی عالم سے بھی تحقیق کر لیا جاوے.
ইমদাদুল আহকাম
الجواب۔ بکری میں تو ایک بچہ سے زائد کا عقیقہ نہیں ہو سکتا اور گائے بیل میں سات بچوں تک کا ہو سکتا ہے خواہ سب ایک ہی شخص کے ہوں یا مختلف لوگوں کے.
উপরোক্ত বক্তব্যগুলো ওয়াজিবের সাথে নফল অংশ বা আকীকার অংশ রাখা সংক্রান্ত। এসব বক্তব্যে সুস্পষ্টই বলা হয়েছে, একই ব্যক্তির জন্য একটি উট বা গরুতে কুরবানীর সাথে আকীকা বা সর্বোচ্চ সাতটি পর্যন্ত আকীকা করা জায়েয। এক ব্যক্তির জন্য একটি উট বা গরুতে ওয়াজিবের সাথে নফল অংশ রাখা যাবে নাÑ এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা।
পর্যালোচনা-৩ : ‘ওয়াজিব কুরবানীর সাথে নফল অংশ রাখা যাবে না’ ফতোয়া গ্রন্থটির এ দাবির আরেকটি অদ্ভুত দলীল হল, ওয়াজিবের সাথে ওয়াজিবের ‘তাযাহুম’ (অর্থাৎ একসঙ্গে যুক্ত) হতে পারে। কিন্তু ওয়াজিবের সাথে নফলের তাযাহুম হতে পারে না। তাই ওয়াজিবের সাথে নফলের নিয়ত করলেও পুরোটাই ওয়াজিব হিসাবে আদায় হবে। নফল অংশ আদায় হবে না।
এ বক্তব্যের ব্যাপারে প্রথম কথা হল, তাযাহুম বলতে তিনি কী বুঝাতে চাচ্ছেন? তাযাহুম শব্দ থেকে স্বাভাবিকভাবে যে অর্থ বুঝে আসে তা হল, একই অংশে দুই ওয়াজিব বা এক ওয়াজিব ও এক নফলের নিয়ত করা। এ ধরনের তাযাহুমকে না কেউ জায়েয বলেছে আর না তা আমাদের আলোচ্য মাসআলায় পাওয়া যাচ্ছে। বুঝা গেল, এখানে তাযাহুম দ্বারা উদ্দেশ্যÑ একই পশুর ভিন্ন ভিন্ন হিস্যায় একই ব্যক্তির পক্ষ থেকে ওয়াজিব এবং নফলের নিয়ত করা। এ তাযাহুমকে যে নাজায়েয বা অসম্ভব বলা হচ্ছেÑ তা নিছক একটি ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন এটি ফিক্হ-ফতোয়ার একটি স্বীকৃত মাসআলা। অথচ এ ধারণার পক্ষে ফিক্হ-ফতোয়ার একটি উদ্ধৃতিও নেই। পক্ষান্তরে ফুকাহায়ে কেরাম যে এটিকে স্পষ্ট ভাষায় জায়েয বলেছেনÑ তা তো ইতিপূর্বে আমরা তাদের বক্তব্যে দেখে এসেছি।
আলোচ্য বিষয়ে তাযাহুম সংক্রান্ত তাঁর বক্তব্য যে আগাগোড়া ভুলÑ তা বুঝতে উল্লিখিত উদ্ধৃতিগুলো ছাড়াও নিম্নে আলমুহীতুর রেযাবীর একটি বক্তব্য লক্ষ করুনÑ
المحيط الرضوي : وإن كان معهم صبي ضحى عنه أبوه جاز استحسانا لا قياسا، لأن الإراقة لا تتجزى ونصيب الصغير يقع نفلا فينقلب الكل تطوعا، وجه الاستحسان أن الإراقة قد يتجزى حكما، لأن الشرع لما جوز البقرة من السبعة فقد أقامها مقام سبع شياه و سبع إراقات.
যদি শরীকদের কেউ তার শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করে তবে তা জায়েয। আর শিশুর অংশটি নফল হবে। এক্ষেত্রে যুক্তির দাবি হল, পুরো উট বা গরুই নফল গণ্য হবে। হাঁ, ইস্তিহসানের ভিত্তিতে অন্যদের ওয়াজিব কুরবানীও আদায় হয়ে যাবে। কেননা একটি গরু সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত। আর একটি গরু জবাই করা মানে সাতটি ছাগল জবাই করা।
মুহীতের উপরোক্ত বক্তব্য থেকে যে বিষয় জানা গেল তা হল, শিশু সন্তানের অংশটি নফল হিসাবে আদায় হবে আর কিয়াসের দাবি হল, পুরো গরুই নফল গণ্য হবে। হাঁ, ইস্তিহসানের ভিত্তিতে সকলের কুরবানীই আদায় হয়ে যাবে। কারণ একটি গরু সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত। তাই একটি গরুতে বিভিন্ন প্রকারের সাতটি পর্যন্ত কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। সুতরাং এক্ষেত্রে ওয়াজিবের সাথে নফলের ‘তাযাহুম’-এর প্রসঙ্গ টেনে আনাটাই অবান্তর।
আকমালুদ্দীন বাবারতী রাহ.-এর বক্তব্য আরো স্পষ্ট। যেমনÑ
وفي القياس لا يجوز، لأن الإراقة لا تتجزأ، وبعض الإراقة وقع نفلا أو لحما فصار الكل كذلك، ولم يعكس، لأن الواجب قد ينقلب تطوعا بخلاف العكس، والإراقة قد تصير للحم مع نية القربة إذا لم تصادف محلها، أو كانت في غير وقت الأضحية، والإراقة للحم لا تصير قربة بحال.
বাবারতী রাহ. সুস্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন যে, শরীকদের মধ্যে শিশুর অংশটি নফল হবে, তাই পুরো গরুই নফল গণ্য হবে। এর বিপরীত হবে না। কেননা ওয়াজিব কখনও নফল গণ্য হয়, কিন্তু নফল ওয়াজিব গণ্য হয় না।
ইমাম রযীউদ্দীন সারাখসী রাহ. ও আকমালুদ্দীন বাবারতী রাহ.-এর বক্তব্য দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ফতোয়া গ্রন্থটিতে সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলা হয়েছে।
একটি অস্পষ্টতার নিরসন
গ্রন্থটিতে ‘মুলতাকাল আবহুর’-এর ইবারত وكذا لو ذبح بدنة عن أضحية ومتعة وقران-এর ওপর দুটি আপত্তি করা হয়েছে। একটি হল, উক্ত বক্তব্যে ذبح মাজহুলের সীগা ধরা হলে এটি এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী হওয়ার দলীলযোগ্য থাকে না।
দুই. এক ব্যক্তির যেহেতু একসাথে তামাত্তু এবং কিরান হজ¦ করা সম্ভব নয় তাই ‘মুলতাকাল আবহুর’-এর উপরোক্ত বক্তব্য অবশ্যই একাধিক ব্যক্তির সাথে প্রযোজ্য।
এক্ষেত্রে আমরা বলব, ফতোয়া গ্রন্থটির উপরোক্ত প্রশ্নই যে ঠিক নয়Ñ তা বোঝার জন্য সদরুশ শহীদ রাহ. (যিনি ইমাম কাযী খান রাহ. ও ছাহেবে হেদায়ার বিশিষ্ট উস্তায ও অনেক উঁচু স্তরের হানাফী ফকীহ) ও ইমাম নববী রাহ.-এর ইবারত উল্লেখ করে দেয়াই যথেষ্ট মনে করছি। লক্ষ করা যাক, সদরুশ শহীদ রাহ.-এর উদ্দাতুল মুফতীন-এর ইবারতÑ
رجل وجب عليه جزاء الصيد و دم الكفارة و دم الإحصار ودم المتعة ودم القران والأضحية فنحر جزورا أو ذبح بقرة بنية الكل جاز، والله أعلم.
এক ব্যক্তির ওপর (ইহরাম অবস্থায় শিকারের কারণে) শিকারের দম, কাফফারার দম, ইহসারের দম, তামাত্তুর দম, কিরানের দম এবং কুরবানী আবশ্যক হয়েছে। সে যদি এসব কিছু আদায়ের নিয়তে একটি উট বা গরু জবাই করল তবে তা জায়েয আছে। আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক জ্ঞাত। Ñউদ্দাতুল মুফতী, পৃষ্ঠা ২৮
ইমাম নববী রাহ. আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাবে লেখেনÑ
ويجوز أن ينحر الواحد بدنة أو بقرة عن سبع شياه لزمته بأسباب مختلفة كتمتع وقران وفوات ومباشرة ومحظورات في الإحرام ونذر التصدق بشاة مذبوحة والتضحية بشاة.
এক ব্যক্তির জন্য সাতটি ছাগলের পরিবর্তে একটি উট বা গরু কুরবানী করা জায়েয আছে; যে সাতটি ছাগল তার উপর বিভিন্ন কারণে আবশ্যক হয়েছিল। যেমন তামাত্তুর দম, কিরানের দম, হজ¦ ছুটে যাওয়ার কারণে দম, স্ত্রী সহবাসের কারণে, ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ করার কারণে, ছাগল জবাই করে তা সদকা করে দেয়ার মান্নতরে কারণে, ছাগল দ্বারা কুরবানী করার মান্নতের কারণে। Ñআলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব, ৮/৩৭০
যদি ধরেও নেয়া হয় যে, মুলতাকাল আবহুরের ইবারত অস্পষ্ট; কিন্তু সদরুশ শহীদ রাহ. ও ইমাম নববী রাহ.-এর ইবারত তো দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। উভয়ের বক্তব্যে ‘মা‘রূফ’-এর ছিগা ব্যবহার করা হয়েছে এবং একই ব্যক্তির কথা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের উক্ত বক্তব্যকে কি ভুল আখ্যা দেয়ার কোনো সুযোগ আছে? আসলে মুলতাকাল আবহুরের ইবারতের ব্যাপারে যে প্রশ্ন তুলেছেন এখানে এ প্রশ্নের সুযোগই নেই। কারণ তিনি উক্ত ইবারতের প্রয়োগক্ষেত্র ধরে নিয়েছেন একই বছরে এক ব্যক্তির কিরান ও তামাত্তু হজ¦ করা প্রসঙ্গে। অথচ সদরুশ শহীদ রাহ. ও ইমাম নববী রাহ.-এর যে ইবারত, তা এক সফরের বিষয়েই নয়; বরং সেখানে দেখানো হয়েছেÑ একটি উট বা গরুতে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন দমের নিয়তে কুরবানী করা যাবে কি না। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, একটি পশুতে কিরান ও তামাত্তু জমা হয় কীভাবে?
উত্তর হল, এক্ষেত্রে এক ব্যক্তির জন্য একটি পশুতে কিরান ও তামাত্তু একত্রিত হওয়া অসম্ভব কোনো বিষয় নয়। আর তা এভাবে যে, আমরা জানি, তামাত্তু হজ¦ আদায়কারীর উপর একটি ‘দমে শোকর’ আদায় করা ওয়াজিব। দমের পশু ব্যবস্থা করতে না পারলে তার জন্য দশটি রোযা রাখা আবশ্যক। তিনটি রোযা নয় তারিখ আরাফার দিন পর্যন্ত আর বাকি সাতটি রোযা হজে¦র পর যে কোনো সময়। আরাফার দিন পর্যন্ত তিনটি রোযা কেউ যদি না রাখতে পারে তবে তার ওপর দম আদায় করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে সে হজের বাকি কাজ সেরে হালাল হয়ে যাবে। আর উক্ত দম সে যখন ব্যবস্থা করতে পারবে তখন আদায় করে দেবে। এ দম সে আগামী বছরও আদায় করতে পারবে নিঃসন্দেহে। এখন এ ব্যক্তি আগামী বছর উদাহরণস্বরূপ কিরান হজে¦র ইহরাম করে হজ¦ করতে গেল অতঃপর হজে¦র কাজ সম্পাদন করার পর কিরানের দমে শুকর আদায়ের উদ্দেশ্যে সে উট বা গরু ক্রয় করল এবং সাথে সাথে এ পশুতে সে বিগত বছরের তামাত্তু হজে¦র দম আদায়েরও নিয়ত করল তাহলে তার উভয় দমই এ পশু দ্বারা আদায় হয়ে যাবে। এভাবে একটি পশুতে একই ব্যক্তির দমে তামাত্তু এবং দমে কিরান আদায় হওয়া খুবই সম্ভব বিষয়। এ বিশ্লেষণ অনুযায়ী ‘মুলতাকাল আবহুর’-এর বক্তব্যও একই ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রজোয্য হতে কোনো বাধা নেই।
তিনি নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্য কাযী খান রাহ.-এর ইবারতÑ
و لو ضحى غني بدنة عن نفسه و عن ستة من أولاده، ليس هذا في ظاهر الرواية. و قال الحسن بن زياد رحمه الله تعالى في كتاب الأضحية له : إن كان أولاده صغارا جاز عنه وعنهم جميعا في قول أبي حنيفة و أبي يوسف رحمهما الله تعالى.
Ñএর ব্যাপারে বলেছেন যে, উক্ত বক্তব্যে শিশুর অংশের মালিক শিশু নিজেই, পিতা নয়। এবং উক্ত ইবারত শিশুর পক্ষ থেকে ওয়াজিব কুরবানী সম্পর্কিত। তাই এক্ষেত্রে পিতা যেহেতু ঐ অংশের মালিক নয় সুতরাং ঐ গরুতে পিতার একাধিক অংশ নেই। তাই কাযী খানের এ বক্তব্য দ্বারা একটি পশুতে এক ব্যক্তির একাধিক অংশ রাখা জায়েযÑ তা দলীল হিসাবে উপস্থাপনযোগ্য নয়।
হযরত রাহ.-এর উক্ত কথা যে সঠিক নয় তা তো বিখ্যাত ফকীহ ও ইমাম নুসাইর ইবনে ইয়াহইয়া রাহ., মুহাম্মাদ ইবনে মুকাতিল রাহ., মুহাম্মাদ ইবনে সালামা রাহ., আবু মুতী‘ রাহ.-এর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট। তাঁরা সুস্পষ্টই বলেছেন যে, শিশুর অংশের মালিক পিতা। শিশু সন্তান কুরবানীর সওয়াব পাবে। শিশুর অংশের মালিক সে নিজে তখনই হবে, যদি তার সম্পদ হতে পিতা কুরবানী করে। এ মাসআলা সুস্পষ্টভাবেই ফিকহের কিতাবে উল্লেখ আছে। আর সেক্ষেত্রে শিশুই যেহেতু এ গোশতের মালিক, তাই এ গোশত কী করা হবেÑ তারও আলোচনা ফিক্হবিদগণ পৃথকভাবে করেছেন। কিন্তু এ মাসআলায় ফিক্হবিদগণ এ আলোচনা করেননি। কারণ সে তো এ গোশতের মালিকই নয়। আর উক্ত এবারত শিশুর পক্ষ থেকে পিতার নফল কুরবানী সংক্রান্ত তাতো ইমদাদুল ফাতাওয়ায় সুস্পষ্টই বিবৃত হয়েছে। তাই উক্ত বক্তব্যকে ওয়াজিবের উপর প্রয়োগ করা ভ্রম বৈ কিছু নয়।
দ্বিতীয় কথা হল, শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জাহিরুর রিওয়ায়াতে মুস্তাহাব বলা হয়েছে আর নাদিরুর রিওয়ায়াতে ওয়াজিব বলা হয়েছে। প্রশ্ন হল, এ হুকুম বা বিধানটা কার ওপর? নিঃসন্দেহে পিতার ওপর। যেমন আকীকা করা পিতার দায়িত্ব। আকীকার গোশতের মালিকও পিতা। তিনি তাতে নিজ ইচ্ছানুযায়ী হস্তক্ষেপ বা ব্যবহার করতে পারেন। কুরবানীর বিষয়টাও অনুরূপ। পিতা যখন নিজ সম্পদ হতে শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করবেন এ কুরবানীর মালিকও তিনিই থাকবেন। একজনের সম্পদ অন্যজন তখনই মালিক হবে, যখন তা অন্যকে হেবা বা দান করে দেয়া হবে। সুতরাং উক্ত ফতোয়াগ্রন্থে যে বলা হয়েছেÑ শিশুই ঐ অংশের মালিকÑ ফিক্হবিদগণের বক্তব্যের আলোকে তা সহীহ নয়। এর স্বপক্ষে উক্ত গ্রন্থে ফিক্হবিদগণ থেকে একটি দলীলও পেশ করা সম্ভব হয়নি; বরং সম্পূর্ণ অনুমান নির্ভর কথা বলা হয়েছে। শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করা সম্পর্কিত বক্তব্যকে তো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ক্রিতদাসের পক্ষ থেকে মনিবের কুরবানী করার মাসআলা হয়ত খুঁজে পাননি অথবা তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ ক্রিতদাসের পক্ষ থেকে মনিবের কুরবানী করার মাসআলায় ঐ ধরনের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর সুযোগই নেই।
এরপর তিনি ফতোয়া কাযীখান (৩/৩৪৯) এর আরেকটি ইবারত দ্বারা নিজের বিচ্ছিন্ন মতটি প্রমাণ করতে চেয়েছেন। অথচ সে ইবারতেরও তাঁর দাবির সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি এতটাই স্পষ্ট যে, এ নিয়ে আলাদাভাবে পর্যালোচনার প্রয়োজন বোধ করছি না। আসলে পূর্ববর্তী ফকীহগগণের উপরে বর্ণিত স্পষ্ট ফতোয়াগুলো যদি তাঁর দেখার সুযোগ হতো তাহলে তিনি কাযীখানের এসব বক্তব্য উদ্ধৃত করার কসরতই করতেন না।
কুরবানীর সাথে আকীকা, ঈসালে সওয়াবের অংশ রাখা সম্পর্কিত ভারত পাকিস্তানের মুফতীগণের ফতোয়া
ইমদাদুল ফাতাওয়া
سوال۔ گائے یا اونٹ کی قربانی میں دو تین آدمی شریک ہوں ان میں سے ایک نے یا ایک سے زائد نے یہ خیال کیا کہ جب سات آدمی تک گائے یا اونٹ کی قربانی میں شریک ہو سکتے ہیں تو میں رسول اللہ صلوسلم عل یا اور کسی بزرگ کی طرف سے یا اور کسی اپنے عزیز قریب دوست کی طرف سے خواہ وہ زندہ ہیں یا ان کا انتقال ہوچکا ہے شریک ہو جاؤں اور سات حصہ پورے کر لوں اور ان کی طرف سے بقدر حصہ قیمت ادا کروں یہ جائز ہے یا نہیں؟
الجواب۔جائز ہے کیونکہ حی اور میت کی طرف سے قربانی کا یکساں حکم ہے في الدر المختار وإن مات أحد السبعة وقال الورثة اذبحوا عنه وعنكم صح، إلى قوله لقصد القربة من الكل. اه والله أعلم
গরু অথবা উটের কুরবানীতে দুই/তিন ব্যক্তি শরীক হয়েছে। তাদের মধ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তি এমন চিন্তা করল, যখন একটি গরু বা উটে সাত ব্যক্তি পর্যন্ত শরীক হতে পারে, তাহলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে অথবা জীবিত বা মৃত কোনো বুযুর্গ বা কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুর পক্ষ থেকে অংশ নেব এবং সাত অংশ পূর্ণ করব এবং তাদের ঐ অংশের মূল্য পরিশোধ করে দেব। এটা কি জায়েয হবে?
উত্তর : জায়েয হবে। কেননা জীবিত ও মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানীর একই বিধান। Ñইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৫৩২
দারুল উলুম দেওবন্দ-এর ফতোয়া
একই পশুতে এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী-আকীকা সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তর :
الجواب (الف- ب) ایک گائے میں قربانی کا حصہ اور عقیقوں کے حصے لے سکتے ہیں ۔ قربانی اور عقیقہ ادا ہو جاوے گا دوسری صورت میں بھی عقیقہ صحیح ہے ایک گائے میں دو تین چار سات تک عقیقے ہو سکتے ہیں۔فقط
উত্তর : একটি গরুতে কুরবানী এবং আকীকার অংশ রাখতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা উভয়টিই আদায় হবে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রেও আকীকা সহীহ। একটি গরুতে দুই, তিন, চার, এভাবে সাত পর্যন্ত আকীকা হতে পারে।
Ñফতোয়া দারুল উলূম দেওবন্দ, খ. ১৫, পৃষ্ঠা ৬১৩
কিফায়াতুল মুফতী
سوال ۔ گائے یا بیل میں تو سات آدمیوں کی قربانی چلتی ہے۔ کیا ایک ہی گائے یا بیل میں سات لڑکوں یا لڑکیوں کا بھی چلتا ہے؟
جواب۔ ایک گائے میں عقیقہ کے سات حصے ہو سکتے ہیں جس طرح قربانی کے سات حصے ہو سکتے ہیں۔
প্রশ্ন : গরু অথবা ষাঁড় দ্বারা তো সাত ব্যাক্তর পক্ষ থেকে কুরবানী করা যায়। প্রশ্ন হল, একটি গরু বা ষাঁড় দ্বারা কি সাত ছেলে বা মেয়ের আকীকা করা যাবে?
উত্তর : এক গরুতে আকীকার সাত অংশ হতে পারে। যেমনটি কুরবানীর ক্ষেত্রে সাত অংশ হতে পারে। Ñকিফায়াতুল মুফতী ১২/১৬৩
ফাতাওয়া উসমানী
جواب۔ گائے میں عقیقہ ہو جاتا ہے دو حصے لڑکے کی طرف سے اور ایک حصہ لڑکی کی طرف سے کیا جائے اس طرح مذکورہ گائے میں تین لڑکوں اور ایک لڑکی کا عقیقہ ہو جائے گا
উত্তর : গরু দ্বারাও আকীকা করা যায়। দুই অংশ পুত্র সন্তানের পক্ষ থেকে রাখা হবে আর এক অংশ কন্যা সন্তানের পক্ষ থেকে। এতে করে উল্লিখিত গরু দ্বারা তিন ছেলে ও এক মেয়ের আকীকা আদায় হয়ে যাবে। Ñফাতাওয়া উসমানী ৪/১৩৩
জামিআতুল উলূমিল ইসলামিয়াহ, বিন্নূরী টাউন, করাচীর ফতোয়া
...اسی طرح اگر ایک ہی شخص ایک بڑے جانور میں اپنی ہی طرف سے ایک حصہ قربانی کا اور ایک حصہ کسی اور واجب کا یا کسی نفلی چیز کا رکھتا ہے تو بھی جمہور اہل علم کے نزدیک اس ایک شخص کی ان مختلف نیات کا اعتبار ہوگا، اس لیے نصاً بات معلوم ہے کہ بڑے جانور میں سات حصے ہوتے ہیں۔البتہ اس صورت میں مفتی رشید احمد لدھیانوی صاحب نور اللہ مرقدہ کی رائے یہ تھی کہ ایک بڑے جانور میں ایک شخص کی مختلف نیات کا اعتبار نہیں ہے، یہ حضرت کا تفرد تھا جسے دیگر معاصر اہلِ علم نے قبول نہیں کیا تھا، ہمارے دارالافتاء جامعہ علوم اسلامیہ علامہ یوسف بنوری ٹاؤن کے اکابرین نے بھی دیگر اہلِ علم کی طرح اس رائے کو قبول نہیں کیا تھا، لہذا ایک بڑے جانور میں خواہ مختلف لوگ یا ایک شخص متعدد عبادات کی نیت کرتا ہے تو اس کا اعتبار ہوگا۔
...অনুরূপ এক ব্যক্তি যদি একটি বড় পশুতে নিজের পক্ষ থেকে এক অংশে কুরবানীর, এক অংশে তারই অন্য কোনো ওয়াজিবের অথবা কোনো নফলের নিয়ত করল তবে এক্ষেত্রেও জুমহুর আলেমগণের নিকট এক ব্যক্তির এমন ভিন্ন ভিন্ন নিয়ত গ্রহণযোগ্য হবে। কারণ হাদীসে সুস্পষ্ট আছে যে, বড় পশুতে সাতটি অংশ থাকে। তবে এক্ষেত্রে মুফতী রশীদ আহমাদ লুধিয়ানবী ছাহেবের মত ছিল, একটি বড় পশুতে এক ব্যক্তির বিভিন্ন নিয়ত গ্রহণযোগ্য নয়। এটি হযরতের ব্যক্তিগত মত ছিল, সমকালীন আলেমগণ তার এ মতকে গ্রহণ করেননি। আমাদের জামিআতুল উলূমিল ইসলামিয়া বিন্নূরী টাউনের দারুল ইফতার আকাবিরগণও অন্যান্য আহলে ইলমের মত তাঁর এ মতকে গ্রহণ করেননি। সুতরাং একটি বড় পশুতে চাই ভিন্ন ভিন্ন শরীক হোক অথবা এক ব্যক্তি বিভিন্ন প্রকার ইবাদতের নিয়ত করুকÑ তা গ্রহণযোগ্য হবে। (দেখুন, ফতোয়া নং ১৪৩৯০৯২০১৫৭৯)
মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী রাহ.-এর ফতোয়া
سوال۔ اگر کوئی شخص بڑے جانور میں بنیت عقیقہ شریک ہوجائےۓ تو درست ہوگا یا نہیں ہیں جیسے سات حصے ہیں زید نے اس میں دو حصے سے قربانی کے لئے اور ایک حصہ اسی جانور میں عقیقہ کا لیا تو اس حالت میں عقیقہ درست ہو گا یا نہیں چاہے پیدائش سے ساتویں دن پڑے یا نہ پڑے کسی قسم کی کراہت تو نہیں؟
প্রশ্ন : কোনো ব্যক্তি যদি বড় একটি পশুতে আকীকার নিয়তে শরীক হয় তাহলে কি তা সহীহ হবে? যেমন একটি বড় পশুর সাতটি অংশ হতে যায়েদ নামের ব্যক্তি দুই অংশ কুরবানীর আর এক অংশ আকীকার জন্য রাখলো। এক্ষেত্রে কি আকীকা আদায় হবে? চাই ঐ দিনটি জন্মের সপ্তম দিন হোক অথবা না হোক? এতে কি মাকরূহ হবে?
الجواب حامدا ومصلیا۔ اس صورت میں عقیقہ بھی درست ہے قربانی بھی صحیح ہے بہ نیت عقیقہ کے جانور میں حصہ خریدنے سے کچھ خرابی نہیں ہوتی
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আকীকাও আদায় হবে এবং কুরবানীও আদায় হবে। আকীকার নিয়তে কুরবানীর পশুতে অংশ নেয়ার দ্বারা কোনো অসুবিধা হবে না। Ñফাতাওয়া মাহমুদিয়াহ ১৭/৫১৫
তিনি আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে চূড়ান্ত ফায়সালা হিসাবে বলেন :
الحاصل : ایک شخص ایک گائے کی قربانی کرے اور اس میں جہات متعددہ تقرب کی نیت کرے تو اس کے عدم جواز کی کوئی دلیل نہیں.
মোটকথা, এক ব্যক্তি যদি একটি গরু কুরবানী করে আর তাতে ভিন্ন ভিন্ন প্রকার ‘কুরবতের’ (আল্লাহর নৈকট্য অর্জন) নিয়ত করে তাহলে তা নাজায়েয হওয়ার কোনো দলীল নেই। Ñফাতাওয়া মাহমুদিয়াহ ১৭/৪১৭
কিতাবুল ফাতাওয়া
جواب۔ ایک ہی جانور میں قربانی اور عقیقہ کا حصہ ملا کر کیا جاسکتا ہے کیونکہ دونوں کا مقصد اللہ تعالی کی قربت اور اجر و ثواب کا حاصل کرنا ہے۔
উত্তর : একই পশুতে কুরবানী ও আকীকার অংশ রাখা যাবে। কেননা উভয়টির উদ্দেশ্যÑ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সওয়াব অর্জন। Ñকিতাবুল ফাতাওয়া ৪/১৬৯
কিতাবুন নাওয়াযিল
قربانی اور عقیقہ دونوں میں قربت اور عبادت کی جہت پائی جاتی ہے؛ لہٰذا کسی بڑے جانور میں ایک ہی شخص کی طرف قربانی اور عقیقہ دونوں کا حصہ لینا درست ہے۔
কুরবানী এবং আকীকা উভয়টির মধ্যে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন ও ইবাদত পাওয়া যায়। তাই একটি বড় পশুতে এক ব্যক্তি কুরবানী ও আকীকা উভয়টির জন্য অংশ রাখতে পারবে। Ñকিতাবুন নাওয়াযিল ১৪/৬৮৭
ফাতাওয়া কাসেমিয়া
الجواب وباللہ التوفیق: ایک شخص بڑے جانور میں مختلف جہات کی نیت کرسکتا ہے یا نہیں ؟ اس کو مفتی رشید صاحبؒ نے ناجائز لکھا ہے مگر حضرت فقیہ الامت مفتی محمود صاحبؒ نے اس کو جائز لکھا ہے اور جواز کا قول ہی زیادہ صحیح اور مفتی بہ ہے۔
উত্তর : এক ব্যক্তি বড় একটি পশুতে বিভিন্ন নিয়ত করতে পারবে কি নাÑ এ ব্যাপারে মুফতী রশীদ আহমাদ লুধিয়ানবী রাহ. নাজায়েয বলেন। কিন্তু হযরত ফকীহুল উম্মত মুফতী মাহমূদ ছাহেব রাহ. জায়েয বলেন। আর জায়েযের মতটি অধিক বিশুদ্ধ এবং ‘মুফতা বিহী’। Ñফাতাওয়া কাসেমিয়া ২২/৩৪১
هذا، وصلى الله تعالى على سيدنا و مولانا محمد وآله وصحبه وبارك وسلم.