আয়াতুল কুরসী : আমল ও ফযীলত
আয়াতুল কুরসী। এই মোবারক আয়াত দিনে-রাতে বারবার পড়ার নির্দেশনা হাদীস শরীফে আছে। মুমিনের কর্তব্য, এই পবিত্র আয়াতকে প্রতিদিনের অযীফা বানিয়ে নেওয়া।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর আয়াতুল কুরসী
হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ
مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُولِ الْجَنّةِ إِلّا أَنْ يَمُوتَ.
প্রতি ফরয নামাযের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না। Ñআমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নাসায়ী, হাদীস ১০০
এই হাদীস শরীফ থেকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পড়ার নির্দেশনা পাওয়া গেল।
শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসী
এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীতে এক আশ্চর্য ঘটনা বর্ণিত আছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমযানে যাকাত (সাদাকাতুল ফিতরের খেজুর) দেখা-শোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (রাতে) এক আগন্তুক এসে সেই (স্তুপিকৃত) খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে মুঠি ভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির করব। সে বলল, দেখুন, আমি এক অভাবী, প্রয়োজনগ্রস্ত ও পরিবারের ভারগ্রস্ত লোক! আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু হুরায়রা! তোমার গত রাতের বন্দীর কী হাল?! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তার অভাব-অনটন ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলায় আমার দয়া জেগেছে। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেখ, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে; সে আবারো আসবে।
ফলে আমার জানা হয়ে গেল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বলেছেন আসবে, অবশ্যই সে আসবে। আমি তার অপেক্ষায় প্রস্তুত হয়ে রইলাম। ইতিমধ্যে সে এসে সেই স্তুপিকৃত খাদ্যবস্তু থেকে মুঠি ভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম, তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাযির করবই। সে তখন বলতে লাগল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি তো অভাবী লোক, পরিবারের ভারগ্রস্ত, আর আসব না। তার এ কথায় আমার দয়া হল। ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বন্দীর কী খবর? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তার প্রচণ্ড অভাবগ্রস্ততা ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলছিল, তাই আমার দয়া হয়েছে, তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
তিনি বললেন, দেখ, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবারো আসবে।
তাঁর এ কথায় তৃতীয় রাতেও আমি অপেক্ষায় রইলাম। একপর্যায়ে সে এসে মুঠি ভরে খাদ্য নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেলি এবং বলি, এবার তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাযির করেই ছাড়ব। এ নিয়ে তিনবার ঘটল যে, তুমি বল, আসবে না, কিন্তু আবারো আস। সে তখন বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আপনাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দিব, যার দ্বারা আল্লাহ আপনাকে উপকৃত করবেন। বললাম, কী সেই কথা? সে বলল, যখন বিছানায় যাবেন তখন আয়াতুল কুরসী পড়বেনÑ اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُو اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত আপনার জন্য একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে ভিড়বে না। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, গত রাতে তোমার বন্দী কী করল? বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে বলল যে, আমাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেবে, যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
জিজ্ঞাসা করলেন, সে কথাগুলো কী? বললাম, সে বলেছে, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। সে বলল, আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত তোমার জন্য এক রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন আর (সকাল পর্যন্ত) কোনো শয়তান তোমার কাছে ভিড়বে না। সাহাবীগণ তো কল্যাণের ব্যাপারে খুবই লালায়িত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনÑ
أَمَا إِنّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ.
শোন, সে তোমাকে সত্যই বলেছে, যদিও সে ডাহা মিথ্যুক। এরপর বললেন, আবু হুরায়রা! তুমি কি জান পরপর তিন রাত কার সাথে কথা বলেছ? তিনি বললেন, না।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনÑ
ذَاكَ شَيْطَانٌ.
সে ছিল এক শয়তান।
হাদীসটির আরবী পাঠÑ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: وَكّلَنِي رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ، فَأَتَانِي آتٍ فَجَعَلَ يَحْثُو مِنَ الطّعَامِ فَأَخَذْتُهُ، وَقُلْتُ: وَاللهِ لَأَرْفَعَنّكَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، قَالَ: إِنِّي مُحْتَاجٌ، وَعَلَيّ عِيَالٌ وَلِي حَاجَةٌ شَدِيدَةٌ، قَالَ: فَخَلّيْتُ عَنْهُ، فَأَصْبَحْتُ، فَقَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ البَارِحَةَ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً، وَعِيَالًا، فَرَحِمْتُهُ، فَخَلّيْتُ سَبِيلَهُ، قَالَ: أَمَا إِنّهُ قَدْ كَذَبَكَ، وَسَيَعُودُ، فَعَرَفْتُ أَنّهُ سَيَعُودُ، لِقَوْلِ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِنّهُ سَيَعُودُ، فَرَصَدْتُهُ، فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطّعَامِ، فَأَخَذْتُهُ، فَقُلْتُ: لَأَرْفَعَنّكَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، قَالَ: دَعْنِي فَإِنِّي مُحْتَاجٌ وَعَلَيّ عِيَالٌ، لاَ أَعُودُ، فَرَحِمْتُهُ، فَخَلّيْتُ سَبِيلَهُ، فَأَصْبَحْتُ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً، وَعِيَالًا، فَرَحِمْتُهُ، فَخَلّيْتُ سَبِيلَهُ، قَالَ: أَمَا إِنّهُ قَدْ كَذَبَكَ وَسَيَعُودُ، فَرَصَدْتُهُ الثّالِثَةَ، فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطّعَامِ، فَأَخَذْتُهُ، فَقُلْتُ: لَأَرْفَعَنّكَ إِلَى رَسُولِ اللهِ، وَهَذَا آخِرُ ثَلاَثِ مَرّاتٍ، أَنّكَ تَزْعُمُ لاَ تَعُودُ، ثُمّ تَعُودُ قَالَ: دَعْنِي أُعَلِّمْكَ كَلِمَاتٍ يَنْفَعُكَ اللهُ بِهَا، قُلْتُ: مَا هُوَ؟ قَالَ: إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ، فَاقْرَأْ آيَةَ الكُرْسِيِّ: اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُو اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ، حَتّى تَخْتِمَ الآيَةَ، فَإِنّكَ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللهِ حَافِظٌ، وَلاَ يَقْرَبَنّكَ شَيْطَانٌ حَتّى تُصْبِحَ، فَخَلّيْتُ سَبِيلَهُ، فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ البَارِحَةَ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، زَعَمَ أَنّهُ يُعَلِّمُنِي كَلِمَاتٍ يَنْفَعُنِي اللهُ بِهَا، فَخَلّيْتُ سَبِيلَهُ، قَالَ: مَا هِيَ، قُلْتُ: قَالَ لِي: إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَةَ الكُرْسِيِّ مِنْ أَوّلِهَا حَتّى تَخْتِمَ الآيَةَ: اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُو اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ، وَقَالَ لِي: لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللهِ حَافِظٌ، وَلاَ يَقْرَبَكَ شَيْطَانٌ حَتّى تُصْبِحَ - وَكَانُوا أَحْرَصَ شَيْءٍ عَلَى الخَيْرِ - فَقَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: أَمَا إِنّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ، تَعْلَمُ مَنْ تُخَاطِبُ مُنْذُ ثَلاَثِ لَيَالٍ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ: لاَ، قَالَ: ذَاكَ شَيْطَانٌ.
Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ২৩১১
এই হাদীস থেকে শয়তানের বৈশিষ্ট্য ও অন্যান্য বিষয়েও অনেক কিছু জানা যায়। যেমন যেসকল খাদ্যবস্তু দ্বারা সদাকাতুল ফিতর আদায় করা যায় (খেজুর, যব, পনির, কিশমিশ, গম) ইত্যাদি ঈদের দিনের আগে সংগ্রহ করা এবং কাউকে তা সংরক্ষণ ও বণ্টনের দায়িত্ব দেয়ার বৈধতা। তবে আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, রাতে শোবার সময় আয়াতুল কুরসী পাঠের সুফল ও ফযীলত।
সকাল-সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসী
হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. থেকে বর্ণিত, তাঁর একটি খেজুর শুকানোর জায়গা ছিল। তাতে খেজুর হ্রাস পেত। এক রাতে তিনি পাহারায় রইলেন। হঠাৎ তিনি কিশোরের মতো এক প্রাণী দেখতে পেলেন। সে তাকে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন্ জাতির? জিন না মানব? সে বলল, জিন। তিনি বললেন, তোমার হাত দাও তো দেখি। সে হাত বাড়িয়ে দিল। দেখা গেল তার হাত ও পশম কুকুরের হাত ও পশমের মতো। সে বলল, এটা জিনের গঠন। সে আরো বলল, জিনেরা জানে, তাদের মধ্যে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো পুরুষ নেই। তিনি বললেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছ? সে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি সাদাকা করতে পছন্দ করেন। তাই আপনার খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে নিতে এসেছি। তিনি বললেন, তোমাদের (অনিষ্ট) থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী? সে বলল, সূরা বাকারার এই আয়াতটিÑ
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ...
যে তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। আর যে সকালে পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বিষয়টি জানালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খবীস সত্য বলেছে। Ñসহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৭৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২০৬৪
উপরোক্ত দুই ঘটনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমর্থনসূচক উক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, দুবৃর্ত্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই আয়াতের আমল কত ফলপ্রসূ।
এ পর্যন্ত আয়াতুল কুরসীর ফযীলত সংক্রান্ত মোট তিনটি হাদীস উল্লিখিত হয়েছে। এই হাদীসগুলো থেকে প্রতিদিন আটবার এই আয়াত পাঠ করার নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছেÑ সকাল-সন্ধ্যায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর ও শোওয়ার সময়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কেউ যদি এই মোবারক আয়াতের অর্থ-মর্ম স্মরণ রেখে উপলব্ধির সাথে তা পাঠ করে তাহলে তা তার জন্য অত্যন্ত বরকতের বিষয় হবে।
অর্থ-মর্ম স্মরণ রাখার গুরুত্ব
কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত যেহেতু একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইবাদত তাই অর্থ না বুঝলেও তা অর্থহীন নয়। অর্থ না বুঝলেও তিলাওয়াতের সওয়াব অবশ্যই পাওয়া যাবে। কিন্তু এই মাসআলার অর্থ কিছুতেই এই নয় যে, কুরআন মাজীদের অর্থ বোঝার চেষ্টা না-করা কাম্য বা অর্থ বোঝার চেয়ে অর্থ না-বোঝাই শ্রেষ্ঠ! কুরআন মাজীদের বহু আয়াতে এই মোবারক কালামের অর্থ-মর্ম বোঝার এবং গভীর অভিনিবেশ সহকারে তা পাঠ করার নির্দেশ আছে। তাই কুরআন মাজীদের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিক্ষার মতো কুরআনে কারীমের অর্থ-মর্ম বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করা এবং চিন্তা-ভাবনার সাথে তা তিলাওয়াত করা কাম্য।
এতে যেমন মুমিনের জ্ঞান ও ঈমান বৃদ্ধি পায় তেমনি তার মন-মস্তিষ্ক, আত্মা ও হৃদয় কুরআনের নূরে নূরানী হয়ে ওঠে।
কুরআনে কারীমের একটি আয়াতÑ আয়াতুল কুরসীর অর্থ-মর্ম সম্পর্কেও আমরা যদি চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারব, কী স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন ভাষায়, কী অসাধারণ প্রতাপান্বিত উপস্থাপনায় এ আয়াতে মহান আল্লাহর পরিচয় প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার মা‘রিফাত ও পরিচয় লাভের চেয়ে বড় জিনিস মানুষের জন্য আর কী হতে পারে? এই জ্ঞানই তো সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান, আর এ বিষয়ে অজ্ঞতাই সবচেয়ে ভয়াবহ অজ্ঞতা।
যে আল্লাহর পরিচয় লাভ করে তার কাছে তার নিজ সত্তার, তার চারপাশের সৃষ্টিজগতের এবং এখানে ঘটে চলা সকল ঘটনার সূত্র স্পষ্ট হয়ে যায়। জীবন-মৃত্যুর তাৎপর্য বোঝা সহজ হয়ে যায়। জীবনের লক্ষ্য নিখুঁতভাবে জানার এবং সেই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার সকল পথ সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসা জেগে ওঠে। এভাবে আল্লাহর স্মরণ ও পরিচয় মানুষকে দান করে তার আত্মপরিচয়। তাকে সচেতন করে তার নিজের লাভ-ক্ষতি সম্পর্কে।
আল্লামা ইবনে কাছীর রাহ.-এর বক্তব্য অনুসারে এই মহিমান্বিত আয়াতে দশটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাক্য রয়েছে। এই দশ বাক্যের মূল বিষয়বস্তু, তাওহীদ। আল্লাহ তাআলার মহান গুণাবলি এ আয়াতে এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তা উপলব্ধি করার পর মুমিনের সর্বসত্তা থেকে ঐ পরম সত্যের ঘোষণাই উৎসারিত হয়, যার মাধ্যমে এই মহিমান্বিত আয়াতের সূচনাÑ اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ আল্লাহÑ তিনি ছাড়া কোনো মা‘বুদ নেই। হ