Jumadal Ula-Jumadal Akhirah 1442   ||   January 2021

ঈমান ও রাজনীতির সংঘাত : প্রাধান্য পাবে কোনটি?

Mawlana Sharif Muhammad

মুমিনের জন্য ঈমান সবার আগে। ঈমানের ডাক, ঈমানের দাবি ও পয়গাম সবার আগে বিবেচ্য। মানুষ হিসেবে জাগতিক ও জীবনিক সকল প্রয়োজন ও প্রসঙ্গের আগে ঈমানের অবস্থান। ঈমানের আহ্বান মুমিনের হৃদয়ে যে শিখা ও সৌরভ ছড়িয়ে দেয় অন্যসব দরকার ও প্রহেলিকার চেয়ে তার ব্যপ্তি ও প্রাধান্য বেশি; সবচেয়ে মুখ্য।

ঈমানের সঙ্গে যদি জাগতিক মোহ ও মোহরের কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে মোহ ও মোহরের ডাক পেছনে পড়ে থাকবে, থাকতে হবে। এগিয়ে যাবে ঈমানের ডাক। ঈমানের আহ্বান শুনলে অবৈধ বিত্ত অথবা অনৈতিক মোহের জগতে বিচরণ করা যায় না। যদি সম্ভব না হয় জাগতিক সুখ ও পরকালীন শান্তির সমন্বয়, সেক্ষেত্রে ঈমানের ডাক ও তার দাবির প্রাধান্যই গুরুত্বপূর্ণ। এ পরিস্থিতিটি সমান গুরুত্বের দাবি রাখে হঠাৎ সামনে চলে আসা সেকুলার রাজনীতি, পৌত্তলিক সংস্কৃতি ও দুনিয়াবাদী সংগঠনের নানা ‘মায়াবী’ আহ্বান ও শ্লোগানেও।

এমন হয়, অনেকসময় ক্ষমতা ও রাজনীতির কুয়াশা মুসলমানের সামনে জটিল বিরোধপূর্ণ কিছু প্রেক্ষাপট ও দৃশ্যচিত্র উপস্থিত করে। জাগতিক সংগঠন, বলয়, সংস্কৃতি, রাজনীতি, স্বার্থ, রাজনীতিকেন্দ্রিক মায়া ও ক্ষমতা তাকে ঈমান ও দ্বীনের মৌলিক আহ্বানকে উপেক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ করে। অনেকসময় দুনিয়ার গান্দা রাজনীতি ঈমান ও দ্বীনের বিরুদ্ধে নেমে যেতে প্ররোচিত করে এবং দ্বীন ও ঈমানের ডাক অস্বীকার করতে বাধ্য করতে চায়। এসব দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি কখনো কখনো ঈমান কিংবা জাগতিক রাজনীতি যে কোনো একটির হয়ে অপরটিকে উপেক্ষার বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে চায়। এসব পরিস্থিতিতে বিচ্যুত গণমাধ্যমের বাতাস, ক্ষমতাগন্ধী পরিবেশ এবং সাংবিধানিক ‘ঘেরাও’ ঈমানের কাছে নিবেদিত বিশ্বাস ও বোধের সামনে পর্দা ফেলে দেয়। নির্বোধ রাজনীতির বিভ্রান্ত বালকের মতো বহু পোশাকি মুসলমান ঈমানের ডাকে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়। ইবলিসের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে ভুল আহ্বানের চোরাবালিতে নিজেকে ঠেলে দেয়। অথচ সাধারণ যে কোনো পরিস্থিতির মতো এইসব দ্বন্দ্বের সময়ও ঈমানের ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রেরণা ও পদক্ষেপটিই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ।

পরিস্থিতিগত জটিলতা অন্ধ ও রাজনীতির কুহক যখন ঈমান ও দ্বীনী গাইরতের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় তখন মুসলমানের দায়িত্ব সে প্রাচীর ভেঙে নিজেকে ঈমানের অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত রাখা। শিআরে ইসলাম অথবা রাসূলের সম্মান কিংবা প্রকাশ্য শিরিকের বিরুদ্ধতার কোনো উচ্চারিত আওয়াজ যখন দেশের আলেম সমাজ ও দ্বীনের কাণ্ডারিদের মুখে উচ্চারিত হয়; নির্দেশিত হয় পথরেখা ও কর্মপন্থা, বিপরীত দিকে রাজনীতি ও জাগতিকতার শ্লোগান সেই পথরেখার বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যের তাণ্ডব তৈরি করে-তখন মুমিনের কাজ ঈমানের সূত্রের সাথে নিজের বিশ্বাস ও অভিব্যক্তির ভালবাসার সম্পর্কটিকে গেঁথে রাখা। প্রয়োজনে প্রকাশ্যে আওয়াজ করে  বৈরি ঝড়ের সামনে নিজের সফেদ বিশ্বাসের মিনার উচুঁ করে ধরা।

শিআরে ইসলাম ও গায়রতে ইসলামের সঙ্গে ইসলাম-মুসলিম বিরুদ্ধতার রাজনীতির কোনো কল্যাণমূলক সম্পর্ক বা সংযুক্তি থাকতে পারে না। ঈমানের দাবি হল, রাজনীতি ও সংস্কৃতির নামে সৃষ্টি করে দেওয়া দ্বীন-বিরোধী কুহকের জাল ভেদ করা। এমনটি করাই মুমিনের কাজ। কিছুতেই ঈমান ও দ্বীনের সঙ্গে দুনিয়াবী, সেকুলার, পৌত্তলিক এবং ইসলাম-বৈরী রাজনীতি ও সংস্কৃতির দ্বন্দ্বে ঈমানের ডাকটাকে উপেক্ষা করা যাবে না। দুনিয়ার চাকচিক্যে ঈমানের ডাক যে উপেক্ষা করবে তার চেয়ে হতভাগা কেউ নেই। ইবলিসতান্ত্রিক দুনিয়ার দাপটে যে ঈমান ও দ্বীনের কোমল প্রশান্তিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে, দুনিয়া ও আখেরাতে এই হঠকারিতা ও বিপথগামিতার মর্মান্তিক পরিণতি তাকে ভোগ করতে হয়। এটা দ্বীনের কথা। এটাই দ্বীনদারির ইতিহাসের কথা।

অত্যন্ত সুখকর ও প্রশান্তিদায়ক একটি ঘটনা হল, সম্প্রতি শিরিকবাদী রাজনীতির সঙ্গে ঈমানের সংঘাতের ডাকে, আদর্শ-বিশ্বাস ও সংস্কৃতির দ্বন্দ্বে শিরিকের আবর্জনা ছেড়ে বেশ ক’জন তরুণের গর্বিত ঘোষণা পাওয়া গেছে-ঈমানের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার। দুনিয়াবাদী, ধর্মশূন্য রাজনীতির বিপক্ষে, দ্বীন ও ঈমানের দ্বন্দ্বে ঈমানের পক্ষে সজীব তারুণ্যের এই সাহসী ও আত্মমর্যাদাশীল উত্থান জাতির আগামীর ইতিহাসে সুখের বার্তা তুলে দিয়ে যায়। হ

 

advertisement