Rabiul Akhir 1442   ||   December 2020

সা ক্ষা ৎ কা র
প্রসঙ্গ : ফ্রান্সে রাসূল-অবমাননা
বাকস্বাধীনতার ঠুনকো যুক্তির আড়ালে চরম মুসলিম-বিদ্বেষ ও হীন রাজনৈতিক স্বার্থ

Mufti Abul Hasan Muhammad Abdullah

[সম্প্রতি ফ্রান্সে আবারো বেদনাদায়কভাবে  রাসূল-অবমাননার ঘটনা ঘটেছে।  আঘাতে আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে বিশ্বের প্রায় পৌনে দুশ কোটি মুসলিমের হৃদয়। ইতিপূর্বেও ২০১৫ সালে ফ্রান্সে শার্লি এবদো নামক পত্রিকা কর্তৃক চরম ঘৃণ্যভাবে রাসূল-অবমাননার ঘটনা ঘটেছিল। তবে এবার ব্যতিক্রম হল- তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে খোদ ফ্রান্স সরকার। আগে যা হত ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে এখন তা-ই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে; তাও আবার বাকস্বাধীনতার নামে- ব্যাপক পরিসরে, দম্ভের সাথে।

বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীর মুসলিমগণ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। দেশে-দেশে তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, মিছিল, প্রতিবাদ ও পণ্য বয়কট আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকার রঈস, মাসিক আলকাউসারের সম্পাদক মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ দামাত বারাকাতুহুম।

সাক্ষাৎকার গ্রহণে : মাওলানা সাইফুল ইসলাম।]

প্রশ্ন : সম্প্রতি ফ্রান্স সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবমাননার ঘটনা ঘটিয়েছে। যার প্রতিবাদে বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীর মুসলমানগণ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। এখনো দেশে-দেশে তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, মিছিল, প্রতিবাদ ও পণ্য বয়কট আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। ফ্রান্সের এই বেয়াদবিমূলক পদক্ষেপকে আপনি কীভাবে বিশ্লেষণ করছেন?  

উত্তর : আসলে এধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা বিশ্লেষণের দুটো দিক রয়েছে। একটি হল, উম্মতি হিসেবে আমাদের নিজস্ব মূল্যায়ন। সেই দিক থেকে লক্ষ্য করলে স্পষ্ট যে, এধরনের ঘটনায় যে কোনো মুসলমানের, যার মধ্যে ন্যূনতম ঈমান আছে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হবে। চাই সে কম আমলকারী হোক বা বেশি আমলকারী।

কারণ মুমিন মাত্রেরই ভালবাসার সর্বোচ্চ শিখর হল রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রিয়নবীর ভালবাসা মুমিনের কাছে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। এটা তার ঈমানেরই দাবি। সাহাবায়ে কেরাম রা. বিষয়টিকে ভাষার সর্বোচ্চ আবেগ দিয়ে ব্যক্ত করতেন- فِدَاك أَبِي وَأُمِّي-আমার মা-বাবা আপনার উপর কোরবান!

পৃথিবীতে মানুষের কাছে তার মা-বাবাই সবচে প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাদের চেয়েও আপন ও শ্রদ্ধেয়- এটা বোঝানোর স্বার্থে তারা সহজে বলতেন, ‘ফিদাকা আবী ওয়া উম্মী।আসলে এটাও তো সামান্য বোঝানো। মানুষ তো তার সাধ্য অনুযায়ী অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। প্রকৃতপক্ষে নবীজীর প্রতি ভালবাসা ব্যক্ত করার মতো কোনো ভাষা পৃথিবীতে নেই। সেই প্রিয় মানুষের প্রতি ভালবাসার জায়গাতে যদি কেউ আঘাত করে তাহলে স্বাভাবিক কারণে সবার অন্তরে কী পরিমাণ কষ্ট-যন্ত্রণা হবে- সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবং এটাই কাক্সিক্ষত। মুসলমানদের অনুভূতিতে এটা লাগাও স্বাভাবিক। যাদের অন্তরে লাগে না, তারা ভুলের ওপর রয়েছে, তাদের ঈমানের খবর নেওয়া উচিত। এটা ঘটনার একটি দিক।

দ্বিতীয় দিক হচ্ছে, আমরা যদি কাফেরদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে চিন্তা করি, তো আমাদের বিবেচনায় এগুলো তুচ্ছ ঘটনা। আমরা মনে করি, এখন ম্যাক্রোঁ বলছে। আরেকসময় আরেকজন বলবে। এরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। কখনো এদের নাম কেউ দুনিয়াতে উচ্চারণ করবে না। কত ম্যাক্রোঁ এল-গেল, কিন্তু কোনো ব্যঙ্গকারীর নাম ইতিহাসে থাকেনি।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো হলেন সৃষ্টির সেরা মাখলুক। সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। সায়্যিদুল আম্বিয়া ও সায়্যিদুল বাশার। নবীগণের সর্দার ও মানবকুল শিরোমনি। কিন্তু কোনো  সাধারণ বিখ্যাত লোককেও যদি কেউ হেয়প্রতিপন্ন করে, হত্যা করে তবে হত্যাকারী ও হেয়প্রতিপন্নকারীর নাম মানুষ মনে রাখে না। কোনো সময় কারো নাম আসলে সেটা কুখ্যাত হিসেবে আসে। আর অনেকের তো নামও ইতিহাস মনে রাখে না। এরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

ম্যাক্রোঁর মতো ব্যক্তি এগুলো করলে কী আসে-যায়। তখনকার যুগে সেই আরবদের সময়ের সেই আবু জাহল, আবু লাহাব, সেই উতবা, শাইবা কত বড় বড় সর্দার ছিল। কিন্তু সেই রথীমহারথীরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কেউ কি জানতে চায় যে, তাদের সমাধিস্থল কোথায়? তাদেরকে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে? কোনোদিন কেউ খবর নিয়েছে? কোনো ইতিহাসবেত্তা- তিনি মুসলিম হোন বা অমুসলিম, তিনি প্রাচ্যবিদ বা ইতিহাসের সাধারণ গবেষক- কোনোদিন খবর নিয়েছেন যে, ওতবাকে কোথায় মাটি দেওয়া হয়েছে? শাইবাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে? কেউ আছে, যে তাদের জন্ম-মৃত্যু তারিখ কোনোদিন খোঁজ করেছে? অথচ তারা ছিল তখনকার আরবের সেরা নেতা।

প্রকৃতপক্ষে এধরনের লোকেরা নিজেদের সস্তা স্বার্থের জন্যই এসব করে। পার্থিব মতলবে সত্যকে অস্বীকার করে এমন আচরণ করে। সুতরাং সেখান থেকেই ধরে নেওয়া যায় যে, বর্তমানকালের কুৎসা রটনাকারীদের কী পরিণতি হবে।

এ দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা মনে করি যে, তারা হাজার বার বললেও কিছু যায়-আসে না। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

اِنَّا كَفَیْنٰكَ الْمُسْتَهْزِ ءِیْنَ.

আমিই যথেষ্ট তোমার জন্য- বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে। -সূরা হিজর (১৫) : ৯৫

অর্থাৎ ওই দুষ্ট লোকেরা তো আপনাকে তিরস্কার করবেই। যে আপনার আনীত সত্যকে পছন্দ করে না, যার মধ্যে রয়েছে হকের প্রতি চরম বিদ্বেষ সে তো উপহাস করবেই। তার উপহাসের জবাবের জন্য আমিই যথেষ্ট। তার তিরস্কারের বিষয়ে আপনার সান্ত্বনার জন্য আমিই যথেষ্ট।

كَفَیْنٰكَমানে আমি আল্লাহ আপনার জন্য যথেষ্ঠ। আপনার সান্ত¡নার জন্য যথেষ্ট।  এই দুনিয়াতেও আপনার জন্য যথেষ্ট, আখেরাতেও। আল্লাহ কাকে কীভাবে শাস্তি দেবেন, কার কাছ থেকে কীভাবে নিজের হাবীবের জন্য প্রতিশোধ নেবেন তা আল্লাহই ভালো জানেন।

তঁরা হাবীবের উম্মতের শাসকগণ এ বিষয়ে তাদের শরয়ী দায়িত্ব পালন না করলেও আল্লাহ ছাড়বেন না। তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হল, খোদ আল্লাহ তাআলাই নিজ কালামে পাকে বার বার বিভিন্নভাবে যাঁর প্রশংসা করেছেন, তাঁর ক্ষেত্রে এমন লোকের নিন্দার কী এতেবার, যে নিজ রবকেও চিনতে পারেনি!

এক কথায়- আল্লাহ্ই যার জন্য রয়েছেন, তাকে কেউ তিরস্কার করলে তাঁর কী আসে যায়? পুরো পৃথিবী তিরস্কার করলে কী হয়-

اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُ.

আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীরাই তো শিকড়-কাটা। -সূরা কাউসার (১০৮) : ৩

নিশ্চয় আপনার শত্রু যে, সে হচ্ছে শিকড় কাটা এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, যে বা যারা যে কোনো যুগেই তার হাবীবের শত্রুতা করুক তার শেকড় কর্তিতই  হবে। মৃত্যুর পরেই শুধু যে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে না; বরং তার জীবদ্দশাতেই সে এর ফল ভোগ করতে থাকবে।

একটু চোখ-কান খুললেই দেখতে পাবেন, কিছু লোক এমন কাবিলিয়াত  জাহের করতে গিয়ে তাদের প্রভু ও আশ্রয়দাতাদের দেশে গিয়েও প্রতিনিয়ত জানের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের পাশর্^বর্তী দেশ ভারত ও বৃটেনে স্বঘোষিত কুৎসা রটনাকারী কয়েকজন নাস্তিকের দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের দিকেই তাকিয়ে দেখুন। শেকড় কাটাদের অবস্থা বুঝতে বেশি কষ্ট হবে না।

প্রশ্ন : পশ্চিমাবিশ্বে কিছুদিন পরপর কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটে? এটা কি কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি না? অথবা এধরনের ঘটনার নেপথ্যে তাদের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কোনো এজেন্ডা নিহিত থাকে কি না?

উত্তর : ইউরোপীয় দেশগুলোতে এ ধরনের ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে। এটা বোঝা দরকার যে, ইউরোপীয়দেরকেই কিন্তু বিশ্বব্যাপী সভ্য জাতি বলে প্রচার করা হয়। আমাদের শিক্ষিত সমাজে একধরনের লোক আছে, যারা ওদেরকে সভ্য বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন।

তাদেরকে বিনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে, কোনো জাতি কীভাবে সভ্য হয়! কোনো বড় শিল্পপতি ও প্রভাবশালী ব্যক্তি যদি কথায় কথায় নিজ অধীনস্তদের গালিগালাজ করে, তাকে কি কেউ সভ্য বলবে? ইউরোপিয়ানদের মধ্যে তো আমরা সেটাই দেখতে পাচ্ছি যে, তারা নিজেদের বিরোধীদের এবং বিরোধীদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে গালির চেয়েও নিকৃষ্ট ও খারাপ ভাষা ব্যবহার করছে। ব্যঙ্গ করছে। ব্যঙ্গকারী বা গালাগালকারী লোক কি কখনো সভ্য হয়? মামুলি কোনো লোককেও জিজ্ঞেস করলে সে বলবে, শিক্ষিত মানুষের এই ছেলেটা তো ভালো হয়নি, অভদ্র হয়েছে। সুতরাং ওদের সভ্যতার মুখোশ খসে পড়েছে।

প্রশ্ন হতে পারে যে, তারা এত আদাজল খেয়ে কেন নেমেছে? তারা তো জানে যে, এসব কারণে দুনিয়ার মানুষ তাদেরকে খারাপ চোখে দেখবে। ভালো দৃষ্টিতে দেখবে না। কোনো বিবেকবান মানুষ, তিনি মুসলিম হোন বা অমুসলিম- এধরনের আচরণকে অবশ্যই ভালোভাবে নেবে না। তারপরও তারা এসব করে। তারা ছাড়াও পৃথিবীর অনেক কথিত পরাশক্তি এধরনের কাঁচা কাজ করে। তারা জানে যে, অন্যরা এটাকে ভালোভাবে নেবে না। তবুও তারা এসব করে। এর পেছনে দুটো বিষয় কাজ করে বলে মনে হয়।

এক হচ্ছে তাদের অজানা ভীতি। যে ভীতির প্রকাশ্য বা আপাত কোনো কারণ নেই। কিন্তু ভবিষ্যত-ভীতি তাদেরকে আতংকিত করে রাখে। পৃথিবীর সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো এই যে ছোটো ছোটো মুসলিম দেশগুলোর টুঁটি চেপে ধরতে চায়, তাদের প্রতি আগ্রাসী হয়, ছোটোখাটো সংগঠনগুলোকে আক্রমণ করে, এদেরকে দমন করতে নিজেদের মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার খরচ করে, এদের জন্য নিজেদের হাজার হাজার সৈন্যকে মৃত্যুমুখে পতিত করে, বছরের পর বছর ভিনদেশে রেখে দেয়- এসবের কারণ কী?

আপনারা দেখবেন, তারা তাদের জনগণকে, তাদের করদাতাদেরকে ধোঁকা দিয়ে নিজেদের সৈন্যদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। তাদের মধ্যে এ আতংক কাজ করে যে, না জানি পৃথিবীতে আবার ইসলামের বিজয় হয়ে যায়। পৃথিবীতে যদি আবার ইসলাম চলে আসে, আবার ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় তখন তাদের কী হবে। এই মানসিকতা থেকেই সাম্রাজ্যবাদীরা ছোটোখাটোদেরকেও, আপাত দৃষ্টিতে যাদের শক্তি নেই- তাদেরকে দমিয়ে রাখতে চায়।

দ্বিতীয়ত ফ্রান্সের ক্ষেত্রে এটা বেশি প্রযোজ্য। কারণ বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, ফ্রান্সে মুসলিমদের জনসংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ২০৫০-৬০ সালে গিয়ে তা আরো অগ্রসর হয়ে যাবে। পশ্চিমারা তো অবাধ বেহায়াপনার সুযোগ করে দিয়ে অনেক আগেই নিজেদের সমাজব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। মুসলমানরা তো এসব প্রকৃতিবিরোধী পন্থায় (তাদের মত) যায়নি। মুসলমান তার স্বাভাবিক গতিতে জীবন যাপন করে। মুসলমানের সন্তানাদিও স্বাভাবিক গতিতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মুসলিমরা জনসংখ্যার দিক থেকে দিনদিন অগ্রসর হচ্ছে। ফলে ফ্রান্স ভীত, সন্ত্রস্ত।

মুসলমান যদি ফ্রান্সে তাদের জনসংখ্যার অর্ধেক বা তার কমসংখ্যকও হয় তাহলে আবার মুসলমানদের হাতে ফ্রান্সের কর্তৃত্ব চলে আসবে। এ আশংকা থেকে আগেও তারা ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছে। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বেসরকারিভাবে করেছে। কিন্তু এখন রাষ্ট্র নিজেই লেগে গেছে। স্বয়ং রাষ্ট্রপতিই মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ প্রত্যাখ্যাত বক্তব্য দিয়েছে।

পৃথিবীব্যাপী ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তার ওই বক্তব্যকে তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও অন্তত প্রশংসা করেনি। শুধু একমাত্র হ্যাশট্যাগদানকারী মূর্তিপূজক রাষ্ট্রটি ছাড়া। সেখানেও শুরুটা রাষ্ট্র করেনি।

বলছিলাম, ফ্রান্সের মধ্যে ভবিষ্যত আতংক কাজ করছে। এজন্য সে নিজেই ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা দুটো কাজ করতে চায়। একটা হল মুসলমানদেরকে উত্তেজিত করে তোলা। মুসলমানদের আবেগের সর্বোচ্চ জায়গায় হস্তক্ষেপ করে তাদেরকে উত্তেজিত করা। তারা চায়, মুসলমানদেরকে ক্ষেপিয়ে তাদের দ্বারা বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে তাদেরকে সন্ত্রাসীর ট্যাগ দিতে। দ্বিতীয় হল, ফ্রান্সে ইসলাম ও মুসলমানদের উন্নয়ন ও অগ্রসরতার ওপর পানি ঢালা। তারা ইসলামোফোবিয়াকে বাড়িয়ে দিয়ে মুসলমানদের উন্নতিকে থামিয়ে দিতে চায়। গণ মানুষের মধ্যে ইসলাম ও মুসলিম ভীতি তৈরি করে দিয়ে নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে তারা তৎপর রয়েছে বলে মনে হয়।

প্রশ্ন : তারা ইসলাম ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবমাননায় যা কিছু করছে তার নাম দিচ্ছে বাকস্বাধীনতা। বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে তারা এসব করে যাচ্ছে। বিষয়টি আসলে কী?  

উত্তর : বাকস্বাধীনতার দাবিটি একেবারেই পঁচা-ঠুনকো। আমাদের ইসলামের মধ্যে তো কথাই নেই। আল্লাহ তাআলা মানুষকে বলার ও লেখার শক্তি দিয়েছেন- সেটা স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করার জন্য নয়; বরং বুঝেশুনে প্রয়োগ করার জন্য। স্বাধীনের দুই অর্থ। এক হচ্ছে, আমার সত্য কথাটা আমি বলব। এটাতে কেউ বাধা দিতে পারবে না। আরেক হচ্ছে স্বেচ্ছাচার। আমার যা ইচ্ছে তা-ই বলব। ইসলাম ও কুরআন এর অনুমতি দেয় না; বরং ইসলামে কথা বলার জন্য কথাটা সত্য হতে হবে। শুধু তাই নয়, ইসলাম তো সঙ্গে আরো যোগ করে দেয় যে, সত্য হলেই যথেষ্ট নয়। অর্থহীন কথা বলা যাবে না। অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকবে। কোনো মুবাহ বা জায়েয কথা বলার যদি প্রয়োজন না হয়, ইসলাম বলে- তুমি সেটা বলো না। দরকার নেই সেটা বলার। তার পরিবর্তে ইসলাম যিকির করতে বলে। অকারণে বকবক করতে নিষেধ করে। এটা হল ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি।

কিন্তু যদি দুনিয়ার প্রচলিত দৃষ্টিতে দেখা হয়, তাহলে পৃথিবীর কোনো দেশেই বাকস্বাধীনতার বিষয়টি শর্তমুক্ত বা লাগামহীন নয়। সব জায়গায় শর্তযুক্ত। একেক দেশে একেক ধরনের শর্ত আরোপ করা আছে। খোদ আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নেও বহু বিষয়ে মতপ্রকাশে বাধা  রয়েছে। এমনকি ইউরোপীয় আদালতের একটি পৃথক রায়ে ইসলাম ধর্ম অবমাননার বিষয়টিকে অবৈধ বলা হয়েছে। আমাদের সংবিধানে লক্ষ্য করলে দেখবেন, যে অনুচ্ছেদে বাকস্বাধীনতার অধিকারের কথা আছে, সেখানে আটটির মতো শর্ত রয়েছে। পৃথিবীর সকল দেশেই তার দেশীয় সার্বভৌমত্ব, বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিয়েই বাকস্বাধীনতার কথা বলা হয়। সবক্ষেত্রেই এটা জানিয়ে দেওয়া হয় যে, বাকস্বাধীনতা করতে গিয়ে এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না ইত্যাদি। এমনকি যারা লাগামহীন বাকস্বাধীনতার কথা বলে, তাদের দেশেও কিন্তু বাকস্বাধীনতা শর্তযুক্ত। অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করা, অন্যের আবেগে হাত দেওয়া- এটা কখনো বাকস্বাধীনতা হতে পারে না। তারা যে দাবি করছে, তাদের দৃষ্টিতে এবং তাদের হিসেবেই এটা অন্যায়। কিছুতেই বাকস্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না।

প্রশ্ন : ইতিপূর্বে ফ্রান্সের বিতর্কিত পত্রিকা শার্লি হেবদোতে হামলার ঘটনার পর ৪০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান সেখানে জড়ো হয়ে বলেছিল, ‘আমি শার্লি হেবদোঅথচ নিউজিল্যান্ডের মসজিদে খ্রিস্টান সন্ত্রাসী কর্তৃক অর্ধশত মুসল্লিকে শহীদ করার ঘটনার পর দুটি মুসলিম দেশকেও একত্র হয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি। এখনকার ফ্রান্স সরকারের কর্মকা-েও মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের (দু-একজন ছাড়া) নির্লিপ্ত ভূমিকা এবং এধরনের পরিস্থিতিতে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের কর্তব্য সম্পর্কে কিছু বলুন।

উত্তর : অমুসলিম রাষ্ট্রপতিরা যখন শার্লি এবদোর হামলার ঘটনার পর ফ্রান্সে জড়ো হয়েছিল, তখনই আমরা বলেছিলাম যে, এ ঘটনা আবার প্রমাণ করেছে-আলকুফরু মিল্লাতুন ওয়াহিদাপুরো কাফের জাতি একই মিল্লাত-একই জাতি। আমরা তখন আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলাম যে, ওই চল্লিশজনের ভেতরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকেও নেয়া হয়েছে। (দেখুন, ‘শার্লির ধৃষ্টতা ও দুঃখ : গোড়ায় হাত দিনফেব্রুয়ারি ২০১৫ সংখ্যা) এ থেকেই বোঝা যায় যে, তারা কোন্ শান্তি এবং কোন্ স্বাধীনতা চান। কারণ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর গায়ে তো শুধুই ফিলিস্তিনী শিশু ও নিরপরাধ লোকদের রক্ত আর রক্ত। সে রক্তের দাগগুলো নিয়েই লোকটি ওখানে গিয়েছে। তাকেও তারা ওই চল্লিশের মধ্যে স্থান দিয়েছে। আমরা তখন আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি যে, এখান থেকে অনুমান করুন, তারা কি শার্লি এবদোর প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে গেল, নাকি মুসলিম-বিদ্বেষের মধ্যে সবাই একে অপরের চেয়ে অগ্রগামী- এটা হাতে হাত মিলিয়ে বুঝিয়ে দিতে গিয়েছে। নিশ্চয়ই দ্বিতীয়টা। যার প্রমাণ হল ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি। না হলে অন্তত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে ডাকত না। কাফেররা এভাবেই তাদের একত্রে থাকার প্রমাণ দেয় বারবার। কিন্তু মুসলিমরা বারবার সেটা বুঝতে ব্যর্থ হয়।

প্রশ্ন : তাহলে মুসলিম দেশগুলো কেন পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করে না?

উত্তর : মুসলিম দেশগুলোর চুপ হয়ে থাকা তো আর একদিনে ঘটেনি। অনেক দিন হয়ে গেছে। দিন যত যাচ্ছে, মুসলিম সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নিষ্ক্রিয়তা তত বাড়ছে। একটা সময় ছিল, যখন খেলাফত চলে গেলেও মুসলিম সরকার প্রধানরা এরকম স্পর্শকাতর ইস্যুতে কিছু পদক্ষেপ নিত। একত্রিত হয়ে সবাই ওআইসিতে বসত। কিন্তু কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাসীনদের দেখা যাচ্ছে, তারা মুসলমানদের জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে হয়ত একদম নীরব ভূমিকা পালন করে অথবা নেতিবাচক ভূমিকা।

আসলে এর মূল কারণ হল ক্ষমতা। ঠিক পশ্চিমাদের মতো। যেকারণে পশ্চিমারা ইসলাম অবমাননার অপকর্মটি করে, আমাদের মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদেরও একই সমস্যা। অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানরা দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতায় আছে। অনেকেরই অবস্থান দুর্বল। অনেকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় আছে। বেশিরভাগের অবস্থাই এমন যে, এরা ক্ষমতায় সততার সাথে থাকে না। নৈতিকভাবে এরা দুর্বল। ফলে নিজের জনগণের ওপর এদের আস্থা-বিশ্বাস থাকে না। এদের আস্থা-বিশ্বাস থাকে তাদের বিদেশী প্রভুদের ওপর; যাদেরকে তারা প্রভু বানিয়ে রেখেছে। এই ভয়ে তারা বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলতে অক্ষম। কথা বললেই ওরা ভয় করে, আমরা এখানে বললে যদি তাঁরারাগ হন! যদি তাঁরা আমাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দেন! যদি তাঁরা জাতিসংঘে আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দেন! যদি তাঁরা আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধ করে দেন! এধরনের ভয়ভীতি তাদের মধ্যে কাজ করে। ফলে যত দিন যাচ্ছে, ততই তারা দুর্বল হচ্ছে। আমি বিশেষভাবে বলব আরববিশ্বের কথা। তার মধ্যে প্রথম নম্বরে যে দেশটি নিজেদেরকে মক্কা-মদীনার খাদেম দাবি করে।

তাদের ভূমিকা বড়ই আশ্চর্যজনক। অবশ্য এখন আর আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই- দিনক্ষণ গনা ছাড়া। হয়ত তারাও তাদের দিন গুনছে- কবে তারা ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়। অনেকেই মনে করেন যে, তাদের দিনক্ষণ গনা শুরু হয়ে গেছে। এটার একটি সামান্য উদাহরণ হল, করোনার প্রথম ধাপের আক্রমণ স্বাভাবিক হয়ে আসার পর প্রায় পুরা পৃথিবীব্যাপী মসজিদগুলোতে সাধারণ নিয়মে ইবাদত-বন্দেগী শুরু হয়ে গেছে আরো আগেই। অথচ অন্য অনেক দেশের তুলনায় সৌদি আরবে করোনার প্রকোপ অনেক কম। তবু তাদের ভীতি কোনোক্রমেই কাটছে না। তারা তাদের মসজিদগুলোতে নামায পড়তে দিতে চায় না। হারাম শরীফে যতটুকু নামায পড়ার সুযোগ দিচ্ছে, যতটুকু তাওয়াফ করার সুযোগ ঐ দেশে বসবাসকারীদের জন্য ইতিমধ্যে চালু করছে, সেখানেও অনেক শর্তের বেড়াজাল।

আল্লাহর ভয় যখন মানুষের অন্তর থেকে চলে যায়, তখন সমস্ত ভয় তার মধ্যে এসে জেঁকে বসে।  যতদিন তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও তাকওয়া ছিল তাদের মধ্যে ভয় কম ছিল। এখন যখন আল্লাহর ভয় চলে গেছে দুনিয়ার সকল ভীতি তার মধ্যে একত্রিত হয়েছে। করোনার ভীতি, স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার ভীতি, ইসরাইল ভীতি এবং আরো নানা ভীতি। ফলে এখন একের পর এক আরব দেশগুলো ইসরাইলের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। সৌদি আরব যোগ না দিলেও সে তার ভূমি ইতিমধ্যে ইসরাইলকে ব্যবহার করতে দিয়েছে। এদের জন্য করুণা করা ছাড়া উপায় নেই।

আর ওআইসি নামক যে সংস্থাটি রয়েছে, এখন আর কী জন্য সেটা টিকিয়ে রাখা হবে- তাও ভাবার অবকাশ আছে। মুসলিম দেশগুলোর জনগণের টাকাতেই তো ঐ সংস্থা চলে। যে সংস্থা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না তাকে আদৌ চালিয়ে নেওয়ার দরকার আছে কি না- এটাও চিন্তার বিষয়।

প্রশ্ন : এধরনের ইস্যুতে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানগণ কী করতে পারতেন?

উত্তর : অনেক কিছুই করার ছিল। একটা তো হল, মৌখিক প্রতিবাদ। ফ্রান্স যদিও শিল্পোন্নত শক্তিশালী রাষ্ট্র, জাতিসংঘের ভেটো পাওয়ারধারী রাষ্ট্র, কিন্তু পৃথিবীতে তথাকথিত সুপারপাওয়ার হিসেবে ফ্রান্সের অবস্থান নেই। যদি মুসলিম রাষ্ট্রগুলো একসাথে হয়ে ফ্রান্স থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে আসতে পারত, যদি সবাই বলতে পারত যে, এরকম হঠকারিতার মাঝে আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতকে তোমাদের দেশে রাখতে পারব না। আমাদের দেশের জনগণ মেনে নেবে না। তাহলে ফ্রান্স একঘরে হতো।

পৃথিবীর এতগুলো রাষ্ট্র একসঙ্গে তাকে বয়কট করলে সে একঘরে হতো। এখন যেরকম মুসলিম রাষ্ট্রগুলো চিন্তা করে যে, আমরা যদি অমুকের বিরোধিতা করি, অমুক রাগ হবে, তমুক রাগ হবে। তখন পৃথিবীর বড় বড় যে অমুসলিম রাষ্ট্রগুলো আছে, তারা সবাই মিলে মুসলিম দেশগুলোর বিরোধিতা করতে সাহস পেত না। কারণ প্রত্যেক রাষ্ট্রের সাথে তাদের স্বার্থ জড়িত। মুসলিম বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে আমেরিকা, চীন ও রাশিয়ার স্বার্থ জড়িত আছে। সেক্ষেত্রে এতগুলো মুসলিম রাষ্ট্রকে সবাই একসাথে ক্ষেপিয়ে দিতে পারত না।

কিন্তু ফ্রান্স জানে যে, মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এ ইস্যুতে কথা বলবে না। সৌদি আরব কথা বলবে না। ওদের এখন যে ঈমানী অবস্থা এবং নেতাদের নৈতিক অবস্থান কোন্ জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে- এটা তারা জানে।

একজন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের মানে কী? আক্ষরিক অর্থে এবং তারা নিজেরাও দাবি করেন যে, তারা জনগণের প্রতিনিধি। তাদের বেতন, ভাতা, তাদের অফিস-আদালত সবকিছুই জনগণের টাকায় চলে। পুরো রাষ্ট্রের যে নেতৃত্ব তিনি দেন, সেটাও জনগণের টাকায়। তিনি যদি বিদেশ থেকে কোনো ঋণ আনেন, সেটাও জনগণের টাকায় সুদে-আসলে আদায় হয়। জনগণের করের টাকায় পরিশোধ হয়। জনগণ দুটো ভাত বেশি খেতে পারত, সেখান থেকে টাকা ভাগ করে তারা নিয়ে যান। জনগণ তার জীবনে একটু স্বচ্ছন্দ হয়ে চলতে পারত, সেখান থেকে তারা ট্যাক্স গ্রহণ করে ক্ষমতা চালান। তো যারা জনগণের প্রতিনিধি হয়ে বসেছেন, কেন তারা জনগণের মনের কথা, আবেগের কথার প্রতিধ্বনি  করেন না? এটা তার প্রথম দায়িত্ব। সে হিসেবে অবশ্যই এক্ষেত্রে তাদের প্রতিবাদ জানানো উচিত।

বলছিলাম, মুসলিম দেশগুলো প্রথম পর্যায়ে দূত প্রত্যাহার করতে পারত। দ্বিতীয়ত তাদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য চুক্তি কমিয়ে ফেলা। আমি মনে করি, প্রথম একটাই যথেষ্ট ছিল। অনেক কিছু করার কোনো দরকার নেই। যদি সব মুসলিম রাষ্ট্র না হোক, প্রভাবশালী বিশটা মুসলিম রাষ্ট্র নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্যারিস থেকে নিয়ে আসত এবং নিজ নিজ দেশ থেকে তাদের দূতকে ফেরত পাঠাতো তাতেই ফ্রান্সের খবর হয়ে যেত।

কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রত্যাহার হল দ্বিতীয় ধাপ। কিন্তু প্রথম ধাপের কাজটা হল খুবই সহজ। এটা একটা প্রতীকী প্রতিবাদ। এটা করলেই তাদের গায়ে লাগত। কিন্তু মুসলিম দেশগুলো সেটা করতেও ব্যর্থ হয়েছে।

করার তো আরো বহু কিছু আছে। বড় ধাপগুলো তো বললাম না। বলে কী লাভ! মুসলিম প্রধান দেশগুলোর সেনাবাহিনীর কী কাজ? কীসের জন্য তাদের সামরিক শক্তি? কী জন্য তাদেরকে তৈরি করা হচ্ছে? কী উদ্দেশ্যে জনগণের করের টাকায় মুসলমান দেশে সৈন্যবাহিনী থাকে। মুসলমান দেশের সৈন্যবাহিনী যদি জনগণের আবেগ, জনগণের চিন্তা-চেতনার কেন্দ্রবিন্দু রক্ষা না করতে পারে তাহলে তাদের থাকার কী প্রয়োজন? মুসলিম দেশের সৈন্যবাহিনীকে সেভাবে প্রস্তুত করা হয় না কেন? এটা একটা বড় প্রশ্ন। এগুলো তো আরো পরের কথা। এগুলো তো করছেই না। কিন্তু এখনকার প্রেক্ষাপটেও যেটা সম্ভব ছিল সেটা আমি দেখিয়ে দিলাম।

প্রশ্ন : পশ্চিমা বিশ্বে এধরনের অবমাননাকর ঘটনা তো প্রায়ই ঘটে, এক্ষেত্রে আরো কী কী পদক্ষেপ হতে পারে? এই যে সাধারণ মানুষ আন্দোলন করছেন, বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন, ঘেরাও কর্মসূচি দিচ্ছেন, কুশপুত্তলিকা দাহ করছেন, জনগণের পর্যায়ে আরো কী কী করণীয় হতে পারে?

উত্তর : আমরা একটা জিনিস মনে করি যে, ফ্রান্সের এবারের আচরণে একটা ভিন্নমাত্রা আছে। এটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। আমি এটাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলব। এটা এক ধরনের জঘন্য সন্ত্রাস। পৃথিবীতে সন্ত্রাসী হামলা করে কেউ ব্যক্তিগতভাবে দশ-বিশজন মানুষ হত্যা করার চেয়ে এটা অনেক বড় সন্ত্রাস। রাষ্ট্র নিজেই এ সন্ত্রাস তৈরি করেছে। এক হল মুসলিম রাষ্ট্রে বসে কোনো ব্যক্তি আমাদের দ্বীন ও ঈমান নিয়ে খেলা করল। ব্যঙ্গ করল। এটার যথাযথ প্রতিবাদ হতে হবে।

আরেকটা হল, তাদের দেশে বসে দুয়েকজন কী বলল, কী লিখল। এগুলোকে আমি সাধারণভাবে বলি- ‘...কী না কয়, কী না খায়প্রবাদে। তারা কী না বলবে। এটার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা, পাত্তা দেওয়া, হাইলাইটস করা, প্রচার করার আদৌ দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।

আরেকটা হল যেটা ইতিমধ্যেই প্রচারিত। পৃথিবীব্যাপী প্রচার পেয়ে গেছে এমন কিছু। কিছু কিছু জিনিস পৃথিবীব্যাপী প্রচার পায়। যেমন সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস বই এসেছিল। তখন কত কথা হয়েছিল। কিন্তু এখন কেউ চেনে সালমান রুশদীকে? তার নাম উচ্চারিত হয়? সেই সালমান রুশদী তখন পৃথিবীব্যাপী কুখ্যাত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। সালমান রুশদীর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে আন্দোলন হয়েছিল। তার বই, তার মিথ্যা রটনার বিরুদ্ধে মুসলিম-অমুসলিম দেশগুলোতে প্রতিবাদ হয়েছিল।

এধরনের আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিছু হলে তা নিয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ থাকা উচিত। ফ্রান্সের এ বিষয়টা নিয়ে তো অবশ্যই। কারণ এটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। রাষ্ট্রীয়ভাবেই সেখানে পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে।

মুসলিম রাষ্ট্র যদি এক্ষেত্রে প্রতিবাদ না করে তাহলে দ্বিতীয় পর্যায়ে জনগণের দায়িত্ব পড়ে। জনগণের এখানে বিক্ষোভের হক রয়েছে। জনগণ নিজেদের সাধ্যমতো এটার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করবে।

সাধ্যের ভেতরে আমি দুটি বিষয়কে দেখি। এক হল পণ্য বয়কট করা। যে রাষ্ট্র এ অপকর্ম করবে তার পণ্য বয়কট করা। এটা ক্ষেত্রবিশেষে মৌলিক প্রতিবাদ। পণ্য বয়কট করলে তার অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। ক্ষেত্রবিশেষে বললাম এজন্য যে, যে রাষ্ট্রে ওই দেশের পণ্য বেশি ব্যবহৃত হয়, সেখানে দেখা যাবে, এক মাসে মিলিয়ন-বিলয়ন ডলারের ক্ষতি হয়ে যাবে। এটা তো অবশ্যই মজবুত প্রতিবাদ।

পণ্য বয়কটে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। যেমন দুয়েকটা প্রভাবশালী আরব রাষ্ট্রে বয়কট হয়েছে। সে দেশগুলোতে জনসংখ্যা কম হলেও তারা যেহেতু ধনাঢ্য রাষ্ট্র, তাদের ওখানে ফ্রান্সের জিনিস বেশি ব্যবহৃত হয়, ফলে ফ্রান্স এতে ভয় করেছে। তারা এ ভয়ও করেছে যে, দুয়েকটি আরব রাষ্ট্রের মতো অন্যান্য রাষ্ট্রও যদি তাদের বয়কটের অনুসরণ করে, তাই তারা অনুরোধ করেছে যে, আপনারা বয়কট করবেন না। যদিও তারা মাফ চায়নি।

পণ্য বয়কটের একটা মৌলিক লাভও আছে। ক্ষেত্রবিশেষে এটা প্রতীকী প্রতিবাদও বটে। যেমন কেউ বলতে পারে যে, বাংলাদেশে কতই বা পণ্য আসে ফ্রান্স থেকে? যদিও এর সংখ্যা অনেক কম নয়। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি, শুধু ওষুধই আসে অনেক পরিমাণে এবং তারা এদেশে তাদের ফ্যাক্টরিও বসিয়েছে। সানোফির এখানে ফ্যাক্টরিও আছে। কিন্তু কোনো দেশে তাদের পণ্য কম ব্যবহৃত হলেও এটা একটা প্রতীকী প্রতিবাদ। এ প্রতীকী প্রতিবাদের প্রভাবটা হল মিছিলের মতো। মিছিলটা এক ধরনের প্রতীকী প্রতিবাদ। একটা বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হলে কী হয়? এতে কারো ক্ষমতা না নড়লেও এর মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী জানান দেওয়া যায় যে, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ এ অন্যায় কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। এজন্য পণ্য বয়কটকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।

যেমন এদেশে কোনো কোনো কোম্পানি আছে, যারা আল্লাহর নবীর দুশমনদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। আমরা নিজেরা যেমন নেই না, বহু মানুষ আছে, যারা ঐ কোম্পানির পণ্য নিতে চায় না। তো এতে একটা স্বাভাবিক প্রভাব পড়বে।

দ্বিতীয় আরেকটা বিষয় হল বিক্ষোভ বা দূতাবাস অভিমুখে মিছিল। এটা আমরা ছোটো থেকেই দেখে আসছি। কোনো একটা দেশেই যখন কোনো ইসলাম-বিদ্বেষী ঘটনা ঘটত তখন বিভিন্ন সময় এধরনের দূতাবাস অভিমুখে মিছিল হয়েছে। এটার একটা বড় প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিকভাবে।

প্রশ্ন : এই ইস্যুতে দেশের মূল ধারার গণমাধ্যমের আচরণকে কীভাবে দেখছেন?

উত্তর : আমাদের দেশের মিডিয়াগুলোর অবস্থান নিয়ে আমি এই মুহূর্তে শুধু এটুকু বলতে চাই যে, গত ১৫-২০ বছর আগেও মিডিয়া ছিল। এখনো মিডিয়া আছে। তখনকার যেসব মিডিয়া ছিল, সেগুলোর সিংহভাগই পশ্চিমা চিন্তা-চেতনার ধারক-বাহক ছিল। কিন্তু তখন আর এখনকার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তখন প্রিন্টমিডিয়ার প্রভাব ছিল বেশি।

তাদের কাগজের বড় একটা অংশ জুড়ে জনগণ ও দেশের উন্নয়নের কথা থাকত। আর এখনকার মিডিয়া শুধু নিজ স্বার্থের কথা বলে। নিজস্ব এজেন্ডার কথা বলে। জনগণের কথা, জাতীয় স্বার্থের ইস্যু নিয়ে ততটুকুই বলে, যতটুকু তারা চাপে পড়ে।

চাপে পড়ার মানে হল, আপনি দেখবেন যে, কোনো একটা মহা ঘটনা ঘটলে আগে সেটা স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হবে। এরপর জাতীয় গণমাধ্যমে আসবে। এই যে নারী-নির্যাতনসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু, এসব আগে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। বেশি প্রচার হলে মূল ধারার মিডিয়াগুলো তা কভার করে। বলতে পারেন যে, তারা চাপে পড়ে এটা নেয়। অর্থাৎ মিডিয়া এখন জনস্বার্থে কাজ করে না; সে তার প্রভুদের উদ্দেশ্যে এবং তাদের বানানো ছক অনুযায়ী কাজ করে।

সত্য কথা তো হল, মিডিয়াগুলো চলে জনগণের টাকা দিয়ে। কেউ বলতে পারেন যে, জনগণের টাকা দিয়ে মিডিয়া চলে না; চলে তার মালিকের টাকা দিয়ে। কিন্তু সেই মালিক তো তার মিডিয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে চালায়। আর ওই বিজ্ঞাপনের পণ্যগুলো কেনে সাধারণ জনগণ। তো একটা মিডিয়া মূলত জনগণের টাকাতেই চলে। যে মিডিয়া নিজের টাকা দিয়ে চালায়, ভর্তুকিতে চালায়, সে ছাড়া বাকি সবাই জনগণের টাকা দিয়ে চলে। অথচ তারা জনগণের আবেগের কথা বলে না।

আমি অবাক হই যে, ওরা এখনো নিউজ করে যে, ফ্রান্সে ধর্মনিরপেক্ষতাকে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করার জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। সেখানে আবার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও লেখে, ‘মহানবীও লেখে। কিন্তু লেখে ফ্রান্সের পক্ষে ওকালতি করে। এটা কিছুটা মূর্খতাও বটে। কিন্তু এটা শুধু মূর্খতাই নয়, তাদের মালিক ও সম্পাদকীয় নীতির দেউলিয়াত্বপনা। গোলামির প্রতিফল। এসবের কারণে এদেশে ইসলামবিরোধিতা আশকারা পায়। এ মিডিয়াকে বদলানোর জন্য জনগণের ফুঁসে উঠতে হবে। তখনই মিডিয়ার গতি ঘুরে যাবে।

প্রশ্ন : ইসলাম-অবমাননা বিরোধী আন্দোলন তো সাময়িক ইস্যুকে কেন্দ্র করে হয়, কিন্তু সাধারণ সময়ে সাধারণ মুসলমানদের জন্য এ বিষয়ে উলামায়ে কেরামের কী করণীয় বা পদক্ষেপ থাকা দরকার বলে মনে করেন ?

উত্তর : সাধারণ মুসলমানগণ আলেমদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলবেন। আর আলেমগণের দায়িত্ব মানুষকে দ্বীন ও ঈমানমুখী করা। প্রকৃত নবীপ্রেমের অভিমুখী করা। নবীজীর প্রতি ভালবাসা তো থাকবেই। কিন্তু প্রয়োজন হল সেই ভালবাসা অনুযায়ী আমল। নিজেদেরকে সত্যিকার মুসলমান হিসেবে গড়ে তোলা।

আজকে যদি মুসলিম জাতি নিজেদেরকে সত্যিকার মুসলমান হিসেবে গড়ে তোলে, সাধারণ জনগণকে যদি আমরা সত্যিকার মুসলমান হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তাদেরকে ফরয-ওয়াজিবসমূহের শিক্ষা, হারাম কাজ থেকে বাঁচা, সুন্নতের উপর আমল করা- আমরা যদি জনগণকে এসব অভিমুখী করতে পারি, তাহলে মানুষ প্রকৃত মুসলমান হয়ে উঠবে। আর প্রকৃত মুসলমানের জন্য অনেকসংখ্যক হওয়ার দরকার নেই। এরচে কমসংখ্যক প্রকৃত মুসলমান হলেই কাফের জাতির বিরুদ্ধে তারা বিজয়ী হবে। এটাই আমাদের দায়িত্ব যে, আমরা আসল নববী ভালবাসার পথে মানুষকে নিয়ে যাব।

প্রশ্ন : পশ্চিমা বিশ্বের সব মানুষ তো আসলে একরকম নয়। অনেকেই থাকেন, যাদের নিকট সত্যটা স্পষ্ট নয়। ইসলাম সম্পর্কে তারা অপপ্রচারের শিকার। যার প্রমাণ আমরা দেখি যে, ইসলামের সৌন্দর্য দেখে সেখানে ব্যাপকভাবে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছেন। তো এসব পরিস্থিতিতে তাদের প্রতি লক্ষ্য রেখে কী করণীয় হতে পারে?

উত্তর : জী, সেই মানুষদের জন্য দাওয়াতী মেহনত অব্যাহত রাখা- নবীজীর জীবনী তুলে ধরা। ইসলামের সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট করা। দেশে-বিদেশে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যারা ইসলামোফোবিয়া ছড়াচ্ছে তাদের প্রতিহত করতে এবং মুসলমানদের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতে এর বিকল্প নেই। আর শুধু ক্ষণিকের উপকার হয়, ক্ষণিকের জন্য মানুষ স্বস্তি পায়, কিন্তু স্থায়ীভাবে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব হয় এরকম যে কোনো হঠকারি কাজ থেকে বেঁচে থাকাও এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয়।

প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে তো ফ্রান্সকে আবারো আক্রমণাত্বক হতে শোনা যাচ্ছে। তারা সে দেশের বিভিন্ন স্তরের মুসলিম নেতৃবৃন্দদেরকে আল্টিমেটাম দিয়ে দিয়েছে- মুসলমানরা যেনো ফ্রান্স সরকার কতৃক নির্ধারিত সভ্যতা-সংস্কৃতি মেনে চলে...!

উত্তর : হাঁ, এরকম অনেক কিছুই হয়তো ম্যাক্রোঁ সরকার করবে। অনেক পর্যবেক্ষকের ধারণা, আগামী ২০২২ সনের নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি কট্টর খ্রিস্টিয় জাতীয়তাবাদী নীতিতে আরো আগ্রসর হবেন। কারণ বর্তমানে সে দেশে করোনার পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক ধংসের কারণে সরকারের জনপ্রিয়তা একেবারে তলানিতে রয়েছে। তাই নরেন্দ্র মোদি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুদের পথ অবলম্বন করে উগ্র জাতীয়তাবাদ উস্কে দিয়ে সরকারের ব্যর্থতা ঢাকার এটি একটি অপকৌশলমাত্র।

মুসলিম-বিদ্বেষের জিগির তুলে বিরূপ জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার এটি একটি গতানুগতিক পন্থা।

প্রকৃত মুসলমানরা যে এসবে ভীত হবেন না, এটা বলাই বাহুল্য। এ ফ্রান্সেই তো হিজাব নিষিদ্ধ হওয়ার পর মুসলিম নারীরা প্রকাশ্যে হিজাব পরে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে দেখিয়েছেন। তাই বিভিন্ন দেশের কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী শাসকরা এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বিশেষত কয়েকটি আরব দেশের উঠতি বয়সি নেতাদের কর্তৃক জোরপূর্বক মুসলিম তাহযীব-তামাদ্দুন নষ্ট করার যে রাষ্ট্রীয় প্রয়াস চলছে তাতে তারা চূড়ান্ত সফলতা পাবে বলে আমরা মনে করি না। পুরো বিশে^র মুসলমানদের দরকার ঈমানী বলে বলিয়ান হয়ে নিজেদের তাহযীব-তামাদ্দুনকে সমুন্নত রেখে সুন্নাহসম্মত পন্থায় পরিচালিত হওয়া। এতেই এসব মতলবি লোকদের পতন তরান্বিত হবে ইনশাআল্লাহ।

 

advertisement