শয়তানের গিঁট
ছোট্ট একটি ছেলে। নাম তার ফারহান। ফারহান খুব হাসিখুশী এবং বেশ চঞ্চল। সবার সাথে খুব ভালো আচরণ করে এবং বাবা-মায়ের সব কথা মানে। তাই সবাই ওকে খুব ভালোবাসে।
সে পড়ালেখায়ও বেশ মনোযোগী এবং খুব মেধাবী। মাদরাসায় যেতে কখনোই অলসতা করে না। প্রতিদিন নির্ধারিত সময়েই মাদরাসায় উপস্থিত হয় এবং খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করে। তাই উস্তাযগণ সবাই তাকে স্নেহ করেন। সেও তাঁদেরকে খুব শ্রদ্ধা করে এবং সবসময় তাঁদের কথা মেনে চলার চেষ্টা করে।
ফারহান শুধু মাদরাসায় নয়, ঘরেও পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী। ঘরে তার পড়ালেখার আলাদা কামরা আছে। তার পড়ার টেবিলটি একেবারে জানালার পাশে। জানালা খুললেই দেখা যায় বাড়ির ছোট্ট বাগানটি। বাগানটিতে রয়েছে তার আম্মুর হাতে লাগানো বিভিন্ন ফুল এবং ফলের গাছ। বাগানটি দেখতে খুব সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন। একপাশে রয়েছে সারিবদ্ধ ফুলগাছ, আরেকপাশে সারিবদ্ধ ফলগাছ। ফুলগাছের মধ্যে রয়েছে গোলাব, জবা, হাসনাহেনা, কামিনী, শিউলী, গন্ধরাজ, টগর। আর ফলের মধ্যে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আতা ও জামরুল। ফারহানের আম্মু গাছগুলোর খুব যত্ন নেন। ফারহানও ছুটির দিনে গাছে পানি দেয়। ফারহান যখন পড়তে বসে তখন জানালা খুলে দেয়। দখিনা বাতাসের সাথে কত রকমের ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসে। ফারহানের শরীর-মন দুটোই জুড়িয়ে যায়। তার খুব ভালো লাগে। পড়ার আগ্রহ এবং উদ্যম দুটোই বেড়ে যায়।
পড়ালেখার সাথে সাথে ফারহান নামাযের ক্ষেত্রেও বেশ যত্নবান। সে নিয়মিত নামায আদায় করে। তবে ফজরের নামাযের সময় সে একটু অলসতা করে।
প্রতিদিন ফজরের সময় আম্মু যখন তাকে ডাকেন- বাবা ওঠো, ফজরের নামাযের সময় হয়েছে। তখন সে এপাশ-ওপাশ করে, অলসতা করে। আম্মু আরো তো সময় আছে, আমি আরেকটু পরে উঠছি, বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। আম্মু আবার ডাকেন, আবার সে এমনটিই করে। এভাবে নামাযের সময় শেষ হয়ে যায়, কিন্তু সে আর ওঠে না। তার আম্মু তো মাঝে মাঝে খুব রাগ হন। আবার মাঝে মাঝে তাকে খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেন। কিন্তু তার অলসতা কাটেই না।
আম্মু চিন্তিত হন; এখন ওর নয় বছর বয়স, এখন থেকেই যদি নিয়মিত ওঠার অভ্যাস না করে তাহলে নামাযের বয়স হওয়ার পরে তো তার উঠতে খুব কষ্ট হবে।
ফারহানের ছোট মামা এলেন তাদের বাড়িতে বেড়াতে। ফারহান তো মহাখুশি! কারণ, ছোট মামা তার খুব পছন্দের মানুষ। তার সাথে ফরহানের খুব ভাব। ফারহান তার সাথে পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরে। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায়। তাই ছোট মামার আসার কারণে সে খুব খুশি। মামা তার জন্য চকলেট, চিপস, বাদাম আরো কত কী এনেছেন। এগুলো পেয়ে ফারহান অনেক খুশি। ভাগিনার খুশি দেখে ছোট মামাও খুশি।
ছোট মামা ফারহানের আম্মুর কাছে তার খোঁজ-খবর নিতে লাগলেন। ফারহানের আম্মু বললেন, আলহামদু লিল্লাহ, সে তো পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী এবং নামাযের ক্ষেত্রেও যত্নবান। তবে ফজরের নামায নিয়ে সে খুব অলসতা করে। মামা শুনে বলেন, চিন্তা করো না আপা, ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।
রাতে ফারহান মামার সাথে শুয়ে শুয়ে গল্প করছিল। তখন মামা বললেন, ফারহান আজ আমি তোমাকে শয়তানের গল্প বলব। ফারহান আগ্রহভরে বলল, শোনান মামা শোনান! মামা বলা শুরু করলেন। শয়তান হল মানুষের শত্রু। সে মানুষের ভালো দেখতে পারে না। যখন সে দেখে, মানুষ জান্নাতের কাজ করছে, নেক আমল করছে তখন সে হিংসায় জ্বলতে থাকে। সে বিভিন্ন উপায় বের করে, চিন্তা-ভাবনা করে- কীভাবে মানুষকে জাহান্নামের দিকে নেওয়া যায়। সে বিভিন্ন কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। তখন কিছু কিছু মানুষ ধোঁকায় পড়ে জাহান্নামের পথে চলে যায়। এ দেখে শয়তান অনেক খুশি হয়।
শয়তানের এমন শয়তানী আরো আছে। যখন কোনো ব্যক্তি রাতে ঘুমায় তখন শয়তান তার মাথায় তিনটি গিঁট দেয়; প্রতিটি গিঁট দেওয়ার সময় সে বলে, এখনো দীর্ঘ রাত আছে, তুমি আরো ঘুমাও। সেই ব্যক্তিটি যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে, (ঘুম থেকে ওঠার দুআ পড়ে,) তাহলে প্রথম গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি ওযু করে, দ্বিতীয় গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামায পড়ে তাহলে তৃতীয় গিঁটটিও খুলে যায়। ফলে সে আনন্দ ও উদ্যমের সাথে সকাল যাপন করে। আর যে ব্যক্তি শয়তানের দেওয়া গিঁটগুলো খোলে না; (অলসতা করে ঘুমিয়ে থাকে, নামায পড়ে না,) সে বিষণœ মনে অলসভাবে সকাল যাপন করে। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৩১)
আচ্ছা, এবার বুঝেছি, এজন্যই আমার ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠতে এত অলসতা লাগে। শয়তান গিঁট দিয়ে দেয় আর আমি ঘুম থেকে উঠতে চাই না; এই উঠছি, এই উঠছি বলে নামায কাযা করে দিই। ভীষণ অনুতপ্ত হল ফারহান এবং সে দৃঢ় প্রতীজ্ঞা করল আর কখনো সে ফজরে উঠতে অলসতা করবে না। পরের দিন ফজরের সময় আম্মু এক ডাক দিতেই সে লাফ দিয়ে উঠে বসল এবং দেরী না করে ওযু করে ফজরের নামায আদায় করল।
নামায আদায় করে মামার সাথে হাঁটতে বের হল ফারহান। তার মনটা খুব প্রফুল্ল ছিল। ফারহান বলল, মামা আজ আমি শয়তানের তিনটি গিঁটই খুলে ফেলেছি। আজ আমার খুব আনন্দ লাগছে, মনটাও খুব ভালো লাগছে। ইনশাআল্লাহ, আজ থেকে আর আমি ফজরে উঠতে অলসতা করব না; ফজরের নামায কাযা করব না।