Shawal 1431   ||   October 2010

পিছনের গোনাহ মনে রাখার হাকীকত

Mawlana Mufti Taqi Usmani

  আলহামদু লিল্লাহি নাহমাদুহূ ওয়া     নাস্তা ঈনুহূ ওয়া নাস্তাগফিরুহ .... ওয়াছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া আছহাবিহী ওয়া বারাকা ও সাল্লামা তাসলীমান কাছীরা, আম্মা বাদ। 

একটি মালফূযে হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী (রহ) বলেন, ‘হাদীছে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমার বান্দা যদি আসমান-যমিন বরাবর  গোনাহ নিয়ে আমার কাছে আসে, আর মাফ চায়, আমি তাকে মাফ করে দেবো, (তার গোনাহের আধিক্যের) কোন পরোয়া করবো না।  

সুতরাং বোঝা গেলো যে, পিছলা যিন্দেগির বরবাদিরও ক্ষতিপূরণ আছে, সব গোনাহেরই প্রতিকার আছে; এমন কোন গোনাহ নেই যার এলাজ বা প্রতিকার নেই। সেই এলাজ ও প্রতিকার হচ্ছে তাওবা। আর তাওবার তরীকাও কোন শায়খের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে হবে। তিনি যে তরীকা বাতলাবেন তার সঙ্গে আবার নিজের মত জুড়ে দেয়া উচিত নয়। এটা অনেক বড় ক্ষতির কারণ, বরং অনেক সময় তা নতুন কোন বরবাদি ডেকে আনে। এখন তো নিজের মতের উপর এবং মনচাহি পথে চলার রোগ খুব ছড়িয়ে পড়েছে। একারণেই মানুষ এখন কামিয়াবির রাস্তা খুঁজে পায় না। (আনফাসে ঈসা)

আফসোস না করে তাওবা করে ফেলো

সাধারণত দেখা যায়, মানুষ শুধু আফসোস করতে থাকে যে, হায়, আমার যিন্দেগি তো গোনাহ, আর নাফরমানিতেই বরবাদ হয়ে গেলো, এখন আমার কী উপায় হবে? এসম্পর্কে উপরের মালফূযে হযরত হাকীমুল উম্মত (রহ) বলছেন, গোনাহ করার পর বসে বসে শুধু আফসোস করে কী লাভ? বরং এখন যা করণীয় তাই করো, সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করো এবং ইসতিগফারে মশগুল হও। তোমার গোনাহ যত জঘন্যই হোক এবং পরিমাণে যত বেশীই হোক, এমনকি তুমি যদি গোনাহ দ্বারা আসমান-যমিনও ভরে ফেলো তবু নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা নিজেই এলাজ বাতলে দিয়েছেন যে, আমার কাছে ফিরে এসো এবং তাওবা-ইসতিগফার করো।

গোনাহ যত বেশী হোক এবং যত জঘন্যই হোক, পাহাড় পরিমাণ হোক, সাগর-মহাসাগর পরিমাণ হোক, এমনকি আসমান-যমিনের বরাবর হোক, তা যেন আল্লাহর রহমত থেকে তোমাকে নিরাশ না করে। আল্লাহ তাআলা তো কোরআন শরীফে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন-

يا عبادي الذين أسرفوا على أنفسهم لا تقنطوا من رحمة الله , إن الله يغفر الذنوب جميعـا, إنـه هو الغفور الرحيم

অর্থাৎ হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো; গোনাহ ও নাফরমানি করেছো; কুফুর, শিরক ও বিদআতে লিপ্ত হয়েছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, কারণ অবশ্যই আল্লাহ তাআলা সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি তো পরম ক্ষমাশীল, চিরদয়াময়।

(সুরাতুযযুমার)

গোনাহগার ও নাফরমান বান্দা যখন অনুতপ্ত হয়, তখন তার জন্য এর চেয়ে বড় অভয়বাণী ও সান্ত্বনাবণী আর কী হতে পারে! স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।

কিন্তু শয়তান মানুষের মনে এই দুশ্চিন্তা ঢেলে দিয়ে তার সামনে তাওবার সমস্ত পথ বন্ধ করে দেয় যে, তুমি তো মারদূদ হয়ে গেছো! তুমি তো এত বেশী গোনাহ করেছো এবং এত জঘন্য নাফরমানি করেছো যে, এখন তোমার নাজাতের কোন উপায় নেই। সুতরাং বাকি জীবন গোনাহ থেকে বেঁচে থেকে আর কী লাভ, তার চেয়ে যত পারো ভোগ-উপভোগ করে নাও। এভাবে শয়তান তাকে তাওবার পথ থেকে ভ্রষ্ট করে দেয়, অথচ বান্দাকে আল্লাহ তাআলা কত বড় সান্ত্বনার কথা বলেছেন যে, যত গোনাই তুমি করে থাকো এবং তোমার নাফরমানি যত জঘন্যই হোক, তুমি আমার কাছে ফিরে এসো, তাওবা করো, ইসতিগফার করো আমি তোমার সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেবো।

যদি বারবার তওবা ভেঙ্গে যায়!

অনেক সময় দিলের মধ্যে এই ওয়াসওয়াসা আসে যে, তাওবা তো আমি করি, কিন্তু সেই গোনাহ আবার হয়ে যায় এবং তাওবা ভেঙ্গে যায়; আবার তাওবা করি, আবার ভেঙ্গে যায়। একই অবস্থা বারবার হতে থাকে। এতে মনে হতাশা আসতে শুরু করে যে, হয়ত আমার ইছলাহ ও সংশোধনের কোন রাস্তা নেই। কারণ আল্লাহর বান্দারা তো তাওবা করার পর তাওবার উপর অটল থাকে, অথচ আমি যতবার তাওবা করি ততবার তাওবা ভেঙ্গে যায়।

না ভাই, ভালোভাবে বুঝে নাও যে, এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এতটুকু অবশ্য জরুরি যে, নিজের পক্ষ হতে তাওবার উপর অবিচল থাকার পূর্ণ চেষ্টা তুমি করে যাবে এবং আবার তাওবা করে নেবে এ ভরসায় গোনাহ করার দুঃসাহস করবে না। তার পরো যদি ভুলক্রমে গোনাহ হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করে নাও, আবারও যদি হয়ে যায়, আবার তাওবা করে নাও; যত বার হয়ে যায় তত বার তাওবা করে নাও। কোরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

إن الله يحب التوابين و يحب المتطهرين

এখানে আল্লাহ তাআলা তাওয়াবীনবলেছেন, যার অর্থ হলো বারবার তাওবাকারী এবং বেশী বেশী তাওবাকারী। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বারবার তাওবাকারীদের ভালোবাসেন।

একবার তাওবা করার পর বান্দা যখন ঐ তাওবার উপর অবিচল থাকবে তখন দ্বিতীয়বার, কিংবা বারবার তাওবার করার কী প্রয়োজন! সে তো নিজের তাওবার উপর অবিচলই আছে! সুতরাং বোঝা গেলো যে, এখানে তাদের কথা বলা উদ্দেশ্য নয় যারা গোনাহের পর তাওবা করে এবং তাওবার উপর অবিচল থাকে, বরং এখানে শুধু ঐ লোকদের কথাই বলা উদ্দেশ্য যারা একবার তাওবা করার পর আবার গোনাহ করে ফেলে এবং যাদের তাওবা বারবার ভেঙ্গে যায়, কিন্তু তবু তারা তাওবা করতে থাকে।

মোটকথা, আলোচ্য আয়াতের তাওয়াবীনশব্দটিই প্রমাণ করে যে, তোমার কাছে শরীয়াতের দাবী এই যে, তুমি নিজের পক্ষ থেকে মযবূত তাওবা করো, তারপর তাওবার উপর অবিচল থাকার পূর্ণ চেষ্টা করো। পরিপূর্ণ চেষ্টার পরো যদি তোমার পদস্খলন  ঘটে, এবং তা ঘটতেই পারে, তখন তুমি হতাশ হয়ো না এবং হিম্মতহারা হয়ো না, বরং আবার তাওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে এসো। তাওবা মানেই তো ফিরে আসা। সুতরাং আয়াতের অর্থ হলো, ‘আল্লাহ তাআলা ঐ লোকদের ভালোবাসেন যারা বারবার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েও আল্লাহরই কাছে ফিরে আসে। সুতরাং হে ভাই, হতাশ ও নিরাশ হওয়ার কোন কারণ নেই।    যতবার ভুল হবে ততবার ফিরে আসবে এবং তাওবা করবে, আল্লাহ তোমার তাওবা কবুল করার জন্য রহমতের দরজা  খোলা রেখেছেন। এজন্য পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে এই দুআ শিক্ষা দিয়েছেন-

اللهم مغفرتك أوسع من ذنوبنا و رحمتك أرجى عندنا من عملنا

 

 

হে আল্লাহ, আপনার মাগফেরাত আমাদের গোনাহ থেকে প্রশস্ত এবং আপনার রহমত আমাদের কাছে আমাদের আমলের চেয়ে বেশী     আশা-ভরসার স্থল।

অর্থাৎ গোনাহের আধিক্যের কারণে কখনো মনে করো না যে, তোমার মাগফেরাত হবে না, কেননা তোমার গোনাহ যত বেশী আল্লাহর মাগফিরাত তার চেয়ে প্রশস্ত । তদ্রূপ নিজের আমলের উপর ভরসা করে বসে থেকো না, এটা একধরনের অহঙ্কার। তোমার নেকআমলের পরিমাণ যত বেশীই হোক না কেন, আল্লাহর রহমত ছাড়া তোমার বেড়াপার হতে পারে না। এমনকি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি নিজেও আল্লাহর রহমত ছাড়া পার হতে পারবো না।

তাওবা দ্বারা গোনাহের পরিমাণ কমতে থাকে

একটা বিষয় খুব ইহতিমামের সাথে খেয়াল রাখতে হবে যে, কোন গোনাহ যেন তাওবা ছাড়া না থাকে এবং গোনাহ হয়ে যাওয়ার পর তাওবা করতে যেন দেরী না হয়, বরং গোনাহ হওয়ামাত্র আল্লাহর দিকে রুজু করো এবং সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করে নাও। এটা করলে ধীরে ধীরে ইনশাআল্লাহ গোনাহের পরিমাণও কমতে থাকবে। কেননা আল্লাহ তাআলা যখন দেখবেন যে, নফস ও শয়তানের ধোকায় পড়ে বান্দা যতই গোনাহ করে, বারবার সে আমার কাছেই ফিরে আসে এবং তাওবা করে, আমার দুয়ার থেকে সে বিমুখ হয় না, তখন বান্দার প্রতি খুশী হয়ে তিনি গায়ব থেকে এমন ব্যবস্থা করে দেবেন যাতে বান্দাহ সামনে গোনাহ থেকে বাঁচতে পারে, কিংবা অন্তত গোনাহের পরিমাণ কমে যায়। তাই কোরআন কারীমে বলা হয়েছে-

ثم تاب عليهم ليتوبوا

 

এখানে আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য যে শব্দ ব্যবহার করেছেন বান্দার জন্যও সে শব্দই ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বান্দার দিকে অভিমুখী হন যেন বান্দা (আল্লাহর দিকে) ফিরে আসে এবং তাওবা করে। এটাই আল্লাহ তাআলার সুন্নত ও বিধান যে, যে বান্দা বারবার আল্লাহর কাছে ফিরে আসে এবং তাওবা-ইসতিগফার করে তিনি তার হিফাযাতের ইনতিযাম করেন, আর তাকে পথচ্যুত হতে দেন না। এজন্য বলা হয়েছে-

ما أصر من استغفر

 

অর্থাৎ যে বান্দা গোনাহ থেকে ইসতিগফার করতে থাকে সে গোনাহের উপর জমে আছে বলে গণ্য হবে না।

ইসতিগফারের ছুরতে আল্লাহ তাআলা গোনাহগার বান্দার হাতে এমন এক মহা-ঔষধ দান করেছেন যে, যখনই নফস ও শয়তান ফনা তুলে বান্দাকে ছোবল দেবে সঙ্গে সঙ্গে বান্দা এই মহা-ঔষধ ব্যবহার করে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। সুতরাং হে ভাই, যত বারই ভুল ও পদস্খলন হোক এবং যত বড় গোনাই হোক ভয় পেয়ো না এবং নিরাশ হয়ো না, বরং সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে এসো এবং তাওবা-ইসতিগফার করো।

দিলে যদি দাগ পড়ে, ধুয়ে ফেলো

জনৈক মুরীদ হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী (রহ)-এর কাছে এভাবে তার মনের পেরেশানি যাহির করলেন, ‘হযরত! যখন আমরা আপনার মজলিসে বসি তখন তো বড় রূহানিয়াত এবং আল্লাহর প্রতি আত্মনিবেদন অনুভব করি। কিন্তু যখন মজলিস থেকে উঠে যাই তখন আবার শুরু হয়ে যায় সেই দুনিয়ার গান্দেগি, গোনাগারি ও নাফরমানি। তাওবা-ইসতিগফার অবশ্য করি, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার গোনাহ- নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ি।

উত্তরে হযরত হাকীমুল উম্মত (রহ) বললেন, ‘আচ্ছা, তোমরা যে সাদা-সফেদ লেবাস পরো, সেটা কি সফেদই থাকে, না কিছু সময় পরে তাতে দাগ-ময়লাও পড়ে?’

তারা বললেন, ‘অবশ্যই দাগ-ময়লা পড়ে।

তিনি বললেন, ‘তখন তোমরা কী করো?’

তারা বললেন, ‘তখন আমরা ময়লা কাপড় ধোবীর কাছে পাঠিয়ে দেই। সে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়, তখন তা আগের মতই ধবধবে সাদা হয়ে যায়।

তখন হযরত হাকীমুল উম্মত (রহ) বললেন, ‘তোমাদের জন্য আমি হলাম সেই কাপড় ধোয়া ধোবী। যখন তোমাদের কাপড়ময়লা হয়ে যায় তখন তোমরা আমার কাছে এসে ধোলাই করে নিয়ো এবং পাক-ছাফ হয়ে যেয়ো।

আমরা যে তাওবা করি, আসলে এই তাওবা-ইসতিগফার আমাদের গোনাহের ময়লা ও গান্দেগি ধুয়ে মুছে পাকছাফ করে দেয়। গোনাহ ও নাফরমানির দাগ-ময়লা থেকে দিলকে যতই ধোয়া মোছা করবে তোমার দিল তত শুভ্র-উজ্জ্বল হতে থাকবে; তাতে ততই নূর ও নূরানিয়াত আসতে থাকবে। তারপর ইনশাআল্লাহ গোনাহের পরিমাণ যেমন কমে আসবে তেমনি তার প্রবলতাও  হ্রাস পাবে। 

একটি সুন্দর দু

হাদীছ শরীফে আছে, একবার নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শব্দযোগে দু  করেছেন-

 

اللهم اجعلني من الذين إذا أحسنوا استبشروا و إذا أسآؤوا استغفروا

 

হে আল্লাহ! আমাকে ঐ লোকদের    ন্তর্ভুক্ত করুন যারা যখন কোন নেক কাজ করে, খুশী হয়, আর যখন কোন মন্দ কাজ করে তখন ইসতিগফার করে।

দেখুন, স্বয়ং আল্লাহর পেয়ারা হাবীব কীভাবে আল্লাহর কাছে দুআ ও মুনাজাত করছেন! তিনি তো মাছূম ও নিষ্পাপ, তাঁর থেকে কোন মন্দ আমল প্রকাশ পাওয়া তো সম্ভবই নয়, তাহলে তাঁর এরূপ দুআ করার রহস্য কী? আসলে এভাবে তিনি তাঁর প্রিয় উম্মতকে শিক্ষা দান করছেন যে, যেভাবেই পারো তোমরা বন্দেগির এই গুণটি অর্জন করো; যখন কোন নেক আমল করার তাওফীক হবে তখন আনন্দিত হও এবং শোকর আদায় করো, আর যখন কোন বদ আমল হয়ে যাবে তখন অনুতপ্ত হও এবং তাওবা-ইসতিগফার করো।

ব্যস্‌ হে ভাই! যখন তোমার মধ্যে এই অভ্যাস এসে যাবে, অর্থাৎ ভুল-বিচ্যুতি ও গোনাহ হওয়ামাত্র তাওবা-ইসতিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ফিরে আসবে তখন তোমার জন্য কামিয়াবি ও নাজাতের দুয়ার খুলে যাবে।

আমাদের বুযুর্গ বাবা নাজম হাসান ছাহেব (রহ) বলতেন, ‘আল্লাহ যখন এই নেয়ামত দান করেছেন যে, গোনাহের কারণে লজ্জা ও অনুতাপ হয়, দিলের ভিতরে জ্বালাযন্ত্রণা হয় তখন আমার আর কিসের ভয়!’

অর্থাৎ যত বার গোনাহ হোক এবং যত জঘন্য রকমের গোনাহ হোক আমি তো তাওবার মাধ্যমে গোনাহ থেকে পাক-ছাফ হয়ে যাবো! সুতরাং নফস ও শয়তান আমাকে গোনাহে লিপ্ত করে আমার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না।

মোটকথা একবার বসে যাও এবং আল্লাহ তাআলার কাছে সামগ্রিক তাওবা করে নাও, তারপর সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা করো যে, হে আল্লাহ, নিজের ইচ্ছায় আর কখনো আমি গোনাহ করবো না। তবে হে আল্লাহ, ইচ্ছা ও প্রতিজ্ঞা তো আমি করেছি, কিন্তু তার উপর অবিচল থাকার সাধ্য আমার নেই, যতক্ষণ না আপনার পক্ষ হতে তাওফীক হবে। সুতরাং হে আল্লাহ, গোনাহ তরক করার যে ইচ্ছা ও প্রতিজ্ঞা আমি করেছি, তার উপর অবিচল থাকার তাওফীকও আপনিই আমাকে দান করুন।

আল্লাহর সঙ্গে আলাপ করো 

আমার মুর্শিদ হযরত ডাক্তার আব্দুল হাই (রহ) বলতেন, আল্লাহর সঙ্গে    অন-রঙ্গতা ও কৃতার্থতার সাথে আলাপ করো। আল্লাহকে এভাবে বলো, হে আল্লাহ! তাওবা তো আমি করেছি এবং তাওবার উপর অবিচল থাকার প্রতিজ্ঞাও করেছি, কিন্তু আপনি তাওফীক না দিলে তাওবার উপর অবিচল থাকার সাধ্য তো আমার নেই। সুতরাং হয় আমাকে তাওবার উপর অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন, আর না হয় আখেরাতের পাকড়াও থেকে আমাকে অব্যাহতি দান করুন। এমন  আবদারের ভাষায় যদি আল্লাহকে বলতে পারো তাহলে আল্লাহর রহমতের দরিয়ায় জোশ না এসে পারেই না!

ধরো, এর পরো তোমার চেষ্টা সফল হলো না। নফস ও শয়তানের প্রবল হামলায় তোমার প্রতিজ্ঞার দেয়াল ভেঙ্গে গেলো এবং তোমার দ্বারা গোনাহ ও নাফরমানি হয়ে গেলো, তখন সঙ্গে সঙ্গে আবার তাওবা-ইসতিগফার করে নাও। ব্যস, সারা জীবন এটাই করতে থাকো। তাহলে আল্লাহ তাআলার রহমতের কাছে আশা করা যায়, ইনশাআল্লাহ তোমার বেড়াপার হয়ে যাবে।

হযরত ডাক্তার ছাহেব (রহ) এখানে যা বলেছেন, তা মূলত সেই দুআর মযমূন, যা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে শিক্ষা দান করেছেন। আল্লাহর দরবারে তিনি এভাবে দুআ করতেন-

 

اللهم إن قلوبنا و نواصينا و جوارحنا بيدك, لم تملكنا منها شيئا, فإذا بنا ذلك فكن أنت ولينا و اهدنا إلى سوآء السبيل

 

 

হে আল্লাহ, নিঃসন্দেহে আমাদের কলব এবং আমাদের চুলের ঝুটি এবং আমাদের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আপনারই কবযায়, এগুলোর কোন কিছুরই মালিক আপনি আমাদের বানাননি। তো আমাদের সঙ্গে যখন আপনি এমন মুআলাই করেছেন সুতরাং আপনিই আমাদের অভিভাবক হোন এবং আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন।

সুবহানাল্লাহ! স্বয়ং আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর পেয়ারা হাবীবের মাধ্যমে আমাদেরকে এমন দুআ শিখিয়ে দিচ্ছেন, তখন আর আমাদের ভয়-চিন্তা কিসের!

আল্লাহ তাআলা আপন দয়াগুণে আমাকে আপনাকে, আমাদের সকলকে ভরপুর তাওফীক দান করুন, আমীন।

و آخـر دعوانـا أن الحمـد للـه رب العلمين

 

ভাষান্তর : আমাতুল্লাহ তাসনীম

 

 

advertisement