Muharram 1442   ||   September 2020

নবীজীর দস্তরখানে

আবু আহমাদ

৪৯. স্বর্ণ-রুপার পাত্রে পানাহার করব না

আমরা দুনিয়াতে কেমন পাত্রে পানাহার করি? কাঁচের অথবা মেলামাইন, স্টিল ইত্যাদির তৈরি পাত্রে। বলতে পারো- আল্লাহ জান্নাতে আমাদেরকে কেমন পাত্রে আপ্যায়ন করবেন? হাঁ, কুরআন-হাদীসের মাধ্যমে আমরা তা জানতে পেরেছি। সূরা যুখরুফে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

یُطَافُ عَلَیْهِمْ بِصِحَافٍ مِّنْ ذَهَبٍ وَّ اَكْوَابٍ.

(জান্নাতে) তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে স্বর্ণের থালা ও পানপাত্রে। -সূরা যুখরুফ (৪৩) : ৭১

সূরা দাহর-এ আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

وَ یُطَافُ عَلَیْهِمْ بِاٰنِیَةٍ مِّنْ فِضَّةٍ وَّ اَكْوَابٍ كَانَتْ قَؔوَارِیْرَا.

(জান্নাতে) তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে রুপার পাত্রে এবং স্ফটিকের মত স্বচ্ছ পানপাত্রে। -সূরা দাহ্র (৭৬) : ১৫

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়েছেন- কোনো জান্নাত হবে রুপার এবং সেখানের আসবাব-পত্র সবকিছুই হবে রুপার। আবার কোনো জান্নাত হবে স্বর্ণের এবং সেখানের সবকিছু হবে স্বর্ণের। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৭৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮০)

এখন আমরা কীভাবে সে জান্নাত লাভ করতে পারব এবং স্বর্ণ-রুপার পাত্রে পানাহার করতে পারব?

হাঁ, আখেরাতে স্বর্ণ-রুপার পাত্রে পানাহার করতে চাইলে দুনিয়াতে আমাদের তা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দুনিয়াতে স্বর্ণ-রুপার পাত্রে পানাহার করতে নিষেধ করেছেন। নবীজীর প্রিয় সাহাবী হযরত হুযায়ফা রা. বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-

لاَ تَشْرَبُوا فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ، وَلاَ تَأْكُلُوا فِي صِحَافِهَا، فَإِنَّهَا لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَنَا فِي الآخِرَةِ.

তোমরা স্বর্ণ-রুপার পাত্রে পানাহার কোরো না; কারণ, এগুলো দুনিয়াতে তাদের (কাফেরদের) জন্য এবং আখেরাতে আমাদের জন্য। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৪২৬

আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণও স্বর্ণ-রুপার পাত্রে পানাহার করতেন না। আল্লাহর রাসূলের প্রিয় সাহাবী, উপরোক্ত হাদীসের বর্ণনাকারী হুযায়ফা রা.-এর কাহিনী শোনো :

একবার তিনি পানি পান করতে চাইলেন। এক ব্যক্তি একটি রুপার পাত্রে তাঁকে পান করতে দিল। এ দেখে তিনি খুব রেগে গেলেন। ঐ পাত্রটি ছুড়ে ফেললেন।

তিনি কেন এমনটি করলেন? রুপার পাত্রটি একেবারে ছুড়েই মারলেন। তাতে পান করা থেকে বিরত থাকলেই তো হত বা মুখে বললেই তো হত- এতে পানাহার করা হারাম; নবীজী আমাদের তা থেকে নিষেধ করেছেন। কিন্তু কেন তিনি এমনটি করলেন?

হাঁ, তিনি নিজেই এর উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি তাকে কয়েকবার নিষেধ করেছি- স্বর্ণ-রুপার পাত্রে পানি বা খাবার না দিতে। তারপরও সে এ কাজ করেছে। এজন্য আমি পাত্রটি ছুড়ে ফেলে দিলাম। এরপর বললেন-

إِنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ نَهَى عَنِ الشّرْبِ فِي آنِيَةِ الفِضّةِ وَالذّهَبِ،... وَقَالَ: هِيَ لَهُمْ فِي الدّنْيَا وَلَكُمْ فِي الآخِرَةِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণ-রুপার পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন।... তিনি বলেছেন, এগুলো দুনিয়াতে তাদের (কাফেরদের) জন্য এবং আখেরাতে তোমাদের জন্য। (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস ১৮৭৮; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৪২৬)

৫০. খাবারও খাব রোযারও সওয়াব পাব!

এখন আমরা এমন একটি আমলের বিষয়ে আলোচনা করব, যে আমল করলে রোযাদারের সওয়াব লাভ হয়।

তোমার হয়ত মনে হতে পারে- এজন্য মনে হয় রোযাদারের মত না খেয়ে থাকতে হবে অথবা অনেক কষ্টসাধ্য কোনো আমল করতে হবে!

না, তোমাকে না খেয়েও থাকতে হবে না; আবার কষ্টসাধ্য কোনো আমলও করতে হবে না। ছোট্ট একটি আমলের দ্বারাই আমরা এ সওয়াব লাভ করতে পারব।

চলো, আবু হুরায়রা রা.-এর যবান থেকে শুনি সেই আমলটির কথা। তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِنّ لِلطّاعِمِ الشّاكِرِ مِثْلَ مَا لِلصّائِمِ الصّابِرِ.

খাবার খেয়ে শুকরিয়া আদায়কারী কষ্ট করে, সবর করে রোযা রাখা ব্যক্তির মত সওয়াব লাভ করবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৮৮৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭১৯৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৪১৪৭

অর্থাৎ তুমি খাবার খাওয়ার পর যদি শুকরিয়া আদায় কর- আলহামদু লিল্লাহ বল, তাহলে আল্লাহ তোমাকে সওয়াব দান করবেন; ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করে রোযা রাখার যে সওয়াব, আল্লাহ তোমাকে সে সওয়াব দান করবেন।

দেখ, ছোট্ট একটি আমল, শুকরিয়া আদায়, খাবার শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা- এর বিনিময়ে আল্লাহ তোমাকে কত বড় সওয়াব দান করবেন।

তবে একটি কথা শোনো, প্রাসঙ্গিকভাবে কথাটি বলে রাখি; আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার সাথে সাথে আমাদের কিন্তু মানুষের প্রতিও কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। বিশেষ করে তোমার মায়ের; যিনি প্রতিদিন  কষ্ট করে, পরম যতেœ তোমার জন্য খাবার প্রস্তুত করেন। তোমার মুখে খাবার তুলে দেন অথবা তোমার সামনে খাবার পেশ করেন। তাঁকে কি তুমি ‘জাযাকাল্লাহ’ বল? অথবা তোমার বাবা; যিনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তোমার জন্য খাবার, ফলমূল সংগ্রহ করেন। তুমি কি তাঁকে ‘জাযাকাল্লাহ’ বল? মানুষের প্রতি যে কৃতজ্ঞ হয় সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হতে পারে। হাদীস শরীফে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ لَمْ يَشْكُرِ النّاسَ لَمْ يَشْكُرِ الله.

যে মানুষের শুকরিয়া আদায় করল না; সে আল্লাহরও শুকরিয়া আদায় করল না। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৫৫

সুতরাং আজ থেকে আমি মানুষেরও শুকরিয়া আদায় করব তাদের জন্য দুআ করব। আমার খাবার সংগ্রহ করা, রান্না-বান্না করা, পরিবেশন করা- এগুলোর সাথে যারই সম্পর্ক রয়েছে, হোক সে আমার মা-বাবা, ভাই- বোন বা বাড়ির কাজের মানুষ- তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জাযাকাল্লাহ বলব।

এ প্রসঙ্গে হাদীসেও একটি দুআ শেখানো হয়েছে-

اَللّهُمّ أَطْعِمْ مَنْ أطْعَمَنِيْ، وَاسْقِ مَنْ سَقَانِيْ.

হে আল্লাহ! যে আমাকে আহার করাল (খাওয়ালো) আপনি তাকে আহার দান করুন এবং যে আমাকে পান করাল তাকে আপনি পান করান। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৫৫

আল্লাহ আমাকে, তোমাকে, সবাইকে আমলের তাওফীক দিন- আমীন।

 

advertisement