Shawal 1441   ||   June 2020

ইয়াদাতুল মারীয : কিছু আদব

Muhammad Ashiq Billah Tanveer

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

রোগীকে দেখতে গিয়ে তার জন্য দুআ করা

ইয়াদতের একটি আদব হচ্ছে, রোগীর জন্য সুস্থতার দুআ করা। প্রয়োজনে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে দুআ করা।

আলোচ্য ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সাদকে দেখতে গিয়ে তার শেফার জন্য দুআ করেছেন-

اللهُمّ اشْفِ سَعْدًا، اللهُمّ اشْفِ سَعْدًا، اللهُمّ اشْفِ سَعْدًا.

আয় আল্লাহ! আপনি সাদকে সুস্থ করে দিন। আয় আল্লাহ! আপনি সাদকে সুস্থ করে দিন। আয় আল্লাহ! আপনি সাদকে সুস্থ করে দিন।

তাই ইয়াদতের ক্ষেত্রে গুরুত্বের সাথে এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়। তেমনিভাবে রোগীকে যদি শুনিয়ে দুআ করা হয় তাহলে এতে সে সান্ত¡নাও বোধ করে থাকে।

ইয়াদতের সময় দুআর ফযীলত ও গুরুত্ব অনেক। হাদীস শরীফে যে সকল মুহূর্তে দুআ কবুল হওয়ার সুসংবাদ এসেছে ইয়াদতের মুহূর্তটি তার অন্যতম।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِذَا حَضَرْتُمُ الْمَرِيضَ، أَوِ الْمَيِّتَ، فَقُولُوا خَيْرًا، فَإِنّ الْمَلَائِكَةَ يُؤَمِّنُونَ عَلَى مَا تَقُولُونَ.

যখন তোমরা কোনো অসুস্থ ব্যক্তির নিকট যাবে কিংবা মৃত ব্যক্তির জানাযায় উপস্থিত হবে তখন তোমরা ভালো কথাই বলবে। কেননা এ মুহূর্তে ফেরেশতাগণ তোমাদের (দুআপূর্ণ) কথায় আমীন বলতে থাকেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯১৯

হাদীস শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী ইয়াদতের মুহূর্তে ফেরেশতাগণ তার দুআয় আমীন আমীন বলতে থাকেন। তো যেই দুআয় ফেরেশতাগণ আমীন বলেন তা কবুল হওয়ার ব্যাপারে মুমিনগণ অধিক প্রত্যাশী হন।

কুদরতের কী আজীব মুআমালা! এ হাদীসের বর্ণনাকারী হলেন আম্মাজান হযরত উম্মে সালামা রা.। হযরত উম্মে সালামা রা.-এর স্বামী ছিলেন হযরত আবু সালামা রা.। হযরত আবু সালামা রা.-এর যখন ওফাত হয়ে যায় তখন হযরত উম্মে সালামা রা. নবীজীর নিকট আসেন। বলেন-

يَا رَسُولَ اللهِ إِنّ أَبَا سَلَمَةَ قَدْ مَاتَ.

ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু সালামার তো ইন্তেকাল হয়ে গেছে। নবীজী তখন তাকে বললেন-

قُولِي: اللهُمّ اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأَعْقِبْنِي مِنْهُ عُقْبَى حَسَنَةً.

তুমি বল, আয় আল্লাহ! আপনি আমাকে এবং তাকে ক্ষমা করে দিন। আর তার স্থলে আমাকে উত্তম বদলা দান করুন।

তিনি তা-ই দুআ করলেন। আল্লাহর কী শান! আম্মাজান বলেন-

فَأَعْقَبَنِي اللهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ لِي مِنْهُ مُحَمّدًا صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ.

আল্লাহ আমার জন্য এমন ব্যক্তিকে মনোনীত করলেন যিনি আমার জন্য তার (আবু সালামা) চেয়েও বহু শ্রেষ্ঠ- মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে।

অর্থাৎ হযরত আবু সালামা রা.-এর ওফাতের পর হযরত উম্মে সালামা রা. আমাদের মা হয়ে নবীজীর ঘরে তাশরীফ রাখেন। [দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯১৯]

এটা হল ফেরেশতাদের আমীন বলা দুআ কবুল হওয়ার আলামত।

 তো ইয়াদতে গিয়ে রোগীর জন্য দুআ করা ইয়াদতের একটি বড় আদব। এমনকি সম্ভব হলে তাকে এভাবে শুনিয়েও দুআ করা যায়- আল্লাহ তাআলা আপনাকে দ্রুত সুস্থ করে তুলুন। আপনাকে আপনার কর্মস্থলে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন। আল্লাহর হুকুম ও বন্দেগীতে আরো মনোযোগী হওয়ার তাওফীক দান করুন। এভাবে দুআ করলে  অসুস্থ ব্যক্তি কিছুটা স্বস্তিও বোধ করবে, আশা করা যায়, ইনশাআল্লাহ।

অনেক সময় আশপাশ থেকে অনেককে হা হুতাশ করতে দেখা যায়। এমনটি কাম্য নয়। হা হুতাশ না করে নেক দুআ ও ভালো কথা বলা চাই। খেয়াল করতে হবে যে, এটা দুআ কবুলের মুহূর্ত। ফেরেশতাগণ এ দুআয় আমীন বলে থাকেন।

রোগী যদি অস্থির হয়ে পড়ে তাহলে তাকে শান্ত করতে হবে। সান্ত¡না দিতে হবে। হাদীস শরীফে তার জন্য কী কী ফযীলত এসেছে তা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। আর তার আত্মীয় স্বজনকেও হতে হবে সংযমী। এমনটি না হলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়। অসুস্থ ব্যক্তি আরো বিমর্ষ হয়ে পড়ে। তার সুস্থতা ব্যাহত হয়। তাই মনোবল সঞ্চয় করে রোগী ও তার পরিবারের দৃঢ়পদ থাকা সুফল বয়ে আনার ক্ষেত্রে অনেক বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দুআ পড়া

ইয়াদাতুল মারীযের একটি আদব হচ্ছে, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দুআ পড়া। হাদীস শরীফে এ সংক্রান্ত অসংখ্য দুআ বিবৃত হয়েছে। অন্যান্য মাছুর দুআর মত এ দুআগুলোও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং বরকতময়। এর শব্দ-বাক্য এবং অর্থ-মর্মের মাঝে রয়েছে যবানে নবুওতের এজায এবং আসমানী করুণা লাভের আভাস। মুমিনমাত্রই এ সকল দুআর প্রতি মনোযোগী এবং যত্নবান হওয়া কাম্য। এখানে কয়েকটি দুআ উল্লেখ করা হল-

আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন, আমাদের কেউ অসুস্থ হলে নবীজী তাকে ডান হাত দিয়ে বুলিয়ে দিতেন। বলতেন-

أَذْهِبِ الْبَاسَ، رَبّ النّاسِ، وَاشْفِ أَنْتَ الشّافِي، لَا شِفَاءَ إِلّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا.

হে মানবকুলের রব, আপনি দুঃখ কষ্ট দুর্দশা দূর করে দিন। আপনি আরোগ্য-শেফা দান করুন। আপনিই আরোগ্যদাতা। আপনার শেফা ছাড়া কোনো শেফা নেই। এমন আরোগ্য দিন, যার পর আর রোগ নেই।

তিনি আরো বলেন, ইন্তিকালের পূর্বে নবীজী যখন শয্যাশায়ী তখন আমি নবীজীর হাত ধরলাম। তিনি যেভাবে হাত বুলিয়ে দিতেন সেভাবে আমি তাঁর হাত দিয়ে তাঁকে বুলিয়ে দিব বলে। নবীজী তখন তাঁর  হাত আমার হাত থেকে টেনে নিলেন। বললেন-

اللهُمّ اغْفِرْ لِي وَاجْعَلْنِي مَعَ الرّفِيقِ الْأَعْلَى.

এভাবে আমি দেখতে দেখতে নবীজী চলে গেলেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৯১; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৪৩

তিনি আরো বলেন, একবার নবীজী অসুস্থ হলেন। তখন আমি আমার হাত নবীজীর বুকে রেখে এই দুআ পড়ে ফুঁক দিতাম। অন্য বর্ণনায় এসেছে, কেউ অসুস্থ হলে নবীজীও এই দুআ পড়ে  তাকে ফুঁক দিতেন-

امْسَحِ الْبَأْسَ رَبّ النّاسِ، بِيَدِكَ الشِّفَاءُ، لَا كَاشِفَ لَهُ إِلّا أَنْتَ.

হে মানবকুলের রব, আপনি দুঃখ দুর্দশা দূর করে দিন। আপনার হাতেই শেফা। আপনি ছাড়া এটা দূর করার কেউ নেই। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৯৯৫, ২৫৭৪০

নবীজী বলেন, তোমাদের কেউ যদি অসুস্থ ব্যক্তির ইয়াদতে যায়, যার এখনও মৃত্যুর ফয়সালা চলে আসেনি, তাহলে সে যেন তার নিকট গিয়ে এই দুআ সাতবার পড়ে-

أَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيمَ رَبّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ.

মহান আল্লাহর নিকট আমি প্রার্থনা করছি, যিনি মহান আরশের অধিপতি, তিনি যেন তোমাকে সুস্থ করে দেন।

নবীজী বলেন, সাত বার এই দুআ পড়বে। এতে আল্লাহ তাআলা তাকে ওই অসুস্থতা থেকে আরোগ্য দান করবেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১০৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২০৮৩; আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৫৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৩৮, ৩২৯৮

আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন, নবীজী অসুস্থ হলে হযরত জিবরীল আ. এসে ফুঁ দিয়ে যেতেন।

একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে জিজ্ঞাসা করলেন-

يَا مُحَمّدُ اشْتَكَيْتَ؟

মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন?

নবীজী বললেন-

نَعَمْ -হাঁ।

তখন হযরত জিবরীল আ. বললেন-

بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ.

আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি, প্রত্যেক ওই বস্তু থেকে যা আপনাকে কষ্ট দেয়, প্রত্যেক হিংসুক ব্যক্তি অথবা তার নজর থেকে, আল্লাহ আপনার শেফা করবেন। আমি আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিয়ে দিচ্ছি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৮৫, ২১৮৬

হযরত জিবরীল আ. যে দুআ পড়ে নবীজীকে ঝাড়-ফুঁক করেছেন, আমরাও কোনো রোগীকে সেই দুআ পড়ে ঝাড়-ফুঁক করতে পারি, বিশেষ করে নজর-আসরের রোগীকে।

এমনকি অসুস্থ ব্যক্তি নিজেও নিজের জন্য দুআ করতে পারে এবং পড়তে পারে। নবীজী আমাদেরকে সে দুআও শিখিয়ে দিয়েছেন।

এক সাহাবী নবীজীর নিকট এসে বললেন, ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে আমি শরীরে ব্যথা অনুভব করছি। নবীজী এ শুনে বললেন, তোমার শরীরের যে স্থানে ব্যথা অনুভব করছ সেখানে তুমি হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ বলে সাতবার এই দুআ পড়-

أَعُوذُ بِاللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ.

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২০২

এছাড়া কুরআনুল কারীমের ছোট্ট দুটি সূরা- সুরা ফালাক ও সুরা নাস। এ সুরা দুটিও অত্যন্ত বরকতময়।

হযরত আয়েশা রা. বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا مَرِضَ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِهِ نَفَثَ عَلَيْهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ، فَلَمّا مَرِضَ مَرَضَهُ الّذِي مَاتَ فِيهِ، جَعَلْتُ أَنْفُثُ عَلَيْهِ وَأَمْسَحُهُ بِيَدِ نَفْسِهِ، لِأَنّهَا كَانَتْ أَعْظَمَ بَرَكَةً مِنْ يَدِي. وَفِي رِوَايَةِ يَحْيَى بْنِ أَيّوبَ: بِمُعَوِّذَاتٍ.

নবী-পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে নবীজী মুআববিযাত (তথা এই দুই সুরা অথবা তাবীয সংক্রান্ত অন্যান্য আয়াত ও দুআ)  পড়ে তাকে ঝেড়ে দিতেন। এরপর নবীজী যখন মৃত্যু শয্যায় উপনীত হলেন তখন আমি তাঁকে এই দুই সুরা পড়ে ঝেড়ে দিতাম আর তাঁর হাত মুবারক দিয়েই তাঁকে মুছে দিতাম। কেননা তাঁর হাত আমার হাত অপেক্ষা অনেক বরকতময়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৯২

হাদীস শরীফে বর্ণিত এ সকল দুআ-দরূদ উম্মতের জন্য অনেক বড় তোহফা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক বড় ইহসান তিনি উম্মতকে এতসব মূল্যবান উপঢৌকন দিয়ে গিয়েছেন। তাই উম্মতের কর্তব্য, এ সকল মাসনূন দুআ-দরূদের প্রতি যত্নবান হওয়া। কেবলমাত্র দাওয়ার দিকে মনোযোগী না হয়ে দুআর প্রতিও খেয়াল রাখা জরুরি।

আরো কিছু আদব

ইয়াদাতুল মারীযের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব হচ্ছে, রোগীর বিবেচনায় উপযুক্ত সময়ে ইয়াদতে যাওয়া। তেমনিভাবে ফোন মারফত খোঁজ-খবর নেওয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা। ইয়াদতের জন্য উপযুক্ত সময়ের খেয়াল না করলে অনেক সময় রোগীর আরো কষ্ট হয়। তাই এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ রাখা খুবই জরুরি।

তেমনিভাবে ঘন ঘন ইয়াদতে না গিয়ে বিরতি দিয়ে দিয়ে দেখতে যাওয়া ইয়াদতের একটি আদব। দেখতে গিয়ে তার নিকট বেশিক্ষণ অবস্থান না করা এবং অসুস্থ ব্যক্তির শরীর-স্বাস্থ্য ও মন-মর্জি খেয়াল করে কথা বলাও ইয়াদের আদব। তার সামনে সুন্দর সুন্দর কথা বলা। আশাজাগানিয়া গল্প শোনানো। ফযীলতের কথা শোনানো। এমন কোনো আলাপ বা সংবাদ না বলা যাতে সে মর্মাহত হয়। উদাহরণস্বরূপ- এভাবে কিছু না বলা যে, তোমার অসুস্থতার দরুন তোমার পরিবারের এই এই ক্ষতি হয়ে গেল কিংবা তোমার ব্যবসায় এই এই মন্দা পড়ল। অথবা এই রোগ অমুকেরও হয়েছিল, কিন্তু সে  আর বাঁচেনি। এভাবে নেতিবাচক ভঙ্গিতে কথা না বলে ইতিবাচক কথা বলা। যেমন- এভাবে বলা, না কই, তোমার তো তেমন কিছু হয়নি। আলহামদু লিল্লাহ, চিকিৎসা চলছে। শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবে, ইনশআল্লাহ। এরচে আরো কত জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছে! ঘাবড়াবার কিছু নেই। আল্লাহ সুস্থ করে দিবেন।

لاَ بَأْسَ، طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللهُ.

সমস্যা নেই। ইনশাআল্লাহ, সুস্থ হয়ে উঠবে।

এভাবে তার মাঝে আশা সঞ্চার করা।

তেমনিভাবে রোগীকে দেখতে গিয়ে দীর্ঘ আলাপচারিতায় লিপ্ত না হওয়া। এতে অনেক সময় রোগী বিরক্তি বোধ করে। মোটকথা, রোগীর যাতে কোনোরূপ কষ্ট না হয় সেদিকটি খুব খেয়াল রাখা। হাঁ, ইয়াদতকারী যদি এমন হন, রোগী তার দীর্ঘ অবস্থান ও দীর্ঘ আলাপচারিতায় স্বস্তি বোধ করে তবে সেক্ষেত্রে তা হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

উল্লেখ্য যে, ইয়াদতের অঙ্গন অত্যন্ত বিস্তৃত এবং এর প্রকার ও ধরনও অনেক। তাই রোগীকে দেখতে যাওয়াই শুধু ইয়াদত, বিষয়টি সবক্ষেত্রে এমন নয়। কখনও কখনও রোগীর নিকট উপস্থিত না হওয়াটাই অধিক কল্যাণকর সাব্যস্ত হয়। সেক্ষেত্রে দূর থেকে ফোন মারফত খোঁজ-খবর নেওয়া এবং তার জন্য দুআ খায়ের অব্যাহত রাখাই কাম্য। অসুস্থ ব্যক্তির হালচাল এবং সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি সবকিছু বিবেচনা করে ইয়াদতে অংশ গ্রহণ করা চাই।

ইয়াদতের একটি আদব হচ্ছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি হয়ে ইয়াদতে যাওয়া। একদিকে তা রোগীর দেহমন প্রফুল্ল রাখতে সহায়ক। পাশাপাশি এক্ষেত্রে ক্ষতিকর জীবাণু থেকে মুক্ত থাকার বিষয়টিও বিবেচ্য। অতএব উত্তম পরিচ্ছদে ইয়াদতে যাওয়া। প্রয়োজনে হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করা। এমন সুগন্ধি যা রোগীর জন্য স্নিগ্ধ হয়, উৎকট না হয়।

সুযোগ থাকলে কিছু হাদিয়া নিয়ে দেখতে যাওয়া। হাদিয়ার ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বিবেচনায় রাখা খুবই সঙ্গত। রোগীর জন্য যা উপকারী এবং উপযোগী তা পেশ করাই উত্তম। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করা কিংবা তার চিকিৎসা খরচে শরিক হওয়াটা অধিক কল্যাণকর মনে হয়। খাবার-দাবার, ফল-ফ্রুট হাদিয়া দেওয়ার চেয়ে অনেক সময় নগদ অর্থ বেশি উপকারী সাব্যস্ত হয়। তাই হাদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোও লক্ষণীয়।

বিশেষ করে চিকিৎসা সেবার সাথে সম্পৃক্ত বন্ধুগণ চিকিৎসা ব্যয়কে যথাসাধ্য সহনীয় করার মাধ্যমেও রোগীর সেবার এ মহতি আমলে সহজেই অংশগ্রহণ করতে পারেন। নিছক পার্থিব মুনাফা অর্জন অপেক্ষা পরকালীন চিরস্থায়ী লাভের বিশ্বাস হৃদয়-গভীরে জাগরূক রাখার মাঝেই প্রকৃত কল্যাণ। আল্লাহ তাআলাই উত্তম তাওফীকদাতা।

অধীনস্ত কেউ অসুস্থ হলে তার কাজ বা ডিউটি লাঘব করে দেওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার কাজ হালকা করে পারিশ্রমিক ঠিক রাখা কিংবা তার চিকিৎসা ও সুস্থতার বিষয়ে ফিকির করার মাধ্যমেও ইয়াদতে শরিক হওয়া যায়।

কারো কারো এমন প্রবণতা রয়েছে যে, রোগীকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এটা ভালো। রোগীকে উত্তম পরামর্শ দেওয়া ইয়াদতের একটি আদব। যেমন- রোগীকে বলা যে, ডাক্তার যেভাবে বলেছেন সেভাবে চলুন। এই কয়েকদিনই তো! এরপর আর কষ্ট হবে না, ইনশাআল্লাহ। কিংবা সুনির্দিষ্ট কোনো পরামর্শ থাকলে তাও দেওয়া।

তবে পরামর্শ দেওয়ার আদব হল, মনে যা আসে তা বলতে না থাকা। আমি এক ওষুধে উপকৃত হয়েছি বলে সেও সেই একই ওষুধে সুস্থ হয়ে উঠবে- সবসময় এমনটি নয়। অনেক সময় রোগ অভিন্ন হলেও রোগের কারণ ও ধরণ ভিন্ন থাকে। ফলে চিকিৎসাও ভিন্ন হয়। তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা না থাকলে সে ব্যাপারে কিছু না বলাই উচিত। বিশেষ করে জটিল ও স্পর্শকাতর বিষয়ের ক্ষেত্রে।

রোগী কোনো ডাক্তারের পরামর্শে রয়েছে। বিনা কারণে সেই চিকিৎসক ও চিকিৎসার প্রতি তাকে সংশয়ে না ফেলা। অর্থাৎ রোগী যে চিকিৎসা গ্রহণ করছে তা ভুল বা ভালো নয় এবং আমি যে পরামর্শ দিচ্ছি তা সুনিশ্চিত কল্যাণকর- এমন সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ধারণা না থাকলে এ বিষয়ে রোগীকে কিছু না বলা। কিংবা রোগী এখনও কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করেনি, এমতাবস্থায়ও নিছক ধারণার ভিত্তিতে কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসার পরামর্শ না দেওয়া। এতে দেখা যায়, রোগী মনস্তাত্ত্বিকভাবে হোঁচট খায় এবং তার সুস্থতা ব্যাহত হয়। তাই সুনিশ্চিত না জেনে পরামর্শ দিয়ে রোগীকে অস্থির বা আস্থাহীন করা সঙ্গত নয়।

 মোটকথা, ইয়াদতুল মারীয একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। হাদীস শরীফে এর বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। তবে এ আমল করার জন্যও কিছু আদব ও নীতি রয়েছে।

এখানে এ সংশ্লিষ্ট কিছু আদবের মুযাকারা হল। আল্লাহ তাআলা এগুলোর উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। এছাড়া সাধারণ মুলাকাতের যে আদাব রয়েছে ইয়াদতের ক্ষেত্রেও সেগুলো প্রযোজ্য। অর্থাৎ আগে সংবাদ দিয়ে দেখা করা, মার্জিত আওয়াজে করাঘাত করা, স্পষ্টভাবে নিজের পরিচয় দেওয়া, দরজা বরাবর না দাঁড়ানো, অপ্রয়োজনীয় দৃষ্টিপাত সংযত রাখা, সৌজন্য ও কুশল বিনিময় করা ইত্যাদি।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইয়াদাতুল মারীযের মত গুরুত্বপূর্ণ এ সুন্নতের প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফীক দান করুন এবং এর আদবগুলোর প্রতি যথাযথ খেয়াল রাখার তাওফীক দান করুন- আমীন।

 

advertisement