Shaban-Ramadan 1441   ||   April-May 2020

যাও, আবার নামায পড়
তুমি নামায পড়নি

আবু আহমাদ

রাশেদের বয়স কেবল আট পেরিয়ে নয়-এ পড়েছে। এখনই সে নিয়মিত নামায পড়ে। আব্বুর সাথে মাঝে মাঝে মসজিদেও যায়। কায়দা শেষ করে আম্মাপারা পড়ছে। ইতিমধ্যে আব্বুর কাছ থেকে নামায এবং বেশ কিছু সূরাও মুখস্থ করে ফেলেছে। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দুআ মুখস্থ করেছেÑ আম্মুর কাছ থেকে। ঘুমানোর সময় ঘুমের দুআ, খাওয়ার সময় খাওয়ার দুআ, বাথরুমে যাওয়ার সময় বাথরুমের দুআÑ এভাবে অনেক দুআ মুখস্থ হয়ে গেছে তার। আব্বু বলেছেন, দশ বছর বয়স হলে তাকে নিয়মিত মসজিদে নিয়ে যাবেন।

আজ ও মাগরিবের নামায পড়তে আব্বুর সাথে মসজিদে গেল। মাগরিবের নামাযে ইমাম সাহেব সূরা ইখলাস ও ফালাক পড়েছেন। এ সূরা দুটো রাশেদের মুখস্থ। নামায শেষে ও আব্বুকে বলল, ইমাম সাহেব যে সূরাদুটো পড়েছেন তা আমি পারি! আব্বু বললেন, মাশাআল্লাহ! তুমি অনেক কিছু শিখে ফেলেছ। তুমি তো নামাযও শিখে ফেলেছ।

রাশেদ আব্বুর সাথে সুন্নতে দাঁড়াল। কিন্তু খুব দ্রæত নামায পড়ল। আব্বুর এক রাকাত হওয়ার আগেই রাশেদের নামায শেষ। আব্বু কিছু বললেন না। মসজিদ থেকে ফেরার পথে আব্বু রাশেদকে চিপস কিনে দিলেন। রাশেদ খুব খুশি হল এবং আব্বুকে জাযাকাল্লাহ বলল।

আব্বু বললেন, বাবা রাশেদ! একটি গল্প শুনবে? নামাযের গল্প! রাশেদ আব্বুর হাত জড়িয়ে ধরে বলল, জী আব্বু!

আব্বু বললেন, একবার নবীজী মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন। তুমি কি মসজিদে নববী চেন?

রাশেদ বলল, জী আব্বু! মসজিদে নববী হল, নবীজীর মসজিদ। আম্মুর কাছ থেকে আমি মসজিদে নববী নির্মাণের গল্প শুনেছি। নবীজী ও তাঁর সাহাবীগণ নিজ হাতে তা তৈরি করেছেন।

যাইহোক, নবীজী মসজিদে প্রবেশের পর এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। সে খুব তাড়াহুড়া করে নামায পড়ল। নবীজী তার নামায পড়া দেখলেন। নামায শেষে সে নবীজীর কাছে এল এবং সালাম দিল।

নবীজী তার সালামের উত্তর দিলেন এবং বললেন, যাও, তুমি আবার নামায পড়, তুমি নামায পড়নি!

সে আবার নামায পড়ল এবং নবীজীর কাছে এল। নবীজী আবার বললেন, যাও, তুমি আবার নামায পড়, তুমি নামায পড়নি! সে আবার নামায পড়ল; কিন্তু তৃতীয়বারেও নবীজী তাকে আবার নামায পড়তে বললেন।

রাশেদ বলল, নবীজী কেন তাকে বারবার নামায পড়তে বলছেন? এবং বলছেন, ‘তুমি নামায পড়নি’! সে তো নবীজীর সামনেই নামায পড়ছে!

হাঁ, এখানেই তো বিষয়। সে সম্ভবত তাড়াহুড়া করে নামায পড়ছিল। কোনো রকম রুকুতে গিয়েই তাড়াহুড়া করে সুবাহানা রব্বিয়াল আযীমবলেই রুকু থেকে মাথা ওঠাতে না ওঠাতেই সিজদায় চলে যাচ্ছিল। আবার সিজদার তাসবীহ তাড়াহুড়া করে পড়ে সিজদা থেকে কোনো রকম মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে না বসেই আবার পরের সিজদায় চলে যাচ্ছিল। এভাবে নামায পড়লে নামায হয় না। এজন্যই হয়ত নবীজী তাকে বলছিলেনÑতুমি নামায পড়নি

, এবার বুঝেছি; কেন নবীজী তাকে বারবার নামায পড়তে বলছেন এবং বলছেন, ‘তুমি নামায পড়নি

তাহলে তো আব্বু আমিও নামায পড়িনি। কারণ, আমিও তার মত তাড়াহুড়া করে নামায পড়েছি।

আব্বু বললেন, মাশাআল্লাহ! তুমি তাহলে এ গল্পটি শুনে বুঝতে পেরেছ যে, তাড়াহুড়া করে নামায পড়া ঠিক না!

এরপর কী হল আব্বু!

এরপর, ঐ সাহাবী নবীজীকে বললেন, আল্লাহ্র রাসূল! আমি এর চেয়ে সুন্দর করে নামায পড়তে পারি না; আমাকে শিখিয়ে দিনÑ কীভাবে নামায পড়তে হয়।

তখন নবীজী বললেনÑ

إِذَا قُمْتَ إِلَى الصّلاَةِ فَكَبِّرْ، ثُمّ اقْرَأْ مَا تَيَسّرَ مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ، ثُمّ ارْكَعْ حَتّى تَطْمَئِنّ رَاكِعًا، ثُمّ ارْفَعْ حَتّى تَعْدِلَ قَائِمًا، ثُمّ اسْجُدْ حَتّى تَطْمَئِنّ سَاجِدًا، ثُمّ ارْفَعْ حَتّى تَطْمَئِنّ جَالِسًا، وَافْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا.

যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে, আল্লাহু আকবার বলে নামায শুরু করবে।... এরপর ধীরেসুস্থে রুকু করবে (ধীরে ধীরে সুন্দর করে রুকুর তাসবীহ পড়বে)। রুকু থেকে ধীরেসুস্থে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে (সুন্দরভাবে রব্বানা লাকাল হাম্দ বলবে)। এরপর ধীরেসুস্থে সিজদা করবে (সুন্দর করে ধীরে ধীরে সিজদার তাসবীহ পড়বে)। এরপর ধীরেসুস্থে সিজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসবে। এভাবে পুরো নামায ধীরেসুস্থে আদায় করবে। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৯৭)

আব্বু বললেন, বল তো রাশেদ, আমরা নামাযে কার সামনে দাঁড়াই?

আল্লাহ্র সামনে, রাশেদ বলল।

আব্বু বললেন, আল্লাহ্র সামনে দাঁড়িয়ে কি তাড়াহুড়া করা, এদিক সেদিক তাকানো বা দুষ্টুমি করা উচিত?

কখনোই না, রাশেদ বলল।

তোমার শিক্ষক যদি বলেন, আমার সামনে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামায পড়; তখন কি তুমি তাড়াহুড়া করে পড়বে, নাকি ধীরস্থিরভাবে সুন্দর করে পড়বে?

সুন্দর করে, রাশেদ বলল।

আমি এখন থেকে ধীরস্থিরভাবে সুন্দর করে নামায পড়ব। নবীজী ঐ সাহাবীকে যেভাবে শিখিয়েছেন, সেভাবে।

আব্বু বললেন, মাশাআল্লাহ!

এসো বন্ধুরা! আমরাও রাশেদের মত ধীরেসুস্থে সুন্দরভাবে নামায পড়ি; নবীজী ঐ সাহাবীকে যেভাবে শিখিয়েছেন, ঠিক সেভাবে।

 

advertisement