Jumadal Ula 1441   ||   January 2020

নবীজীর বাণীতে উপমা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

খন্দকার মনসুর আহমদ

উপমা ভাবের বিষয়কে অন্তরের চোখে দৃশ্যমান করে তোলে। উপমার মাধ্যমে যে কথাটি বলা যায় তা শ্রোতার পক্ষে  দ্রুত অনুধাবন ও হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব হয়। মানুষ তাই মনের ভাব হৃদয়গ্রাহ্যভাবে ব্যক্ত করতে চিরকাল উপমার আশ্রয় নিয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অনেক উপমা ব্যবহার করেছেন। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাঁর বহু বাণীতে উপমা ব্যবহার করে দ্বীন ও ঈমানের নানা সত্য উদ্ভাসিত করেছেন; যা আমাদেরকে দ্বীন ও ঈমানের পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। এসকল উপমার প্রভাব আমাদের জীবনকে যে সুষমা দিতে পারে অন্য  কোন  মহামানবের বাণী  তা দিতে  পারে না। তাই হাদীস শরীফের উপমাগুলি আমাদের জীবনের মহামূল্য পাথেয়। এসব উপমা থেকে সাধ্যমত  শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করতে পারলে আমাদের জীবন ধন্য ও আলোকিত হবে। হাদীসের উপমাগুলো অলঙ্কারগত সৌন্দর্যেও উদ্ভাসিত। তাই আমরা  এসব উপমা থেকে আত্মোৎকর্ষের পাথেয় লাভের পাশাপাশি আমাদের মাতৃভাষাকেও সমৃদ্ধ করতে পারি। এ নিবন্ধে আমরা হাদীস-ভা-ার থেকে   রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের  এজাতীয় কয়েকটি অসাধারণ উপমাসমৃদ্ধ হাদীস প্রয়োজনীয় আলোকপাতসহ তুলে ধরার প্রয়াস পাব।

উল্লেখ্য, কোনো  কোনো  উপমায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই ‘উপমান’ ও ‘উপমিত’ চিহ্নিত করে  উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যা আর আলোকপাতের দাবি রাখে না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধু ‘উপমান’ উল্লেখ করে ‘উপমিত’ তথা মূল বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন এবং বিষয়টি শ্রোতাদের বিবেক ও  বোধশক্তির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এমন ক্ষেত্রে ঈষৎ আলোকপাত করা হয়েছে।

 

সতর্ককারী ও শত্রুদলের উপমা

ইসলাম মানবতার চিরায়ত মুক্তির ঠিকানা। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় না নিয়ে আখেরাতের জীবনে মুক্তি লাভ করা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। পৃথিবীর জীবনেও নির্মল শান্তি লাভের উপায় শুধু এই দ্বীন। এ দ্বীনের বাইরে থেকে মৃত্যুবরণ করা মানেই নিজেকে অনন্ত আযাবের দিকে ঠেলে দেওয়া। আখেরাতের জীবনে বেঈমানদের  পালাবার কোনো পথ থাকবে না। যেমন শত্রুদল এসে ঘিরে ফেললে পালানোর কোনো পথ থাকে না। একটি হৃদয়গ্রাহী উপমায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সেকথা বলেছেন। হযরত আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি ইরশাদ করেন-

إِنّمَا مَثَلِي وَمَثَلُ مَا بَعَثَنِي اللهُ بِهِ، كَمَثَلِ رَجُلٍ أَتَى قَوْمًا فَقَالَ: يَا قَوْمِ، إِنِّي رَأَيْتُ الجَيْشَ بِعَيْنَيّ، وَإِنِّي أَنَا النّذِيرُ العُرْيَانُ، فَالنّجَاءَ، فَأَطَاعَهُ طَائِفَةٌ مِنْ قَوْمِهِ، فَأَدْلَجُوا، فَانْطَلَقُوا عَلَى مَهَلِهِمْ فَنَجَوْا، وَكَذّبَتْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ، فَأَصْبَحُوا مَكَانَهُمْ، فَصَبّحَهُمُ الجَيْشُ فَأَهْلَكَهُمْ وَاجْتَاحَهُمْ، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ أَطَاعَنِي فَاتّبَعَ مَا جِئْتُ بِهِ، وَمَثَلُ مَنْ عَصَانِي وَكَذّبَ بِمَا جِئْتُ بِهِ مِنَ الحَقِّ.

আমার উপমা এবং আমাকে যে দ্বীন দিয়ে পাঠানো হয়েছে তার উপমা হল ঐ ব্যক্তির মত, যে কোনো সম্প্রদায়ের কাছে এসে বলে- ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার নিজের চোখে শত্রুদের একটি বিরাট বাহিনী দেখেছি, আর আমি হলাম এক প্রকাশ্য সতর্ককারী।  সুতরাং তোমরা বাঁচার পথ খোঁজো’। তখন তার সম্প্রদায়ের একদল লোক তার কথা মান্য করল এবং রাত থাকতেই বেরিয়ে পড়ল। আর আস্তে-সুস্থে পথ চলে মুক্তি পেয়ে গেল। আর তাদের একদল লোক তাকে মিথ্যাবাদী বলল এবং নিজেদের স্থানেই সকাল করল। তারপর প্রভাত বেলা তাদের মাঝে শত্রুদল এসে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাদেরকে ধ্বংস ও মূলোৎপাটিত করে দিল। এই হল ঐ ব্যক্তির উপমা, যে আমার আনুগত্য করেছে এবং আমার দ্বীনের অনুগামী হয়েছে। আর ঐ ব্যক্তির উপমা, যে আমাকে অমান্য করেছে এবং আমার আনীত দ্বীনকে মিথ্যা বলেছে।’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭২৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৮৩

উল্লেখ্য, বর্ণিত হাদীসটিতে ‘প্রকাশ্য সতর্ককারী’ বোঝাতে আরবীতে ‘আন্নাযীরুল উরয়ান’ শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে ‘বিবস্ত্র সতর্ককারী’। এ শব্দবন্ধের মাধ্যমে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি অত্যাসন্ন কোনো মহাবিপদের ব্যাপারে নিজ সম্প্রদায়কে হুঁশিয়ার করেন এবং আপন সতর্কবার্তায় সম্পূর্ণরূপে সত্যবাদী হন। প্রাচীন আরবের প্রথা ছিল- যখন কেউ আপন সম্প্রদায়ের উপর কোনো ভয়ঙ্কর শত্রুদলের নিশ্চিত ও অত্যাসন্ন আক্রমণের কথা জানতে পারত তখন  সে কোনো উঁচু স্থানে আরোহণ করে নিজের শরীর থেকে কাপড় খুলে তার মাধ্যমে ইশারা করে নিজ সম্প্রদায়কে ডেকে ডেকে ঐ হামলার বিষয়ে সতর্ক করে দিত। এর দ্বারা একথার প্রমাণ হতো যে, তিনি তার সতর্কবাণীতে সম্পূর্ণ সত্যবাদী। পরবর্তীতে ‘বিবস্ত্র সতর্ককারী’ কথাটি একটি বাগধারায় পরিণত হয়। এর মাধ্যমে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি তার সম্প্রদায়ের ওপর কোনো নিশ্চিত ও অত্যাসন্ন বিপদ দেখতে পান এবং তাদেরকে ত্বরায় সতর্ক করেন। আবার সে সতর্কবার্তায় তিনি সম্পূর্ণ সত্যবাদীও হন। বলাবাহুল্য, আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রে এ অর্থে এ বাগধারাটি পুরোপুরি সত্য। কারণ দ্বীন ও ঈমানের পথ অনুসরণ করা না হলে পরকালীন মহাবিপদ অবধারিত ও অত্যাসন্ন এবং এ ব্যাপারে সতর্ক করার ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ সত্যবাদী।

 

অগ্নি প্রজ্বালক ও পতঙ্গের উপমা

হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেন-

إِنّمَا مَثَلِي وَمَثَلُ النّاسِ كَمَثَلِ رَجُلٍ اسْتَوْقَدَ نَارًا، فَلَمّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهُ جَعَلَ الفَرَاشُ وَهَذِهِ الدّوَابّ الّتِي تَقَعُ فِي النّارِ يَقَعْنَ فِيهَا، فَجَعَلَ يَنْزِعُهُنّ وَيَغْلِبْنَهُ فَيَقْتَحِمْنَ فِيهَا، فَأَنَا آخُذُ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النّارِ، وَهُمْ يَقْتَحِمُونَ فِيهَا.

আমার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ ব্যক্তির মত, যিনি অগ্নি প্রজ্বালিত করেছেন। তারপর অগ্নিতে যখন চতুর্দিক আলোকিত হল, তখন যেসকল পতঙ্গ এবং যেসকল কীট অগ্নিতে ঝাঁপ দিয়ে থাকে তারা অগ্নিতে ঝাঁপ দিতে লাগল। আর অগ্নিপ্রজ্বালক তাদেরকে বাধা দিতে লাগলেন। কিন্তু পতঙ্গরা তাকে পরাভূত করে অগ্নির ভেতর ঢুকে পড়ে। বস্তুত এই হল আমার এবং তোমাদের উপমা। আমি তোমাদের কোমর ধরে টেনে  তোমাদেরকে অগ্নি থেকে নিবৃত্ত করছি এবং বলছি- তোমরা অগ্নি থেকে বাঁচো। (আর তোমরা) তারা আমাকে পরাস্ত করে তার মধ্যে ঢুকে পড়ছো। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৮৪

বলাবাহুল্য, কুফর, শিরক ও নানাবিধ  মহাপাপই হচ্ছে এই অগ্নি। কারণ এসকল অপরাধের পরিণতিতেই  মানুষ  পরকালে দোযখের অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজীবন মানবজাতিকে এসবের ভয়াবহতা ও ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা বোঝাবার এবং তা থেকে বাঁচাবার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। উল্লিখিত উপমায় সেকথাই হৃদয়গ্রাহী ভাষায়  ফুটে উঠেছে।

 

প্রচুর বৃষ্টি ও ভূমির উপমা 

হযরত আবূ মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

مَثَلُ مَا بَعَثَنِي اللهُ بِهِ مِنَ الهُدَى وَالعِلْمِ، كَمَثَلِ الغَيْثِ الكَثِيرِ أَصَابَ أَرْضًا، فَكَانَ مِنْهَا نَقِيّةٌ، قَبِلَتِ المَاءَ، فَأَنْبَتَتِ الكَلَأَ وَالعُشْبَ الكَثِيرَ، وَكَانَتْ مِنْهَا أَجَادِبُ، أَمْسَكَتِ المَاءَ، فَنَفَعَ اللهُ بِهَا النّاسَ، فَشَرِبُوا وَسَقَوْا وَزَرَعُوا، وَأَصَابَتْ مِنْهَا طَائِفَةً أُخْرَى، إِنّمَا هِيَ قِيعَانٌ لاَ تُمْسِكُ مَاءً وَلاَ تُنْبِتُ كَلَأً، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ فِي دِينِ اللهِ، وَنَفَعَهُ مَا بَعَثَنِي اللهُ بِهِ فَعَلِمَ وَعَلّمَ، وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأْسًا، وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللهِ الّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ.

আল্লাহ তাআলা আমাকে যে পথনির্দেশ ও ইলম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার উপমা হল প্রচুর বৃষ্টি, যা ভূমিতে বর্ষিত হয়েছে। যে ভূখ- উত্তম ছিল তা পানিকে নিজের মধ্যে শুষে নিয়েছে এবং ঘাস ও প্রচুর গুল্ম উৎপন্ন করেছে। আর ভূমির কিছু অংশ ছিল কঠিন, যা পানি ধরে রেখেছে, পরে তা দ্বারা মানুষকে উপকৃত করেছে। তারা তা পান করেছে, গবাদিপশুকে পান করিয়েছে এবং চাষাবাদের কাজে ব্যবহার করেছে। আর বৃষ্টি এমন কিছু অংশেও পতিত হয়েছে যা সমতল, পানি ধরে রাখতে পারে না এবং ঘাস-গুল্ম উৎপন্ন করে না। এ হল ঐ ব্যক্তির উপমা যে দ্বীনী ইলমে ব্যুৎপত্তি অর্জন করে এবং আল্লাহ আমাকে যাসহ পাঠিয়েছেন তা তাকে উপকৃত করে। সে শেখে এবং শিক্ষা দান করে এবং ঐ ব্যক্তির উপমা, যে তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনি এবং আমি যে পথনির্দেশনাসহ প্রেরিত হয়েছি তা গ্রহণ করেনি। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৮২         বুখারী ও মুসলিম।  বুখারী হাদীস: ৭৯।

উল্লিখিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনন্য উপমায় তাঁর আনীত দ্বীন ও ইলমে ওহীর  গ্রহণকারী ও প্রত্যাখ্যানকারীদের স্বরূপ তুলে ধরেছেন।

হাদীসে বর্ণিত এ উপমায় তিন প্রকার জমি এবং দুই শ্রেণীর মানুষের কথা উল্লেখ থাকলেও মৌলিকভাবে ভূমিও দুই প্রকারই। বৃষ্টির পানি থেকে উপকার গ্রহণকারী ভূমি এবং বৃষ্টির পানি প্রত্যাখ্যানকারী ভূমি। অবশ্য বৃষ্টির পানি দ্বারা উপকার গ্রহণকারী ভূমির উপকৃত হওয়ার মাত্রায় পার্থক্য হয়। একপ্রকার ভূমি শুধু পানি আটকে রাখে, নিজের মধ্যে শুষে নিতে পারে না। তবে সে পানি মানুষের উপকারে আসে। তারা তা পান করে, তাদের গবাদি পশুকে পান করায় এবং ভূমি চাষাবাদের কাজে ব্যবহার করে। এ প্রকার ভূমি পানি দ্বারা নিজে উপকৃত হল না, তবে পানি ধরে রাখার ফলে তা মানুষের উপকারে এসেছে। আরেক প্রকার ভূমি পানি শুষে নিয়েছে এবং ফসল ও ঘাস উৎপন্ন করেছে। মানে পানি দ্বারা নিজে উপকৃত হয়েছে এবং ফলনশীল হয়েছে আবার মানুষেরও উপকার সাধন করেছে। এ প্রকার ভূমি পানি দ্বারা যথার্থরূপে উপকার গ্রহণ করেছে। বৃষ্টি দ্বারা উপকার গ্রহণকারী ভূমিকে দুই ভাগে বিভক্ত করার উপমার মাধ্যমে একথা বোঝানো হয়েছে যে, ইলমে ওহী ও হেদায়েতের বাণীর মাধ্যমে উপকার গ্রহণকারী শ্রেণীটিও দুইভাগে বিভক্ত। এক শ্রেণী হলেন, যারা ইলমের উপর আমল করে নিজেরাও উপকৃত হয়েছেন এবং অন্যকে ইলম শিক্ষাদানের মাধ্যমে উপকৃত করেছেন। আরেক প্রকার, যারা শুধু ইলম ধরে রেখেছেন; কিন্তু তা দ্বারা আমলের ফসল ফলাতে সক্ষম হননি। তবে অন্য লোকেরা তাদের কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করার মাধ্যমে তা দ্বারা আমলের ফসল ফলিয়েছেন।

 

নেকড়ের উপমা

হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

إِنّ الشّيْطَانَ ذِئْبُ الْإِنْسَانِ كَذِئْبِ الْغَنَمِ يَأْخُذُ الشّاةَ الْقَاصِيَةَ وَالنّاحِيَةَ، وَإِيّاكُمْ وَالشِّعَابَ وَعَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَالْعَامّةِ.

শয়তান হচ্ছে মানুষের নেকড়ে, ছাগপালের নেকড়ের মতই। সে ছাগপালের মধ্যে যেটি দল থেকে (সম্পর্কের অভাবে)  বিচ্ছিন্ন থাকে অথবা যেটি ঘাসের সন্ধানে দূরে চলে যায়  কিংবা আলস্যবশত এক প্রান্তে পড়ে থাকে সেটিকে ধরে  নিয়ে যায়।  তাই সাবধান! তোমরা কখনো দলের পথ ছেড়ে গিরিপথে যাবে না আর  (হকের অনুসারী) মুসলিম  জামাত তথা মুসলিম সাধারণের সাথে থাকবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২১০৭

এ হাদীসে উল্লেখিত উপমার ব্যাখ্যা হল- ইসলামের মৌলিক আকীদা ও আহকামের ক্ষেত্রে হকের অনুসারী মুসলিম জামাত থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। কেউ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের  মৌলিক  আকীদা ও আহকামের কোনো অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে সে শয়তানের খাদ্য হবে। অর্থাৎ শয়তান তাকে গ্রাস করে ফেলবে। যেমন দল থেকে বিচ্ছিন্ন ছাগলটিকে নেকড়ে গ্রাস করে। যেমন ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক রোকন হচ্ছে হজ্ব। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীরা বিশ^াস করেন যে, সামর্থ্য থাকলে জীবনে একবার হজ্ব করা ফরয। এখন কোনো ব্যক্তি যদি এর কোনো বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন করে এবং বলে যে, অমুক পীরের দরবারে হাজির  হলেই হজ্বের ফরযিয়ত আদায় হয়ে যাবে বা হজ্বের প্রয়োজন থাকবে না, তাহলে একথার মাধ্যমে সে মুসলিম জামাত থেকে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করে অত্যন্ত বিপজ্জনক পথে চলে গেল। শয়তান এমন ব্যক্তির ঈমান নিশ্চিতভাবে গ্রাস করবে।  এমনিভাবে জিহাদ একটি ফরয। শরীয়তনির্ধারিত কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে তা মুসলমানদের উপর ফরয হয়ে থাকে। হাদীসের স্পষ্ট বর্ণনা মুতাবিক এ বিধান কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকীদা। কিন্তু কেউ যদি মনে করে, এখন আর পৃথিবীতে জিহাদ নেই এখন সকল প্রেক্ষাপটে শুধু দাওয়াতের মাধ্যমে অথবা  বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচারণার মাধ্যমেই জিহাদের সকল উদ্দেশ্য অর্জিত হবে, তাহলে এমন আকীদার মাধ্যমে এ ব্যক্তি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের জন্য এক বিপজ্জনক গিরিপথ তৈরি করে নিল। শয়তান তার ওপর নেকড়ের মত ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং তার ঈমানী সত্তাকে ধ্বংস করে দিবে।

  সোজা পথ, দেয়াল, দরজা, ঝুলানো পর্দা ও আহ্বায়কের উপমা

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নলিখিত বাণীতে ইসলামের সরল পথের একটি চমৎকার উপমা লক্ষ্য করুন- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا، وَعَلَى جَنْبَتَيْ الصِّرَاطِ سُورَانِ، فِيهِمَا أَبْوَابٌ مُفَتّحَةٌ، وَعَلَى الْأَبْوَابِ سُتُورٌ مُرْخَاةٌ، وَعَلَى بَابِ الصِّرَاطِ دَاعٍ يَقُولُ: أَيّهَا النّاسُ، ادْخُلُوا الصِّرَاطَ جَمِيعًا، وَلَا تَتَعَرّجُوا، وَدَاعٍ يَدْعُو مِنْ فَوْقِ  الصِّرَاطِ، فَإِذَا أَرَادَ يَفْتَحُ شَيْئًا مِنْ تِلْكَ الْأَبْوَابِ، قَالَ: وَيْحَكَ لَا تَفْتَحْهُ، فَإِنّكَ إِنْ تَفْتَحْهُ تَلِجْهُ، وَالصِّرَاطُ الْإِسْلَامُ، وَالسّورَانِ: حُدُودُ اللهِ، وَالْأَبْوَابُ الْمُفَتّحَةُ: مَحَارِمُ اللهِ، وَذَلِكَ الدّاعِي عَلَى رَأْسِ الصِّرَاطِ: كِتَابُ اللهِ، وَالدّاعِي مِن فَوْق الصِّرَاطِ: وَاعِظُ اللهِ فِي قَلْبِ كُلِّ مُسْلِمٍ.

আল্লাহ তাআলা একটি উপমা প্রদান করেছেন। একটি সরল সঠিক রাস্তা, তার দু‘পাশে দু‘টি দেয়াল, যার মধ্যে বহু খোলা দরজা রয়েছে এবং সেসকল দরজায় পর্দা ঝুলানো রয়েছে। আর রাস্তার মাথায় একজন আহ্বানকারী রয়েছেন,  তিনি লোকদেরকে এই বলে  আহ্বান করছেন- এসো! এই রাস্তায় সোজা চল,  বক্র হয়ে (ডানে বামে)  চলো না!  এর একটু সামনে আরেকজন আহ্বায়ক রয়েছেন। যখনই কোনো ব্যক্তি ওসকল দরজার কোনোটি খুলতে চায় তখনই সে তাকে বলে, সাবধান! তা খুলো না! খুললেই তুমি তাতে ঢুকে পড়বে। তারপর রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাখ্যা করলেন এবং বললেন, সে  সোজা রাস্তাটি হচ্ছে ইসলাম, আর খোলা দরজাসমূহ হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বিষয়াদি। ঝুলানো পর্দাসমূহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সীমারেখাসমূহ। রাস্তার মাথার আহ্বানকারী হচ্ছে কুরআন। আর তার একটু সামনে  দাঁড়ানো আহ্বানকারী হচ্ছে এক উপদেশদাতা, যা প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে আল্লাহর  পক্ষ থেকে বিদ্যমান। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৬৩৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২৪৫

নদীর উপমা

হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنّ نَهَرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلّ يَوْمٍ خَمْسًا، مَا تَقُولُ: ذَلِكَ يُبْقِي مِنْ دَرَنِهِ. قَالُوا: لاَ يُبْقِي مِنْ دَرَنِهِ شَيْئًا، قَالَ: فَذَلِكَ مِثْلُ الصّلَوَاتِ الخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِ الخَطَايَا.

আমাকে বলো, তোমাদের কারো দরজার সামনে যদি একটি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার দেহে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে? সাহাবীরা বললেন, তার দেহে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই হল নামাযের উপমা। আল্লাহ এর মাধ্যমে পাপসমূহ মিটিয়ে দেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৬৭

 

বৃক্ষের পাতা ঝরার উপমা

হযরত আবু যর গিফারী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার শীতকালে বের হলেন আর তখন গাছের পাতা ঝরছিল। এ সময় তিনি একটি বৃক্ষ থেকে দুটি ডাল ধরে নাড়া দিলেন। ফলে সেই পাতা আরো ঝরতে লাগল। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আবু যর! আমি উত্তর দিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি হাযির। তিনি বললেন-

নিশ্চয় মুসলিম বান্দা যখন সালাত আদায় করে এবং তা দ্বারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান  কামনা করে তখন তার গোনাহসমূহ এভাবে ঝরতে থাকে যেভাবে ঝরছে এই বৃক্ষের পাতাসমূহ। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৫৫৬

 

ঘর ও আতিথ্যের উপমা

হযরত জাবের রা. বলেন, একদিন একদল ফেরেশতা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন। নবীজী তখন ঘুমাচ্ছিলেন। ফেরেশতাগণ পরস্পরে (নবীজী সম্পর্কে) বললেন, তোমাদের এই  সাথীর একটি উদাহরণ রয়েছে। তার নিকট  উদাহরণটি পেশ করো। তখন কেউ বললেন, তিনি তো নিদ্রিত। আবার কেউ বললেন, তাঁর চক্ষু নিদ্রিত কিন্তু হৃদয় জাগ্রত। তখন তাদের একজন বললেন-

مَثَلُهُ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى دَارًا، وَجَعَلَ فِيهَا مَأْدُبَةً وَبَعَثَ دَاعِيًا، فَمَنْ أَجَابَ الدّاعِيَ دَخَلَ الدّارَ وَأَكَلَ مِنَ المَأْدُبَةِ، وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدّاعِيَ لَمْ يَدْخُلِ الدّارَ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنَ المَأْدُبَةِ، فَقَالُوا: أَوِّلُوهَا لَهُ يَفْقَهْهَا، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِنّهُ نَائِمٌ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِنّ العَيْنَ نَائِمَةٌ، وَالقَلْبَ يَقْظَانُ، فَقَالُوا: فَالدّارُ الجَنّةُ، وَالدّاعِي مُحَمّدٌ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمّدًا صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَى مُحَمّدًا صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمُحَمّدٌ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَرْقٌ بَيْنَ النّاسِ.

তাঁর উপমা হল, এক ব্যক্তি একটি ঘর প্রস্তুত করেছেন এবং তাতে তিনি মেহমানদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করেছেন। তারপর (লোকদেরকে আহ্বান করার জন্য) একজন আহ্বানকারী পাঠালেন। এখন যে ব্যক্তি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল, সে ঘরে প্রবেশ করতে পারল এবং দস্তরখান থেকে খেতে পারল। আর যে ব্যক্তি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল না সে ঘরেও প্রবেশ করতে পারল না, দস্তরখান থেকে  খেতেও পারল না। তারপর তারা পরস্পরে বললেন,  তার নিকট উদাহরণটি ব্যাখ্যা কর, যাতে তিনি তা বুঝতে পারেন। এবারও কেউ বললেন, তিনি তো নিদ্রিত। আর কেউ বললেন, তাঁর চক্ষু নিদ্রিত, হৃদয় জাগ্রত। তারা বললেন, ঘরটি হচ্ছে জান্নাত। আর আহ্বানকারী হচ্ছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এবং ঘর ও খাবার প্রস্তুতকারী হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা।) সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের আনুগত্য স্বীকার করল সে আল্লাহর বাধ্যতা স্বীকার করল। আর যে মুহাম্মাদের অবাধ্য হল সে আল্লাহরও অবাধ্য হল। এককথায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মুসলমান ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণকারী, মানদ-। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭২৮১

 

সাপ ও গর্তের উপমা

হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِنّ الإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى المَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الحَيّةُ إِلَى جُحْرِهَا.

ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে যেভাবে সাপ ঘুরেফিরে তার গর্তের দিকে ফিরে আসে। -সহীহ বুখারী,  ও মুসলিম। বুখারী, হাদীস: ১৮৭৬

কোনো বর্ণনায় রয়েছে- ইসলাম মদীনার দিকে ফিরে আসবে...। (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৪৭১)

 

রাস্তা ও রেখার উপমা

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

خَطّ لَنَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ خَطّا، ثُمّ قَالَ: هَذَا سَبِيلُ اللهِ، ثُمّ خَطّ خُطُوطًا عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ، ثُمّ قَالَ: هَذِهِ سُبُلٌ - قَالَ يَزِيدُ: مُتَفَرِّقَةٌ - عَلَى كُلِّ سَبِيلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ، ثُمّ قَرَأَ: وَ اَنَّ هٰذَا صِرَاطِیْ مُسْتَقِیْمًا فَاتَّبِعُوْهُ،  وَ لَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِیْلِهٖ.

আমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সরল রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহর রাস্তা। তারপর তাঁর ডানে বামে আরও কতগুলো রেখা টানলেন এবং বললেন, এগুলোও রাস্তা। তবে এসকল রাস্তার প্রত্যেকটির মাথায় একটি করে শয়তান দাঁড়িয়ে আছে। সে লোকদেরকে এর দিকে আহ্বান করে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেন-

وَ اَنَّ هٰذَا صِرَاطِیْ مُسْتَقِیْمًا فَاتَّبِعُوْهُ،  وَ لَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِیْلِهٖ.

এবং এই পথই আমার সরল পথ; সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করবে এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না। করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। [সূরা আনআম (৬) : ১৫৩] -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৪১৪২; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩২৪১

এ হাদীসে সরল রেখার মাধ্যমে ইসলামকে বুঝানো হয়েছে এবং অন্যান্য রেখা দ্বারা বিভিন্ন গোমরাহ মতবাদের কথা বুঝানো হয়েছে।

 

উপসংহার

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বহু  হাদীস এরূপ নানাবিধ  উজ্জ্বল উপমায় ভাস্বর, যা স্বতন্ত্রভাবে সংকলিত হওয়ার দাবি রাখে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে হাদীস শরীফের নানাবিধ  উপমাগুলো বুঝবার এবং এর নির্দেশনা অনুধাবন করে সেমতে আমাদের চিন্তা-চেতনা ও  জীবন গড়ার  তাওফীক দান করুন- আমীন।

 

advertisement