কথা বলে ভুনা গোশত
তোমরা হয়ত গোশতের টুকরা নড়তে দেখেছ। একটু আগে জবাই করা হয়েছে এবং ছোট ছোট টুকরা করা হয়েছে তার পরও কেমন যেন একটু নড়ছে নড়ছে বলে মনে হয়। তেমনি হয়ত কৈ মাছ দেখে থাকবেÑ কাটার পরও নড়ছে। কিন্তু এটা কি কল্পনা করা যায়Ñ গোশতের টুকরা কথা বলবে। তাও আবার ভুনা গোশত!
হাঁ, এমনই এক আশ্চর্য বিষয় ঘটেছে আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে। স্বাভাবিকভাবে তো এটা সম্ভব না; এটা ঘটেছে নবীজীর মুজেযা হিসাবে। আল্লাহ ঘটিয়েছেন তাঁর নবীর হাতে। আল্লাহ চাইলে সবকিছুই সম্ভব। এবার শোনো তাহলে সেই কাহিনী।
একবার এক নারী নবীজীকে কিছু ভুনা গোশত হাদিয়া পাঠাল। পাঠিয়েছে হাদিয়া, কিন্তু তার মতলব ছিল খারাপ। সে বিষ মিশ্রিত গোশত পাঠিয়েছিল। সে ছিল এক ইহুদী নারী। ইহুদীদের একটি স্বভাব হল নবীদের কষ্ট দেওয়া। তারা মূসা আলাইহিস সালামকে কষ্ট দিয়েছে। ঈসা আলাইহিস সালামকে কষ্ট দিয়েছে। এমনকি আমাদের নবীজীকেও অনেক কষ্ট দিয়েছে।
তার বদ মতলবের কথা তো আর নবীজীর জানা ছিল না। আর জানবেনই বা কীভাবে; নবীজী তো গায়েব জানতেন না। ভবিষ্যতের যে বিষয় আল্লাহ জানাতেন তাই তিনি জানতেন। ভবিষ্যতের যে কথা আল্লাহ তাঁকে বলে দিতেন তাই তিনি বলতেন; নিজে থেকে গায়েবের কোনো বিষয় জানা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ, গায়েবের খবর জানেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা; একথা আল্লাহ কুরআনে বলেছেন।
যাইহোক, তার পাঠানো ভুনা গোশত নবীজী ও তাঁর কয়েকজন সাহাবী খাওয়া শুরু করলেন। পরক্ষণেই নবীজী বললেন, সবাই গোশত থেকে হাত উঠিয়ে নাও; কেউ আর একটু গোশতও মুখে দেবে না! সবাই তো অবাক। হল কী?
নবীজী বললেন, এই গোশতই আমাকে বলে দিয়েছেÑ তাতে বিষ মেশানো। সুতরাং খবরদার তোমরা তাতে হাত দিবে না।
এ গোশত খেয়ে ফেলার কারণে এক সাহাবীর ইন্তেকাল হয়ে গেল। নবীজী কষ্ট পেলেন। কিন্তু আল্লাহ নবীজীকে রক্ষা করলেন। নবীজীর কিছু হল না।
এরপর নবীজী ওই ইহুদী নারীকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, তুমি কেন এতে বিষ মিশিয়েছ? সে বলল, আপনাকে কে বললÑ আমি এতে বিষ মিশিয়েছি? নবীজী বললেন, তুমি যে গোশতে বিষ মিশিয়েছ সেই গোশতই আমাকে বলে দিয়েছে!
তো কী উদ্দেশ্যে এতে বিষ মিশ্রিত করেছ? সে বলল, আপনি যদি সত্য নবী হন তাহলে আমার জানা মতে এ বিষ আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি তা না হন; সাধারণ রাজা-বাদশা হন তাহলে আপনার থেকে মানুষেরা নিষ্কৃতি পাবে।
হাঁ, ওই ইহুদী নারীর ধারণা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বিষ নবীজীর কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। বরং নবীজীর মুজেযা প্রকাশ পেয়েছে; মুমিনের ঈমান মজবুত হয়েছে, কাফেরের সামনে নবীজীর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। (দ্র. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৫১২; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৪৯৬৭; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১৬০১০)