কাশ্মীর : ভূমিলুট
অবশেষে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে দিল বিজেপি, এরই সাথে প্রাসঙ্গিক আরেকটি ধারা হচ্ছে ৩৫ (ক), যা ছিল কাশ্মীরের মুসলিম জনগণের জন্য একটি আইনী সুরক্ষার মতো। ভারত-ভাগের সময় ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতে অধিভুক্তির যে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন, তাতে বেশ কিছু শর্ত ছিল। ওইসব শর্তানুসারে ১৯৪৯ সালে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ নং অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়। এই অনুচ্ছেদ অনুসারে কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান থাকবে। এছাড়া সামরিক যোগাযোগ এবং পররাষ্ট্রনীতি ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজ্য সরকারের অনুমোদন লাগবে। আর ৩৫ (ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা কে হবে সেটা নির্ধারন করতেন রাজ্যের আইনপ্রণেতারা। ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সাংবিধানিক আদেশের মধ্য দিয়ে রাজ্য-বিধানসভাকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩৭০ অনুচ্ছেদের পথ ধরেই এই অনুচ্ছেদ এসেছে। এই অনুচ্ছেদের কারণে অন্য কোনো রাজ্যের বাসিন্দার কাশ্মীরের কোনো জায়গা-জমির মালিক হতে বাধা ছিল। সংবিধানের এই দুটি ধারা বাতিলের কারণে অন্য রাজ্যের লোকজন কাশ্মীরে গিয়ে জায়গা-জমি কিনতে পারবে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে। কাজেই এই আশঙ্কা বড় হয়ে সামনে আসছে যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে পরিণত করা হবে।
ভূ-স্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরের ইতিহাসে পিছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, ইংরেজ বেনিয়ারা তাদের ২০০ বছরের শাসনামলে যেমন ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ পলিসি ব্যবহার করেছে তেমনি এ অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময়ও বপন করে গেছে অশান্তির বীজ, যা গত সাত দশকের অধিক সময় ধরে এ অঞ্চলে হানাহানি ও রক্তপাতের বিষ ছড়িয়ে যাচ্ছে।
৪৭-এর ভারতভাগের সময় স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলো নিয়ে গঠিত হওয়ার কথা ছিল নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান। কাশ্মীর প্রশ্নাতীতভাবে ছিল মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। ১৯৪১ সালের শেষ আদমশুমারি অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীর পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। জম্মু-কাশ্মীরের এক বিরাট অংশ চলে যায় ভারতের দখলে। কীভাবে গেল সে ইতিহাস সচেতন ব্যক্তিদের জানা আছে। এক্ষেত্রে ভারতের সবচেয়ে বড় অজুহাত রাজা হরি সিংয়ের শর্তসাপেক্ষে ভারতে অন্তর্ভুক্তির চুক্তি।
সচেতন ইতিহাস-পাঠকের অজানা নয় যে, রাজা হরি সিংয়ের চুক্তিটি বাস্তবিকই একটি অজুহাতমাত্র। এক্ষেত্রে কুটকৌশল ও বন্দুকের নলই হচ্ছে ভারতের প্রধান অস্ত্র। কারণ, ভারতভাগের সময় ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাক্ট ১৯৪৭ অনুসারে বিট্রিশ-ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৪৬২টি প্রিন্সলি স্টেটকে (আংশিক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) হয় ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ দিতে হচ্ছিল। তবে যোগ দেয়ার প্রক্রিয়াটা শাসনকর্তার যোগদান, না গণরায়- কোন্টার দ্বারা নিষ্পত্তি হবে তা ছিল অস্পষ্ট। ভারতীয় ভূখ-ের মধ্যে থাকা প্রায় সব স্টেট ভারতে যোগ দিল। পাকিস্তানের মধ্যে থাকা বেশ কিছু প্রিন্স যোগ দেন পাকিস্তানে। তিনটি স্টেট স্বাধীন থাকার ইচ্ছা পোষণ করে, হায়দারাবাদ, জুনগর এবং জেঅ্যান্ডকে। ভারতের দক্ষিণে হায়দারাবাদ এবং জুনগরের প্রিন্স ছিলেন মুসলিম। প্রজাদের মধ্যে গরিষ্ঠতা ছিল হিন্দুদের। উভয় এলাকায় হিন্দু জনগণ বিক্ষোভ করে ভারতে যুক্ত হওয়ার পক্ষে। ভারতীয় বাহিনী অ্যাকশনে যায়। ফলে উভয় প্রিন্সলি স্টেট প্রিন্সের ইচ্ছার বিপরীতে জনতার ইচ্ছার কারণে ভারতের অংশ হয়। পরে গণভোটের মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকশনের বৈধতা নিশ্চিত করা হয়। অন্যদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রিন্স ছিলেন হিন্দু, জনগণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু এখানে জনগণের ইচ্ছা পদদলিত হয়। জুনগর ও হায়দারাবাদে গণভোটের মাধ্যমে অঞ্চল দুটি ভারতের সাথে যুক্ত হয়েছে, কিন্তু কাশ্মীরের ক্ষেত্রে গণভোটের সুযোগ জনগণকে কখনোই দেওয়া হয়নি। যদিও তৎকালীন ভারতীয় নেতা জওয়াহের লাল নেহরু প্রকাশ্যে কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছিলেন।
তাছাড়া ইতিহাসবিদেরা বলেন, এই যোগদান চুক্তিও নানা কারণে বিতর্কিত। পূর্ব পরিকল্পিত যোগসাজসের ভিত্তিতেই তা সম্পন্ন হয়। কথিত আছে, ব্রিটিশ-ভারতের সরকার নতুন স্বাধীন ভারত সরকারের কাছে জম্মু কাশ্মীরের সার্বভৌমত্ব হস্তান্তরের জন্য আগেভাগেই একটি দলীল তৈরি করেছিল ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে। শুধু দিন ও সাক্ষরের জায়গা খালি রাখা হয়েছিল। ওই দলিলেরই আগস্ট কেটে দিয়ে অক্টোবর লিখে তাতে স্বাক্ষর করা হয়। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫-এর নিউজের বরাতে উল্লেখ করা হয় যে, ওই চুক্তির দলীল রাষ্ট্রীয় আর্কাইভ থেকে খোয়া গেছে। আমেরিকা, কিছু আরব ও ইউরোপীয় দেশের পক্ষ থেকে ওই দলীল দেখতে চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তার খোঁজ মেলেনি!
যাইহোক, এই ডকুমেন্ট যত বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্যই হোক তা ভারতের সবচেয়ে বড় আইনী ডকুমেন্ট। এরই বলে কাশ্মীরে পরিচালিত হয়েছিল সেনা-অভিযান। সেই ডকুমেন্টের শর্ত অনুসারে ভারতের সংবিধানে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সম্বলিত যে ধারা দুটি এতকাল ছিল, তা বাতিল করে চুক্তিভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতার পাশাপাশি দেশটির কর্ণধারগণ ভয়াবহ রকমের স্ববিরোধিতারও জন্ম দিলেন কি না তা বিশ্লেষকেরাই ভালো বলতে পারবেন।
বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরের ৫৫ শতাংশ ভারতের দখলে, ৩০ শতাংশ পাকিস্তানের এবং ১৫ শতাংশ চীনের নিয়ন্ত্রনে। পাকিস্তানের অংশটি ‘আযাদ কাশ্মীর’ নামে পরিচিত আর ভারতের দখলে চলে যাওয়া অংশটি পরিচিত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর নামে। জম্মুতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যায় বেশি হলেও কাশ্মীর উপত্যকায় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। লাদাখ অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বাস। তবে সম্মিলিতভাবে রাজ্যটিতে মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিজেপি সরকার শুধু সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারাই বাতিল করেনি; জম্মু-কাশ্মীরকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। রাজ্য থেকে লাদাখকে বের করে তৈরি করেছে নতুন কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল। জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদাও কেড়ে নেয়া হয়েছে। এখন থেকে এর পরিচিতি হবে কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল হিসেবে।
বিশ্লেষকগণ বলছেন, ভারতীয় সংবিধানের আলোচ্য অনুচ্ছেদদুটি বাতিল ও জম্মু-কাশ্মীরকে দিখ-িত করার তাৎপর্য অতি ভয়াবহ। এর মাধ্যমে কাশ্মীর পরিণত হবে ভারতের একটি সাধারণ অঙ্গরাজ্যে। তবে বিশেষভাবে ৩৫-ক অনুচ্ছেদ বাতিলের তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী। কাশ্মীর আর আগের মতো মুসলিম প্রধান থাকবে না, জম্মুতেও অমুসলিমের সংখ্যা বাড়ানো হবে। আরএসএসের অনেকেই মনে করেন, হিন্দু প্রধান জম্মু এবং বৌদ্ধ প্রধান লাদাখকে পাশে রেখে কাশ্মীরকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, যদি কাশ্মিরেও হিন্দুর সংখ্যা বাড়ানো যায়। (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো অনলাইন, ০৫-০৮-২০১৯)
এখানে আরএসএসের পরিচয় মনে রাখলে পরিস্থিতি বোঝা সহজ হতে পারে। আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ) হচ্ছে, ভারতের একটি হিন্দু সাম্প্রদায়িক জঙ্গি সংগঠন। এর লক্ষ্য সমগ্র ভারতে রাম-রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠী বিশেষ করে মুসলিমদের হত্যা ও উচ্ছেদ আরএসএসের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি বলে আলোচিত। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিল আরএসএস সদস্য। হত্যার কারণ সে আদালতে জবানবন্দীতে বলে গেছে। তার ভাষায়, ‘মুসলিমরা এক হাজার বছর ভারত শাসনের নামে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করে গেছে। অখ- ভারত স্বাধীন হলে এসব অত্যাচারের শোধ নেয়া যেত। কিন্তু গান্ধী মুসলিমদের জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের সুযোগ দিয়ে ভারতকে খ-িত করেছেন।’ এমনই কট্টর সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শের কারণে ইংরেজ আমলে আরএসএস ছিল নিষিদ্ধ । পরে গান্ধী হত্যা ও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরও একে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। আরএসএসের দৃষ্টিতে নাথুরাম ‘বিরাট বীর’। মধ্যপ্রদেশে এখন তার নামে মন্দির নির্মিত হচ্ছে। উদ্বেগের খবর হল, বর্তমান ভারত সরকারের প্রধান তিন কর্তাই নাকি আরএসএসের সদস্য ছিলেন। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এদের নেতৃত্বে ভারতীয় রাজনীতি কোন পথে অগ্রসর হবে তা খুব সহজেই অনুমেয়।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপদ কাশ্মীর গোটা মধ্য এশিয়ার মুসলমানদের জন্য ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকেও অতি গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য এশিয়ায় ভারতের বাণিজ্যযাত্রার পথ কাশ্মীর। কাশ্মিরের সীমান্ত দিয়েই ঢুকতে হবে পাঞ্জাবসহ পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশগুলোতে। এছাড়া জম্মু-কাশ্মীর সীমান্ত উত্তর দিকে মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্র, পূর্বে চীন এবং পশ্চিমে আফগানিস্তানের সাথে যুক্ত। অঞ্চলটি চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নিকটবর্তী তাজিকিস্তানের মতো অনেক আঞ্চলিক শক্তির দিকে ভারতের জানালা খুলে দিয়েছে। বলা যায় কাশ্মীর হচ্ছে ভারতের জন্য দুনিয়ায় বের হওয়ার সদর দরজা। ফলে বাণিজ্য, ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে জম্মু কাশ্মীর-ভূখ-ের উপর ভারত তার অন্য যে কোনো রাজ্যের চেয়ে বেশি নির্ভরশীল।
তাছাড়া কাশ্মীরে রয়েছে প্রকা- সব হিমবাহ। হিমালয় থেকে নেমে আসা ঝিলাম, চেনাব, সাটলেজ, রাঙি, বিয়াস, সিন্দু প্রভৃতি নদ-নদী ভারতের এক বিলিয়ন মানুষকে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। অন্যদিকে পাকিস্তানের কৃষিও প্রধানত এই অঞ্চল থেকে প্রবাহিত পানির উপর নির্ভরশীল। কাজেই খুব সহজেই বোঝা যায়, মুসলমানের এই ভূমি যদি মুসলমানের হাতে থাকত তাহলে ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রকে কিছুটা হলেও লাগাম পরাতে পারত মুসলিমরা। আর এ থেকেই বোঝা যায়, ভারত কেন কাশ্মীরকে স্থায়ীভাবে ভারতীয়করণের জন্য এত মরিয়া। আল্লাহ না করুন, কাশ্মীর মুসলমানদের না থাকার অর্থ গোটা ভারতবর্ষের মুসলিম কঠিন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যাওয়া। এটা যেমন রাজনৈতিক দিক থেকে, তেমনি প্রাকৃতিক দিক থেকেও। কারণ, বৈশি^ক উষ্ণায়নের ফলে হিমালয় থেকে নেমে আসা নদ-নদীর উৎস কাশ্মীরের হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে। এটি যেমন ভারত-পাকিস্তানে মারাত্মক বন্যার কারণ তেমনি এই প্লাবন অর্থনৈতিক অনিবার্য খরারও পূর্বাভাস। বৈশি^ক ক্রম-উষ্ণায়ন যেমন ভারতের জন্য তৈরি করছে দীর্ঘকালীন বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা তেমনি পাকিস্তানের জন্যও তৈরি করছে অনিবার্য কৃষি বিপর্যয়ের শঙ্কা। কাজেই বিপুল পানির উৎস ও পর্যটনের অমিত সম্ভাবনাময় মুসলিম ভূখ- কাশ্মীর ছেড়ে দেওয়ার তাৎপর্য যে কী ভয়াবহ তা কোনো চিন্তাশীল মুসলিমের কাছেই দুর্বোধ্য হওয়ার কথা নয়।
এই প্রেক্ষাপট সামনে নিয়ে চিন্তা করলে বোঝা যায়, বর্তমান বিজেপি সরকার ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে উগ্র সাম্প্রদায়িকতায় মত্ত করে গোটা কাশ্মীর দখল করে নেয়ার ব্যাপারে কেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। আরএসএস নেতারা অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে কথা বলতেই রাজি নন, তাদের লক্ষ্য আযাদ কাশ্মীর। এই ভূখ- সম্পর্কেও তারা আগ্রাসী বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। অমিত শাহ সম্প্রতি সংসদে বলেছেন, ‘পাক-অধিকৃত আযাদ কাশ্মীরের জন্য তিনি প্রাণ দিয়ে দেবেন।’
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, মুসলমানদের ভূমি লুটে নেয়ার জন্য প্রাণ দেয়ার ঘোষণার পরও বিশে^ কোথাও কোনো উচ্চবাচ্য হচ্ছে না, অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের মুসলমানেরা তাদের ভূমি ও জান-মাল, ইজ্জত-আব্রু রক্ষায় যদি জিহাদের ডাক দেন তাহলে সেটা হয়ে যাবে জঙ্গিবাদ। অমুসলিমেরাই শুধু নয়, মুসলিম দেশগুলোর নেতা-নেত্রীরাই এতে হৈ চৈ করতে থাকবেন। খোদ মুসলিম-সমাজেই যখন এই আত্মঘাতী ব্যাধি তার সকল অনুষঙ্গ উপসর্গসহ বাসা বাধতে পেরেছে তখন কীভাবে ইসলাম-বিরোধী সাম্প্রদায়িকতার দানবের বিরুদ্ধে মুসলমান কোমর সোজা করে দাড়াবে?
আজ আমাদের সর্বস্তরের মুসলমানের কর্তব্য, নিজের সাথে সংলাপে বসা। পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা। আমাদের জাতীয় দুর্যোগের এই সময়ে আমাদের বিশ্বাস ও চেতনা, কর্ম ও আচরণ সম্পর্কে নিজেকে প্রশ্ন করা। কী আমাদের পরিচয়, কোথায় আমাদের শক্তি, কোথায় দুর্বলতা তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব নেয়া। সর্বোপরি সকল শক্তির উৎস আমাদের ¯্রষ্টা আল্লাহ তাআলার সাথে আমাদের সম্পর্কের নবায়ন করা। ভিতর-বাহিরের সকল ব্যাধি থেকে মুক্তি ও পরিশুদ্ধির দিকে ফিরে আসা এখন জরুরি। সম্মিলিত অবক্ষয়ের পথ থেকে আমরা যদি সম্মিলিত পরিশুদ্ধির দিকে আসতে পারি তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা জাতীয় দুর্যোগ থেকে আমাদের নাজাত দিবেন।
পরাজয় ও লাঞ্ছনার যত কারণ, চিন্তা করলে দেখা যাবে, সব আমাদেরই অবক্ষয়ের কিছু শাখা-প্রশাখা মাত্র। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।