তালিবে ইলমদের প্রতি জরুরি হেদায়াত : নমুনায়ে আসলাফ
[হযরতের বয়ানের আগে মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেবের শোকরগোযারী :
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বড় মেহেরবানী। তিনি আমাদেরকে বহুত বড় সাআদাত নসীব করেছেন। উসতাযুল আসাতিযা, শাইখুল মাশায়েখ হযরত কাসেমী ছাহেব হুযূর দামাত বারাকাতুহুমকে আমরা পেয়েছি- আলহামদু লিল্লাহ।
হুযূর মারকাযুদ দাওয়াহ্য় আগেও দুয়েকবার এসেছিলেন। মোহাম্মাদপুর এসেছেন, যাত্রাবাড়িতে যখন ছিলাম তখনও তাশরীফ এনেছেন। মিরপুরেও ইত্তেফাকান আসা হয়েছে। হযরত মাওলানা তালহা সাহারানপুরী ছাহেব, হযরত মাওলানা শাহেদ সাহরানপুরী ছাহেব- তাঁরা যখন এসেছিলেন তখন হুযূরও এসেছিলেন। কিন্তু সেটা ছিল একেবারে মুখতাসার সময়ের জন্য। এখানে মারকাযের হযরতপুর প্রাঙ্গণে হযরতের তাশরীফ আওয়ারির সাআদাত আমরা পাইনি। আমার ইচ্ছা ছিল, গিয়ে হুযূরের খেদমতে হাজির হয়ে আরয করব। কিন্তু সেটা দেরি হচ্ছিল- বিধায় হিম্মত করে ফোন করলাম।
যাহোক, আজকে হযরত তাশরীফ এনেছেন। আল্লাহ তাআলা হযরতের এ তাশরীফ আওয়ারিকে আমাদের জন্য, আসাতিযা-তালাবার জন্য, ইদারার জন্য এবং এলাকার জন্য কবুলিয়তের যরীআ বানান- আমীন।
এদেশের উপর, বিশেষ করে উলামা-তলাবার উপর হুযূরের বহুত ইহসান। চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর যাবৎ এ দেশে ইলমী মাহোল টুটাফাটা যদ্দুরই আছে আমাদের হাওসেলা হিসেবে (মানে, হাসিল করার জন্যও তো যরফের দরকার। আমাদের যরফ হিসেবে যদ্দুর আছে), তার পিছনে যে দু-চারজন বুযুর্গের সবচে বড় অবদান, হুযূর তাঁদের মধ্যে সারে ফেহরেসত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আফিয়াত-সালামতের সাথে হযরতকে হায়াতে তায়্যিবা নসীব করুন- আমীন।
আমরা হুযূরের কাছ থেকে এখন জরুরি নসীহত শুনব। আজকে মুদীর ছাহেব হুযূর মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম নেই। তিনি উমরার সফরে আছেন। তবু আমি ভাবলাম, যেহেতু তারিখ পেয়েছি, এটা গ্রহণ করি। পরে অন্য সময় আবার যদি মওকা হয়, তাহলে হযরত আবার সময় দিলেন।
এখন আমরা হযরতের নসীহত শুনব ইশাআল্লাহ।
কথাগুলো বলেছিলাম হুযুরের বয়ানের আগে। আলহামদু লিল্লাহ পুরো বয়ানে আমার হাযির থাকার তাওফীক হয়েছে। সুবহানাল্লাহ, কী মুআসসির এবং কত জরুরি হেদায়াত! আল্লাহর মেহেরবানি, অল্প সময়ের বয়ানে একজন তালিবে ইলমের ইলমী ও আমলী যিন্দেগীর পুরো খোরাক এসে গেছে। আশা করি তালিবে ইলম ভাইয়েরা মুশফিক তাজরেবাকার এবং সালাফের ইয়াদগার এই বুযুর্গের নসীহতগুলো গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ফায়দা পৌঁছান- আমীন। -আবদুল মালেক]
نحمده ونصلي على رسوله الكريم، أما بعد : فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمن الرحيم
اَلرَّحْمٰنُ، عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ، خَلَقَ الْاِنْسَانَ، عَلَّمَهُ الْبَیَانَ.
আমাদের দেশের গৌরব, আমাদের জন্য সাআদাত মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুমুল আলিয়া। তার উজুদ নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সাআদাত এবং বহুত বড় বরকতের বিষয়।
তার সাথে আমার প্রথম সম্পর্ক হল, তার ওয়ালেদ ছাহেব মাওলানা শামছুল হক ছাহেব আমার বড় শফীক উস্তায। আমি তাইসীরুল মুবতাদী হুযূরের কাছে পড়েছি। আলমানতেক হুযূরের কাছে পড়েছি। তখন হুযূরের মুদাররেসীর প্রথম যামানা। আমার বাড়ির পাশে কাশিপুর মাদরাসায় হুযূর উস্তায ছিলেন। বড় শফীক উস্তায! এমন এক উস্তায, যিনি বাস্তবে ছাত্র গড়ার কারিগর। হুযূরকে আল্লাহ তাআলা এ মাকাম দান করেছেন। হুযূরের যিন্দেগীটা ছাত্রদের জন্য ওয়াক্ফ ছিল। নিজের বাসা-বাড়ি-সংসারের চেয়ে তাঁর বড় ফিকির ছিল মাদরাসা নিয়ে, তালিবুল ইলম নিয়ে। হুযূর লাইল ও নাহার, রাত-দিন ছাত্র গড়ার ফিকিরে কাটিয়ে দিতেন। আলহামদু লিল্লাহ, এ অধমেরও হযরতের সোহবতে এবং হযরতের দরসে বসার সুযোগ হয়েছে। সে হিসাবে মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব আমার উস্তাযের ছাহেবযাদা। তাঁর সাথে আমার এ এক সম্পর্ক।
দুই. আমার শ্বশুরের নামও শামছুল হক ছিল। তার -মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের- ওয়ালেদ ছাহেব যখন বালিয়া মাদরাসায় পড়তেন, আমার শ্বশুরও বালিয়া মাদরাসায় পড়তেন একসাথে। একজন আরেকজনকে মিতা মিতা বলে ডাকতেন। আমার শ্বশুরের জানাযায় হুযূর হাজির হয়েছেন।
তো, আমার শ্বশুরের দিক থেকেও তাঁর ওয়ালেদ ছাহেবের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক ছিল।
তিন. তিনি আমার এলাকার লোক।
চার. আমার ঘনিষ্ঠ সাথী এবং খুবই ঘনিষ্ঠ মুফতী হাবীবুর রহমান ছাহেব, যিনি মালিবাগের মুহাদ্দিস ছিলেন, ফরিদাবাদের মুহাদ্দিস ছিলেন। আগে একসময় তিনি খেড়িহর মাদরাসার উস্তায ছিলেন। তখন হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব তাঁর কাছে পড়েছেন। তো, আমার সাথীর কাছে পড়েছেন সে হিসেবেও তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক।
বাস্তবতা বলছি, সম্পর্ক একটা নয়; তাঁর সাথে আমার কয়েকটা সম্পর্ক আছে। আর এ সম্পর্কের তাকাযা ছিল, আমি নিজের থেকে এসে তাঁর খোঁজ-খবর নেওয়া। কারণ শামায়েলে রেওয়ায়েত আছে-
وَيَتَفَقّدُ أَصْحَابَهُ، وَيَسْأَلُ النّاسَ عَمّا فِي النّاسِ.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের খোঁজ-খবর নিতেন।
কাজেই এতগুলো সম্পর্কের কারণে আমার দায়িত্ব ছিল, নিজে এসে তার হালপুরসি করা। কিন্তু আমার কোতাহী, দায়িত্বটা আমি আদায় করতে পারিনি। তিনি টেলিফোন করার পর এটাকে আমি গনীমত মনে করেছি। একটা সুযোগ পেয়েছি। এ উসিলায় দেখাও হয়ে গেল, হালপুরসিও হয়ে গেল। আল্লাহ পাক তার ইলমে আমলে তারাক্কি দান করুন! তার দ্বারা আরো বেশির থেকে বেশি উম্মতের ফায়দা পৌঁছান- আমীন!
من لم يشكر الناس لم يشكر الله.
যে মানুষের শুকরিয়া আদায় করে না সে আল্লাহ পাকেরও শোকর আদায় করে না। তিনি যে মেহেরবানি করে আমাকে স্মরণ করেছেন, আমি তার শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। আল্লাহ পাক তাকে আরো বেশি বেশি দ্বীনী কাজ করার তাওফীক দান করুন- আমীন!
তিনি যে এখানে বড় জায়গা নিতে পেরেছেন, এটাও আমার জন্য বে-ইনতেহা খুশির বায়েছ। কারণ ইলমী কাজ করতে হলে বড় জায়গা লাগে। ক্ষুদ্র জায়গায় ইলমী কাজ করা মুশকিল। রিক্সা অল্প জায়গার মধ্যে ঘুরানো যায়। প্রাইভেট কার হলে জায়গা আরেকটু বেশি লাগে। আর বিমান নামাতে হলে তো বড় রানওয়ে লাগে। বিমান যত বড় রানওয়েও তত বড় লাগে। বড় প্রতিষ্ঠান গড়তে হলে বড় জায়গার প্রয়োজন। আমাদের দেশে উলামায়ে কেরাম যারা কাজ করেছেন, যে যেখানে জায়গা পেয়েছেন সেখানেই বসে গেছেন। যতটুকু পেয়েছেন ততটুকুতে কাজ শুরু করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ, উম্মতের ফায়দাও হয়েছে। কিন্তু প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে, সুদূরপ্রসারী প্ল্যান নিয়ে কাজ করতে হলে এবং বড় মাপের প্রতিষ্ঠান গড়তে হলে বড় মাপের জায়গার দরকার। আর এ চিন্তা-চেতনাকে সামনে রেখে বড় মাপের জায়গা নেওয়া, এটা আমাদের দেশে কম হয়েছে। হয়নি যে, তা কিন্তু বলছি না। বালিয়া মাদরাসা গ্রামের ভিতরে। সেখানে অনেক জায়গা। গওহরডাঙ্গা মাদরাসা গ্রামের মধ্যে। সেখানেও অনেক জায়গা। বরিশালের মাহমুদিয়া মাদরাসা শহরের উপরে। সেখানে পঁচিশ বিঘা জায়গা। এটা তো মাদরাসার ভিতরে। এ ছাড়াও বাইরে আরো জায়গা আছে।
তো, হাতেগোনা কয়েকটা প্রতিষ্ঠান যেগুলো বিরাট জায়গা নিয়েছে। পটিয়া মাদরাসায়ও আলহামদু লিল্লাহ, বিরাট জায়গা আছে। হাটহাজারীতেও জায়গা আছে আলহামদু লিল্লাহ! আমভাবে চিটাগাং এর অন্যান্য মাদরাসায়ও মোটামুটি জায়গা আছে। কিন্তু রাজধানী ঢাকা বা তার আশপাশে আসলে বড় মাপের জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ার দরকার ছিল। কিন্তু...। আল্লাহ পাক হযরত মুফতী আবদুল্লাহ ছাহেব এবং তাঁর ছোট ভাই মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেবকে তাওফীক দিয়েছেন বড় আকারের জায়গা নেওয়ার। এটাও মাওলার বহুত বড় ইহসান। মাওলা তাওফিক না দিলে কিছুই করা যায় না। শহর থেকে দূরে। কোলাহলমুক্ত সম্পূর্ণ শান্ত পরিবেশ। গাড়ি-ঘোড়ার আওয়াজ নেই। ইলমী কাজের জন্যে নিরিবিলি পরিবেশ দরকার। আল্লাহ পাক সে পরিবেশও মিলিয়ে দিয়েছেন আলহামদু লিল্লাহ!
ইলমের জন্য দুআর ইহতিমাম করতে হবে
ইলম আল্লাহ পাকের সিফাত। এ সিফাত তাঁর থেকে নিতে হবে। এজন্য দুআর ইহতিমাম করতে হবে। দুআ ছাড়া শুধু যেহেন-যাকাওয়াত দিয়ে ইলম হাসিল হয় না। মাওলার থেকে নিতে হলে দুআর ইহতিমাম করতে হবে।
তালিবুল ইলমের নিয়ত
দুই নাম্বার হল নিয়ত। চারটা নিয়ত বিশেষভাবে থাকা দরকার। ১- ইলমে দ্বীন অর্জন করব রেযায়ে ইলাহীর জন্য। ২- ইলম মোতাবেক আমল করার জন্য। ৩- আমি যে ইলম শিখব তা শুধু আমার এলাকাতেই নয়; বরং সারা বিশে^ এ ইলমের প্রচার-প্রসার ঘটাব। ৪- আল্লাহ পাক যদি আমাকে কলমি শক্তি দেন, লেখার যোগ্যতা দেন, তাহলে লেখার মাধ্যমে এ ইলমকে আমি সারা বিশে^ প্রচার করব। একজন তালিবে ইলমের কমপক্ষে এ চারটি নিয়ত করা চাই।
ইলমের জন্য ইনহিমাক জরুরি
ইলমী মারহালা তয় করার জন্য নিয়তের পরে যে জিনিসটা খুব বেশি জরুরি, সেটা হল, ইনহিমাক। একাগ্রতা। একসূয়ী। একাগ্রতা-একসূয়ী যত বেশি হবে, ইলমী ফায়যানও তত বেশি হবে। খোদ যিনি খাতামুন নাবিয়্যীন, তাঁর কাছেও ওহী আসার আগে -حُببَ إليه الْخَلاء- একাকী থাকাকে আল্লাহ পাক প্রিয় করে দিয়েছেন। কাজেই ইলমী মাকাম তয় করার জন্য মৌলিকভাবে খালওয়াত, একাগ্রতা ও একসূয়ী অপরিহার্য। হাকীমুল উম্মত শাহ আশরাফ আলী থানভী রাহ. বলেছেন’ খালওয়াত হলে সুকূন হয়। আর সুকূনের কাইফিয়াত হলে ইতমিনানের সাথে ইলম হাসিল করা যায়। এর বিপরীত যদি ইখতিলাত ও মেলামেশা হয় তাহলে ইনতেশার শুরু হয়। ইনতেশার দ্বারা দিল বে-চাইন হয়ে যায়। পেরেশান হয়ে যায়। সুকূন নসীব হয় না। ইলমের মাকামও তয় করা যায় না। রূহানিয়্যাতের মাকামও তয় করতে পারে না।
এজন্য ইলমী মাকাম তয় করতে হলে খালওয়াত, একাগ্রতা, একসূয়ী, একমন, একধ্যান, একখেয়াল থাকাটা অপরিহার্য। আর এটা যার মধ্যে যত বেশি হবে, তার কলবে ইলমে নববীর ফায়যান তত বেশি হবে। আমার উস্তায মাওলানা ওয়াহিদুয যামান কিরানবী ছাহেব হুযূর বলতেন- কিছু তালিবে ইলম এমন আছে, যার জিস্ম দরসগাহে ঠিক, কিন্তু দিল-দেমাগ দরসগাহে নেই। সে অন্য কোথাও সফর করছে। তার যেহেন এবং ফিকির অন্য কোথাও। উস্তাযের তাকরীর শুনছেও না, বুঝছেও না। তার দেমাগে হয়ত তার বাড়ির কোনো ঝামেলা বা পেরেশানী আছে। সেখানে চক্কর দিচ্ছে। কিংবা কোনো বন্ধুর সাথে সম্পর্ক আছে, সেখানে চক্কর দিচ্ছে। দরসগাহে তার জিসম আছে; কিন্তু তার দিল-দেমাগ নেই। এজন্য দরসে বসতে হলে শুধু জিসমানী হাজিরী যথেষ্ট নয়। বরং নিজের দিল-দেমাগও সম্পূর্ণরূপে উপস্থিত রাখতে হবে।
মনে রাখবেন, একসূয়ী-একাগ্রতার কোনো বিকল্প নেই। একসূয়ী-একাগ্রতার আদনা মেছাল হল পরীক্ষার আগের সময়টা। যখন তালিবে ইলমের যেহেন সবকিছু থেকে সরে কিতাবে এসে যায়। এজন্য তখন অল্প সময়ে অনেক মুতালাআ করা যায়। কিতাব তাড়াতাড়ি ইয়াদ হয়ে যায়। কেন এটা হয়? একাগ্রতা-একসূয়ী আছে এজন্য।
বর্তমান যুগে একাগ্রতা-একসূয়ীর সবচেয়ে বড় বাধা হল মোবাইল ফোন। ফেইসবুকসহ আরো বিভিন্ন ঝামেলা। একজন তালিবে ইলমকে ধ্বংস করার জন্য, ইলমী মাকাম থেকে তাকে সরানোর জন্য এটাই যথেষ্ট। এজন্য প্রতিটি তালেবে ইলমকে শপথ নিতে হবে, যত দিন আমি অন্তত রসমী তালিবে ইলম আছি, এমনিতে তো “মিনাল মাহদি ইলাল লাহদ” হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্তই তালিবে ইলম। কিন্তু রসমী তালিবে ইলম যাকে বলা হয়, এ সময়টায় অন্ততপক্ষে কোনো তালিবে ইলিমের কাছে যেন কোনো মোবাইল ফোন না থাকে। মোবাইলের সাথে যেন কোনো সম্পর্ক না হয়। তালিবে ইলমের সম্পর্ক হবে কিতাবের সাথে। উস্তাযের সাথে। মাদরাসার ঘর-দোরের সাথে। বাইরের জগতের সাথে তার কোনো সম্পর্ক হবে না। বরং সম্পর্ক হবে কিতাবের সাথে। এমন গভীর সম্পর্ক হবে যে, সে মোতালাআয় ডুবে যাবে। এমনভাবে ডুবে যাবে যে, নাওয়া-খাওয়াই ভুলে যাবে। পিপাসার কথা ভুলে যাবে। কোনো কিছুরই খবর থাকবে না। হযরত শায়েখ যাকারিয়া রাহ.-এর ঘটনা। সকাল বেলা বাসা থেকে খাবার আসে। কিন্তু ইলমী ইনহিমাকে তিনি এত ডুবে ছিলেন যে, খাওয়ার কথা ভুলেই গেছেন। সারা দিন না খেয়ে মুতালাআ ও দরসের মধ্যে ব্যস্ত ছিলেন। আসরের পরে হঠাৎ দেখেন যে, মাথা চক্কর দিচ্ছে। চিন্তা করলেন, কীরে, মাথা চক্কর দেয় কেন? পরে মনে পড়েছে, আজকে তো খাবার খাওয়া হয়নি!
চিন্তা করুন, কতটুকু ইলমী ইনহিমাক থাকলে মানুষ ক্ষুধার কথাও ভুলে যেতে পারে! মাওলানা আব্দুল হাই লখনবীর মশহুর কিসসা। মুতালাআর সময় তিনি পানি চেয়েছেন। তাঁর ওয়ালেদ ছাহেব মাওলানা আব্দুল হালীম ছাহেব বললেন, হায়রে, আমার খান্দান কি এভাবে শেষ হয়ে যাবে?! খাদেমকে বললেন, পানি দিও না! এক গ্লাস কেরোসিন তেল দাও! খাদেম তাই করল। কেরোসিন তেল দিয়েছে, আর তিনি সেই তেলই খেয়ে ফেলেছেন এবং মুতালাআর মধ্যে ডুবে গেছেন। তাঁর ওয়ালেদ ছাহেব হাকীম ছিলেন। এতগুলো কেরোসিন তেল খেয়েছে, স্বাস্থ্যের জন্য তো ক্ষতিকর হবে। তাই সেটার এলাজের জন্য পরে তিনি আবার ওষুধ দেন এবং বলেন, আলহামদু লিল্লাহ! খান্দান বাকি থাকবে। অর্থাৎ, মুতালাআর সময় কি পানি খেয়েছে, না কেরোসিন তেল খেয়েছে সে অনুভূতিটাও ছিল না। ইলমী ইনহিমাক কী জিনিস, তা বোঝানোর ভাষা আমার কাছে নেই।
ذوق ایں بادہ نہ دانی بخدا تانہ چشی۔
মুতালাআর স্বাদ
আসলে মুতালাআর মধ্যে যত স্বাদ আর যত মজা, দুনিয়ার আর কোনো কিছুর মধ্যে এত স্বাদ আর এত মজা নেই। মুতালাআর মধ্যে যে স্বাদ আর মজা রয়েছে, এর চেয়ে স্বাদের জিনিস, এর চেয়ে মজার জিনিস আর কিছুই হতে পারে না। যদি সত্যিকারার্থে যওকে মুতালাআ সৃষ্টি হয়, শওকে মুতালাআ এসে যায়, তাহলে ইনশাআল্লাহ, ইলমী মাকাম তয় হবে। দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত আমরা যে লেখাপড়া করি, এখানে ইলম অর্জন করি না। বরং যেটা অর্জন করি সেটা হল ‘কুওয়াতে মুতালাআ’। আর কিছুই অর্জন করিনি। ইলম আসেনি। এসেছে কুওয়াতে মুতালাআ। মুতালাআ করলেই এখন ইলম আসবে। এজন্য হাকীমুল উম্মত শাহ আশরাফ আলী থানভী রাহ. বলেছেন, ফারাগাতের পর কমপক্ষে দশটি বছর মুতালাআর মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা চাই। অন্য কোনো শগফ, অন্য কোনো শুগল যেন আমাকে পেয়ে না বসে। তাহলে কিছুটা হলেও ইলমী মুনাসাবাত পয়দা হবে।
শাইখুল ইসলাম হযরত মাদানী রাহ. তাদরীসও করতেন, মাঠে ময়দানে কাজও করতেন। কিন্তু তাঁর যিন্দেগির একটা সময় এমন গিয়েছে যে, তিনি শুধু মুতালাআর মধ্যে ডুবে ছিলেন। মদীনা মুনাওয়ারায় যখন পড়াতেন, কোনো কোনো দিন ১২-১৪ ঘণ্টাও পড়াতেন। কারণ শুধু হানাফী মাযহাব নয়, মাযাহিবে আরবাআর কিতাব পড়াতেন তিনি। ওয়াসী মুতালাআর অধিকারী ছিলেন। মুখস্থ তাকরীর করতেন হাওয়ালাজাতসহ।
তো, মসজিদে নববীর মত বা-বরকত জায়গায়, রওজায়ে আতহারের পাশে বসে দরস দিয়েছেন এবং নিজেকে মুতালাআর মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছেন। ওই যমানায় সংসারে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছিল। না খেয়ে এক দিন, দুই দিন, তিন দিনও ছিলেন। এ অবস্থায়ও ছবক পড়াতেন। কোনো ছাত্র টের পেত না। সংসারের উপর কঠিন হালাত গিয়েছে। কিন্তু এ দুরবস্থা তিনি কারো কাছে প্রকাশ করেননি। ইলমের মধ্যে মগ্ন ছিলেন।
এটা তো আমাদের নিকটতম আকাবিরের কথা। আর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন এবং সালাফে সালেহীনের হালাত তো আপনারা জানেনই। মুহাম্মাদ ইবনে ফযলকে ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন বললেন, আপনি লেবাসের ঐ হাদীসটি আমাকে শোনান! তিনি হাদীস বর্ণনা শুরু করলেন। ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন বললেন, যদি আপনার কিতাব থেকে শোনাতেন..! মুহাম্মাদ ইবনে ফযল কিতাব আনতে উঠলেন আর ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন তাঁর কাপড় চেপে ধরলেন। বললেন, আগে (মুখস্থ) লিখিয়ে দিন। কারণ আশংকা আছে আপনার সঙ্গে আর সাক্ষাৎ না হওয়ার। তাই তিনি হাদীসটি আগে (মুখস্থ) লেখান। এরপর কিতাব এনে তাঁকে পড়ে শোনান।
এ ঘটনা থেকে আমাদের দুটো ছবক নেওয়ার আছে। এক হল, মুহাদ্দিসীনে কেরাম মওতকে একেবারে নিজের চোখের সামনে মনে করতেন। ইসতেহযারে মওত তাদের কী পর্যায়ের ছিল, এ ঘটনা থেকে তা বোঝা যায়! দ্বিতীয়ত ইলমের শওক তাদের কী পরিমাণ ছিল সেটাও বোঝা যায়। আপনি বাসায় যাচ্ছেন কিতাব আনতে, এর মাঝে যদি আমি মারা যাই, তাহলে তো হাদীসটি থেকে বঞ্চিত হয়ে যাব। এজন্য আগে মুখস্থ শুনিয়ে যান, পরে কিতাব থেকে শুনিয়েন! শামায়েলে তিরমিযীর কিতাবুল লেবাসে এ ঘটনা আছে। আকাবিরে আসলাফে উম্মতের ইলমী ইনহিমাকের ঘটনা কিতাবে ভুরি ভুরি। সেগুলো মুতালাআ করে জেনে নিবেন! এ মওযু তো লম্বা মওযু!
আল্লাহ পাক প্রতিটি ভাইকে যওকে মুতালাআ এবং শওকে মুতালাআ দান করুন! ইলমি ইনহিমাক দান করুন- আমীন।
ভাই! দুনিয়া ওয়া মা ফীহা থেকে গাফেল হয়ে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে মুতালাআর মধ্যে ডুবিয়ে রাখুন। কারণ ইলমী ইনহিমাক, একাগ্রতা ও একসূয়ীর কোনো বিকল্প নেই। যদি থাকত, বলতাম। যারাই ইলমী মাকাম তয় করেছেন, তাদের যিন্দেগীতে এ সিফাতটা ছিল আহাম। বর্তমান যুগে তালিবে ইলম তালাশ করে পাওয়া যায় না।
নোটভিত্তিক পড়াশোনার ভয়াবহতা
এখন ছাত্ররা কিতাব বাদ দিয়ে ছুটছে নোটের পেছনে! বেফাকে যেহেতু ভাল ফলাফল করতে হবে, তাহলে কী করতে হবে? নোট দেখতে হবে! সুওয়ালের জবাবগুলো সংগ্রহ করতে হবে। আমি আমাদের মাদরাসায় সেদিনও আলোচনা করেছি। বলেছি, তালিবে ইলমদের কাছে যত নোট আছে সব জমা নিয়ে নিন! কোনো নোট চলবে না। নোটের মৌলভীর এখানে দরকার নেই। সত্যিকারার্থে বনতে হলে মূল কিতাব মুতালাআ করতে হবে। মূল কিতাব মুতালাআ না করে ইলম হাসিল করা যাবে না। ‘নোট-মোট’ চলবে না। ‘‘তোমরা পরীক্ষায় পাস কর, না ফেল কর, সেটা আমার দেখার বিষয় না। আমার এখানে নোট চলবে না!’’
যাইহোক, নোটভিত্তিক পড়ালেখার যে রেওয়াজ মাদরাসাগুলোতে ঢুকে পড়েছে, সেটা আরেকটা তাবাহী বটে। হযরত মাওলানা আবুল হাসান কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহুর ‘তানযীমুল আশতাত’। নিঃসন্দেহে এটা তাঁর একটা ইলমী কারনামা। বড় মেহনত করে লিখেছেন। অনেক তালিবে ইলম এ ‘তানযীমুল আশতাত’ মুতালাআ করে পরীক্ষা দেয়। আর অন্য কোনো শরাহ-শুরুহাতে হাত দেয় না। এ তালিবে ইলম এ খোলাসা মুতালাআ করে কখনো ইলমী মাকাম তয় করতে পারবে না। কেন পারবে না? কারণ এক পৃষ্ঠা খোলাসার পেছনে তাঁর হয়ত পাঁচ শ পৃষ্ঠা, হাজার পৃষ্ঠা মুতালাআ ছিল। এরপর তিনি এ এক পৃষ্ঠার খোলাসা লিখেছেন। তাহলে তাঁর খোলাসার পেছনে মুতালাআ আছে পাঁচ শ থেকে হাজার পৃষ্ঠা। এজন্য এ খোলাসার পেছনে তাঁর বসীরাত আছে। কিন্তু যে তালিবে ইলম সরাসরি খোলাসা মুতালাআ করছে, শরাহ-শুরুহাত দেখছে না, তার বসীরাত হবে কীভাবে? বসীরাত অর্জন করতে হলে নিজস্ব মুতালাআ লাগবে। আগে নিজে ব্যাপক মুতালাআ করবে নির্দিষ্ট মওযুর উপর। এরপর নিজে খোলাসা তৈরি করবে। তিনি দশটা তাওজীহ করেছেন, তুমি দশটা নয়; পাঁচটাই কর। কিন্তু নিজে মুতালাআ করে খোলাসা তৈরি কর। তাহলে হবে কী, তোমারও এ খোলাসার পেছনে পাঁচশ পৃষ্ঠা মুতালাআ থাকবে। আর মাসআলার উপর তোমার বসীরাত তৈরি হবে।
এজন্য নোটভিত্তিক লেখাপড়া, এটাও তাবাহী ও বরবাদির পয়গাম। আর শুধু খোলাসা দেখে দেখে মৌলভী বনা, সেটাও তাবাহী ও বরবাদির পয়গাম। সত্যিকারার্থে মৌলভী হতে হলে তোমাকে ব্যাপকভাবে মুতালাআ করতে হবে। একই মওযুর উপরে বিভিন্ন কিতাব মুতালাআ করতে হবে।
মুতালাআ তিন প্রকার
মুতালাআ তিন প্রকার। এক নাম্বার হল কিতাবভিত্তিক মুতালাআ। যিনি যে কিতাব পড়াবেন, তার কিতাবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কামা হক্কুহু হল্ থাকা চাই। ইবারত, তরজমা এবং মতলব হুযূরের যেহেনে পরিষ্কারভাবে থাকতে হবে। ঝাপসা নয়। কিছু লোকের অবস্থা হল- ‘উন কে পা-স মা‘লুমাত তো হ্যাঁয়; লেকিন ইলম নেহী হায়!’ এমন কিছু লোক আছে, যার মালুমাত আছে; কিন্তু ইলম নেই। নিজেই বোঝে না। ওই যে, ইবারত মুখস্থ আছে, আর তরজমা উল্টা-সিধা করে দিচ্ছি। আসলে বিষয়টি কী, তা নিজেই বোঝে না। এজন্য অনেকের কাছে মা‘লুমাত আছে, ইলম নেই। ইলম আর মা‘লুমাত এক নয়। বরং মাসআলার আগাগোড়া বোঝার জন্য তাদাব্বুর ও গবেষণা লাগবে। তাহলেই আপনার মধ্যে ইলম আসবে।
যাইহোক, আসরে হাজেরের ফিতনাগুলো সম্পর্কে একটু তাম্বীহ করছি। এক হল নোটের ফিতনা, যেটা বেফাকভুক্ত বিভিন্ন মাদরাসায় ঢুকে পড়েছে। এজন্য বেফাকও এখন প্রশ্নপত্রের পলিসি বদলে দিয়েছে। পরীক্ষা হবে ইসতে‘দাদের; মা‘লুমাতের নয়। সেজন্যই ই‘রাব লাগানো, হাদীসের তরজমা, আলফাযে গরীবা আসলে তার হল্লে লোগাত, এগুলো চাওয়া হয়। এখন যার কিতাবী ইসতে‘দাদ নেই সে জবাব দিতে পারবে না। সে এখানে ধরা পড়ে যাবে। নোটকে মার দেওয়ার জন্যই বেফাক এ পলিসি বদল করেছে।
যাইহোক, আমি যে কথা বলতে চাই সেটা হল, খোলাসা পড়ে, নোটবুক পড়ে আমি মৌলভী হতে পারব না। আমাকে ব্যাপক মুতালাআ করে আসতে হবে। এ মুতালাআ তিন প্রকার।
এক নাম্বার যেটা বললাম, কিতাবভিত্তিক মুতালাআ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কামা হক্কুহু কিতাবের ইবারত সহীহ পড়া চাই। ইবারতের সহীহ তরজমা করা চাই। কোথাও যেন ঝাপসা না থাকে। এভাবে পরিশ্রম করতে হবে। এ হল এক নাম্বার মুতালাআ। কিতাবভিত্তিক মুতালাআ।
দ্বিতীয় প্রকার মুতালাআ
দুই নাম্বার হল, ফন্নী মুতালাআ। ফন্নী মুতালাআর জন্য যে বিষয়ে ধরব, তার নিচের থেকে উপরের সংশ্লিষ্ট সব কিতাব মুতালাআ করতে হবে। যেমন কিতাবুত তাহারাতের মুতালাআ শুরু করেছেন, তো নিচের কিতাব- তালীমুল ইসলাম, বেহেশতি জেওর, মালাবুদ্দা মিনহু, নূরুল ঈযাহ, কুদূরী, কানযুদ দাকায়েক, শরহে বেকায়া, হেদায়াসহ দরসিয়্যাতের সকল কিতাব থেকে তাহারাতের উপর মুতালাআ করতে হবে।
এরপর চলে যাব উপরের কিতাব; বাদায়েউস সানায়ে, আলবাহরুর রায়েক, ফাতাওয়া আলমগিরী, ফাতাওয়া শামীসহ আরো যেসব কিতাব আছে সেগুলোতে। তাহারাতের উপর সব কিতাব থেকে মুতালাআ করব। এর নাম হল ফন্নী মুতালাআ।
ফন্নী মুতালাআতে আমাকে যে কাজটা করতে হবে সেটা হল, পুরো মুতালাআর পরে যে খোলাসা ও নির্যাস বের হবে, সেটা আমাকে একটা খাতায় নোট করতে হবে। দ্বিতীয়ত কোন্ কিতাবে বা কোন্ শরহে নতুন কী পাওয়া গেল, সেটা হাওয়ালাজাতসহ নোট রাখতে হবে। ফন্নী মুতালাআ যদি এ তরিকায় হয় তাহলে ফায়েদা হল, পরে এ নোট দেখলেই পুরো বহস সামনে চলে আসবে ইনশাআল্লাহ! কিতাবুস সালাত শুরু হয়েছে তো, নিচের থেকে উপর পর্যন্ত সব কিতাবের মুতালাআ করতে হবে সালাতের ওপরে। তাহলে একটা অভিজ্ঞতা হাসিল হবে। এখানে আবার নোট করতে হবে সালাতের মূল মাসায়েলগুলো কী কী? মিন হাইসু আনওয়াইস সালাত কী কী মাসআলা আছে? এবং হার মাসআলার আগাগোড়া, খোলাসা কী, সেটা নিজস্ব আঙ্গিকে সাজাতে এবং গোছাতে হবে। এভাবে হয় ফন্নী মুতালাআ। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সব কিতাব মুতালাআ করে তার খোলাসা বের করা।
আসরারে শরীআত সম্পর্কে জানতে হলে শাহ ওয়ালী উল্লাহর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা মুতালাআ করতে হবে। মাসআলার লিম ও হেকমত এবং একেক কিতাব ও বাবের মাসআলাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক ও তারতীব জানতে হলে বাদায়েউস সানায়ে মুতালাআ করতে হবে। ইসতেদলাল বিল হাদীস পড়তে হলে নাসবুর রায়াহ’ আছে। আহকামুল কুরআন, আবু বকর জাসসাস, তাফসীরে মাযহারী এ ধরনের কিতাব। এগুলো মুতালাআ করলে ইসতেদলাল বিল হাদীস, অর্থাৎ মাসআলার উপর হাদীস দিয়ে দলীল দিতে সক্ষম হবে। বর্তমানে গায়রে মুকাল্লিদের ফিতনা চলছে। যেন হার মাসআলাতে হাদীস দিয়েও ইসতেদলাল করা যায়। যাতে এটা না বলতে পারে যে, হানাফী মাযহাবের মাসআলাগুলোর পক্ষে কোনো সহীহ হাদীস নেই। তো দুই নাম্বার হল ফন্নী মুতালাআ।
তৃতীয় প্রকার মুতালাআ
আর তিন নাম্বার হল কুরআন-সুন্নাহর ব্যাপক মুতালাআ। কুরআন-সুন্নাহর ব্যাপক মুতালাআর দ্বারা এক আম বসীরত অর্জন হবে। এই আম বসীরতকে তাফাক্কুহ ফিদ দ্বীন বলা হয়। নেসাব কিন্তু দাওরায়ে হাদীস ফারেগ হওয়া নয়। নেসাব হল, তাফাক্কুহ ফিদ দ্বীন-দ্বীনের ব্যাপক সমঝ অর্জন করা।
তাফাক্কুহ ফিদ দ্বীন-এর জন্য মুতালাআয়ে কুরআনের বিকল্প নেই
দ্বীনের বসীরত অর্জন করা। এর জন্য কুরআনে কারীমের ব্যাপক তিলাওয়াত লাগবে। নফসে কুরআনে কারীমের ব্যাপক তিলাওয়াত লাগবে। আমাদের ছাত্র মাওলানা হেমায়েত একবার প্রশ্ন করল, হুযূর! রমযান কীভাবে কাটাব? আমি বললাম যে, রমযানে কোনো কাজ নেই। কাজ শুধু একটাই; কালামে পাকের তিলাওয়াত। সারা রমযান শুধু কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতে কাটাবে! সাথে একটা খাতা রাখবে। বিষয়বস্তুগুলো নোট করবে।
কথার কথা, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ঘটনা কুরআনে কারীমে কত বার এসেছে? কত সূরায় এসেছে। তিলাওয়াতের ফাঁকে এটাও নোট করে ফেলবে। বিভিন্ন আম্বিয়ায়ে কেরামের হালাত কুরআনে পাকে এসেছে; কোন্ নবীর হালাত কত জায়গায় এসেছে, তিলাওয়াতের ফাঁকে এটাও নোট করে ফেলবে। আহকামের আয়াতগুলো নোট করবে।
এভাবে কুরআনে কারীমের কাসরাতে তিলাওয়াত করতে হবে, মা‘আ তাদাব্বুর। রমযানে আর কোনো কাজ নেই। কাজ একটাই। ফায়েদা হবে কী? পুরো মাযামীনে কুরআন তোমার চোখের সামনে ভাসতে থাকবে ইনশাআল্লাহ! আর ইলমে নববীর সারে-চশমা হল কুরআনে কারীম। এজন্য কুরআনে কারীম থেকে আলগ হয়ে আর যাই হোক, মৌলভী হওয়া যাবে না। মৌলভী হতে হলে কালামে খোদাওয়ান্দীর কাসরাতে তিলাওয়াত লাগবে। বিশেষভাবে রমযান মাস কুরআনের মাস। সমস্ত আসমানী কিতাব আল্লাহ পাক রমযান মাসে অবতীর্ণ করেছেন। এজন্য রমযান মাসকে বিশেষভাবে কালামে খোদাওয়ান্দীর জন্য রাখতে হবে। ব্যাপক তিলাওয়াত করতে হবে। আকাবিরে দারুল উলূম দেওবন্দের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এটা একটা আহাম বৈশিষ্ট্য যে, রমযান মাস তাঁরা তিলাওয়াতেই কাটাতেন। এমনিতেই মৌলভী হতে হলে কাসরাতে তিলাওয়াত লাগবে। তাহলে মাযামীনে কুরআন চোখের সামনে ভাসবে ইনশাআল্লাহ! আকীদায়ে তাওহীদ, আকীদায়ে রেসালাত, আকীদায়ে আখেরাত, জান্নাতীদের আহওয়াল, জাহান্নামীদের হালাত, এসব কিছু কুরআনে আছে কি না? সিফাতে রাব্বানিয়ার বয়ান, সিফাতে সুবূতিয়ায়ে জাতিয়া, সিফাতে সুবূতিয়ায়ে আফআলিয়া, সিফাতে সালবিয়া, সবগুলোই আছে কুরআনে। কুরআনের কোনো কোনো জায়গায় সিফাতে সালবিয়ার আলোচনা আছে, যেমন-
سُبْحٰنَ الَّذِیْۤ ...
سَبَّحَ لِلهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ
یُسَبِّحُ لِلهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ
এরকম সিফাতে সালবিয়াগুলো বের করা। সিফাতে যাতিয়া সাতটা বা আটটা। শরহে আকাইদে আছে, আল্লাহ তাআলা ‘হাই’ হওয়া। ‘কায়্যূম’ হওয়া। ইলম, কুদরত, সাম্‘, বাছর- এগুলো সিফাতে যাতিয়া।
যাইহোক, তিলাওয়াতের সময় এগুলো লক্ষ্য রাখবেন। সিফাতে আফআলিয়া-
كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ
এটা গায়রে মুতানাহী। বমা‘না-
لا يَقِفُ عِنْدَ حَدٍّ.
মোটকথা কুরআনে কারীম আল্লাহ তাআলার মা‘রেফাতে ভরা। তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমাদের তা হাসিল করা দরকার।
তাযকিয়ায়ে বাতেন : গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয়
আর তাযকিয়ায়ে বাতেনের ক্ষেত্রে তিনটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ।
এক-
اُتْلُ مَاۤ اُوْحِیَ اِلَیْكَ مِنَ الْكِتٰبِ .
অর্থাৎ কালামে খোদাওয়ান্দীর তিলাওয়াত।
দুই-
وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ .
অর্থাৎ, সালাত কায়েম করা। তিন-
وَ لَذِكْرُ اللهِ اَكْبَرُ .
অর্থাৎ, যিকরুল্লাহর কাসরত। ইসলাহে নফসের জন্য এ তিনটা জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এর মধ্যে এক নাম্বারই হল, কালামে খোদাওয়ান্দীর তিলাওয়াত। প্রথমত হল সিফাতে রাব্বানীকে ইলমীভাবে জানা। দ্বিতীয়ত সিফাতে রাব্বানীর তাআল্লুক হবে তার কলবের সাথে। তৃতীয়ত. সিফাতে রাব্বানীর তাহাক্কুক হবে তার কলবের মধ্যে। অর্থাৎ, সিফাতে রাব্বানীর তাজাল্লী তার সীনা এবং তার কলবের মধ্যে পড়বে। সিফাতে রাব্বানীর তাজাল্লী তার সীনা এবং কলবের মধ্যে যখন পড়বে, তখন কলব থেকে সকল রাযায়েল দূর হয়ে যাবে। কলব মুযাক্কা, মুসাফ্ফা হয়ে যাবে। আখলাকে হামীদা অটোমেটিকলি কলবে এসে যাবে। কিবর, হাসাদ, বুগয, সব দূরীভূত হয়ে তাওয়াযু, তাওয়াক্কুল, সবর, কানাআত এসব আওসাফে হামীদা কলবে এসে যাবে। রাযায়েল দূর হয়ে যাবে। যদি সিফাতে রাব্বানীর তাজাল্লী পড়ে দিলে।
চতুর্থত, এ তাজাল্লীর একটা আছর আছে। এর দ্বারা মানুষের সাথে হুসনে খুলুকের মাদ্দা এবং মাখলুককে নফা পৌঁছানোর মাদ্দা পয়দা হয়।
এজন্য শাহ ওয়ালী উল্লাহ রাহ. তাযকীর বিআলাইল্লাহর মধ্যে সিফাতে রাব্বানীকেও এনেছেন। আর সিফাতে রাব্বানী আসবে কালামে পাকের তিলাওয়াত দ্বারা।
یٰۤاَیُّهَا الْمُزَّمِّلُ قُمِ الَّیْلَ اِلَّا قَلِیْلًانِّصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِیْلًا اَوْ زِدْ عَلَیْهِ وَ رَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِیْلًا.
আল্লাহ পাক নির্দেশ দিয়েছেন, অর্ধরাত বা তার চে’ একটু কম, বা একটু বেশি কালামে পাক তিলাওয়াত করার জন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাতকে রাত কালামে পাকের তিলাওয়াতে কাটিয়ে দিয়েছেন। এজন্য এ উম্মতের সাখত হল, কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের উপর। আমরা মাদরাসায় পড়ি, অথচ আমাদের কাছে তিলাওয়াতের গুরুত্ব নেই। আহাম্মিয়াত নেই। এজন্য ভাই! বার বার বলছি, তিলাওয়াতের বিকল্প নেই।
কুরআনের সাথে চার আমল
তাসহীহে কুরআন, কুরআনে কারীমের নাযেরা সহীহ হওয়া চাই। এটা এক নাম্বারে বলার দরকার ছিল। তাসহীহে কুরআন ফরযে আইন। কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখা জরুরি। দাওরায়ে হাদীস পড়ছে, অথচ তিলাওয়াতে লাহনে জলী। তাহলে তার ফরযে আইন বাদ পড়েছে। এজন্য কুরআনে কারীমের সাথে প্রথম আমল হল তাসহীহে কুরআন। তথা সিফাত, মাখরাজ ও তাজবীদের সাথে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত।
দুই নাম্বার, কুরআনে কারীমের সঠিক তরজমা।
তিন নাম্বার, কুরআনে কারীমের সঠিক মতলব বোঝা।
চার নাম্বার, কুরআন যেসব কাজের নির্দেশ দিয়েছে, সেগুলো পালন করা। যা থেকে নিষেধ করেছে, তা বর্জন করা। তাহলে وَ اعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِیْعًا -এর উপর আমল হবে।
হাদীসের ব্যাপক মুতালাআ
এরপর আহাদীসে মুবারাকার উপরে ব্যাপক মুতালাআ হওয়া চাই। আহাদীসে মুবারাকা হল মৌলিকভাবে কুরআনে কারীমের বাস্তব তাফসীর। এজন্য হাদীসের সাথে মুনাসাবাত যার যত বেশি হবে, কুরআনে কারীমের সাথে তার তত বেশি গভীর সম্পর্ক হবে। হাদীস ছাড়া কুরআন বোঝা সম্ভব নয়। কুরআন বুঝতে হলে হাদীস লাগবেই।
আমরা তো জায়গা-জমিনের প্যাঁচ বুঝি না। একটা হল নকশা। আরেকটা হল খতিয়ান। খতিয়ানের মধ্যে জমিনের দাগ নাম্বার থাকে। পরিমাণ থাকে। কিন্তু জমিনটা মাঠের কোথায় অবস্থিত সেটা খতিয়ানে থাকে না। সেটা থাকে নকশার মধ্যে। উপমহাদেশে চারটা খতিয়ান হয়েছে। প্রথম জরিপ হয়েছে ১৯২৪ -এর দিকে। এটাকে সেটেলমেন্ট জরিপ বলে। এটা সি এস। এরপর হল এস এ। এটা দ্বিতীয় জরিপ। এরপর হল আর এস। এটা তৃতীয় জরিপ। আর চতুর্থ জরিপ হচ্ছে ইদানীং যেটা চলছে। সবখানে এখনো শেষ হয়নি।
বোঝার জন্য বলা যেতে পারে, কুরআনে কারীম বমানযিলায়ে খতিয়ান। হাদীস হল বমানযিলায়ে নকশা। আর জমিনের ক্ষেত্রে ক্ষতিয়ান আর নকশাই যথেষ্ট নয়। সাথে আমিন লাগে। দ্বীনী বিষয়ে আমিন হল সাহাবায়ে কেরামের জামাআত। কেননা কুরআনে কারীমের তালীম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আফতাবে নবুওত থেকে সরাসরি গ্রহণ করেছেন সাহাবায়ে কেরাম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কওল, ফে‘ল, তাকরীর, আহওয়াল ও শামায়েল সরাসরি সাহাবায়ে কেরাম গ্রহণ করেছেন। এজন্য সাহাবায়ে কেরামের পজিশন হল আমিনের পজিশন। কুরআনের খতিয়ান, হাদীসের নকশা আপনাকে বুঝতে হবে সাহাবায়ে কেরামের ব্যাখ্যার আলোকে। আর এ তিনোটার সমন্বয় সাধন করেছেন আইম্মায়ে আরবাআ। ইমাম আবু হানীফা রাহ., ইমাম শাফেয়ী রাহ., ইমাম মালেক রাহ., ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.। এ চারো ইমাম কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের ব্যাখ্যা- এ তিনোটার সমন্বয় করে ইসলামী আইন আহকাম সংকলন, বিশ্লেষণ ও বিন্যাস করেছেন। যাকে ফিকহ বলা হয়।
ফিকহ কুরআন-হাদীসেরই সারনির্যাস
ফিকহ হল, মৌলিকভাবে কুরআন-সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের ব্যাখ্যারই নির্যাস। খোলাসা এবং সারমর্ম। ফিকহ কোনো নতুন কিছু নয়। আর মুতাকাদ্দিমীনের ফিকহের মধ্যে সবই আছে। ইমাম আবু হানীফা রাহ ফিকহের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা আপনারা সবাই জানেন-
"معرفة النفس ما لها وما عليها."
এর মধ্যে ইলমে কালাম দাখেল। ইবাদত দাখেল। মুআমালাতও দাখেল। মুআশারাত দাখেল। আখলাকিয়্যাত দাখেল। আর এ তরযে আমাদের নেসাবে কিতাবও আছে। যেমন- মা লা বুদ্দা মিনহু।
এটা কিতাবুল ঈমান দিয়ে শুরু হয়েছে। এখানে কিতাবুত তাকওয়াও আছে। ইমাম গাযযালী রাহ.-এর ইহইয়াউ উলূমিদ দ্বীন, এটাও লেখা হয়েছে এ তরিকায়। অর্থাৎ, মুতাকাদ্দিমীনের ফিকহের আলোকে। আর মুতাকাদ্দিমীনের ফিকহে ইলমে কালাম (ইলমে আকাইদ)ও আছে। ইলমে তাসাওউফও আছে। ইলমুল আখলাকও আছে। পরবর্তীতে ইলমে কালাম মুসতাকেল আকার ধারণ করেছে। ইলমুল আখলাক এবং তাসাওউফ মুসতাকেল আকার ধারণ করেছে। আর বাকি তিনোটা ইলমুল ফিকহ-এর এই শিরোনামে রয়ে গেছে। অর্থাৎ ইবাদত, মুআমালাত এবং মুআশারাত, এগুলো মুতাআখখিরীনের ফিকহেও রয়ে গেছে।
তো যে কথা বলতে চেয়েছি, গায়রে মুকাল্লিদরা যে বলে, আমি আছি আর কুরআন আছে। আমি আছি আর হাদীস আছে। ইমাম আবু হানীফা আবার কে? ইমাম শাফেয়ী কে? ইমাম মালেক কে? আর তাদের মধ্যে যারা কট্টরপন্থী, তারা তো নাউযুবিল্লাহ, এমনও বলে যে, ইমামগণের তাকলীদ শিরক। তাদেরকে প্রশ্ন করুন, তুমি তো এ যুগে বসবাস করছ। বলছ, সহীহ হাদীসের উপর আমল করবে। তা ভালো কথা। কিন্তু এ হাদীস যে সহীহ, সেটা তোমাকে কে বলেছে? আল্লাহ পাক বলেছেন? নাকি নবীজী এসে বলে গেছেন? নিশ্চয় তোমাকে স্বীকার করতে হবে যে, আসমায়ে রিজালের ইমামগণ এবং আইম্মায়ে জরহ ওয়াত তা‘দীল সনদের উপর কালাম করে বলেছেন যে, এ হাদীসটা সহীহ, ওটা হাসান, ওটা যয়ীফ। তাহলে আইম্মায়ে মুহাদ্দিসীন আল্লাহও নয়, আল্লাহর রাসূলও নয়। তো তুমিও তো অন্যকে মানছ, তাকলীদ করছ। তাহলে তুমিও তো আরেক মুশরিক! তুমি আমাকে একা মুশরিক বানাচ্ছ কেন? তুমি নিজেও তো মুশরিক!
মুনাযারার একটি উসূল
আসলে মুনাযারার মধ্যে অনেক সময় ইলযামি জবাব দিতে হয়। তাহলে প্রতিপক্ষ জায়গাতেই চুপ হয়ে যায়। মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী আলাইহির রহমার কাছে এক আহলে হাদীস এসেছে মুনাযারার জন্য। বিষয় হল, কেরাত খালফাল ইমাম প্রসঙ্গ। হযরত বললেন-
نہیں، میں مناظرہ نہیں کروںگا۔
সে বলে-
پھر بھی ہم آپ کا خیال معلوم کرنا چاہتے ہیں۔
হযরত বললেন-
العیاذ باللہ، اہل حدیث ہو کر میری راۓ معلوم کرتے ہیں؟ قرآن کو بھی چھوڑ دیا، حدیث کو بھی چھوڑ دی!
সে বলল-
نہیں، ہماری مراد یہی ہے کہ قرآن سنہ کے مطابق بتا دیں۔
হযরত বললেন-
اچھا ٹھیک ہے، امام رکوع میں چلا گیا، مقتدی ابھی پہنچا، تو اب کیا کرےگا؟ رکوع میں جائے گا یا نہیں،آپ اگر کہیں کہ نہیں جائےگا، تواس سے خلاف لازم آئےگا "وإذا ركع فاركعوا " کا۔
আর যদি ইমামের সাথে রুকুতে চলে যায়, তো কেরাত কই গেল? তাহলে
"لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب".
এ হাদীসের খেলাফ লাযেম আসবে। আর এমনিতেও ইমামের পিছনে কেরাত পড়লে-
"من كان له إمام فقراءة الإمام له قراءة".
এ হাদীসের খেলাফ লাযেম আসবে।
তো এখন আহলে হাদীস কী করবে? বলে-
آپ نے ہمیں پھنسا ديا ہے۔
হযরত বললেন-
پھنسایا نہیں، یہی توکام ہے۔
তারপর সে বলল-
اگر یہ اشکال ہم کرے تو آپ کیا جواب دیںگے؟
হযরত বললেন-
ہمارا راستہ ہموار ہے، ہم سیدھے امام ابو حنیفہ کے پاس چلے جائیںگے اور کہیںگے ؛ یہ صورت حال پیش آیا، اب ہم کیا کریں گے؟ امام ابو حنیفہ رح نے ہمیں بتا دیا کہ بیٹے! قرآن کو بھی چھوڑنا نہیں ہے، حدیث کو بھی چھوڑنا نہیں ہے ، تو "وإذا ركع فاركعوا" کے مطابق رکوع میں چلے جاؤ، اور "لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب"اس حدیث کا تعلق امام اور منفرد کے ساتھ ہے، مقتدی کے ساتھ نہیں ہے۔اور"من كان له إمام فقراءة الإمام له قراءة"یہ حدیث مقتدی کے لیے ہے۔
তাহলে জমা-তাতবীক হয়ে গেল কি না? হুযূর এভাবেই জওয়াব দিয়েছেন।
আরেক দিন হুযূর তাবলীগে গিয়েছেন মেওয়াতে। এক গায়রে মুকাল্লিদ ধরে বসেছে যে, মুনাযারা করবে। বিষয় হল রফয়ে ইয়াদাইন। হযরত বললেন-
میں تبلیغ کے لیے آیاہوں ، نبی علیہ السلام نے تبلیغ کی ہے، میں رفع یدین کے بارے میں مناظرہ کے لیے نہیں آیا۔
সে নাছোড় বান্দা। বলে-
نہیں ، کرنا پڑے گا۔
হযরত বললেন-
اچھا ٹھیک ہے، صحابۂ کرام کی تعداد کتنی ہے بھئی بتاؤ! کتنے صحابہ نے رفع یدین کیا؟
সে বলল-
چار سو صحابہ سے رفع یدین ثابت ہے۔
হযরত বললেন-
صحابۂ کرام کی تعداد کتنی ہے؟
সে বলল-
ایک لاکھ سے زیادہ ہے۔
তারপর মুফতী ছাহেব হুযূর বললেন-
بھائی! یہ کہ رہے ہیں کہ رفع یدین چار سو صحابہ سے ثابت ہے، اور یہ بھی کہ رہے ہیںکہ صحابہ کی تعداد ایک لاکھ سے زیادہ ہے، اس کا مطلب یہ ہے کہ چار سو نے رفع یدین کیا ہے، باقی نے ترک رفع کیا، اب جس کا جی چاہے رفع یدین کرے، جس کا جی چاہے ترک رفع کرے! چلو بھئی! ہم تبلیغ کے لیے آئے، چلو، تبلیغ میں لگ جائیں!
হুযূরের কথা এ ধরনেরই ছিল। ইলযামি জওয়াবের বড় ইমাম ছিলেন। মুনাযারার ইমাম ছিলেন। প্রতিপক্ষের মুখ দিয়ে যে শব্দ বের হত, সেটা দিয়েই তাকে জায়গায় বসিয়ে দিতেন। আল্লাহ পাক হুযূরকে এ মালাকা দিয়েছেন।
বাহার হাল ফন্নী মুতালাআ লাগবে। কিতাবভিত্তিক মুতালাআ লাগবে এবং কুরআন সুন্নাহর উপরে ব্যাপক মুতালাআ লাগবে।
আসরারে শরীআতের জন্য হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা মুতালাআ করতে হবে। এ মওযুর উপর আরো কিতাব আছে। আর মাসায়েলের ইলাল, হেকমত, এগুলোর জন্য বাদায়েউস সানায়ে। জুযইয়্যাত ভরপুর হল ফাতাওয়া শামীতে। এ ব্যাপারে তো হুযূররা আপনাদেরকে রাহনুমায়ী করছেন, করবেন। এজন্য আমার কিছু বলার বেশি প্রয়োজন বোধ করছি না। বাকি কথা একটাই- মুতালাআর বিকল্প নেই।
তবে মনে রাখবেন, শুধু মুতালাআই যথেষ্ট নয়।
সোহবতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
তরবিয়তের মধ্যে সবচেয়ে মুআছছির হল সোহবত। সোহবতের বিকল্প নেই। মানুষ সোহবত দ্বারা বনে। এটা আমরে বদীহী। ভালো বাবুর্চি হতে হলে কোনো ভালো বাবুর্চির সংস্পর্শে থাকতে হয়। ডাক্তার হতে হলে শুধু এমবিবিএস হলে চলে না। আবার ইন্টারনি করতে হয় আলাদা দুই বছর। মশক করতে হয়। হাতেনাতে শিখতে হয়। এজন্য দ্বীন শিখতে হলেও আহলে দ্বীনের সোহবত ওয়া মাইয়্যাত লাগবে। সাহাবায়ে কেরামও বনেছেন সোহবতের দ্বারা। এজন্য তারবিয়াতের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হল সোহবত।
দুই নাম্বার হল, দরস ও তাদরীস। দরস ও তাদরীস দ্বারাও মানুষের তারবিয়াত হয়। তিন নাম্বার হল, মুতালাআ। আগেই বলেছি, শুধু মুতালাআ কিন্তু যথেষ্ট নয়। কারণ মুতালাআর মধ্যে প্যাঁচ আছে। হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ. মেছাল দিয়েছেন যে, আগের যুগের ডাক্তাররা মিকচার দিত। আর ওষুধের বোতলের উপর কাগজ দিয়ে দাগ লাগিয়ে দিত। তো, এখন ডাক্তার মিকচার দেওয়ার পর ওষুধের বোতলের উপরে কাগজ দিয়ে দাগ লাগিয়ে দিয়েছেন আর বলেছেন, দৈনিক এক দাগ করে খাবে! সে বাড়িতে গিয়ে ওষুধ খায়নি; খেয়েছে কাগজের দাগ। কারণ ডাক্তার দাগ খেতে বলেছেন। তারপর এসে বলছে- ডাক্তার সাহেব! কোনো উপকার তো হল না? ডাক্তার বললেন, হাঁ, কী বলেন, উপকার হয়নি? দেখি, বোতল দেখান তো! সে বোতল দেখাল। ডাক্তার বললেন, হায়রে ওষুধ তো সব রয়েই গেল। তাহলে আপনি খেয়েছেন কী? সে বলল, কাগজের দাগ খেয়েছি!!
এজন্য সহীহ বুখারীতে আছে-
إنما العلم بالتعلم
আমার উস্তায মাওলানা নাঈম ছাহেব হুযূর তরজমা করতেন-
مستند علم وہی ہے جو استاذ سے حاصل کیا ہے-
নির্ভরযোগ্য ইলম সেটাই, যেটা উস্তায থেকে হাসিল করা হয়।
কাজেই শুধু মুতালাআ যথেষ্ট নয়; বরং মুতালাআর পরেও উস্তাযের কাছে মুরাজাআত করা চাই। কোনো ইবারত ঝাপসা মনে হলে উস্তাযকে জিজ্ঞেস করে হল্ করে নেওয়া চাই। অথবা গিয়ে বলবে, হুযূর! আমি এ মতলব বুঝেছি, এটা ঠিক আছে কি না?
তাহলে বেলা শক ওয়া শোবা মুতালাআ জরুরি। তবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে নয়। বরং উস্তাযের নেগরানিতে হতে হবে। বিশেষ করে কোনো ইবারত ঝাপসা লাগলে নিজে গিয়ে উস্তায থেকে সহীহ মতলব ধরে নিতে হবে।
তো এক নাম্বার, সোহবত ওয়া মাইয়্যাত। দুই নাম্বার, দরস ও তাদরীস। তিন নাম্বার, উস্তাযের নেগরানিতে মুতালাআ।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তিনো তরীকায় ইসলাহে বাতেনের তাওফিক দান করুন- আমীন!
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকুন
ভাই! মা‘সিয়াত হল যুলমাত। আর ইলম হল নূর। নূর এবং যুলমাত একসাথ হতে পারে না। এজন্য নিজেকে সব প্রকারের মা‘সিয়াত থেকে হেফাযত করতে হবে। মোল্লা আলী কারী রাহ. মেরকাতে স্পষ্ট বলেছেন-
هو نور مقتبس من مشكاة النبوة.
ইলম এক নূর, যা নবী আলাইহিস সালামের সীনা মোবারক থেকে বের হয়েছে।
"يهدي به إلى ذاته وصفاته وأحكامه"
এর মধ্যে ইলমে লাদুন্নী, ইলমে কাসবীসহ সবকিছু আছে। মেরকাতের কিতাবুল ইলম দেখুন!
তো ইলমের নূর আসতে হলে ভাই! নিজেকে মা‘সিয়াত থেকে হেফাযত করতে হবে। মা‘সিয়াত আর ইলমে লাদুন্নী, দুটো একসাথে জমা হতে পারে না।
আলেমের মাঝে ইসতেগনা থাকা জরুরি
হাকীমুল উম্মত শাহ আশরাফ আলী থানভী রাহ. বলেছেন, আলেমের শান তখন বনে, যখন তার মধ্যে ইসতেগনার মাদ্দা আসবে। যখন সে মুসতাগনী হবে। লোভ-লালসার শিকার যদি হয় কোনো আলেম, তাহলে সে আলেমের শান ঠিক রাখতে পারল না। আলেম হতে হলে তার আহাম সিফাত হল, মুসতাগনী হওয়া। নবাব সলিমুল্লাহ হযরত থানভীকে দাওয়াত করেছেন। হযরত শর্ত আরোপ করেছেন যে, আমাকে কোনো হাদিয়া-তোহফা দেওয়া যাবে না।
اگر یہ شرط منظور ہے تو دعوت قبول ہے
আর দ্বিতীয় শর্ত হল, সময়মত খাবার দিতে হবে আমাকে। নবাব সলিমুল্লাহ শর্ত মেনে নিয়েই হযরতকে এনেছেন। এক লোক হযরত থানভীকে দাওয়াত দিল। হযরত বললেন-
اس کی ذمے داری نواب صاحب کو ہے
নবাব ছাহেব যদি অনুমতি দেন তাহলে হবে, না হয় হবে না। নবাব ছাহেব অনুমতি দিয়েছেন। অনুমতি পাওয়ার পর সে লোক খাবার প্রস্তুত করতে গিয়েছে। কিন্তু খাবার সময়মত পৌঁছাতে পারেনি। নবাব সলিমুল্লাহ অত্যন্ত হুঁশিয়ার লোক ছিলেন। তিনি দাওয়াতের পরওয়া করেননি; বরং হযরতের জন্য সময় মত খাবার প্রস্তুত করে রেখেছেন। যখন দেখেছেন, ঐ লোক আসেনি, তাড়াতাড়ি খাবার পেশ করে দিয়েছেন হযরতের সামনে। হযরত খাবার খেয়েছেন এবং বে-ইনতেহা দুআ দিয়েছেন এবং বলেছেন- “নওয়াব ছাহাব ওয়াকেয়ী মুনতাযিম হ্যয়।” কারণ যদি তিনি ওই লোকের দাওয়াতের অপেক্ষা করতেন, তাহলে সময়মত খাবার দিতে পারতেন না। আর হযরতের কষ্ট হত। দেখুন, কেমন সমঝদারির কাজ করেছেন নবাব ছাহেব। তারপর নবাব ছাহেব বুদ্ধি বের করলেন, হযরতকে তো কিছু না কিছু দিতেই হবে। প্রয়োজনে কোনো কৌশলে হলেও। তাই বললেন-
حضرت! ہمارے خاندان میں دستور ہے، لڑکے کو جب'بسم اللہ' کرایا جاتا ہے تو کچھ ہدیہ بھی دیا جاتا ہے۔ ہم چاہتے ہیں کہ آپ کے ہاتھ سے ہمارے لڑکوں کا 'بسم اللہ' ہو جاۓۓ، اور ہمارے خاندان کے رواج کے مطابق کچھ ہدیہ بھی دینا پڑتا ہے۔
হযরত বললেন-
ٹھیک ہے، میں سب کے سامنے آپ کا ہدیہ قبول کر لوں گا، اورتنہائی میں یہ ہدیہ واپس کر دوں گا۔
নবাব ছাহেব বললেন-
حضرت! ہم سے بھول ہو گئی، معاف فرما ديجيے!
তাহলে দেখুন, আমাদের আকাবিরগণ কেমন মুসতাগনী ছিলেন!
বাহার হাল, আমাদের আকাবিরগণ মুসতাগনী ছিলেন। মুতাকাব্বির ছিলেন না। মুতাকাব্বির আর মুসতাগনী এক নয়। ভাই! মুতাকাব্বির নিজেকে বড় মনে করে, অন্যকে খাটো মনে করে। আর মুসতাগনী হল, যার কলবের মধ্যে গাইরুল্লাহ থেকে কিছু পাওয়ার আশা থাকে না। কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকে না। তার যত চাওয়া পাওয়া, সব আল্লাহর থেকে নেয়। এজন্য তাসাওউফের মাসআলা আছে, ইশরাফে নফস হলে কোনো কিছু গ্রহণ করা যাবে না। কেউ তাকে দাওয়াত দিয়েছে, এখন আগেই খেয়াল করে রেখেছে যে, দাওয়াত যেহেতু দিয়েছে, কিছু টাকাও দিবে রে! তাহলে এ টাকা নেওয়া যাবে না। কারণ ইশরাফে নফস হয়ে গেছে।
তাহলে কতটুকু ইসতিগনা ছিল তাঁদের অন্তরে! হযরত মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী হযরত থানভীকে প্রশ্ন করেছিলেন, মানুষ দাওয়াত দিয়ে যায়, পরে খেয়ালে আসে যে, দাওয়াত যেহেতু দিয়েছে হয়ত কিছু হাদিয়াও দিবে। তাহলে এটা ইশরাফে নফসের মধ্যে দাখেল হবে কি না? হযরত থানভী পাল্টা প্রশ্ন করেছেন-
حضرت! اگر ہدیہ نہ دے تو دل میں کوئی گرانی ہوتی ہے کیا؟
হযরত বললেন-
الحمد للہ، اگر کچھ نہ دے تو دل میں ادنی درجے کی گرانی پیدا نہیں ہوتی۔
হযরত থানভী রাহ. জওয়াব দিলেন-
الحمد للہ، حضرت! پھر یہ اشراف نفس میں داخل نہیں۔
কেমন সূক্ষ্ম নযর ছিল তাঁদের! বাহার হাল, আলেমের শান মুসতাগনী হওয়া। আলেম যদি মুসতাগনী হয় তাহলে তার শান বেড়ে যায়। আর যদি ইহতিয়াজ এবং লোভ-লালসা থাকে, তাহেল সে সহীহভাবে আলেম হতে পারবে না। তার শানও থাকবে না।
আসাতিযায়ে কেরাম আল্লাহ তাআলার নিআমত
আরেকটা কথা, আসাতিযায়ে কেরাম আল্লাহ তাআলার নিআমত। এ নিআমতের কদর করুন! আর নিজেকে মুতালাআর মধ্যে ডুবিয়ে রাখুন! এর কোনো বিকল্প নেই। যত বেশি মুতালাআ করবেন, তত অগ্রসর হবেন ইনশাআল্লাহ!
আর উস্তাযের শানে কখনো বেআদবি করবেন না! কখনো না!! উস্তাযের আদব, ইহতিরাম বে-ইনতেহা জরুরি। উস্তাযের মহব্বত এবং আজমত যে তালিবে ইলমের সীনায় যত বেশি হবে, তার কলবের মধ্যে ইলমে নবুওতের ফায়যান তত বেশি হবে। আর যদি বেআদবি হয় তো সব শেষ! তখন যেহেন-যাকাওয়াতও কাজে আসবে না। এর বহু ঘটনা এবং মেছাল আছে। সেগুলো বলার এখন সময় নেই। মুখতাসার এতটুকু বললাম। হযরত শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রাহ. বলেছেন-
اگر دنیا میں چین وسکون سے رہنا ہے تو والدین کی خدمت کرو! اگر علم سے فائدہ اٹھانا ہے استاذ کا احترام کرو!
এজন্য আসাতিযায়ে কেরামকে সম্মান করতে হবে। কোনোভাবেই তাদের শানে বেআদবি করা যাবে না। এ দুটো বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন!
সময়ের মূল্য অনুধাবন করুন
আর ভাই! সময় বড় দামি সম্পদ। হাদীসে স্পষ্ট আছে-
نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النّاسِ: الصِّحّةُ وَالْفَرَاغُ.
দুটো নিআমত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা হল, স্বাস্থ্য। আরেকটা হল, ফুরসতের সময়। অধিকাংশ মানুষ এ দুই নিআমতের ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত। স্বাস্থ্যের কদর করে না, আর ফুরসতের সময়ের দাম বোঝে না। কাজেই নিজেকে দামি বানাতে হলে সময়ের কদর করতে হবে। সময়কে কাজে লাগাতে হবে। সময় নষ্ট করা যাবে না। এর উত্তম বুদ্ধি হল, চব্বিশ ঘণ্টার নেযামুল আওকাত তৈরি করে ফেলবেন! তাহলে একটা সেকেন্ডও নষ্ট হবে না। যে তালিবে ইলম যত বেশি সময়কে কাজে লাগাতে সক্ষম হবে, সে তত বেশি নিজেকে দামি বানাতে সক্ষম হবে। আর যে তার উমরে আযীযকে নষ্ট করবে গল্পে গল্পে, আর হাসি তামাশায় এবং রং-ঢংয়ে, সে কিছুই বনবে না। এজন্য সময়কে কাজে লাগাবেন! সময় নষ্ট করবেন না! আল্লাহ পাক এ প্রতিষ্ঠানকে কবুল করুন! এর সকল জরুরত তার গায়েবি খাযানা থেকে পুরা করে দিন- আমীন!
মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব এবং তাঁর বড় ভাই মুফতী আব্দুল্লাহ ছাহেবসহ আরো যে সকল আসাতিযায়ে কেরাম এখানে কাজ করছেন, আল্লাহ পাক সবাইকে সিহহাত ও তনদুরুসতী দান করুন- আমীন! সকলের হায়াতের মধ্যে বরকত দিন! আরো বেশি বেশি কাজ করার তাওফিক দান করুন- আমীন!
আমরা যারা ছাত্র হিসেবে আছি, আল্লাহ পাক সবাইকে ইলমে নাফে‘ দান করুন! ইলমে গায়রে নাফে‘ থেকে হেফাযত করুন- আমীন!
ইলমে নাফে‘র জন্য চারটি শর্ত
ইলমে নাফে‘র জন্য চার শর্ত। ১. ফাহমে সহীহ। আর ফাহমে সহীহ হয় না দুই কারণে। গবী হওয়া অথবা কাজরো হওয়া। ২. ইয়াকীনে মুহকাম। ইলম হাসিলের সাথে সাথে ইলমের উপর ইয়াকীন হতে হবে। ইলম আছে; ইয়াকীন নেই। এটা ইলমে নাফে‘ নয়। এজন্য আহলুল্লাহ, আহলে দিল এবং আহলে ইয়াকীনের সোহবত লাগবে। ৩. আযমে কবী; দৃঢ় সংকল্প। যা শিখেছি সে মোতাবেক আমল করা। ৪. মুজাহাদায়ে কাহেরা। অর্থাৎ, নফসের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়ে অটল অবিচল থাকা। শয়তান এবং নফস, এ দুটো মানুষকে দিয়ে গুনাহের কাজ করায়। এজন্য আমাকে আযম করতে হবে যে, শয়তান ও নফস যতই চেষ্টা করুক, এগুলোর ধোঁকায় পড়ে গোনাহ করব না। এ ব্যাপারে মুজাহাদায়ে কাহেরা এবং মুজাহাদায়ে গালেবা লাগবে। যেন শয়তান এবং নফস মাগলূব হয়ে যায়। আর আপনি গালেব এবং কামিয়াব হতে পারেন। তাহলে ইলমে নাফে‘ পাবেন। ফকীহুল উম্মাহ হযরত মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী রাহ. বলেছেন, ইলমে নাফে‘ পেতে হলে এ চার শর্ত জরুরি। নবী আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম ইলমে নাফে‘র জন্য দুআ করেছেন। ইলমে গায়রে নাফে‘ থেকে পানাহ চেয়েছেন। আল্লাহ পাক সব ভাইকে ইলমে নাফে‘ দান করুন- আমীন! ইলম মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন! ইলমের যথাযথ কদর করার তাওফিক দান করুন!
আকাবিরে দেওবন্দকে জানুন
আর আকাবিরে দারুল উলূম দেওবন্দকে বোঝার জন্য আকাবিরের জীবনী, মালফুযাত, মাকতুবাত, মাওয়ায়েজ, এ চার জিনিস মুতালাআ করবেন! আলহামদু লিল্লাহ, এখন তো এসব মওযুর ওপর কিতাব পাওয়া যাচ্ছে। এর কোনো বিকল্প নেই। যদি আকাবিরে দেওবন্দের জীবনী, মাকতুবাত, মালফুযাত এবং মাওয়ায়েজের ব্যাপক মুতালাআ করেন, তাহলে যেহেনসাযী হবে। ফিকির সহীহ হবে। আর তা না হলে, কওমী মাদরাসায় পড়েও গায়রে মুকাল্লিদ হয়ে যেতে পারে! কওমী মাদরাসায় পড়েও -আল ইয়াযু বিল্লাহ- কাদিয়ানী হয়ে যেতে পারে! কওমী মাদরাসায় পড়েও আল্লাহ মাফ করুন, সা‘দপন্থী হবে। আরো বিভিন্ন ঝামেলা মাথায় ঢুকবে। কারণ আকাবিরের ফিকির পায়নি। আর আকাবিরের ফিকির জানতে হলে, বুঝতে হলে, আকাবিরের জীবনী, মাওয়ায়েজ, মাকতুবাত ও মালফুযাত, এগুলোর ব্যাপক মুতালাআ করুন!
আল্লাহ পাক সবাইকে আকাবির সম্পর্কে জানার এবং বোঝার তাওফিক দান করুন- আমীন!
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
[মুসাজ্জিলা থেকে পত্রস্থকরণ :
মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম।
বয়ানের তারিখ :
১ মুহাররম ১৪৪০ হিজরী/১২-০৯-২০১৮ ঈসাব্দ]