Zilqad 1440   ||   July 2019

হাসানের স্বপ্ন

মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর

শায়েখ আবু তালহা। প্র্রতিদিন এশার পর তালিবে ইলমদের নিয়ে বসেন। তাদের সারাদিনের পড়াশোনার কারগুজারী শোনেন। মাঝে মাঝে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেন। কখনো কখনো শোনান সালাফের বিভিন্ন ঘটনা। ভারি মজার সে মজলিস।

আজও তিনি বসেছেন তালিবে ইলমদের নিয়ে। সংক্ষিপ্ত কারগুজারী শোনার পর বললেন-

তোমরা যে ইলমের পথে মেহনত করছ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান পথ। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পথকে ‘সাবীলুল্লাহ’ বলেছেন। সাবীলুল্লাহ মানে ‘আল্লাহর রাস্তা’। হাদীস শরীফে এসেছে, যে ইলম অর্জনে বের হয় সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৪৭

তাই এর যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিত।

এই পথ একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি তা সংবেদনশীলও বটে। তোমরা হয়ত ইমাম আবু ইউসুফ রাহ.-এর নাম শুনেছ। তিনি বলেছেন- ইলম এতটাই স্পর্শকাতর যে, তুমি তোমার সবটুকু তাকে না দেওয়া পর্যন্ত সে তোমাকে কিছুই দিবে না। তোমার সবটুকু যদি তাকে দিয়ে দাও তবে সে তোমাকে কিছু দিলে দিতেও পারে। -তারীখে বাগদাদ ১৬/৩৫৯; আলমুনতাযাম, ইবনুল জাওযী ৯/৭৪, ১১/৬৬

যুগে যুগে যারা এই পথে বড় হয়েছেন চেষ্টা-শ্রম, মেহনত-মোজাহাদা এবং ত্যাগ ও কুরবানীর বদৌলতেই বড় হয়েছেন। চেষ্টা ও মেহনত এবং ত্যাগ ও কুরবানী ছাড়া জীবনে কিছু হওয়া যায় না।

আজ থেকে অনেক আগের কথা। এক হাজার বছরেরও আগের কথা। খোরাসানের নাসা শহরে বড় একজন মুহাদ্দিস ছিলেন- হাসান ইবনে সুফিয়ান আননাসাবী। ৩০৩ হিজরী সনে ৯০ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

মুহাদ্দিস হাসান ইবনে সুফিয়ানের নাম বলতেই হাসানের কানদুটো খাড়া হয়ে গেল। আরে আমার নামে উস্তাদজী আবার কার গল্প শোনাচ্ছেন! নড়ে চড়ে বসল সে। গল্পের ঘ্রাণ পেয়ে অন্যান্য তালিবে ইলমরাও উস্তাদজীর আরো কাছাকাছি হয়ে বসল।

উস্তাদজী বলতে লাগলেন- মুহাদ্দিস হাসান ইবনে সুফিয়ান অনেক কষ্ট করে হাদীস সংগ্রহ করেছেন। দূর-দূরান্ত সফর করে ইলম হাসিল করেছেন। বহু কুরবানী করে কিছু মধু সংগ্রহ করেছেন- ইলমের মধু। তাই তার কাছে ছুটে আসত দূর দূর দেশ থেকে মৌ-ভোমরার দল; ইলমের মৌ- ভোমরা। হাদীস সংগ্রহ করতে, ইলম হাসিল করতে।

একদিন তিনি উপস্থিত তালিবে ইলমদের সবক পড়ানোর ফাঁকে শোনালেন নিজের জীবনের কুরবানীর একটি গল্প। সে এক বিরাট দাস্তান!

-আচ্ছা, আজ তো রাত হয়ে গেছে। আরেকদিন শোনাব- ইনশাআল্লাহ। তোমরা মনে করিয়ে দিও- ঠিক আছে! উস্তাদজী ঘড়ি দেখতে দেখতে বললেন।

: না না উস্তাদজী! রাত যতই হোক আমরা শুনব। আপনার যদি কষ্ট না হয় তাহলে আমরা শুনতে আগ্রহী। সবাই সমস্বরে বলে উঠল।

-হাসান কী বলে? বলব, হাসান ইবনে সুফিয়ানের গল্পটা? উস্তাদজী হাসানের মতামত জানতে চাইলেন।

হাসান কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল। স্মিত হেসে মাথা নীচু করে মৃদুস্বরে বলল-

: জী উস্তাদজী।

: উস্তাদজী! মুহাদ্দিস হাসান ইবনে সুফিয়ানের গল্প তো হাসানই সবার আগে শুনতে চাইবে। কয়েকটি কণ্ঠ একযোগে বলে উঠল।

- বেশ! তাহলে কিন্তু কেউ ঝিমুতে পারবে না। উস্তাদজী শর্ত জুড়ে দিলেন।

: জী উস্তাদজী, আমরা রাজি।

বড় বড় চোখ করে সবাই তাকিয়ে আছে উস্তাদজীর দিকে। উস্তাদজী বলতে লাগলেন-

মুহাদ্দিস হাসান ইবনে সুফিয়ান তার ছাত্রদেরকে নিজের জীবনের কুরবানীর এ ইতিহাস শোনাতে গিয়ে বলছিলেন-

আমি যখন যুবক তখন ইলম হাছিলের জন্য আমাকে বহু দূর দারাজের সফর করতে হয়েছে। যেখানেই ইলমের সন্ধান পেয়েছি সেখানেই ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।

একবার শুনলাম, মিশরে একজন বড় শায়েখ আছেন। অনেক সহীহ হাদীসের সম্ভার রয়েছে তার সংগ্রহে। সনদ বেশ উঁচু। ছুটে গেলাম তাঁর সোহবতে। শায়েখ আমাদের হাদীস লেখাতেন। শায়খের কাছে থেকে থেকে আমাদের বেশ সময় কেটে গেল।

আমরা ছিলাম একসাথে নয় বন্ধু। সঙ্গে অর্থ যা ছিল ধীরে ধীরে সব ফুরিয়ে গেল। কিন্তু আমাদের হাদীস সংগ্রহ করা শেষ হল না। কী করা যায়? উপায়ান্তর না দেখে আমাদের জিনিসপত্র একটি একটি করে বিক্রি করে দিতে লাগলাম। একপর্যায়ে পরনের কাপড়টা ছাড়া বাকি সব বিক্রি করে দিতে হল। এরপর অবস্থা এমন হল যে, একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করার মতো অর্থও আমাদের কাছে আর রইল না। এখন আর কী করা? ক্ষুধাকে সঙ্গী করেই দিনগুজরান করতে লাগলাম। কিন্তু একেবারে না খেয়ে আর কতদিন থাকা যায়! তবে থাকা না গেলেও বাস্তবতা হল, এভাবে কেটে গেল এক দিন-দুদিন-তিন দিন। তৃতীয় দিন আমাদের হাত পা যেন অবশ হয়ে আসছিল। নড়াচড়ার শক্তিটুকুও আমরা হারিয়ে বসলাম।

বলতে বলতে উস্তাদজী আবু তালহার কণ্ঠ ক্রমে ভারি হয়ে এল। তিনি আর বলতে পারছেন না। মাথা নীচু করে রইলেন। ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুুলি দিয়ে ডানচোখ আর অন্যগুলি দিয়ে বামচোখ ধরে রেখেছেন। তালিবে ইলমদের চোখগুলোও ছলছল করছে। হাসানও সবকিছু ঝাপসা দেখছে।

একটু পর সে অনুভব করল তার গালে অশ্রæর ধারা।

পাশে রাখা টিস্যুবক্স থেকে দুটি টিস্যু নিয়ে চোখ মুছে উস্তাদজী কাঁপাকাঁপা স্বরে বলতে লাগলেন-

প্রচÐ ক্ষুধায় কাতর। কারো কাছে কিছু চাইবেন- তা-ও পারছিলেন না। গায়রতে ভীষণভাবে বাধা দিচ্ছিল। নয়জনের কারো মনই তাতে সম্মত হচ্ছিল না। লজ্জার পুরু আবরণ তাদেরকে আবৃত করে রেখেছিল। কিন্তু যেভাবেই হোক আজকে তাদেরকে কিছু না কিছু করতেই হবে।

উস্তাদজী বলে যাচ্ছেন আর তার চোখ থেকে অশ্রæ ঝরছে। উস্তাদজী বলতে লাগলেন-

পরামর্শে সিদ্ধান্ত হল, আমরা কাগজে নাম লিখে কোরা (লটারি) করব। যার নাম আসবে সে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবে।

আল্লাহর ইচ্ছা! লটারিতে যার নাম উঠল তিনি হাসান ইবনে সুফিয়ান। হাসান ইবনে সুফিয়ানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। আয় আল্লাহ, এক পরীক্ষার উপর আরেক পরীক্ষা! আমি কীভাবে কী করব! কার কাছে কী বলব!!

চলে গেলেন মসজিদের এক কোনায়। একেবারে জায়গামত। হাত বেঁধে দাঁড়ালেন আল্লাহর সামনে। অত্যন্ত খুশূ-খুযূর সাথে আদায় করলেন দুই রাকাত। আল্লাহকে মন ভরে ডাকলেন। এতটুকু হয়ে চাইলেন। কেঁদে কেঁদে বুক ভাসালেন। আল্লাহ পাক শুনলেন সেই ডাক।

মসজিদে প্রবেশ করল সুঠামদেহী এক যুবক। লম্বা গড়ন। ফর্সা চেহারা। পরিপাটি বেশভূষা । ঘ্র্রাণে মৌ মৌ করছে তার আশপাশ। অবয়ব থেকে ঠিকরে পড়ছে আভিজাত্যের দ্যুতি। সাথে খাদেম। কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল-

من منكم الحسن بن سفيان؟

- হাসান ইবনে সুফিয়ান কে? ভাই!

: জী, আমিই হাসান ইবনে সুফিয়ান।

সিজদা থেকে মাথা তুলে বললেন তিনি।

-এখানকার আমীর ‘ইবনে তুলুন’ আমার বন্ধু। তিনি আপনাদেরকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সময়মত আপনাদের খোঁজ-খবর নিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আপাতত আমাকে পাঠিয়েছেন আপনাদের সাথে দেখা করতে। আগামীকাল তিনি নিজেই আসবেন আপনাদের কাছে। যথাসময়ে আপনাদের খেয়াল করতে না পারায় তিনি অনুতপ্ত।

এ বলে যুবক নয়জনের জন্য নয়টা পুঁটলি বের করে দিল। প্রতিটিতে একশ করে দীনার-স্বর্ণমুদ্রা।

হযরত হাসান ইবনে সুফিয়ান কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-

: ভাই! কী বিষয় একটু খুলে বলবেন কি?

অনুরোধের পর যুবক বলতে আরম্ভ করল-

এখানকার আমীর ‘ইবনে তুলুন’ আমার বন্ধু। আমরা সম্পর্কে আত্মীয়ও বটে। আজ সকালে যখন আমি তার দরবারে যাই, তিনি সবাইকে বললেন, আজকের দিনটা আমি একা একা কাটাতে চাচ্ছি। আপনারা বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম করতে পারেন। আমাকেও বললেন একই কথা।

আমরা যার যার ঘরে ফিরে আসি। ঘরে এসে বসতে না বসতেই আমীরের খাদেম এসে হাজির। বলল- জাহাঁপনা আপনাকে এখনই তলব করছেন।

কী ব্যাপার! আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। মাত্রই না পাঠিয়ে দিলেন। এখন আবার আসতে না আসতেই ডেকে বসেছেন। দ্রæত গেলাম তার কাছে। গিয়ে দেখি ঘরে তিনি একা। ডানহাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে আছেন, যেন কেউ আঘাত করেছে। আমীর আমাকে বললেন-

-তুমি কি হাসান ইবনে সুফিয়ান ও তার সাথীদের চেন?

: না তো!

-আচ্ছা, অসুবিধে নেই। এই নাও দীনারের থলে। অমুক এলাকায় গিয়ে দেখবে এরকম এরকম একটি মসজিদ। ওখানে হাসান ইবনে সুফিয়ান ও তার সাথীরা অবস্থান করছেন। তিন দিন যাবত তারা না খাওয়া। খুব কষ্টে তাদের দিন কাটছে। আমার সালাম বলে এগুলো তাদেরকে দিও। বলো যে, আগামীকাল আমি তাদের খেদমতে হাজির হব।

: হঠাৎ করে এরকমভাবে...?

-আরে, তোমাদেরকে পাঠিয়ে দেওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিব বলে ঘরে এলাম। যেই না চোখটা লেগে আসল- দেখি, শূন্যে এক ঘোড়সওয়ার ঘোড়া ছুটিয়ে আসছে। মাটিতে যেভাবে ঘোড়া ছোটায় সেভাবেই। আমি তো অবাক। দেখি, ঘোড়া ছুটিয়ে সে আমার দিকেই আসছে। আসতে আসতে একেবারে ঘরের দরোজার কাছে চলে এল সে। তার হাতে ছিল বর্শা। এর উল্টো দিক দিয়ে সে আমার কোমরে খোঁচা দিয়ে বলে- যা তাড়াতাড়ি, হাসান ইবনে সুফিয়ান ও তার সাথীদের খবর নে। যা যা, ওঠ। তাড়াতাড়ি যা। তিন দিন যাবত তারা ঐ মসজিদে না খেয়ে পড়ে আছে। তোর এখনও খবর নেই! যা, ওঠ জলদি কর।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে?

বলল, আমি রেযওয়ান। জান্নাতের ফেরেশতা।

ঘুম থেকে উঠে দেখি কোমরে সেই খোঁচার কী যে ব্যথা! তুমি তাড়াতাড়ি এগুলো তাদের কাছে পৌঁছাও। নইলে আমার ব্যথা মনে হয় সারছে না।

যুবক হাসান ইবনে সুফিয়ানকে বললেন, এই হল ঘটনা। আর এ সুবাদেই আপনার কাছে আসা।

উস্তাদজী তালিবে ইলমদের উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করেন-

-এই তোমরা ঘুমিয়ে পড়নি তো?

: জী না, উস্তাদজী! আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনছি।

-বেশ, তাহলে বল তো, আল্লাহ তাআলার এই নিআমত পাওয়ার পর হযরত হাসান ইবনে সুুফিয়ান ও তার সাথীদের হালত কেমন হতে পারে?

: তারা অবশ্যই খুশি হয়ে থাকবেন।

-হাঁ, হযরত হাসান ইবনে সুফিয়ান বলেন, এতে একদিকে আমরা যেভাবে আশ্চর্য হয়েছি, অপরদিকে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করেছি। আল্লাহর নিআমত পেয়ে আল্লাহর প্রতি আরো রুজু হয়েছি। নিজেদের ইছলাহের ব্যাপারে আরো যতœবান হয়েছি।

এরপর...! এরপর হযরত হাসান ইবনে সুুফিয়ান ও তার সাথীরা পরামর্শ করে বললেন- আমাদের জন্য এখানে আর থাকা ঠিক হবে না। আমীর আমাদের সন্ধান পেয়ে গেছেন। আগামীকাল যদি তিনি আসেন তাহলে এলাকাতে একটা হৈ চৈ পড়ে যাবে। আর আমাদের মনেও এক ধরনের রিয়া কাজ করবে। চলো আমরা রাতে রাতেই কেটে পড়ি।

উস্তাদজী বললেন, তোমরা হয়ত বুঝতে পারছ না- কী পরিমাণ তাকওয়া ও ইখলাছ থাকলে মানুষ এমনটা করতে পারে। এসব গুণ ও ছিফাতের বদৌলতে কী ফলাফল দাঁড়িয়েছে?

হযরত হাসান ইবনে সুুফিয়ানের ভাষ্যমতে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঐ কাফেলার প্রত্যেককে ইলমের জন্য কবুল করেছেন। ইলমের দিগন্তে এক একটি নক্ষত্র হয়ে তারা জ্বলজ্বল করেছেন।

উস্তাদজীর এ আলোচনায় তালিবে ইলমদের দেহমনে এক ধরনের শিহরণ খেলে গেল।

উস্তাদজী বলতে লাগলেন-

সে যুগের আমীররাও কত ভালো ও নেককার ছিলেন! আলেম-তালিবে ইলম ও দ্বীনদারদের খেদমত করতে পারাকে নিজের জন্য সৌভাগ্য মনে করতেন। সেই ‘ইবনে তুলুন’ কথামত পরদিন ঐ মসজিদে এসে হাজির।

এসে দেখেন মসজিদ খালি! খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলেন, হযরত হাসান ইবনে সুফিয়ানের সেই কাফেলা গতরাতেই এখান থেকে চলে গেছে।

আমীর তাদের ইখলাছ ও প্রচার-বিমুখতা বুঝতে পারলেন। চিন্তা করলেন, কীভাবে আহলে ইলমের খেদমত করা যায়? যেই ভাবা সেই কাজ। মসজিদের আশপাশের বিরাট ভূখÐ খরিদ করে ওয়াকফ করে দিলেন- সেই মসজিদের ব্যয় নির্বাহের জন্য এবং এখানে যত তালিবে ইলম, আলেম-উলামা এবং মুসাফির কাফেলা অবস্থান করবে সকলের জরুরত পুরা করার জন্য। যাতে পরবর্তীতে আর কাউকে এরকম কষ্ট করতে না হয়। [দ্রষ্টব্য : তারীখে দিমাশক ১৩/১০৩-১০৫; বুগয়াতুত তলব ফী তারীখি হালাব ৫/২৩৭১,২৩৭২; সিয়ারু আলামিন নুবালা, যাহাবী ১৪/১৬১, ১৬২]

রাত অনেক হয়েছে। সবাই শুয়ে পড়েছে। হাসানও বিছানায় শোয়া। অন্যান্য দিন শোবার আগেই ঘুমিয়ে পড়ত সে। নানা স্বপ্ন দেখতে দেখতে পার হয়ে যেত তার লেপমুড়ো রাত- শীতের সকালে আগুন পোহাচ্ছে, গরম গরম ভাপা পিঠায় ফুঁ দিচ্ছে, পড়ন্ত বিকেলে বাড়ির দক্ষিণের আমবাগানে পায়চারি করছে, জোসনা রাতে মা দুধ-কলা ভাত সাজিয়ে ডাকাডাকি করছেন, আরো কত্ত কী! কিন্তু আজকের রাতটা তার ভিন্নরকম লাগছে। ইলম, মূল্যবান সম্পদ, মেহনত করতে হবে, আল্লাহর রাস্তা, অত্যন্ত স্পর্শকাতর, মুহাদ্দিস হাসান ইবনে সুুফিয়ান, দেশ থেকে দেশান্তর, ইলমের জন্য সফর, ক্ষুধা, কষ্ট, এত এত কুরবানী, আল্লাহর নুসরত... এই একঘোরেই বিভোর হয়ে রইল হাসান।

থেকে থেকে মনে পড়তে থাকল মা‘র সাথে করা ওয়াদার কথা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মা মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন- ‘বাবা, মেহনত করে পড়ালেখা করো। বড়দের কথামত চলো। আল্লাহ পাক তোমাকে বড় বানাবেন।’ হাসান মাথা কাত করে জবাব দিয়েছিল। মুখফুটে কিছু বলতে পারেনি। ভেতরটা তার ডুকরে উঠেছিল। চোখদুটো ঝাপসা হয়ে এসেছিল।

হাসান চিন্তা করতে লাগল, তাহলে আমাকেও কি ৩০৩ হিজরীর সেই মুহাদ্দিস হযরত হাসান ইবনে সুুফিয়ানের অনুসরণে মেহনত করতে হবে? কে যেন বলে উঠল- হাঁ, তবেই তুমি কিছু হতে পারবে।

এরই মধ্যে মীনার থেকে ভেসে এল মুয়াযযিনের সুমধুর ধ্বনি- আছ ছালাতু খাইরুম মিনান নাওম।

 

advertisement