ডাকাত নিয়ে গেল খাতার ইল্ম
বন্ধুরা! তোমরা নিশ্চয়ই ইমাম গাযালির নাম শুনেছ। কিন্তু তোমরা কি জান কীভাবে ইমাম গাযালি এত বড় আলিম হয়েছেন। কীভাবে তিনি এত উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছেছেন। শোন তাহলে-
ইমাম গাযালির মাতৃভ‚মি তুস। তাঁর পিতা ছিলেন একজন দরিদ্র মানুষ। তবে খুব নেক ও সৎ ছিলেন। পশম দিয়ে সুতা তৈরি করে বিক্রি করতেন। তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলত। যখন তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল তখন তিনি তাঁর এক বন্ধুকে ডেকে শিশু গাযালি ও তাঁর ভাই আহমাদকে তার হাতে তুলে দিলেন। পিতার মৃত্যুর পর লোকটি তাঁদের যথাসাধ্য লালন-পালন করল। একপর্যায়ে পিতার রেখে যাওয়া সম্পদ শেষ হয়ে গেল। তখন লোকটি তাদের ডেকে বলল, শোন! তোমাদের পিতার রেখে যাওয়া সম্পদ শেষ হয়ে গেছে। আর আমি গরিব মানুষ, তাই আমার মত হল তোমরা মাদরাসায় ভর্তি হয়ে যাও। সেখানে তোমরা ইলম শিখতে পারবে এবং তোমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও সেখানে হবে। এভাবে দারিদ্র্যই তাদের ইলমের পথ সহজ করে দিল।
ইমাম গাযালি রাহ. শৈশবে ফিকহের কিছু অংশ পড়েছেন ইমাম আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ আর-রাযকানীর কাছে। তারপর তিনি জুরজান সফর করে আবু নসর আলইসমাঈলীর কাছে গেলেন এবং তার থেকে কিতাব কপি করলেন। তারপর তুসে ফিরে এলেন। ইমাম গাযালি রাহ. বলেন, পথে আমাদের উপর ডাকাতরা হামলা করল। ডাকাতরা আমার যা ছিল সব নিয়ে নিল। এরপর তারা চলে যেতে লাগল। আমি তাদের পিছু নিলাম, ডাকাত সরদার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ফিরে যাও নয়ত ধ্বংস হবে। আমি বললাম, সেই সত্তার শপথ, যার কাছে তোমরা শান্তি চাও, আমার কিতাব ফিরিয়ে দাও। এগুলো কপি করার জন্য এবং এগুলোর জ্ঞান আহরণের জন্য আমি সফর করেছি। ডাকাত হেসে দিল এবং বলল, এত কষ্ট করে তোমার লাভ কী হল, আমি তো তোমার থেকে তা ছিনিয়ে নিয়েছি। এখন তুমি ইলম-হারা হয়ে গেছ। তারপর ডাকাতরা তাঁকে কিতাবের ঝুড়ি ফিরিয়ে দিল। ইমাম গাযালি রাহ. বলেন, আল্লাহ তাআলা ডাকাতের মুখ দিয়ে এই কথাটি বের করেছেন- আমাকে বুঝানোর জন্য; যদি আমি কিতাবগুলো মুখস্থ করে ফেলতাম তাহলে আমার থেকে কিতাবগুলো ছিনিয়ে নিলেও আমি ইলম-হারা হতাম না।
ইমাম গাযালি রাহ. তুসে এসে তিন বছর অবিরাম মেহনত করে কিতাবগুলো মুখস্থ করে ফেললেন। গাযালি রাহ. বলেন, এখন যদি কেউ আমার থেকে কিতাবগুলো ছিনিয়ে নেয় তবু আমি ইলম-হারা হব না।
বন্ধুরা! একটু ভেবে দেখ, ইলমের জন্য ইমাম গাযালি রাহ.-এর কত ভালোবাসা ছিল। কিতাবের জন্য তাঁর টান ও মুহাব্বত কত গভীর ছিল। কিন্তু তা যদি ডাকাতরা নিয়ে যেত তাহলে তাঁর কী হত! কত কষ্ট স্বীকার করে তিনি তা অর্জন করেছিলেন। মুহূর্তে সব শেষ হয়ে যেত। আসলে ইলম হল, যা মানুষ অর্জন করে তার সীনায়; খাতা তো সহায়ক মাত্র।
বন্ধুরা দেখ, যখন তিনি তার এই ভুল বুঝতে পারলেন তখন অনেক মেহনত করলেন। এই মেহনত ও পরিশ্রমের দ্বারাই তিনি মর্যাদার উচ্চ শিখরে পৌঁছেছেন। আমরাও যদি চেষ্টা-মেহনত করি তাহলে আমরাও পারব তাঁর মত আলিম হতে। ইলমের রক্ষক হতে।