Zilqad 1439   ||   August 2018

ইসলামে অতিথিসেবার শিক্ষা

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে একবার এক লোক এসে বলল, আমি খুবই ক্ষুধার্ত। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে তাঁর কোনো এক স্ত্রীর কাছে খাবারের জন্যে পাঠালেন। কিন্তু তিনি বলে দিলেন- যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। এরপর আরেকজনের কাছে পাঠালেন। তিনিও একই উত্তর দিলেন। এভাবে একে একে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব স্ত্রীই একই কথা বললেন- যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। এরপর সাহাবায়ে কেরামের মজলিসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগন্তুককে দেখিয়ে ঘোষণা করলেন, আজকের এই রাতে কে তার মেহমানদারি করতে পারবে? আল্লাহ তাকে দয়া করবেন! এক আনসারি সাহাবী দাঁড়িয়ে গেলেন- আমি পারব! এরপর তিনি তার মেহমানকে নিয়ে বাড়ি চললেন। বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে বললেন, তিনি আল্লাহ্র রাসূলের মেহমান, তার আপ্যায়নের ব্যবস্থা কর। স্ত্রী বলল, আমার কাছে যে বাচ্চাদের জন্যে রাখা সামান্য খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই! সাহাবী বললেন, ঠিক আছে, তুমি ততটুকু খাবারই প্রস্তুত কর, বাতি জ্বালিয়ে দাও আর বাচ্চারা যখন রাতের খাবার চাইবে তখন তাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। মেহমান ঘরে এলে বাতি নিভিয়ে দেবে আর তার সামনে আমরা খাওয়ার ভান করব। তিনি যখনই খেতে যাবেন, তখনই তুমি বাতিটি ঠিক করার মতো কিছু একটা করতে গিয়ে তা নিভিয়ে দেবে।

এরপর এই পরিকল্পনা মোতাবেকই সবকিছু করা হল। খাবার প্রস্তুত করা হল। বাতি জ্বালানো হল। বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানো হল। মেহমান যখন খেতে যাবেন এমন সময় ঘরনি গিয়ে কৌশলে বাতিটি নিভিয়ে  দিল। আগন্তুক মেহমান দেখলেন, তার মেজবানও খাচ্ছে। তাই নিঃসঙ্কোচে তিনি খেয়ে নিলেন। কিন্তু আসলে তারা শুধু অন্ধকারে মেহমানের সামনে খাওয়ার ভান করছিল। পরিবারের সকলে সে রাতটি ক্ষুধার্তই কাটিয়ে দিল।

পরদিন সকালবেলা ওই সাহাবী  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে বললেন, তোমাদের দুজনের কা- দেখে আল্লাহ  মুগ্ধ হয়েছেন। তখন নাজিল হল পবিত্র কুরআনের এ আয়াত-

وَ یُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤی اَنْفُسِهِمْ وَ لَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ...

নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও তারা অন্যকে নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়। নিজ মনের কার্পণ্য থেকে যারা বেঁচে রইল তারাই তো সফলকাম। (সূরা হাশর (৫৯) : ৯) -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৭৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৫৪

ইসলাম আমাদেরকে এ অতিথিসেবাই শিক্ষা দেয়। তিনি একজন আনসারি সাহাবী ছিলেন। নাম আবু তালহা। তার আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের আয়াত নাযিল করলেন। আর এর মধ্য দিয়ে এ সাহাবী হয়ে উঠলেন আমাদের ইতিহাসের অংশ! পবিত্র কুরআনের এ আয়াত যথার্থ বুঝতে হলে তাঁর কাহিনীটি পড়তেই হবে।

হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিথিসেবাকে ঈমানের অংশই বানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ.

যে কেউ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন তার অতিথিকে সম্মান করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০১৮

খাবারের ব্যবস্থা করা অতিথিসেবার বলা যায় কেন্দ্রীয় বিষয়। আপ্যায়ন কেমন হবে- সে শিক্ষাও আমরা পবিত্র কুরআনে খুঁজে পাই। মহান নবী সায়্যিদুনা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে পাক কুরআনে। এক সুসংবাদ নিয়ে কয়েকজন ফেরেশতা মানুষের বেশ ধরে এসেছিলেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে। তিনি তাদেরকে মেহমান মনে করে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন। কুরআনের ভাষায় পড়–ন-

وَ لَقَدْ جَآءَتْ رُسُلُنَاۤ اِبْرٰهِیْمَ بِالْبُشْرٰی قَالُوْا سَلٰمًا قَالَ سَلٰمٌ فَمَا لَبِثَ اَنْ جَآءَ بِعِجْلٍ حَنِیْذٍ، فَلَمَّا رَاٰۤ اَیْدِیَهُمْ لَا تَصِلُ اِلَیْهِ نَكِرَهُمْ وَ اَوْجَسَ مِنْهُمْ خِیْفَة قَالُوْا لَا تَخَفْ اِنَّاۤ اُرْسِلْنَاۤ اِلٰی قَوْمِ لُوْطٍ،  وَ امْرَاَتُهٗ قَآىِٕمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنٰهَا بِاِسْحٰقَ  وَ مِنْ وَّرَآءِ اِسْحٰقَ یَعْقُوْبَ.

আমার ফেরেশতাগণ ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল। তারা ‘সালাম’ বলল। তিনিও বললেন, সালাম। অতপর তিনি অবিলম্বে একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন। এরপর তিনি যখন দেখলেন, তাদের হাত সেদিকে এগুচ্ছে না, তখন তাদের ব্যাপারে তাঁর খটকা লাগল এবং তাদেরকে তিনি ভয় করতে লাগলেন। তারা বলল, আপনি ভয় করবেন না, আমরা কওমে লুতের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। তাঁর স্ত্রী ছিল দাঁড়ানো, সে তখন হেসে উঠল। তখন আমি তাকে ইসহাকের এবং ইসহাকের পরে ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম। -সূরা হূদ (১১) : ৬৯-৭১

নবী হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আতিথেয়তার এ ঘটনাটির আরেকটি বিবরণ পবিত্র কুরআনেই লক্ষ করুন-

هَلْ اَتٰىكَ حَدِیْثُ ضَیْفِ اِبْرٰهِیْمَ الْمُكْرَمِیْنَ، اِذْ دَخَلُوْا عَلَیْهِ فَقَالُوْا سَلٰمًا  قَالَ سَلٰمٌ  قَوْمٌ مُّنْكَرُوْنَ، فَرَاغَ اِلٰۤی اَهْلِهٖ فَجَآءَ بِعِجْلٍ سَمِیْنٍ،  فَقَرَّبَهٗۤ اِلَیْهِمْ قَالَ اَلَا تَاْكُلُوْنَ...

তোমার নিকট কি ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে? তারা যখন তাঁর নিকট এল এবং ‘সালাম’ বলল, তখন সেও বলল, সালাম। (এরা তো) অপরিচিত লোক! এরপর সে দ্রুত সন্তর্পণে তাঁর পরিবারের নিকট গিয়ে একটি মোটা-তাজা (ভাজা) বাছুর নিয়ে এল এবং তাদের সামনে তা এগিয়ে দিয়ে বলল, আপনারা কি খাবেন না? (তাদেরকে না খেতে দেখে) তিনি তাদের পক্ষ থেকে শঙ্কা অনুভব করলেন। তারা বলল, আপনি ভয় করবেন না। আর তারা তাঁকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিল।... -সূরা যারিয়াত (৫১) : ২৪-২৮

দুটি বিবরণ একত্রিত করলে আমরা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এ সংক্ষিপ্ত ঘটনার ভেতর দিয়েও অতিথিসেবার বেশ কয়েকটি দিক খুঁজে পাব। যেমন :

এক. অতিথিকে খাবারের কাছে নিয়ে না গিয়ে বরং তার কাছে খাবার নিয়ে আসা। নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এখানে তা-ই করেছেন।

দুই. দ্রুত খাবারের ব্যবস্থা করা। প্রথম বর্ণনায় স্পষ্টই বলা হয়েছে- তিনি খুব দ্রুতই একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এসেছিলেন।

তিন. অতিথিকে না জানিয়ে খাবার উপস্থিত করা। সূরা যারিয়াতে এ প্রসঙ্গে فراغ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থই হচ্ছে, তিনি সন্তর্পণে চলে গেলেন। আর এরপরই তিনি খাবার নিয়ে উপস্থিত হলেন। অতিথিকে প্রথমে খাবারের কথা বলতে গেলে তিনি কখনো বিব্রতও হতে পারেন। কখনো সংকোচের কারণেও খাবার আনতে বাধা দিতে পারেন। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর মেহমানদের সে সুযোগ দেননি।

চার. সাধ্যমত ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা। খাবারের বর্ণনায় এক আয়াতে বলা হয়েছে মোটা-তাজা বাছুরের কথা, আরেক আয়াতে ভুনা করা বাছুরের কথা। এক আয়াতে বলা হচ্ছে খাবারের উৎকৃষ্ট ও আকর্ষণীয় মানের কথা, আরেক আয়াতে পরিমাণ ও মান উভয়ের কথা। মেহমানের জন্যে খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাই সাধ্যমত ভালো এবং পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করা উচিত। খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সময় ও পরিবেশও অবশ্য-বিবেচ্য বিষয়। দূর থেকে সফর করে আসা পরিশ্রান্ত কোনো অতিথিকে ভারি কোনো খাবার না দিয়ে ক্লান্তি দূর করে এমন কিছু দিয়ে প্রথমে আপ্যায়ন করা যেতে পারে। কখনো এক গ্লাস ঠা-া পানি বা শরবতও দামি দামি অনেক খাবারের তুলনায় অধিক তৃপ্তিদায়ক হতে পারে। তাই আপ্যায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ রাখতেই হবে।

পাঁচ. সুন্দরভাবে খাবার পরিবেশন করা। কুরআনের ভাষ্য হচ্ছে- তিনি তাদের দিকে খাবার এগিয়ে দিয়ে বললেন, আপনারা কি খাবেন না? এভাবেই তিনি তাদেরকে কোমলভাবে খাবার গ্রহণের কথা বলেছিলেন।

ছয়. অপরিচিত অতিথির মেহমানদারিতেও ত্রুটি না করা। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যাদের মেহমান ভেবেছিলেন, তারা তো আসলে ছিলেন ফেরেশতা। তিনি যে তাদের চিনতেন না, সে কথাও স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। এই অপরিচিতি সত্ত্বেও তিনি তাদের আতিথেয়তায় কোনো ত্রুটি করেননি। মেহমানদারির সকল আদব তিনি এই অপরিচিত মেহমানদের সঙ্গেও রক্ষা করেছেন।

অতিথিসেবার একটি বড় বিষয়- তার খাবারের ব্যবস্থা করা। কথা এতটুকু ঠিক। কিন্তু তাই বলে কেবল এ খাবারের ব্যবস্থা করাই অতিথিসেবা নয়। যিনি অতিথি, সাধ্যমত তার সবরকম আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। কী শারীরিক আর কী মানসিক- কোনো দিক থেকেই যেন তাকে কোনোরূপ কষ্ট পোহাতে না হয়। তাকে যেন কোনোরূপ বিড়ম্বনা কিংবা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে না হয়; একজন মেজবানের জন্যে সেদিকে লক্ষ রাখাও জরুরি। বরং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। মোটকথা, আরামে রাখা এবং সম্মান করার যত পথ ও পন্থা, যথাসম্ভব সবই কাজে লাগাতে হবে অতিথির ক্ষেত্রে। এ সবকিছু মিলিয়েই পূর্ণতা পায় অতিথির আপ্যায়ন। পবিত্র কুরআন এবং প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত ও হাদীস আমাদেরকে এ শিক্ষাই দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِنّ لِزَوْرِكَ عَلَيْكَ حَقّا.

তোমার ওপর তোমার মেহমানদেরও হক রয়েছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৭৫

হযরত সালমান ফারসী রা. এবং হযরত আবুদদারদা রা.-এর মাঝে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে হযরত সালমান ফারসী রা. একদিন তার ভাই হযরত আবুদদারদা রা.-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেন। আবুদদারদা রা. তখন ভাইয়ের জন্যে নিজ হাতে খাবার প্রস্তুত করলেন। তার সামনে খাবার পরিবেশন করে বললেন, আপনি খান, আমি রোযা রেখেছি। কিন্তু হযরত সালমান ফারসী রা. বললেন , আপনি না খেলে আমি খাব না। হযরত আবুদদারদা রা. তখন মেহমানের সম্মান রক্ষার্থে রোযা ভেঙ্গে তার সঙ্গে খেয়েছেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৯

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত হাদীসে মেহমানের যে অধিকারের কথা বলেছেন, সে অধিকার পূর্ণ করতে গিয়েই তাঁর এক প্রিয় সাহাবী হযরত আবুদদারদা রা. সেদিন রোযা ভেঙ্গেছিলেন। বোঝা গেল, মেহমানের সঙ্গে বসে খাওয়াও মেহমানের একটি অধিকার। এটাও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ। তার সঙ্গে বসে খেলে সে একাকীত্ব অনুভব করবে না। খেতে লজ্জা ও সংকোচ বোধ করবে না। প্রসন্ন মন নিয়েই সে খেতে পারবে।

মেহমানের খাতিরে যে কোনো প্রকার কষ্ট স্বীকার করা, যেমন নিজে গিয়ে তার জন্যে বাজার থেকে খাবার কিনে আনা, প্রয়োজনে নিজ হাতে খাবার প্রস্তুত করার মধ্য দিয়েও তার প্রতি একপ্রকার সম্মান প্রদর্শন করা হয়। নিজের হাতের উপার্জিত খাবার, নিজের হাতে কেনা খাবার, নিজের হাতে রান্না করা খাবার ইত্যাদির স্বাদই যেন একটু ভিন্ন। নিজে খেতে ও কাউকে খাওয়াতেও এতে তৃপ্তি পাওয়া যায় বেশি। উপরোক্ত ঘটনাটিতেও আমরা এ দৃশ্য দেখতে পাই। হযরত আবুদদারদা রা. নিজ হাতে হযরত সালমান ফারসী রা.-এর জন্য খাবার প্রস্তুত করেছিলেন।

মেহমানের সঙ্গে বসে কথা বলাও মেহমানের একটি অধিকার। তাকে একাকী ঘরে বসিয়ে রেখে মেজবান যদি নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে এতে সে বিব্রত হতে পারে। মানসিক কষ্টের শিকার হতে পারে। তাকে সঙ্গ দিতে হবে। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোলাম হযরত ছাওবান রা. বর্ণনা করেছেন, একবার গ্রাম থেকে এক মেহমান আমাদের কাছে এল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে নিয়ে বাড়ির সামনে বসে দীর্ঘক্ষণ কথা বললেন। বিভিন্ন বিষয় তিনি নিজে থেকেই তার কাছে জানতে চেয়েছেন- ইসলাম গ্রহণ করার পর তারা এখন কেমন আছে ইত্যাদি। -আশশরীয়াহ, আজুররী পৃ. ৩৯৪

যখন বাইরের কোনো প্রতিনিধি দল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসত, তখন তিনি তাঁর কাছে থাকা সবচেয়ে সুন্দর কাপড়টি পরতেন। সাহাবীদেরকেও তা করতে বলতেন। হযরত জুনদুব রা. বর্ণনা করেন, একবার কিন্দার এক কাফেলা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসেছিল। তখন তাঁর পরনে ইয়ামেনি এক জোড়া কাপড় শোভা পাচ্ছিল। হযরত আবু বকর ও হযরত উমর রা.-ও সেদিন ইয়ামেনি কাপড় পরেছিলেন। -সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ৬/২৫৯

বোঝা গেল, ভালো কাপড় পরাও মেহমানের প্রতি একপ্রকার সম্মান। এতে মেহমান অনুভব করবে- মেজবান তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তাকে অনাকাক্সিক্ষত বিবেচনা করছে না।

সর্বশেষ মেহমানকে বিদায় দেয়ার সময় তার সঙ্গে একটু এগিয়ে যাওয়া উচিত। মেহমানের সঙ্গে ঘর থেকে বের হয়ে তাকে একটু হলেও এগিয়ে দিয়ে এলে সে তৃপ্ত হবে আতিথেয়তায়।

আসলে কথা কী, অতিথিসেবার মধ্যে মনের উদারতাই হচ্ছে বড় বিষয়। মেজবান বিবেচনা করবে- কী করলে তার মেহমান একটু বেশি আরাম বোধ করবে। সাধ্যমতো তার জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবে- এটা ঠিক। কিন্তু ভালো খাবারই শেষ কথা নয়। সাধ্যের খাবার যদি সাধারণও হয়, কিন্তু তার আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি না থাকে, তাহলে মেহমান এতে তৃপ্ত না হয়ে পারে না। আর যদি এর বিপরীত কিছু ঘটে, মেহমান তখন নিজেকে অপরাধীও মনে করতে পারে। হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার অভাবে তখন বড় বড় আয়োজনও মাটি হয়ে যেতে পারে।

 

advertisement