খোদায়ী ভাণ্ডার : যার রেটিং কখনো ডাউন হয় না
আমি একদিন (বিখ্যাত না‘তখাঁ) জুনায়েদ জামশেদকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মৌলবী সাহেব! আপনি গান গাওয়া ছেড়ে দিলেন কেন?’ সে আমার কথায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। অনেকক্ষণ পর্যন্ত সে হাসতে থাকল। আমি চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সে চশমা খুলে, টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ পরিষ্কার করল এবং হাসতে হাসতে উত্তর দিল, ‘দোস্ত! তুমি আমাকে যে ভঙ্গিতে মৌলবী সাহেব বলেছ, আমি এটাকে এনজয় করছি। আমাকে আরো কিছু সময় এনজয় করতে দাও। এরপর পুনরায় সে হেসে নিল। হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে চুপ হয়ে গেল। এরপর সে বলল, ‘দোস্ত! গান আমাকে খ্যাতি দিয়েছে। সম্মান দিয়েছে। সম্পদ দিয়েছে। গান আমাকে কেবল শান্তি ও স্বস্তি দিতে পারেনি। এ তো আমি পেয়েছি মৌলবী সাহেব হয়েই। আর এই শান্তি ও স্বস্তি লাভ করার পরই আমি বুঝতে পেরেছি, এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘নিআমত’। টাকা-পয়সা, ইজ্জত-সম্মান ও খ্যাতি এই তিনটি মিলেও শান্তি ও স্বস্তির সমান হতে পারে না। এরপর সে আবার হাসতে হাসতে বলল, আমি লন্ডনের সবচেয়ে বিখ্যাত স্টেডিয়াম ওয়েম্ব্লে (WEMBLEY)-এ সঙ্গীত শো করতে চাচ্ছিলাম, যেখানে বিশ্বসেরা তারকাদের সমাবেশ হয়। আমার বাসনা ছিল আমার তাঁবুটা হবে ঠিক মধ্যখানে আর অন্যান্য গায়ক, বাদক, অভিনেতাদের তাঁবু হবে ডানে-বামে, আশে-পাশে।
আমি ১৯৯২ সনে ওয়েম্ব্লে অনুষ্ঠিত তারকা সমাবেশে গিয়েছিলাম। আমি দেখলাম, ভারতের তারকা অমিতাভ বচ্চনের তাঁবুটা ঠিক মধ্যখানে। লোকেরা তার হাত চুম্বন করছিল। এতে সে খুবই আনন্দিত হচ্ছিল। লোকেরা তার সাথে ছবি তোলার জন্য একজন আরেকজনকে পদদলিত করছিল। আমি তার এ সম্মান দেখে মনে মনে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম, আমিও কি কোনোদিন খ্যাতির এমন উচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারব? আমিও কি এমন সম্মান এবং লোকদের হৃদয় উজাড় করা এমন ভালোবাসা পাব?
আমার মনের বাসনা পূরণ হল। আমি ওয়েম্ব্লে পৌঁছলাম। আমার তাঁবু ঠিক ঐ জায়গায় স্থাপন করা হল, যেখানে অমিতাভ বচ্চনের তাঁবু ছিল। যেখানে সে রাত কাটিয়েছিল। যুবক-যুবতীরা সেদিন আমার সঙ্গে ছবি তোলার জন্যে ওভাবেই একে অপরের সাথে ধাক্কাধাক্কি করছিল। সেদিন আমি খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম। আমি ভেতরে ভেতরে আপ্লুত হচ্ছিলাম। আমি কয়েকদিন পর্যন্ত এ আনন্দে ডুবে থাকলাম। একথা বলার পর জুনায়েদ জামশেদ চুপ হয়ে গেল। অনেকক্ষণ পর্যন্ত সে কী যেন চিন্তা করল। এরপর সে মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে দেখল এবং বলল, ‘কিন্তু এরপর এক নতুন চিন্তা আমার আনন্দের জায়গা দখল করে নিল। আমি অনুভব করলাম এবং বুঝতে পারলাম, আমার সফলতা আমাকে সম্মান, সম্পদ ও খ্যাতি তো দিয়েছে, কিন্তু শান্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। আমি সাথে সাথে এটাও বুঝতে পারলাম, শান্তি ও স্বস্তি- সম্পদ, খ্যাতি এবং সম্মানের চেয়েও দামী। আমার এখন এই বড় ও দামী জিনিসটি লাভের চেষ্টা করা দরকার।
আমি জুনায়েদ জামশেদের কথা চুপচাপ শুনছিলাম। সে আরো বলল, আমি এরপরও গান গেয়েছি, মানুষও আগ্রহভরে আমার গান শুনেছে। আমার গান শুনে তারা উল্লসিত হত এবং আমার হাত চুম্বন করত। ‘দিল্ দিল্ পাকিস্তান’ ও ‘সালুনী, সালুনী ছি মাহবুবা’ শীর্ষক আমার গান আমার চিহ্ন, আমার পরিচয়ের রূপ লাভ করল। আমি যেখানেই যেতাম লোকেরা আমাকে অনুরোধ করত, ‘জিয়ে জিয়ে পাকিস্তান’ গানটি অথবা ‘সালুনী, সালুনী... গানটি একটু শুনিয়ে দিন। আমি গুন গুন করতে করতে সেখান হতে সামনে অগ্রসর হতাম। কিন্তু সে সময় আমি কেবল সম্মান ও খ্যাতি নয়, বরং এর সাথে সাথে শান্তি ও স্বস্তিও খুঁজছিলাম। আল্লাহ পাক আমার প্রতি অনুগ্রহ করলেন। শান্তি ও স্বস্তি নামক এ নিআমতও আমাকে দান করলেন। একথা বলে সে চুপ হয়ে গেল।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম। আপনি তাবলীগ জামাত ও মাওলানা তারিক জামিল সাহেবের ফাঁদে কেমনে পড়লেন? একথা শুনে সে আবার জোরে হেসে উঠল। এরপর বলল, পাকিস্তানের বাসিন্দা প্রায় সকলেই জীবনে কোনো না কোনো সময় ডাক্তার, পুলিশ এবং তাবলীগ জামাতের ফাঁদে ধরা পড়ে। অধিকাংশ লোকই তাদের সাথে কয়েকদিন কাটিয়ে ফিরে আসে। কিন্তু কিছুসংখ্যক লোক, যারা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, তারা কখনো ডাক্তারের খপ্পর থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। যারা দাগি অপরাধী, তারাও পুলিশের হাত থেকে রেহাই পায় না। তদ্রƒপ কিছু লোক তাবলীগীদের হাত ফসকেও আর আসতে পারে না। তারা মৌলবী সাহেব হয়ে তাদের অংশ বনে যায়। আমি আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে মাওলানা তারিক জামিল ছাহেবের সাথে দেখা করি এবং তার খপ্পরে পড়ে যাই।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কেন তাঁর ফাঁদে পা দিলেন? আমার কথা শুনে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে উত্তর দিল, সে আমাকে এত ভালোবাসা দিয়েছে যে, আমি এর আগে কারো কাছ থেকে এত ভালোবাসা পাইনি। তাঁর এই ভালোবাসা আমার জন্য নেশাকর বস্তুর কাজ দিয়েছে। আমি তাঁর দেয়া ভালোবাসার নেশায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।
এরপর আমি দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা আরম্ভ করলাম। মাঝে মাঝে তাবলীগে চিল্লা লাগাতে আরম্ভ করলাম। এরপর যখন আমার হুঁশ আসল, ততদিনে আমি বেশ মৌলবী সাহেব বনে গেছি।
আমি জুনায়েদ জামশেদকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তো বেশ বুদ্ধিমান ব্যক্তি। আপনি মাঝপথে পালিয়ে আসলেন না কেন? সে আরো একবার অট্টহাসি দিয়ে বলল, আমি এক-দুবার পলায়নের চেষ্টা করেছি। কোনো কোনো সময় ভেবেছি এবং নিজে নিজেকে প্রশ্ন করেছি, জুনায়েদ গান ছেড়ে দিলে! এখন খাবে কী করে? তুমি তো এক গান ছাড়া আর কোনো কাজই জান না! গান তো আমার প্রাণই ছিল। আমার কোনো কোনো সময় মনে হতো, আমি যদি গান ছেড়ে দেই, তাহলে আমার জীবনই শেষ হয়ে যাবে। আমি এ সকল কথা চিন্তা করে আবার শেভ করে গান আরম্ভ করলাম। আমার পরিচিত জগতে আমি আবার ফিরে আসলাম। কিন্তু কয়েকদিন পরই নিজের ভুল উপলব্ধি করতে পারলাম। আমি বুঝতে পারলাম, আমি এখন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখী হয়ে পড়েছি। আমাকে সম্পদ, সম্মান, খ্যাতি অথবা শান্তি- এর মধ্য হতে একটি বেছে নিতে হবে। আমার মনে তুমুল লড়াই চলছিল- কী ধরব; কী ছাড়ব; কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এ সময় আল্লাহ পাক আমার উপর অনুগ্রহ করলেন, আমার মাথা হতে ভ্রান্তচিন্তার অন্ধকার দূরীভূত হয়ে গেল। আমি পুনরায় ঐ সঠিক লাইনে এসে গেলাম, যেখানে আমার আসা দরকার। আমি তাবলীগ জামাতের সাথে জুড়ে গেলাম। আমি প্রশ্ন করলাম, সম্পদ, সম্মান ও খ্যাতির মোহ কি সহজে ছাড়তে পেরেছেন? সে তড়িৎ উত্তর দিল, অনেক কষ্ট হয়েছে। গানই আমার একমাত্র আয়ের উৎস ছিল। খ্যাতির মোহও আমাকে পেয়ে বসেছিল। আমার অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্ত; ভক্তদের সঙ্গে ছবি উঠানো, ভক্তদেরকে অটোগ্রাফ প্রদান করাটা আমার জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছিল। আমার গানই আমার পরিচয়পত্র ছিল। আমি আমার এই পরিচয়পত্র ব্যতীত কিছুই কল্পনা করতে পারতাম না। আমি গান ছাড়া আর্থিক, সামাজিক ও মানসিকভাবে জীবিত থাকার কথা চিন্তাও করতে পারতাম না।
অনেক চিন্তা-ভাবনার পরে আমি আল্লাহ পাকের সাথে একটি ব্যবসায়িক চুক্তি করলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আল্লাহর জন্যই আমার তিন সম্পদ (অর্থাৎ, সম্পদ, সম্মান ও খ্যাতি) কুরবানী করে দিব। আমি সম্মান, খ্যাতি ও আয়-রোজগার তিনটিই ত্যাগ করলাম এবং সবসময়ের জন্য আল্লাহ্র রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। একথা বলে সে চুপ করল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এটা কেন করলেন? সে উত্তর দিল, আমি মূলত আল্লাহ পাকের সিস্টেম ও ওয়াদা পরীক্ষা করে দেখতে চাচ্ছিলাম। কারণ আমি কোনো এক কিতাবে পড়েছিলাম, ‘যারা আল্লাহ পাকের সাথে ব্যবসা করে, যারা আল্লাহ তাআলার জন্য নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করে, আল্লাহ পাক কখনো তাকে নিরাশ করেন না। কখনো তাকে বঞ্চিত করেন না। আল্লাহ পাক তাকে তাঁর যোগ্যতার চেয়ে অনেক বেশি ফিরিয়ে দেন।’
আমি আল্লাহ পাকের এই ঘোষণা ও এই ওয়াদা পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলাম। আমি আমার সবকিছু আল্লাহ্র রাস্তায় কুরবানী করে দিলাম। ভাই জাভেদ! বিশ্বাস কর, আল্লাহ আমার কুরবানী কবুল করে আমার সবকিছুকে (অর্থাৎ, আমার সম্পদ, সম্মান ও খ্যাতি) ৭০ (সত্তর) দ্বারা গুণ করে আমাকে তার চেয়ে অনেক বেশি ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি আল্লাহ পাকের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে কুরবানী করেছি, আল্লাহ পাক আমাকে কোটি কোটি টাকা দান করেছেন।
আল্লাহ পাকের দয়া দেখ! পৃথিবীতে ‘জুনায়েদ জামশেদ’ নামে পাকিস্তানী কাপড়ের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্রান্ড চলছে। অথচ আমি আজ পর্যন্ত একটি রুমালও তৈরি করিনি। আমি তো ‘রক স্টার’ হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলাম। আল্লাহর দয়া দেখ! তিনি এখন আমাকে না‘তখাঁ এবং আল্লাহ্র যিকিরকারীরূপে সমগ্র পৃথিবীতে প্রসিদ্ধ করে দিয়েছেন। আগে লোকেরা আমাকে ‘দিল্ দিল্ পাকিস্তান’ শীর্ষক গানের কারণে সম্মান করতো, কিন্তু এখন লোকেরা আমাকে ‘ইলাহী তেরী চৌখাট্ পর ভিখারী বন্কে আয়া হোঁ’ শীর্ষক দুআর কারণে হাতে চুমু খায়। পূর্বে আমি জিন্স পরে নাচতাম। আর সম্ভ্রান্ত লোকেরা তাদের স্ত্রী ও কন্যাদেরকে আমার ছায়া হতেও দূরে রাখতো। কিন্তু এখন আল্লাহ পাক আমাকে দয়া করেছেন, আমি টুপি পরে, পাগড়ী বেঁধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারে বসে বয়ান করি, লোকেরা আমার দ্বারা তাদের সন্তানদের উন্নতির জন্য দুআ করায়।
ভাই জাভেদ! তুমি তোমার বুকে হাত রেখে বল, আমি যা কুরবানী করেছি, তার তুলনায় এটা কি সত্তর গুণ বেশি নয়? একথা বলে জুনায়েদ জামশেদ চুপ হয়ে গেল।
আমি (জাভেদ চৌধুরী) যেহেতু সে সময় বর্তমানের চেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট, অধিক কঠোর হৃদয়, অধিক অবিশ্বস্ত ছিলাম তাই বিদ্রƒপ করে বললাম, আপনি যদি ঐ সকল অসহিষ্ণু বিদআতী মৌলবীদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পান, (যারা আপনার কল্লা চায়, যারা আপনাকে রাসূলের শানে বেআদবীর দোষে দুষ্ট এবং হযরত আয়েশা সিদ্দীকার বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপকারী মনে করে হত্যা করতে চায়।) তাহলে আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই দিব। একথা শুনেও সে হেসে ফেলল।
কিন্তু গত সাতই ডিসেম্বর (২০১৬ ঈ.) আমি যখন জুনায়েদ জামশেদকে বহনকারী প্লেন দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার এবং তার সকল আরোহী আগুনে ভস্ম হয়ে শাহাদাত লাভ করার সংবাদ শুনলাম, তারপর সারাদেশের জনগণকে জুনায়েদ জামশেদের শোকে মূহ্যমান দেখলাম, এরপর পনেরই ডিসেম্বর করাচীতে তাঁর স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জানাযা দেখলাম তখন আমি অন্তর থেকে তার সকল আলোচনায় তাকে সত্যবাদী এবং আন্তরিক বলে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম।
আমাদের এদেশের হাজারো বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, সরকারী আমলা, অভিনেতা, গায়ক, আলেম, সুফী-সাধক, বিরাট বিরাট সম্পদশালী মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের জানাযার নামায মসজিদ বা মসজিদ সংলগ্ন স্থানে পড়ানো হয়েছে। কিন্তু জুনায়েদ জামশেদের জানাযার নামায বৃহৎ একটি স্টেডিয়ামে আদায় করা হয়েছে। আর তাতে বাস্তবিকই লক্ষ লক্ষ লোক অংশ গ্রহণ করেছে। যতদূর দৃষ্টি যায় মানুষের মাথা আর মাথা, হাত আর হাতই দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
জুনায়েদ জামশেদের জানাযার পূর্বে পাকিস্তান এয়ারফোর্স ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেছে। তার কাফনের উপর পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তার মরদেহ ‘সি ওয়ান থার্টি’ নামক বিশেষ বিমানে করে ইসলামাবাদ থেকে করাচী আনা হয়েছে।
এ ধরনের বিরল সম্মান আজ পর্যন্ত কোনো গায়ক লাভ করেছে কি? না করেনি।
জুনায়েদ জামশেদকে হারানোর ব্যথায় সমগ্র জাতি ব্যথিত হয়েছে। আপনজনের শোকের চেয়েও অনেক বেশি শোকাতুর হয়েছে। জাতির এই শোকাতুর অবস্থা কী প্রমাণ করে? একথাই প্রমাণ করে যে, তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আল্লাহ পাকের সাথে ব্যবসা করছি। আল্লাহর নিকট আমি আমার সম্পদ, সম্মান ও খ্যাতি সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছি। আল্লাহ পাক আমার সবকিছুকেই সত্তর দিয়ে গুণ করে আমাকে আমার দেয়া সবকিছুই সত্তর গুণের চেয়ে অধিক ফিরিয়ে দিয়েছেন।’
জুনায়েদ জামশেদ আমাদের মতো বস্তুবাদী লোকদের দৃষ্টি খুলে দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, আল্লাহ পাকের সাথে যে ব্যবসা করে, সে কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তুমি যদি আল্লাহ্র জন্য তোমার সম্মানের কুরবানী দাও, তাহলে আল্লাহ পাক তোমার সম্মান সত্তর গুণ বৃদ্ধি করে তোমাকে ফিরিয়ে দিবেন। যদি তুমি আল্লাহ্র জন্য সম্পদ কুরবানী কর, তাহলে সম্পদ সত্তর গুণ বাড়িয়ে তোমাকে ফেরত দিবেন। তুমি যদি আল্লাহ্র জন্য খ্যাতি কুরবানী কর, তাহলে তোমার খ্যাতিও সত্তর গুণ বাড়িয়ে দিবেন। সত্তরই বা কেন? নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাকের খোদায়ী স্টক এক্সচেঞ্জের রেটিং কখনো দশ, কখনো পঁচিশ, কখনো সাতাশ, কখনো সত্তর, কখনো সাতশত গুণ হারে, আবার কারো কারো জন্য এরচেয়ে অনেক অধিক হারে ‘আপ’ হতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাকের ‘স্টক এক্সচেঞ্জ’ সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও নির্ভরযোগ্য স্টক এক্সচেঞ্জ। যে স্টক এক্সচেঞ্জ কখনো তার গ্রাহকদের ক্ষতি হতে দেয় না। এর ‘রেটিং’ কখনো ‘ডাউন’ হয় না। কেবলই ঊর্ধ্বে উঠতে থাকে। ঊর্ধ্ব থেকে ঊর্ধ্বতর হয়। এটা খোদায়ী স্টক এক্সচেঞ্জ।
[দৈনিক এক্সপ্রেস (উর্দু, করাচী) থেকে। অনুবাদ : মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান খান
(পরিমার্জিত)]