যিলহজ্ব ১৪৩৮   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৭

একটি ভুল কথা

দুনিয়া সৃষ্টির পর থেকে আল্লাহ একবারের জন্যও এর দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান নাই

কোনো কোনো মানুষকে বলতে শোনা যায়, দুনিয়া আল্লাহ্র কাছে এতই ঘৃণিত যে, দুনিয়া সৃষ্টির পর থেকে আল্লাহ একবারও এর দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান নাই।

এটি একটি ভুল কথা।  এ কথার কোনো ভিত্তি নেই। কারো কারো বলার ধরন থেকে তো মনে হয়- এটি একটি হাদীস। কিন্তু মূলতঃ এটি একটি অবাস্তব ও অমূলক বক্তব্য।

আল্লাহ তাআলা যদি দুনিয়ার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে না তাকাতেন তাহলে মানুষ কি এ দুনিয়ায় বসবাস করতে পারত? আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের হেদায়েতের জন্য কিতাব নাযিল করা এবং নবী-রাসূল প্রেরণ কি দুনিয়ার দিকে রহমতের দৃষ্টি দেওয়া নয়?

আল্লাহ দুনিয়ার দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং রহমত নাযিল করেন। প্রমাণ হিসেবে এ সম্পর্কে দু-একটি হাদীস পেশ করা যায়।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেছেন-

يَطلعُ اللّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ

আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা‘বানের রাতে (শা‘বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৬৬৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৩৫৫২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৬৪২

আবু হুরাইরা রা.-

سَمِعْتُ رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَقُولُ: جَعَلَ اللّهُ الرّحْمَةَ مِائَةَ جُزْءٍ، فَأَمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ جُزْءًا، وَأَنْزَلَ فِي الأَرْضِ جُزْءًا وَاحِدًا، فَمِنْ ذَلِكَ الجُزْءِ يَتَرَاحَمُ الخَلْقُ...

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ স্বীয় রহমতকে এক শ ভাগে ভাগ করেছেন। নিজের কাছে নিরানব্বই ভাগ রেখে দিয়েছেন আর একভাগ পৃথিবীতে নাযিল করেছেন। সেই একভাগ রহমত দ্বারা মানুষ পরস্পরের প্রতি দয়া করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০০০

এ বিষয়ে আরও অনেক প্রমাণ রয়েছে। সুতরাং আমরা এমন অমূলক কথা বলব না।

আসলে আল্লাহর কাছে দুনিয়া তুচ্ছ ও মূল্যহীন; এর পিছে পড়ে আখেরাতকে বরবাদ করা ঠিক নয়- এ কথা বলতে গিয়েই হয়ত কেউ কেউ এ বাক্যের অবতারণা করেছেন। অথচ এ বিষয়ে কুরআনের আয়াত ও বহু হাদীস রয়েছে; আমরা সেগুলোই বলব। নিম্নে এর কয়েকটি তুলে ধরছি।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ فَرِحُوْا بِالْحَیٰوةِ الدُّنْیَا  وَ مَا الْحَیٰوةُ الدُّنْیَا فِی الْاٰخِرَةِ اِلَّا مَتَاعٌ

কিন্তু এরা পার্থিব জীবনে উল্লসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন আখেরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র। -সূরা রা‘দ (১৩) : ২৬

সাহ্ল ইবনে সা‘দ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

لَوْ كَانَتِ الدّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شَرْبَةَ مَاءٍ.

দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহ্র কাছে মশার ডানা বরাবর হত তাহলে আল্লাহ কোনো অবিশ্বাসী কাফেরকে এক ঢোক পানিও পান করতে দিতেন না। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩২০

জাবের রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে গেলেন। তিনি একটি খাটো কানবিশিষ্ট মৃত ছাগলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এর কান ধরে বললেন, কে আছ মাত্র এক দিরহামের বিনিময়ে এটা নিবে? সাহাবীগণ বললেন, সামান্য কিছুর বিনিময়েও কেউ এটা নিতে পছন্দ করবে না। আমরা এটা নিয়ে কী করব? এবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বিনামূল্যেও কি কেউ এটা নিতে পছন্দ করবে? সাহাবীগণ বললেন, এটা তো খাটো কানবিশিষ্ট। জীবিত হলেও এটি একটি ত্রুটি; সেখানে মৃত?! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

فَوَاللهِ لَلدّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ، مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ

আল্লাহর কসম! তোমাদের কাছে এটা যেমন মূল্যহীন, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর চেয়েও মূল্যহীন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৫৭

 

advertisement