Jumadal Ula 1439   ||   February 2018

কথা বলে নেকড়ে

আবু আহমাদ

তুমি কি কখনো মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীকে কথা বলতে দেখেছ? হয়ত তোতা, ময়না বা টিয়া পাখিকে কথা বলতে শুনেছ। মানুষের কথা শুনেশুনে ওরা হুবহু মানুষের মত কথা বলে। কিন্তু কখনো কি শুনেছ- নেকড়ে কথা বলে? তুমি হয়ত নেকড়ে চেনো না। নেকড়ে দেখতে অনেকটা শেয়ালের মত। তবে খুব হিংস্র। দেখলেই ভয় লাগে! ওরা দলবেঁধে চলে এবং বনের পশুদের উপর আক্রমণ করে। তো আজ আমি তোমাদের নেকড়ে কথা বলার কাহিনী শোনাব। এর আগে আমার একটা কথার জবাব দাও। বল তো, পৃথিবীর সব মানুষই কি কথা বলতে পারে? সবার কি কথা বলার শক্তি আছে? তুমি নিশ্চয় জান- পৃথিবীতে কিছু মানুষ তোমার মতই দেখতে, তোমার মতই তাদেরও মুখ-জিহ্বা-দাঁত রয়েছে; কিন্তু তুমি যেমন কথা বলতে পার তারা পারে না। ওদেরকে বলে, বোবা-বাকশক্তিহীন। তো মানুষ কথা বলতে পারে; কিন্তু সেই মানুষই কথা বলতে পারে, যাকে আল্লাহ কথা বলার শক্তি দিয়েছেন। অন্যথায় আমার তোমার মত মুখ-জিহ্বাওয়ালা মানুষও কথা বলতে পারে না। জিহ্বা কথা বলার একটি মাধ্যম, আসল বিষয় হল, কথা বলার শক্তি বা বাকশক্তি; যা আল্লাহ দান করেন। এজন্যই তো আমরা দেখি জিহ্বা থাকা সত্ত্বেও কিছু মানুষ কথা বলতে পারে না। মূলকথা হল, যাকে বা যে বস্তুকেই আল্লাহ কথা বলার শক্তি দান করবেন সে-ই কথা বলতে পারবে। জিহ্বা ছাড়াই কথা বলতে পারবে। তো কথা বলার শক্তি- আল্লাহর দান, আল্লাহর নিআমত। সুতরাং আল্লাহ যাদেরকে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন তাদের উচিত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা; ভালো কথা বলা, সত্য কথা বলা এবং মানুষকে ভালো কাজের দিকে ডাকা; মিথ্যা বলা, কাউকে গালি দেওয়া, অন্যের দোষ বলে বেড়ানো, কাউকে অপমানিত করা, কাউকে লজ্জা দেওয়া, মন্দ নামে ডাকা- এসব মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকা। কাল কিয়ামতের দিন আমাদের হাত-পা-চোখও কথা বলবে; এমনকি হাদীসে আছে, দুনিয়াতেও মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কথা বলবে। আমরা যদি আমাদের হাত দিয়ে খারাপ কিছু ধরি, আমাদের পা দিয়ে খারাপ পথে যাই, আমাদের চোখ দিয়ে খারাপ কিছু দেখি, আমাদের কান দিয়ে খারাপ কিছু শুনি তাহলে আমাদের হাত আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে; আমাদের পা আমাদের অন্যায়ের কথা বলে দিবে, অমাদের চোখ বলে দিবে- আমরা চোখ দিয়ে কী দেখেছি, কান বলে দিবে- আমরা কী শুনেছি। তেমনি ভালো কাজ করলেও আমাদের ভালো কাজের সাক্ষী হবে আমাদের হাত-পা-চোখ-কান। কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ আমাদের অঙ্গগুলোকে কথা বলার শক্তি দিবেন আর এগুলো আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করবে; বলে দিবে দুনিয়াতে আমরা কী করেছি, তখন আমরা বলব- لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنا. (আমাদের নিজেদের হাত-পা, নিজ শরীরের অঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও) কেন তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে! তখন আমাদের হাত-পা-কান বলবে- أَنْطَقَنَا اللهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ. আল্লাহ আজ আমাদের কথা বলার শক্তি দিয়েছেন, যিনি বাকশক্তি দান করেছেন সকলকিছুকে। -সূরা ফুসসিলাত (৪১) : ২১ কোনো গুনাহের কাজ আমরা যত গোপনেই করি না কেন, পৃথিবীর কোনো মানুষ যদি তা না দেখে আল্লাহ তো দেখেন, আর আমি যেখানেই লুকাই না কেন, যত গোপন স্থানেই যাই না কেন আমার হাত-পা-চোখ-কান তো আমার সাথেই থাকে। এগুলোই কাল কিয়ামতের দিন আমার সকল পাপের কথা বলে দিবে, যখন আল্লাহ এগুলোকে কথা বলার শক্তি দিবেন। সুতরাং এসো আল্লাহকে ভয় করি, প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে- সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকি। যাইহোক, কথা অনেক হল; এবার চল শোনা যাক নেকড়ে কথা বলার কাহিনী- প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু সাইদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার এক নেকড়ে একটি বকরি শিকার করল। বকরির রাখাল যখন দেখল পালের একটি বকরি নেই তো সে খোঁজা শুরু করল। দেখল, একটি নেকড়ে তার বকরি শিকার করেছে। সে ধাওয়া করল নেকড়েটিকে। একপর্যায়ে নেকড়ের মুখ থেকে বকরিটি উদ্ধার করল। বেচারা নেকড়ে হাতে আসা রিজিক হারিয়ে খুব কষ্ট পেল। আল্লাহ নেকড়ের জবান খুলে দিলেন। সে মানুষের মত কথা বলতে শুরু করল। সে বলল, ওহে রাখাল! তোমার কি আল্লাহর ভয় নেই? যে রিযিক আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন তা তুমি আমার মুখ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলে? এ কা- দেখে রাখাল তো অবাক। আরে এ কী দেখছি আমি! সত্য না স্বপ্ন। কী আশ্চর্যের কথা! নেকড়ে দেখছি মানুষের মত কথা বলছে!! এ কথা শুনে নেকড়ে বলল, আরে রাখাল ভাই! আশ্চর্যের আর তেমন কী দেখলে তুমি। তোমাকে আমি এর চেয়েও আশ্চর্য খবর শোনাচ্ছি- مُحَمّدٌ صَلّى الله عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِيَثْرِبَ يُخْبِرُ النّاسَ بِأَنْبَاءِ مَا قَدْ سَبَقَ. ইয়াছরিবে (মদীনায়) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আগমন ঘটেছে। তিনি মানুষকে (শত শত, হাজার হাজার বছর) পূর্বে ঘটে যাওয়া বিষয়ের সংবাদ শোনান। একথা শুনে রাখাল তার বকরির পাল হাঁকালো মদীনার দিকে। মদীনায় পৌঁছে সে নবীজীর কাছে গেল এবং সব ঘটনা খুলে বলল। নামাযের সময় হল। সকল সাহাবী নামাযে এলেন। নামায শেষে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাখালকে বললেন, সকলকে শোনাও তোমার কাহিনী। রাখালের মুখে সবাই শুনল নেকড়ে কথা বলার কাহিনী। সবাই শুনে আশ্চর্য হল। নবীজীর প্রতি তাদের ঈমান আরো মজবুত হল। নবীজী ইরশাদ করলেন- صَدَقَ، وَالّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَا تَقُومُ السّاعَةُ حَتّى يُكَلِّمَ السِّبَاعُ الْإنْسَ، وَيُكَلِّمَ الرّجُلَ عَذَبَةُ سَوْطهِ، وَشِرَاكُ نَعْلِهِ. হ্যাঁ, সে সত্য বলেছে। যেই সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম! কিয়ামত কায়েম হবে না; যতক্ষণ না হিংস্র প্রাণীরা মানুষের সাথে কথা বলবে, এমন কি চাবুকের অগ্রভাগ, জুতার ফিতা মানুষের সাথে কথা বলবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১৭৯২; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৮৪৪৪; ৬৪৯৪; শরহু মুশকিলিল আসার, হাদীস ৬১৭৮; আলমুনতাখাব মিন মুসনাদি আবদ ইবনু হুমাইদ, হাদীস ৮৭৭

 

advertisement