Jumadal Ula 1439   ||   February 2018

কম্পাস দ্বারা কেবলা নির্ণয়ের পদ্ধতি

মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন

নামাযে কেবলামুখী হওয়া (তথা বাইতুল্লাহমুখী বা কাবামুখী হওয়া) নামাযের অন্যতম প্রধান ফরয। যারা বাইতুল্লাহ দেখতে পাওয়া যায় এমন স্থানে নামায পড়েন তাদেরকে হুবহু বাইতুল্লাহ বা হুবহু কাবা শরীফ বরাবর মুখ করে নামায আদায় করতে হয়। এটাকে বলা যায় ‘আইনে কেবলা’ (একেবারে সোজা কেবলা)। তাদের জন্য সোজা কেবলামুখী-কাবামুখী হওয়া জরুরি। আর যেখান থেকে বাইতুল্লাহ দেখতে পাওয়া যায় না এমন কোনো স্থানে কেউ নামায পড়লে (চাই বিশ্বের যেখানেই হোক না কেন) তার মুখ হুবহু বাইতুল্লাহ বরাবর না হলেও চলে, তবে বাইতুল্লাহর বা কেবলার দিকের মধ্যে থাকতে হবে। একে বলা হয় ‘জেহাতে কেবলা’। জেহাতে কেবলা অর্থ কেবলার দিক বা বাইতুল্লাহর দিক। এই ‘কেবলার দিক’ বা ‘বাইতুল্লাহর দিক’ বলতে বোঝায় বাইতুল্লাহ যে বরাবর অবস্থিত তার থেকে ডান দিকে ৪৫ ডিগ্রী এবং বাম দিকে ৪৫ ডিগ্রী এই সর্বমোট ৯০ ডিগ্রী অঞ্চলকে। নামাযীকে অবশ্যই এই ৯০ ডিগ্রীর মধ্যে অভিমুখী থাকতে হবে। এর বাইরে অভিমুখী হয়ে গেলে নামায হবে না। কেননা পৃথিবীর বৃত্ত হচ্ছে ৩৬০ ডিগ্রী, আর মৌলিক দিক হচ্ছে ৪টি। অতএব একটা দিক বলতে বোঝায় (৩৬০÷৪=) ৯০ ডিগ্রী অঞ্চলকে। সুতরাং কেবলার দিক বলতেও ৯০ ডিগ্রী অঞ্চলকেই বোঝাবে। তাই কাবা শরীফ বা বাইতুল্লাহ শরীফ যে বরাবর অবস্থিত (৩৯০ ৩৯' পূর্ব দ্রাঘিমা ও ২১০২৫' উত্তর অক্ষাংশ) তার থেকে ডান দিকে ৪৫ ডিগ্রী এবং বাম দিকে ৪৫ ডিগ্রী এই সর্বমোট ৯০ ডিগ্রীর মধ্যে রুখ (অভিমুখিতা) থাকলেও নামায হয়ে যাবে। আমাদের দেশে যেসব মসজিদ রয়েছে তা নির্মাণের সময় অনেকেই কম্পাস ধরে হুবহু বরাবর কেবলা ঠিক রেখে মেহরাব তৈরি করেননি। বরং আশপাশের মসজিদ দেখেই কেবলা নির্ধারণ করে নিয়েছেন। এতে করে সেগুলোর অনেকটাতে হয়তো সোজা কেবলা রক্ষা হয়নি। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে প্রায়শই দেখা যায় সেগুলোর কেবলা পূর্বোল্লিখিত ৯০ ডিগ্রীর মধ্যেই রয়েছে। অতএব এসব মসজিদে নামাযে কোনোই সমস্যা নেই। তবে কোনো মসজিদের কেবলা প্রকৃতই ৯০ ডিগ্রীর বাইরে থাকলে তা অবশ্যই সংশোধন করে নেয়া চাই। কিন্তু ইদানিং মানুষের হাতে হাতে মোবাইল থাকে। আর অনেক মোবাইলে থাকে ডিজিটাল সাধারণ কম্পাস বা কেবলা কম্পাস। এ সুবাদে অনেকেই মোবাইলে সাধারণ কম্পাস বা কেবলা কম্পাস দেখে মসজিদের কেবলা সোজা বরাবর না পেলেই এবং একটু ডানে-বামে বাঁকানো থাকলেই হৈ চৈ শুরু করেন যে, এই মসজিদের কেবলা ঠিক নেই, এতে নামায হবে না। এরূপ লোকদের অনেকেই সোজা কেবলার ডান দিকে ৪৫ ডিগ্রী এবং বাম দিকে ৪৫ ডিগ্রী -সর্বমোট এই ৯০ ডিগ্রীর মধ্যে মুখ থাকলেও নামায হয়ে যায়- এ মাসআলাটি জানেন না। তদুপরি শুধুমাত্র ইন্টারন্যাশনাল শিপে ব্যবহৃত জাইরো কম্পাস (Gyro compass) নন ম্যাগনেটিক হওয়ার কারণে ভূগর্ভস্থ চুম্বকের কারণে সে কম্পাস প্রভাবিত হয় না। ফলে তা উত্তরসহ অন্য সব দিক সঠিক প্রদর্শন করে। কিন্তু অন্য যেকোনো ধরনের কম্পাস (এনালগ হোক বা ডিজিটাল) ম্যাগনেটিক কম্পাস হওয়ার কারণে হুবহু দিক দেখায় না- এ বিষয়টাও জানা থাকা দরকার। তাহলেই সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে যে, সোজা কেবলা কোন্ দিকে এবং সংশ্লিষ্ট স্থানের অভিমুখিতা ৯০ ডিগ্রীর মধ্যে রয়েছে কি না। এনালগ বা ডিজিটাল যে কম্পাসই হোক না কেন তা যে হুবহু দিক দেখায় না- এ বিষয়টা বোঝার জন্য জানতে হবে কম্পাসের মাধ্যমে প্রথমে উত্তর দিক নির্ণিত হয় এবং তা থেকে অবশিষ্ট দিকগুলো নির্ণিত হয়। আরও জানতে হবে উত্তর রয়েছে দুই ধরনের। একটি হল ভৌগোলিক উত্তর (Geographical North) তথা প্রকৃত উত্তর (যেদিকে উত্তর আকাশের ধ্রুব তারা অবস্থিত)। আর অপরটি হল চৌম্বক উত্তর (Magnetic North)। আর কম্পাস যে উত্তর প্রদর্শন করে তা হচ্ছে চৌম্বক উত্তর। চৌম্বক উত্তর ও ভৌগোলিক উত্তর এক নয়। চৌম্বক উত্তর মেরু ও ভৌগোলিক উত্তর মেরুর অবস্থান এক জায়গাতে নয়। চৌম্বক উত্তর মেরু ভৌগোলিক উত্তর মেরু থেকে ডানে/বাঁয়ে অবস্থান করে। চৌম্বক উত্তর স্থির থাকে না বরং কখনো ডানে কখনো বাঁয়ে সরে থাকে। যেমন : নিম্নে প্রদত্ত তালিকা থেকে বিভিন্ন সময়ে চৌম্বক উত্তরের অবস্থানে পার্থক্য হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হবে। বিভিন্ন সনে চৌম্বক উত্তরের অবস্থান ২০১৮-এর পর থেকে আবার উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করবে। (নেটে Magnetic North, geomagnetic and magnetic poles A_ev Where is the magnetic north pole right now? শিরোনামে চৌম্বক উত্তরের এই স্থান পরিবর্তনের ডাটা দেখে নেয়া যেতে পারে।) অতএব কম্পাস প্রদর্শিত উত্তর থেকে প্রকৃত উত্তর বের করতে হলে প্রথমে জানতে হবে চৌম্বক উত্তরের বর্তমান অবস্থান প্রকৃত উত্তর থেকে কত ডিগ্রী কোন্ দিকে রয়েছে। আমরা একটি চিত্র প্রদর্শন করেছি। চিত্রটি কম্পিউটারে যথাসাধ্য সুক্ষ্মভাবেই আঁকার চেষ্টা করা হয়েছে। তাতে প্রমাণিত হয়েছে ২০১৮ সালে প্রকৃত উত্তর থেকে চৌম্বক উত্তর ২.৫০০ (দুই দশমিক পঞ্চাশ ডিগ্রী) বা ২০৩০' (দুই ডিগ্রী ত্রিশ মিনিট) পূর্বে অবস্থিত। অতএব কম্পাস যে উত্তর দেখাবে তা থেকে এই পরিমাণ পশ্চিমে হবে প্রকৃত উত্তর। এই প্রকৃত উত্তরের ভিত্তিতে অন্যান্য দিক নির্ণিত হবে। তারপর যেখান থেকে কেবলার দিক বের করতে চাওয়া হবে সে জায়গার দ্রাঘিমা অক্ষ ও বায়তুল্লাহর দ্রাঘিমা অক্ষ নির্ণয় করে বায়তুল্লাহ কত ডিগ্রী কোন্ দিকে অবস্থিত তা বের করতে হবে। আমাদের প্রদত্ত চিত্রের মাধ্যমে বায়তুল্লাহ কত ডিগ্রী কোন্ দিকে অবস্থিত তা বের করা সহজ। চিত্রটি ঢাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এ চিত্রের আলোকে অন্য যে কেউ তার স্থানের জন্য চিত্র অংকন করে নিতে পারবেন। (তবে অবশ্যই চিত্র তৈরির কাজটি দক্ষ হাতে সম্পন্ন হতে হবে। বর্তমানে কম্পিউটারে মোটামুটি এরূপ নিখুঁত চিত্র তৈরি করা যায়।) প্রথমে একটি বৃত্ত আঁকুন। বৃত্তের পূর্ব পশ্চিমের মাঝে একটি দ্রাঘিমা রেখা টানুন। এটা হবে যে স্থান থেকে কেবলার দিক বের করতে চাওয়া হবে সে স্থানের দ্রাঘিমা। তারপর বায়তুল্লাহর দ্রাঘিমা রেখা (৩৯০৩৯' পূর্ব দ্রাঘিমা) টানুন। বায়তুল্লাহর অক্ষরেখা (২১০২৫' উত্তর অক্ষাংশ) টানুন। তারপর যে স্থান থেকে কেবলার দিক বের করতে চাওয়া হবে সে স্থানের দ্রাঘিমা ও অক্ষরেখা টানুন। পূর্বে বলা হয়েছে বৃত্তের পূর্ব পশ্চিমের মাঝে উত্তর দক্ষিণে যে রেখা হবে সেটা হবে সেই স্থানের দ্রাঘিমা রেখা। যেমন ঢাকা থেকে কেবলা বের করতে চাওয়া হলে ঢাকার দ্রাঘিমা ৯০০২৪' এবং অক্ষ ২৩০৪৮'। এভাবে ঢাকার দ্রাঘিমা ও অক্ষরেখা টানুন। এবার বৃত্তের পূর্ব পশ্চিমের মাঝখানের রেখা তথা ঢাকার দ্রাঘিমা রেখা ঢাকার অক্ষরেখাকে যে স্থানে ক্রস করবে সেই ক্রসিং পয়েন্ট হল ঢাকার অবস্থান। এবার ঢাকার অক্ষরেখা বরাবর পূর্ব-পশ্চিমে একটি সোজা রেখা টানুন। এটা হবে ঢাকা থেকে সোজা পূর্ব পশ্চিমের দিক বরাবর রেখা। সবশেষে ঢাকার অবস্থান থেকে একটি রেখা বায়তুল্লাহর অবস্থানকে (বায়তুল্লাহর দ্রাঘিমা ও অক্ষরেখার ক্রসিং পয়েন্টকে) ক্রস করে বৃত্তের দিকে নিয়ে যান। এই রেখা বৃত্তের যেখানে গিয়ে মিলিত হবে সেটা সোজা পশ্চিমের রেখা, যেখানে বৃত্তে মিলিত হয়েছে সেখান থেকে যতটুকু যেদিকে সরে থাকবে সেই পরিমাণই হবে ঢাকা থেকে বায়তুল্লাহর অবস্থান- কোন্ দিকে কত ডিগ্রী সরে অবস্থিত তার নির্ণয়। নিম্নে এমন আমাদের প্রদত্ত চিত্রটি দেখুন। এতে দেখা যাচ্ছে বায়তুল্লাহ ঢাকা থেকে .৬০০ (দশমিক ৬০ ডিগ্রী) বা ৩৬' (৩৬ মিনিট) উত্তর দিকে অবস্থিত। এখানে উল্লেখ্য যে, কেউ মনে করতে পারেন বায়তুল্লাহর অবস্থান যখন ২১০২৫' উত্তর অক্ষাংশে আর ঢাকার অবস্থান ২৩০৪৮' অক্ষাংশে, তাহলে ঢাকা থেকে বায়তুল্লাহ (২৩০৪৮' - ২১০২৫'=) ২০২৩' (২ ডিগ্রী ২৩ মিনিট) দক্ষিণ দিকে হওয়ার কথা। এরূপ মনে করা ভুল। কারণ অক্ষরেখা সামনের দিকে ক্রমান্বয়ে মেরুর দিকে বেঁকে গিয়ে থাকে। সব অক্ষরেখাই যেকোনো স্থান থেকে আগে পিছের দিকে ক্রমান্বয়ে মেরুর দিকে বেঁকে যায়। আমাদের প্রদত্ত চিত্রেও বিষয়টি লক্ষ করা যাবে। পূর্বোক্ত বিষয়টা সামনে রেখে আমরা উদাহরণস্বরূপ ঢাকা থেকে সোজা কেবলার দিক নির্ণয় করার ৪টা পদ্ধতি সম্বন্ধে আলোচনা করব। (ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য স্থানের বিষয়টাও এর উপর ভিত্তি করে বুঝে নেয়া যাবে।) (চিত্র ...) ১. ধ্রুবতারার সাহায্যে কেবলা নির্ণয় উত্তর আকাশের ধ্রুবতারা চিহ্নিত করুন। (সপ্তর্ষীম-লের সাহায্যে ধ্রুবতারা চিহ্নিত করা যায়।) ধ্রুবতারা প্রকৃত উত্তর দিকে অবস্থিত। এটা স্থির তারা, কখনও তার স্থান পরিবর্তন হয় না। অতএব ধ্রুবতারার দিক হচ্ছে প্রকৃত উত্তর দিক। এর ভিত্তিতে প্রকৃত পশ্চিম দিক নির্ণয় করুন। সেই পশ্চিম দিক থেকে .৯০০ (দশমিক ৯০ ডিগ্রী) বা ৫৪' (৫৪ মিনিট) উত্তরে সোজা কেবলার দিক। ২. এনালগ কম্পাসের সাহায্যে কেবলা নির্ণয় এনালগ কম্পাস দিয়ে প্রকৃত উত্তর বের করুন। উল্লেখ্য, সব কম্পাসই চৌম্বক উত্তর নির্ণয় করে থাকে প্রকৃত উত্তর নয় -যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করে এসেছি-। তাই কম্পাস প্রদর্শিত চৌম্বক উত্তর প্রকৃত উত্তর থেকে কত ডিগ্রী কোন্ দিকে অবস্থিত তা বের করুন। এটা বের করার পদ্ধতি হল চৌম্বক উত্তর কত দ্রাঘিমা ও অক্ষে অবস্থিত তা বের করুন। তারপর ঢাকার (অর্থাৎ যেখান থেকে দিক নির্ণয় করতে চান এবং যে স্থানটিকে চিত্রে বৃত্তের দ্রাঘিমা [মধ্যরেখা] ও অক্ষের ক্রসিং পয়েন্টে চিহ্নিত করেছেন।) অবস্থান থেকে একটি রেখা উক্ত চৌম্বক উত্তরের দ্রাঘিমা ও অক্ষের ক্রসিং পয়েন্ট ভেদ করে বৃত্তে নিয়ে সংযুক্ত করুন। তারপর প্রকৃত উত্তর থেকে এই সংযুক্তির পয়েন্টের দূরত্ব মাপুন। সেটাই হবে প্রকৃত উত্তর থেকে চৌম্বক উত্তরের দূরত্ব। পূর্বের বর্ণনা অনুযায়ী ২০১৮ সালে চৌম্বক উত্তরের অবস্থান হচ্ছে ৮৬.৫০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ১৭৮.৮০ পশ্চিম দ্রাঘিমা। এবার উপরোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী আঁকা আমাদের প্রদত্ত চিত্রে দেখুন ২০১৮ সালে প্রকৃত উত্তর থেকে চৌম্বক উত্তরের ব্যবধান হয় ২.৫০০ (দুই দশমিক পঞ্চাশ ডিগ্রী) বা ২০৩০' (দুই ডিগ্রী ত্রিশ মিনিট)। অতএব কম্পাস প্রদর্শিত উত্তর থেকে ২.৫০০ পশ্চিমে হবে প্রকৃত উত্তর। এর ভিত্তিতে প্রকৃত পশ্চিম নির্ণয় করুন। সেই পশ্চিম দিক থেকে .৯০০ (দশমিক ৯০ ডিগ্রী) বা ৫৪' (৫৪ মিনিট) উত্তরে সোজা কেবলার দিক। (উল্লেখ্য, যেকোনো কম্পাস ব্যবহারের সময় কম্পাসের অবস্থানের আশেপাশে যেন লোহা জাতীয় কোনো কিছু না থাকে। কেননা তাতে কম্পাস প্রভাবিত হবে।) অথবা কম্পাস যে পশ্চিম দেখাবে তা যেহেতু প্রকৃত পশ্চিম থেকে ২.৫০০ উত্তরে। তাই কম্পাস প্রদর্শিত পশ্চিম থেকে ১.৬০০ (২.৫০০ - .৯০০ = ১.৬০০) পরিমাণ দক্ষিণে হবে সোজা কেবলা। ৩. ডিজিটাল সাধারণ কম্পাসের সাহায্যে কেবলা নির্ণয় ডিজিটাল সাধারণ কম্পাস দিয়ে কেবলা বের করতে চাইলে এনালগ কম্পাস দিয়ে কেবলা বের করার যে পদ্ধতি পূর্বে বলা হয়েছে তা অনুসরণ করতে হবে। ৪. ডিজিটাল কেবলা কম্পাসের সাহায্যে কেবলা নির্ণয় ডিজিটাল কেবলা কম্পাস দিয়ে কেবলা নির্ধারণ করতে হলে জানতে হবে ডিজিটাল কেবলা কম্পাস কেবলা দেখায় ২৭৭.৬৭০। কোনো কোনোটায় দেখায় ২৭৭.৬৮০। কোনো কোনোটায় দেখায় ২৭৮০। এটা বুঝতে হলে আগে কম্পাসের ডিগ্রী বুঝতে হবে। কম্পাসে মোট ৩৬০ ডিগ্রী থাকে। উত্তরদিকে থাকে ০ ডিগ্রী। পূর্বদিকে থাকে ৯০ ডিগ্রী। দক্ষিণে ১৮০ ডিগ্রী। পশ্চিমে ২৭০ ডিগ্রী। অতএব যেকোনো স্থানে কম্পাস ধরলে ২৭০ ডিগ্রী (কম্পাসের) হল সেই স্থানের প্রকৃত পশ্চিম। আর পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকার সোজা কেবলা হচ্ছে প্রকৃত পশ্চিম থেকে .৯০০ (দশমিক ৯০ ডিগ্রী) বা ৫৪' (৫৪ মিনিট) উত্তরে। অতএব কেবলা কম্পাস যখন ২৭৭.৬৭ ডিগ্রীকে কেবলা দেখাচ্ছে তার অর্থ হল কম্পাসের পশ্চিম থেকে ৭.৬৭ ডিগ্রী উত্তরে কেবলা দেখাচ্ছে। আর কম্পাসের পশ্চিম যেহেতু প্রকৃত পশ্চিম থেকে ২.৫০০ (দুই দশমিক পঞ্চাশ ডিগ্রী) বা ২০৩০' (দুই ডিগ্রী ত্রিশ মিনিট) উত্তরে, তাহলে সারকথা এই দাঁড়াল যে, কেবলা কম্পাস প্রকৃত পশ্চিম থেকে (৭.৬৭+২.৫০-.৯০=) ৯.২৭ ডিগ্রী উত্তরে কেবলা দেখাচ্ছে। তাই কেবলা কম্পাস যে কেবলা দেখায় তার থেকে ৯.২৭ ডিগ্রী দক্ষিণে হবে প্রকৃত সোজা কেবলা। উল্লেখ্য, এক ধরনের কেবলা ডিরেকশন (Qibla direction) এ্যাপ রয়েছে, তাতে কেবলার দিকে সোজা রেখা টেনে দেখানো হয়। তাতেও ২৭৭.৬৭ ডিগ্রীর দিকে কেবলা দেখানো হয়ে থাকে। আরও উল্লেখ্য, কেবলা নির্ণয়ের উপরোক্ত পদ্ধতি চতুষ্টয়ের মধ্যে ১ম পদ্ধতিই সবচেয়ে উত্তম। তারপর ২য় পদ্ধতি তথা এনালগ কম্পাসের সাহায্যে কেবলা নির্ণয়ের পদ্ধতি। ডিজিটাল কম্পাসের সেন্সর অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে থাকে বিধায় সামান্য অসমতল অবস্থানে রাখলে বা ধরার মধ্যে সামান্য উনিশ বিশ হলে কিংবা আরও বিবিধ কারণে রেজাল্ট পাল্টে যায়। এনালগ কম্পাসে তেমনটা হয় না। সবশেষে আর একটি বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করে প্রবন্ধটি শেষ করছি। তা হল, কোনো মসজিদের কেবলার রুখ মূল সোজা কেবলা থেকে ৪৫ ডিগ্রী ডানে বা ৪৫ ডিগ্রী বামের মধ্যে থাকলেও নামায হয়ে যায়- কথাটি যেন সর্বদা স্মরণে রাখা হয়। আমাদের এতক্ষণের আলোচনার উদ্দেশ্য হল কোনো মসজিদের কেবলা এর বাইরে থাকলে তারা সংশোধন করে নিবেন, কিংবা নতুনভাবে কোথাও মসজিদ নির্মাণ করতে চাইলে বা কোনো স্থানের কেবলার দিক সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে চাইলে এই পদ্ধতিগুলোর সহযোগিতা নিতে পারবেন।

 

advertisement