যিলক্বদ ১৪৩৮   ||   আগস্ট ২০১৭

দুআয়ে মাগফিরাত

আবু আহমাদ

আমরা সবাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে এসেছি। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত সফর শেষে আবার তাঁর কাছেই ফিরে যাব। কেউ আগে কেউ পরে। এটা আল্লাহ তাআলারই ফায়সালা। বান্দার কর্তব্য হল তাঁর ফায়সালার সামনে নিজেকে সঁপে দেওয়া। যাঁরা চলে যান তাঁদের মাগফিরাত ও দারাজাত বুলন্দির দুআ করা। আর নিজেও আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা। গত কয়েক মাসে আমাদের দেশের ও হিন্দুস্তানের কয়েকজন আকাবির উলামায়ে কেরাম আল্লাহর কাছে চলে গেলেন। আল্লাহ তাঁদের সবাইকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। আমাদেরকে তাঁদের উত্তম উত্তরসূরি হিসাবে কবুল করুন। ২৩ শাবান ১৪৩৮ হিজরী/২০ মে ২০১৭ ঈসায়ী শনিবার দারুল উলূম দেওবন্দের প্রবীণ ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় উস্তায, তারানায়ে দারুল উলূমের রচয়িতা হযরত মাওলানা রিয়াসাত আলী বিজনূরী রাহ. আখেরাতের সফরে রওয়ানা হয়ে গেলেন । হযরতের সঙ্গে অধমের কেবল একবার সাক্ষাৎ হয়েছে। দূর থেকে এক ঝলক দেখেছি এবং মুগ্ধ হয়েছি। তাঁর ইলমী মাকামও ছিল উঁচু। তিনি তাঁর উস্তায হযরত মাওলানা ফখরুদ্দীন মুরাদাবাদী রাহ.-এর দরসে বুখারীর তাকরীর ‘ইযাহুল বুখারী’ নামে সংকলন করেছেন। কিতাবটি তাঁর উন্নত রুচি-বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক। এছাড়াও তাঁর রচনা ‘শূরা কী শরয়ী হাইছিয়াত’ খুবই প্রসিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য। একই দিন (২৩ শাবান ১৪৩৮ হিজরী/২০ মে ২০১৭ ঈসায়ী শনিবার) চলে গেলেন জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের কৃতিসন্তান, পরবর্তীতে সেখানেরই শিক্ষক ও নায়েবে মুহতামিম হযরত মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া রাহ.। হযরতের জীবনী বিষয়ে আলকাউসারের বর্তমান সংখ্যায় তাঁর ভাই ও আমাদের শাগরেদ মাওলানা ফখরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে। এরপর ২৯ রমযানুল মুবারক ১৪৩৮ হিজরী/২৫ জুন ২০১৭ ঈসায়ী রবিবার পুরো উম্মতকে এতিম করে চলে গেলেন হযরত মাওলানা কারী বেলায়াত হুসাইন রাহ.। ইনতিকালের সময় তাঁর বয়স এক শ দশেরও বেশি ছিল। পুরো জীবন তিনি দ্বীনের খেদমতেই কাটিয়েছেন। নূরানী তালিমুল কুরআন নামে কুরআন শিক্ষাকে ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর করাই ছিল তাঁর জীবনের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ, বরং একমাত্র মিশন। কুরআন শিক্ষার খেদমতে তাঁর কুরবানী, মেহনত ও দীর্ঘ মুজাহাদার ইতিহাস দ্বীন প্রচারে উলামায়ে কেরামের মুজাহাদার ইতিহাসে এক সোনালী অধ্যায়। এই ইতিহাস সংরক্ষণ করা আমাদের উপর আবশ্যক। আশা করি তাঁর জীবন ও কীর্তি সম্পর্কে আলকাউসারে লেখা হবে ইনশাআল্লাহ। দীর্ঘ নেক হায়াত দেখার আগ্রহ থাকলে কেউ হযরতের জীবনকে উজ্জ্বল নমুনা হিসেবে দেখতে পারে। ১০ শাওয়াল ১৪৩৮ হিজরী/৫ জুলাই ২০১৭ ঈসায়ী বুধবার চলে গেলেন এদেশের প্রবীণ আলেম, বড় দ্বীনী ব্যক্তিত্ব হযরত মাওলানা মোস্তফা আলহোসাইনী রাহ.। হযরত রাহ. বিভিন্ন মাদরাসায় হাদীসের দরস প্রদান করেছেন। তবে ওয়ায ও নসীহতই ছিল তাঁর খেদমতের মূল ময়দান। খেড়িহর মাদরাসায় তলবে ইলমের যামানায় প্রায় দশ বছর হযরতের বয়ান শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। তাঁর একেকটি বয়ান আমাদের জন্য ছিল একেকটি দরস। তাঁর বয়ান ছিল খুবই গোছালো এবং আকর্ষণীয়। উপস্থাপনও ছিল খুব সাবলীল। তাই ভক্ত শ্রোতারা খুব আগ্রহের সঙ্গে তাঁর বয়ানে শরিক হত। আমাদের তলবে ইলমীর যামানায় তিনি এবং মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিসবাহ রাহ. ছিলেন দেশের বড় ওয়ায়েযদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। মিসবাহ রাহ. বয়সে তাঁর ছোট ছিলেন। তবে ইনতিকাল হয়ে গেছে আগে। তাঁরা দুজনই দেশের শীর্ষস্থানীয় ওয়ায়েয ছিলেন। প্রত্যেকেরই ভিন্ন ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল। মিসবাহ রাহ. নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি মুনকার কথা, মুনকার বর্ণনা ও মুনকার ঘটনা এড়িয়ে যেতেন। হযরত হুসাইনী রাহ.ও এ ব্যাপারে অনেকটা সতর্ক ছিলেন। সে সময়ের ওয়ায়েযদের কুরবানী ও মুজাহাদা আসলেই আমাদের জন্য আদর্শ। বর্তমান সময়ে ওয়াযের ময়দানের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এ ময়দানে কেমন শূন্যতা বিরাজ করছে। এই শূন্যতা পূরণ করার লোক আল্লাহ তায়ালা তৈরী করে দিন- আমীন। হযরত মাওলানা হুসাইনী রাহ.-এর জীবনী বিষয়ে স্বতন্ত্র কিতাব লেখা উচিত। আল্লাহ তাআলা তাঁর সন্তান সন্ততি ও আত্মীয় আলেমদেরকে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সমাধা করার তাওফীক দান করুন- আমীন। ১৬ শাওয়াল ১৪৩৮ হিজরী/১১ জুলাই মঙ্গলবার মাযাহিরুল উলূম সাহারানপুরের শাইখুল হাদীস, শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া কান্দলভী রাহ.-এর জানেশীন হযরত মাওলানা ইউনুস মাযাহেরী জৌনপুরী রাহ. আল্লাহর কাছে চলে গেলেন। তাঁর ইনতিকাল ‘আলেমের মৃত্যু জগতের মৃত্যু’ প্রবাদের সুস্পষ্ট নমুনা। তাঁর ইলমী কাজের মধ্যে আল-ইয়াওয়াকীতুল গালিয়াহ বড় চমৎকার কাজ। কিতাবটির কয়েক খ- ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। যাকে বলে ‘ইলমি ইনহিমাক’ এবং ‘ফানা ফিল ইলম’ তার সচ্চা নমুনা ছিলেন তিনি। আশা করি হযরত রাহ.-এর জীবনী বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকা স্বতন্ত্র সংখ্যা প্রকাশ করবে। স্বতন্ত্র কিতাব রচনা হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আখেরাতের মুসাফির সকল হযরতকেই ভরপুর মাগফিরাত নসীব করুন। জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। তাঁদের সকল খেদমতকে তাঁদের এবং উম্মতের জন্যও কিয়ামাত পর্যন্ত সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করুন- আমীন। পাঠকদের কাছে দরখাস্ত, তাঁরা যেন এই সকল হযরতের জন্য মাগফিরাতের দুআ ও ঈসালে সওয়াবের আমল জারি রাখেন। গত ১৪ শাওয়াল ১৪৩৮ হিজরী/৯ জুলাই ২০১৭ ঈসায়ী রবিবার মারকাযুদ দাওয়াহর ‘কিসমুদ তাদরীব ফিদ দাওয়াহ’ দ্বিতীয় বর্ষের তালিবুল ইলম উবাইদুল্লাহ বিন নাসীবুল্লাহ-এর ইনতিকাল হয়ে গেছে। খুব চুপচাপ স্বভাবের তালিবুল ইলম ছিল। আল্লাহ তাআলা তাকে পূর্ণ ক্ষমা নসীব করুন। আপন রহমতের ছায়ায় রাখুন। তার মা বাবা ও বড় ভাই মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ যীদা মাজদুহুম ও তার সকল আত্মীয়-স্বজনকে ধৈর্য ধারনের তাওফীক দান করুন- আমীন। গত ৩ যিলক্বাদ ১৪৩৮ হিজরী/২৮ জুলাই ২০১৭ ঈসায়ী জুমাবার মাদরাসা বাইতুল উলূম ঢালকানগরের মুহতামিম হযরত মাওলানা জাফর আহমাদ ছাহেবের মেঝ ছেলে মাওলানা রিদওয়ান আহমাদ এক সড়ক দুর্ঘটনায় ইনতিকাল করেন। মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে তিনি আমাদের থেকে বিদায় নিলেন। আল্লাহ তাআলা তার পূর্ণ মাগফিরাত করুন এবং আপন রহমতের চাদরে ঢেকে নিন। তার মা-বাবা, পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকে সবরে জামিলের তাওফীক দিন- আমীন। أحسن الله عزاءكم وعظم أجركم وغفر لميتكم (মুহাম্মাদ আবদুল মালেক)

 

advertisement