কেঁদেছি। দীর্ঘক্ষণ কেঁদেছি। সশব্দে চোখের পানি ছেড়ে কেঁদেছি। দ্বীনী কাজের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে যথাসময়ে আলকাউসার সংগ্রহ করা হলেও ব্যস্ততার মাঝে সবগুলো কলাম দ্রুত পড়ে শেষ করতে পারি না। গত ২০ মার্চ ’১০ সকালে বসলাম জেদ ধরে, শেষ করেই তবে টেবিল থেকে ওঠব। অবশেষে তাই করলাম।
শুরুতেই মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ ছাহেব লিখিত সবগুলো কলাম শেষ করলাম। অতঃপর যে লেখাটি পড়তে শুরু করলাম তা হল-মাওলানা আবদুল হাই পাহাড়পুরী লিখিত ‘আমার আম্মা আজীবন কবরের চিন্তায় বে-কারার ছিলেন’। কলামটি পড়তে শুরু করার পর আগ্রহের মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে লাগল। লেখকের মা-এর আত্মজীবনী পড়ছি আর আমার আম্মার কথা মনে করছি।
‘পৃথিবীর কোনো পরপুরুষ বলতে পারবে না, সে আমার আম্মার কথা শুনেছে’’ পড়তে পড়তে লক্ষ্য করলাম আমার চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে আসছে। নিজেকে কিছুটা সংবরণ করে আবার পড়া শুরু করলাম। পড়লাম জীবনের শেষ পাঁচটি বছর আম্মাতো এত বে-কারার ছিলেন, যাকে দেখতেন তাকেই প্রশ্ন করতেন, কবরের অন্ধকারে কীভাবে থাকব?’ এবার আর পড়তে পারছি না। চোখে পানি ধরে রাখতে পারলাম না। বারবার আমার বেঁচে থাকা মায়ের কথা স্মরণ হচ্ছিল। দু’ ঠোটে আওড়াচ্ছিলাম-আমার মাও যেন এমন হয়। আর অঝর নয়নে কাঁদছি। ডুকরে ডুকরে কাঁদছি। কোনো রকমে লেখাটি পড়ে শেষ করলাম। দীর্ঘক্ষণ পর কান্নার আওয়াজ থেমে গেল। মোবাইল ধরলাম দূর দেশে রেখে আসা আমার গর্ভধারিনী মাকে। কথা বললাম, তবে এবার অন্যভাবে, ভগ্ন হৃদয়ে। আমার মা মোবাইলে বেশি কথা বলেন না, কেমন আছিস? কি খেয়েছিস? কবে আসবি? কথা হল। মা আমার বুঝতেই পারলেন না আমি একটু আগে তার কথা স্মরণ করে অনেক্ষণ কেঁদেছি।
মা তুমি ভালো থেকো। জান্নাতি হয়েই বিদায় নিও। তোমার সুস্থতা কামনা করি। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ। লেখাটি তৈরি করেছেন যিনি তাঁকে ও পত্রিকাসংশ্লিষ্ট সকলকে আমার হৃদয় আজীবন কৃতজ্ঞতা থাকবে।
আতিকুর রহমান মুজাহিদ
জামিয়া কারিমিয়া আরাবিয়া, রামপুরা, ঢাকা