বি শ্বা স : মতলবের গোড়া এক
Bakhtiar
বাকস্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধির কথা বেশি উচ্চারিত হতে দেখা যায় কোনো না কোনো মুসলিম দেশে। আর সেটির ক্ষেত্রও থাকে প্রধানত ধর্মীয়। অন্যদেশগুলোতে এ বিষয়টা নিয়ে তেমন কিছু ঘটতে দেখা যায় না। এর একটা অর্থ এমন দাঁড়িয়ে যেতে পারে যে, মুসলিম সংখ্যালঘু দেশগুলোতে বাকস্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধির কোনো সমস্যাই নেই। কিন্তু বাস্তবতা এ রকম নয়। ধর্মীয় বিষয়ে মুসলিম দেশগুলোতে যারা বাকস্বাধীনতার কথা বেশি বলেন, তারা হচ্ছেন ধর্মকর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন পশ্চিমানুরক্ত মুষ্টিমেয় কিছু ‘সুশীল’ আর পশ্চিমা অর্থায়নে সক্রিয় কিছু এনজিও-কণ্ঠ। এর বাইরে এ বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য হয় না। ঢাকার দৈনিক আমাদের সময়ের গত ২১ এপ্রিল ৬-পাতায় প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ‘এপি’র বরাতে প্রকাশিত একটি খবরের নমুনা দেখা যেতে পারে।
ব্লাসফেমি আইন বহাল রেখেছে ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিার একটি আদালত ১৯৬৫ সালের ব্লাসফেমি আইন বহাল রেখেছে। উল্লেখ্য যে এ আইনে ইন্দোনেশিয়ায় শুধুমাত্র ছয়টি ধর্মকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ ছয়টি ধর্ম হলো ইসলাম ধর্ম, বৌদ্ধ, হিন্দু, ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যাট মতবাদ এবং কনফুসিয়াস মতবাদ। আধুনিক ইসলাম ধর্মাবলম্বী, সংখ্যালঘু সমপ্রদায় এবং সুশীল সমাজ এ আইনটি বাতিলের জন্য আদালতে আবেদন করে। কিন্তু সোমবার আদালত তাদের এ আবেদন খারিজ করে দেয়। বিচারকরা বলেন, আইনটি অসম্পূর্ণ তবে অসঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থীও নয়।
আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশন বলেছে আদালতের এ রায় ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদ ও সামপ্রদায়িক দাঙ্গাকে আরো উস্কে দেবে। কমিশনের চেয়ারম্যান লিওনার্দো লিও বলেন, এ আইনটি ইন্দোনেশিয়ায় ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদকে আরো উস্কে দেবে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি সামপ্রদায়িক দাঙ্গা এবং জঙ্গিবাদ দমন করতে ইন্দোনেশিয়া সরকার এ আইনটি সংশোধন করবে। আদালতে শুনানির সময় রক্ষণশীল ইসলামী ডিফেন্ডার ফ্রন্টের সমর্থকরা আদালতের বাইরে অবস্থান এবং তারা আল্লাহু আকবার বলে স্লোগান দেয়।
আদালত যদি আইনটি বাতিল করে তবে তারা সহিংসতা ছড়াতে পারে এ আশংকায় আদালত প্রাঙ্গনে ৫ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার সাড়ে ২৩ কোটি সুন্নি মুসলমান মনে করে এ আইনটি বাতিল করা দরকার। কারণ এ আইনের মাধ্যমে মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন উগ্র ধর্মভিত্তিক দলগুলো সংখ্যলঘুদের নির্যাতনে এ আইনটি ব্যবহার করে। হিউম্যান রাইটস এর এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক এলিন পিয়ারসন বলেন, এ আইনটির ফলে ইন্দোনেশিয়ার সংখ্যালঘুরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এই খবরটি নিয়ে অন্তত দু’টি বিষয়ে পাঠকের দৃষ্টি টানা যায়। এক. সংবাদ ও সংবাদ মাধ্যমের একটি সার্বজনীন নীতি হলো, নিরেট সংবাদের সঙ্গে মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া জুড়ে দেওয়া যায় না। এপি পরিবেশিত এই খবরটিতে দেখুন মূল সংবাদ সামান্যই। বাকি সবটুকুই হচ্ছে মন্তব্য ও বিষোদগার এবং সেসবেরই উৎস হচ্ছে পশ্চিমের আশ্রয়পুষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থা। ইহুদী-খৃস্টান নিয়ন্ত্রিত নামীদামি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর বরাতে প্রচারিত মুসলিম বিশ্বের প্রায় যে কোনো সংবাদে নেতিবাচক এ প্রবণতাটি দেখা যায়। রিপোর্টের সঙ্গে মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া। চোখ খোলা রাখলেই এ চিত্রটি প্রায় দিনই চোখে পড়ে। নিরপেক্ষ, মানসম্মত ও সৌজন্যময় রিপোর্টিং এর নীতি-সীমানা তারাই শেখান। আর সে নীতিকে অন্ধ আক্রোশে তারাই পদদলিত করেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বলা হচ্ছে-আইনটি ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদ ও সামপ্রদায়িক দাঙ্গাকে উস্কে দেবে।’ বক্তব্যটা কত হাস্যকর রকম অযৌক্তিক! যে কোনো বিশ্বাসকে অবমাননার হাত থেকে বাঁচাতে যে নিয়ন্ত্রণের আইন হয়েছে, তার জন্যই নাকি দাঙ্গা হবে। নিয়ন্ত্রণ করলেও নাকি দাঙ্গা হয়। তাছাড়া যেসব মুসলিম সংখ্যালঘু দেশে ব্লাসফেমি আইন নেই, সেসব দেশে কি বর্তমানে মরাত্মক ধরনের সব সামপ্রদায়িক দাঙ্গা এবং সমপ্রদায়গত বর্ণবাদী দাঙ্গা ঘটছে না? পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে নিয়ে গোটা ইউরোপ-আমেরিকায় মুসলিম বিরোধী যেসব সামপ্রদায়িক ও বর্ণবাদী ঘটনা ঘটছে, ব্লাসফেমি আইন না থাকা স্বত্ত্বেও তো তা ঘটেই চলেছে। তাহলে একটি মুসলিম দেশে ব্লাসফেমি আইন পাশ হলে মহা সমস্যাটা কেন হয়? উত্তর একটাই। ইসলামকে, ইসলামী বিশ্বাসকে গাল দেওয়ার সুযোগ তারা বন্ধ করতে চান না। মতলবের ওই এক গোড়া থেকেই এ দেশেও ধর্ম-অবমাননা বিরোধী কোনো আইনের বিপক্ষে যখন-তখন শত সুশীলের চিৎকার ভেসে আসেছ।