Rabiul Akhir 1438   ||   January 2017

খ্রিস্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে একজন দায়ীর সফলতা ও কিছু প্রস্তাব

মাওলানা আব্দুল মাজীদ

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের শেষ দিকে একটি জেলার নাম কুড়িগ্রাম। আয়তন ২২৪৫.০৪ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ২২৫০৯৭৪ জন। উপজেলা ৯ টি, ইউনিয়ন ৭২ টি, গ্রাম ১৮৭২বেশ বড় একটি জেলা হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন পায়নি। এ জেলারই একটি গ্রাম চিটপাইকেরছড়া। যা ভুরুঙ্গিমারী উপজেলার একেবারেই শেষদিকে ভারত সীমান্তের কাছে। দুর্গম ও উলামায়ে কেরামের পদচারণা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ধর্মান্তরকারী এনজিওগুলোর অপতৎপরতার অনুকূল জায়গা। অজ্ঞতা ও দারিদ্র্যে জর্জরিত উত্তরের অনেক জনপদের মত চিটপাইকেরছড়াতেও প্রবেশ করেছে ঈমান হরণকারী একটি এনজিও। প্রেস ভেটেরিয়ান চার্চ অব বাংলাদেশ নামে এ এনজিওটি ২০০০ সাল থেকে সেবার খোলসের নিচে তাদের নোংরা উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ধর্মান্তরকরণের লক্ষ্য হাসিলের জন্য তারা প্রতিষ্ঠিত করেছে এলিজাবেথ মেমোরিয়াল স্কুল নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পল্লী সমাজে নিরক্ষতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের মোহনীয় শ্লোগানের আড়ালে অব্যাহত রেখেছে ঈমান লুটের ধারা

তাদের আরেক শিরোনাম স্বাস্থ্যসেবা। এ শিরোনামে নামি-দামি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সেই পল্লিতে হাজির করা হয়। এভাবে নানা শিরোনামে ষোল বছরের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় এনজিওটি এই গ্রামের প্রচুরসংখ্যক মুসলমানকে খ্রিস্টানে পরিণত করে, যার একটি অংশ প্রকাশ্যে খ্রিস্টান পরিচয় দিত আরেক অংশ পরিচয় গোপন রাখত। এ কারণে সুনির্ধারিতভাবে সংখ্যা বলা মুশকিল। তবে প্রতি রবিবারে গীর্জায় উপস্থিতির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছিল।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের বিশ্ব ইজতেমা থেকে বিশোধিক সাথীর একটি জামাত নিয়ে ঢাকার প্রসিদ্ধ একজন হার্টের ডাক্তার ভুরুঙ্গামারী সফর করেন। তার বর্ণনা শুনেই আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে, তাহলে তার না জানি কী হয়েছে। চিল্লার ১৭ দিন তারা একই মসজিদে দিনে ঘাম ঝরিয়েছেন আর রাতে অশ্রু ঝরিয়েছেন। আর ভেবেছেন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতকে কীভাবে ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে, যে উম্মতের জন্য তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন মাতৃভূমি সবই ত্যাগ করেছেন। মা যেমন তার সন্তানের জন্য সব উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্য তার চেয়ে বেশি উৎসর্গ করেছেন। মায়ের বুক খালি করে তার সন্তানকে ছিনিয়ে নিলে যদি আপনি ব্যথিত হন তাহলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতকে ছিনিয়ে নিলে কেন ব্যথা জাগবে না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত আমি তার কাছে তার জান-মাল পিতা-মাতা ও সন্তানাদির চেয়েও প্রিয় না হব।

ঈমান যা এক মুমিনের মহা মূল্যবান সম্পদ যা রক্ষা করার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষ কত ত্যাগ স্বীকার করেছেন; তাঁদের গলায় রশি বেঁধে অলিগলিতে টানা হত, মরুভূমির উত্তপ্ত পাথুরে জমিনে শায়িত করে বুকে পাথর চাপা দেয়া হত- সেই মহাসম্পদ চিটপাইকেরছড়া গ্রামে ৫০০/১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতার সংখ্যাও একেবারেই কম নয়।

বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে এই গ্রামটি যিয়ারতের ইচ্ছা পূরণ হচ্ছিল না। অবশেষে গত ত্রৈমাসিক পরীক্ষার সময় ছবক স্থগিত হলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এবার ইনশাআল্লাহ এই গ্রাম সফর করব।

এই গ্রামে প্রথম যারা দাওয়াত নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মাওলানা আনীসুর রহমান সাহেব তাদের অন্যতম। এবারের সফরে তিনি কিছু সাথী নিয়ে একটি গাড়িতে আর আমরাও কিছু আহবাবকে নিয়ে আরেকটি গাড়িতে আল্লাহর নামে সফর শুরু করি। ৫/১১/১৬ ঈ. সকাল ৬.০০ প্রথমে কাকরাইল মসজিদে গেলাম, সেখান থেকে শহীদুল ইসলাম ভাইকে নিয়ে বার ঘণ্টার রাস্তা পার হয়ে রাত ৭.০০ কুড়িগ্রাম পৌঁছলাম। সফরসঙ্গী ৬ জন। খাবারের পর চিটপাইকেরছড়া গ্রামের একটি মাদরাসায় গিয়ে বসলাম। ধীরে ধীরে এলাকার খোঁজ-খবর পাওয়া গেল।

প্রেস ভেটেরিয়ান চার্চ অব বাংলাদেশনামে একটি এনজিও ২০০০ সালে এখানে কাজ শুরু করে। এর প্রধান বেচাং ওয়ার্ড আইউব। বাড়ি চট্টগ্রাম। সেও একজন ঈমান বিক্রেতা, এখন সওদাগর। গাজিপুর জেলার মিকি পাড়ায় এর প্রধান কার্যালয়। জামালপুরের মাদারগঞ্জ, বরিশালের গলাচিপা, ময়মনসিংহের গরিপুরসহ নেত্রকোণা, কুষ্টিয়া ও মানিকগঞ্জে এর কার্যক্রম বিস্তৃত।

এরা এদের কার্যক্রমকে তিনটি শিরোনামের অধীনে পরিচালিত করে : ১. শিক্ষা-প্রোগ্রাম ২. কৃষি প্রোগ্রাম ৩. ধর্মীয় প্রোগ্রাম। এরা এই গ্রামে ২০০৪ ঈ. সালে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সরকারী নিবন্ধের আওতায় নিয়ে আসে। ২০০৬ ঈ. এলিজাবেথ মেমোরিয়াল স্কুলে ক্লাস শুরু হয়। এই সালেই গীর্জা প্রতিষ্ঠা করে। গীর্জার উপরে লেখা আছে অসহায় ছিন্নমূলদের সেবায় নিয়োজিত গীর্জায় লেখা এই বাক্যটি তাদের সেবার লক্ষ্য উদ্দেশ্য পরিষ্কার বর্ণনা করছে। সেবার শিরোনামে ধর্মান্তরিতকরণই যে এদের প্রধান কাজ এতে লুকোছাপা কিছু নেই।

আজাদ ফকীর নামে এক লোক এদেরকে এই গ্রামে নিয়ে আসে। তার জমিতেই খ্রিস্টানরা স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করে। জহুরুল নামে এক লোক এখানে এই গীর্জার রক্ষণাবেক্ষণ করত। ১৯৯২ সালে সে এদের দলভুক্ত হয়। মহান আল্লাহর শোকর, তিনি এই আজাদ ও জহুরুলকে হেদায়েত দিয়েছেন। শত বারের উপর গাশত করার পর গত কয়েক মাস আগে দুজনই ইসলাম কবুল করেন।

ধর্মান্তরিতের তুফানসম ফিতনা দেখে আমরা অনেক সময় হাল ছেড়ে মূসা আলাইহিস সালামের কওমের মত বলি, আমাদের কিছু করার দরকার নেই। আল্লাহর দ্বীন আল্লাহই রক্ষা করবেন-

اذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلا إِنَّا هَهُنَا قَاعِدُونَ  .

তুমি আর তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ কর আমরা এখানে বসে থাকব।

মনে রাখতে হবে এই একটি চিন্তাই এ উম্মতের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট হতে পারে।

২০১৪ সালে মাওলানা আনীসুর রহমান সাহেব তার অতি সাধারণ এক ছাত্র মাওলানা শামীমকে সাল লাগানোর পর এখানে দাওয়াতের এই কাজে পাঠিয়ে দেন। আমি নিজেও কয়েকজনকে প্রস্তুত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। শামীমের ইলম, বয়ান, উপস্থাপনা কোনটাই উল্লেখ করার মত ছিল না। তার চেয়ে অনেক  যোগ্য ও মেধাবী ছাত্র আমাদের আশেপাশে ঘুরছে কিন্তু যে কাজ আল্লাহ পাক শামীমকে দিয়ে করিয়েছেন তা দায়ীদের জন্য স্মরণীয় পাথেয় হতে পারে। খুব সংক্ষেপে বিষয়টি তুলে ধরছি :

১. ইরতেদাদের ফেৎনা এখানে এক ভয়াবহ তুফানের রূপ ধারণ করেছিল। আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহ তাআলা সে তুফান থামিয়ে এখন ঈমানী সুবাতাস প্রবাহিত করেছেন। ফলে এ পর্যন্ত ৪২ জন খ্রিস্টান ইসলাম কবুল করেছে। পরিচয় গোপন রাখা কিছু পথহারা মুসাফির এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি। আল্লাহ তাআলা ৪২ জন ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

২. দাওয়াতের মেহনতকে ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এক বিশাল সফলতা আল্লাহ তাআলা দান করেছেন। যার প্রমাণ হল ৫/১১-এর মাহফিলে প্রায় ১০ হাজার পুরুষ ও ১২ হাজার (আনুমানিক) মহিলা শরীক হয়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে কে সময় লাগিয়েছেন? সবাই হাত উঠাল। স্টেজে বসা উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব নূরুন্নবী সাহেবও  তিন দিন লাগিয়েছেন। দুই বছরে মাওলানা শামীম ৫৭ জনকে চিল্লায় বের করেছে। যার কারণে এখন মসজিদভর্তি মুসল্লী ও মজলিসভর্তি দ্বীনদার শ্রেণি। আর মাদরাসাভর্তি তালিবুল ইল্ম, যা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

৩. শিক্ষা কার্যক্রম হচ্ছে যে কোনো আদর্শের অন্যতম মূল বাহন। এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এলাকার লোক ইসলাম গ্রহণ করলে সেখানে মুয়াল্লিম পাঠিয়ে দিতেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের মাশায়েখ মক্তবের উপর খুব জোর দিতেন। সে চিন্তা করেই চিটপাইকেরছড়া গ্রামে দুই বছর আগে একটি মাদরাসা কায়েম করা হয়েছে। যেখানে ২৫০ শিশু  পড়াশুনা করে। এদের মধ্যে ১০৪ জন এলিজাবেথ মেমোরিয়াল স্কুলের ছাত্র এবং ঈমান ছিনতাইয়ের ফাঁদের শিকার মুসলমানদের সন্তান। ৬/১১/১৬ ঈ. রবিবার সকালে আমরা শিশুদের নিয়ে বসলাম। দ্বীন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে শিশু উপযোগী কিছু আলোচনা হল। তারপর দুআ হল। মুসলমানকে গীর্জায় নিয়ে প্রার্থনা করানোর কথা শুনে হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল সেই রক্তই যেন তপ্ত অশ্রু হয়ে প্রবাহিত হল।

মাদরাসার জন্য একজন নতুন চিল্লার সাথী প্রায় এক বিঘা জমি দান করেছেন। ৭.৭ ফুট গর্ত ছিল। ২১৬০০০ টাকার মাটি সেখানে ফেলা হয়েছে এবং টিন দিয়ে চারটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। ঐ ঘরগুলোতেই ২৫০ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। রবিবার সকালে আমাদের আরও তিনটি মজলিস হয়েছে। একটি সফরের সাথীদের নিয়ে। যে মজলিসের উদ্দেশ্য ছিল, তারা যে মুসলমানদের খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলেছে- এ বিষয়ে আমাদের করণীয় কী। দ্বিতীয় মজলিস এলাকার গণ্যমান্য লোকদের নিয়ে। সেখানে মূলকথা ছিল, আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করলে আল্লাহ তাআলা তাকে কীভাবে পুরস্কৃত করেন। তৃতীয় মজলিস ছিল শিক্ষকদের সাথে। সেখানে মূলকথা ছিল, একটি পণ্য ফ্যাক্টরী থেকে যে রূপ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বের হয় সেই রূপের আর পরিবর্তন হয় না। মাদরাসা হচ্ছে ঈমানদার তৈরির ফ্যাক্টরী, এখান থেকে একজন ছাত্র যে গুণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বের হবে, শেষ দিন পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ সে অবস্থায়ই থাকবে। তারপর আমরা কুড়িগ্রাম তাবলীগী মার্কাযে এসে সকালের নাস্তা সারলাম। এরপর ঢাকায় রওনা করে রাত ১১. ৩০ মি: বাসায় পৌঁছলাম।

কুড়িগ্রামে রাস্তার পাশে অসংখ্য মসজিদ চোখে পড়ে, যা আরবদেশের বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করেছে। কিন্তু মসজিদ পাকা করার সাথে সাথে মুসল্লি পাকা করার মেহনত না থাকায় মসজিদগুলোতে প্রাণের স্পন্দন নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মসজিদ কাঁচা ছিল মুসল্লি পাকা ছিল, আমাদের মসজিদ পাকা কিন্তু আমরা মুসল্লিরা কাঁচা।

রাতে যখন আমরা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছিলাম তখন দেখেছি মাদরাসা ও মাহফিল নিয়ে ধারণাতীত উৎসাহ-উদ্দীপনা। আর পুরা রাস্তায় জনস্রোত। মাহফিলের শামিয়ানা পরিণত হয়েছিল সকল স্রোতের মোহনায়।

প্রিয় পাঠক! একজন মা যদি প্রসব বেদনা সহ্য করার জন্য প্রস্তুত না হন তাহলে একটি শিশুর জন্মও হয় না, কারো মুখে হাসিও ফোটে না। এখানেও  একজন দায়ীকে প্রসববেদনাসহ্য করতে হয়েছে, যার ফল সবার মুখের হাসি। ১৩/৪/২০১৪ সালে এই গ্রামে এসে তাকে যাযাবরের মত ১৩টি মাস কাটাতে হয়েছে  রাতে চোখের পানি দিয়ে বুক ভাসিয়েছেন আর দিনে আক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এইভাবে ১৩ মাস মেহনতের পর মাদরাসার জায়গার ব্যবস্থা হয়।

এই গ্রামের পাশেই রুপকুমার নদী। খ্রিস্টানরা কাউকে খ্রিস্টান বানাতে চাইলে এই নদীতে তাকে গোসল করাত। এই গোসলের মাধ্যমে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করত। এই কাজকে তারা ব্যাপটিজ বলে। আরবীতে- استصباغ বলে। একজনকে এনে গোসল দেয়াতে পারলে ১০০০০ হাজার টাকা দেয়া হত। এটা তাদের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা মুসলমানদের বক্তব্য।

উপায়-উপকরণ ছাড়া কেবল আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুহাব্বত আর এখলাসের মধ্যে আল্লাহ যে কত শক্তি রেখেছেন- চিটপাইকেরছড়া গ্রামটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। গত নভেম্বর মাসের শুরুতে এনজিওপ্রধান কুড়িগ্রাম জেলার ডাকবাংলোতে গিয়েছেন, গিয়ে যখন শুনলেন তার পাতা জালে আর মাছ ধরা পড়ছে না তখন চরম হতাশা প্রকাশ করেন। আর কোটি কোটি টাকার লস প্রজেক্ট দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কুড়িগ্রাম থেকে বিদায় নেন।

আসলে এই উম্মতের বড় প্রয়োজন কিছু উৎসর্গিতপ্রাণ মুসলিম দায়ীর, যাদের  সবকিছু হবে আল্লাহর জন্য। ঈমান হবে হিমালয়ের মত। যাদের পরিচয় হবে রুহবান ফিল লাইল্, ফুরসান ফিন নাহার যদি সত্যিই তাদের পাওয়া যায় তাহলে ইসলাম সোনালী প্রভাতের রক্তিম সূর্য হয়ে আবার উদিত হবে। কবি ফররুখের ভাষায়-

আবার বিলাল হাঁকিবে আযান মক্কার ঐ মিনার চূড়ে/হায়দারি হাঁক হাঁকবোরে ফের উঠব আবার বিশ্ব ফুঁড়ে।

 

উলামায়ে কেরামের খেদমতে গুযারিশ

আমরা যতটা রসমের কাছে পরাজিত ততটা হাজতের কাছে পরাজিত নই। আমাদের এই মুহূর্তে দরকার কিছু দায়ী, যারা এরতেদাদের তুফানে জর্জরিত প্রতিটি এলাকায় বসে যাবে। এর জন্য খুব মেধাবী হতে হবে এমন নয়। হতে হবে পরিশ্রমী ও মুখলিস। হতে হবে দ্বীনের প্রয়োজনকে নিজের প্রয়োজনের উপর প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতার অধিকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে শাহজালাল ইয়ামানী, খান জাহান আলী পর্যন্ত এবং এর পরেও এক বিশাল জামাত দ্বীনের জন্য ছিন্নমূল হয়েছেন। ইসলামের মৃত এই সুন্নতকে যিন্দা করলে কাদিয়ানী ও মিশনারী ফেতনার চলমান তুফান ইনশাআল্লাহ থেমে যাবে। কারণ আমাদের কাছে কুরআন-সুন্নাহ, আল্লাহ্র আযমত ও আখেরাতের অনুভূতি এবং সীরাতে সাহাবার মত পুঁজি ও পাথেয় আছে, যা অন্য কারোর কাছে নেই। এখন প্রয়োজন বিধি মত কাজে লাগানো। দেশে কয়েকটি জায়গায় এর মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা আমাদের সফলতা দিয়েছেন। এ জন্য দরকার ইলম ও হেকমত, ইখলাস ও আখলাক এবং জনসাধারণকে সাথে নিয়ে চলার যোগ্যতা। আর এই সকল গুণের জন্য প্রয়োজন এখলাস ওয়ালাদের সোহবত ও শায়খে কামেলের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করা।

যেহেতু এ সকল বাতিল ফেরকা তাদের দায়ীদের প্রশিক্ষণ দেয়, তাই আমাদের দায়ীদেরও কিছু প্রশিক্ষণ দরকার। বড়রা চিন্তা করবেন, এমন হতে পারে কি না যে, এক বছরকে তিন ভাগ করে একভাগ তিন চিল্লায়, একভাগ সোহবতে, একভাগ মুতালাআয় লাগানোর পর এমন আক্রান্ত এলাকায় বসিয়ে দেয়া হল। ইখলাস ও ইতকানের সাথে কাজ করলে আল্লাহ তাআলা তার সাহায্যের ওয়াদা সেখানেও বাস্তবায়ন করবেন ইনশাআল্লাহ। আমাদের ফারেগীনদের একটি অংশও যদি এ কাজে চলে আসেন তাহলে মুসলমানের সন্তান মুসলমানিত্ব নিয়ে কবরে যেতে পারবে। দেখুন, পূর্বতীমুর আর দক্ষিণ সুদানের তিক্ত পরিস্থিতি আমাদের সামনে রয়েছে। আল্লাহ হেফাযত করুন, ঐ অবস্থার সৃষ্টি হলে আমাদের সাধারণ কাজগুলোও অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। একবার হাত থেকে বের হওয়ার পর সেটা আর ফিরে আসে না। স্পেনকে মুসলিম উম্মাহ আর ফিরে পায়নি। বাহ্যত সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তাই সময় থাকতেই উম্মতের হেফাজতের ফিকির করতেই হবে। কম শ্রমে স্বল্প উপকরণে অধিক ফল পেতে হলে উপরের এ পন্থাকে কার্যকর ও নিরাপদ মনে হয়।

আমাদের দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলোতে

التخصص في الرد على الفرق الباطلة

 

তথা কিসমুদ দাওয়াহগুরুত্বের সাথে নেয়া দরকার। এখন এক একটি প্রতিষ্ঠানকে এক একটি আক্রান্ত এলাকার দায়িত্ব নিতে হবে। কিছু দায়ী বেছে বেছে প্রস্তুত করতে হবে। মাদরাসা যদি তাদের দুনিয়াবী হাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করে তাহলে এ কাজ আরো সহজে হতে পারে। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।

 

advertisement